Showing posts with label শুক্র. Show all posts
Showing posts with label শুক্র. Show all posts

Wednesday, 13 October 2021

শুক্র-গ্রহে কি প্রাণের সম্ভাবনা আছে?

 



মহাবিশ্বের দশ হাজার কোটি নক্ষত্রের লক্ষ কোটি গ্রহের মধ্যে পৃথিবী ছাড়া আর কোথাও এখনো প্রাণের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু মহাকাশবিজ্ঞানীদের অনেকেই ভিনগ্রহে প্রাণ থাকার ব্যাপারে আশাবাদী। মহাকাশে প্রাণের সন্ধানে এপর্যন্ত অনেকগুলি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, পাঠানো হয়েছে অনেকগুলি বৈজ্ঞানিক স্যাটেলাইট। কল্পবিজ্ঞানে ভিনগ্রহের প্রাণিদের যেরকম বুদ্ধিমান পূর্ণাঙ্গ প্রাণী হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে – সেরকম প্রাণী খুঁজে পাবার আশা বিজ্ঞানীরা করেন না। কিন্তু কমপক্ষে কোন এককোষী আদি প্রাণীর সন্ধানও যদি পাওয়া যায় তাও অনেক।  তাই প্রাণের উদ্ভব ঘটতে পারে এরকম কোন প্রাণরাসায়নিক উপাদান খুঁজে পেলেই বিজ্ঞানীরা আনন্দিত হয়ে উঠেন। আর সারাপৃথিবীর প্রচারমাধ্যম অনেক গুরুত্বসহকারে সেই সংবাদ প্রচার করে। সম্প্রতি শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা আছে এরকম প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী। 

বৃটেনের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানী জেইন গ্রিভ্‌স এর নেতৃত্বে শুক্রগ্রহের বায়ুমন্ডলের উপাদানের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা হচ্ছে অনেক বছর থেকে। ২০১৭ সালে হাওয়াই-এ অবস্থিত জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল টেলিস্কোপের (JCMT) সাহায্যে শুক্রগ্রহের বায়ুমন্ডলের মেঘের বর্ণালী বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেছেন সেখানে প্রচুর ফসফিন গ্যাস আছে (প্রায় ২০ পার্টস পার বিলিয়ন)। নিশ্চিত হবার জন্য বিজ্ঞানীরা আরো শক্তিশালী টেলিস্কোপ (চিলির অ্যাটাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে – ALAMA) ব্যবহার করেও একই ফল পেয়েছেন। তাঁদের গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে। 

পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ফসফিন আছে এর চেয়ে হাজারগুণ কম। এখন প্রশ্ন হলো ফসফিনের সাথে প্রাণের সম্পর্ক কী? এমন তো না যে ফসফিন এর আগে পৃথিবী ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতির মত বিশালাকৃতির গ্রহের অভ্যন্তরে প্রচন্ড গ্যাসীয় চাপ এবং উচ্চ তাপমাত্রায় প্রচুর ফসফিন গ্যাস নিত্য তৈরি হচ্ছে। শনিগ্রহেও পাওয়া গেছে এই গ্যাস। তাহলে শুক্রগ্রহে ফসফিন দেখতে পেয়ে বিজ্ঞানীরা এত লাফাচ্ছেন কেন? কারণ শুক্রগ্রহের যেখানে এত বেশি পরিমাণ ফসফিন পাওয়া গেছে – সেই বিষাক্ত সালফিউরিক এসিড সমৃদ্ধ মেঘের আস্তরণের উপরে এত বেশি ফসফিন এক সাথে থাকার একটিমাত্র কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। সেই কারণটি হলো – জৈবপ্রাণের উপস্থিতি। 

ফসফিন একটি খুব সরল সাধারণ দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস যাতে ফসফরাসের একটি পরমাণু তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত থাকে। বৃহস্পতি বা শনির মত বড় বড় গ্রহে প্রচন্ড তাপ ও চাপে প্রাকৃতিকভাবে ফসফিন তৈরি হতে পারে। কিন্তু পৃথিবী বা শুক্রের মত আয়তনে ছোট গ্রহের তাপ ও চাপ আপনাআপনি ফসফিন তৈরির উপযুক্ত নয়। পৃথিবীতে কলকারখানায় এই বিষাক্ত গ্যাস অনেক উৎপন্ন হয়। তাছাড়া কিছু সামুদ্রিক অণুজীব এবং কিছু অ্যানেরোবিক মাইক্রো অর্গানিজম – যেগুলি অক্সিজেন ছাড়াই বাঁচে, জৈবপদ্ধতিতে ফসফিন তৈরি করে। ফসফিন গ্যাস খুব সহজেই বাতাসের অন্যান্য গ্যাসের সাথে মিথস্ক্রিয়ায় অন্য অণুতে পরিণত হয়। শুক্রগ্রহে যে পরিমাণ ফসফিন পাওয়া গেছে – সেই পরিমাণ ফসফিন সেখানে থাকতে হলে সেই ফসফিনের নিয়মিত জোগানদাতাদেরও থাকতে হবে সেখানে। ফসফিনের নিয়মিত জোগানদাতা হতে পারে অণুজীব। 

এখন প্রশ্ন হলো শুক্রগ্রহে কি প্রাণের খোঁজ করা হয়নি এর আগে? ষাটের দশকে যখন মহাকাশে অভিযান শুরু হয়েছে তখন থেকে অনেকবার অভিযান চালানো হয়েছে শুক্রগ্রহে। বুধ, শুক্র ও মঙ্গল - পৃথিবীর কাছাকাছি এই গ্রহ তিনটিতে স্বয়ংক্রিয় নভোযান পাঠানো শুরু হয় ১৯৬১ সালে স্পুটনিক প্রোগ্রামের মাধ্যমে। এপর্যন্ত শুক্র অভিযানের ৪৫টি মিশন পরিচালনা করা হয়েছে। এই ৪৫টি মিশনের মধ্যে ৩২টি মিশন পরিচালনা করেছে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত এই মিশনগুলো পরিচালিত হয়। চাঁদে অভিযানে যেমন আমেরিকানদের সাফল্য তুলনামূলকভাবে বেশি, তেমনি শুক্র অভিযানে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাফল্য বেশি ছিল। বাকি ১৩টি মিশনের মধ্যে এপর্যন্ত ১০টি মিশন পরিচালনা করেছে আমেরিকা, ১টি জাপান, এবং দুটো মিশন চালায় ইওরোপীয় ইউনিয়ন। আমেরিকান পাইওনিয়ার ভেনাস প্রোগ্রাম, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেনেরা প্রোগ্রাম চলাকালীন সময়ে চালানো হয়েছিল। তারপর ম্যাগেলান পাঠানো হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। ইওরোপিয়ান ইউনিয়নের ভেনাস এক্সপ্রেস স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে ২০০৫ সালে। আর জাপানের আকাৎসুকি পাঠানো হয়েছে ২০১০ সালে; ২০১৫ সালে তা শুক্রের কক্ষপথে প্রবেশ করে। শুক্রগ্রহের অনেক অজানা তথ্য পাওয়া গেছে এই স্যাটেলাইটগুলি থেকে। 

পৃথিবী ও শুক্র গ্রহের আয়তন প্রায় সমান। শুক্রকে পৃথিবী গ্রহের twin sister বা জমজ বোন মনে করা হয়। কিন্তু শান্ত সবুজ প্রাণসমৃদ্ধ পৃথিবীর সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের গ্রহ শুক্র। শুক্র আক্ষরিক অর্থেই আগুনসুন্দরী। জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির তপ্ত লাভায় আচ্ছাদিত তার শরীর। শুক্রের গড় তাপমাত্রা 464 ডিগ্রি সেলসিয়াস - যা গ্রহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরতে শুক্রের সময় লাগে 225 দিন। অর্থাৎ শুক্র গ্রহে 225 দিনে এক বছর হয়। কিন্তু শুক্র নিজের অক্ষের ওপর একবার ঘুরতে সময় নেয় পৃথিবীর 243 গুণ। অর্থাৎ পৃথিবী যেখানে এক দিনে নিজের অক্ষের ওপর একবার ঘুরে, সেখানে শুক্র 243 দিনে একবার ঘুরে। তার মানে শুক্রের এক দিন হলো পৃথিবীর 243 দিনের সমান। সবগুলো গ্রহ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে অর্থাৎ পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে ঘুরে। কিন্তু শুক্র ঘুরে ঘড়ির কাঁটা যেদিকে ঘুরে সেদিকে - অর্থাৎ পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে। তাই শুক্র গ্রহে সূর্য উঠে পশ্চিম দিক থেকে আর অস্ত যায় পূর্ব দিকে। 

শুক্র আমাদের পৃথিবীর নিকটতম গ্রহ হলেও, শুক্রের আয়তন ও ভর পৃথিবীর কাছাকাছি হলেও শুক্রের বায়ুমন্ডলের সাথে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের কোন মিল নেই। সাড়ে চার শ কোটি বছর আগে জন্মের সময় শুক্র ও পৃথিবীর পরিবেশ হয়তো একই রকম ছিল। কিন্তু তারপর দুই গ্রহের বিবর্তন হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। 

শুক্র গ্রহের বায়ুমন্ডল এতটাই পুরু এবং ভারী যে এর বায়ুমন্ডলের চাপ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের চাপের 90 গুণ। সূর্যের কাছের গ্রহ হওয়ার কারণে শুক্র পৃথিবীর চেয়েও অনেক বেশি সূর্যালোক পায়। কিন্তু শুক্রের ঘন বায়ুমন্ডলের কারণে সেই সূর্যালোকের শতকরা মাত্র তিন ভাগ শক্তি শুক্রের মাটিতে এসে পৌঁছায়। বেশির ভাগ সূর্যালোক বায়ুমন্ডলের বাইরের স্তরে প্রতিফলিত হয়ে যায় - ফলে দূর থেকে এই গ্রহটিকে খুবই উজ্জ্বল দেখায়। শুক্রের ভূমির উপরে প্রায় এক শ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুমন্ডল। শুক্র গ্রহের ভূমি থেকে 20-25 কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাস স্বচ্ছ। শুক্রে ভূমির সমতলে বাতাস প্রায় স্থির বলা চলে। বাতাসের বেগ ঘন্টায় 10 কিলোমিটারের বেশি নয় সেখানে। কিন্তু তাপমাত্রা প্রায় 500 ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। বাতাসের চাপ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের চাপের 90 গুণ। শুক্রের বায়ুমন্ডলের মোট ভরের শতকরা 90 ভাগ এই নিচের ভূমি-সংলগ্ন স্তরের ভর। এখানে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ শতকরা 96 ভাগেরও বেশি। শুক্রের বায়ুমন্ডলের অন্যান্য গ্যাসের মধ্যে আছে নাইট্রোজেন (৩.৫%), এবং খুব কম পরিমাণে হাইড্রোক্লোরিক এসিড, হাইড্রোফ্লোরাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, পানি, আর্গন, কার্বন মনোক্সাইড, অক্সিজেন, নিয়ন ও ক্রিপ্টন। শুক্রে পাঠানো বৈজ্ঞানিক স্যাটেলাইটগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে শুক্রের বায়ুমন্ডলে ফসফিনের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। 

শুক্রের বায়ুমন্ডলের উপরে সালফিউরিক এসিডের মেঘের স্তরের বাইরে ফসফিনের উপস্থিতি প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ বলে দাবি করা হলেও নিশ্চিত করে বলার মতো সময় এখনো আসেনি। এমনও হতে পারে যে শুক্রগ্রহে প্রাণ নয়, ফসফিন তৈরি হবার প্রাকৃতিক রাসায়নিক ব্যাপারটাই এখনো অজানা রয়ে গেছে। যাই হোক, শুক্র গ্রহে আবার নতুন করে স্যাটেলাইট পাঠানো শুরু হবে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। 

তথ্যসূত্র:

১। প্রদীপ দেব,  শুক্র: যে গ্রহে সূর্য উঠে পশ্চিম দিকে, মীরা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৯।

২। Jonathan O'Callaghan, Life on Venus? Scientists hunt for the truth, Nature, Vol 586, 8 October 2020. 

Saturday, 14 November 2020

যে গ্রহে সূর্য উঠে পশ্চিম দিকে - পর্ব ১৫

 



দশম অধ্যায়

শুক্র গ্রহের ভবিষ্যৎ

 

মানুষ পৃথিবীর আকাশে চোখ মেলেই সূর্য ও চাঁদের মতোই তৃতীয় উজ্জ্বল যে বস্তুটি আকাশে দেখেছিল সেটা শুক্র। পুরো সত্যিটা না জেনেই নাম দিয়েছিল শুকতারা এবং সন্ধ্যাতারা। গ্রহ জানার পরও তার  নাম হয়েছে সৌন্দর্য ও ভালোবাসার দেবী ভেনাসের নামে। কম্পনায় ভেনাসের যে রূপ - আক্ষরিক অর্থেই সেরকম আগুনঝরা রূপ ভেনাস তথা শুক্র গ্রহের। সেই প্রথম যখন মহাকাশে অভিযান চালাতে শুরু করলো মানুষ, আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্রহ শুক্রকেই লক্ষ্য করেছিল। এত বছর ধরে ক্রমাগত বৈজ্ঞানিক মিশনের পর আজ মানুষ সৌরজগতের সবগুলো গ্রহতেই কোন না কোন ধরনের বৈজ্ঞানিক স্যাটেলাইট পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। অন্য কোন গ্রহে এখনো মানুষ যেতে না পারলেও পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহে মানুষ সশরীরে উপস্থিত হয়েছে অনেক বার। মঙ্গল গ্রহে অভিযান নিয়ে মানুষ অনেকদূর এগিয়েছে। কিন্তু শুক্রের ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

          উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি কল্পিত চিত্র। উড়ন্ত নভোযানে করে মানুষ শুক্রের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। উড়ন্ত নভোযানের চারপাশে গ্যাসের মেঘ। নভোযানটি এমনভাবে তৈরি যে কোন বিষাক্ত গ্যাসই তার কোন ক্ষতি করতে পারছে না। এমন যদি হতো তবে বেশ ভালোই হতো তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু ওটা এখনো কল্পনা।

          শুক্র গ্রহের পরিবেশ মানুষ শুধু নয়, মানুষের তৈরি আধুনিক যন্ত্রের জন্যও উপযোগী নয়। আমরা দেখেছি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিগুলোও ঘন্টাখানেকও সচল থাকতে পারছে না শুক্রের তাপ ও চাপে। সেক্ষেত্রে শুক্রের ভূমিতে কোন একদিন মানুষের পা পড়বে - এটা যদি বিশ্বাস করো তাহলে বলতে হবে সেই দিন আসতে এখনো অনেক দেরি।

          আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্রহ শুক্রকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের অনেক পরিকল্পনা আছে। সবচেয়ে আগে যেটা বাস্তবায়িত হবার সম্ভাবনা আছে সেটা হলো শুক্রের বৈরি পরিবেশে দীর্ঘ সময় টিকে থাকার মতো টেকসই যন্ত্রপাতি তৈরি করা, ইলেকট্রনিক্স উদ্ভাবন করা। তারপর শুক্রের পিঠে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলাচল করতে পারে এরকম রোবট পাঠানো। বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু ডিজাইনও করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। শুক্রের  বায়ুমন্ডলের অনেক উপরে ভাসমান মহাকাশযান থেকে রোবট নামিয়ে দেয়া হবে শুক্রের ভূমিতে। সেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করে রোবটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হবে, পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে। অদূর ভবিষ্যতে এরকম হবার সম্ভাবনা আছে।

 

 

চিত্র শুক্র গ্রহের ভবিষ্যৎ

 

আর সুদূর ভবিষ্যতে পাঁচ শ কোটি বছর পর আমাদের সূর্যের মৃত্যু হবে এটা নিশ্চিত। সূর্যের জ্বালানি - হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যাবে। তখন সূর্য রেড জায়ান্ট বা লাল দৈত্যে পরিণত হবে। কিন্তু তার আগেই সূর্যের কাছের চারটি গ্রহ - বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল উধাও হয়ে যাবে। এসব নিয়ে আপাতত খুব বেশি চিন্তা করার কিছু নেই। কারণ এসব ঘটবে আজ থেকে আরো প্রায় পাঁচ শ কোটি বছর পর। পাঁচ শ কোটি বছর তো অনেক বছর - তাই না? সুতরাং চিন্তা বাদ দিয়ে চটপট হিসেব করে বলো দেখি পৃথিবীর পাঁচ শ কোটি বছরে শুক্রের কত বছর হবে?

______

 

তথ্যসূত্র 

1.   Clare Gibson, the Solar System, King Books, UK, 2012

2.   Giles Sparrow, Planets and Moons, Hinkler Books, Australia, 2006.

3.   Colin Ronan, The Universe Explained, Ken Fin Books, Australia, 1997.

4.   David A Rothery, Planets a very short introduction, Oxford University Press, Great Britain, 2010.

5.   Chris Cooper, Pam Spence, Carole Stott, Stars + Planets an illustrated guide, Star Fire, London, 2007.

6.   Gerard Cheshire, The Solar System and Beyond, Evans, London, 2006.

7.   Steve Parker, Solar System, Ticktock Media Ltd, Great Britain, 2006.Clare

8.   Heather Couper and Nigel Henbest, Encyclopedia of Space, DK Publishing, UK, 2003.

9.   Robin Kerrod & Carole Stott, Hubble the Mirror on the Universe, Third Edition, David and Charles, London, 2008.

10. Patrick Moore, Mission to the Planets, Cassell, New York 1995.

11.https://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/education/schoolyard_ss/sss_venusm.html

12.https://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/factsheet/venusfact.html

13. NSSDC Master Catalog, http://nssdc.gsfc.nasa.gov/nmc/

14. https://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/chronology_venus.html

15. National Space Science Data Center,

      http://nssdc.gsfc.nasa.gov/

16. Solar System Log by Andrew Wilson, published 1987 by Jane's Publishing Co. Ltd.

17.  L. T. Elkins-Tanton, Sun, Mercury, and Venus, Broomall: Infobase Publishing, 2010.   

18. প্রশান্ত প্রামাণিক, গ্রহ তারক চন্দ্র তপন, জ্ঞান বিচিত্রা প্রকাশনী, আগরতলা, ২০১৩।

19.http://www.isas.jaxa.jp/en/missions/spacecraft/current/akatsuki.html

20. প্রদীপ দেব, অর্ক ও সূর্যমামা: সূর্যের বিজ্ঞান, মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৫।

21. প্রদীপ দেব, পৃথিবী: সূর্যের তৃতীয় গ্রহ, মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৬।

22. প্রদীপ দেব, চাঁদের নাম লুনা, মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৭।

23.  প্রদীপ দেব, বুধ যে গ্রহে একদিন সমান দুই বছর, মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৮।

24. Patrick Moore, Venus, Cassell Illustrated, London, 2002.


Thursday, 12 November 2020

যে গ্রহে সূর্য উঠে পশ্চিম দিকে - পর্ব ১৪

 


নবম অধ্যায়

শুক্র গ্রহের ভূমি 

শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়েও শুক্রের ভূমি দেখার কোন উপায় নেই। কারণ শুক্রের বায়ুমন্ডলের ঘন মেঘ শুক্রকে ঘিরে রেখেছে সবসময়। শুক্র গ্রহের ভূমির সবগুলো ছবি তোলা হয়েছে শক্তিশালী র‍্যাডারের মাধ্যমে। শুরুতে পৃথিবীতে স্থাপিত র‍্যাডারের মাধ্যমে শুক্রের ভৌগোলিক অবস্থার কিছুটা জরিপ করা হয়েছিল। তবে আমেরিকান স্যাটেলাইট ম্যাগেলান শুক্রের চারপাশে বছরের পর বছর ধরে ঘুরে ঘুরে শুক্রের ভূমি জরিপ করেছে। ম্যাগেলানের র‍্যাডার সিস্টেম শুক্রের হাজার হাজার ছবি তুলেছে। শুক্রের 98% ভূমির ম্যাপ বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছে সেইসব ছবি থেকে।

     শুক্রের ম্যাপে কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করা হয়েছে যেন আমাদের বুঝতে সুবিধা হয় কোন্টা কী। নীল রঙ ব্যবহার করা হয়েছে নিচু ভূমি বোঝাতে, উঁচু ভূমিগুলো দেখানো হয়েছে হলুদ আর লাল রঙে। র‍্যাডারে এবড়োখেবড়ো অঞ্চলকে উজ্জ্বল দেখায়, আর মসৃণ অঞ্চলকে দেখায় অনুজ্জ্বল। ম্যাপের নীল রঙ অনেক সময় পৃথিবীর সমুদ্রের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু শুক্রে কোন নদী বা সমুদ্র নেই। বিজ্ঞানীরা মনে করেন কোন এক সময় হয়তো পানির সমুদ্র ছিল শুক্রে। কিন্তু সেসব শুকিয়ে গেছে কত আগে। এখন শুক্রে কোন তরল পানি নেই। শুক্রের বেশিরভাগ অঞ্চল সমতল।

 


নারীদের গ্রহ

শুক্রের ভূমির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অংশ - যেমন পাহাড়, খাদ, গহ্বর, সমতল, ঢাল ইত্যাদির বিবরণ দেয়ার জন্য এবং জরিপের সময় বিভিন্ন স্থানের নাম দিতে হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্র গ্রহের সবগুলো জায়গার নাম দেয়া হয়েছে নারীদের নামে। ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে শুধুমাত্র তিনটি নাম দেয়া হয়েছিল যেগুলো নারীদের নাম নয়। সেগুলো বদলানো হয়নি। যেমন পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েলের নামে শুক্রের সবচেয়ে উঁচু এবং বিস্তৃত পর্বতমালার নাম দেয়া হয়েছিল। সে নাম রয়ে গেছে। তেমনি রয়ে গেছে আলফা রেজিও (alpha regio) এবং বিটা রেজিও (beta regio) নামে দুটো বড় অঞ্চল যেগুলোর নাম দেয়া হয়েছিল গ্রিক অক্ষর আলফা ও বিটা অনুসরণে।

            এই তিনটি নাম ছাড়া শুক্র গ্রহের ভূমির বিভিন্ন অঞ্চলের যেসব নাম দেয়া হয়েছে সেগুলো সবই বিখ্যাত নারীদের নামে। তাদের মধ্যে পৃথিবীবিখ্যাত নারী যেমন আছেন, তেমনি আছে বিভিন্ন সংস্কৃতির দেবীদের নামও। আছেন ভালোবাসার দেবী আফ্রোদিতি, আছেন অন্নপূর্ণা, আছেন লক্ষ্মী, চন্ডী, আছেন মোনালিসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, পদার্থবিজ্ঞানী আইরিন জুলিও-কুরি, ফ্রেন্স পিয়ানিস্ট নাদিয়া বুলেঙ্গার, আমেরিকান লেখক পার্ল বাক, ব্রিটিশ লেখক আগাথা ক্রিস্টি, আছেন ক্লিওপেট্রা। এপর্যন্ত ২০৩০ জন নারীর নামে শুক্রের ২০৩০টি জায়গার নাম রাখা হয়েছে।[1]

 

 


শুক্রের ম্যাপ

শুক্র গ্রহকে বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করে ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে দুই মেরু এবং বিষুবীয় অঞ্চলের তিনটি বিশাল অংশের নাম দেয়া হয়েছে টেরা। বিশাল মহাদেশের আকারের ভূমিকে বলা হয় টেরা (terra)। শুক্র গ্রহের তিনটি টেরা হলো: ইশতার টেরা, লাডা টেরা আফ্রোদিতি টেরা।

 

ইশতার টেরা: শুক্র গ্রহের উত্তর মেরুর নাম দেয়া হয়েছে ইশতার টেরা। ব্যাবিলনিয়ান ভালোবাসার দেবী ইশতারের (Ishtar) নামে রাখা হয়েছে এই মেরুর নাম। এর ব্যাস 5610 কিলোমিটার। পুরো অস্ট্রেলিয়ার সমান এই ইশতার টেরা।

লাডা টেরা: শুক্রের দক্ষিণ মেরুর নাম দেয়া হয়েছে লাডা (Lada) টেরা। স্ল্যাভিকদের[2] ভালোবাসার দেবী লাডার নামে এই মেরুর নামকরণ করা হয়েছে। এর ব্যাস 8615 কিলোমিটার।


চিত্র 54: ইশতার টেরা (উত্তর মেরু)

 

চিত্র 55: লাডা টেরা (দক্ষিণ মেরু)

আফ্রোদিতি টেরা: শুক্রের নিরক্ষীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় জায়গার নাম আফ্রোদিতি টেরা। গ্রিক ভালোবাসার দেবী আফ্রোদিতির নামে রাখা হয়েছে এই টেরার নাম। এর ব্যাস দশ হাজার কিলোমিটার। শুক্রের দক্ষিণ গোলার্ধের এই জায়গার ক্ষেত্রফল প্রায় আফ্রিকা মহাদেশের সমান।

 

চিত্র 56:  আফ্রোদিতি টেরা

 

শুক্র গ্রহের অপেক্ষাকৃত নিচু সমতল ভূমিকে বলা হয় প্ল্যানিটিয়া (planitia)। শুক্র গ্রহের প্ল্যানিটিয়াগুলো সৃষ্টি হয়েছে আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোতের ফলে। ছোট বড় মিলিয়ে এপর্যন্ত একচল্লিশটি প্ল্যানিটিয়া চিহ্নিত করা হয়েছে শুক্র গ্রহে। তাদের মধ্যে কয়েকটি প্ল্যানিটিয়ার অবস্থান দেখানো হলো শুক্রের ম্যাপে।

 

গুইনেভিয়ের প্ল্যানিটিয়া: বহু শতাব্দী আগের ব্রিটিশ রাজা আর্থারের স্ত্রী গুইনেভিয়ের। গুইনেভিয়ের প্ল্যানিটিয়ার ব্যাস 7520 কিলোমিটার।

নিওবি প্ল্যানেটিয়া: গ্রিক লোকগাথার চরিত্র সিপাইলাসের রাজা টানটালাসের কন্যা। নিওবি প্ল্যানেটিয়ার ব্যাস 5008 কিলোমিটার।

হেলেন প্ল্যানিটিয়া: গ্রিক লোককাহিনির হেলেন - হেলেন অব ট্রয় নামে চিনি আমরা। হেলেন প্ল্যানেটিয়ার ব্যাস 4360 কিলোমিটার।

সেডনা প্ল্যানেটিয়া: এস্কিমোদের রূপকথার চরিত্র যার আঙুলগুলো হয়ে গিয়েছিল সিল আর তিমি। সেডনা প্ল্যানেটিয়ার ব্যাস 3570 কিলোমিটার।

তাহমিনা প্ল্যানিটিয়া: ইরানের লোকগাথার চরিত্র বীর রুস্তমের স্ত্রী তাহমিনার নামে রাখা হয়েছে এই প্ল্যানিটিয়ার নাম। এর ব্যাস 3000 কিলোমিটার।

লাভিনিয়া প্ল্যানিটিয়া: রোমানদের পৌরাণিক কাহিনির একটি বিখ্যাত চরিত্র লাভিনিয়া। 2820 কিলোমিনার ব্যাস এই প্ল্যানিটিয়ার।

 

চিত্র 57: গুইনেভিয়ের প্ল্যানিটিয়া

 

চিত্র 58: নিওবি প্ল্যানেটিয়া

 

চিত্র 59: হেলেন প্ল্যানিটিয়া

 

চিত্র 60: সেডনা প্ল্যানেটিয়া

 

 

চিত্র 61: তাহমিনা প্ল্যানিটিয়া

 

চিত্র 62: লাভিনিয়া প্ল্যানিটিয়া

 

 


শুক্রের ভূমি বিন্যাস

শুক্রের ভূমির বৈচিত্র্য আমাদের পৃথিবীর ভূমির তুলনায় অনেক কম। পৃথিবীর মোট ক্ষেত্রফলের প্রায় 71% ভূমি দখল করে আছে পানি। শুক্রে কোন তরল পানি নেই। শুক্রের ভূমির পুরোটাই দখল করে আছে প্রাণহীন কঠিন পদার্থ। ভূমিতে বেশ কিছু পাহাড়পর্বত আছে - যাদের উচ্চতা আমাদের পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত এভারেস্টের চেয়েও বেশি। শুক্রের মোট ভূমির শতকরা আটভাগ  পাহাড়ী অঞ্চল। শুক্রে আছে প্রচুর সুপ্ত অথবা মৃত আগ্নেয়গিরি।[3] আগ্নেয়গিরির ফলে সৃষ্টি নিচু সমতুল ভূমির পরিমাণ মোট ভূমির 27% বাকি 65% সমতল ভূমি। আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোতের প্রমাণ আছে প্রায় সবখানে। চলো দেখা যাক শুক্রের কিছু প্রধান প্রধান পাহাড়, খাদ, গহ্বর, আগ্নেয়গিরির রূপ।

 

গহ্বর (Craters): শুক্রের ভূমিতে প্রায় 900 ছোট-বড় গহ্বরের সন্ধান পাওয়া গেছে। সাধারণত বিভিন্ন গ্রহের পিঠের উপর বিভিন্ন গ্রহাণুর আঘাতের ফলে এসব গহ্বরের সৃষ্টি হয়। শুক্রের ক্ষেত্রফল অনুযায়ী শুক্রে আরো অনেকবেশি গহ্বরের চিহ্ন থাকার কথা। কিন্তু শুক্রের উপরিস্তরের প্রায় সবখানে লাভার আস্তরণ থাকাতে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন আগের গহ্বরগুলোর অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। তাই বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন বর্তমান গহ্বরগুলোর বয়স 500 মিলিয়ন বছর বা 50  কোটি বছরের বেশি নয়। সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহগুলোর ভূমির স্তরের বয়সের তুলনায় এই 50 কোটি বছর খুবই কম। তার মানে দাঁড়ায় শুক্র গ্রহের বড় ধরনের বিবর্তন হয়েছে 50 কোটি বছর আগে।

 

চিত্র 63: মিড গহ্বর - শুক্র গ্রহের সবচেয়ে বড় গহ্বর

 

শুক্রের বড় বড় গহ্বরগুলোর আকৃতি প্রায় একই রকম সরল হলেও ছোট গহ্বরগুলোর আকৃতি বেশ জটিল। ধারণা করা হচ্ছে শুক্র গ্রহের পুরু বায়ুমন্ডল ভেদ করে আসার সময় গ্রহাণুগুলো ভেঙেচুরে বিকৃত আকার ধারণ করে ভূমিতে আঘাত করার ফলেই বিচিত্র জটিল আকৃতির ছোট ছোট গহ্বরগুলো সৃষ্টি হয়েছে। শুক্র গ্রহের সবচেয়ে বড় গহ্বরের নাম মিড (Mead)।  আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী (anthropologist) মার্গারিট মিডের নামে এই গহ্বরের নাম দেয়া হয়েছে। এর গড় ব্যাস ২৮০ কিলোমিটার।

                     

পর্বতমালা (Montes): শুক্র গ্রহে ছোট বড় 122টি পর্বতের (mons) অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। শুক্র গ্রহের সবচেয়ে বড় দুটো পর্বতের নাম আটানুয়া (Atanua) ও ভার (Var) এদের গড় ব্যাস প্রায় এক হাজার কিলোমিটার। তবে সবচেয়ে উঁচু পর্বতের নাম ম্যাক্সওয়েল। পদার্থবিজ্ঞানী জেমস ম্যাক্সওয়েলের নামে রাখা হয়েছে এই পর্বতের নাম। এর উচ্চতা প্রায় এগার কিলোমিটার, যা পৃথিবীর এভারেস্টের চেয়েও অনেক বেশি।

 

চিত্র 64: ম্যাক্সওয়েল পর্বতশৃঙ্গ

           

মালভূমি (planum): শুক্র গ্রহের বিশাল দুটো মালভূমির নাম আফ্রোদিতি ও ইশতার। এগুলোকে টেরাও বলা হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় মালভূমি ইশতার টেরা পাঁচ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত। আকারে পুরো আমেরিকার চেয়েও বড়। ইশতার টেরায় ম্যাক্সওয়েল পর্বতমালা ঘেঁষে আছে লক্ষ্মী মালভূমি (Lakshmi Planum)। লক্ষ্মী মালভূমির উচ্চতাও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার।  আকারে পৃথিবীর তিব্বতের সমান।


চিত্র 65: লক্ষ্মী মালভূমি

 

আগ্নেয়গিরি (volcanoes): শুক্রের সমস্ত পিঠজুড়ে রয়েছে হাজার খানেক আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। এগুলোর বেশিরভাগই এখন মৃত। কিন্তু মাত্র পঞ্চাশ কোটি বছর আগেও এখান থেকে যে লাভা বের হয়েছে তার প্রমাণ আছে শুক্রের সবখানে। প্রায় 170টি বড় আগ্নেয়গিরি আছে শুক্রে যাদের উচ্চতা প্রায় চার কিলোমিটার এবং বিস্তৃতি কয়েক কিলোমিটার। প্রায় হাজার খানেক ছোট ছোট আগ্নেয়গিরির আছে যাদের আকৃতি বিচিত্র ধরনের। দূর থেকে দেখতে কোন কোনটাকে লাগে প্যানকেকের মত, আবার কোন কোনটাকে লাগে মাকড়শার মতো।

শুক্র গ্রহের সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরির নাম রাখা হয়েছে মিশরের সত্য ন্যায়ের দেবী মাটের (Ma'at) নামে। আগ্নেয়গিরি থেকে সৃষ্ট এই পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় আট কিলোমিটার।

 

চিত্র 66: মাট মন্‌স (Maat Mons) শুক্রের সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরি

 


চিত্র 67: প্যানকেক ডোম্‌স


শুক্রের আলফা রেজিও অঞ্চলে দেখা গেছে অনেকগুলো ছোট ছোট আগ্নেয়গিরি যাদের গড় ব্যাস প্রায় বিশ কিলোমিটার এবং উচ্চতা প্রায় 750 মিটার। এসব ছোট ছোট পাহাড়ের চারপাশ খুব খাড়া এবং উপরটা খুব সমতল বলে এগুলোকে দেখতে অনেকটা প্যানকেকের মতো লাগে। তাই এগুলোর নাম প্যানকেক ডোমস (Pancake domes)।

          আবার কতগুলো আগ্নেয়গিরির ঢালু পথ এমনভাবে খাঁজকাটা এবং এবড়োখেবড়ো যে দেখতে মাকড়শার পায়ের মত লাগে। এগুলোকে বলে অ্যারাকনয়েডস (Arachnoids)। এগুলো প্রায় 200 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। শুক্র গ্রহে এ ধরনের প্রায় নব্বইটি আগ্নেয়গিরির সন্ধান পাওয়া গেছে।

 

 

চিত্র 68: অ্যারাকনয়েডস আগ্নেয়গিরি

 

শুক্রের আগ্নেয়গিরি কি জীবন্ত? এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ কিংবা না দুটোই হতে পারে। শুক্র গ্রহের বাতাসে সালফার ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ার অর্থ হচ্ছে আগ্নেয়গিরির লাভা নির্গমন হচ্ছে। শুক্রের আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে কোন কোনটা এখনো জীবন্ত হলেও হতে পারে।



[1] এই সবগুলো জায়গার পূর্ণ বিবরণ আছে এই ওয়েবসাইটে: https://planetarynames.wr.usgs.gov/Page/VENUS/target

[2] বেলারুশ, রাশিয়া, ইউক্রেন, চেক, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া ইত্যাদি

[3] কোন গ্রহে আগ্নেয়গিরি কীভাবে উৎপন্ন হয় তা আমরা পৃথিবী গ্রহ সম্পর্কে আলোচনা করার সময় বিস্তারিত বলেছি। দেখো প্রদীপ দেবের 'পৃথিবী: সূর্যের তৃতীয় গ্রহ', মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৬, পৃষ্ঠা: ৭২।

Latest Post

ফ্ল্যাশ রেডিওথেরাপি: ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা

  যে রোগের কাছে পৃথিবীর মানুষ সবচেয়ে বেশি অসহায় – তার নাম ক্যান্সার। প্রতি বছর ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে। ধারণা করা হ...

Popular Posts