Monday 26 June 2023

বিজ্ঞানচিন্তা - জুন ২০২৩

 


বিজ্ঞানচিন্তা জুন ২০২৩
সপ্তম বর্ষ, সংখ্যা ৯

মহাবিশ্বের রহস্য আমরা এপর্যন্ত যতটুকু জানতে পেরেছি তারচেয়ে এখনো অনেক কম জানি পৃথিবীর মহাসাগরগুলির গভীর পানির নিচে লুকিয়ে থাকা প্রাণিদের সম্পর্কে। এই ব্যাপারটিকে সামনে রেখে বিজ্ঞানচিন্তার জুন সংখ্যার প্রধান বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে – সাগর তলের রহস্য। সাগরতলের অনেক অজানা তথ্যসমৃদ্ধ সাতটি রচনা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এই সংখ্যায়। 

বিজ্ঞানচিন্তার ডাকবাক্সে প্রকাশিত পাঠকদের চিঠিগুলি খুব উৎসাহব্যঞ্জক। আমি নিশ্চিত প্রতিমাসে অনেক চিঠি আসে বিজ্ঞানচিন্তার দপ্তরে। পাঠকরা বিজ্ঞানচিন্তা পড়ে যে ভালোলাগার অনুভূতি ব্যক্ত করে তা বিজ্ঞানচিন্তার সাথে যারা যুক্ত আছেন – প্রত্যেককেই আনন্দ দেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। যেমন ইবনাতের চিঠিতে যখন জানতে পারি তার মা বলছেন, শুধুমাত্র স্কুলের বই পড়ার পাশাপাশি বিজ্ঞানমনস্ক হবার প্রয়োজনীয়তার কথা – বেশ ভালো লাগলো। পড়াশোনা শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাস করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে তা খুব একটা কাজে আসে না। এই ব্যাপারটি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও যে ক্রমশ বুঝতে পারছেন তা বেশ আশা জাগানিয়া। 

আহসান হাবীবের বিজ্ঞানরম্য “বিজ্ঞান পরীক্ষা” বরাবরের মতোই মজার। তবে বর্তমানে স্কুলের বিজ্ঞানপরীক্ষা কি আসলেই এত কঠিন যে সবাই বিজ্ঞান পরীক্ষায় ফেল করছে? 

রোমেন রায়হানের বিজ্ঞান ছড়া ‘লাল আটার রুটি’ ছন্দোবদ্ধ স্বাস্থ্যকর মুচমুচে মজার। 
কাজী আকাশের গ্রন্থণায় ‘সাত সমুদ্র পরিচয়’ অল্পশব্দে পৃথিবীর ম্যাপের উপর সাতটি সমুদ্রের অবস্থান ও ব্যাপ্তির চমৎকার উপস্থাপন। 

সমুদ্রের বিভিন্ন গভীরতায় অত্যাশ্চর্য বাস্তব সামুদ্রিক প্রাণিদের অবস্থান, বিবর্তন ও পারিপার্শ্বিক সামুদ্রিক পরিবেশ নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন উচ্ছ্বাস তৌসিফ তাঁর “নীল সমুদ্রের অপার রহস্য” রচনায়। লেখার সাথে ছবিগুলিও চমৎকার। 

কাজী আকাশের আরেকটি গ্রন্থণা “সমুদ্রের গভীরে জীবন” মহাসাগরের উপরের স্তর থেকে শুরু করে গভীরতম স্থান পর্যন্ত পর্যাক্রমিকভাবে সামুদ্রিক প্রাণিদের স্তরগত অবস্থান বর্ণনা করেছে। 

এই সংখ্যার অন্যতম আকর্ষণ বিজ্ঞানী দীপেন ভট্টাচার্যর রচনা ‘বঙ্গীয় বদ্বীপের সূচনা’। তিরিশ কোটি বছর আগে যে প্রাকৃতিক বিবর্তন শুরু হয়েছিল – সেই ভৌগোলিক বিবর্তনের ফসল আমাদের এই অঞ্চলের অবস্থান ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলির অবস্থান  পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের বিন্যাস গভীরতা প্রভৃতি বদলেছে একটু একটু। লেখক অনেকগুলি ম্যাপ এবং রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখিয়েছেন কীভাবে কী হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় আমাদের স্কুলশিক্ষার্থী বন্ধুদের হয়তো একাধিকবার পড়তে হবে। কিন্তু একবার আয়ত্বে এসে গেলে প্রাকৃতিক বিবর্তনের ধারাটি বুঝতে কষ্ট হবে না। এই রচনায় ম্যাপ এবং অন্যান্য তথ্যের সুনির্দিষ্ট রেফারেন্স উল্লেখ করা আছে রচনার টেক্সটে। কিন্তু রচনার শেষে রেফারেন্সের তালিকাটি ছাপানো হয়নি সম্ভবত স্থানাভাবে। কিন্তু বিজ্ঞানরচনার ক্ষেত্রে আমার মনে হয় রেফারেন্সকে অবহেলা করা উচিত নয় কিছুতেই। আগ্রহী পাঠক অনেক সময়েই আরো বিস্তারিত জানার জন্য সেইসব রেফারেন্স খুঁজে দেখতে চান। 

বাংলাদেশের প্রবালদ্বীপ ‘সেন্ট মার্টিনের প্রাণবৈচিত্র্য’ সম্পর্কে চমৎকার লিখেছেন অধ্যাপক কাজী আহসান হাবীব। আমাদের নিজেদের সাগরেই এত বিচিত্র সব সামুদ্রিক প্রাণির বাস – যা আমরা অনেকেই জানি না। 

আবদুল্লাহ আল মাকসুদের ‘প্রবাল প্রাচীরে জীবন’ রচনায় অল্পশব্দে চমৎকার রঙিন ছবির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে কীভাবে প্রবাল তৈরি হয়, এবং কীভাবে টিকে থাকে বছরে পর বছর। 

প্রচন্ড গরমে যখন আমরা হাসফাস করছি বাংলাদেশসহ আরো অনেক দেশে – তখন উচ্ছ্বাস তৌসিফ চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন ‘এল নিনো কী’। 

পাঠকদের জন্য চমৎকার বোনাস হিসেবে কাজ করে বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আবদুল কাইয়ুমের বিজ্ঞান কমিক ‘কী ও কেন’। এবারের আকর্ষণ চাঁদ থেকে পৃথিবীর উদয়-অস্ত দেখা যাবে কি না। 

মহাকর্ষ তরঙ্গের বেগ সম্পর্কিত আব্দুল্ল্যাহ আদিল মাহমুদের রচনাটি চিত্তাকর্ষক। মহাকর্ষ তরঙ্গের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন রেইনার ওয়েইস, ব্যারি ব্যারিশ এবং কিপ থোর্ন ২০১৭ সালে। রচনায় তাঁদের ব্যবহৃত লাইগো পরীক্ষার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু তাঁদের নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তির তথ্যটুকু বাদ গেছে। ছবিগুলির ক্যাপশান এবং লেবেল যখন ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয় – তখন আরেকটু সতর্কতার দরকার আছে, বিশেষ করে শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে। যেমন লাইগোর ছবিতে এক জায়গায় লেখা হয়েছে ‘আলোক তরঙ্গ বাড়ি খেয়ে ফিরে আসে’। বাড়ি খেয়ে শব্দটা কি এখানে যথাশব্দ? 

এনরিকো ফার্মির নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তির ঘটনা খুব চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন আবুল বাসার তাঁর “পোপ অব ফিজিক্স” রচনায়। এই নামে ফার্মির একটি জীবনী আছে। নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে ফার্মির অবদান সংক্ষেপে বলা সম্ভব নয়। বিটা ক্ষয়ের তত্ত্ব আবিষ্কৃত হয়েছে তাঁর হাতে। ফার্মির জীবন ও বিজ্ঞান সম্পর্কিত এই রচনা শুধু বিজ্ঞান নয়, বিজ্ঞানের ইতিহাসও বটে। 

ডিউক জনের বিজ্ঞান কল্পগল্প ‘গ্রহান্তরের দুঃস্বপ্ন’ ভয়ংকর। গল্পের স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় মনে হচ্ছে এটি রুপান্তরিত গল্প। যদি অনুবাদ করা হয়ে থাকে – অনুবাদকের নাম নেই। 

আমাদের হাতেই বিলুপ্ত হতে বসেছে অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ। সাতটি বিলুপ্ত উদ্ভিদ এবং আরো বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ সম্পর্কিত ইফতেখার মাহমুদের প্রতিবেদনটি অত্যন্ত দরকারি একটি প্রতিবেদন। 
বাংলাদেশে লিচু খেয়ে শিশুমৃত্যুর খবর আমরা মাঝেমধ্যেই পাই। জাভেদ ইকবাল তাঁর রচনায় ব্যাখ্যা করেছেন খালি পেটে লিচু খেলে মাঝে মাঝে কেন প্রাণসংশয়ী প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। 

বাংলাদেশের করোনা রোগীদের উপর গবেষণা করে অস্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করেছেন প্রফেসর আদনান মান্নানের গবেষকদল। তাঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেডিসিন জার্নালে। প্রফেসর আদনান মান্নানের রচনায় এসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের সম্পূর্ণ রেফারেন্স থাকলে উৎসাহী পাঠক প্রবন্ধটি পড়ে দেখতে পারতেন। 

চিকিৎসাপ্রযুক্তির ভবিষ্যত এখন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ন্যানোটেকনোলজির দিকে যাচ্ছে। মাইক্রোরোবট সংক্রান্ত রচনায় সেই প্রযুক্তি ব্যাখ্যা করেছেন রিফাত আহমেদ। 

এই সংখ্যার সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে – বাংলার আইনস্টাইন নামে পরিচিত বিজ্ঞানী অমলকুমার রায়চৌধুরির জীবন ও কর্মের উপর একটি রচনা এই সংখ্যায় আছে। কিন্তু রচনাটি এই সংখ্যায় নেই। এতে পাঠক হয়তো একটু বিভ্রান্ত হতে পারেন। 

বিজ্ঞানচিন্তার সম্পূর্ণ রঙিন ছবিগুলির পরিস্ফুটন এতটাই সুন্দর যে তার জন্য আলাদা ধন্যবাদ পেতে পারেন এর দায়িত্বে যারা আছেন তাঁরা। 


Sunday 18 June 2023

বিমল কান্তি গুহ’র “তীর্থযাত্রার ত্রিশ দিন”

 


নাপোড়া-সেখেরখীল গ্রামের বিশিষ্টজন হিসেবে বাবু বিমল কান্তি গুহকে সবাই মান্য করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন তাও অনেকদিন হলো। আমি তাঁর স্কুলে পড়াশোনা করিনি বলে সরাসরি তাঁর ছাত্র নই। কিন্তু আমাদের যুগে শিক্ষক মাত্রেই সম্মানিত ছিলেন, সরাসরি ক্লাসে পড়ানোর দরকার হতো না। আমার ছোটবেলায় আমি সব শিক্ষককেই ভয় পেতাম, বিমলস্যারও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। প্রচন্ড রকমের গম্ভীর আর রাশভারি মনে হতো তাঁকে। আমার বাবার সাথে তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, সে হিসেবেও আমি তাঁর স্নেহ পেয়েছি। তাঁর বড়ছেলে লিটন আমার পরের ক্লাসে পড়লেও আমরা বন্ধুর মতো এক সাথে খেলাধুলা, ক্লাব, নাটক আর বাঁদরামি করতে করতে বড় হয়েছি। সে হিসেবেও বিমলস্যারের স্নেহধন্য হয়েছি। ভৌগোলিক দূরত্ব আর নাগরিক সময়ের অপ্রতুলতার কারণে এখন আর সেভাবে দেখা হবার সুযোগ ঘটে না। তবে এবার ছুটিতে গিয়ে বিমলস্যারের “তীর্থযাত্রার ত্রিশ দিন” বইটি পেয়ে খুব খুশি লাগলো। 




বিমলস্যার ২০০০ সালে ভারতে গিয়েছিলেন তীর্থভ্রমণে। বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে তীর্থভ্রমণ করিয়ে আনার প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে এখন। এবং দলবদ্ধভাবে অনেকেই যাচ্ছেন তীর্থ করতে। পুণ্য আর ভ্রমণের আনন্দ দুটোই লাভ হয় মোটামুটি কম খরচে – এই বিশ্বাস যাদের আছে তাঁরা এই ভ্রমণে যান। অন্যান্য যাত্রীদের সাথে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন, দিল্লি, আগ্রা ইত্যাদি অনেক জায়গাউ ঘুরেছেন তিনি ত্রিশ দিন ধরে। 


বর্ণনায় এক ধরনের সারল্য আছে, অকপটতা আছে। ভাষার গাঁথুনি সহজ। অনেকসময় নির্ভুলও নয়। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীর সহজ সরল বিবরণ বলেই বেশ ভালো লাগে পড়তে। পড়তে পড়তে মনে হয় লেখক সামনে বসেই বলছেন কথাগুলি। 


ভ্রমণ কাহিনির কিছু কিছু জায়গায় ধর্মীয় ব্যাখ্যাও আছে। তীর্থযাত্রার বর্ণনাতে ধর্মতীর্থের বর্ণনা তো থাকবেই। 


বাংলাদেশী তীর্থযাত্রীদের ভারতীয় পরিচয়ে কম টাকার টিকেটে তাজমহলে ঢুকিয়ে দেয়া, বিভিন্ন সেবায়তনে থাকা, তিন বেলা পথের ধারে বাস থামিয়ে রান্না করে খাওয়া, প্রকৃতিতে প্রকৃতি সারা কোনো কিছুই বাদ যায়নি বর্ণনা থেকে। এখানেই লেখকের সাধু সার্থকতা। 


লেখকের বড়ছেলে অ্যাডভোকেট লিটন কান্তি গুহর ব্যক্তিগত উদ্যোগে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বইটি সব জায়গায় হয়তো পাওয়াও যাবে না। আমাদের লাইব্রেরিতে এক কপি সংগ্রহ করা হয়েছে। পড়ে খুব ভালো লাগলো। 


Saturday 17 June 2023

আনিসুল হকের 'গুড্ডুবুড়া কমিক্স ৩'

 



আনিসুল হক খুবই ব্যস্ত লেখক। ছোট বড় মাঝারি সবার জন্যই লেখেন তিনি। গুড্ডূবুড়া তাঁর কমিক। হাস্যরসাত্মক কাজকর্ম থাকার কথা সেখানে। আছে অনেক। অবশ্যই আছে। হাসি না এলে বুঝতে হবে পাঠকের মন ভালো নেই। 

মুহম্মদ জাফর ইকবালের 'আমার ডেঞ্জারাস মামী'

 



মুহম্মদ জাফর ইকবালের বই মানেই হলো ধরেই পড়ে ফেলা যায়। 
ছুটিতে গিয়ে হাতের কাছে পেলাম। পড়ে ফেললাম। 

ঘটনার ঘনঘটা আছে বইতে – যা জাফর ইকবালের অনেকটাই ট্রেন্ড মার্ক এখন। বিজ্ঞানের কিছু পূর্বঘটিত বিক্রিয়ার মতোই আগে থেকে বলে দেয়া যায় কী কী ঘটতে পারে। 

যাঁকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাস – তিনি মামী। মামার সাথে তাঁর ডিভোর্স হয়ে গেছে। কিন্তু মামী খুবই ভালো। যে পরিবারে তিনি বৈবাহিক সূত্রে এসেছিলেন, বিবাহ ভেঙে যাওয়ার পরেও তিনি সেখানে ঘুরেফিরেই আসেন। পরিবারের সব বাচ্চাদের আদর করেন। বাচ্চারাও তাঁকে অসম্ভব ভালোবাসে। মামী বিজ্ঞানী। একটি গবেষণা-জাহাজ নিয়ে তিনি সমুদ্রে যান গবেষণা করতে। সেখানে মামীর সহকারী হিসেবে সাথে যায় টুলু। টুলুর জবানীতেই বইটি লেখা। 

জাহাজে টুলুর সমবয়সী মেয়ে মিতির সাথে দেখা হয়। মিতি কানে শুনতে পায় না। তাই কথাও বলতে পারে না। কিন্তু অসম্ভব সুন্দর ছবি আঁকে। জহির নামে আরেকজন ছেলেও থাকে জাহাজে। জহির খুব পাজি টাইপের ছেলে। সে নানারকম দুষ্টুমি করে। টুলু তাকে বিভিন্নভাবে নাস্তানাবুদ করে। বিভিন্ন অভিযানও হয়। মিতি আর টুলু ঘটনাচক্রে বিশাল কিছু আবিষ্কারও করে ফেলে যা বিজ্ঞানীরা অনেকদিন থেকে খুঁজছিলেন। 

আমাদের বাড়ির শিশুরা এখন বড় হয়ে গেছে। এখন তাদের শিশুদের বড় হবার পালা চলছে। এই বইটি যে বয়সীদের জন্য লেখা সেরকম কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারিনি কেমন লাগলো। তবে আমার মনে হয় ছোটদের জন্য লেখা বই বড়দের পড়া উচিত নয়। কারণ বুদ্ধি পেকে গেলে সেই বুদ্ধি আনন্দ পাবার চেয়ে খুঁত ধরার দিকে মন দেয় বেশি। অবশ্য কিছু কিছু বই আছে যা ছোটদের জন্য লেখা হলেও সব বয়সের পাঠকেরাই চিরদিন আনন্দ পায়। ‘আমার ডেঞ্জারাস মামী’ সেরকম বই নয়। 



Thursday 15 June 2023

বিজ্ঞানচিন্তা মে ২০২৩

 



জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশে যতগুলি বিজ্ঞানসাময়িকী/ বিজ্ঞানপত্রিকা থাকা উচিত - তার শতাংশও নেই। বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যা পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। আমাদের এই বিশাল সংখ্যা বিশাল সম্ভাবনার নির্দেশক। আমি যখন স্কুলে পড়তাম – তখন একটি বিজ্ঞানসাময়িকী প্রকাশিত হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সম্পাদনায়। বাংলা একাডেমির একটি বিজ্ঞানপত্রিকা ছিল – যা বছরে দু’বার বের হবার কথা থাকলেও নিয়মিত প্রকাশিত হতো না। আর সেখানে যে প্রবন্ধগুলি প্রকাশিত হতো সেগুলির ভাষা ছিল মারাত্মক রকমের শক্ত। পরে অবশ্য বুঝতে পেরেছি – লেখকদের অনেকেই ইংরেজি থেকে সরাসরি অনুবাদ করতেন কঠিন বাংলায়।

তখন অবশ্য জাতীয় দৈনিকগুলিতে প্রতি সপ্তাহে পুরো একটি পাতা বরাদ্ধ থাকতো বিজ্ঞানের জন্য। দৈনিক সংবাদ এর বিজ্ঞানের পাতায় নিয়মিত প্রকাশিত হতো আবদুল্লাহ আল মুতী, শুভাগত চৌধুরি, তপন চক্রবর্তী, এ এম হারুন অর রশীদ প্রমুখ প্রথিতযশা বিজ্ঞানলেখকদের লেখা।

ক্রমে আমাদের জনসংখ্যা বেড়েছে, স্কুল-কলেজ বেড়েছে, অর্থনৈতিক সামর্থ্যও বেড়েছে, স্কুল-কলেজে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী বেড়েছে – কিন্তু পত্রিকার পাতা থেকে বিজ্ঞানের জায়গা ক্রমশ ছোট হতে হতে একেবারে বন্ধই হয়ে গেছে অনেক ক্ষেত্রে। আগে ঈদসংখ্যাগুলিতে কমপক্ষে একটি লেখা থাকতো বিজ্ঞানবিষয়ে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত শারদীয় সংখ্যায় এখনো এক বা একাধিক লেখা প্রকাশিত হয় বিজ্ঞান বিষয়ে। কিন্তু আমাদের ঈদসংখ্যায় বিজ্ঞানের স্থান নেই। প্রথম আলোর গত কত কয়েকটি ঈদসংখ্যার কোনটিতেই কোন বিজ্ঞান জায়গা পায়নি।

তবে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রথম আলো প্রতি মাসে বিজ্ঞানপত্রিকা ‘বিজ্ঞানচিন্তা’ প্রকাশ করছে। বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াডের সূচনা হয়েছিল প্রথম আলোর পাতায় ২০০১ সালে – যা আজ পুষ্পপত্রপল্লবে বিকশিত হয়েছে। বিজ্ঞানচিন্তা আমাদের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বৈজ্ঞানিক কৌতূহল পুরোপুরি মেটাতে পারছে কি না – তবে বিজ্ঞান বিষয়ে চিন্তা করতে শেখাচ্ছে তা নির্দ্বিধায় বলতে পারি।

বছর পাঁচেক আগে আগ্রাবাদের ফুটপাতে বসা হকারের কাছে বিজ্ঞানচর্চা চোখে পড়ে। দেশে নিয়মিত না থাকার কারণে বিজ্ঞানচিন্তার প্রকাশনার খবরটা আমার অজানা ছিল। খুবই ভালো ভালো লেখাসমৃদ্ধ বিজ্ঞানচিন্তার একটি সংখ্যা পড়েই আমার ভালো লেগে যায়।

তার পরের ঘটনাটি খুবই কাকতালীয়। আমি ভাবছিলাম  বিজ্ঞানচিন্তার সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে একটি ইমেইল করবো। কিন্তু তার আগেই আমি বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসারের কাছ থেকে একটি ম্যাসেজ পেলাম। এরপর থেকে যখনই সুযোগ পাচ্ছি – বিজ্ঞানচিন্তা পড়ছি, এবং কিছু কিছু লিখছি।

বাসারভাই আমাকে বলেছিলেন বিজ্ঞানচিন্তা মূলত স্কুলপড়ুয়াদের জন্য। কিন্তু বিজ্ঞানচিন্তার লেখাগুলি যখন পড়ি, আমার কিন্তু একবারও মনে হয় না যে এই লেখাগুলি আমার জন্যও নয়। ভালো লাগে এই ভেবে যে আমার ভেতরের বিজ্ঞানশিশুটা বড় হয়ে যায়নি।

এই মে মাসের সংখ্যাটি অনলাইনে আসার পরপরই মলাট থেকে মলাট (from cover to cover) পড়ে ফেললাম। প্রত্যেকটি লেখা চিত্তাকর্ষক। বাংলাদেশে বিজ্ঞানচর্চা যে ক্রমশ উৎসবে পরিণত হয়েছে – তার ক্রমবিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানা গেলো এবারের মলাট কাহিনি থেকে। পাঠকদের চিঠিপত্রগুলি পড়ে খুশি লাগলো যে – ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও বিজ্ঞানচিন্তা পড়ার আনন্দে বিভোর হবার কথা লিখে জানাচ্ছে।

বিখ্যাত রম্যলেখক আহসান হাবীব ‘বিজ্ঞানীদের বিয়ে’ নিয়ে ছোট্ট চমৎকার লেখায় বিজ্ঞানীদের বিয়ের অনিশ্চয়তার কথা লিখতে গিয়ে বিজ্ঞানী হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার সূত্র যে বিবাহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। তবে মজার ব্যাপার হলো বিজ্ঞানী ওয়ার্নার হাইজেনবার্গের নিজের বিয়েতে কিন্তু তেমন অনিশ্চয়তা ছিল না। আইনস্টাইন বা ফাইনম্যানের মতো একাধিক বিয়ে তিনি করেননি। তিনি একবারই বিয়ে করেছিলেন এলিজাবেথ সুমেকারকে। সুখি বিবাহিত জীবন ছিল তাঁদের। সাতটি সন্তানের পিতা হয়েছিলেন তিনি।

মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের বিজ্ঞান ছড়া পড়ে খুব মজা পেয়েছি। ছন্দে ছন্দে ত্রিভুজ বর্ণনা। তবে শেষের দিকে যেখানে আছে “জানো আমার তিন কোণে যে তিন সমকোণ হয়?// কোনোদিনও কম হবে না, বেশিও হবার নয়।“ – এখানে একটি মুদ্রণপ্রমাদ আছে। ত্রিভুজের তিন কোণে দুই সমকোণ হয়।

বিজ্ঞানউৎসব সম্পর্কিত সবগুলি লেখাই প্রাণবন্ত। রামন রিসার্চ ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক বিখ্যাত বিজ্ঞানলেখক বিমান নাথের ‘চাঁদের কলঙ্ক’ এ সংখ্যার অন্যতম আকর্ষণ। চাঁদের উদ্ভব থেকে শুরু করে এর ধারাবাহিক প্রাকৃতিক বিবর্তনের পর্যায়গুলি সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে এই লেখায়।

আরেকটি লেখার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে আজকের এ লেখা শেষ করবো – সেটা হলো আবুল বাসারের ‘ভর রহস্য’। ভর ব্যাপারটি আসলেই রহস্যময়। নিউটনের বলের সূত্র থেকে আমরা ভরের ক্ল্যাসিক্যাল সংজ্ঞা দিই, m = F/a . কিন্তু মাইক্রোস্কোপিক পর্যায়ে – যেখানে নিউটনিয়ান মেকানিক্স দিয়ে পুরোটা ব্যাখ্যা করা যায় না – সেখানে ভরের রহস্য গভীর হতে থাকে। নিউক্লিয়াসের ভেতর প্রোটন ও নিউট্রনকে আলাদা আলাদাভাবে যোগ করলে যে ভর পাওয়া যায়, তা গোটা নিউক্লিয়াসের ভরের চেয়ে বেশি। এই ভরের পার্থক্যকে আইনস্টাইনের ভর-শক্তির সমীকরণ দিয়ে শক্তিতে পরিণত করলে আমরা নিউক্লিয়াসের বাইন্ডিং এনার্জি বা বন্ধনশক্তি পাই। এই শক্তিতেই প্রোটন ও নিউট্রনগুলি একসাথে আবদ্ধ থাকে স্ট্রং ফোর্সের মাধ্যমে। প্রোটন কিংবা নিউট্রনের ভেতরের কোয়ার্কগুলিকে আলাদাভাবে যোগ করলেও এরকমই হয়। ‘ভর রহস্য’ রহস্যময়তার কারণেই চমৎকার।


হ্যাপি বার্থডে পিটার হিগ্‌স

 



“গুড আফটারনুন প্রফেসর”

“গুড আফটারনুন” 

এডিনবরার ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় পরিচিত অপরিচিত অনেকেই হাই হ্যালো করে তাঁকে। 

অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ সেরে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। ঘ্যাঁচ করে একটি গাড়ি থামলো ফুটপাত ঘেঁষে। গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে এলেন এক মধ্যবয়সী মহিলা। 

প্রফেসরের পথ আগলে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, “কনগ্র্যাচুলেশান্‌স প্রফেসর হিগ্‌স”। 

চুরাশি বছর বয়সেও প্রফেসর হিগ্‌সের স্মৃতিশক্তি অটুট। তিনি চিনতে পারলেন মহিলাকে। একসময় এই মহিলা তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন। প্রফেসর হিগ্‌স অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “হোয়াট্‌স দ্য নিউজ?”

“আপনি জানেন না? আপনি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। আমার মেয়ে নিউজ শুনে  আজ সকালেই আমাকে বলেছে। আশ্চর্য! আপনি জানেন না! নোবেল একাডেমি আপনাকে ফোন করেনি?”


প্রফেসর হিগ্‌স কিছুটা বিব্রতভাবে বললেন, “আমার তো সেলফোন নেই। বাসার ফোন হয়তো খেয়াল করিনি। থ্যাংক ইউ, এনিওয়ে।“

মহিলাকে বিদায় দিয়ে শান্তভাবেই হেঁটে বাসায় এলেন প্রফেসর পিটার হিগ্‌স। টিভির সংবাদ থেকে নিশ্চিন্ত হলেন যে তিনি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। 

৪৯ বছর আগে ১৯৬৪ সালে তিনি পেপার লিখেছিলেন নতুন ধরনের মৌলিক ভারী বোসন কণা থাকার সম্ভাবনার ব্যাপারে। প্রায় একই সময়ে ফ্রান্সের ফ্রাঁসোয়া ইংলার্ট এবং রবার্ট ব্রাউটও একই সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছিলেন আলাদা পেপারে। তারপর বছরের পর বছর কেটে গেছে সেই বোসন কণার সন্ধানে। তত্ত্বীয়ভাবে পদার্থবিজ্ঞানীরা সবাই একমত হয়ে এই বোসন কণার নাম দিয়েছেন হিগ্‌স বোসন। এতে কিছুটা বিব্রত হলেও মেনে নিয়েছেন প্রফেসর পিটার হিগ্‌স। মনে মনে হয়তো খুশিও হয়েছেন। কিন্তু ১৯৯৩ সালে নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী লিওন লেডারম্যান যখন ‘দ্য গড পার্টিক্যাল’ নামে বই লিখলেন – হিগ্‌স বোসনের আরেকটি নাম হয়ে গেল গড পার্টিক্যাল। এই নামে প্রচন্ড আপত্তি ছিল ঈশ্বরে অবিশ্বাসী প্রফেসর হিগ্‌স-এর। প্রফেসর লেডারম্যানও এই কণার নাম গড পার্টিক্যাল রাখতে চাননি – বলেছিলেন গডড্যাম পার্টিক্যাল। কিন্তু ঈশ্বরের নামে বাণিজ্য সবচেয়ে লাভজনক বাণিজ্য। এই বাণিজ্যের লোভেই লেডারম্যানের বইয়ের নাম প্রকাশক ‘গড পার্টিক্যাল’ রেখেছিলেন – যেখানে ব্যবসাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। বইটি ঈশ্বরের নামে প্রচুর বিক্রি হয়েছে। গড পার্টিক্যাল সম্পর্কে অনেকেই তেমন কিছু না জেনেই এই কণাকে ঈশ্বরের প্রদত্ত কণা বলে প্রচার করতে শুরু করলো। এই ব্যাপারটিতে ভীষণ বিরক্ত হয়েছেন প্রফেসর হিগ্‌স। বিরক্তির মাত্রা চরমে উঠেছে যখন কণাটি পরীক্ষাগারে শনাক্ত হবার পর সব ধর্মের লোকজনই তাদের ধর্মগ্রন্থে এই কণার উল্লেখ আছে বলে দাবি করে তাঁর কাছে শত শত চিঠি পাঠাতে শুরু করলো।

হিগ্‌স বোসন খুঁজে পেতে তিন যুগ সময় লেগেছে বিজ্ঞানীদের। ২০১২ সালের ৪ জুলাই লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের কণাবিজ্ঞানীরা ঘোষণা দিলেন যে হিগ্‌স বোসন পাওয়া গেছে। প্রফেসর হিগ্‌স সেই ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর চোখ ভিজে উঠেছিল সেদিন। 

তারপর আরো এক বছর কেটে গেছে। হিগ্‌স বোসন আবিষ্কারের তত্ত্বের জন্য প্রফেসর পিটার হিগ্‌স যে নোবেল পুরষ্কার পাবেন তা অনেকেই অনুমান করেছিলেন। কেবল পিটার হিগ্‌স নিজেই খেয়াল রাখেননি কখন ২০১৩ সালের নোবেল পুরষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। 

১৯২৯ সালের ২৯মে নিউক্যাসেলে জন্ম হয়েছিল প্রফেসর পিটার হিগ্‌স এর। আজ তাঁর ৯৪তম জন্মদিন।

শুভ জন্মদিন প্রফেসর হিগ্‌স। 


রিচার্ড ডকিন্সের সাথে একটি সন্ধ্যা


 [শুক্রবার ১৭/২/২০২৩ সন্ধ্যে ৭টা ৩০]


আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় – বিজ্ঞানের মতো সস্তা জিনিস আর নেই। এতটাই সস্তা যে পরীক্ষায় পাসের জন্য কোচিং সেন্টার ছাড়া বিজ্ঞানের জন্য আর কোথাও এক পয়সাও খরচ করতে রাজি নয় বেশিরভাগ মানুষ। নোরাহ ফাতেহির পনের মিনিট নাচ দেখার জন্য পনের হাজার টাকার টিকেট কেনার লোকের অভাব নেই, কিন্তু  বিনামূল্যেও বিজ্ঞান-বক্তৃতা শোনার জন্য লোক পাওয়া যায় না আমাদের দেশে।

তবে কিছু কিছু দেশে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই কথা প্রযোজ্য নয়। যেমন ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী ও জনপ্রিয় লেখক ব্রায়ান কক্স-এর এক ঘন্টার একটি বিজ্ঞান বক্তৃতার টিকেটের দাম দু’শ থেকে পাঁচশ ডলার।  জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় এরকম জনপ্রিয় বাগ্মী আছেন, যেমন রিচার্ড ডকিন্স, বিল ব্রাইসন, নীল টাইসন – যাদের কথা শোনার জন্য অনেক টাকার টিকেট কিনে জ্ঞানপিপাসু লোক ভীড় জমায়, বিশাল বিশাল কনভেনশান সেন্টার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এরকম দৃশ্য দেখে আনন্দ হয়, পাশাপাশি কষ্টও হয়। কষ্ট হয় এই কারণে যে জামাল নজরুল ইসলাম স্যার যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার বক্তৃতা দিতেন – তখন সায়েন্স ফ্যাকাল্টির গ্যালারির তিন ভাগের একভাগও পূর্ণ হতো না। অথচ সায়েন্স ফ্যাকাল্টির যেকোনো একটা সাবজেক্টে ভর্তি হবার জন্য কী পরিমাণ যুদ্ধ সবাই করে। 

সে যাই হোক, মূল কথায় আসি। রিচার্ড ডকিন্সের বক্তৃতা শুনতে গিয়েছিলাম। টিকেট কেনার সময় বেশ মজাই লাগছিল এই কারণে যে মেলবোর্নে অমিতাভ বচ্চনের বক্তৃতা শোনার জন্য যত ডলারের টিকেট লেগেছিল – রিচার্ড ডকিন্সের জন্য লাগলো তার দ্বিগুণেরও বেশি। 

রিচার্ড ডকিন্সকে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় বিবর্তন-জীববিজ্ঞানী বলা যায়। এই বিরাশি বছর বয়সেও পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে – লন্ডন – কানাডা – আমেরিকা – অস্ট্রেলিয়া - নিউজিল্যান্ড – দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বিশ্বের কোনো না কোনো শহরে তাঁর বিজ্ঞানবক্তৃতা থাকে। প্রতিটি বক্তৃতার জন্য তিনি পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ ডলার পর্যন্ত সম্মানী নেন। টিকেটের মূল্য থেকে এত আয় হয় যে আয়োজকদের গায়েই লাগে না। সাম্প্রদায়িকতামুক্ত যুক্তিবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রিচার্ড  ডকিন্স একটি ফাউন্ডেশান প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত বইগুলির রয়্যালটি এবং বিজ্ঞান-বক্তৃতা থেকে তিনি প্রতি বছর যে কয়েক মিলিয়ন ডলারের উপরে উপার্জন করেন তার পুরোটাই এই ফাউন্ডেশানে দিয়ে দেন। 




ভেবেছিলাম তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ঝাঁঝালো ধর্মবিরোধী বক্তৃতা দেবেন তিনি। কিন্তু প্রোগ্রামের ফরম্যাট ছিল কথোপকথন। অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত আরেকজন পৃথিবীবিখ্যাত দার্শনিক প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োএথিক্সের অধ্যাপক পিটার সিঙ্গার এবং রিচার্ড ডকিন্সের কথোপকথন। পিটার সিঙ্গারের দর্শনের সবকিছুর সাথে আমি পুরোপুরি একমত না হলেও কিছু কিছু ব্যাপারে ভীষণ একমত। তিনি কম কাজে বেশি ইমপ্যাক্টে বিশ্বাসী। যেমন একজন অন্ধ মানুষকে একটি গাইড ডগ দিতে  – গাইড ডগের ট্রেনিংসহ সবকিছু মিলিয়ে কমপক্ষে চল্লিশ হাজার ডলার খরচ হয়। সেক্ষেত্রে চল্লিশ হাজার ডলার দিয়ে শুধুমাত্র একজন অন্ধ মানুষকে সহায়তা করা যায়। অথচ যদি অন্ধদের চোখ পরীক্ষা করে বোঝা যায় যে অপারেশান করলে চোখ ভালো হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে তাহলে চল্লিশ হাজার ডলার দিয়ে এরকম বিশ জন মানুষের চোখ ভালো করে দেয়া যায়। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও মানুষের জন্য করতে চাইলে অনেক কিছু করা যায়। অথচ আমরা এরকমও দেখি – আর্তজনকে দশ হাজার টাকা দেয়ার জন্য লাখ টাকা খরচ করে অনুষ্ঠান করা হয়, অতিথিদের বহুমূল্য ক্রেস্ট দেয়া হয়, লম্বা লম্বা বক্তৃতা দেয়া হয়। 

পিটার সিঙ্গার আর রিচার্ড ডকিন্স ঘন্টাখানেক কথা বললেন মানুষের বিভিন্ন মানবিক গুণাবলির উৎকর্ষ সাধনে কী কী করা যায় সেসব নিয়ে। দর্শকদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যা বেশি। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরি করতে পারা যে সভ্যতার লক্ষণ, এবং সেক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে একটা বিরাট দায়িত্ব থাকে – তা অনস্বীকার্য। 

আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি কি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারছে? মোসায়েবি করা কি জ্ঞানের পর্যায়ে পড়ে? 


Sunday 11 June 2023

I Hate Men – সদম্ভ ঘৃণার চাষ

 



বই: I Hate Men

লেখক: Pauline Harmange

ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ: Natasha Lehrer

প্রকাশক: 4th State London

প্রকাশকাল: 2020, 2022. 

পৃষ্ঠাসংখ্যা: 99

পলিন হামাঞ্জের জন্ম ১৯৯৪ সালে ফ্রান্সে


তরুণ ফরাসী উগ্র নারীবাদী লেখক পলিন হামঞ্জ (Pauline Harmange – ফরাসি উচ্চারণ আমার আসে না, অনলাইনে কয়েকবার শুনে মনে হলো এরকমই কিছু বলা হয়েছে) কিংবা ইংরেজি উচ্চারণে পলিন হারমান্‌জ-এর নাম আমি আগে কখনো শুনিনি। অবশ্য শোনার কথাও নয়। নারীবিজ্ঞানীদের ব্যাপারে সামান্য খোঁজখবর রাখলেও, উগ্র নারীবাদীদের ব্যাপারে আমার কোন আগ্রহ নেই। কোনো নির্দিষ্ট আদর্শ কিংবা নীতি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রবর্তিত সমাজবাদ, ভক্তিবাদ, যুক্তিবাদের মতোই নারীবাদেও অনেক ভালো ভালো ব্যাপার আছে। কিন্তু যখনই কোন মতবাদে উগ্রতা যুক্ত হয় – তখন তা যত বড় আদর্শই হোক – বাদ দিতে ইচ্ছে করে। 

বইয়ের নাম “I Hate Men” দেখে বেশ অবাক হয়েই বইটি কিনেছি। নারীবাদীরা পুরুষদের ইচ্ছেমতো গালাগালি দিয়ে অনেক বইপত্র লিখে থাকেন। ডেইল ডিয়ানা সোয়ার্জ-এর চূড়ান্ত গালিময় একটি বই আছে “All Men Are Jerks” অবশ্য সেখানেও একটি স্টারমার্ক দিয়ে কিছুটা নমনীয় ভাব দেখানো হয়েছে “until proven otherwise” বলে। কিন্তু একেবারে সরাসরি সমগ্র পুরুষজাতিকে ঘৃণা করে “I Hate Men” নাম দিয়ে আর কোনো বই আগে লেখা হয়নি। পুরো  অ্যামাজন ঘেঁটেও এরকম কোনো বই পাইনি। পুরুষরা নারীদের উপর একটা তীব্র যন্ত্রণাময় ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে সেটা বহুল প্রচারিত এবং প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু পুরুষরা এখনো “I Hate Women” নামে কোন বই লেখেনি। সেক্ষেত্রে “I Hate Men” নিসন্দেহে অগ্রদূত। 

 সব ঘৃণার উল্টোপিঠেই ভালোবাসা থাকে এরকম একটা আপ্তবাক্য ঘুরে বেড়ায় প্রেমিক-মনের অন্দরে। আমারও বিশ্বাস ছিল এই বইটিতে ঠাঁসবুনোট ঘৃণার পাশাপাশি না হোক, কোনো এক কোণায় হলেও কিঞ্চিৎ ভালোবাসার আভাস থাকবে ভালোবাসা পাবার যোগ্য মানুষদের জন্য। কিন্তু না, লেখক বইয়ের তৃতীয় পৃষ্ঠাতেই পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, “I hate men. All of them, really? Yes, the whole lot of them. By default, I have very little respect for any of them.” 

লেখক নিজেই স্বীকার করেছেন, তিনি উভয়কামী,এবং একজন পুরুষকে বিয়ে করে বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘরও করছেন। তাঁর নিজের স্বীকারোক্তিতেই পরিষ্কার যে তিনি তাঁর পুরুষ স্বামীকেও ঘৃণা করেন। ঘৃণা করেন, অথচ ছেড়ে দিচ্ছেন না। আবার এক বা একাধিক নারীর সাথেও তাঁর প্রেম কিংবা কামের সম্পর্ক। এরকম সম্পর্কের জোড়াতালি নিয়ে তিনি এত জোরের সাথে পৃথিবীর সমস্ত পুরুষের প্রতি ঘৃণা উগরে দিচ্ছেন। যুক্তি কী? পুরো বইতে কোনও একটা নতুন যুক্তি নেই – যা গত শত বছর ধরে নারীবাদীরা পুরুষদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেননি। 

বইটি খুব একটা বড় নয়। মাত্র নব্বই পৃষ্ঠা – তাও ছোট্ট পুস্তিকার আকারে ছাপানো হয়েছে লন্ডনের বিখ্যাত প্রকাশনী ফোর্থ স্টেট থেকে। স্বাভাবিক বইয়ের আকারে ছাপানো হলে পঞ্চাশ পৃষ্টার বেশি হবে না। 

এই বইতে লেখক মিসোজিনি বা নারীবিদ্বেষ এর অনুকরণে মিস্যানড্রি (misandry) বা পুরুষবিদ্বেষ প্রতিষ্ঠা করার উপর খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। পুরুষদের ঘৃণা করলেও তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, “We don’t injure or kill men, we don’t prevent them from getting a job or following whatever their passion is, or dressing as they wish, or walking down the street after dark, or expressing themselves however they see fit.” (পৃষ্ঠা ৩৮)। অর্থাৎ পুরুষদের প্রতি এই ঘৃণা পুরোপুরি অহিংস। এই ঘৃণার বশবর্তী হয়ে তিনি পুরুষদের আহত কিংবা নিহত করছেন না, চাকরি পেতে বাধা দিচ্ছেন না, স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন না, পোশাক কিংবা চলন কিংবা বচন - কোথাও কোনো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন না। কেবল নির্ভেজাল ঘৃণাই করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো তাতে কী অর্জিত হবে? পুরুষরা তাতে বদলে যাবে? বদলালেও তো ঘৃণ্য পুরুষই থাকবে! 

চাকরিক্ষেত্রে নারীদের প্রতি বৈষম্য এখনো অনেক ক্ষেত্রেই রয়ে গেছে। কিন্তু অনেক দেশেই এই বৈষম্য কমানোর ব্যাপারে কাজ চলছে। লেখকের নিজের দেশ ফ্রান্সে এই বৈষম্য উন্নয়নশীল অনেক দেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে কম। তবুও তিনি তেমন কোন পরিসংখ্যানের উল্লেখ ছাড়াই দাবি করেছেন চাকরিক্ষেত্রে সব অযোগ্য মাঝারি মেধার শ্বেতাঙ্গ পুরুষরাই দখল করে আছে সবগুলি পদ। মেয়েরা যেখানে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে যোগ্য মনে না করলে দরখাস্তই করে না কোন চাকরিতে – সেখানে শ্বেতাঙ্গ পুরুষরা নিজের অযোগ্যতা নিয়েই নির্লজ্জভাবে চাকরি দখল করছে। এই ব্যাপারটা প্রমাণ করতে হলে নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দরকার। যা এই বইয়ের কোথাও নেই। 


পলিন হামাঞ্জ


লেখক মনে করছেন নারী যে পুরুষকে ভালোবাসে, বিয়ে করে, পারস্পরিক শারীরিক আকর্ষণ – সবকিছুই একটা ফাঁদ। কিন্তু এই ফাঁদটি কে পেতেছে সে ব্যাপারে লেখক কোন প্রশ্ন করেন না। প্রকৃতি যদি এই ফাঁদ পেতে থাকে – প্রকৃতিও কি পুরুষ? পল ডোলানের ‘হ্যাপি এভার আফটার’ বইয়ের সূত্র ধরে লেখক দাবি করছেন যে নিসন্তান একা নারীরাই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখি। পৃথিবীর সব নারী কি এই কথা মেনে নেবেন? লেখক নিজের ব্যক্তিগত বিশ্বাস প্রায়ই অন্যদের নামে চালিয়ে দিয়েছেন বইয়ের সর্বত্র। এই বইটি নারীবাদকে কোনোভাবেই সাহায্য করবে বলে আমার মনে হয় না। 

ভালোবাসার চেয়ে ঘৃণার কাটতি যে বেশি তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এটা কোন সভ্য সমাজের কাঙ্খিত প্রতিফলন হতে পারে না। তবুও মেনে নিতে নিতে অবস্থা এমন হয়েছে যে এই অনাকাঙ্খিত ফলাফল দেখে আমাদের সভ্য-ভ্রু যতটা কুঞ্চিত হবার কথা, ততটা এখন আর হয় না। ভালোবাসা-ঘৃণা-আনন্দ-বেদনা-প্রেম-ঈর্ষা-মিলন-বিরহ এরকম যত মানবিক বোধ আছে সেগুলি নিয়েই মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের বীজ-চারা-বৃক্ষ-ডালপালা। সাহিত্যের মূল উপাদানই হলো মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক। সেখানে ঘৃণার স্থান যে একেবারে নেই – তা নয়। যে কোনো মানুষিক সমাজে যেখানে ভালোবাসায় বসতি – সেখানে নানা টানাপোড়েনে ঘৃণাও উঁকিঝুঁকি দেয়। কিন্তু প্রকাশ্যে কোনো একটি নির্দিষ্ট জাতির প্রতি উদ্যত ঘৃণার ঘোষণা – শিল্প-সাহিত্য কিংবা সভ্য সমাজের কোথাও গ্রহণযোগ্য নয়। নির্দ্বিধায় একটি জাতির সবাইকে ঘৃণা করার সদম্ভ-ঘোষণাকে মেনে নেয়াকে আর যাই হোক – সহনশীলতা বলা চলে না। কিন্তু বাকস্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে যখন কেউ সরাসরি “I Hate Men” নামে বই লিখে পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দেন যে শুধুমাত্র পুরুষ হয়ে জন্ম নেয়ার কারণেই সব পুরুষই ঘৃণ্য – তখন কি মেনে নেয়া যায়? যদি মেনে নিতে হয় – তাহলে কাল কেউ যদি সরাসরি ধর্মভিত্তিক, বর্ণভিত্তিক ঘৃণা প্রকাশ করে তাও মেনে নিতে হবে। 

এই বইটির ঘৃণানির্দেশক নামই হলো এর বাণিজ্যিক সাফল্যের মাপকাঠি। ২০২০ সালে ফ্রান্সের ছোট্ট একটা প্রকাশনী থেকে বইটি যখন বের হয় ফরাসি ভাষায়, সাড়ে চারশ কপি ছাপানো হয়েছিল। ওগুলি বিক্রি করতে পারলেই প্রকাশক খুশি হয়ে যেতেন। কিন্তু কলকাঠি নড়লো অন্য জায়গা থেকে। বইয়ের আপত্তিকর শিরোনাম দেখে ফরাসি সরকারের লিঙ্গ-সমতা বিভাগ থেকে আপত্তি জানানো হলো। প্রকাশককে নোটিশ পাঠানো হলো যে এই বইয়ের নাম গ্রহণযোগ্য নয়। ফ্রান্সে সহজে কোন বই নিষিদ্ধ করা যায় না। কিন্তু প্রকাশক জানেন নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতিই মানুষের আকর্ষণ বেশি। তিনি প্রচার করে দিলেন যে বইটি নিষিদ্ধ হতে পারে। তাতেই বইয়ের কাটতি বেড়ে গেল। ধাঁই করে তিনি আড়াই হাজার কপি ছাপিয়ে ফেললেন। বিক্রি হয়ে গেল হু হু করে। ছোট্ট প্রকাশক এবার বইটি বড় প্রকাশককে দিয়ে দিলেন। ইংরেজিসহ আরো আঠারোটি ভাষায় অনুবাদ করা হলো। বিখ্যাত হয়ে গেলেন লেখক পলিন হামাঞ্জ। বক্তব্য সারবস্তু থাকুক না থাকুক, অন্তসারশূন্য বিতর্কের ঝড় তুলতে পারলেই তো হয়ে গেলো। এখানেও তাই হয়েছে। 

১১/৬/২০২৩


Latest Post

ডাইনোসরের কাহিনি

  বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণি কী? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলবো নীল তিমি – যারা দৈর্ঘ্যে প্রায় তিরিশ মিটার, আর ওজনে প্রায় ১৯০ টন পর্যন্ত...

Popular Posts