Saturday, 16 May 2020

সি ভি রামন - পর্ব ১৩



সমুদ্রের পানি নীল কেন?

ইউনিভার্সিটি কংগ্রেসে যোগ দেয়ার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক প্রফেসর যাবেন অক্সফোর্ডে। প্রফেসর রামনের এটাই প্রথম বিদেশযাত্রা। এর আগে জাহাজে করে রেঙ্গুনে গিয়েছিলেন চাকরি করার জন্য। কিন্তু বার্মা তখনো ব্রিটিশ-ভারতের অন্তর্ভুক্ত, তাই বিদেশ বলা চলে না। রামন ভাবলেন ইংল্যান্ডে যখন যাচ্ছেনই তখন সেটাকে সত্যিকারের স্টাডি ট্যুরে পরিণত করা যায়। তিনি কংগ্রেসের প্রায় দু'মাস আগে চলে যাবার ব্যবস্থা করলেন। ১৯২১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি লন্ডনে পৌঁছলেন।
            রামন তাঁর স্ত্রী লোকমকে কয়েমব্যাটোরে বোনের বাড়িতে রেখে এসেছেন। লোকমের বড়বোন লক্ষ্মীর স্বামী শিবান সেখানে কৃষি কলেজে কাজ করেন। লোকম সন্তানসম্ভবা। বিয়ের চৌদ্দ বছর পর রামনের সময় হয়েছে পিতৃত্বের দায়িত্ব নেবার।
            লন্ডনে পৌঁছে রামন অন্য পর্যটকদের মতো সব ট্যুরিস্ট স্পট ঘুরে দেখলেন। কিন্তু অনুসন্ধিৎসা থেমে নেই। সেন্ট পল্‌স ক্যাথিড্রালে গিয়ে তিনি 'হুইসপারিং গ্যালারি' দেখে নতুন ধারণা পেলেন শব্দতরঙ্গের চলাচল সম্পর্কে। ক্যাথিড্রালের গম্বুজের বাঁকানো তলে শব্দ প্রতিফলিত হয়ে এমনভাবে চলাচল করে যে ক্যাথিড্রালের ভেতর কোন কোন জায়গায় ফিসফিস করে কথা বললেও তা পরিষ্কার শোনা যায়। কলকাতায় তিনি ইতোমধ্যেই শুরু করেছিলেন বাঁকানো তলে আলোর প্রতিফলন কীভাবে হয় সে সম্পর্কে পরীক্ষানিরীক্ষা। রামন ভাবলেন আলোর সাথে শব্দতরঙ্গেরও একটা তুলনামূলক বিশ্লেষণ দরকার। কলকাতায় ফিরে গিয়ে কী কী নতুন গবেষণা করবেন তার তালিকা ক্রমশ লম্বা হতে শুরু করেছে। লন্ডনে বসেই তিনি কিছু দ্রুত পরীক্ষা করে ফেললেন হুইস্পারিং গ্যালারির ওপর এবং সেগুলো পাঠিয়ে দিলেন নেচার ও রয়েল সোসাইটির প্রসিডিংস-এ প্রকাশের জন্য।
           
সেন্ট পল্‌স ক্যাথিড্রালে হুইস্পারিং গ্যালারি

যথাসময়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত হলো ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি কংগ্রেস। সেখানে প্রফেসর রামনের সাথে দেখা হলো থমসন, রাদারফোর্ড, ব্র্যাগসহ আরো অনেক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীর। একটি অধিবেশনে রামন বসেছিলেন হলের পেছনের দিকে। একটু পরে সামনের সারি থেকে স্বয়ং রাদারফোর্ড উঠে দাঁড়িয়ে রামনকে সামনে ডেকে নিয়ে নিজের পাশে বসালেন। এত বড় বিজ্ঞানীর এমন উদারতায় মুগ্ধ হয়ে গেলেন রামন। পরবর্তী অনেকবার রামন এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন। রামন কেন স্যুট-কোটের সাথে পাগড়ি পরেন - ভারতীয় সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে রামন উত্তর দিয়েছিলেন, "পাগড়ি না পরলে কি প্রফেসর রাদারফোর্ড সেদিন আমাকে চিনতে পারতেন?"
            স্যার রাদারফোর্ড কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে তাঁর ল্যাবোরেটরিতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন প্রফেসর রামনকে। রাদারফোর্ড পরমাণুর নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করে রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯০৮ সালে। পৃথিবীতে নোবেল পুরষ্কারের যে কী মর্যাদা তা রামন জানেন। এবং তিনি এটাও জানেন যে, কোন কিছু শুধু আবিষ্কার করলে হবে না, সেই আবিষ্কারের কৃতিত্ব দাবি করতে জানতেও হবে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রমাণ হলো গবেষণাপত্র। তাই রামন গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে দেরি করেন না কখনো।
সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ভারতে ফেরার পথে এস এস নারকুন্ডা জাহাজে বসে ভূমধ্যসাগরের পানির ঘন নীল রঙ দেখে রামনের মনে প্রশ্ন জাগে - সাগরের পানি নীল কেন? এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে তিনি কি সমুদ্র এই প্রথম দেখলেন? এই প্রশ্ন নিয়ে তিনি আগে ভাবেননি কেন? এর আগে তিনি রেঙ্গুনে গিয়েছিলেন। বঙ্গোপসাগরের পানিও নীল, তবে ভূমধ্যসাগরের মতো অতটা নীল নয়। তাছাড়া সেই সময় চাকরিতে যোগদান করতে যাওয়া এবং কলকাতা থেকে দূরে যাবার চিন্তায় রামন অন্যভাবনায় ব্যস্ত ছিলেন।
            ব্রিটেনে যাবার পথেও তিনি ভূমধ্যসাগরের উপর দিয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যস্ত ছিলেন একটা গবেষণাপত্র রচনায়। সেই গবেষণাপত্রটি তিনি লন্ডনে নেমে পোস্ট করেছিলেন ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিনে প্রকাশের জন্য।
            এবার ফেরার পথে তিনি গভীরভাবে ভাবতে লাগলেন সমুদ্রের পানির নীল রঙের কারণ সম্পর্কে। এই ঘন নীল রঙের প্রকৃত রহস্য কী? ইতিপূর্বে লর্ড র‍্যালে আকাশের নীল রঙের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন অণুর সাথে আলোর কণার বিক্ষেপণের ফলে নীল বর্ণের আলোক তরঙ্গ বেশি দেখা যায় বলেই দিনের বেলায় আকাশের রঙ নীল।
            সমুদ্রের নীল রঙ সম্পর্কে লর্ড র‍্যালের তত্ত্ব বেশ সরল। তাঁর মতে সমুদ্রের রঙ আসলে সমুদ্রের পানিতে আকাশের রঙের প্রতিফলন। অনেকেই এই মতবাদ মেনে নিয়েছিলো। কিন্তু রামনের তা মনে হলো না। রামন লর্ড র‍্যালের  এ-তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত করেন জাহাজে বসে করা কয়েকটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে।
            একটি পোলারাইজিং প্রিজমের মাধ্যমে সমুদ্রের পানিতে আকাশের প্রতিফলন আড়াল করার পরেও দেখা গেলো সমুদ্রের পানির রঙ ঘন নীল - যেন পানির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে নীল রঙ। ফলে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে সমুদ্রের পানির নীল রঙ আকাশের রঙের প্রতিফলন নয়, পানিতে আলোক কণার বিক্ষেপণের ফল। তিনি সমুদ্রের বিভিন্ন গভীরতা থেকে পানি সংগ্রহ করে বোতলভর্তি করে নিয়ে আসেন কলকাতায়। প্রিজম, টেলিস্কোপ ইত্যাদি নিয়ে গভীর সমুদ্রে রঙের খেলা পর্যবেক্ষণ করতে করতে অনেক উপাত্ত সংগ্রহ করেন রামন। বৈজ্ঞানিক যুক্তি জাহাজে বসেই লিখে ফেললেন। বোম্বে হারবারে জাহাজ থামার প্রায় সাথে সাথেই তিনি পোস্ট করে দেন নেচার পত্রিকায়। 'দি কালার অব দি সি' প্রবন্ধের নিচে ঠিকানা দেয়া আছে, 'এস এস নারকুন্ডা, বোম্বে হারবার'।[1]
            কলকাতায় ফিরেই তিনি পানিতে আলোর বিচ্ছুরণ ও বিক্ষেপণের পরীক্ষায় মেতে উঠলেন। শুধু পানিতে নয়, অসংখ্য তরল, গ্যাস ও স্বচ্ছ কঠিন পদার্থ যেগুলোর ভেতর আলো প্রবেশ করতে পারে তার সবগুলো নিয়েই বিস্তারিত পরীক্ষা শুরু করেন তিনি। তাঁর গবেষক-ছাত্রদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দেন। ১৯২১-এর অক্টোবর থেকে ১৯২৮ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাত বছর নিরলস গবেষণার পর আবিষ্কৃত হয় রামন-ইফেক্ট। সে কথায় আমরা একটু পরেই আসছি।
            কলকাতায় ফেরার দুই সপ্তাহ পরেই ১৫ অক্টোবর ১৯২১ তারিখে নেচার পত্রিকায় আরেকটি ছোট প্রবন্ধ পাঠিয়ে দিলেন, যেখানে দেখালেন যে পানির আলো বিক্ষেপণের ক্ষমতা বাতাসের আলো বিক্ষেপণের ক্ষমতার চেয়ে ১৬০ গুণ বেশি। রামন তাঁর পেপারে সবসময়েই পরবর্তী কাজের ধারণা দিয়ে রাখেন। এই পেপারেও জানালেন যে অন্যান্য তরল পদার্থের আলো-বিক্ষেপণ সংক্রান্ত পরীক্ষা চলছে।
            কলকাতায় কাজ কিছুটা গুছিয়ে এনে নভেম্বর মাসের শেষের দিকে তিনি গেলেন কয়েমব্যাটোরে তাঁর প্রথম সন্তানের মুখ দেখতে। ১৯২১ সালের ১৬ নভেম্বর রামন ও লোকমের প্রথম পুত্রের জন্ম হয়। রামনের বাবার নাম অনুসারে ছেলের নাম রাখা হলো চন্দ্রশেখর, ডাকনাম রাজা। দক্ষিণ ভারতে অনেকেই নিজের বাবার নামে ছেলের নাম রাখেন। যেমন রামন তাঁর প্রথম ছেলের নাম রেখেছেন তাঁর বাবার নাম অনুসারে চন্দ্রশেখর। রামনের বড়ভাই সুব্রাহ্মণ্যও তাঁর ছেলের নাম রেখেছেন চন্দ্রশেখর। রামনের বোনের বড়ছেলের নামও চন্দ্রশেখরকোন্‌টা কে চেনার উপায় হলো পুরো নাম। সুব্রাহ্মণ্যর ছেলে সুব্রাহ্মণ্য চন্দ্রশেখর, আর রামনের ছেলে - ভেঙ্কটরামন চন্দ্রশেখর, বোনের ছেলে শিবরাজ চন্দ্রশেখর।
            ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর রামনের জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তিনি এখন ঘন্টাখানেক হাঁটেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর থেকে তিনি এক মিনিট সময়ও নিজের জন্য ব্যয় করেননি। তাঁর শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে অনেক রকম। ঠান্ডা লাগা, কাশি এবং বদহজম। ডাক্তারের কোন পরামর্শ তিনি মেনে চলেন না। এ ব্যাপারে তিনি একেবারে স্বেচ্ছাচারী। কিন্তু ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় রামনকে কড়া ভাষায় হুশিয়ার করে দিয়েছেন -  দৈনিক দুই ঘন্টা করে না হাঁটলে রামনের শরীরে রোগ বাসা বাঁধবে, তখন কোন কাজই করতে পারবেন না। রামন ডাক্তার বিধান রায়ের পরামর্শ মেনে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি তার ছাত্রদেরও নিয়মিত হাঁটার পরামর্শ দিচ্ছেন। এটা তিনি শিখে এসেছেন রাদারফোর্ডের কাছ থেকে। কেমব্রিজে ছাত্রদের দৌড়ঝাপ করতে দেখে রামন জিজ্ঞেস করেছিলেন, "এরা পড়াশোনা না করে এভাবে সময় নষ্ট করছে কেন?" উত্তরে রাদারফোর্ড বলেছিলেন, "আমরা এখানে বইপোকা তৈরি করছি না। আমরা মানুষ তৈরি করছি যারা ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করবে।"
            ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রামনকে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স (ডি এসসি)  ডিগ্রি প্রদান করে। রামন অবশ্য কখনো নিজের নামের আগে ডক্টর শব্দটি ব্যবহার করেননি।
            অ্যাসোসিয়েশানে তরল পদার্থের ভেতর আলোর বিক্ষেপণ সংক্রান্ত গবেষণা চলছে পুরোদমে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রামনের ছাত্র শেসাগিরি রাওয়ের সহযোগিতায় রামন পানিতে আলোর আণবিক বিক্ষেপণের তীব্রতা পরিমাপ করেন। তাঁদের পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয় যে আইনস্টাইন-স্মোলুকাউস্কির তাপগতির পরিবর্তন সংক্রান্ত ধারণার সাহায্যে আণবিক বিক্ষেপণের গাণিতিক ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব।
            ১৯২২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় রামনের বিখ্যাত গবেষণাগ্রন্থ দি মলিকিউলার ডিফ্রাক্‌শান অব লাইট।[2] এই বইতে রামন কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাহায্যে আলোর বিক্ষেপণের ঘটনা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে কয়েকটি মৌলিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রামন তাঁর গবেষণা-পত্রে আলোর সাথে তরলের অণুর সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট বিক্ষেপণের যে ব্যাখ্যা দেন তার সাথে আর্থার কম্পটনের কম্পটন ইফেক্ট-এর অনেক মিল আছে। কিন্তু রামন যখন এ ব্যাখ্যা দেন কম্পটন ইফেক্ট তখনো আবিষ্কৃত হয়নি। কম্পটন ইফেক্ট[3] আবিষ্কৃত হয় পরের বছর ১৯২৩ সালে।
            ১৯২৩ সালের এপ্রিলে রামনের তত্ত্বাবধানে তাঁর ছাত্র রামনাথন পানির মধ্য দিয়ে আলোর বিক্ষেপণের অনেকগুলো জরুরি পরীক্ষা করেন। পানির মধ্যদিয়ে সূর্যালোক প্রবেশ করিয়ে বিপরীত দিক থেকে আলোর গতিপথ পর্যবেক্ষণ করা হয়। বিভিন্ন রকমের ফিল্টার ব্যবহার করে আলোর গতিপথ আলাদা করা হয়। পানিতে প্রবেশ করার পর যদি আলোর শক্তির কোন পরিবর্তন না হয়, তাহলে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কোন পরিবর্তন হবে না এবং আলোর বর্ণালীতে কোন পরিবর্তন দেখা যাবে না। কিন্তু আলোর বর্ণালীতে পরিবর্তন দেখা গেলো। শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল যে পানি ঠিকমত বিশুদ্ধ না হবার কারণে এরকম হচ্ছে। কিন্তু খুবই পরিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করার পরেও একই ফল পাওয়া গেল।
            ইতোমধ্যে কম্পটন স্ক্যাটারিং আবিষ্কারের খবর পাওয়া গেছে। রামন দেখলেন তিনি যে পথে এগোচ্ছেন তা সঠিক পথ, এবং অত্যন্ত দরকারি এবং বিশাল আবিষ্কারের সম্ভাবনা আছে এই পথে। তাঁর ল্যাবে তখন বিশ জনের বেশি গবেষণা-ছাত্র কাজ করছে এক সাথে। তাঁর আরো সহকারী দরকার। রামনের মনে হলো কৃষ্ণানকে ডেকে নেয়া যেতে পারে।
            কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম-এসসি কোর্সে ভর্তি হলেও পরীক্ষা দেয়ার ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই কৃষ্ণানের। রামনের ডাক পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন কৃষ্ণান। রামন অ্যাসোসিয়েশান থেকে একটা গবেষণা বৃত্তি বরাদ্ধ করলেন কৃষ্ণানের জন্য।

             
কৃষ্ণান ও রামনাথন



১৯২৩ সালের নভেম্বর মাসে রামনের গ্রুপে গবেষণা-সহকারি হিসেবে যোগ দিলেন কে এস কৃষ্ণান। গবেষণার জগতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রবেশ ঘটলো কৃষ্ণানের। পরবর্তী এক বছর ধরে তিনি পরীক্ষা করলেন ৬৫টি তরলের বিচ্ছুরণ ধর্ম। ১৯২৫ সালে ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হলো কৃষ্ণানের প্রথম গবেষণাপত্র অন দি মলিকিউলার স্ক্যাটারিং অব লাইট ইন লিকুইড্‌স[4] 
            ১৯২৪ সালে রামন রয়েল সোসাইটির ফেলোশিপ পেলেন এবং সে উপলক্ষে ইউরোপে ছিলেন বছরের বেশির ভাগ সময়। কৃষ্ণান নিজে নিজেই বেশির ভাগ পরীক্ষণ শেষ করে ফলাফল বিশ্লেষণ করে পেপার লিখলেন। রামন ইউরোপ থেকে ফিরে এসে কৃষ্ণানের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। ১৯২৬ সালে প্রকাশিত হলো কৃষ্ণানের দ্বিতীয় গবেষণাপত্র।[5]
            ১৯২৪ সালের ২৫ মে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মারা যান। তিনি ১৯২১ সাল থেকে ১৯২৩ পর্যন্ত আবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে ফিরে এসেছিলেন। রামন স্যার আশুতোষকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন। স্যার আশুতোষের কাছ থেকে তিনি শিখেছেন কীভাবে উপযুক্ত লোক খুঁজে বের করে উপযুক্ত জায়গায় বসাতে হয়।



[1] Raman, C.V., The colour of the sea, Nature, 1921, Vol.108, p367
[2]C. V. Raman. Molecular diffraction of light. Calcutta: Calcutta University Press, 1922.
[3] কম্পটন ইফেক্ট তড়িৎচুম্বক কণা ফোটনের সাথে ইলেকট্রনের সংঘর্ষের ফলে ফোটন ও ইলেকট্রনের শক্তির তারতম্যের হিসেব দেয়। কম্পটন ইফেক্ট আবিষ্কারের জন্য আর্থার কম্পটন নোবেল পুরষ্কার পান ১৯২৭ সালে।
[4] K. S. Krishnan, On the molecular scattering of light in liquids. Philosophical Magazine, 1925. 50: p. 679-715.
[5] K. S. Krishnan, A discussion of the available data on light-scattering in fluids. Proc. Indican Assn. Cutiv. Sci., 1926. 9: p. 251-270.

No comments:

Post a Comment

Latest Post

কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র ও যন্ত্রের লেখাপড়া

  মানুষ যখন থেকে বুঝতে পেরেছে যে তাদের মগজে বুদ্ধি আছে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে বুদ্ধির পরিমাণ এবং তীক্ষ্ণতা বাড়ানো যায় – তখন থেকেই ...

Popular Posts