Saturday 23 May 2020

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী - পর্ব ৬

6

"দোস্ত, আলোর প্রতিসরণাঙ্কের সূত্রটা" - আবুল হোসেনের গলায় কিছুটা অস্থিরতা। ফিসফিস করে বললেও নিস্তব্ধ রুমে অনেক জোরে শোনালো তার কথা। আলোর প্রতিসরণাঙ্কের সূত্র আসলে স্নেলের সূত্র। ফিজিক্সের সব ছাত্রই এই সূত্র জানে। কিন্তু পরীক্ষার টেনশানে অনেক সময় জানা ব্যাপারটাও ভুলে যায় মানুষ। আবুল হোসেনেরও তাই হয়েছে।
ফিসফিস করে বললাম, "এন ওয়ান সাইন থিটা ওয়ান সমান এন টু সাইন থিটা টু।"
আর কেউ কথা বলছে না বলেই হয়তো- আমার ফিসফিস করে বলা কথাটা অনেকটা লাউড স্পিকারে বলার মতো শোনালো রুমের ভেতর। আবুল হোসেন কিছু বলার আগেই দেখলাম পরিদর্শক ম্যাডাম আমার সিটের কাছে এসে দাঁড়ালেন। আমার মনে হলো এখনই আমার খাতা কেড়ে নিয়ে রুম থেকে বের করে দেবেন। এরকম ঘটনা আগেও ঘটেছে আমার জীবনে। ইউনিভার্সিটিতে ফরেস্ট্রির ভর্তি পরীক্ষায় বন্ধুকে খাতা দেখানোর অপরাধে আমার খাতা কেড়ে নিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়েছিলেন পরিদর্শক স্যার। এখানেও সেরকম ঘটনা ঘটলে বড় লজ্জার ব্যাপার হবে।
ঠক ঠক ঠক - বেঞ্চে তিনটা টোকা দিয়ে পরিদর্শক ম্যাডাম খুবই মৃদু কন্ঠে বললেন, "আপনারা সবাই এখানে শিক্ষক হবার জন্য এসেছেন। শিক্ষকদের আত্মমর্যাদা নষ্ট করবেন না।"
আত্মমর্যাদার আর কিছু অবশিষ্ট আছে কি না জানি না। মাথা নিচু করে লিখতে থাকলাম। কিন্তু আবুল হোসেন আলোর প্রতিসরণাঙ্কের সূত্র কেন জিজ্ঞেস করলো? প্রশ্নের কোথাও তো সেরকম প্রশ্ন নেই। তবে কি কয়েক সেট প্রশ্ন করা হয়েছে? হতেও পারে।
সময় শেষ হলো। বিশ মিনিট সময় নষ্ট না হলে হয়তো আরো একটা প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারতাম। পরিদর্শক ম্যাডাম খাতা জমা নিচ্ছেন। এসময় রুমে ঢুকলেন বিমান বাহিনীর সেই লম্বা অফিসার যার সাথে আমার কথা হয়েছিল সকালে বারান্দায়। তিনি বললেন, "আপনারা এখন কেউ চলে যাবেন না। আজকেই আপনাদের লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়া হবে। লিখিত পরীক্ষায় যারা টিকবেন তাদেরকে জানানো হবে হোয়াট টু ডু নেক্সট।"
অফিসার এবং পরিদর্শক ম্যাডাম চলে গেলেন। আমি নিচু হয়ে জুতাজোড়া পরে নিলাম।
"অ্যাই প্রদীপ, তোমার জুতায় কী হয়েছে?" - আবুল হোসেন আমার খবর না নিয়ে জুতার খবর নিচ্ছে আগে।
"জুতায় কিছু হয়নি, পায়ে ফোস্কা পড়েছে। তুমি সকালে এলে কীভাবে? আমি তো প্যারেডের ওখানে আটকে পড়েছিলাম।"
"ও, তুমি জানতে না! প্যারেডের সময় মুভমেন্ট বন্ধ থাকে। এদিকে কাঠগড় দিয়ে চলে এসেছে সবাই।"
কোন্‌ দিকে কাঠগড়, কীভাবে আসতে হয় কিছুই জানি না আমি, অথচ বাকিরা সবাই জানে। খোঁজখবর রাখার ব্যাপারটা কেন যে আমাকে দিয়ে কখনো হয় না।
রুমের ভেতর আমার আরো কয়েকজন ক্লাসমেটকে দেখতে পাচ্ছি। দু'তিন জন সিনিয়র ভাইয়া ও আপুও আছেন।
"আমি চলে যাচ্ছি প্রদীপ। তুই থাকবি না যাবি?" - মইন জিজ্ঞেস করলো। মইনুল ইসলাম আমার ক্লাসমেট। সুনির্দিষ্ট হিসাব ছাড়া কোন পদক্ষেপ সে নেয় না। জিজ্ঞেস করলাম, "রেজাল্ট দেখে যাবি না?"
"রেজাল্ট দেখে কী হবে? এত দূরে আমি চাকরি করতে আসতে পারবো না।"
"ঠিক আছে, তুই যা। তোর হয়তো ঘরের কাছেই কোন ব্যবস্থা আছে। আমি এসেছি যখন রেজাল্টটা দেখে যাই।"
মইন চলে গেলো। আমি আবুল হোসেনকে জিজ্ঞেস করলাম, "তোমার প্রশ্নে প্রতিসরণাঙ্ক ছিল না কি? আমার তো ছিল না।"
"তোমার প্রশ্ন আর আমার প্রশ্ন তো আলাদা। আমি তো ডেমোনেস্ট্রেটর পদের জন্য দরখাস্ত করেছি।"
"রেজাল্ট দিতে কতক্ষণ লাগবে জানো?"
"অনেক ক্যান্ডিডেট তো। সব খাতা কাটতে তো অনেক সময় লাগবে।"
"কয়টা পোস্ট জানো?"
"আজ সম্ভবত পাঁচটা পোস্টের পরীক্ষা হচ্ছে। ফিজিক্সের লেকচারার ও ডেমনেস্ট্রেটর, কেমিস্ট্রির লেকচারার ও ডেমনেস্ট্রেটর, আর ইংরেজির টিচার।"
আবুল হোসেন এত খবর কীভাবে রাখে কে জানে। তার জানাশোনা অনেক। একটু পরেই সে ব্যস্ত হয়ে বললো, "দোস্ত আমার একটা কাজ আছে। ঘুরে আসছি একটু পরে।"
আবুল হোসেন বের হয়ে কোথায় যেন চলে গেল। মনে হলো এই জায়গাটা তার পরিচিত।
সবার সাথে আমিও রুম থেকে বের হলাম। ক্ষুধা লেগেছে, কিছু খাওয়া দরকার। কলেজের ক্যান্টিন নিশ্চয় আছে কোথাও। বারান্দায় দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকালাম। অনেকগুলো অপরিচিত মুখ। মাত্র পাঁচটি পদের জন্য পরীক্ষা দিতে এসেছেন কমপক্ষে এক শ জন। গেট দিয়ে বের হবার সময় দেখলাম জামানকে। আমাদের আরেকজন ক্লাসমেট। জামানও মইনের মত প্রশ্ন করলো, "থাকবা, না চলে যাবা?"
"এসেছি যখন আরেকটু দেখে যাই।"
"কোন লাভ নেই। এদের মানুষ আছে।"
"মানে?"
"এখানে ফিজিক্সের লেকচারার হিসেবে অলরেডি একজন কাজ করছে। তার নাম নাইমুল। তাকে না নিয়ে আর কাউকে নেবে?"
"তুমি কীভাবে জানলে?"
"আমার এক বড়ভাই আছেন কলেজে। তিনি বলেছেন।"
জামানের জানাশোনার পরিধিও অনেক বেশি। সে ভেতরের খবর জানবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এসব ভেতরের খবরের দরকার আমার এ মুহূর্তে নেই, আমার দরকার কিছু খাবারের। জামান যেহেতু এত খবর জানে, খাবার কোথায় পাওয়া যেতে পারে নিশ্চয় জানবে। জিজ্ঞেস করলাম, "কলেজের ক্যান্টিন কোথায় জানো?"
"না, জানি না।"
সবাই কলেজের বারান্দায় ইতস্ততভাবে হাঁটাহাঁটি করছে। অনেক বছরের সিনিয়রও কেউ কেউ এসেছেন। তাঁদের অনেকের হয়তো অনেক ইন্টারভিউর অভিজ্ঞতা আছে। আমার এটাই প্রথম ইন্টারভিউ। আরো কত ইন্টারভিউ যে দিতে হবে সামনে।
রাস্তায় বের হলাম। আশা করেছিলাম চায়ের দোকান দেখতে পাবো। কলেজের আশেপাশে চায়ের দোকান থাকবে না, তা কী করে হয়! কিন্তু কিচ্ছু নেই। আশেপাশে ঝকঝকে পরিষ্কার রাস্তা আর সুসজ্জিত গাছপালা ছাড়া আর কিছুই নেই। কিছুটা হেঁটে দেখা যেতে পারে। হয়তো আর কখনো আসারই সুযোগ হবে না এখানে। সকালে আসার সময় যেদিক দিয়ে হেঁটে এসেছি সেদিকে কোন দোকানপাট দেখিনি। এবার অন্যদিকে হাঁটতে শুরু করলাম। পায়ের ফোস্কার কারণে হাঁটার গতি নেমে গেছে কচ্ছপের গতির পর্যায়ে।
অনেক ভীড়ের মধ্যেও একা হয়ে যাওয়া আমার অনেকদিনের অভ্যাস। আজও দেখলাম একা একাই হাঁটছি ঘাঁটির ভেতর। গেট দিয়ে বের হয়ে ডানদিকে হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম এদিকেও একটি গার্ডরুম আছে। গার্ডরুমের পাশে লোহার গেট বন্ধ। বড় গেটের পাশে একটা ছোট গেট আছে। সেটা খোলা। সেদিক দিয়ে বের হয়ে সামনে গিয়ে দেখি বেশ কিছু দোকানপাট আছে এদিকে। সাধারণ জনবসতি, ভাঙাচোরা রাস্তার উপর কয়েকটি রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে। মাত্র কয়েক মিটারের ব্যবধানে পরিবেশের কত পার্থক্য!
চায়ের দোকানে ঢুকে দেখি বেশ ভীড়। ক্যান্ডিডেটদের অনেকে এখানে এসে চা-নাস্তা নিয়ে বসে গেছেন ইতোমধ্যেই। ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন ছেলেকে দেখে কলেজের স্টুডেন্ট বলে মনে হচ্ছে। খাওয়া-দাওয়া করতে হলে বা কিছু কিনতে হলে তাদের এতদূর হেঁটে আসতে হয়! অবশ্য জায়গাটা আমার অপরিচিত বলেই হয়তো দূরত্ব খুব বেশি মনে হচ্ছে।
পুরোপুরি খালি টেবিল একটাও দেখছি না। বিবর্ণ দেয়ালের পাশে একটা টেবিলে দুটো চেয়ার খালি আছে। সেখানে গিয়ে বসলাম। বসতে না বসতেই দোকানের একটা ছেলে এসে একটা ন্যাকড়া দিয়ে টেবিলে আমার সামনের জায়গাটুকু মুছে দিল। যে ন্যাকড়াটা দিয়ে মুছলো সেটা টেবিলের ময়লার চেয়েও ময়লা। প্রচুর মাছি বসেছিল টেবিলে। ছেলেটার ন্যাকড়ার ঝাপটা খেয়ে মাছিগুলো কিছুটা বিরক্ত হয়ে টেবিলের অন্য জায়গায় গিয়ে বসলো।
"কী খাইবান?"
দুটো সিঙাড়া আনতে বলতেই সে দ্রুত চলে গেল এবং বিশ সেকেন্ডের ভেতর দুটো সিঙাড়া এসে গেলো আমার টেবিলে। মাছিগুলো আবার উড়তে শুরু করেছে।
"ফিজিক্সের ক্যান্ডিডেট?" - আমার পাশের চেয়ারের ভদ্রলোক জানতে চাইলেন। তাকালাম তাঁর দিকে এবং তাঁর সামনে যিনি বসেছেন তাঁর দিকে। স্যুট-টাই পরা দু'জনকেই দেখেছি পরীক্ষার রুমে।
"হ্যাঁ। আপনি?"
চায়ের কাপে প্রচন্ড শব্দে একটা চুমুক দিয়ে ভদ্রলোক বললেন, হু।
ভদ্রলোকের মাথাভর্তি টাক আর উপচেপড়া ভুড়ি দেখে মনে হচ্ছে চল্লিশ থেকে ষাটের মাঝামাঝি যেকোনো সংখ্যাই হতে পারে তাঁর বয়স। এখনো চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছেন? ভদ্রলোক মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পেরেছেন। বললেন, "আমি গোমদন্ডী কলেজে আছি অনেক বছর। আর প্রবীর আছে মহেশখালি কলেজে।"
বুঝতে পারছি সামনে যিনি বসে আছেন তিনিই প্রবীর। মহেশখালি কলেজের প্রবীর স্যার - খুব গম্ভীর টাইপের মানুষ। কড়া চোখে তাকালেন আমার দিকে। কড়া চোখ আমার সহ্য হয় না। আমি সিঙাড়ায় মনোযোগী হলাম। একটু পরে তাঁরা দু'জন উঠে গেলেন। আমি বের হলাম আরো মিনিট পাঁচেক পর।
১টা বেজে গেছে। কলেজের বারান্দায় এখন আবার ভীড়।
"ফিজিক্স লেকচারার পোস্টের জন্য যারা পরীক্ষা দিয়েছেন -এদিকে চলে আসেন।" - বিমান বাহিনীর সেই লম্বা অফিসার। এতক্ষণে তার নেমট্যাগ চোখে পড়লো - জামাল। জামাল সাহেবের নির্দেশ মতো আমরা বারান্দার এক পাশে সরে এলাম। হাতে একটি কাগজ নিয়ে জামাল সাহেব আবার বললেন, "এখন আমি যাদের নাম বলবো - তারা প্লিজ আমার ডান পাশে এসে দাঁড়াবেন। নামগুলি র‍্যান্ডমলি ডাকা হবে। আই মিন নট অ্যাকর্ডিং টু মেরিট।"
কিছুটা উৎকন্ঠা হচ্ছে। অফিসার জামাল হাতের কাগজ থেকে নাম পড়লেন, "দেলোয়ার হোসেন"।
দেলোয়ার ভাই খুব দ্রুত জামাল সাহেবের ডান পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। দেলোয়ার ভাই আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র। ডিপার্টমেন্টে অনেকবার দেখা হয়েছে। স্যুট-টাই পরা দেলোয়ার ভাইয়ের মুখ এখন হাস্যোজ্জ্বল।
"সুনীতি বিশ্বাস।" - এই দিদি আমাদের দু'ব্যাচ সিনিয়র। 
"স্বপন তালুকদার"
গোমদন্ডী কলেজের পেটমোটা শিক্ষক জামাল সাহেবের ডান পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। মনে হচ্ছে অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিলে তিনি অনেকদূর এগিয়ে থাকবেন।
"প্রবীর চৌধুরি" - মহেশখালি কলেজের গুরুগম্ভীর স্যার এখনো গম্ভীর।
"প্রদীপ কুমার দেব"
যাক - এবার মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়লেও কোন দুঃখ থাকবে না। জামাল সাহেবের ডান পাশে এসে দাঁড়ালাম। তিনি আর কোন নাম ডাকলেন না। বললেন, "বাকি সবাইকে ধন্যবাদ। এই পাঁচজন ছাড়া বাকিরা এখন যেতে পারেন। থ্যাংক ইউ।"
জামাল সাহেব আমাদের পাঁচজনকে বললেন, "প্লিজ ফলো মি"।
আমরা তাকে অনুসরণ করে একটা ক্লাস রুমে এলাম। কোন স্টুডেন্ট নেই সেখানে। তিনি বললেন, "প্লিজ ওয়েট হিয়ার। এখন আপনাদের ডেমোনেস্ট্রেশন ক্লাস নিতে হবে। আমি একজন একজন করে আপনাদের ডেকে নিয়ে যাবো।"
ক্লাসে অনেকগুলো বেঞ্চ থাকলেও কেউ বসলো না সেখানে। সবাই গম্ভীরমুখে দাঁড়িয়ে রইলো। পাঁচ জনের সবাই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। ডেমোনেস্ট্রেশন ক্লাস নেয়ার ব্যাপারটা আমার খুব ভালো ব্যবস্থা বলে মনে হলো। শিক্ষকের মূল কাজ পড়ানো। সেই পড়ানোর কাজটা ঠিকমত করতে না পারলে শুধুমাত্র তত্ত্বীয় জ্ঞান দিয়ে তো কাজ হবে না শিক্ষার্থীদের। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলেই যে ভালো শিক্ষক হবে এমন কোন গ্যারান্টি নেই।
জামাল সাহেব যে অর্ডারে লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছেন সে অর্ডারে ক্লাস ডেমোনেস্ট্রেশন হলে আমার ডাক পড়বে সবার শেষে। কী পড়াতে হবে সেটা কি তাঁরা ঠিক করে দেবেন, নাকি আমাদের ঠিক করতে হবে তা জানা দরকার। একটু পরে জামাল সাহেব এসে বললেন, "আপনাদের ক্লাস রেডি। আমাদের এক্সটার্নাল, প্রিন্সিপাল আর একজন এডুকেশান অফিসার ক্লাসে আছেন। আপনারা একজন একজন গিয়ে ক্লাস নেবেন। যখন থামতে বলা হবে তখন ক্লাস শেষ করে চলে আসবেন।"
জিজ্ঞেস করলাম, "টপিক কি আপনারা ঠিক করে দেবেন?"
"নো, টপিক ইজ ইওর চয়েজ। অ্যানি টপিক ইন ফিজিক্স। ওকে?"
দেলোয়ার ভাই বললেন, "ওকে"।
"সুনীতি বিশ্বাস, কাম ইউথ মি।"
দেলোয়ার ভাইয়ের বদলে আগে সুনীতি বিশ্বাসকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো - এখানেও র‍্যান্ডমলি ডাকা হচ্ছে। কার পরে কে যাবে সেটা তাঁরাই ঠিক করবেন।
দশ মিনিট পরে ফিরে এলেন সুনীতি বিশ্বাস। তারপর ডাক পড়লো দেলোয়ার ভাইয়ের। তারপর গেলেন প্রবীর চৌধুরি। তার পরে এলো আমার পালা। জামাল সাহেব আমাকে নিয়ে ক্লাসে ঢুকলেন। তারপর কিছু না বলে সামনের একটি চেয়ারে বসে পড়লেন। ক্লাসরুমটা বেশ বড়। কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিশ-পঁচিশজনের বেশি নয়। নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার জন্য আজ সম্ভবত কলেজের ক্লাস ছিল না। হয়তো এই শিক্ষার্থীদের আনা হয়েছে ডেমোনেস্ট্রেশন ক্লাসের জন্য। লাস্ট বেঞ্চে বসে আছেন একজন টাকমাথা গোলগাল ভদ্রলোক - পরনে সাফারি স্যুট। তাঁর পাশে বিমান বাহিনীর একজন অফিসার। সম্ভবত ইনিই এডুকেশান অফিসার। তার মানে সাফারি পরা টাকমাথা গোলগাল ভদ্রলোক কলেজের প্রিন্সিপাল। এডুকেশন অফিসারের পাশে যিনি বসে আছেন তাঁকে আমি চিনি। ডক্টর ফাতেমা নার্গিস। চট্টগ্রাম কলেজে আমাদের ফিজিক্স পড়িয়েছেন। তিনিই এক্সটার্নাল।
আমি মনে মনে একটা টপিক ঠিক করে রেখেছিলাম - ভর ও ওজনের কনসেপ্ট। ক্লাসে পড়ানোর প্রচলিত যে পদ্ধতি আছে সে পদ্ধতিতে শিক্ষক ক্লাসে এসে একতরফাভাবে বলে যাবেন আর শিক্ষার্থীরা তা শুনবে, শিক্ষক বোর্ডে যা লিখবেন, শিক্ষার্থীরা তা নোট করবে - আমি সেই পদ্ধতি খুব একটা কার্যকর বলে মনে করি না। শিক্ষক যা বলেন তার চেয়ে ভালো কথা লেখা আছে বইতে। শিক্ষার্থী নিজে নিজেই তা পড়ে নিতে পারে। বই থেকে দেখে দেখে শিক্ষক বোর্ডে লিখবেন, শিক্ষার্থীরা বোর্ড দেখে দেখে খাতায় নোট করবে - এটার কি কোন দরকার আছে? শিক্ষার্থী তো বই থেকেই সরাসরি পেতে পারে এসব তথ্য। শিক্ষকের কাজ হলো শিক্ষার্থীর ভেতর শেখার আগ্রহ তৈরি করে তোলা। ফিজিক্স হলো বোঝার বিষয়। মূল ব্যাপারটা বুঝাতে পারলে শিক্ষার্থীরা নিজের মতো করেই তা ব্যাখ্যা করতে পারবে। দশ মিনিটের মধ্যে আমি চেষ্টা করলাম শিক্ষার্থীদের সাথে একটা তথ্য প্রবাহ তৈরি করতে। দশ মিনিট পরেই প্রিন্সিপাল বললেন, "থ্যাংক ইউ মিস্টার প্রদীপ। ইউ মে কনক্লুড নাউ।"

গোমদন্ডী কলেজের স্বপন তালুকদার স্যারের ক্লাস শেষ হবার পর জামাল সাহেব আমাদের সবাইকে অপেক্ষা করতে বললেন। অন্যান্য বিষয়ের ডেমোনেস্ট্রেশন হয়তো অন্য কোন রুমে হচ্ছে। জানা গেলো এবার আমাদের নিয়ে যাওয়া হবে বেস কমান্ডারের অফিসে। সেখানে হবে আমাদের মৌখিক পরীক্ষা। তিনটার দিকে বিমান বাহিনীর একটা মাইক্রোবাসে তোলা হলো আমাদের। মিনিট দশেক পর মনে হলো এয়ারপোর্টের রানওয়ের উপর দিয়ে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো একটা বিশাল বিল্ডিং-এ। একটা বড় হল ঘরে আমাদের বসতে বলা হলো। এখানে সবকিছু এত নিঃশব্দ আর গোছানো যে কেমন যেন গা ছম ছম করে। সব জায়গায় জোরে হৈ চৈ আর নানারকম শব্দ শুনতে শুনতে এতটাই অভ্যস্ত আমার কান, হঠাৎ সবকিছু চুপচাপ হয়ে গেলে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে।
          সাড়ে তিনটার দিকে আমাদের পাঁচজনকে হল রুম থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হলো বোর্ড রুমের সামনে। সেখানে লবিতে অনেকগুলো চেয়ার পাতা। বসতে বলা হলো সেখানে। আমাদের মৌখিক পরীক্ষা হবে এই বোর্ড রুমে।
          প্রথমেই ডাক পড়লো দেলোয়ার ভাইয়ের। বিশ মিনিট পর তিনি বের হলেন। এই বিশ মিনিটকে মনে হচ্ছিল অনন্তকাল। দেলোয়ার ভাইকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছিল। সুনীতি বিশ্বাস ভেতরে যাবার পর দেলোয়ার ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, "কী কী জিজ্ঞেস করলো?"
"অ্যা লট অব কোয়েশ্চেন্‌স। দে ওয়ান্ট টু নো হাউ মাস ফিজিক্স ইউ নো।" - কথা বলার সময় খুব মাথা নাড়েন দেলোয়ার ভাই। কিন্তু হঠাৎ সব কথা ইংরেজিতে বলছেন কেন তিনি?
"ইংরেজিতে কথা বলছেন কেন ভাইয়া?"
"নো বাংলা ম্যান, অল ইংলিশ ইন দ্যাট রুম।"
আমার মাথায় যেন হাতুড়ির বাড়ি পড়লো একটা। সব কথা ইংরেজিতে বলতে হবে? বিশ পঁচিশ মিনিট ধরে? ইংরেজি বাক্য যে একদম বলতে পারি না তা নয়, তবে সমস্যা হলো আমার ইংরেজি তো কেউ বুঝবে না। তাছাড়া তাঁদের ইংরেজি আমি কীভাবে বুঝবো? আমার হঠাৎ মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা জেগে উঠলো। মনে হলো এ অন্যায়, ঘোরতর অন্যায়। বাংলাদেশের মানুষ হয়ে বাংলা ছেড়ে ইংরেজিতে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেই বা কেন? আবার মনে হলো - আমি ইংরেজি জানি না বলেই এরকম ভাবছি। পেটের ভেতরও কেমন যেন করছে। উৎকন্ঠায় নাকি অনেক সময় ডায়রিয়া হয়ে যায় - নার্ভাস ডায়রিয়া। এখন যদি সেটা শুরু হয় তাহলে তো সব গেল। নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম - বোর্ড রুমের ভেতর যারা আছেন তাঁরা ইংরেজি না জানলে সর্বোচ্চ যে শাস্তি আমাকে দিতে পারেন - সেটা হলো চাকরি না দেয়া। আর তো কিছু করতে পারবেন না। কিন্তু সবাই ইংরেজি জানলেও তো চাকরি সবাইকে দিতে পারবেন না, শুধু একজনকেই দেবেন। সুতরাং টেনশান করার কিছু নেই। তার চেয়ে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি অধিনায়কদের অফিসের চাকচিক্যটা দেখে নেয়া যাক। এই অফিসে আসার সুযোগ সারাজীবনেও আর হবে না। 
"আপনি কি এখন চলে যাবেন দেলোয়ার ভাই?" - টেনশান কমানোর জন্য দেলোয়ার ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম।
"নো, উই কান্ট গো ফ্রম হিয়ার। দিস ইজ রেসট্রিকটেড এরিয়া। দে উইল টেক আস টু দ্য সিভিল এরিয়া। দেন উই ক্যান গো।" - মনে হচ্ছে দেলোয়ার ভাই বাংলা ভাষা পুরোপুরি ভুলে গেছেন। সুনীতিদি বের হলে দেখতে হবে তিনিও ইংরেজিতে কথা বলেন কি না।
পনেরো মিনিট পরেই বেরিয়ে এলেন সুনীতিদি। তারপর ডাক পড়লো প্রবীর চৌধুরির। সুনীতিদিকে জিজ্ঞেস করলাম, 'সব নাকি ইংরেজিতে প্রশ্ন করে?'
"হ্যাঁ, সব প্রশ্ন ইংরেজিতেই করে। অনেক প্রশ্ন বুঝিও নাই।"
শুনে শান্তি লাগলো। তিনি যে প্রশ্ন বুঝতে পারেননি সে কারণে নয়, তিনি যে এখন বাংলায় কথা বলছেন সে কারণে।
আমার ডাক পড়লো সবার শেষে। বিমানবাহিনীর একজন স্টাফ বোর্ড রুমের দরজা খুলে ধরলেন। আমি ভেতরে ঢোকার পর দরজা আবার বন্ধ করে দিলেন। রুমের ভেতর বিশাল একটা ডিম্বাকৃতি টেবিলের এক পাশে প্রায় বারো-চৌদ্দজন এয়ারফোর্স অফিসার বসে আছেন। প্রিন্সিপাল আর ফাতেমা নার্গিস ম্যাডাম ছাড়া আর কোন সিভিলিয়ান নেই। টেবিলের অন্য পাশে একটি মাত্র চেয়ার। তার সামনে টেবিলের উপর কাচের বড় গ্লাসে এক গ্লাস পানি রাখা আছে। রুমের ভেতর বাইরে থেকে কোন আলো আসার ব্যবস্থা আছে কি না জানি না। কারণ কোন জানালা দেখলাম না। জানালা থাকলেও তা ভারী পর্দা দিয়ে ঘেরা। ঘরের আলো নিয়ন্ত্রিত। আমার হঠাৎ মনে হলো মঞ্চ নাটকের আলোর মত পরিকল্পিত আলো।
"প্লিজ সিট ডাউন মিস্টার দেব"
"থ্যাংক ইউ স্যার"
দেখলাম সবার সামনেই একটা করে ফাইল। সেই ফাইলে আমার মার্কশিট, সার্টিফিকেট ইত্যাদি। অরিজিনাল কাগজপত্র আমার হাতের ফাইলে আছে। দেখতে চাইলে দেখাতে পারবো। কথাবার্তা সব ইংরেজিতে - তাই আমাকে খুব মনযোগ দিয়ে শুনতে হচ্ছে। কারণ আমার মস্তিষ্ককে অনেক কাজ দ্রুত করতে হচ্ছে। ইংরেজি শুনে সেটাকে বাংলা অনুবাদ করে বুঝতে হচ্ছে। তার উত্তর তৈরি হচ্ছে বাংলায়। তারপর সেই বাংলাকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে মুখ দিয়ে ডেলিভারি দিতে হচ্ছে। বেস কমান্ডার নিজের পরিচয় দিলেন এবং প্যানেলের অন্যান্য মেম্বারদের নাম ও পরিচয় বললেন। ঢাকা থেকে অনেক অফিসার এসেছেন। একজন অফিসার শিক্ষা-মনোবিদ, একজন অফিসার পদার্থবিজ্ঞানী। অফিসার জামাল সাহেবকেও দেখলাম প্যানেলে। বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন দিয়ে শুরু হলো। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কেই জিজ্ঞেস করা হলো। যেসব বিষয় জিজ্ঞেস করা হলো সেগুলোর উত্তর আমার জানা ছিল। তারপর শিক্ষার দর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা হলো - আমি প্রাইভেট পড়ানোর পক্ষে, নাকি বিপক্ষে? আমি যা বিশ্বাস করি তাই বললাম - ক্লাসে যদি ভালোভাবে পড়ানো হয় - তাহলে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ার দরকার হয় না। প্রাইভেট পড়াটা একটা অলীক বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে এখন। সে ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ যতটা, অভিভাবকদের আগ্রহ তার চেয়ে বেশি। মনোবিজ্ঞানী জানতে চাইলেন কোথায় থাকি, চাকরি হলে কীভাবে আসবো কলেজে। এবার বেস কমান্ডার জিজ্ঞেস করলেন সবচেয়ে জটিল প্রশ্ন। ইংরেজি থেকে বাংলা করলে এরকম দাঁড়ায়: "আপনি তো অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছেন, মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়েছেন। এত ভালো রেজাল্ট করে আপনার তো গবেষণা করা উচিত। আপনি একটা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছেন কেন?"
এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ নয়। আমি কোন রকম দ্বিধা না করেই সত্যি কথাটা বললাম - "স্যার, এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া খুব সহজ নয় আমার জন্য। আমি পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করেছি। গবেষণা করার ইচ্ছা আছে। কিন্তু সেই ইচ্ছাপূরণের সুযোগ কখন আসবে, কিংবা আদৌ আসবে কি না আমি জানি না। তার জন্য অপেক্ষা করার আর্থিক সংগতি আমার নেই। চাকরি করতে করতে আমি চেষ্টা করে যাবো গবেষণা বা উচ্চতর শিক্ষার সুযোগের।"
"তার মানে আপনি এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ পেলে চলে যাবেন?"
"জ্বি স্যার।"
শেষের দিকের এই প্রশ্নোত্তরের পরে আমার কেন যেন মনে হচ্ছিলো আমার চাকরিটি এখানে হবে না। কারণ যে মানুষ শুরু থেকেই বলছে যে ভালো সুযোগ পেলে চলে যাবে - তাকে কেন চাকরি দেবে?
সব শেষে ঘাঁটি অধিনায়ক বললেন, "আমাদের প্রশ্ন শেষ। এবার আপনার কি কোন প্রশ্ন আছে?"
"স্যার, শাহীন কলেজের শিক্ষকদের জন্য ইংরেজিতে কথা বলা কি বাধ্যতামূলক?"
"না।"
ইচ্ছে করছিলো জিজ্ঞেস করি আজ কেন ইংরেজিতে কথা বলতে বাধ্য করা হলো? কিন্তু সব কথা সবসময় জিজ্ঞেস করতে হয় না। বললাম, 'থ্যাংক ইউ স্যার।"
ভাইভা শেষ হলো। চাপে পড়ে জোড়াতালি দিয়ে অনেক ইংরেজি বাক্য বলে ফেলেছি। অফিসাররা যে হেসে ফেলেননি তাতেই আমি খুশি।
এখান থেকে এয়ারপোর্ট কাছে। মাইক্রোবাস আমাদেরকে এয়ারপোর্টের কাছে বি-আর-টি-সি বাসের স্টেশনে নামিয়ে দিলো। অন্যরা যে যার মতো চলে গেলো। আমি আর দেলোয়ার ভাই উঠলাম বি-আর-টি-সি বাসে। পাশাপাশি সিটে বসে দেলোয়ার ভাই কথা বলতে শুরু করলেন।
"হোয়াট ডু ইউ থিংক অ্যাবাউট দি ইন্টারভিউ?"
"দেলোয়ার ভাই, প্লিজ বাংলায় কথা বলেন। ইংরেজি বুঝতে আমার সমস্যা হয়।"
"ওকে ওকে। আমাদের পাঁচ জনের মধ্যে কার চাকরি হবে বলে তোমার মনে হয়?"
"আমার কী মনে হয় সেটা পরে বলি। আপনি বলেন আপনার কী মনে হয়?"
"সত্যি বলব?
"আপনি কি মিথ্যা বলতে পারেন দেলোয়ার ভাই?"
"না, পারি না। আসলে চাকরিটা হবে আমার।"
"আমারও তাই মনে নয়।"
"কেন জানো?"
"আপনি বলেন।"
"আমার ইংরেজি সবচেয়ে ভালো। আই স্পিক গুড ইংলিশ।"
"জ্বি দেলোয়ার ভাই।"
দেলোয়ার ভাই আমাকে কিছুতেই বাসের ভাড়া দিতে দিলেন না।
দেলোয়ার ভাইয়ের মতো আমিও ধরে নিয়েছিলাম চাকরিটি দেলোয়ার ভাইয়েরই হবে।
জীবনের প্রথম চাকরির পরীক্ষা দিয়েই চাকরিটি পেয়েছি। সেজন্য ভালোও লাগছে। আজ সেই চাকরিতে যোগ দিয়ে একটা নতুন পথচলা শুরু করেছি।
বাস টাইগার পাস হয়ে নিউমার্কেটের সামনে দিয়ে আন্দরকিল্লা রহমতগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজের সামনে দিয়ে গুলজার সিনেমার সামনে এসে দাঁড়ালো। সুপাল স্যার আর সংযুক্তা ম্যাডাম নিউমার্কেটে নেমে গেছেন। গুলজারের সামনে থামার সাথে সাথে ছোলায়মান স্যার টুপ করে নেমে কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেলেন। ভাইস-প্রিন্সিপাল ম্যাডামের সাথে টুনি এবং আরেকজন ম্যাডাম নামলেন।
"কাল সকাল ছ'টা চল্লিশ মিনিটের আগে এখানে থাকবেন।"
"জ্বি ম্যাডাম।"
ম্যাডামরা রিকশায় উঠে চলে গেলেন। আমি পা বাড়ালাম গুলজার সিনেমার দিকে - এখানেও চলছে  'প্রেম দেওয়ানা'।
 

No comments:

Post a Comment

Latest Post

Dorothy Crowfoot Hodgkin

  Look closely at the fingers of the person in the picture. Her fingers had not bent in this way due to age; she had been suffering from chr...

Popular Posts