Saturday 23 May 2020

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী - পর্ব ২১

21

আকাশী রঙের বৃত্তের মাঝখানে একটি ত্রিভুজ। ত্রিভুজের ভূমিতে শৃঙ্খলা, আর দুই বাহুতে শিক্ষা ও সংযম। শিক্ষা ও সংযমের মাঝখানে ডানা মেলে আছে সূর্য আর বই। নান্দনিক এই মনোগ্রামের ডিজাইন কে করেছিলেন জানি না। স্বাভাবিক কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করেছিলাম সাঈদ স্যারকে। কলেজের নাড়িনক্ষত্র সব জানেন সাঈদ স্যার। মনোগ্রামের ডিজাইন কে করেছিলেন তাও নিশ্চয় জানা আছে তাঁর। আমার প্রশ্ন শুনে স্বভাবসুলভ রসিকতা করে বললেন, “এই তথ্য কোন্‌ কাজে লাগবে?”
“এমনি জানতে চাচ্ছিলাম। মনোগ্রামটি সুন্দর এবং অর্থবহ। শৃঙ্খলাকে যে এখানে কত গুরুত্ব দেয়া হয় তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।“
“বোঝা গেলেই তো হলো। এর বেশি তো দরকার নেই। বেশি জানলেই সমস্যা। যারা যত বেশি জানে, তারা তত শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে।“
“তা অবশ্য ঠিক। শৃঙ্খলার সাথে শৃঙ্খলের সরাসরি যোগ আছে। জেনেশুনে শিকল পরে থাকতে কার ভালো লাগে?”
“সেজন্যই তো বলছি। শিকল যখন পরে থাকতে হবে তখন যত কম জানবে তত ভালো থাকবে।“
শৃঙ্খলাকে যদি শিকল পরার মত মনে হয় তাহলে বুঝতে হবে শৃঙখলার বাড়াবাড়ি হচ্ছে। অবশ্য বাড়াবাড়ি ব্যাপারটা খুবই আপেক্ষিক। আমার কাছে যেটা বাড়াবাড়ি বলে মনে হচ্ছে,  সেটা অনেকের কাছে বাড়াবাড়ি নয়। যেমন এত শৃঙ্খলার মধ্যেও আরো শৃঙ্খলা আনার জন্য কলেজে ডিউটি অফিসার নামে একটা নতুন ব্যাপার চালু হয়েছে। প্রিন্সিপাল স্যার নোটিশ জারি করেছেন প্রত্যেক শিক্ষককে পালাক্রমে ডিউটি অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কে কোন্‌দিন ডিউটি অফিসার হবেন তার একটা তালিকা টিচার্স রুমের দেয়ালে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার ডিউটি আইভি ম্যাডামের পরের দিন। তার মানে আজকে।
গতকাল ধবধবে সাদা শাড়ি পরা আইভি ম্যাডামকে কলেজের বারান্দায় দ্রুত হেঁটে যেতে দেখে মনে হয়েছিল দেবী সরস্বতী ভুল করে বীণাটি ফেলে এসেছেন। কিন্তু একটু পরেই বুঝতে পেরেছিলাম – তিনি ডিউটি অফিসারের দায়িত্ব পালন করার জন্য বারান্দায় টহল দিচ্ছেন। প্রিন্সিপাল স্যার নিয়ম জারি করেছেন – ডিউটি অফিসার পুরুষ হলে অবশ্যই টাই পরতে হবে, আর মহিলা হলে সাদা শাড়ি পরতে হবে। দেবী সরস্বতীকে কখনো স্বর্গের ডিউটি অফিসার করা হয়েছিল কিনা আমি জানি না। করা হলেও সে দায়িত্ব তিনি কতটুকু পালন করতে পারতেন সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কিন্তু মর্ত্যের দেবী আইভি ম্যাডাম যেভাবে এক হুংকারে একাদশের সবগুলো বিচ্ছুকে বারান্দা থেকে ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে দিলেন – তাতে মনে হলো আইভি ম্যাডামকে ফিল্ড-মার্শাল উপাধি দেয়া যায়।
কিন্তু আমার পক্ষে তো এতটা কঠোরভাবে ডিউটি অফিসারের ডিউটি করা সম্ভব নয়। আজ সকালে কলেজে এসে স্বাভাবিকভাবেই হাজিরা খাতায় সাইন করলাম। তারপর টিচার্স রুমে এসে নতুন অ্যাপ্রোনটা গায়ে দিলাম। জুন মাসের গরমে মনে হচ্ছে একটা সাদা ছালা গায়ে দিয়ে বসে আছি। অ্যাপ্রোনের কাপড়টা কে পছন্দ করেছেন আমি জানি না। এরকম মোটা খসখসে ভারী কাপড়ের অ্যাপ্রন কী কারণে দেয়া হলো জানি না। রিটায়ার করার আগপর্যন্ত আর যেন অ্যাপ্রোন বানাতে না হয় – সেজন্যই হয়তো। ইদ্রিস যখন এটা দিতে এসেছিলেন – জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন এগুলো ঘাঁটির অফিস থেকে ঠিক করে দেয়া হয়। তবুও ভালো। নভেম্বর থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত তো অন্যের ব্যবহার করা অ্যাপ্রোন পরেই কাটিয়েছি।
ক্লাস সেভেনের ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে বসলাম। দু’দিন পরে তাদের রেজাল্ট। আমার গণিতে মোটামুটি সবাই ভালো করেছে। আজ তাদের খাতা দেখানোর কথা আছে। এগুলো নিয়ে একটু বসেছি – এমন সময় মিজান এসে বললেন, “স্যার, প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছেন আপনাকে।“
পিয়নদের মধ্যে মিজান সম্ভবত সবার নেতা। তার চলায়-বলায় একটা নেতা-নেতা ভাব আছে। আমাকে ডেকে দিয়ে তিনি রাজকীয়ভাবে হেঁটে চলে গেলেন অন্যদিকে। প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের ট্রাফিক লাইট এখন সবুজ। পর্দার ফাঁক দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে ‘মে আই …’ বলার আগেই প্রিন্সিপাল স্যার বললেন, ‘কাম ইন মিস্টার প্রদীপ।‘
দেখলাম নাসির স্যার বসে আছেন প্রিন্সিপাল স্যারের সামনে। নাসির স্যার ইদানীং প্রায় সময়েই প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে থাকেন।
“হু ইজ দি ডিউটি অফিসার টু ডে?” – প্রিন্সিপাল স্যার প্রশ্ন করলেন। তিনি ভালো করেই জানেন যে আমি আজ ডিউটি অফিসার। লিস্ট তাঁর সামনেই আছে। তাই তিনি আমাকেই ডেকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আবার জানতে চাচ্ছেন ডিউটি অফিসার কে – তার নিশ্চয় কোন কারণ আছে।
“স্যার আমি” – মিনমিন করে বললাম। বড় কর্তাদের সামনে মিনমিন করা নাকি নিয়মের মধ্যে পড়ে।
“সো, হোয়ার ইজ ইওর টাই?” – প্রিন্সিপাল স্যারের গলায় বিরক্তি।
টাই একটা আমার অ্যাপ্রোনের পকেটে আছে। আমার নিজের টাই নেই। সুমনের কাছ থেকে ধার করেছি। সে বিসিএস পাস করে এখন রাঙ্গামাটি কলেজে জয়েন করেছে। কোট-টাই পরে কলেজে যায়। তার কাছ থেকে একটা চিকন টাই নিয়ে এসেছি। পকেটে রেখে দিয়েছি আপৎকালে যদি লাগে। এখন সেই আপৎকাল উপস্থিত। বললাম, “পকেটে আছে স্যার।“
“টাই ইজ নট ফর পকেট। ইজ শুড বি অন ইওর নেক।“
“জ্বি স্যার।“
“ওকে। আই ওয়ান্ট টোটাল ডিসিপ্লিন ইন মাই কলেজ। ইউ আর এক্সকিউজড।“
প্রিন্সিপালের রুম থেকে বের হয়ে অ্যাপ্রোনের পকেট থেকে সবুজ সাপের মত চিকন টাইটা বের করলাম। টাইয়ের নট কীভাবে দিতে হয় আমি জানি না। টিচার্স রুমে এসে দেখলাম শংকর স্যার হুইসেল হাতে নিয়ে রেডি হচ্ছেন। হায় হায়, আজ যদি অ্যাসেম্বলি হয় তাহলে তো আরেক ঝামেলা। তার আগে টাইটা পরতে হবে। একে তো মোটা অ্যাপ্রোন পরে গরমে সিদ্ধ হচ্ছি। তার ওপর যদি টাই পরি – তাহলে তো দম আটকে মরে যাবো। কিন্তু মরলেও শৃঙ্খলা রক্ষার শৃঙ্খলরূপী টাই গলায় পরতে হবে। ছোলাইমান স্যার আর অঞ্জন স্যার রেগুলার টাই পরেন। তাঁদের কাউকে বললে নিশ্চয় দেখিয়ে দেবেন। কিন্তু শংকর স্যার মনে হয় মানুষের মনের কথা বুঝতে পারেন। আমি জিজ্ঞেস করার আগেই শংকর স্যার বললেন, “এদিকে দেন, আমি পরিয়ে দিচ্ছি।“

মনে হচ্ছে চিকন একটা সাপ গলায় ঝুলে আছে। এই বস্তুটাকে কেন মানুষ এত গুরুত্ব দেয় আমি জানি না। এটা দিয়ে এই গরমে যদি ঘাম মোছা যেত, কিংবা বাতাস করা যেতো তাহলেও একটা কাজ হতো। ডিউটি অফিসারের আসল ডিউটিটা কি তা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই আমার। কিন্তু টিচার্স রুমে বসে থাকাও যাবে না। শংকর স্যার অ্যাসেম্বলি ক্লাসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছেলে-মেয়েরা মাঠে নামতে শুরু করেছে। আমাকে এখন সারা স্কুলের সামনে অহেতুক ছুটোছুটি করতে হবে। নাসির স্যার যদি চুল কাটার দায়িত্বটাও আমাকে পালন করতে বলেন তাহলে তো বিপদে পড়বো। পিটি সু’র বদলে কেউ যদি ক্যাডস পরে আসে সেই ক্যাডসও বাজেয়াপ্ত করা হয়। যার পাদুকা বাজেয়াপ্ত করা হয় তাকে সারাদিন খালি পায়ে ক্লাস করতে হয়। খালি পায়ে থাকাটা পায়ের জন্য তো নিরাপদ নয়। এই ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন যেন লাগে। এই কেমন যেন লাগার অর্থ হচ্ছে আমাকে দিয়ে শৃঙ্খলা রক্ষা হবে না। শৃঙ্খলা রক্ষা করতে না পারলে আমি কিসের ডিউটি অফিসার!

কিন্তু দেখাতে তো হবে কাজ করছি। দেখানোর প্রধান উপায় হলো বারান্দা দিয়ে হেঁটে যাওয়া আর সবাইকে মাঠে নেমে যেতে বলা। ইলেভেন ক্লাসের সামনে যাবার পর তারা আমাকে দেখে হেসে উঠলো। মতিন বললো, “টাইটা স্যার সুপার হয়েছে। হিহিহি।“
“ফাইজলামি করবা না মতিন। আমি আজ ডিউটি অফিসার। কেয়ারফুল।“
যথাসম্ভব গম্ভীরভাবে বললাম আমি। কিন্তু ফাজিল ছেলেগুলা আমার গাম্ভীর্যকে পাত্তাই দেয় না। মাস্টারসুলভ গাম্ভীর্য কীভাবে অর্জন করতে হয় কে জানে। সাঈদ স্যার বলেছেন – কলেজের ছেলেরা নাকি ক্লাস পালিয়ে সিনেমা দেখতে যায়। এগুলোকে ধরতে হবে, এবং ধরে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু আমি কীভাবে এদেরকে ধরবো কিংবা মানা করবো? আমি নিজেই তো তাদের এই সময়ে তাদের মতই ছিলাম। চিটাগং কলেজে পড়ার সময় প্রতি সপ্তাহে কতগুলো সিনেমা যে দেখেছি। ক্লাস পালানো তো ছাত্রজীবনের অবশ্যকরণীয় কাজ। যে কখনো ক্লাস ফাঁকি দেয়নি সে তো ছাত্রজীবন উপভোগই করলো না।

ফার্স্ট পিরিয়ডে ক্লাস সেভেনে ঢোকার সাথে সাথে সবাই কেমন যেন মুখ টিপে হেসে উঠলো। আমাকে যে কাকতাড়ুয়ার মত লাগছে তা তারা মুখে না বললেও তাদের অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট। ফার্স্ট টার্মিনালের খাতা পেয়ে তারা বেশ উত্তেজিত। তাদের চোখেমুখে খুশি দেখে আমারও ভালো লাগছে। মার্চ মাসে এই ক্লাসে আসার সময় আমি জানতাম না কেমন লাগবে। এই তিন মাসের মধ্যেই বুঝতে পারছি এই ক্লাসের সাথে আমার একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এদের কী শেখাতে পারছি জানি না, কিন্তু আমি অনেক অনেক আনন্দ পাচ্ছি এদের ক্লাসে এসে।
সেভেন এ সেকশান থেকে বের হয়ে ইলেভেন বি’র সাথে ক্লাস। ক্লাসে ঢুকতেই এক দফা হাসির হুল্লোড় হলো। একটা টাই যে ক্ষেত্রবিশেষে এমন হাস্যকর হয়ে উঠতে পারে! টাইটা খুলে অ্যাপ্রোনের পকেটে রেখে বললাম, “গলার কাঁটা এটা। ক্লাস শেষে আবার মনে করিয়ে দিও – গলায় ঝুলাতে হবে।“

এর পরের ক্লাসটা সেভেন বি’র সাথে। তাদের ক্লাস্রুম এখন হ্যাঙ্গারের দোতলায়। তাদের পরীক্ষার খাতাগুলো নেবার জন্য টিচার্স রুমে এসে দেখি আমার চেয়ারে একজন এয়ারফোর্স অফিসার বসে আছেন। কাঁধে লাগানো কালো দাগ দেখে বোঝা উচিত কোন পদের অফিসার। ছোলাইমান স্যার আমাকে বলেছিলেন কোন্‌টা পাইলট অফিসার, কোন্‌টা ফ্লাইং অফিসার ইত্যাদি। কিন্তু এখন কিছু মনে নেই। আমি ভয় পেয়ে গেলাম – সোবহান সাহেব এলেন না তো আবার? রুমে ঢুকতেই অফিসার হঠাৎ দাঁড়িয়ে গিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি হকচকিয়ে গেলাম। এয়ারফোর্স অফিসাররা তো এরকম আবেগ দেখান না।
“তোর জন্য বসে আছি ব্যাটা কতক্ষণ ধরে। কতক্ষণ ক্লাস নিস?”
“আরে শাহীন, তুই! আমি তো ভেবেছিলাম কোন্‌ না কোন্‌ অফিসার।“
শাহীন আমার সাথে ইউনিভার্সিটিতে ফিজিক্স পড়েছিল এক বছর। তারপর জিডি পাইলট হয়ে চলে যায়। এতদিন পরে আবার দেখা। আসলে সে-ই খবর নিয়ে এসেছে আমার সাথে দেখা করার জন্য। কলেজে এসে অফিসাররা সরাসরি প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকে যায়। শাহীনও নাকি গিয়েছিল প্রিন্সিপালের রুমে। হাসতে হাসতে বললো, “তোর প্রিন্সিপাল তো আমাকেও অনেক স্যার স্যার করেছেন।“
“আমিও কি তোকে স্যার স্যার করবো ব্যাটা?”
এয়ারফোর্সের কলেজে একজন এয়ারফোর্স অফিসারকে তুই তোকারি করার মধ্যে এক ধরনের ছেলেমানুষী আনন্দ হচ্ছে। শাহীনের ভেতর অফিসারসুলভ অহংকারটা এখনো আসেনি কিংবা এখানে দেখাচ্ছে না দেখে ভালো লাগলো।
তার সাথে হ্যাঙ্গার পর্যন্ত গেলাম। তারপর সে অফিসার্স মেসের দিকে চলে গেলো। আমি লোহার সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেলাম। বি সেকশানের ছেলে-মেয়েরা অপেক্ষা করছিল পরীক্ষার খাতার জন্য। এই রুমে এসে তারা ইউরিনের গন্ধ থেকে বেঁচেছে। এরাও সবাই বেশ ভালো করেছে পরীক্ষায়। স্টুডেন্টরা ভালো করলে শিক্ষকের যে কী আনন্দ হয় তা বুঝতে পারছি।
“স্যার, আপনার টাই কোথায়?” – হাসিমুখে প্রশ্ন করে ফেরদৌসী আক্তার। ক্লাসের মনিটর সে। অ্যাসেম্বলি ক্লাসে আমার টাই দেখে রেহনুমার সাথে অনেক হেসেছিল সে।
আমি পকেট থেকে দলা-পাকানো টাইটা বের করে বললাম, “এই যে এখানে।“ এটাকে গলায় দেখে যতটা হেসেছিল তারা তার চেয়েও বেশি হাসলো এটাকে হাতে দেখে। বেচারা টাই! সুমন জানলে খুবই মন খারাপ করবে তার টাইয়ের পারফরমেন্স সম্পর্কে জানতে পারলে।
টিচার্স রুমে ঢুকতেই কানে গেলো, “জাহান্নামের ইমাম তো জাহান্নামে গেছে!”
আমার কানের মধ্যে যেন গরম সীসা ঢুকে গেল। জাহানারা ইমাম মারা গেছেন গতকাল। চারদিন আগে ২২ জুন হাইকোর্টের রায়ে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বহাল রাখা হয়েছে। অথচ জাহানারা ইমামের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়েছে। ক্যান্সারে ভোগার চেয়েও বেশি কষ্ট তিনি পেয়েছেন এসবে। এই অপমান নিয়েই তিনি মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর নামে অপমানজনক কথাগুলো শুনলাম আমি এমন একজনের কাছ থেকে যাকে আমি খুবই শ্রদ্ধা করি। মনটা ভেঙে গেলো। টিচার্স রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। ভালো লাগছে না কিছুই। হঠাৎ বিমল স্যার ডাকলেন, “প্রদীপ বাবু, এদিকে আসেন। দেখেন কী হয়েছে।“
ভেতরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কী হয়েছে স্যার?”
“এই যে দেখেন সিঙাড়ার মধ্যে কী!”
দেখলাম তাঁর প্লেটের সিঙাড়ার মধ্যে একটা আধপোড়া বিড়ি।
“আমাকে কী করতে হবে?”
“আপনি ডিউটি অফিসার। আপনি রিপোর্ট করবেন।“
আমি বুঝতে পারছি না কী নিয়ে রিপোর্ট করবো – সিঙাড়ার ভেতর বিড়ির টুকরা, নাকি একজন কলেজ শিক্ষক জাহানারা ইমামকে জাহান্নামের ইমাম বলছেন সেটা!

2 comments:

  1. ফিল্ড-মার্শাল উপাধিটা কি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ র‍্যাংক।

      Delete

Latest Post

Dorothy Crowfoot Hodgkin

  Look closely at the fingers of the person in the picture. Her fingers had not bent in this way due to age; she had been suffering from chr...

Popular Posts