Friday, 22 May 2020

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী - পর্ব ১


01

"আপনার নাম সংযুক্তা দাস?"
"জ্বি না ম্যাডাম। আমার নাম প্রদীপ দেব।"
"তাহলে সংযুক্তা দাস লিখেছেন কেন?"
হাতের কাগজটি আমার দিকে ঠেলে দিয়ে বিরক্তমুখে জিজ্ঞেস করলেন ভাইস-প্রিন্সিপাল ম্যাডাম। কাগজটি হাতে নিয়ে দেখলাম সেখানে আমি লিখেছি, "আমি সংযুক্তা দাস আজ ১৪/১১/১৯৯৩ইং সকাল ১০:৫০ সময়ে বি এফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রামে পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক পদে যোগদান করলাম। ..."
আমি কী করলাম! সংযুক্তা দাসের জয়েনিং লেটার দেখে দেখে লিখতে বলায় নিজের নামের বদলে তাঁর নাম লিখে দিয়েছি। লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকা উচিত আমার। কিন্তু তা না করে আমি তাকিয়ে আছি ভাইস-প্রিন্সিপালের সেক্রেটারির দিকে। তিনি ভাইস প্রিন্সিপালের টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসছেন। এত সরু হাত সচরাচর দেখা যায় না।  ভাইস-প্রিন্সিপালের মুখটা বেশ গোলাকার গম্ভীর আমি মনে মনে ভয় পেয়ে গেলাম। যোগদানের দিনেই কি নিজের অযোগ্যতা প্রমাণ করে দিচ্ছি?
"সরি ম্যাডাম। ভুল হয়ে গেছে। ঠিক করে দিচ্ছি।"
জয়েনিং লেটারে 'সংযুক্তা দাস' কেটে নিজের নাম লিখে কাগজটা ভাইস-প্রিন্সিপাল ম্যাডামের দিকে এগিয়ে দিলাম। তিনি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বললেন, "জীবনের প্রথম চাকরিতে জয়েন করতে এসেছেন। জয়েনিং লেটারটা এরকম ঘষামাজা করে দেবেন? আরেকটা কাগজে পরিষ্কার করে লিখে দেন।"
সকাল থেকে যা কিছু হচ্ছে তার কোনটাতেই যেন আমার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বাসে আসার সময় ভীড়ের মধ্যে শার্টের সবচেয়ে দরকারি বোতামটাই ছিঁড়ে গেছে। খোলা রাখলে অশালীন দেখায় কিন্তু শালীন হতে গিয়ে গলার বোতামটা লাগাতে হয়েছে - তাতে দেখতে কেমন লাগছে তা আমি দেখতে পাচ্ছি না ঠিক, কিন্তু বুঝতে পারছি। প্রিন্সিপালের অফিসে যখন ঢুকলাম- আমাকে দেখে প্রিন্সিপাল সাহেব হেসে উঠেছেন। তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন ভাইস-প্রিন্সিপালের রুমে। ভাইস-প্রিন্সিপাল জিজ্ঞেস করলেন, "জয়েনিং লেটার এনেছেন?"
"জ্বি ম্যাডাম" - আমি চারদিন আগে হাতে পাওয়া চিঠিটা এগিয়ে দিলাম।
"এটা তো অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার। আপনার জয়েনিং লেটার লাগবে।"
"আর কোন লেটার তো পাইনি ম্যাডাম।"
"প্রথম চাকরি?"
"জ্বি?"
"বুঝতে পারছি। কবে পাস করেছেন?"
"দু'মাস হলো ম্যাডাম।"
"ঠিক আছে। আপনি যে আজ জয়েন করছেন তা একটি কাগজে লিখে সাইন করে দিন।"
জয়েনিং লেটার ব্যাপারটা কী আমি জানি না। কীভাবে লিখতে হয় তাও জানি না। একটি কাগজ হাতে এগিয়ে এলেন সেক্রেটারি। কাগজটা নিয়ে ভয়ে ভয়ে বললাম, "কী কী লিখতে হবে যদি একটু বলে দেন।"
"দেখি আমি কী করতে পারি" - বলে ফাইল ক্যাবিনেট থেকে একটা কাগজ নিয়ে এসে বললেন, "এটা দেখে দেখে লিখে ফেলেন।"
ওটা দেখে দেখে লিখতে গিয়েই নিজের নাম 'সংযুক্তা দাস' লিখে ফেলেছি। আবার নতুন করে পুরোটা লিখে ম্যাডামকে দিলাম। ম্যাডাম এখনো গম্ভীর।
বললেন, "ঠিক আছে সংযুক্তা - "
সেক্রেটারি বললেন, "জ্বি আপা"
"আপনি প্রদীপকে টিচার্স রুমে নিয়ে যান।"
এতক্ষণ যাঁকে সেক্রেটারি মনে করেছিলাম তিনিই সংযুক্তা দাস! ইংলিশের লেকচারার! তাঁকে অনুসরণ করে ঢুকলাম টিচার্স রুমে।

No comments:

Post a Comment

Latest Post

কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র ও যন্ত্রের লেখাপড়া

  মানুষ যখন থেকে বুঝতে পেরেছে যে তাদের মগজে বুদ্ধি আছে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে বুদ্ধির পরিমাণ এবং তীক্ষ্ণতা বাড়ানো যায় – তখন থেকেই ...

Popular Posts