Wednesday 17 July 2019

আইনস্টাইনের কাল - পর্ব-২৪ (শেষ পর্ব)


১৯৫১
অনেকদিন শয্যাশায়ী থাকার পর জুনের পঁচিশ তারিখে আইনস্টাইনের বোন মায়া মারা গেছেন। বোনকে হারিয়ে আরো একা হয়ে গেলেন আইনস্টাইন। বাড়িতে এখন তিনজন মাত্র মানুষ- হেলেন ডুকাস, মার্গট ও আইনস্টাইন।

আইনস্টাইন এখনো কাজ করছেন ইউনিফায়েড ফিলড থিওরির ওপর। অভিকর্ষজ বল ও তড়িৎচুম্বকীয় বলকে একই ফ্রেমে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন আইনস্টাইন। আইনস্টাইনের বিশ্বাস- প্রকৃতিতে দুটো আলাদা আলাদা বল থাকতে পারেনা, সব প্রাকৃতিক বলই কোন না কোন ভাবে একই ফ্রেমে আবদ্ধ। তখনো স্ট্রং ও উইক নিউক্লিয়ার ফোর্সের আলাদা অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়নি। এখন অবশ্য বিজ্ঞানীরা থিওরি অব এভরিথিং(Theory Of Everything)- এর সন্ধানে গবেষণা করছেন।

প্রকাশনা
পেপারঃ২৭৪ Foreward.In Spinaoza:Dictionary. সম্পাদনাঃ ড্যাগোবার্ট রুনিস(Dagobert D.Runes), প্রকাশকঃফিলোসফিক্যাল লাইব্রেরি, নিউইয়র্ক (১৯৫১)। ড্যাগোবার্ট রুনিস সম্পাদিত স্পিনোজার অভিধানের ভূমিকা লিখে দেন আইনস্টাইন। বারুস স্পিনোজা (Baruch Spinoza)ছিলেন সপ্তদশ শতাব্দীর ইহুদি ধর্মতত্ত্ববিদ ও দার্শনিক। আইনস্টাইনের ব্যক্তিগত ধর্মচিন্তায় হল্যান্ডের এই দার্শনিকের অনেক প্রভাব সুস্পষ্ট। স্পিনোজা উগ্র-ইহুদিবাদের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন টোরাহ(Torah) শাস্ত্রের নিয়ম-কানুন এ যুগে অচল। রক্ষণশীল ইহুদিরা স্পিনোজাকে পছন্দ করেন না। স্পিনোজার দার্শনিক রচনাবলীর সংকলন স্পিনোজা-অভিধান। আইনস্টাইন এর ভূমিকায় বইটির প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে বইটির প্রশংসা করেন।  

পেপারঃ২৭৫ The Advent of the Quantum Theory. Science, সংখ্যা ১১৩ (১৯৫১), পৃষ্ঠাঃ৮২-৮৪। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন কোয়ান্টাম তত্ত্বের উৎপত্তি বিশ্লেষণ করেন।

পেপারঃ২৭৬ Introduction.In Johannes Kepler:Life and Letters. সম্পাদনাঃক্যারোলা ব্যুমগার্ড, প্রকাশকঃফিলোসফিক্যাল লাইব্রেরি, নিউইয়র্ক (১৯৫১)। জোহানেস কেপলারের চিঠিপত্রের সংকলন ও সম্পাদনা করেন ক্যারোলা ব্যুমগার্ড(Carola Baumgardt)। আইনস্টাইন এ সংকলনে ভূমিকায় কেপলারের যুগান্তকারী গবেষণা ও আবিষ্কারের কথা স্মরণ করেন। পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহের গতিপথ আবিষ্কার করেছেন কেপলার। গ্যালিলিও থেকে শুরু করে আরো অনেকের কাছে লেখা কেপলারের চিঠি থেকে জানা যায় প্রচন্ড কষ্ট সহ্য করে গবেষণা করতে হয়েছে কেপলারকে।

১৯৫২
ইসরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্ট চেইম ওয়েইজম্যান মারা গেছেন। ইসরায়েলি নেতারা আইনস্টাইনকে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করলেন। সিনিয়র নেতাদের এ সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড-বেন-গুরিয়ন সহ ইসরায়েল সরকারের অনেকেই গভীর উৎকন্ঠায় পড়ে গেলেন। প্রধানমন্ত্রী বেন-গুরিয়ন ইৎজাক ন্যাভনকে প্রশ্ন করলেন, আইনস্টাইন যদি রাজী হয়ে যান তখন কী হবে? তাঁকে তো প্রেসিডেন্ট বানাতেই হবে। কারণ তখন তো আর অনুরোধ ফিরিয়ে নেয়া যাবে না। আইনস্টাইন প্রেসিডেন্ট হলে আমাদের যে কীরকম সমস্যা হবে বুঝতে পারছেন?

আইনস্টাইন ইসরায়েলের নেতাদের সবিনয়ে জানিয়ে দিলেন, আমি খুব সম্মানিত বোধ করছি এরকম একটি প্রস্তাব পেয়ে। তবে আমি প্রেসিডেন্ট পদের উপযুক্ত নই। ইসরায়েলের নেতারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদের ওপর অত্যাচারের ক্ষতিপূরণ দিতে রাজী হয়েছে জার্মানি। জার্মানি আইনস্টাইনকে আবারো সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিতে চাচ্ছে। আইনস্টাইন এবারো দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন সে প্রস্তাব।

১৯১৯ সালের মত এবছর ফেব্রুয়ারিতে আবার সূর্যের পূর্ণগ্রহণ দেখা গেছে ইউরোপ থেকে। জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা এবছর আবার প্রমাণ পেয়েছেন আলোর ওপরও অভিকর্ষণের প্রভাব আছে। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আবারো সঠিক প্রমাণিত হলো। নভেম্বরের ১৮ তারিখে আমেরিকা প্রশান্ত মহাসাগরের মার্শাল আইল্যান্ডে প্রথম হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।

প্রকাশনা
এ বছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের তিনটি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ

পেপারঃ২৭৭ Foreword হোমার স্মিথের Man and His Gods বইয়ের ভূমিকা। প্রকাশকঃলিটল ব্রাউন, বোস্টন (১৯৫২)। খ্যাতিমান জীববিজ্ঞানী হোমার স্মিথের ধর্ম ও দর্শনের ইতিহাসভিত্তিক বই ম্যান এন্ড হিজ গডস- এর ভূমিকা লিখে দেন আইনস্টাইন। আইনস্টাইন স্মিথের বস্তুনিষ্ঠতার প্রশংসা করেন।

পেপারঃ২৭৮ Those Who Read Only Newspapers See Things Like a Nearsighted Person without Glasses.Der Jungkaufmann (Zurich),বর্ষ ২৭, সংখ্যা ৪(১৯৫২), পৃষ্ঠাঃ৭৩। সুইজারল্যান্ডের ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এই প্রবন্ধে আইনস্টাইন তরুণতরুণীদের প্রতি ক্লাসিক বই পড়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যারা সংবাদপত্র ছাড়া আর কিছুই পড়েনা, তাদের চিন্তাভাবনা চশমা ছাড়া স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের দৃষ্টির মতই সীমাবদ্ধ। শিল্পসাহিত্য বা দর্শনের খুব সামান্য অংশই কালোত্তীর্ণ হয়, আর ওই কালোত্তীর্ণ রচনাই মানব-সভ্যতার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, বিশ্বমানবতার দলিল।

পেপারঃ২৭৯ Symptoms of Cultural Decay. Bulletin of Atomic Scientists, বর্ষ ৮, সংখ্যা ৭ (অক্টোবর ১৯৫২)। বুলেটিন অব এটমিক সায়েন্টিস্টস-এ প্রকাশিত এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিকদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা উচিত নয় এবং অন্যদেশের সাথে বৈজ্ঞানিক গবেষণা-বিনিময়েও বাধা দেয়া উচিত নয়। আইনস্টাইন বলেন, বর্তমান রাজনীতিবিদদের বিশ্বাস করা যায় না। তাঁরা এমন কর্তৃত্বপরায়ণ যে শান্ত স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও তাঁরা সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ও কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে চান, মানুষকে সংগঠিত করতে চান যেন আমাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে।

১৯৫৩
আইনস্টাইনের শরীর খুব খারাপ হয়ে গেছে। প্রিন্সটনের রাস্তায় হাঁটা, আইসক্রিম পার্লারে গিয়ে আইসক্রিম খাওয়া, প্রতিবেশীর সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করা- সবকিছুই বন্ধ হয়ে গেছে তাঁর। পৃথিবী থেকে মিলিটারি সিস্টেম উঠে গেলেই খুশি হন আইনস্টাইন। মিলিটারি সার্ভিসের বিরুদ্ধে তিনি সবসময় কথা বলেছেন। গঠিত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশান অব অপোনেন্টস অব মিলিটারি সার্ভিস (International Organization of Opponents of Military Service). এই সংগঠনের পক্ষ থেকে আইনস্টাইনকে অনুরোধ করা হলো সংগঠনের জার্মান শাখার সভাপতির পদ গ্রহণ করার জন্য। আইনস্টাইন জার্মানির জন্য কিছুই করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন। তিনি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন।

প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের ছয়টি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ

পেপারঃ২৮০ To the Jewish Peace Fellowship. Tidings, বর্ষ ৮, সংখ্যা ১ (১৯৫৩), পৃষ্ঠাঃ৩। ইহুদিদের একটি শান্তিবাদী সংগঠনে আইনস্টাইনের এ ভাষণটি পাঠ করা হয়।

পেপারঃ২৮১ A Comment on a Criticism  of a Recent Unified Field Theory. Physical Review, সংখ্যা ৮৯ (১৯৫৩), সংখ্যা ৩২১। ইউনিফায়েড ফিলড থিওরির ওপর এটাই আইনস্টাইনের শেষ গবেষণাপত্র। সমন্বিত তত্ত্বের গাণিতিক বিশ্লেষণের ব্যাপারে তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলেও ঠিক কীভাবে তত্ত্বটি কাজ করে সে ব্যাপারে তিনি এখনো নিশ্চিন্ত নন। থিওরির ফিজিক্স সম্পর্কেও নির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি এখনো।

পেপারঃ২৮২ Elementary Reflections on the Interpretation of the Foundations of Quantum Mechanics. In Scientific Papers Presented to Max Born. প্রকাশকঃ অলিভার এন্ড বয়েড,এডিনবরা (১৯৫৩)। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন কোয়ান্টাম থিওরি থেকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উত্তরণের পথে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কিছু টার্ম ব্যাখ্যা করেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাফল্যের প্রায় বিশ বছর পরেও আইনস্টাইন কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে সম্পূর্ণ মেনে নিতে পারছেন না।

পেপারঃ২৮৩ Preface.In Galileo Galilei,Dialouge Concerning the Two Chief World Systems: Ptolemaic and Copernican.অনুবাদঃ স্টিলম্যান ড্র্যাক। প্রকাশকঃ ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস, বার্কলি ও লস এঞ্জেলেস (১৯৫৩)। টলেমি ও কোপারনিকাস তত্ত্বের তুলনামূলক আলোচনা ভিত্তিক গ্যালিলিওর এই বইটি পুনঃপ্রকাশের সময় আইনস্টাইনের এই ভূমিকাটি প্রকাশিত হয়।

পেপারঃ২৮৪ Letter in Reply to Willium  Frauenglass. Bulletin of the Atomic Scientists, সংখ্যা ৯ (১৯৫৩), পৃষ্ঠাঃ২৩০। ব্রুকলিনের স্কুলশিক্ষক উইলিয়াম ফ্রয়েনগ্লাসকে কমিউনিস্ট সন্দেহে সিনেটর ম্যাককারথির অফিস থেকে চিঠি পাঠানো হয়। আমেরিকান সিনেটর ইন্টারনাল সিকিউরিটি সাবকমিটির সামনে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে তাঁকে। তিনি আইনস্টাইনের কাছে পরামর্শ চাইলেন। আইনস্টাইন মে মাসের ১৬ তারিখে উইলিয়াম ফ্রয়েনগ্লাসকে এই চিঠিটি লেখেন। আইনস্টাইন ফ্রয়েনগ্লাসকে পরামর্শ দেন সিনেট কমিটির কাছে না যাবার জন্য। আইনস্টাইন বলেন, প্রত্যেক বুদ্ধিজীবীরই উচিত এধরণের ব্যবস্থার প্রতিবাদ করা। কারণ এই ব্যবস্থা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অনুসারে মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ শুধুই নয়, এই ব্যবস্থা সংবিধান লঙ্ঘন করে নিরপরাধ নাগরিকের ওপর রাষ্ট্রের অত্যাচার।

পেপারঃ২৮৫ Message to the 24th Annual Conference of the War Resisters League. ১০ আগস্ট ১৯৫৩, নিউইয়র্ক। ওয়ার রেজিস্ট্রারস লিগের ২৪ তম বার্ষিক অধিবেশনে আইনস্টাইনের এই বাণী পঠিত হয়। আইনস্টাইন যুদ্ধবিরোধী এই সংগঠনের কার্যকলাপের প্রশংসা করেন এবং তাদের সাফল্য কামনা করেন।

১৯৫৪
রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন আইনস্টাইন। অসুস্থ শরীরেও কাজ করে যাচ্ছেন তিনি যতটুকু পারছেন। সহযোগী গবেষক ব্রুরিয়া কফম্যানের সাথে কাজ করে আইনস্টাইন জীবনের শেষ বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রটি শেষ করেন এবছর। পেপারটি প্রকাশিত হয়েছে পরবর্তী বছর (পেপার-২৯৪)।

আমেরিকান সিনেটর ম্যাককারথির নেতৃত্বে কমিউনিস্ট শিকার জোরেশোরেই চলছে। বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণারত অধ্যাপক ও বিজ্ঞানীরা সবাই তটস্থ হয়ে আছেন, কখন ডাক আসে হাউজ আন-আমেরিকান অ্যাক্টিভিটিজ কমিটি থেকে। কমিটি এখন লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবোরেটরির ডাইরেক্টর, আমেরিকার প্রথম পারমাণবিক বোমার জনক রবার্ট ওপেনহেইমারকে জেরা করছে। কমিটির ধারণা, কমিউনিস্টদের প্রতি সমর্থন আছে ওপেনহেইমারের। ওপেনহেইমারের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেনস বাতিল করে দেয়া হলো, সব ধরণের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো তাঁকে। যে মানুষটি পারমাণবিক বোমার বৈজ্ঞানিক প্রকল্পে নেতৃত্ব দিয়ে আমেরিকাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী (বা ভয়ঙ্কর) দেশে পরিণত করেছেন সেই ওপেনহেইমারকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো আমেরিকা।
আইনস্টাইন প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত ওপেনহেইমারকে সমর্থন করেছেন। তিনি প্রকাশ্যে কঠোর ভাষায় কমিটির সমালোচনা করেছেন। আইনস্টাইন দেশের সব বিজ্ঞানীদের আহ্বান জানিয়ে চলেছেন যেন কমিটির সামনে কেউ না যায়। আমেরিকান বামপন্থী ও উদারপন্থীরা আইনস্টাইনের সাহসের প্রশংসা করলেন। তাঁদের কাছে আইনস্টাইন এখন হিরো। অন্যদিকে রক্ষণশীল ডানপন্থী ও উগ্রপন্থী আমেরিকানদের চোখে আইনস্টাইন একজন দেশদ্রোহী। তাঁরা এখন আইনস্টাইনের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাঁকে আমেরিকা থেকে বের করে দেবার দাবী তুলছেন। দেশদ্রোহী আইনস্টাইনের বিচার চেয়ে মিছিল মিটিং হচ্ছে। আইনস্টাইন জ্ঞানবিজ্ঞান ও নাগরিক অধিকারের এরকম অপমান জার্মানিতে দেখেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে। এখন আমেরিকায় আবার একই রকম অপমান দেখে ভীষণ হতাশ হয়ে পড়লেন।

সিনেটর ম্যাককারথি এবার নজর দিলেন আমেরিকান মিলিটারি ডিপার্টমেন্টের দিকে। তিনি প্রমাণ করতে চান যে মিলিটারিতেও কমিউনিস্ট-দূষণ ঘটেছে। এতদিন শিল্পী, বিজ্ঞানী আর বুদ্ধিজীবীদের অপমান উপভোগ করেছেন মিলিটারিরা। এবার তাঁদের দিকে বন্দুক তাক করতেই তাঁরা ক্ষেপে গেলেন। আর্মিদের এটর্নি সিনেটে ম্যাককারথিকে সরাসরি প্রশ্ন করলেন, আপনার কি লজ্জা-শরম নেই? কয়েকদিনের মধ্যেই ম্যাককারথির দিন শেষ হয়ে গেলো। তাঁর সব ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হলো। সিনেটে ম্যাককারথির কাজের সমালোচনা করে বলা হলো যে, তিনি আমেরিকান সিনেটের অপমান করেছেন। ম্যাককারথির রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেলেও বিশ্বরাজনীতিতে ম্যাককারথিজম নামক নতুন শব্দ চালু হয়ে গেলো। কোনরকম প্রমাণছাড়া শুধুমাত্র সন্দেহবশত বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাউকে হেনস্থা করার নাম দেয়া হলো ম্যাককারথিজম

আমেরিকা এবছর আরেকটি হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে। বিস্ফোরণের ফলে তিনটি দ্বীপ বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে। ওপেনহেইমার এখন শান্তিবাদী। আইনস্টাইনের সাথে গলা মিলিয়ে তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানালেন হাইড্রোজেন বোমা প্রকল্পের। আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার পারমাণবিক বিস্ফোরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠলো।

প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের ছয়টি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ

পেপারঃ২৮৬ Ideas and Opinions.অনুবাদঃসোনিয়া বার্গম্যান(Sonja Bargmann)। প্রকাশকঃ ক্রাউন, নিউইয়র্ক (১৯৫৪)। বিভিন্ন বিষয়ে আইনস্টাইনের প্রবন্ধের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংকলন এই বই। জার্মান ভাষায় লিখিত প্রবন্ধগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন আইনস্টাইনের সহকারী ভ্যালেন্টাইন বার্গম্যানের স্ত্রী সোনিয়া বার্গম্যান। বইটির বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুলোর একটি ভূমিকা লিখেছেন ভ্যালেন্টাইন বার্গম্যান।

পেপারঃ২৮৭ Algebric Properties of the Field in the Relativistic Theory of the Asymmetric Field. Annals of Mathematics, সংখ্যা ৫৯ (১৯৫৪), পৃষ্ঠাঃ২৩০-২৪৪। সহলেখকঃ ব্রুরিয়া কফম্যান। এটি আইনস্টাইনের জীবনের শেষ গবেষণাপত্র। সহযোগী গবেষক ব্রুরিয়া কফম্যানের সাথে লিখিত এই গবেষণাপত্রে রিলেটিভিস্টিক ফিল্ড থিওরির বীজগাণিতিক ধর্ম বিশ্লেষণ করেছেন।

পেপারঃ২৮৮ Foreword.ম্যাক্স জ্যামারের Concepts of Space বইয়ের মুখবন্ধ। প্রকাশকঃ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, কেমব্রিজ (১৯৫৪)।

পেপারঃ২৮৯ The Meaning of Relativity.পঞ্চম সংস্করণ, প্রকাশকঃ প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রিন্সটন, নিউজার্সি (১৯৫৪)। আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি থিওরি থেকে শুরু করে সমন্বিত তত্ত্ব পর্যন্ত আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা সংক্রান্ত গবেষণার সংকলন এই বই। আইনস্টাইন পঞ্চম সংস্করণে বেশ কিছু নতুন বিষয় যোগ করেন এবং আগের সংকলনের অনেক কিছু পরিবর্তন করেন। চতুর্থ সংস্করণের অ্যাপেন্ডিক্স-২ এর জেনারালাইজেশান অব গ্র্যাভিটেশান থিওরির পুরোটাই বদলে ফেলে পঞ্চম সংস্করণে রিলেটিভিস্টিক থিওরি অব দি নন-সিমেট্রিক ফিলড শিরোনামে সংযোজন করেন। এটাই ছিলো আইনস্টাইনের অভিকর্ষজ ক্ষেত্র ও তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের সমন্বয় সাধনের সর্বশেষ চেষ্টা।

পেপারঃ২৯০ If Einstein Were Young Again,He Says Hed Become a Plumber. নিউইয়র্ক টাইমস, ১০ নভেম্বর ১৯৫৪। অক্টোবরের ১৩ তারিখে দি রিপোর্টার-এর সম্পাদকের কাছে লেখা একটি চিঠির ওপর ভিত্তি করে নিউইয়র্ক টাইমস নভেম্বরের ১০ তারিখে এই প্রবন্ধটি প্রকাশ করে। আবার যদি জন্ম হয়- আইনস্টাইন কী হতে চান সেজন্মে? আইনস্টাইন লিখেছেন, পরবর্তী জন্মে তিনি আর বৈজ্ঞানিক হতে চান না। তিনি হতে চান মিস্ত্রী বা ফেরিওয়ালা। তিনি দেখতে চান মিস্ত্রী বা ফেরিওয়ালার কাজে বর্তমানে যে স্বাধীনতা আছে, তখনো সে স্বাধীনতা থাকে কিনা। যদি থাকে, তখন হয়তো পূর্ণ-স্বাধীনতায় পদার্থবিজ্ঞানচর্চা করা যাবে। কারণ আইনস্টাইন বিশ্বাস করেন, চাকরি করে গবেষণা করতে হলে সে গবেষণা স্বাধীন নয়।

পেপারঃ২৯১ Tribute to Joseph Scharl. নিউইয়র্ক টাইমস, ৯ ডিসেম্বর ১৯৫৪। শিল্পী জোসেফ শার্ল আইনস্টাইনের ছবি এঁকেছিলেন। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন শিল্পী শার্লের প্রশংসা করেন।

১৯৫৫
মার্চের ১৪ তারিখে আইনস্টাইন ছিয়াত্তরতম জন্মদিন পালন করলেন। তাঁর বন্ধুরা চেয়েছিলেন বেশ জাঁকজমক করে জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে। কিন্তু আইনস্টাইন রাজী হননি। কয়েকজন ঘনিষ্ঠবন্ধুদের সাথে ঘরোয়াভাবে সাদামাটা একটি অনুষ্ঠান হলো। এক সপ্তাহ পরে তিনি খবর পেলেন, তাঁর প্রিয় বন্ধু মাইকেল বেসো মারা গেছেন।

 আইনস্টাইনের সুখে দুঃখে সবসময় পাশে থাকতেন মাইকেল বেসো। স্পেশাল রিলেটিভিটির সময় থেকে শুরু করে মিলেইভার সাথে বিচ্ছেদের সময়ও মাইকেল বেসোই ছিলেন আইনস্টাইনের সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু। ভীষণ মুষড়ে পড়লেন আইনস্টাইন।

সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক বোমা তৈরি করে ফেলেছে। আমেরিকা ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণ করে শক্তির আস্ফালন করেছে। আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল আইনস্টাইনের কাছে অনুরোধ করেছেন পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার জন্য বিশ্বনেতাদের কাছে আবেদন করার জন্য। বার্ট্রান্ড রাসেল আবেদনের খসড়া তৈরি করেছেন। এগারোই এপ্রিল আইনস্টাইন আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করে পাঠিয়ে দিলেন বার্ট্রান্ড রাসেলের কাছে।

ইসরায়েল রাষ্ট্রের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইসরায়েল সরকার আইনস্টাইনকে প্রধান অতিথি করে নিয়ে যেতে চাচ্ছে ইসরায়েলে। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আইনস্টাইনের পক্ষে ইসরায়েল ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। ঠিক হলো আইনস্টাইনের বক্তৃতা রেকর্ড করে নিয়ে যাওয়া হবে ইসরায়েলের রেডিওতে প্রচার করার জন্য। আইনস্টাইন বক্তৃতার খসড়া তৈরি করতে শুরু করলেন।

এপ্রিলের ১৩ তারিখে পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলেন আইনস্টাইন। এরকম ব্যথা তাঁর আগেও হয়েছে। বেশ কয়েকবছর আগে তাঁর পেটের একটি ধমনীর দেয়ালে টিউমার (aneurysm)হয়েছে এবং তা দিনে দিনে বড় হচ্ছে। যে কোনদিন সেটি ফেটে যেতে পারে। ব্যথা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এরকম তীব্র ব্যথা আগে কোনদিন লাগেনি। হেলেন ডুকাস ডাক্তারকে ফোন করলেন। আইনস্টাইনের ব্যক্তিগত ডাক্তার পরামর্শ দিলেন হাসপাতালে ভর্তি হতে। কিন্তু আইনস্টাইন কিছুতেই হাসপাতালে যেতে রাজী নন। কিন্তু ব্যথা ক্রমশ বাড়ছে দেখে ১৫ তারিখে একপ্রকার জোর করেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তাররা বললেন, অপারেশান করাতে হবে। আইনস্টাইন কিছুতেই রাজী নন। তিনি বলেন, মৃত্যু যত সংক্ষেপে হয় ততোই ভালো, অপারেশান ইত্যাদি করে আড়ম্বর সহকারে মরার কোন অর্থ হয়না। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বড়ছেলে হ্যান্স এলেন, নিউইয়র্ক থেকে ওয়ালটার বাকি, অটো নাথান সহ আরো অনেক ডাক্তার বন্ধু এলেন। সবাই চেষ্টা করলেন আইনস্টাইনকে অপারেশানে রাজী করাতে। কিন্তু আইনস্টাইন কিছুতেই অপারেশান করাবেন না। ব্যথা কিছুটা কমে গেলো কয়েকদিনের মধ্যে।

এপ্রিলের ১৭ তারিখ রাতে কিছুটা সুস্থ বোধ করার পর ইসরায়েলের বক্তৃতার খসড়া নিয়ে কিছুক্ষণ কাজ করে ঘুমিয়ে পড়লেন আইনস্টাইন। কিন্তু কয়েকঘন্টা পরেই ১৮ তারিখ ভোর একটার দিকে প্রচন্ড ব্যথায় ঘুম ভেঙে গেলো তাঁর। পেটের ফোঁড়া ফেটে গেছে। কর্তব্যরত নার্স অ্যালবার্টা রোজেল (Alberta Rozsel)ছুটে এলেন। আইনস্টাইন তখন বিড়বিড় করে জার্মান ভাষায় কিছু বললেন। নার্স তার কিছুই বুঝতে পারলেন না। কয়েকমিনিটের মধ্যেই মারা গেলেন আইনস্টাইন।

খবর পেয়ে ডাক্তার নার্স বন্ধুরা সবাই ছুটে এলেন হাসপাতালে। হাসপাতালের প্যাথোলজিস্ট ডাক্তার টমাস হার্ভি(Thomas Harvey) । আইনস্টাইনের মরদেহের অটোপসি(autopsy) করার সময় কারো কোন অনুমতি ছাড়াই ব্রেনটি খুলে রেখে দিলেন। আরেকজন প্যাথোলজিস্ট ডাক্তার হেনরি অ্যাব্রামস(Henry Abrams) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আইনস্টাইনের চোখ দুটো তুলে নিলেন। অনেকদিন আগেই আইনস্টাইন বলেছিলেন, মৃত্যুর পরে যেন তাঁর শরীর পুড়িয়ে ফেলা হয়। কোন ধরণের শোকসভা, শোকমিছিল, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে নিষেধ করেছিলেন তিনি। এমনকি তাঁর সমাধির চিহ্নও না রাখার জন্য বলেছেন আইনস্টাইন। ১৮ এপ্রিল,১৯৫৫, সোমবার বিকেলে কোনধরণের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছাড়াই আইনস্টাইনের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হলো। কিছু পোড়াছাই ভাসিয়ে দেয়া হলো ডেলাওয়ার(Delaware) নদীতে। পৃথিবীর সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লো আইনস্টাইনের মৃত্যুসংবাদ।

প্রকাশনা
এপ্রিলে আইনস্টাইনের মৃত্যুর পরেও সারাবছর ধরে আইনস্টাইনের বেশ কিছু রচনা প্রকাশিত হয়েছে এবছর। এবছর প্রকাশিত নয়টি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ

পেপারঃ২৯২ Forewordলুই ডি ব্রগলির Physics and Microphysics বই এর মুখবন্ধ। প্রকাশকঃপ্যান্থিয়ন, নিউইয়র্ক (১৯৫৫)।

পেপারঃ২৯৩ Preface.জুলস মকের(Jules Moch)Human Folly:To Disarm or Perish বইয়ের ভূমিকা। প্রকাশকঃ গোল্যানস(Gollancz), লন্ডন(১৯৫৫)।

পেপারঃ২৯৪ A New Form of the General Relativistic Field Equations. Annals of Mathematics, সংখ্যা ৬২(১৯৫৫), পৃষ্ঠাঃ১২৮-১৩৮। সহলেখকঃ ব্রুরিয়া কফম্যান। আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিস্টিক ফিল্ড ইকোয়েশানের একটি নতুন রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এ গবেষণাপত্রে। এ পেপারটি আইনস্টাইনের সহযোগী ব্রুরিয়া কফম্যানের প্রত্যক্ষ রচনা। আইনস্টাইনের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে এ পেপারটি রচিত হয়েছে।

পেপারঃ২৯৫ The Einstein-Russell Manifesto. ৯ জুলাই ১৯৫৫। লন্ডন থেকে প্রচারিত। বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের লক্ষ্যে আইনস্টাইন বার্ট্রান্ড রাসেলের সাথে এই যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। বিবৃতিতে আরো স্বাক্ষর করেছিলেন ম্যাক্স বোর্ন, লিওপোল্ড ইনফেলড, ফ্রেডেরিক জুলিয়েট-কুরি, লাইনাস পাউলিং প্রমুখ নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীরা।

পেপারঃ২৯৬ Remembrances. Schweizerische Hochschulzeitung, সংখ্যা ২৮ (বিশেষ সংখ্যা, ১৯৫৫), পৃষ্ঠাঃ১৪৩-১৫৩। এই প্রবন্ধে আইনস্টাইন তাঁর ফেলে আসা দিনগুলোর কিছু স্মৃতিচারণ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ছাত্রাবস্থাতেই তিনি তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের বিখ্যাত গবেষকদের ব্যক্তিগত জীবন ও কর্ম সম্পর্কে পড়তে শুরু করেছিলেন।

পেপারঃ২৯৭ Albert Schweitzer at Eighty. Christian Century, বর্ষ ৭২, সংখ্যা ২ (১৯৫৫), পৃষ্ঠাঃ৪২।  আলবার্ট সোয়েটজারের আশি বছর পূর্তি উপলক্ষে আইনস্টাইনের শুভেচ্ছাবাণী। ডাক্তার, দার্শনিক ও মানবতাবাদী  আলবার্ট সোয়েটজার ১৯৫২ সালের নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেয়েছেন।

পেপারঃ২৯৮ Introduction.হেনরি ওয়াসেলের (Henry I.Wachtel) Security for All and Free Enterprise বইয়ের ভূমিকা। প্রকাশকঃ ফিলোসফিক্যাল লাইব্রেরি, নিউইয়র্ক (১৯৫৫)।

পেপারঃ২৯৯ Foreword উইলিয়াম এসলিঙ্গারের (William  Esslinger)Politics and Science বইয়ের মুখবন্ধ। প্রকাশকঃ ফিলোসফিক্যাল লাইব্রেরি, নিউইয়র্ক (১৯৫৫)।

পেপারঃ৩০০ What Is the Task of an International Journal? Common Cause, বর্ষ ১, সংখ্যা ১(১৯৫৫, ফ্লোরেনস,ইটালি), পৃষ্ঠাঃ৩। ইটালির ফ্লোরেন্স থেকে প্রকাশিত কমন কজ জার্নালের প্রথম সংখ্যার জন্য আইনস্টাইন এ প্রবন্ধটি লিখেছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল জার্নালের নীতি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এ প্রবন্ধে।

আইনস্টাইনের কাল - পর্ব-২৩


১৯৪৭
বিশ্বব্যাপী মারণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্ব-সরকার গঠনের পক্ষে সুস্পষ্ট মত ব্যক্ত করে চলেছেন আইনস্টাইন তাঁর বড়ছেলে হ্যান্স এলবার্ট ইউনভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলির হাইড্রলিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রফেসর হিসেবে যোগ দিয়েছেন এবছর এর আগে তিনি ক্যালটেকে কাজ করেছেন কয়েকবছর

প্যালেস্টাইনকে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করে নেয়ার ব্রিটিশ প্রস্তাব আরব ও ইহুদি উভয় সম্প্রদায়ই প্রত্যাখ্যান করেছে প্যালেস্টাইন সমস্যার সমাধানের ভার নিয়েছে জাতিসংঘ ভারতে বিট্রিশ শাসনের অবসান হয়েছে হিন্দু ও মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে গেছে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠদের নতুন দেশ পাকিস্তান স্বাধীনতা দিবস ধার্য করেছে ১৪ আগস্ট পরদিন ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিন্দু,মুসলমান ও শিখদের মধ্যে প্রচন্ড রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের বিভিন্ন স্থানে মহাত্মা গান্ধী দাঙ্গা থামাবার লক্ষ্যে অনশন পালন করেছেন

প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের পাঁচটি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ

পেপারঃ২৫০ The Military Mentality. American Scholar, সংখ্যা ১৬ (১৯৪৭), পৃষ্ঠাঃ৩৫৩-৩৫৪ এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক নেতাদের মিলিটারি মানসিকতার কড়া সমালোচনা করেন পৃথিবীর সব দেশের চেয়ে বেশি ক্ষমতা অর্জন করাকে আমেরিকা অন্যসবকিছুর উর্ধ্বে স্থান দিয়েছে বলে তিনি আমেরিকাকে দোষারোপ করেন তিনি মনে করেন, ক্ষমতা অর্জনের মানসিকতা থেকে মিলিটারি মানসিকতার সৃষ্টি হয় যে কোন উপায়ে ক্ষমতা অর্জনই তখন মুখ্য হয়ে ওঠে আইনস্টাইন জার্মানির ব্যাপার থেকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানান জার্মানি পৃথিবী শাসন করার ক্ষমতা অর্জন করতে চেয়েছিলো বলেই দু দুটো বিশ্বযুদ্ধ হয়ে গেলো এখন পারমাণবিক যুগে ক্ষমতার লোভ তো আরো সাংঘাতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে শক্তিলাভের মানসিকতা থেকে আরো বেশি শক্তিশালী, আরো বেশি বিধ্বংসী ক্ষমতাসম্পন্ন মারণাস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতে পারে  

পেপারঃ২৫১ Atomic War or Peace. As told to Raymond Swing. Atlantic Monthly, সংখ্যা ১৮০(নভেম্বর ১৯৪৭) আটলান্টিক মান্থলির সাংবাদিক রেমন্ড সুইং এর কাছে দেয়া আইনস্টাইনের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে এই প্রবন্ধটি রচিত হয়েছে আইনস্টাইন পারমাণবিক বোমা নিষিদ্ধকরণের পক্ষে তাঁর মত ব্যক্ত করেন এজন্য বিশ্ব-সরকার ব্যবস্থার যে কোন বিকল্প নেই তা তিনি আবারো ব্যাখ্যা করেন

পেপারঃ২৫২ [Response to the Editor on Walter Whites article, Why I Remain a Negro.] Saturday Review of Literature, সংখ্যা ৩০ (১ নভেম্বর ১৯৪৭), পৃষ্ঠাঃ২১ আমেরিকায় বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আইনস্টাইন সবসময় সোচ্চার সংবাদপত্রে বর্ণসমস্যা সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধের প্রতিক্রিয়া জানাতে আইনস্টাইন এ প্রবন্ধটি লেখেন

পেপারঃ২৫৩ [Open letter to the United Nations General Assembly on how to break the vicious circle.] United Nations World, সংখ্যা ১ (অক্টোবর ১৯৪৭), পৃষ্ঠাঃ১৩-১৪ সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আইনস্টাইনের এই খোলাচিঠিটি পড়ে শোনানো হয় আইনস্টাইন বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের নেতৃত্বে বিশ্ব-সরকার গঠনের আহ্বান জানান তিনি বলেন, একমাত্র বিশ্ব-সরকার ব্যবস্থাই পারে বিশ্বব্যাপী অস্ত্র প্রতিযোগিতার অশুভ চক্র ভাঙতে

পেপারঃ২৫৪ The Problem of Space, Ether and the Field in Physics. The Great Thinkers series এর চতুর্থ খন্ডে Man and the Universe অধ্যায়ে প্রকাশিত সম্পাদনাঃ এস কমিনস ও আর এন লিনস্কট প্রকাশকঃ র্যানডম হাউজ, নিউইয়র্ক (১৯৪৭) এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন বৈজ্ঞানিক ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করেন আমাদের বৈজ্ঞানিক ধারণার সাথে স্থানকালক্ষেত্রইথার ইত্যাদি একটির সাথে অন্যটি সম্পর্কযুক্ত

১৯৪৮
আইনস্টাইনের ছোটছেলে এডোয়ার্ড মানসিক হাসপাতালে পড়ে আছে। মিলেইভা অসুস্থ শরীরে তার দেখাশোনা করেন। আইনস্টাইন এডোয়ার্ডের চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠান। কিন্তু সে টাকায় কুলোয় না। আইনস্টাইনের নোবেল পুরষ্কারের টাকা দিয়ে তিনটি বাড়ি কিনেছিলেন মিলেইভা। তার একটিতে তিনি থাকেন, অন্যদুটো ভাড়া দিয়েছেন। ভাড়ার টাকা যা পান তা দিয়ে নিজের খরচই চলে না, এডোয়ার্ডের চিকিৎসার খরচ চলবে কী করে। মিলেইভা বাড়ি দুটো বিক্রি করে দিলেন। সে টাকাগুলোও দ্রুত শেষ হয়ে গেলো। বাহাত্তর বছরের বৃদ্ধা মিলেইভা শংকিত হয়ে পড়লেন অবশিষ্ট বাড়িটাও না বিক্রি করতে হয়। তিনি বাড়িটা আইনস্টাইনের নামে লিখে দিলেন। ভাবলেন এতে অন্তত তাঁর মাথা গোঁজার ঠাঁই বাড়িটা থাকবে।

এরমধ্যে একদিন বরফের ওপর আছাড় খেয়ে পা ভেঙে ফেললেন মিলেইভা। শয্যাশায়ী মিলেইভার স্বাস্থ্য দ্রুত ভেঙে পড়লো। আইনস্টাইন খবর পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন-মিলেইভা মারা গেলে এডোয়ার্ডকে দেখবে কে? এডোয়ার্ডের চিকিৎসা ও দেখাশোনা করার জন্য আইনস্টাইন একটি ট্রাস্ট গঠনের পরিকল্পনা করলেন। তিনি তাঁর নামে লিখে দেয়া বাড়িটি বিক্রি করে টাকাটা মিলেইভার কাছে পাঠিয়ে দিলেন ট্রাস্টে জমা দেয়ার জন্য। বাড়ি বিক্রি করার সময় আইনস্টাইন পরিষ্কার শর্ত দিয়েছেন যে, মিলেইভা যতদিন বেঁচে থাকবেন, ঐ বাড়িতেই বিনা ভাড়ায় থাকবেন। কিন্তু মিলেইভা বাড়ি বিক্রি করে দেয়াতে খুব কষ্ট পেলেন। আইনস্টাইনকে তিনি আর কোন খবরই দিলেন না। আইনস্টাইন অনেকদিন মিলেইভার কোন খবর না পেয়ে জুরিখে লোক পাঠিয়ে খবর নিয়ে জানতে পারলেন, একটি বড় ধরণের স্ট্রোকে মিলেইভার শরীরের একদিক অবশ হয়ে গেছে। এবছর আগস্টের চার তারিখে মৃত্যু হলো মিলেইভার। মৃত্যুর পর তাঁর বিছানার নিচ থেকে পাওয়া যায় বাড়ি বিক্রিত পঁচাশি হাজার ফ্রাংক।

আইনস্টাইনের শরীর ভেঙে পড়ছে। পাকস্থলিতে মারাত্মক ব্যথা হচ্ছে তাঁর। বছরের শেষের দিকে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবার পরে ডাক্তাররা আইনস্টাইনের পেটের ধমনীর দেয়ালে বড়ধরণের ক্ষত দেখতে পান, তবে তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়নি।

জানুয়ারির ৩০ তারিখে ভারতে উগ্র হিন্দুবাদীরা মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করে। শান্তিবাদী মহাত্মার বয়স হয়েছিলো উনাশি বছর। মহাত্মা গান্ধী ছিলেন আইনস্টাইনের শান্তির নায়ক। হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন মহাত্মা গান্ধী, আর সেকারণেই তাঁকে প্রাণ দিতে হলো। এদিকে স্বাধীন ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। কাইম ওয়েইজম্যান হলেন ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট, আর ডেভিড বেন-গুরিয়ন হলেন প্রিমিয়ার।

প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের সাতটি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ

পেপারঃ২৫৫ [Letter on universal military training addressed to the chairman of the senate committee.] U.S Congress,Senate,Committee on Armed Services,Hearings on Universal Military Training, পৃষ্ঠা ২৫৭। বিশ্বব্যাপী সামরিক প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ে আইনস্টাইন আমেরিকান কংগ্রেসে এই চিঠিটি লেখেন। সিনেট কমিটিতে চিঠিটি পড়া হয় এবছর (১৯৪৮) ২৪ মার্চ তারিখে। আইনস্টাইনের ওপর কয়েকজন সিনেটর বিরক্তও হয়েছেন এতে।

পেপারঃ২৫৬ Religion and Science: Irreconcilable? Christian Register, সংখ্যা ১২৭ (জুন ১৯৪৮), পৃষ্ঠাঃ১৯-২০। নিউইয়র্ক সিটির লিবারেল মিনিস্টারস ক্লাব আইনস্টাইনকে শুভেচ্ছাকার্ড পাঠায়। সেখানে আইনস্টাইনকে প্রশ্ন করা হয়,ধর্ম ও বিজ্ঞানের সহাবস্থান কি অসম্ভব? উত্তরে আইনস্টাইন জানান, এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া সহজ নয়। কারণ বিজ্ঞান বিষয়ে সব মানুষ একমত হতে পারলেও ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে মানুষের মধ্যে মতের ভিন্নতা আছে। ধর্মে যে সমস্ত অলৌকিক কাহিনী চালু আছে, তা একেক ধর্মে একেক রকমের হওয়াতে এবং বাস্তবের সাথে সে সমস্ত ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকাতে মানুষের মধ্যে মতের ভিন্নতা দেখা দেয়। মত পার্থক্য থেকে তৈরি হয় অসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক বিরোধিতা। কিন্তু ধর্মের প্রকৃত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অলৌকিক অবাস্তব কাহিনীর কোন প্রয়োজন নেই।

পেপারঃ২৫৭ On Receiving the One World Award. ২৭ এপ্রিল ১৯৪৮ তারিখে কানের্গি হলে প্রদত্ত ভাষণ। বিশ্ব-সরকারের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে আইনস্টাইনকে ওয়ান ওয়ার্লড পুরষ্কারে সম্মানিত করা হয়। আইনস্টাইন পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আবারো বিশ্ব-সরকারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পরেও অস্ত্র-প্রতিযোগিতা কমছে না দেখে আইনস্টাইন কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছেন বিশ্বশান্তির ব্যাপারে। রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের কার্যকলাপে কিছুটা বিরক্ত হয়েই তিনি মন্তব্য করেন, এরকম চলতে থাকলে পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারবে একমাত্র অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী কোন সংগঠন।

পেপারঃ২৫৮ Looking Ahead.Rotarian, জুন ১৯৪৮, পৃষ্টাঃ৮-১০। আইনস্টাইন এ প্রবন্ধে বিশ্ব-সরকার ব্যবস্থার সপক্ষে আবারো মত প্রকাশ করেছেন। এ প্রবন্ধের সাথে বুলেটিন অব এটমিক সায়েন্টিস্টসে প্রকাশিত আইনস্টাইনের দুটো পেপার আবার প্রকাশ করা হয়। ওদুটো প্রবন্ধের একটিতে আন্তর্জাতিক বোঝাপড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন [চতুর্থ সংখ্যা,পৃষ্ঠাঃ১ (১৯৪৮)]। অন্যটিতে সোভিয়েত বিজ্ঞানীদের সমালোচনার জবাব দিয়েছেন আইনস্টাইন [চতুর্থ সংখ্যা, পৃষ্ঠাঃ৩৫-৩৭ (১৯৪৮)]। এর আগে আইনস্টাইনের বিশ্ব-সরকারের ধারণার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা।

পেপারঃ২৫৯ Quantum  Mechanics and Reality.Dialectica, সংখ্যা ২ (১৯৪৮), পৃষ্ঠাঃ৩২০-৩২৪। কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে সম্পূর্ণভাবে মেনে নিতে পারেননি আইনস্টাইন। এ প্রবন্ধে তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অসম্পূর্ণতা আলোচনা করে দেখিয়েছেন যে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে বাস্তবের বিরোধ থেকেই যাচ্ছে।

পেপারঃ২৬০ General Theory of Gravitation. Reviews of Modern Physics, সংখ্যা ২০ (১৯৪৮), পৃষ্ঠাঃ৩৫-৩৯। এ গবেষণাপত্রে আইনস্টাইন জেনারেল থিওরি অব গ্র্যাভিটেশান তথ্য জেনারেল রিলেটিভিটি বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

পেপারঃ২৬১ Atomic Science Reading List. In 1948;Magazine of the Year(জানুয়ারি), পৃষ্ঠাঃ৬০-৬১। পারমাণবিক শক্তি ও তার ক্ষমতা সম্পর্কে জানার জন্য শুধুমাত্র আইসোটোপ,পিচব্লেন্ড ও প্লুটোনিয়াম সম্পর্কে জানাটাই যথেষ্ট নয়। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন ছয়টি ম্যাগাজিন ও বইয়ের কথা উল্লেখ করেন-যা থেকে পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে মোটামুটি পূর্ণাঙ্গ একটি ধারণা পাওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন। আইনস্টাইনের মতে পারমাণবিক শক্তি ও তার প্রয়োগের সাথে শান্তি, নিরাপত্তা ও মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের ব্যাপারটি এখন গভীরভাবে জড়িত।আইনস্টাইন যে বইগুলোর কথা উল্লেখ করেন, তা হলোঃ ১।মাসিক বুলেটিন অব দি এটমিক সায়েন্টিস্টস। আইনস্টাইনের মতে এই মাসিক পত্রিকা পারমাণবিক শক্তির উন্নয়ন ও তথ্যের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য সূত্র। ২।সেলিগ হেচের(Selig Hecht) বই এক্সপ্লেইনিং দি এটম। ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত এই বইটিতে নিউক্লিয়ার ফিশানের বৈজ্ঞানিক ধাপগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ৩। জন হারসির(John Hersey) উপন্যাস হিরোশিমা। ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত এ উপন্যাসে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ওপর পারমাণবিক বোমার প্রভাব বাস্তবভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ৪। কর্ড মেয়ারের(Cord Meyer Jr.) পিস ফর এনার্কি (Peace or Anarchy)। ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত এই বইতে পারমাণবিক বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার জটিল ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ৫। এমেরি রেভিসের (Emery Reves)দি এনাটমি অব পিস। ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত এই বইতে আইনস্টাইনের বিশ্ব-সরকারের ধারণাকে সমর্থন করা হয়েছে। ৬। র‍্যামন্ড সুইং (Raymond Swing)এর ইন দি নেম অব স্যানিটি (In the Name of Sanity). পারমাণবিক শক্তি আবিষ্কার ও তার ব্যবহার সংক্রান্ত ঘটনা ও খবরের ধারাবাহিক সংকলন এই বই।

১৯৪৯
বছরের শুরুতে অসুস্থ হয়ে মাসখানেক হাসপাতালে কাটাতে হলো আইনস্টাইনকে। কিছুটা সুস্থ হবার পর কয়েক সপ্তাহের বিশ্রামের জন্য ফ্লোরিডায় চলে গেলেন। সাথে গেলেন তাঁর পুরনো ডাক্তার বন্ধু ওয়ালটার বাকি। ডাক্তার বাকি থাকেন নিউইয়র্কের সেভেন্টি সিক্সথ স্ট্রিটে। আইনস্টাইন নিউইয়র্কে গেলে ডাক্তার বাকির বাড়িতেই ওঠেন। এবছর আইনস্টাইন তাঁর সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী অটোবায়োগ্রাফিক্যাল নোটস শেষ করেন।

মার্চের চৌদ্দ তারিখ আইনস্টাইনের সত্তরতম জন্মদিন উপলক্ষে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে আইনস্টাইনকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়। প্রায় তিনশ বিজ্ঞানী এখানে জড়ো হন আইনস্টাইনকে শ্রদ্ধা জানাতে। এ উপলক্ষে একটি সিম্পোজিয়ামেরও আয়োজন করা হয়। আইনস্টাইন যখন হলে ঢুকছিলেন-সারা হলে পিনপতন নীরবতা, সবাই নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আইনস্টাইনকে সম্মান জানালেন।

জার্মানির সাথে কোন ধরণের সম্পর্ক রাখতেই রাজী নন আইনস্টাইন। জার্মানি চাচ্ছে আইনস্টাইনকে আবার জার্মান নাগরিকত্ব দিতে। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউটের বৈদেশিক সদস্য হবার আমন্ত্রণ জানানো হলো তাঁকে। জন্মস্থান উলম শহর নাগরিকত্ব দিতে চাইলো। কিন্তু সব আহ্বানই প্রত্যাখ্যান করলেন আইনস্টাইন।

এবছর ইসরায়েল স্বাধীনরাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করেছে। তেল-আবিব থেকে তাদের রাজধানী জেরুজালেমে স্থানান্তরিত হয়েছে। আইনস্টাইন ইসরায়েলকে সমর্থন করেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। শুরু হয়ে গেছে আমেরিকার সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্নায়ুযুদ্ধ।

প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের উল্লেখযোগ্য পাঁচটি পেপারঃ

পেপারঃ২৬২ Why Socialism ? Monthly Review: An Independent Socialist Magazine, বর্ষ ১, সংখ্যা ১ (মে ১৯৪৯), পৃষ্ঠাঃ৯-১৫। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন পুঁজিবাদের কড়া সমালোচনা করেন। পুঁজিবাদী সমাজের অর্থনৈতিক আগ্রাসনের ফলে সমাজে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়, সমাজে দুর্নীতির জন্ম হয়। পুঁজিবাদের দাপটে গরীব মানুষ পঙ্গু হয়ে যায়, তাদের কোন অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা থাকেনা। আইনস্টাইনের মতে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই সাধারণ মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারে।

পেপারঃ২৬৩ In the Shadow of the Atomic Bomb. Solution Patriot, বর্ষ ৭, সংখ্যা ৩ (মে ১৯৪৯)। আইনস্টাইন আমেরিকাকে পারমাণবিক বোমা তৈরিতে পরোক্ষভাবে উদ্বুদ্ধ করলেও পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন পারমাণবিক বোমার কুফল ব্যাখ্যা করেছেন।

পেপারঃ২৬৪ Autobiographical Notes and Remarks to the Essays Appearing in the Volume. In Albert Einstein; Philosopher-Scientist, সম্পাদনাঃপল শিলপ (Paul A.schilpp)। লাইব্রেরি অব লিভিং ফিলোসফারস, সপ্তম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩-৯৪। প্রকাশকঃ ওপেন কোর্ট, লা সালি (১৯৪৯)। আইনস্টাইন তাঁর সংক্ষিপ্ত বৈজ্ঞানিক আত্মজীবনী অটোবায়োগ্রাফিক্যাল নোটস লিখেছেন পল শিলপের অনুরোধে।

পেপারঃ২৬৫ Foreword. In the Hebrew University of Jerusalem, 1925-1950. প্রকাশকঃগোল্ডবার্গ প্রেস, জেরুজালেম (১৯৪৯)। জেরুজালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত সংকলনের ভূমিকায় আইনস্টাইন ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ও লক্ষ্য সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

পেপারঃ২৬৬ On the Motion of Particles in General Relativity Theory. সহলেখকঃলিওপোল্ড ইনফেল্ড। Canadian Journal of Mathematics, সংখ্যা ৩ (১৯৪৯), পৃষ্ঠাঃ২০৯-২১৪। আইনস্টাইন ও ইনফেলড এই গবেষণাপত্রে দেখান যে জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটির জন্য শুধুমাত্র ফিলড ইকুয়েশানই যথেষ্ট।

১৯৫০
আইনস্টাইনের শরীর ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারছেন তাঁর সময় প্রায় শেষ। মৃত্যুর পরে তাঁর গবেষণাপত্র ও অন্যান্য সম্পদের বিলিবন্টনের জন্য উইল করলেন তিনি। তাঁর বন্ধু অটো ন্যাথানকে দায়িত্ব দিলেন উইল বাস্তবায়নের। আর সেক্রেটারি হেলেন ডূকাসকে দায়িত্ব দিলেন তাঁর গবেষণাসহ সবধরণের কাগজপত্রের দেখাশোনার। সব গবেষণাপত্র ও গবেষণাসংক্রান্ত দলিল দান করলেন জেরুজালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটিতে। অটো ন্যাথান ও হেলেন ডুকাসের মৃত্যুর পরে সব দলিলপত্র হিব্রু ইউনিভার্সিটিতে দেয়া হবে- এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। আইনস্টাইন তাঁর বেহালাটি দান করে দিলেন তাঁর নাতি বার্নহার্ডকে। আর টাকাপয়সা যা থাকবে তা পাবেন হেলেন ডুকাস, ছেলে হ্যান্স এলবার্ট ও এডোয়ার্ড এবং সৎকন্যা মার্গট।

ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ঘোষণা করলেন যে, আমেরিকা হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করেছে। এ বোমা পারমাণবিক বোমার চেয়ে শক্তিশালী। ধারণা করা হচ্ছে হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী এডোয়ার্ড টেলার এই বোমার জনক। আইনস্টাইন খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন এ ঘটনায়। তিনি টেলিভিশন মাধ্যমে এ বোমার ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করে দিতে চাইলেন। টেলিভিশনে প্রচারিত বিবৃতিতে তিনি বললেন, হাইড্রোজেন বোমা যদি কখনো ব্যবহার করা হয়, পৃথিবী তেজস্ক্রিয়তায় ভরে যাবে, কোন প্রাণীই আর বেঁচে থাকবে না।

আমেরিকান সিনেটর জোসেফ ম্যাককারথি কমিউনিস্ট অনুসন্ধান শুরু করলেন। তাঁর ধারণা কমিউনিস্ট ও কমিউনিস্ট সমর্থকে ভরে গেছে আমেরিকান স্বরাষ্ট্র দপ্তর। কমিউনিস্ট শিকারের উদ্দেশ্যে পরবর্তী চারবছর ধরে ম্যাককারথি শতশত মানুষকে সন্দেহবশত হয়রানি করেছেন। বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী ও শিল্পীদের পেছনে গোয়েন্দা লেলিয়ে দিয়েছেন তিনি। কংগ্রেসে হাউজ আন-আমেরিকান অ্যাক্টিভিটিজ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাউকে কমিউনিস্ট বলে সন্দেহ হলেই তাঁকে এই কমিটির সামনে নিয়ে আসা হয়। আর কমিটির নানারকম প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, উত্তরের সপক্ষে প্রমাণ দাখিল করে সেই ব্যক্তিকেই প্রমাণ করতে হয় যে তিনি কমিউনিস্ট নন। অনেককে আবার চিঠি দিয়ে কমিটির সামনে হাজির হবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। আইনস্টাইন তীব্র নিন্দা করলেন এ ব্যবস্থার। কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে নিজেকে কমিউনিস্ট নন প্রমাণ করার জন্য চিঠি পেয়েছেন এরকম অনেককেই আইনস্টাইন পরামর্শ দিয়েছেন কমিটিকে সহযোগিতা না করার জন্য। কারণা তিনি মনে করেন, এ ব্যবস্থা মানুষের নাগরিক স্বাধীনতার পরিপন্থী।

প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের সাতটি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ

পেপারঃ২৬৭ On the Moral Obligation of the Scientist. Impact, বর্ষ ১(১৯৫০), পৃষ্ঠাঃ১০৪-১০৫। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন বিজ্ঞানীদের নৈতিক দায়িত্বের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

পেপারঃ২৬৮ Physics,Philosophy, and Scientific Progress.Journal of the International College of Surgeons, সংখ্যা ১৪ (১৯৫০), পৃষ্ঠাঃ৭৫৫-৭৫৮। ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অব সার্জনস এর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের জন্য আইনস্টাইনের এই ভাষণটি রেকর্ড করা হয় এবং অনুষ্ঠানে তা বাজিয়ে শোনানো হয়। আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞান ও তার দর্শন প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। পরে ভাষণটি কলেজের জার্নালে প্রকাশিত হয়।

পেপারঃ২৬৯ An Open Letter to the Society for Social Responsibility in Science. Science, সংখ্যা ১১২(১৯৫০), পৃষ্ঠাঃ৭৬০-৭৬১। বিজ্ঞানীদের সামাজিক দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সোসাইটি ফর সোশাল রেসপনসিবিলিটি ইন সায়েন্স। ডিসেম্বরের ২২ তারিখে সায়েন্স ম্যাগাজিনের চিঠিপত্র কলামে প্রকাশিত এই চিঠিতে আইনস্টাইন বিজ্ঞানীদের সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্য সোসাইটি গঠনের প্রশংসা করে মনে করিয়ে দেন যে, সমাজের মানুষের চিন্তা চেতনার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হলে এধরণের প্রতিষ্ঠান সমাজের কোন উপকারেই আসবে না। তিনি ন্যুরেমবার্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন যে, আত্ম-দায়িত্ববোধ থেকে রেহাই পেতে পারেন না কেউ।

পেপারঃ২৭০ On the Generalized Theory of Gravitation. Scientific American, বর্ষ ১৮২, সংখ্যা ৪ (এপ্রিল ১৯৫০), পৃষ্ঠাঃ১৩-১৭। সায়েন্টিফিক আমেরিকানদের সম্পাদকের অনুরোধে লিখিত এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন ক্ষেত্র পদার্থবিজ্ঞান বা ফিলড ফিজিক্সের ভিত্তি স্থাপন করার জন্য তাঁর গাণিতিক অনুসন্ধানের বিবরণ দেন।

পেপারঃ২৭১ The Bianchi Identities in the Generalized Theory of Gravitation. Canadian Journal of Mathematics, বর্ষ ৪ (১৯৫০), পৃষ্ঠাঃ১২০-১২৮। ইউনিফায়েড থিওরি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ছাড়েন নি আইনস্টাইন। এ গবেষণাপত্রে তিনি আবারো গ্র্যাভিটেশানের একটি সাধারণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন।

পেপারঃ২৭২ Foreword ফিলিপ ফ্রাঙ্কের Relativity:A Richer Truth বইতে মুখবন্ধ হিসেবে আইনস্টাইনের এ লেখাটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশকঃ জোনাথন কেইপ, লন্ডন (১৯৫১)।ফিলিপ ফ্রাঙ্ক এই বইতে সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে আপেক্ষিকতার প্রয়োগ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আইনস্টাইন এই বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন, মাঝে মাঝে যুক্তির সাথে নীতির মিল নাও থাকতে পারে। কিন্তু সামাজিক বা ব্যক্তিগত নীতিগুলো-যৌক্তিক চিন্তা ও ব্যবহারিক জ্ঞানের মাধ্যমে আরো গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। বিজ্ঞানে যেমন কোন ধারণা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে গ্রহণ বা বর্জন করা হয়, সেরকম সামাজিক নীতিগুলোও পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে গ্রহণ বা বর্জন করা যেতে পারে। সমাজ ও ব্যক্তির উপকারে আসে এরকম নীতি গ্রহণযোগ্য হবে, আর ক্ষতিকারক হলে সেরকম নীতি বাদ দেয়া যেতে পারে।

পেপারঃ২৭৩ Message to the Italian Society for the Advancement of Science. ইটালিয়ান সোসাইটি ফর দি এডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স এর বেয়াল্লিশতম সভা উপলক্ষে আইনস্টাইন এই লেখাটি পাঠিয়েছিলেন। পরে তা প্রকাশিত হয়েছে ইউনেস্কো কর্তৃক প্রকাশিত জার্নাল ইমপ্যাক্ট এর হেমন্তকালীন সংখ্যায়। আইনস্টাইন বলেন, মানুষ যে কোন ব্যাপারেই সত্যকে খুঁজে বের করতে চায়, সত্যকে বুঝতে চায়। সেটাই মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জটিল সামাজিক ও বাস্তব অভিজ্ঞতার ভেতর থেকে সহজ সত্যকে খুঁজে বের করা সহজ নয়। বৈজ্ঞানিকরা সহজ সত্য খুঁজতে গিয়ে জটিল জটিল সমস্যায় পড়ে যান। মানুষের মুক্তির জন্য গবেষণা করতে গিয়ে দেখা যায় তাঁরা এমনকিছু তৈরি করে ফেলেন যা দিয়ে মানুষকে সহজেই শৃঙ্খলিত করা যায়।




Latest Post

সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা - দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের গান

১৯৯৫ সালের ২৩ আগস্ট দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার দশমাইল এলাকায় কিছু পুলিশ সদস্য ইয়াসমিন নামের এক ষোল বছরের কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। এই ঘ...

Popular Posts