Showing posts with label মানবতা. Show all posts
Showing posts with label মানবতা. Show all posts

Saturday, 30 June 2018

এত ঘৃণা ধর্মের ভেতর?




ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া তো দূরের কথা, অনেকের সময় বা ইচ্ছে কোনটাই হয় না ইতিহাস পড়ে দেখার। কিন্তু ভালো সিনেমা দেখেন অনেকেই। অস্কার পাওয়া 'গান্ধী' সিনেমাটি যারা দেখেছেন - তাদের একটা দৃশ্যের কথা মনে আছে নিশ্চয়। কলকাতায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই, মহাত্মা গান্ধী কলকাতায় এসে অনশন শুরু করেছেন। দাঙ্গা বন্ধ না হলে তিনি অনশন ভাঙবেন না। সারা ভারতের কংগ্রেস নেতারা তাঁকে অনুরোধ করছেন অনশন ভাঙার। গান্ধীকে ভালোবাসে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ। যারা দাঙ্গা করছে তারাও। একজন হিন্দু দাঙ্গাবাজ গান্ধীর কাছে এসে স্বীকার করে যে তার সন্তানের হত্যার বদলা নিতে একটি মুসলমান ছেলেকে হত্যা করেছে। গান্ধী তাকে পরামর্শ দেন একটা মুসলমান ছেলে খুঁজে বের করতে যার মা-বাবাকে হিন্দু দাঙ্গাবাজরা খুন করেছে। তারপর সেই ছেলেকে দত্তক নিয়ে যেন নিজের সন্তানের মত মানুষ করে।





গোঁড়া ধর্মবিশ্বাসী মহাত্মা গান্ধী মানবিকতার পরম আদর্শ হতে পেরেছিলেন। সিনেমার সেই দাঙ্গাবাজ হিন্দুটি একটি মুসলমান ছেলেকে নিজের ছেলের মত মানুষ করেছিলেন কি না আমরা জানি না। কিন্তু আমরা সম্প্রতি জানলাম ভারতের হায়দরাবাদে হিন্দু দম্পতি পাপালাল রবিকান্ত ও জয়শ্রী দেবী একটি অনাথ মুসলমান মেয়েকে নিজেদের সন্তানের মত মানুষ করছেন গত বারো বছর ধরে।




২০০৭ সালে হায়দরাবাদের গোকুল চাট ভান্ডার রেস্টুরেন্টে এবং লুম্বিনি পার্কে পরপর দুটো বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উগ্রবাদী ধর্মীয় জঙ্গিরা ৪২জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল। সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে সদ্য মা-বাবা হারা দু'বছরের ছোট্ট মেয়েটি আকুল হয়ে কাঁদছিল। হয়তো সে ছিল তার মা-বাবার প্রথম সন্তান, আদরের ধন। মেয়েকে সাথে নিয়ে এসেছিল রেস্টুরেন্টে। মেয়েটি জানেই না তার মা-বাবার কী হয়েছে, কেন হয়েছে। কাঁদা ছাড়া আর কিছু তো সে করতে পারে না। এই মেয়েটিকে হাত বাড়িয়ে বুকে টেনে নিয়েছিলেন পাপালাল ও জয়শ্রী দম্পতি। তারপর অনেক খুঁজেছেন শিশুটির মা-বাবাকে পাওয়া যায় কি না। পাওয়া যায়নি। নিঃসন্তান পাপালাল ও জয়শ্রী হয়ে ওঠেন শিশুটির বাবা-মা। দত্তক নেন তাকে। নাম রাখেন সোনিয়া। সোনিয়া জন্মসূত্রে হিন্দু কি মুসলিম তাতে কিছুই যায় আসেনি কারো। বুকে পিঠে মানুষ করছেন সোনিয়াকে। পড়াচ্ছেন ভালো প্রাইভেট স্কুলে। কিন্তু এত সুখ কি সহ্য করা যায়? উগ্র হিন্দুত্ববাদ জেগে ওঠে প্রতিবেশীর মনে। 

হায়দরাবাদ শহর -যেটা ভারতের আধুনিক শহরগুলোর মধ্যে একটি, সেখানে সঙ্গবদ্ধ হয়ে হিন্দুবাদীরা একজন মুসলমানের মেয়েকে দত্তক নিয়ে মানুষ করার অপরাধে পরপর ১৬বার ছুরি মারে পাপালাল রবিকান্তকে। ধর্ম কি মানুষকে অন্ধ করে দেয়? এ কেমন ধর্ম - যেটা মানুষের মাথার ভেতর ঢুকিয়ে দেয় এমন ঘৃণার বিষ? এই ঘৃণা থেকেই তারা হত্যা করেছিল মহাত্মা গান্ধীকে - সেই ১৯৪৮ সালে। সেই ঘৃণার ধারা এখনো বয়ে চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম - ধর্মের নামে। এ কেমন ধর্ম তোমরা পালন করছো - হে মানুষ? সোনিয়ার মা এত আঘাতের পরেও যখন প্রশ্ন করেন, "আমরা সকলেই মানুষ। একই রক্ত বইছে সকলের শরীরে। আমাদের যদি কোন সমস্যা না থাকে, তাহলে সমাজ প্রশ্ন তোলার কে?"

এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? 



Thursday, 7 June 2018

আতঙ্কিত মালাউন


বাংলাদেশের হিন্দুরা ঠিক কী রকমের আতঙ্কে দিন কাটান তা তাঁদের একজন না হলে ঠিকমতো বুঝতে পারা সম্ভব নয়। সংবেদনশীল বিবেকবান মানুষ সহানুভূতি অনুভব করবেন ঠিকই - কিন্তু সামান্য হলেও বোধের তারতম্য একটু থাকবেই।

বাংলাদেশের হিন্দুরা 'মালাউন' শব্দের সাথে বিশেষভাবে পরিচিত। কারণ জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে তাঁদের এই শব্দটা শুনতে হয় এবং বেশির ভাগ সময় শুনে হজম করে ফেলতে হয়। প্রতিকারের অক্ষমতা মানুষকে প্রতিবাদে নিরুৎসাহিত করে। ক্ষমতাহীন মানুষ 'মাইন্ড' করলেও কারো কিছু যায় আসে না। ফলে হিন্দুদের মালাউন বললে এখন আর তাঁদের 'মাইন্ড' করার উপায় নেই।

বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের পরিমার্জিত সংস্করণের ৯৮১ পৃষ্ঠায় মালাউন শব্দের তিনটি অর্থ দেয়া আছে। ১. লানতপ্রাপ্ত; অভিশপ্ত; বিতাড়িত; কাফের। ২. শয়তান। ৩. মুসলমান কর্তৃক ভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের লোককে দেয় গালিবিশেষ। লানত শব্দের অর্থ নিয়ে সমস্যায় ছিলাম। অভিধানের ১০৫৪ পৃষ্ঠায় সে সমস্যার সমাধান মিললো। লানত শব্দেরও তিনটা অর্থ দেয়া আছে। ১. অভিশাপ। ২. অপমান; লাঞ্ছনা; ভর্ৎসনা। ৩. শাস্তি।

মনে হচ্ছে মালাউন শব্দের অর্থের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার চলছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের হিন্দুরা প্রতিদিনই বুঝতে পারছে বাংলাদেশে হিন্দু হয়ে জন্মনেয়াটা অভিশাপের শামিল, প্রতিদিনই তাঁদের কোন না কোনভাবে অপমানিত হতে হয়। অপরাধ না করলেও শাস্তি পেতে হয় - মালাউন হওয়ার চেয়ে বড় অপরাধ আর কী হতে পারে?





ছবিতে যে অপমানিত লাঞ্ছিত ক্রন্দনরত প্রাণভয়ে পলায়নরত মানুষগুলোকে দেখতে পাচ্ছেন তাঁদের অপরাধ কী? অপরাধ একটাই - তাঁরা সবাই হিন্দু। এই মানুষগুলোর কেউই পাঁচই জানুয়ারির নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেননি, নির্বাচন প্রতিহত করার 'জেহাদ'-এও অংশ নেননি। হিন্দুর ঘরে জন্মনেয়ার ব্যাপারেও তাঁদের নিজেদের কোন হাত ছিল না। কিন্তু বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে নাকি লেখা আছে - মানুষের ভাগ্যে কী ঘটবে তা পূর্ব-নির্ধারিত। তাই কি এঁদের সারাজীবনের তিল তিল করে গড়ে তোলা আশ্রয়টুকুরও এই অবস্থা করে দেয়া যায়?





আমি জানি উপরের দুটো ছবির বিষয়বস্তুর সাথে আমার মতো আরো অনেকেরই অনেকদিনের পরিচয়। ১৯৭১ সালে আমাদের গ্রামে এই ছবিটা তোলা হলে এই অসহায় মানুষগুলোর ভীড়ে আমার বাবার আতঙ্কিত মুখও দেখা যেতো। দেখা যেতো তাঁর শিশুসন্তানদের কোলে পিঠে নিয়ে যাত্রা করেছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। লক্ষ্য একটাই কীভাবে বাঁচাবেন নিজের সন্তানদের প্রাণ। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া এই বাড়িটার সাথে আমাদের বাড়ির পোড়া-ছাইয়ে কোন পার্থক্য নেই। কেবল পার্থক্য সময়ের - ১৯৭১ থেকে ২০১৪

১৯৭১-এ শত আতঙ্কের মধ্যেও একটা স্বপ্ন ছিল - একদিন বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। সেই স্বপ্নে মানুষ কষ্টকে কষ্ট মনে করেননি। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও যখন বারবার অত্যাচারের পুনরাবৃত্তি ঘটে বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর, কিসের স্বপ্ন দেখবে আজকের আতঙ্কিত হিন্দুরা?

বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবীর উর্বর ক্ষেত্র। এইদেশে কাজের মানুষ নেই - কিন্তু কথা বলার মানুষের অভাব নেই। যে কোন বিষয়েই বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণে কান ঝালাপালা করে দেয়ার মানুষের অভাব নেই - কিন্তু সেই বিশ্লেষণ আতঙ্ক বাড়াতে হয়তো কিছুটা সহায়তা করে - কিন্তু হিন্দুদের আতঙ্ক কমাতে পারে না কিছুতেই।

রাউজানের ফজলুল কাদের চৌধুরি তাঁর এলাকার হিন্দুদের তুলনা করতেন তাঁর পুকুরের মাছের সাথে - যেগুলো তাঁর পুকুরে ভীষণ নিরাপদে স্বাধীনভাবে বাস করে। সালাহ্‌উদ্দিন কাদের চৌধুরিও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাঁর আব্বার কথাগুলোই বলতেন। তাঁরাই এলাকার হিন্দুদের রক্ষাকর্তা! বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকাতেই এরকম কিছু  রক্ষাকর্তা জন্মেছেন বা বেড়ে উঠেছেন গত ৪২ বছরে। বাংলাদেশের হিন্দুরা এখন এসব রক্ষাকর্তার পুকুরের মাছ। প্রাণভয়ে আক্ষরিক অর্থেই পুকুরের ঠান্ডা পানিতে গলা ডুবিয়ে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশের আতঙ্কিত হিন্দুদের।

এখন অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রভাবশালী মুসলমানরা বলতে শুরু করেছেন তাঁরা হিন্দুদের রক্ষা করবেন। এই বীরেরা অবশ্যই আতঙ্কিত হিন্দুদের রক্ষা করবেন। বার্টোল্ট ব্রাখ্‌টের গ্যালিলিও নাটকের দুটো সংলাপ মনে হয় প্রাসঙ্গিক মনে হবে এখানে:

- দুর্ভাগা সেই জাতি যে জাতি বীরের মর্যাদা দিতে জানে না।
- না, দুর্ভাগা সেই জাতি যে জাতির বীরের প্রয়োজন হয়।

আমাদের সকল কাজেই বীরের দরকার হয় এবং আমরা বীরের মর্যাদা দিতে জানি না।

ধর্মীয় বিভাজন যতদিন থাকবে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা 'মালাউন' হয়েই থাকবে। তাদের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকবে এবং তাদের ওপর সংখ্যাগুরুদের অত্যাচার ক্রমশ বাড়তে থাকবে। তারপরেও মাঝে মাঝে তারা কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে - যেমন পুকুরের মাছেরা স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে। 


Monday, 4 June 2018

প্রসঙ্গ: আবুল বাজানদার


কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ব্যাপারে আমাদের মত কৃপণ আর কোন দেশে আছে কি না আমি জানি না। যদি কেউ আমাদের দুঃসময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, আমাদের উপকার করে্ন - আমরা শুরুতে কেঁদেকেটে চিৎকার করে তাঁর গুণগান করি। তারপর যখন তাঁর কাছ থেকে উপকার নেয়াটা আমাদের নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় – তখন আমরা আস্তে আস্তে বদলে যেতে থাকি। কৃতজ্ঞতার ভার আমরা সইতে পারি না। এই ভার কমানোর জন্য আমরা গভীর মনোযোগে উপকারীর উপকারের পেছনে কী উদ্দেশ্য আছে তা বের করার চেষ্টা করি। তেমন কোনকিছু খুঁজে না পেলে যে কোন ছুতোয় তাঁর বদনাম করতে শুরু করি।

বাংলাদেশের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের আচরণের ব্যাপারটা ভেবে দেখুন। ডাক্তাররা দিনরাত পরিশ্রম করে চিকিৎসা দিয়ে রোগীদের মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। আর রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে ডাক্তারদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে শুরু করেন। রোগী যত বলেন, রোগীর আত্মীয়স্বজন বলেন তার দশগুণ। সুস্থ থাকার জন্য ডাক্তাররা রোগীকে যেভাবে জীবন-যাপন করতে বলেন, যেভাবে ওষুধ খেতে বলেন তা সেভাবে না মেনে – ডাক্তারের ওপর ডাক্তারি করতে করতে যখন অসুখের ডালপালা গজিয়ে ফেলেন – আবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করেন। আর ‘কসাই’ ডাক্তাররা আবার সেই রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে ভালো করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করেন।

ডাক্তারদের ব্যাপারে কতটুকু অকৃতজ্ঞ হওয়া যায় তার সাম্প্রতিক উদাহরণ আবুল বাজানদার – যাঁকে বৃক্ষমানব নামে চেনেন বাংলাদেশের মানুষ। আবুল বাজানদার Epidermodysplasia verruciformis (EV) বা Tree syndrome-এ আক্রান্ত হয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। আবুল বাজানদারের দুই হাতের ত্বকে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়ে গাছের ঝোপের মতো হয়ে গিয়েছিল  সারা পৃথিবীতে বিরল এই রোগের এখনো কোন সুনির্দিষ্ট নিরাময়ের ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি।



চিকিৎসার আগে আবুল বাজানদার



ডাক্তার সামন্তলাল সেন এবং তাঁর ইউনিটের একদল বাংলাদেশি ডাক্তার গত আড়াই বছর ধরে অবিরাম চিকিৎসা দিয়েছেন আবুল বাজানদারকে। হাতে-পায়ে ২৪টি অস্ত্রোপচার করে তাঁকে প্রায় সুস্থ করে তুলেছিলেন আমাদের ডাক্তাররা। এই রোগ জিনেটিক কিনা পরীক্ষা করার জন্য তার রক্ত ও অন্যান্য উপাদান দেশের বাইরে পাঠিয়ে পরীক্ষা করে আনিয়েছেন ডাক্তাররা। হাসপাতালে শুধুমাত্র আবুল বাজানদারের চিকিৎসার কাজে ব্যবহারের জন্য আলাদা যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করেছেন। আবুল বাজানদারের চিকিৎসার অগ্রগতি নিয়ে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রশংসা করা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন মেডিক্যাল নিউজে। 


অনেকগুলো অপারেশন ও সমন্বিত চিকিৎসার পর আবুল বাজানদার 


অথচ আমরা কী দেখলাম? আমরা দেখলাম আবুল বাজানদার হাসপাতাল থেকে কাউকে কিছু না বলে চলে গেলেন। অর্থাৎ পালিয়ে গেলেন। তাঁকে কেউ বেঁধে রাখেননি হাসপাতালে। কিন্তু তিনি চলে গিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের লোকদের বলতে শুরু করলেন – হাসপাতালে তাঁর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন ডাক্তাররা। বিবিসি বাংলায় আবুল বাজানদারের বলা কথা শুনলাম। সেখানে আবুল বাজানদার বললেন যে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানের জন্য প্রতিদিন হাসপাতাল থেকে খাবার দেয়া হতো। আড়াই বছর ধরে চলেছে সেরকম। কিন্তু চারজনের খাবার নাকি আর দেয়া হবে না বলা হয়েছে তাকে। তাই তিনি চলে গেছেন।

হাসপাতালে রোগী ছাড়া আর কাউকে খাবার দেয়ার নিয়ম নেই। ডাক্তার সামন্তলাল সেন নিজের পকেট থেকে পয়সা দিয়ে গত আড়াই বছর ধরে আবুল বাজানদারের স্ত্রী ও সন্তানদের তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। হাসপাতালের মোটা চালের ভাত আবুল বাজানদার খেতে পারতেন না – তাই তাদের জন্য ডাক্তারদের ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে এনে দেয়া হতো। আবুল বাজানদার তাঁর থাকার ক্যাবিন নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন ক্যাবিনে এসি ছিল না – তাই তাঁর কষ্ট হয়েছে।

আমাদের ডাক্তাররা তাঁর জন্য যা যা করেছেন – আমি জানি না আর কোনদেশে কোন রোগীর জন্য ডাক্তাররা ব্যক্তিগতভাবে তেমন কিছু করেন কি না। উন্নত দেশে শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর দিতে হয় মোট আয়ের কমপক্ষে তিন থেকে চার পারসেন্ট। জনগণের দেয়া সেই টাকায় চিকিৎসার বাজেট হয়। একজন স্পেশালিস্টের প্রতি পনেরো মিনিটের ফি হলো কমপক্ষে আড়াইশ ডলার। আর আমাদের দেশের স্পেশালিস্টরা যে রোগীকে এবং রোগীর পরিবারকে নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে মুখে খাবার পর্যন্ত তুলে দেন – সেই রোগী হাসপাতাল ছেড়ে গিয়ে সেই ডাক্তারদের বদনাম করেন।

এতকিছুর পরেও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই – এই আবুল বাজানদার যখন আবার এসে হাসপাতালে ভর্তি হবেন – আমাদের ডাক্তাররা সবকিছু ভুলে গিয়ে চিকিৎসার হাত বাড়িয়ে দেবেন পরম মমতায় কসাই না হলে কি এমন করতেন!!


চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে  আবুল বাজানদারের অভিযোগ সম্পর্কে চিকিৎসকদের বক্তব্য পড়ুন এখানে:
http://www.banglatribune.com/others/news/330359/



Saturday, 5 May 2018

তৃষা আমার বক্ষজুড়ে

প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছিল। ০৭/০৮/২০০২


Thursday, 3 May 2018

মানবতা তুমি এ সভ্যতায়

১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজ বৌদ্ধ ছাত্র সংসদের ম্যাগাজিন জ্যোতিকায় প্রকাশিত হয়েছিল এ কবিতা।


মানবতার জয় চিরন্তন

২০০০-২০০১ সালে চট্টগ্রামের শাহীন কলেজের অধ্যাপক রিফাৎ আরার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চর্চা নামে একটি সংগঠন। ২০০২ সালের অক্টোবরে তাদের উদ্যোগে একটি ম্যাগাজিন বের হয়েছিল - দ্রোহী স্বপ্নেরা। সেখানে এই প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল।


Latest Post

ফ্ল্যাশ রেডিওথেরাপি: ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা

  যে রোগের কাছে পৃথিবীর মানুষ সবচেয়ে বেশি অসহায় – তার নাম ক্যান্সার। প্রতি বছর ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে। ধারণা করা হ...

Popular Posts