Friday 14 February 2020

বুধ - পর্ব ২৭


বুধ ও চাঁদ

বুধের কোন চাঁদ বা উপগ্রহ নেই। কিন্তু আমাদের পৃথিবীর চাঁদের সাথে বুধের অনেক মিল আছে। বুধ আকারে চাঁদের চেয়ে সামান্য বড়। কিন্তু চাঁদের ভূমি আর বুধের ভূমির মধ্যে যথেষ্ট মিল আছে। উভয়ের পিঠেই অসংখ্য গর্ত। উপরিস্তরে আছে মিহি ধুলো - রেগোলিথের আস্তরণ।
            আগে ধারণা করা হতো বুধও চাঁদের মতো নিষ্ক্রিয় মৃত বস্তুপিন্ড। কিন্তু বুধে অভিযানের পর দেখা গেলো যে বুধে চৌম্বকক্ষেত্র আছে যা চাঁদে নেই। তাছাড়া চাঁদের অন্তকেন্দ্র বা কোর খুবই ছোট, কিন্তু বুধের অন্তকেন্দ্র খুবই বড়। চাঁদের মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণের মান ১.৬২ মিটার/বর্গ সেকেন্ড। বুধের মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণের মান ৩.৫৯ মিটার/বর্গ সেকেন্ড। বুধের অভ্যন্তরীণ গঠন আর চাঁদের অভ্যন্তরীণ গঠনও ভিন্ন। দেখা যাচ্ছে চাঁদ ও বুধের মধ্যে চেহারায় মিল থাকলেও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যে অমিলই বেশি।

বুধ (বামে) এবং চাঁদ (ডানে) -এর ৭০০ কিলোমিটার বিস্তৃত উপরিতল। প্রচুর সাদৃশ্য আছে বুধ ও চাঁদের উপরের তলে।


মানুষ কি বুধ গ্রহে যেতে পারবে?
বুধ গ্রহে কি কোন মানুষের যাওয়া সম্ভব? সেখানে বেঁচে থাকা সম্ভব? এই প্রশ্ন আমাদের মনে আসতেই পারে। বুধে মানুষ যাওয়া অসম্ভব নয়, কিন্তু তা হবে অনেক বেশি খরচ সাপেক্ষ এবং জটিল। যেমন, পৃথিবী থেকে বু্ধে পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ছয় বছর। ম্যাসেঞ্জারের লেগেছে ছয় বছর। সেখান থেকে ফিরে আসতেও লাগবে কমপক্ষে ছয় বছর। নভোচারীদের সাথে করে নিয়ে যেতে হবে কমপক্ষে বারো বছরের খাবারদাবার, পানি, অক্সিজেন এবং অন্যান্য জিনিসপত্র। আর ওখানে যতদিন থাকবে ততদিনের রসদ। জিনিস যত বেশি হবে রকেটের সাইজ হবে তত বড়। জ্বালানি লাগবে তার চেয়েও বেশি। বুধের উপরিতলের অবস্থা খুবই খারাপ। বায়ুমন্ডল নেই, প্রচন্ড গরম, আবার প্রচন্ড ঠান্ডা। সেখানে সময় কাটাতে হলে স্পেস-স্যুট লাগবে যাতে প্রচন্ড গরম ও প্রচন্ড ঠান্ডায় থাকা যায়। মানুষের জন্য খুব একটা আকর্ষণীয় গ্রহ নয় বুধ। তাই আগামী কয়েক শ বছরে বুধে মানুষ যাবার ব্যাপারে আগ্রহী হবে বলে মনে হয় না।


তথ্যসূত্র

1.   Clare Gibson, the Solar System, King Books, UK, 2012
2.   Giles Sparrow, Planets and Moons, Hinkler Books, Australia, 2006.
3.   Colin Ronan, The Universe Explained, Ken Fin Books, Australia, 1997.
4.         David A Rothery, Planets a very short introduction, Oxford University Press, Great Britain, 2010.
5.   Chris Cooper, Pam Spence, Carole Stott, Stars + Planets an illustrated guide, Star Fire, London, 2007.
6.   Gerard Cheshire, The Solar System and Beyond, Evans, London, 2006.
7.   Steve Parker, Solar System, Ticktock Media Ltd, Great Britain, 2006.Clare
8.   Heather Couper and Nigel Henbest, Encyclopedia of Space, DK Publishing, UK, 2003.
9.   Robin Kerrod & Carole Stott, Hubble the Mirror on the Universe, Third Edition, David and Charles, London, 2008.
10. Patrick Moore, Mission to the Planets, Cassell, New York 1995.
11. European Space Agency's BepiColombo Page,          
      http://sci.esa.int/science-e/www/area/index.cfm?fareaid=30
12. Japan Aerospace Exploration Agency BepiColombo Page,
      http://www.jaxa.jp/projects/sat/bepi/index_e.html
13. NSSDC Master Catalog, http://nssdc.gsfc.nasa.gov/nmc/
14. Deep Space Chronicle: A Chronology of Deep Space and Planetary Probes 1958-2000, Monographs in Aerospace History No. 24, by Asif A. Siddiqi
15. National Space Science Data Center,
      http://nssdc.gsfc.nasa.gov/
16. Solar System Log by Andrew Wilson, published 1987 by Jane's Publishing Co. Ltd.
17. MESSENGER Press Kit, Johns Hopkins University Applied Physics Laboratory, Jan. 2008,
      http://www.nasa.gov/pdf/208301main_MercuryFlyby1PressKitFINAL_1_10_08.pdf
18. প্রশান্ত প্রামাণিক, গ্রহ তারক চন্দ্র তপন, জ্ঞান বিচিত্রা প্রকাশনী, আগরতলা, ২০১৩।
19. Marcus Chown and Govert Schilling, Tweeting the Universe, faber and faber, London, 2013.
20. প্রদীপ দেব, অর্ক ও সূর্যমামা: সূর্যের বিজ্ঞান, মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৫।
21. প্রদীপ দেব, পৃথিবী: সূর্যের তৃতীয় গ্রহ, মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৬।
22. প্রদীপ দেব, চাঁদের নাম লুনা, মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৭।
23. Robert G Storm, in Worlds Beyond The Thrill of Planetary Exploration as Told by Leading Experts, Editor: S. Alan Stern, Cambridge University Press, UK, 2002.
24. L. T. Elkins-Tanton, Sun, Mercury, and Venus, Broomall: Infobase Publishing, 2010.
25. Pamela Elizabeth Clark, Mercury's Interior, Surface, and Surrounding Environment Latest Discoveries, Springer, New York 2015.
26. David A Rothery, Planet Mercury From Pale Pink Dot to Dynamic World, Springer, Switzerland, 2015.
27. Sir Patrick Moore, Moore on Mercury The Planet and the Missions, Springer-Verlag, London, 2007.
28.       Pamela Elizabeth Clark, Dynamic Planet Mercury in the Context of Its Environment, Springer, New York, 2007. 

বুধ - পর্ব ২৬


বুধে তৃতীয় অভিযান: বেপি-কলম্বো

 বুধ গ্রহের প্রথম ও দ্বিতীয় মিশন সফলভাবে শেষ করেছে আমেরিকান মহাকাশ সংস্থা নাসা। বুধে আরেকটি অভিযান চালনার প্রস্তুতি চলছে অনেক বছর ধরে। এটা হবে বুধের তৃতীয় অভিযান। এই মিশনের নাম দেয়া হয়েছে বেপি-কলম্বো।
            ইতালির পাদুয়া ইউনিভার্সিটির অ্যাপ্লাইড মেকানিক্সের অধ্যাপক ছিলেন গিসপি কলম্বো (Giuseppe Colombo) ওরফে বেপি-কলম্বো। ম্যারিনার-১০ মিশনে বেপি-কলম্বোর বৈজ্ঞানিক অবদান ছিল যুগান্তকারী। তাঁর গাণিতিক হিসেব অনুসরণ করেই ম্যারিনার-১০ নভোযান বুধের কক্ষপথে প্রবেশ করতে পেরেছিল। ১৯৮৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বেপি-কলম্বো মারা যান। তাঁর সম্মানে ইওরোপিয়ান মহাকাশ সংস্থা তাদের প্রথম বুধ মিশনের নাম রেখেছে বেপি-কলম্বো।
            ইওরোপ ও জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার যৌথ উদ্যোগে এই মিশনের প্রস্তুতি চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৮ সালেই বুধের উদ্দেশ্যে তৃতীয় নভোযান পৃথিবী থেকে যাত্রা করবে।
        বেপি-কলম্বো মিশনে দুটো মহাকাশযান ব্যবহার করা হবে যারা বুধের চারপাশে ঘুরবে এবং বুধ গ্রহকে সুবিধাজনক অবস্থান থেকে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
          ইওরোপিয়ান বিজ্ঞানীদের জন্য এই মিশন একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। বেপি-কলম্বো একটি বিশাল প্রকল্প। খুবই ব্যয়বহুলইওরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির দীর্ঘমেয়াদী বিজ্ঞান প্রোগ্রামের অংশ।  ইওরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির আগের সব প্রকল্প ছিল ঠান্ডা গ্রহের উপর - অর্থাৎ সূর্যের বাইরের দিকের গ্রহগুলোর ওপর। বেপি-কলম্বো হলো এজেন্সির প্রথম মিশন যেটা সৌরজগতের উত্তপ্ত গ্রহগুলোর উপর গবেষণা করবে। 
            এই মিশনের কারিগরি দক্ষতা মেসেঞ্জার মিশনের দক্ষতাকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ সূর্যের এত কাছের প্রচন্ড উত্তপ্ত গ্রহে দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা প্রকল্প চালানো সাংঘাতিক জটিল কাজ। কোন নভোযান সেখানে পৌঁছানোই দুরূহ। এ ধরনের মিশন বুধ গ্রহের উৎপত্তিসহ আরো সব ব্যাপার-স্যাপার বোঝার জন্য খুবই জরুরি। তাছাড়া আমাদের সৌরজগৎ কীভাবে উৎপন্ন হয়েছে সেটা সম্পর্কেও আরো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। পৃথিবীপৃষ্ঠে বসে এরকম পরীক্ষা চালানো সম্ভব নয়। ম্যারিনার-১০ ও মেসেঞ্জার মিশন দুটো বুধ গ্রহ সম্পর্কে এখনো যেসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে সক্ষম হয়নি, বেপি-কলম্বো মিশন সেই সব প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজবে।

কারিগরি দিক

বেপি-কলম্বো মিশনে দুটো অংশ থাকবে। একটার বদলে দুটো নভোযান বুধের কক্ষপথে ঘুরবে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি তৈরি করছে মূল নভোযান - মার্কারি প্ল্যানেটারি অরবিটার (Mercury Planetary Orbiter- MPO), এবং জাপানিজ স্পেস এজেন্সি (ISAS/JAXA) বানাচ্ছে অন্য নভোযান - মার্কারি ম্যাগনেটোস্ফেরিক অরবিটার (Mercury Magnetospheric Orbiter MMO) মার্কারি প্ল্যানেটারি অরবিটার বুধের উপরিতল এবং ভেতরের গঠন সম্পর্কে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করবে। আর ম্যাগনেটোস্ফেরিক অরবিটার বুধের চৌম্বকক্ষেত্রের উৎপত্তি ও ধর্ম পরীক্ষা করবে।
            জ্বালানিসহ পুরো নভোযানের ভর দাঁড়াবে ৪,১০০ কিলোগ্রাম যা মেসেঞ্জার নভোযানের প্রায় চার গুণ।
২০১৮ সালে পৃথিবী থেকে বেপি-কলম্বো উৎক্ষেপণ করা হবে অ্যারিয়ান ফাইভ রকেটের মাধ্যমে। ২০২৬ সাল নাগাদ বুধের কক্ষপথে পৌঁছে যাবে বেপি-কলম্বো নভোযান। তখন থেকেই শুরু হবে বৈজ্ঞানিক তথ্যের বিশ্লেষণ ও অন্যান্য পরীক্ষানিরীক্ষা। বুধের চারপাশে এক বছর ধরে প্রদক্ষিণ করার প্রাথমিক পরিকল্পনা আছে। পরে এই প্রকল্পের সময় আরো এক বছর বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে।   
                বেপি-কলম্বো মিশনের দুটো অরবিটার MPO এবং MMO-কে  বুধের কক্ষপথে পৌঁছে দেবে মার্কারি ট্রান্সফার মডিউল। রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পর মার্কারি ট্রান্সফার মডিউল সানশেড এবং দুটো অরবিটারসহ চাঁদের পাশ দিয়ে উড়ে যাবে। সেখান থেকে চাঁদের অভিকর্ষ বল কাজে লাগিয়ে সূর্যের আলোর চাপে পৌঁছে যাবে শুক্র ও বুধের মাঝামাঝি। পৃথিবী, শুক্র ও বুধের অভিকর্ষ বল কাজে লাগিয়ে এটা পৌঁছাবে বুধের কক্ষপথে। MMO কে বুধের কক্ষপথের উপরের দিকে ছেড়ে দেয়া হবে। তারপর সানশেড ও MPO-কে স্থাপন করা হবে বুধের অক্ষের নিচের দিকে।

বেপি-কলম্বো নভোযানের চারটি প্রধান অংশ

মহাকাশে এসব কাজ পৃথিবী থেকে সমন্বয় করা হবে ইওরোপ ও জাপান থেকে। ইওরোপিয়ান স্পেস অপারেশন্‌স সেন্টার হলো জার্মানিতে এবং নভোযান থেকে ডাটা ট্রান্সমিট করার জন্য ৩৫ মিটার ব্যাসের অ্যান্টেনা স্থাপন করা হয়েছে স্পেনে। MMO-এর নিয়ন্ত্রণ করা হবে জাপানের সাগামিহারা স্পেস অপারেশান সেন্টার থেকে। সেজন্য ৬৪ মিটার ব্যাসের একটি অ্যান্টেনা স্থাপন করা হয়েছে।


মার্কারি প্ল্যানেটারি অরবিটার (MPO)

মার্কারি প্ল্যানেটারি অরবিটার দেখতে একটা বাক্সের মতো যার দৈর্ঘ্য.৯ মিটার, প্রস্থ ১.৮ মিটার এবং পুরুত্ব ১.৬ মিটার। এর ভর ১১৪৭ কিলোগ্রাম। তার ওপর এটা আরো ৬৫০ কিলোগ্রাম ভরের জ্বালানি বহন করবে। এর সাথে লাগানো সোলার প্যানেল সৌরশক্তি থেকে ১০০০ ওয়াট ক্ষমতা উৎপাদন করতে পারবে।
            মার্কারি প্ল্যানেটারি অরবিটারে প্রায় ৮০ কিলোগ্রাম ভরের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা আছে। নিচের সারণিতে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিগুলোর বর্ণনা দেয়া হলো:

সারণি: মার্কারি প্ল্যানেটারি অরবিটারের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার যন্ত্রপাতি
যন্ত্র
কাজ
বেপি-কলম্বো লেসার অল্‌টিমিটার (BepiColombo Laser Altimeter, BELA)
ইনফ্রারেড লেসার সিস্টেম। বুধের উপরিতলের জরিপ করার জন্য নির্ভুল স্থানাঙ্ক নির্ধারক।
ইতালিয়ান স্প্রিং অ্যাক্সিলারোমিটার
(Italian Spring Accelerometer, ISA)
আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি পরীক্ষা করবে।
মার্কারি পোলার অরবিটার ম্যাগনেটোমিটার
Mercury Polar Orbiter Magnetometer, MPO/MAG (MERMAG)
বুধের চৌম্বকক্ষেত্রের মান ও দিক নির্ণয় করবে।
মার্কারি রেডিওমিটার অ্যান্ড থার্মাল ইনফ্রারেড স্পেকট্রোমিটার
Mercury Radiometer and Thermal Infrared
Spectrometer, MERTIS
বুধের গ্লোবাল ম্যাপিং করবে অনেক সূক্ষ্মভাবে।
মার্কারি গামা রে অ্যান্ড নিউট্রন স্পেকট্রোমিটার
Mercury Gamma ray and Neutron Spectrometer, MGNS
চারটি নিউট্রন সেন্সর দিয়ে বুধে সব ধরনের নিউট্রন শনাক্ত করবে।
মার্কারি ইমেজিং এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার
Mercury Imaging X-ray Spectrometer, MIXS
বুধের উপরিতলে এক্স-রে বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের উপস্থিতি শনাক্ত করবে।
মার্কারি অরবিটার রেডিও সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট
Mercury Orbiter Radio science Experiment, MORE
অরবিটারের গতিপথ পূঙ্খানুপূঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
প্রোবিং দি হারমিন এক্সোস্ফিয়ার বাই আলট্রাভায়োলেট স্পেকট্রোস্কোপি
Probing the Hermean Exosphere by Ultraviolet Spectroscopy, PHEBUS
বিভিন্ন শক্তি তরঙ্গের অতিবেগুনি বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বুধের জলবায়ুর উপাদানগুলোর পরিমাণ ও গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করবে।
সার্চ ফর এক্সোস্ফিয়ার রিফিলিং অ্যান্ড এমিটেড নিউট্রাল অ্যাবান্ড্যান্স
Search for Exosphere Refilling and Emitted Neutral Abundance, SERENA
বুধে চার্জ নিরপেক্ষ পরমাণু ও অন্যান্য কণা শনাক্ত করবে এবং তাদের শক্তি মাপবে।
স্পেকট্রোমিটারস অ্যান্ড ইমেজারস
Spectrometers and Imagers for MPO BepiColombo Integrated Observatory System,
SYMBIO-SYS
বুধ গ্রহের পুরো উপরিতলের উচ্চমানের ছবি তুলবে।
সোলার ইনটেনসিটি এক্স-রে অ্যান্ড পার্টিক্যল স্পেকট্রোমিটার
Solar Intensity X-ray and particle Spectrometer, SIXS

সূর্য থেকে আসা এক্স-রে এবং অন্যান্য শক্তিশালী কণা পরিমাপ করবে।




মার্কারি ম্যাগনেটোস্ফেরিক অরবিটার (MMO)
  
মার্কারি ম্যাগনেটোস্ফেরিক অরবিটার একটি অষ্টকোণি প্রিজমের আকারে তৈরি। এর উচ্চতা ৯০ সেন্টিমিটার। এর আট তলের একটা থেকে অন্যটার দূরত্ব ১.৮ মিটার। এই অরবিটার মিনিটে ১৫ বার ঘুরবে নিজের অক্ষের উপর। এভাবে তার আটটি তলে লাগানো সোলার প্যানেল থেকে ৩৫০ ওয়াট ক্ষমতা উৎপাদন করতে পারবে। আকারে ছোট হওয়ায় এর ভর প্রায় ২৭৫ কিলোগ্রাম - যা প্ল্যানেটারি অরবিটারের মাত্র চার ভাগের এক ভাগ। এর অ্যান্টেনার দৈর্ঘ্য ৮০ সেন্টিমিটার। বুধের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে এটা বছরে প্রায় ১৬০ গিগাবাইট ডাটা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠাবে। এই অরবিটারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে জাপানে।
            ম্যাগনেটোস্ফেরিক অরবিটারে ৪৫ কিলোগ্রাম ভরের পাঁচ ধরনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা আছে। নিচের সারণিতে যন্ত্রপাতিগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো।
           
সারণি: মার্কারি ম্যাগনেটোস্ফেরিক অরবিটারের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি
যন্ত্র

কাজ
মার্কারি ম্যাগনেটোস্ফিয়ার অরবিটার ম্যাগনেটোমিটার
Mercury Magnetospheric Orbiter Magnetometer,
MMO/MGF (MERMAG)

বুধের চৌম্বকক্ষেত্রের শক্তি ও গতিপথ নির্ণয় করবে।
মার্কারি প্লাজমা পার্টিক্যল এক্সপেরিমেন্ট
Mercury Plasma Particle Experiment, MPPE

বুধ গ্রহে প্লাজমা ও মৌলিক কণার উপস্থিতি শনাক্ত করবে।
মার্কারি প্লাজমা ওয়েভ ইন্সট্রুমেন্ট
Mercury Plasma Wave Instrument, PWI

বুধের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র ও চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি, তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ও কম্পাঙ্ক পরিমাপ করবে।
মার্কারি সোডিয়াম অ্যাটমোস্ফেরিক স্পেকট্রাল ইমেজার
Mercury Sodium Atmospheric Spectral Imager, MSASI

বুধের উপরিস্তর থেকে সোডিয়াম নির্গমন পরিমাপ ও বিশ্লেষণ করবে।
মার্কারি ডাস্ট মনিটর
Mercury Dust Monitor, MDM

বুধ গ্রহে ধুলিকণার প্রভাব পরিমাপ করবে।


বেপি-কলম্বো মিশন থেকে বুধ গ্রহ সম্পর্কে আরো অনেক নতুন তথ্য পাওয়া যাবে আশা করা যায়। এই নতুন তথ্যের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। 



বুধ - পর্ব ২৫


শিল্পীদের গ্রহ

বুধ গ্রহের সবগুলো গহ্বর, পাহাড়-টিলা, অববাহিকাসহ বেশির ভাগ জায়গার নাম রাখা হয়েছে পৃথিবীর বিখ্যাত সব লেখক, শিল্পী, চিত্রকর, সুরকারের নামে। সে হিসেবে বলা চলে বুধ গ্রহ হলো শিল্পীদের গ্রহ।
            বুধের বড় বড় বিস্তৃত সমতল ভূমির (plainatia) নাম রাখা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা ও জাতির বুধ-গ্রহের নামে। আমাদের বাংলা ভাষায় 'বুধ' শব্দটিরও স্থান হয়েছে বুধ গ্রহে। ৮১৬ কিলোমিটার ব্যাসের একটি সমতল ভূমির নাম রাখা হয়েছে 'বুধ'।
            নিচের ওয়েবসাইটে বুধ গ্রহের সমস্ত জায়গার নাম ও ম্যাপ বিস্তারিতভাবে দেওয়া আছে। তোমরা দেখে নিতে পারো:

https://planetarynames.wr.usgs.gov/Page/MERCURY/target
নিচের সারণিতে বুধের কয়েকটি সমতল ভূমির নাম ও তাদের নামের উৎসের তালিকা দেয়া হলো।

সারণি: বিভিন্ন ভাষায় বুধের কয়েকটি সমতল ভূমির নাম
নাম

ব্যাস (km)
নামের উৎস
স্টিলবন (Stilbon)

1550
বুধের প্রাচীন গ্রিক নাম
মিয়ারকেয়ার (Mearcair)

1175
বুধের আইরিশ নাম
সোবকউ (Sobkou)

1128
প্রাচীন মিশরীয়দের বুধ
আপারাঙ্গি (Aparangi)

1077
মাওরিদের বুধ
উতারিদি (Utaridi)
930
আফ্রিকান সোয়াহিলি ভাষায় বুধ
বুধ (Budh)

816
বাংলায় বুধ
তির (Tir)

754
পারস্য শব্দে বুধ
সুইসেই (Suisei)

569
জাপানি ভাষায় বুধ
শিহতু (sihtu)

565
ব্যাবিলনিয়ানদের বুধ

এপর্যন্ত বুধের ৩৯৭টি ক্রেইটার বা গহ্বরের নাম রাখা হয়েছে বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীদের নামে। আমাদের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নামেও একটি গহ্বরের নামকরণ করা হয়েছে 'আবেদিন' তা তোমরা আগেই জেনেছো। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামেও একটা গহ্বর আছে যার নাম 'ঠাকুর'।
            বুধের কয়েকটি প্রধান গহ্বরের অবস্থান ও ম্যাপ দেয়া হলো।


আবেদিন

নাম
আবেদিন

শিল্পী
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন (১৯১৪-১৯৭৬)
বাংলাদেশ
ফিচার আই-ডি
14574
উত্তর অক্ষাংশ
63.08 Degree
দক্ষিণ অক্ষাংশ
60.39 Degree
পূর্ব দ্রাঘিমাংশ
7.82 Degree
পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ
13.5 Degree
কেন্দ্রে অক্ষাংশ
61.73 Degree
কেন্দ্রে দ্রাঘিমাংশ
10.66 Degree
ব্যাস

116.23 km



ঠাকুর

নাম
ঠাকুর

শিল্পী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১), বিশ্বকবি
ফিচার আই-ডি
5990
উত্তর অক্ষাংশ
-1.81 Degree
দক্ষিণ অক্ষাংশ
-4.29 Degree
পূর্ব দ্রাঘিমাংশ
63.27 Degree
পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ
65.88 Degree
কেন্দ্রে অক্ষাংশ
-3.05 Degree
কেন্দ্রে দ্রাঘিমাংশ
64.57 Degree
ব্যাস

111 km

রেমব্রান্ত

নাম
রেমব্রান্ত
শিল্পী
রেমব্রান্ত ভন রে, ডাচ চিত্রকর (১৬০৬-১৬৬৯)
ফিচার আই-ডি
14563
উত্তর অক্ষাংশ
-24.58 Degree
দক্ষিণ অক্ষাংশ
-41.19 Degree
পূর্ব দ্রাঘিমাংশ
261.72 Degree
পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ
282.73 Degree
কেন্দ্রে অক্ষাংশ
-32.89 Degree
কেন্দ্রে দ্রাঘিমাংশ
272.13 Degree
ব্যাস
716 km

বিটোফেন

নাম
বিটোফেন

শিল্পী
বিটোফেন, জার্মান সুরকার (১৭৭০-১৮২৭)

ফিচার আই-ডি
660
উত্তর অক্ষাংশ
-13.24 Degree
দক্ষিণ অক্ষাংশ
-28.39 Degree
পূর্ব দ্রাঘিমাংশ
161.1 Degree
পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ
132.32 Degree
কেন্দ্রে অক্ষাংশ
-20.86 Degree
কেন্দ্রে দ্রাঘিমাংশ
124.21 Degree
ব্যাস

630 km




দস্তয়েভস্কি

নাম
দস্তয়েভস্কি

শিল্পী
ফিওদর দস্তয়েভস্কি, রুশ লেখক (১৮২১-১৮৮১)
ফিচার আই-ডি
1626
উত্তর অক্ষাংশ
-40.33 Degree
দক্ষিণ অক্ষাংশ
-49.06 Degree
পূর্ব দ্রাঘিমাংশ
170.99 Degree
পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ
185.23 Degree
কেন্দ্রে অক্ষাংশ
-44.73 Degree
কেন্দ্রে দ্রাঘিমাংশ
178.11 Degree
ব্যাস
430.06 km

টলস্টয়

নাম
টলস্টয়

শিল্পী
লিও টলস্টয়, রুশ লেখক, (১৮২৮-১৯১০)
ফিচার আই-ডি
6052
উত্তর অক্ষাংশ
-12.05 Degree
দক্ষিণ অক্ষাংশ
-20.4 Degree
পূর্ব দ্রাঘিমাংশ
160.29 Degree
পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ
168.98 Degree
কেন্দ্রে অক্ষাংশ
-16.23 Degree
কেন্দ্রে দ্রাঘিমাংশ
164.64 Degree
ব্যাস
355 km





মোৎসার্ট

নাম
মোৎসার্ট

শিল্পী
মোৎসার্ট, অস্ট্রিয়ান সুরকার (১৭৫৬-১৭৯১)
ফিচার আই-ডি
4058
উত্তর অক্ষাংশ
10.58 Degree
দক্ষিণ অক্ষাংশ
4.92 Degree
পূর্ব দ্রাঘিমাংশ
187.73 Degree
পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ
193.44 Degree
কেন্দ্রে অক্ষাংশ
7.75 Degree
কেন্দ্রে দ্রাঘিমাংশ
190.59 Degree
ব্যাস

241 km


শেক্‌সপিয়ার

নাম
শেক্‌সপিয়ার
শিল্পী
উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ার, নাট্যকার, (১৫৬৪-১৬১৬)
ফিচার আই-ডি
5456
উত্তর অক্ষাংশ
52.74 Degree
দক্ষিণ অক্ষাংশ
43.36 Degree
পূর্ব দ্রাঘিমাংশ
145.29 Degree
পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ
159.22 Degree
কেন্দ্রে অক্ষাংশ
48.1 Degree
কেন্দ্রে দ্রাঘিমাংশ
152.25 Degree
ব্যাস
399 km

Latest Post

ডাইনোসরের কাহিনি

  বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণি কী? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলবো নীল তিমি – যারা দৈর্ঘ্যে প্রায় তিরিশ মিটার, আর ওজনে প্রায় ১৯০ টন পর্যন্ত...

Popular Posts