Showing posts with label মেলবোর্ন. Show all posts
Showing posts with label মেলবোর্ন. Show all posts

Thursday, 23 September 2021

মেলবোর্নের লজ্জা

 

করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চমৎকার পারদর্শিতা দেখিয়ে বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বের প্রধান বিশেষজ্ঞদের অনেকেই করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়াকে অনুসরণ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন এই সেদিনও। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের চিত্র দেখলে যে কারোরই মনে প্রশ্ন জাগবে এত দীর্ঘদিন ধরে, এত কঠোর লকডাউন, আর কারফিউর মধ্যেও সংক্রমণ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে কেন?

আজকের (২৩/৯/২০২১) অস্ট্রেলিয়ান কোভিড পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায় – পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে ভেবে আত্মতৃপ্তি পাবার মতো অবস্থা নেই এখন। গত ২৪ ঘন্টায় অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ১৭০০ নতুন সংক্রমণ ঘটেছে। যার মধ্যে ৫১০ জনের সংক্রমণ কীভাবে ঘটেছে তা অনিশ্চিত। এখনো প্রায় বিশ হাজার জনের শরীরে নিশ্চিতভাবে করোনা ভাইরাস আছে। দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি। অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় সংক্রমণের শতকরা হার হয়তো অনেক কম। কিন্তু বিশাল মহাদেশের সমান এই দেশে যেখানে মাত্র দুই কোটি চল্লিশ লাখ মানুষের বাস, সেখানে তো নিয়মকানুন মেনে চললে একটা সংক্রমণও হবার কথা ছিল না।


অস্ট্রেলিয়ার করোনা-চিত্র (২৩/৯/২০২১)

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি স্টেট আর দুইটি টেরিটরির মধ্যে সবচেয়ে কঠোর নিয়মকানুন বলবত আছে ভিক্টোরিয়া রাজ্যে। মেলবোর্ন যার রাজধানী। পরপর সাত বছর এই মেলবোর্ন শহর পৃথিবীর সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর ছিল। কিন্তু মেলবোর্ন তার সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। এখনো বিশ্বের প্রথম দশটি বাসযোগ্য শহরের একটি – মেলবোর্ন। কিন্তু সেই অবস্থানও কতদিন থাকবে জানি না। 

এক বছরেরও বেশি হয়ে গেল আমরা মেলবোর্নে লকডাউনে আছি। কয়েক সপ্তাহ আগে আমাদের সংক্রমণ শূন্যে নেমে এসেছিল। কিন্তু তারপর থেকে সংক্রমণ হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। জানা গেলো কিছু মানুষ গোপনে গোপনে একে অন্যের বাসায় গিয়েছে, বাজারে গিয়েছে, কোভিডের লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও তা গোপন করে নিজেদের পরিবারে, বন্ধুদের পরিবারে এবং কমিউনিটিতে ছড়িয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যারা সংক্রমণের শিকার হয়েছে তারা সবাই শিশু। মোট সংক্রমিত মানুষের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু। যাদের বয়স ১৫ বছরের কম। যদিও তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি, কিন্তু স্কুল বন্ধ রাখতে হয়েছে। কিছুদিনের জন্য পার্ক, শিশুদের খেলার জায়গা সব বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

বিধিনিষেধ না মানলে পাঁচ হাজার ডলারেরও বেশি জরিমানা করেও সংক্রমণ কমানো যাচ্ছে না। আজকের  (২৩/৯/২০২১)  ভিক্টোরিয়া রাজ্যের সংক্রমণের পরিসংখ্যান দেখা যাক।


ভিক্টোরিয়া রাজ্যের কোভিডচিত্র (২৩/৯/২০২১)

গত চব্বিশ ঘন্টায় ৭৬৬ জন মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। অথচ কঠোর লকডাউন এবং কারফিউ চলছে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটারের বাইরে যাবার অনুমতি নেই, বাড়ির দরজার বাইরে যেতেও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।

শুধু বিধিনিষেধ আছে, তা তো নয়। আর্থিক সাহায্যও আছে – ঘরে বসে থাকার জন্য। কোভিড টেস্ট করালে ৪৫০ ডলার দেয়া হচ্ছে – রেজাল্ট পাবার আগপর্যন্ত বাসায় থাকার জন্য। তারপরও সংক্রমণ বাড়ছে কেন?

দেখা গেলো নির্মাণশ্রমিকরা তাদের সুযোগের অপব্যবহার করছে। যত সংক্রমণ হচ্ছে তার অর্ধেকেরও বেশি হচ্ছে নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে। সংক্রমণ একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনা আর কিছুতেই সম্ভব নয়। আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে আর কখনোই ফিরে যাওয়া যাবে না। এখন যেটা হবে – সেটা হবে নতুন স্বাভাবিক। নতুন স্বাভাবিকে যাবার জন্য দরকার কমপক্ষে শতকরা আশি ভাগ মানুষের টিকা নিয়ে ফেলা। সেজন্য কাজে যাবার শর্ত হিসেবে টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করা খুবই গ্রহণযোগ্য একটা সিদ্ধান্ত।

কিন্তু কিছু কিছু মানুষ অতিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তারা দাবি করতে শুরু করেছে, “আমার শরীর আমার সিদ্ধান্ত”। খুবই ভালো কথা। কিন্তু তোমার পারমিশান নিয়ে তো ভাইরাস তোমার শরীরে ঢুকছে না। তুমি যখন আরেকজনের শরীরে ভাইরাস ঢুকতে সাহায্য করছো – তা কী তোমার সিদ্ধান্ত? তুমি যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবে – তখন তোমার চিকিৎসার কী হবে?

নির্মাণশ্রমিকদের জন্য টিকা বাধ্যতামূলক করার সাথে সাথেই তারা ধুন্ধুমার লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলো – তারা টিকা নেবে না, মাস্কও পরবে না। যা খুশি তাই করবে, কে কী করতে পারবে?

দু’দিন আগে তারা মেলবোর্ন শহরের প্রাণকেন্দ্রে শ্রমিকদের সংগঠনের প্রধান কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। রাস্তা দখল করে ইচ্ছেমতো গাড়ি ভেঙেছে। পুলিশের উপর আক্রমণ করেছে।


স্রাইন অব রিমেম্বারেন্সে প্রতিবাদের নামে তান্ডব চালাচ্ছে

 
গতকাল তারা শ্রাইন অব রিমেম্বারেন্স – যুদ্ধে শহীদদের সম্মানে যেটাকে আমাদের দেশের শহীদ মিনারের মতো সম্মান দেয়া হয় – তাতে উঠে প্রতিবাদের নামে ইচ্ছেমতো ময়লা ঢেলেছে। এই শহীদ বেদীর দেয়ালে প্রশ্রাব করেছে। মেলবোর্নের জন্য এর চেয়ে লজ্জাকর আর কী হতে পারে?

আজ এরা চড়াও হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর। কমপক্ষে দুইটি টিকাকেন্দ্রে এরা আক্রমণ করেছে। কর্তব্যরত নার্সদের অপমান করেছে, থুতু ছিটিয়েছে। টিকাকেন্দ্রদুটো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। 

আমি ভাবতাম রাষ্ট্র যখন একজন নাগরিককে তার মৌলিক চাহিদাগুলি মিটিয়ে অন্যান্য যৌগিক চাহিদাগুলিও মেটাতে সক্ষম হয়, তখন নাগরিকও তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করে। কিন্তু মানুষের চাহিদা এমন একটা ব্যাপার – যেটা কেবল বাড়তেই থাকে। এখানেও তা দেখলাম।

স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার নিন্দা করছে সবাই। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো – এরকম মানসিকতা তৈরি হলো কীভাবে এদের? এটা কি এদেশে গুরু পাপে লঘু দন্ড দেয়া হয় সেজন্য?

দেখা যাক – এই পরিস্থিতির শেষ কীভাবে হয়। 


Sunday, 5 May 2019

ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন -চতুর্ত্রিংশ পর্ব (শেষ পর্ব)



০৯ আগস্ট ১৯৯৮ রবিবার
ইয়ারা নদীর তীরে

আজ ঠিক এক মাস হলো মেলবোর্নে এসেছি। দুপুর থেকেই ঘুরছি ইয়ারার তীরে। এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। প্রিন্সেস ব্রিজের নিচে পায়ে হাঁটা আর সাইকেলে চড়ার যে রাস্তাটি চলে গেছে পূর্বে এম-সি-জি আর পশ্চিমে ক্রাউন ক্যাসিনোর দিকে, তার পাশে স্টিল ও পাথরের বাঁধানো যে সিঁড়িটি ঘুরে ঘুরে উঠে গেছে উপরে ব্রিজের সমতলে- সেই সিঁড়ির নিচে সুন্দর বসার জায়গা আছে। ভিক্টোরিয়ান ধাচের সোনালী-রূপালী কারুকার্যখচিত লাইটপোস্ট থেকে আলো এসে পড়েছে এখানে। কয়েক হাত দূরেই তিরতির করে বয়ে যাচ্ছে ইয়ারার ঘোলা-সবুজ জল। বিকেলে যখন ব্রিজের নিচের ওপেন মার্কেটে ঘুরছিলাম তখন একজন শিল্পীকে দেখেছি এখানে বসে ছবি আঁকতে। শিল্পী চলে গেছেন অনেকক্ষণ। এখন আমি এখানে বসে লিখছি তোমাকে।
            ঘুম থেকে উঠেছি আজ অনেক দেরিতে। কাল রাতে ঘুমাতে দেরি হয়েছে অনেক। কতবার যে চিঠিগুলো পড়েছি। পড়তে পড়তে মনে হয়েছে এই তো কত কাছে সবাই। সবারই চিন্তা আমি কী খাচ্ছি, কীভাবে থাকছি, ঠিকমত ঘুমাচ্ছি কি না, নিজের যত্ন করছি কি না। হায়রে মানুষের মন। প্রিয়জন চোখের আড়াল হলেই দুঃশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়। স্নেহ-ভালবাসার সাথে দুঃশ্চিন্তা সমানুপাতিক।
            বাথরুমে যাবার জন্য রুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম লিও বেরোচ্ছেন টয়লেট থেকে। লিও ফিলের নতুন ভাড়াটে। ডেভিড চলে যাবার সাথে সাথে তার রুমটা ভাড়া দিয়ে ফেলেছে ফিল। কাল রাতে হঠাৎ লিওকে দেখে চমকে উঠেছিলাম। রান্নাঘরের দরজা খুলে দেখি এই অচেনা চায়নিজ টেবিলে জিনিসপত্র ছড়িয়ে রান্নার আয়োজন করছেন। আমাকে দেখে খুব একটা ভাবান্তর হলো না চায়নিজের। বড় বড় ফ্রেমের মোটা চশমাপরা চোখ তুলে তাকালেন আমার দিকে, কিন্তু কিছু বললেন না।
            আমি বললাম, হ্যালো। মুভ্‌ড ইন টুডে? (বলা উচিত ছিল টু-ডাই)। তিনি গগগোগো করে গলার ভেতর থেকে এক ধরণের শব্দ করলেন যাকে ইংরেজি বলা যাবে না কিছুতেই। বুঝলাম এই লোকের সাথে কথা বলতে গেলে খবর আছে। তবে এরকম একজন দুর্বল-ইংরেজির লোক কাছে পেয়ে নিজেকে বেশ বাহাদুর মনে হলো। ডিম সিদ্ধ করতে করতে কিছুক্ষণ ইংরেজি জাহির করলাম। জানলাম তাঁর নাম লিও- সহজ কমন চাইনিজ নাম। কিন্তু আমার নাম তিনি কিছুতেই উচ্চারণ করতে পারেন না। অনেক কসরৎ করার পর তাঁর মুখে আমার নাম দাঁড়ালো ফাডি। নাম নিয়ে খুঁতখুঁতানি নেই আমার। এই যে সবাই প্রাডিব বলে ডাকে তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। এশিয়ানরা নামের উচ্চারণ নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায় না। চায়নিজ বা ভিয়েতনামিজ   নাম শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে হলে আমার নিজেরই বারোটা বেজে যাবে।
            লিওর সাথে চোখাচোখি হতেই বললাম, গুড মর্নিং লিও। লিও বললেন, মনিং ফাডি। চায়নিজরা স্বল্প-স্বরের উচ্চারণ করতে পারে না কিছুতেই। তাই মর্নিং হয়ে গেছে মনিং
            টয়লেটে ঢুকে খেয়াল করলাম দেয়ালে আরো দুটো নতুন পোস্টার যোগ হয়েছে। এগুলো তাহলে ফিলের কাজ! আমি ভেবেছিলাম ডেভিডের তারুণ্যের বিকৃতি। আমার ভাবনায় ভুল ছিল। এদেশের তরুণদের মধ্যে এসব বিকৃতি খুব একটা দেখা যায় না। এসব বিকৃতি বেশি দেখা যায় ফিলের মত বুড়োদের মধ্যে। তবে আশ্চর্য এদের সংস্কৃতি। নিজের ছেলে আর ছেলের-প্রেমিকা যে টয়লেট ব্যবহার করে বুড়োটা সেখানেই এরকম আদিম ছবি লাগিয়ে রাখে! জানি না তার বেডরুমের অবস্থা কী।
            পৌনে বারোটা বেজে গেলো ঘর থেকে বেরোতে। বিল্ডিং-এর সামনের লন পেরিয়ে বাচ্চাদের খেলার জায়গার মধ্য দিয়ে সোজা উঠে এলাম ইউনাইটেড চার্চের সামনে। রবিবারের প্রার্থনা সেরে সামাজিক আলাপ করছেন অনেকে লনে দাঁড়িয়ে।
            প্রাডিব- ডাক শুনে ফিরে তাকালাম। কোট-টাই পরা ফিলকে দেখে একটু অবাক হলাম। একজন আধ-বয়সী মহিলার সাথে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। হাই ফিল বলে জিজ্ঞেস করলাম এনিথিং স্পেশাল টু-ডে?
            ইট্‌স সান-ডে মাইট। ওয়েন্ট টু চার্চ
            ও-কে
            শি ইজ মার্গারিটা- সাথের মহিলার কাঁধে হাত রেখে বললেন ফিল। ক্যাথির জায়গায় এখন মার্গারিটা। সেজেগুজে চার্চে আসার আসল উদ্দেশ্য তাহলে এই।
            হ্যালো মার্গারিটা
            হ্যালো
মার্গারিটার মুখে উগ্র প্রসাধন। ঠোঁটদুটো টকটকে লাল। চর্বি-জমা মুখ লাবণ্যময় করার যত কৌশল জানা আছে সব প্রয়োগ করেছে মার্গারিটা। উচ্চারণে কিছুটা ইতালিয়ান টান। ফিল মার্গারিটার কাঁধ ধরে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে হাসিমুখে বললেন, ইজনট শি বিউটিফুল?
            ফিল যে বহুল ব্যবহৃত সস্তা চাটুকারিতা করছে তা না বোঝার মত বোকা মার্গারিটা নিশ্চয় নন। কিন্তু মানুষের স্বভাব বড় অদ্ভুত। অতি সত্যবাদীও এসব ক্ষেত্রে সোজাসাপ্‌টা কথা বলেন না। মার্গারিটারও উৎসাহ আছে ফিলের ব্যাপারে। তিনি ফিলের গায়ের ওপর হেলে পড়ে বলবেন, ভেরি নটি, ফিল। একেবারে সস্তা মানের বাণিজ্যিক ছবির ডায়ালগ। সেজেগুঁজে চার্চে আসার উদ্দেশ্য তাহলে এই! হাসি চেপে রাখতে না পেরে হো হো করে হাসতে হাসতে বাই বলে চলে এলাম।
            মেলবোর্ন আর্ট সেন্টারের সামনের বারান্দাজুড়ে হস্তশিল্পের মেলা বসেছে আজ। কত রকম হাতের কাজ যে বিক্রি হচ্ছে। একজন হস্তশিল্পী খেঁজুর পাতা কেটে কেটে চোখের সামনে তৈরি করছেন নানারকম ফুল, নৌকা, পাখি। চিত্রশিল্পী ক্যানভাসে দ্রুত তুলি বুলিয়ে আঁকছেন পোট্রেট। অনেক নবীন শিল্পী সাজিয়ে বসেছেন নিজেদের আঁকা ছবি বিক্রির আশায়। সবচেয়ে বেশি ভিড় গয়না আর অলংকারের দোকানে। ভাঙা কাচের টুকরো থেকে কত অবিশ্বাস্য সুন্দর গয়না তৈরি হতে পারে তুমি না দেখলে বুঝতে পারবে না।
            আর্টসেন্টার থেকে অপেরা হলের সামনের লন পেরিয়ে চলে এলাম ইয়ারার দক্ষিণ তীরে। প্যাঁচানো সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলাম। এখানে ভীড় আরো বেশি। এই নিয়ে পরপর চার রবিবার এসেছি এখানে। খেয়াল করে দেখলাম দোকানীরা প্রতি সপ্তাহে একই জায়গায় বসছেন। তাদের দোকানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করা আছে নিশ্চয়। এরকম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের জন্যও ট্রেড-লাইসেন্স নিতে হয়।  
            অনেকক্ষণ ঘুরে ফিরে চারটার দিকে এই সিঁড়ির কাছে এসে বসলাম। খুব কাছেই একজন বৃদ্ধ দোকানী জামা-কাপড় বিক্রি করছেন। একজন তরুণও আছে বৃদ্ধের সাথে। তিন দিকে তিনটি টেবিলে সাজানো শীতের কাপড়, টি-শার্ট, আর বিভিন্ন ফুটবল টিমের লোগো যুক্ত নানা রঙের টুপি, জার্সি, মাফলার। ভীড় কমতে শুরু করেছে, কমে আসছে কোলাহল। বৃদ্ধ আর তাঁর তরুণ সাহায্যকারীর কথোপকথন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি, কিন্তু বুঝতে পারছি না কিছুই। কিছু পরিচিত শব্দ শুনে মনে হচ্ছে ভাষাটা আরবি।
            মানুষের মুখের ভাষা না বুঝলেও অঙ্গভঙ্গি ও অভিব্যক্তি থেকেও অনেক কিছু বোঝা যায়। খেয়াল করে দেখলাম স্বাস্থ্যবান ক্লিন শেভ্‌ড কেতাদুরস্ত তরুণটি খুব রেগে গেছে। হাত পা নেড়ে চোখ-মুখ খিঁচে বৃদ্ধকে শাসাচ্ছে। বৃদ্ধের ছেলে বা কোন নিকটাত্মীয় হবে নিশ্চয়। কর্মচারী হলে মালিককে এরকম শাসানোর প্রশ্ন উঠতো না। আবার উল্টোটাও তো হতে পারে। হতে পারে তরুণটি দোকানের মালিক- বকা দিচ্ছে তার বৃদ্ধ কর্মচারীকে। খুব খারাপ লাগছে বুড়ো মানুষটার জন্য। রোগা-পাতলা শরীর, মুখে তিন-চারদিনের না-কামানো পাকা-দাড়ি। পিঠটা সামান্য বেঁকে গেছে। বৃদ্ধ বয়সে বেঁচে থাকার জন্য কাজ করতে হচ্ছে। হয়তো রিফিউজি হিসেবে এদেশে এসেছেন মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ থেকে। সরকারি সাহায্য যা পান তাতে হয়তো চলে না। ক্ষীণ কন্ঠে বৃদ্ধ ক্রুদ্ধ তরুণকে কিছু বোঝাতে চাইলেন। তরুণ আরো রেগে এক টানে টেবিলের জামাকাপড় ছুড়ে ফেলে হন হন করে হেঁটে চলে গেলো পশ্চিম দিকে। বৃদ্ধ হতভম্বের মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন সেদিকে। তারপর মাথা নিচু করে এলোমেলো জামা-কাপড় গোছাতে শুরু করলেন। আশেপাশের দোকানীদের অনেকে দেখেছে এই দৃশ্য। একজনের মন্তব্য কানে এলো- চিল্ড্রেন্স! দিস ডেজ্‌!- আজকের সন্তানেরা! তবে কি তরুণটি এই বৃদ্ধের ছেলে! হয়তো।
            বৃদ্ধের মাথা নিচু হয়ে যাওয়া দেখে খুব খারাপ লাগছে আমার। বাবার কথা মনে পড়ছে। জীবনে কত কষ্ট তাঁকে করতে হয়েছে। এরকম হাটে-বাজারে জামা-কাপড় বই-পত্র চাল-ডাল বিক্রি করে তিনি আমাদের বড় করেছেন, লেখাপড়া শিখিয়েছেন। আরবি-ভাষী এই বৃদ্ধ বাবার জন্য মনটা কেমন করে উঠলো। ভ্যানের দরজা খুলে জামা-কাপড় গুছিয়ে আস্তে আস্তে ভ্যানে তুলছেন। আশেপাশের অনেক দোকানী ইতোমধ্যেই চলে গেছেন নিজেদের পসরা গুছিয়ে।
            হ্যালো ইয়ংম্যান, ক্যান ইউ গিভ মি এ হ্যান্ড প্লিজ?কাছে এসে মিষ্টি করে হেসে জিজ্ঞেস করলেন বৃদ্ধ দোকানী। আমি নিজে থেকেই তাঁকে সাহায্য করার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু তিনি কী মনে করবেন ভেবে এতক্ষণ কিছু বলিনি। খুশি হয়ে বললাম, অবশ্যই। একটা টেবিলের জামা-কাপড় তিনি ইতোমধ্যেই ভ্যানে তুলে ফেলেছেন। খালি টেবিলটা গুটিয়ে ভ্যানে তোলার জন্য আমার সাহায্য চেয়েছেন। টেবিলটা ভ্যানে তোলার পর জিজ্ঞেস করলাম অন্য টেবিল দুটোর জামা-কাপড় গুছিয়ে দেবো কি-না। বৃদ্ধ খুশি হয়ে বললেন, সো কাইন্ড অব ইউ। দেখিয়ে দিলেন কীভাবে গোছাতে হবে। বেশ ভালো লাগছিল মানুষটার জন্য কিছু একটা করতে পেরে। রাগী তরুণটি তাঁর ছেলে কিনা খুব জানতে ইচ্ছে করছিল। জিজ্ঞেস করলাম, যে ছেলেটা আপনার সাথে রাগ করলো সে কি আপনার ছেলে?
            কিছুটা লজ্জিত হয়ে বৃদ্ধ বললেন, খুব ভালো ছেলে সে। কিছুটা রাগী, তবে খুব ভালো ছেলে। হায়রে অপত্যস্নেহ, সন্তান বাবাকে লাথি মারলেও বাবা সন্তানের বিরুদ্ধে কিছু বলেন না।
            তুমি কি ইন্ডিয়ান? দ্রুত প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন বৃদ্ধ।
            না, আমি বাংলাদেশী
            আমি লেবানিজ
            কতদিন থেকে আছেন মেলবোর্নে?
            সাত বছর। তুমি?
            আজ ঠিক এক মাস হলো
            স্টুডেন্ট?
            হ্যাঁ
            কাজ করো কোথাও?
            এখনো পাইনি
            টুকটাক কথা বলতে বলতে সব জিনিস-পত্র ভ্যানে ঢুকে গেলো। কাজ শেষ। ব্যাকপ্যাক কাঁধে তুলে নিতেই বৃদ্ধ আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, প্লিজ টেক দিস। তাঁর হাতে একটা দশ ডলার ও একটা পাঁচ ডলারের নোট। আমি বললাম, নো, নো, থ্যাংক ইউ। ইউ ডোন্ট নিড টু পে মি
            আমি তোমাকে পারিশ্রমিক দিচ্ছি না। কাজের প্রস্তাব দিচ্ছি। পড়তে এসেছো- ডলার লাগবে না? প্রতি রবিবার এখানে আমাকে সাহায্য করবে। সকাল নটা থেকে বিকেল পাঁচটা। ঘন্টায় সাড়ে সাত ডলার করে  আটঘন্টায় ষাট ডলার পাবে
            একটা কাজের জন্য কতদিন থেকে কত জায়গায় ঘুরছি। সেই অধরা কাজ নিজে এসে ধরা দিলো আজ। কী যে খুশি লাগছে!
            ও-কে? এখনো হাত বাড়িয়ে আছেন বৃদ্ধ।
            ও-কে
            দেন টেক দিস। বাই দি ওয়ে, আমার নাম আজাহার
            ভ্যান চালিয়ে চলে গেলেন বৃদ্ধ আজাহার। আমার হাতের মুঠোয় পনেরো ডলার। মেলবোর্নে আমার প্রথম পারিশ্রমিক।
            তারপর আনন্দ আর উৎসাহের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে এখানে বসে তোমাকে লিখছি। এখন থেকে প্রতি রবিবার সারাদিন এখানেই কাটবে।  তুমি তো জানো এই একমাসে যখনই সময় পেয়েছি কী এক অদ্ভুত টানে চলে এসেছি এই নদীর তীরে। কোন মিল নেই, তবুও মেলবোর্নে ইয়ারাই আমার কর্ণফুলী, আমার দুঃখ-সুখের ইছামতি। 
______________

ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন - ত্রয়োত্রিংশ পর্ব



০৮ আগস্ট ১৯৯৮ শনিবার

বৎসরের এগারোতম মাসের এগারোতম দিনের এগারোতম ঘন্টার এগারোতম মিনিটে এখানে সবকিছু থেমে যায়। সবাই স্থির নীরব হয়ে যান এক মিনিটের জন্য। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় নুয়ে আসে সবার মাথা। ঠিক তখনই ছাদের ছোট্ট একটা ছিদ্র দিয়ে এক টুকরো সূর্যালোক এসে পড়ে এই স্মৃতিসৌধের ঠিক মাঝখানে আয়তাকার একটা গর্তে। সূর্যের আলোতে ঝলমল করে ওঠে একটা ছোট্ট অথচ প্রচন্ড শক্তিশালী শব্দ LOVE  মাথা নিচু করে LOVE এর দিকে তাকালে দেখতে পাবে পাঁচ শব্দের একটি বাক্য “GREATER LOVE HATH NO MAN”। বাইবেলের বাণী Greater love hath no man than this, that a man lay down his life for his friends এর অংশবিশেষ। পরের জন্য যে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে পারে তার চেয়ে মহৎ আর কে হতে পারে! দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের ভালবাসা সত্যিই অতুলনীয়। মেলবোর্নের স্রাইন অব রিমেম্বারেন্সে এসে মনে পড়ছে আমাদের শহীদ মিনারের কথা।
                       আমাদের যেমন স্মৃতিসৌধ বা শহীদ-মিনার, মেলবোর্নের তেমনি স্রাইন অব রিমেম্বারেন্স। তবে আমরা যে রকম যে কোন জাতীয় দিবসে, বিপ্লবে-বিদ্রোহে, শোকে-সংগ্রামে, প্রতিবাদ-প্রতিরোধে, শপথে-অনশনে, কবিতার উৎসব সহ আরো শত উপলক্ষে ছুটে যাই শহীদ মিনারে, মেলবোর্ন-বাসীরা সেরকম ভীড় জমায় না স্রাইন অব রিমেম্বারেন্সে। পর্যটকেরা আসে সারাবছর, স্থানীয়রা আসেন বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে বা বিশেষ কোন উপলক্ষে।
            ফ্লিন্ডারস্ট্রিট পার হয়ে ইয়ারার প্রিন্সেস ব্রিজ থেকে সোজা দক্ষিণে চলে গেছে সেন্ট-কিলদা রোড। ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে সেদিকে তাকালে দেখতে পাবে রাস্তা যেখানে বাঁক নিয়েছে সেখানে ছোট্ট পাহাড়ের ওপর পিরামিড আকৃতির স্রাইন অব রিমেম্বারেন্স- মেলবোর্নের শহীদ-মিনার।
            আজ সকালে আকাশে মেঘের আনাগোনা কম। তাই রোদের কৃপণতা নেই। তবে কতক্ষণ এরকম থাকবে জানি না। মেলবোর্নের আবহাওয়া ধনীলোকের আদুরে মেয়ের মুডের মত- বিনা নোটিশেই বদলে যেতে পারে।
            দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে সোজা ইয়ারার তীরে। প্রতিদিন নতুন নতুন পথে হাঁটার একটা সুবিধা আছে। চেনা হয়ে যাচ্ছে মেলবোর্নের অলি-গলি। অনেক শর্টকাট জানা হয়ে গেছে এর মধ্যে। প্রিন্সেস ব্রিজে এসে বামদিকের ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে ডোমেইন ট্রাম টার্মিনাল ডানে রেখে একটু এগোতেই স্রাইন অব রিমেম্বারেন্স।
            ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিসৌধ তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয় ১৯২০ সালে। অবসরপ্রাপ্ত আর্মি-কমান্ডার জেনারেল স্যার জন মনাশের নেতৃত্বে কাজ শুরু হয়। ১৯২২ সালে ডিজাইন আহবান করা হয়। ১৯২৩ সালের ডিসেম্বরে মোট ৮৩টি নক্‌শার মধ্য থেকে মেলবোর্নের দুজন স্থপতি ফিলিপ হাডসন ও জেম্‌স ওয়ারড্রপের নক্‌শা গৃহীত হয়। কিন্তু অনেকের বিরোধিতার মুখে কাজ শুরু করা যায়নি পরবর্তী পাঁচ বছর। সবচেয়ে বড় বাধা এসেছিল খ্রিস্টান পাদ্রিদের কাছ থেকে। তাঁরা ভবনের নক্‌শা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। স্মৃতিভবনের কোথাও ক্রুশ বা হলি-ক্রস জাতীয় কোন ধর্মীয় চিহ্ন রাখা হয়নি- এটাই তাদের মাথাব্যথার সবচেয়ে বড় কারণ। কিন্তু তাদের আপত্তি বেশিদিন টিকেনি।
            ১৯২৭ সালের ১১ নভেম্বর স্মৃতি-সৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ভিক্টোরিয়া রাজ্যের গভর্নর লর্ড সোমার্‌স। পরপরই কাজ শুরু হয়ে যায়। মোট আড়াই লক্ষ পাউন্ড খরচের এক লক্ষ ষাট হাজার পাউন্ড উঠে আসে জনগণের চাঁদা থেকে। ১৯৩৪ সালের সেপ্টেম্বরে কাজ সম্পূর্ণ হয়। সে-বছরই ১১ নভেম্বর বেলা এগারোটায় প্রায় তিন লাখ মানুষের সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই স্মৃতিসৌধ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সেই থেকে প্রতি বছর নভেম্বরের এগারো তারিখ বেলা এগারোটায় রিমেম্বারেন্স-ডে উপলক্ষে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন এখানে সবাই।
            দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্মৃতিসৌধের নকশায় বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়। সৌধের উত্তরদিকে গ্যাস সরবরাহ দিয়ে শিখা-অনির্বাণ স্থাপন করা হয়। পাশেই স্থাপিত হয় সাড়ে বারো মিটার উচ্চতার স্মৃতিস্তম্ভ। রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেন, স্রাইন অব রিমেম্বারেন্স।
            মানুষ বড় আশ্চর্য প্রাণী। মানুষ মানুষের সাথে যুদ্ধ করে। যুদ্ধ বাধানোর কতরকমের অজুহাত তাদের। যুদ্ধের সব পক্ষই দাবী করে তারা শান্তির স্থাপনের জন্য যুদ্ধ করছে। আবার যুদ্ধে শহীদদের জন্য শোক করে। শহীদ মিনারে এসে যুদ্ধ নয় শান্তি বলে স্লোগান দেয়। অথচ অস্ত্র-কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয় না। অস্ট্রেলিয়া শান্তিপ্রিয় জাতি। এদেশের রাস্তা-ঘাটে অস্ত্র নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় না কাউকেই। তবুও এরা এদের বড়ভাই আমেরিকা ও ব্রিটেনকে অনুসরণ করে যুদ্ধে সৈন্য পাঠায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অস্ট্রেলিয়ানরা সৈন্য পাঠিয়েছে কোরিয়ার যুদ্ধে, মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার সময়ের জরুরি অবস্থায়, ভিয়েতনাম যুদ্ধে, মধ্যপ্রাচ্যে। সবই শান্তির জন্য! ভালবাসার জন্য! তাই কি ভালোবাসা শব্দটিকে আলোকিত করা হয়েছে এখানে?
            স্মৃতিসৌধের ভেতরের ঘরের মাঝখানের বেদীতে LOVE শব্দের ওপর প্রতিবছর এগারোই নভেম্বর বেলা এগারোটায় সূর্যালোক প্রবেশ করানোর কারিগরী দক্ষতা অপূর্ব। বছরের আর কোন দিন ওই ছিদ্র দিয়ে আলো প্রবেশ করে না। আজ এই আগস্টেও একটা আলোক-রশ্মি দেখতে পেলাম। তবে ওটা সূর্যালোক নয়, বৈদ্যুতিক আলো। স্মৃতিসৌধের চারপাশে ঘুরে দেখলাম। সবকিছু ঝকঝকে পরিষ্কার। এখান থেকে উত্তর দিকে তাকালে পুরো মেলবোর্ন শহর দেখা যায় একটা ভিউকার্ডের মত। 
            স্মৃতিসৌধ থেকে বেরিয়ে সিটির দিকে হাঁটতে শুরু করে ডান দিকের রাস্তায় ঢুকে গেলাম- রয়েল বোটানিক গার্ডেন। এই দুপুরেও অনেকে দৌড়াচ্ছেন পার্কের মাঝখানের বাধানো রাস্তায়। বোটানিক গার্ডেনের এক জায়গায় বোর্ডের তথ্য থেকে দেখতে পাচ্ছি ১৮৪৬ সাল থেকেই আছে তিন লাখ ষাট হাজার বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের এই বাগানটি। প্রায় দশ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ আছে এখানে। ক্যাকটাস এরিয়ায় কত বিচিত্র রকমের ক্যাকটাস যে আছে। ক্যালিফোর্নিয়া গার্ডেন, নিউজিল্যান্ড কালেকশান, চায়না কালেকশান ছাড়াও আরো অনেক দেশের ফুল আর লতা-পাতা।
            অনেক বড় বড় ইউক্যালিপ্টাস আছে বাগানের ভেতর। অস্ট্রেলিয়ায় সবখানেই ইউক্যালিপ্টাস দেখা যায়। একটা বড় ইউক্যালিপ্টাসকে বিশেষ যত্নে ঘিরে রাখা হয়েছে। এই গাছটির বয়স প্রায় তিনশ বছর। তার মানে বোটানিক গার্ডেন হবার আগে থেকেই গাছটা আছে এখানে। বোর্ডে লেখা আছে সেপারেশান ট্রি। নিউ-সাউথ ওয়েল্‌স থেকে পৃথক হবার সময়ে এর নিচে দাঁড়িয়ে স্বতন্ত্র ভিক্টোরিয়া রাজ্যের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
            একপাশে বিরাট লেক। ছোট ছোট কিছু হাঁস ভেসে বেড়াচ্ছে এদিক-ওদিক। গাছপালা আর ঘাসের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই খেয়াল করলাম রোদের গায়ে মেঘ এসে ভিড়তে শুরু করেছে। একটু পরেই আকাশের মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে। শুরুতে গোমড়া হবে, তারপর গলতে শুরু করবে।
            এবার ফেরা যাক। ইয়ারা নদীর দক্ষিণ তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে ফুট-ব্রিজ পার হয়ে ফ্লিন্ডার স্ট্রিট স্টেশনের ভেতর দিয়ে ফ্লিন্ডার স্ট্রিটে আসতে না আসতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। এরকম হাল্‌কা বর্ষণকে কেউ পাত্তা দেয় না এখানে। আমিও দিলাম না। রাস্তা পেরোতে গিয়ে দেখলাম সিটি সার্কেল ট্রাম দাঁড়িয়ে আছে ট্রাম-স্টপে। উঠে পড়লাম। বিনে-পয়সায়  শহর-ঘুরে দেখার এমন আরাম ছাড়বো কেন।
                         ট্রাম চলছে ঘন্টায় খুব বেশি হলে বিশ কিলোমিটার বেগে। এক ব্লক পর পরই স্টপ। বৃষ্টির তেজ বাড়ার সাথে সাথে ট্রামের ভিড়ও বাড়তে শুরু করেছে। বন্ধ জানালায় বৃষ্টির ঝাপটা আমাকে নষ্টালজিক করে তোলে। আজ থেকে ঠিক একমাস আগে বাংলাদেশের এই সময়ে আমি জিয়া বিমানবন্দরে। স্মৃতিজাগানিয়া বৃষ্টি দেখতে দেখতে আমি চলে যাই ভেসে যাওয়া অতীতে, কেটে যায় সিটি-সার্কেলের তিন-চার চক্কর। হঠাৎ ঘোর কাটলে নেমে পড়ি লা-ট্রোব আর এলিজাবেথ স্ট্রিটের কোণায়। এলিজাবেথ ধরে উত্তর-পূর্ব দিকে হেঁটে হেঁটে ইউনিভার্সিটি। পার্কভিল ক্যাম্পাসের অলি-গলি এখন চেনা হয়ে গেছে।
            অফিসে এসে কিছুক্ষণ পড়ালেখা করার চেষ্টা করলাম। লেসের এসাইনমেন্টের সমস্যাগুলোর মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। তিন সপ্তাহ সময়ের এক সপ্তাহ চলে গেছে এখনো একটা সমস্যারও সমাধান করতে পারিনি। বই-পত্র ঘেঁটেও কোন কূল-কিনারা পাচ্ছি না। ওপেন বুক এক্সামিনেশান হলেও যে তেমন কোন সুবিধা করতে পারবো না তা তো বুঝতেই পারছি।
            মনে পড়লো হারিশ দেশাই বলেছিলেন শনিবার-রবিবারের দিকে ফোন করে দেখতে। হয়তো হবে না কিছুই। কিন্তু চেষ্টা না করে ছেড়ে দিলে পরে আফসোস করতে হয় অনেক সময়। সাড়ে পাঁচটার দিকে ফোন করলাম।
            গুড ইভ্‌নিং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। হাউ কেন আই হেল্প ইউ?
হারিশ দেশাইর সহকারী ভদ্রমহিলার গলা। হারিশ দেশাইর সাথে কথা বলতে চাই শুনে চুপ করে গেলেন। হয়তো দেশাই সাহেবকে ডাকতে গেছেন। রান্নাঘরের জিনিস-পত্র নাড়ার স্বাভাবিক শব্দ ভেসে আসছে। একটু পরে দেশাই সাহেবের গলা শোনা গেল- ইয়েস?
            স্যার, আমি গত বুধবার আপনার সাথে দেখা করেছিলাম। আপনি বলেছিলেন আজ ফোন করতে
            কাজের ব্যাপারে?
            হ্যাঁ স্যার
            এক-দেড়ঘন্টা পরে ফোন করো
            এখন বলতে পারবেন না স্যার?
            বললাম তো দেড়-ঘন্টা পরে ফোন করতে-ফোন রেখে দেয়ার শব্দ হলো।
            এখন বাজে ছটা। আরো দেড়-ঘন্টা পর মানে সাড়ে সাতটার দিকে ফোন করতে হবে। তখন আবার কাস্টমারের ভীড় বেড়ে গেছে বলে রাত এগারোটায় ফোন করতে বলবেন না তো?        
            দেড়-ঘন্টা কাজে লাগানো যাক। পড়াশোনায় মন দিলাম। দেড়-ঘন্টা বেশ ফলপ্রসু হলো। লেসের সমস্যাগুলোর দুটোর সমাধান পেয়ে গেলাম। মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল। এবার দেখা যাক কী বলেন দেশাই সাহেব।
            ঠিক সাড়ে সাতটায় ফোন করলাম। আবারো একই টোনে একই শব্দাবলী গুড ইভ্‌নিং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। হাউ কেন আই হেল্প ইউ? মনে হয় রেপিডেক্স ইংলিশ থেকে মুখস্থ করেছেন। আমার বৃত্তান্ত শুনে আবারো নিস্তব্ধতা, তারপর হারিশ দেশাইইয়েস?
            আপনি আমাকে সাড়ে সাতটায় ফোন করতে বলেছিলেন
            কাজের ব্যাপারে?
            ইয়েস স্যার
            আমার এখানে একজন কাজ করছে এখন। সে না পারলে তোমাকে খবর দেবো। তুমি দুসপ্তাহ পরে ফোন করো, আমি-
            কথাগুলো দেড়-ঘন্টা আগে বলা যেতো না? কী যেন হয়ে গেলো আমার। দেশাই সাহেবের কথা শেষ হবার আগেই লাইন কেটে দিলাম। ডায়েরির যে পাতায় হারিশ দেশাইর ঠিকানা আর ফোন নম্বর লেখা ছিল- সেই পাতাটা এক টানে ছিঁড়ে কুচিকুচি করলাম। আরো অনেক কিছু ছিঁড়তে পারলে আরো ভালো লাগতো। মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মানুষ মানুষকে কতরকম অপমান যে করে। ছোটবেলা থেকে আশেপাশে এরকম এত মানুষ দেখেছি যে কী বলবো তোমাকে। মেলবোর্নে এসেও এরকম মানুষের পাল্লায় পড়বো ভাবিনি। হারিশ দেশাইর রেস্টুরেন্টে কাজ না পেলে আমি নিশ্চয়ই মরে যাবো না।
            বাসায় যাবার জন্য নিচে নেমে অভ্যাসবশত মেইল-বক্সে উঁকি দিলাম একবার। কোয়ান্টাম থিওরি গ্রুপের বাক্সে একটা বড় হলুদ খাম দেখা যাচ্ছে। কাল বিকেলেও দেখেছিলাম ওটা ওখানে। পিটারের হলে রুমে নিয়ে গিয়ে রাখতে হবে। তিনি এলে পাবেন। তালা খুলে খামটা বের করতে গিয়েই সোনার খনি পেয়ে গেলাম। বড় খামের নিচে চাপা পড়েছিল আরো তিনটা খাম। খামের উপর হাতের লেখা দেখেই ভালো লাগছে- একটা খামে মামামের, একটাতে দিদির ও অন্যটাতে দাদার হাতে আমার ঠিকানা লেখা। পরের মুহূর্তে যেন উড়ে চলে এলাম বাসায়। 
_____________________
PART 34 (LAST)

ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন - দ্বাত্রিংশ পর্ব


০৭ আগস্ট ১৯৯৮ শুক্রবার

ডিপার্টমেন্টে গিয়ে আজ কেমন যেন অন্যরকম লাগলো। এই প্রথম দেখলাম সকালবেলা কেনের দরজা বন্ধ। পিটারও নেই। দুজনই এখন ইউরোপে। কেন্‌ ফিরবেন চার সপ্তাহ পর। কাল বিকেলে কেনের সাথে কথা হয়েছে অনেকক্ষণ। বলে গেছেন কোন কিছুর দরকার হলে যেন ই-মেইল করে জানাই।
            দশটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে লেসের ক্লাসে যাবার জন্য বেরিয়েছি, এসময় করিডোরে লেসের সাথেই দেখা হয়ে গেলো।
            তুমি কালকের ক্লাস মিস করেছো
            আমি ফার্স্ট ইয়ার ল্যাবে ছিলাম
            ঠিক আছে। এই নাও কালকের লেকচার নোট
            শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের যত্ন-আত্তি একটু বেশি বেশি মনে হচ্ছে না এখানে? সব শিক্ষার্থীর প্রতিই কি এরকম আচরণ করেন এঁরা? নাকি কেনের ছাত্র বলে কিছুটা বিশেষ সুবিধে পাচ্ছি আমি?
            সারা দুপুর-বিকেল বসে বসে ই-মেইল করলাম অনেকগুলো। কলেজের সহকর্মীদের সবাইকে লিখে রুবায়েতের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলাম। প্রিন্ট করতে করতে রুবায়েতের প্রিন্টারের কালি শেষ হয়ে যাবে। বেচারা রুবায়েৎ ভাববে- কোন কুক্ষণে যে প্রদীপ স্যারকে বলেছিলাম আমার ঠিকানায় অন্যের ই-মেইল পাঠাতে! আর আমার সহকর্মীরা? সাঈদ ভাই তো প্রায়ই বলেন, যে যত বেশি কষ্ট দেয়, মানুষ তাকেই তত বেশি মনে রাখে। মনে রাখার জন্য যতটুকু কষ্ট দিতে হয়- ততটুকু কষ্ট দিতে পেরেছি কি না জানি না। তাই কয়েকদিন হয়তো মনে পড়বে আমার কথা, তারপর সবাই ভুলে যাবেন।
            পাঁচটার দিকে জিনেট এসে বললো, অল ওয়ার্ক নো প্লে- নট গুড। কম্পিউটার বন্ধ করো। চলো আমার সাথে
            কোথায়? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
            গ্র্যাজুয়েট হাউজে। কিছুটা সামাজিকও হতে হয়, বুঝলে গুড বয়?
            আমার প্রতি জিনেটের হঠাৎ এরকম আন্তরিকতার কারণ কী জানি না। তবে ভালো লাগলো খুব। তার সাথে গিয়ে হাজির হলাম গ্র্যাজুয়েট হাউজের সামাজিক আসরে। গ্র্যাজুয়েট হাউজের পেছন দিকে যে একটা বার আছে আমি তা জানতামও না। জিনেটকে অনুসরণ করে গ্র্যাজুয়েট বার-এ ঢুকে দেখি ডিপার্টমেন্টের অনেকেই সেখানে। বীয়ার মদ কোক যার যা খুশি খাচ্ছে। ক্যামেরুন পরিচয় করিয়ে দিলো তার গার্লফ্রেন্ড   অ্যানের সাথে। ঝকঝকে সুন্দর হাসিখুশি অ্যান ক্যামেরুনের চেয়ে কমপক্ষে চার ইঞ্চি লম্বা।
            একটু পরে ভীড়ের মধ্য থেকে সুদর্শন এক যুবক এসে জিনেটের  সামনে দাঁড়ালো, আর পর মুহূর্তেই দেখা গেলো জিনেট যুবকটির ঠোঁট কামড়ে ধরেছে। আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে অন্য দিকে চোখ ফেরালাম। কিছুক্ষণ পর কাঁধে ঝাঁকুনি খেয়ে ফিরে তাকালাম। জিনেট বলছে, প্রাডিব, দিস ইজ মাইকেল, মাই বয়ফ্রেন্ড। এন্ড মাইক- দিস ইজ প্রাডিব। শক্ত হাতে আমার হাত ঝাঁকিয়ে দিলো মাইকেল। জিনেটের সাথে বেশ মানিয়েছে মাইকেল-কে। কিছুক্ষণ কথা হলো মাইকেলের সাথে। সে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। এখন চাকরি করছে। বেশ ভালো লাগলো মাইকেলকে। হঠাৎ মনে হলো ব্লন্ড জিনেট আর রেড-হেড মাইকেলের সন্তানদের ব্লন্ড হবার সম্ভাবনা শতকরা কত?
            বিলিয়ার্ড টেবিলের কাছে আসতেই হাই প্রাডিব বলে এগিয়ে এলো নিকোল। সে যে আমার নাম জানে তা আমি জানতাম না। পার্টিক্যাল থিওরির উজ্জ্বল ছাত্রী নিকোল বেল। শিক্ষাজীবনের প্রত্যেক স্তরেই স্কলারশিপ পাওয়া নিকোল যে তুখোড় বিলিয়ার্ড প্লেয়ার তা চোখের সামনেই দেখলাম। জীবনে প্রথম বিলিয়ার্ড খেললাম আজ। নিকোল আর জিনেট দেখিয়ে দিলো কীভাবে খেলতে হয়। নিয়ম-কানুনও কিছু কিছু শিখে ফেললাম। গো-হারা হেরেও আনন্দ পেলাম খুব। পৌনে আটটার দিকে সবাই বেরিয়ে চলে এলাম লেবি থিয়েটারে।
            আটটায় লেবি থিয়েটারে ফিজিক্স পাবলিক লেকচার। আজকের বক্তা এসোসিয়েট প্রফেসর রে ভল্‌কাস। বিষয়ঃ “Neutrino: the Cosmic messenger of the Earth, the Sun, and the Universe.” রে ভল্‌কাস পার্টিক্যাল থিওরি গ্রুপের সবচেয়ে কম বয়সী প্রফেসর। আমাদের ফ্লোরেই ৬১৫নং রুমে তাঁর অফিস। শিক্ষার্থীদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় প্রফেসর ভল্‌কাস। নিকোল তাঁর কাছেই পি-এইচ-ডি করছে।
            আজও দারুণ মুগ্ধতায় কেটে গেলো নব্বই মিনিট। প্রফেসর ভল্‌কাস কত সহজ ভাবে বুঝিয়ে দিলেন পার্টিক্যাল ফিজিক্সের কত জটিল জটিল জিনিস। প্রায় নগণ্য ভরের চার্জ-নিরপেক্ষ মৌলিক কণা নিউট্রিনো- প্রতি সেকেন্ডে কয়েক কোটি হারে আমাদের শরীরের একদিকে ঢুকে অন্যদিকে বেরিয়ে যাচ্ছে কোন ধরনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ছাড়াই। ভর এতো কম এবং কোন ধরণের বৈদ্যুতিক চার্জ না থাকাতে কঠিন জটিল ফাঁদ পেতেও যাদের ধরা যায় না- সেই জটিল নিউট্রিনোর গণিত আরো জটিল। অথচ এগুলো না বুঝলে পারমাণবিক স্তরের তত্ত্বগুলো সম্পূর্ণ বোঝা যায় না। গাণিতিক বাধার কারণে পদার্থবিজ্ঞানের সৌন্দর্য অনেকের কাছেই অধরা থেকে যায়। প্রফেসর ভল্‌কাসের বক্তৃতা আজ এই অধরাকে ধরতে সাহায্য করেছে অনেকখানি। বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার যে সামাজিক দায়িত্ব বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের থাকে তার কতটুকু আমরা পালন করি? 
            রাত এগারোটার দিকে ফোন-কার্ড সাথে নিয়ে বেরোলাম ঘর থেকে। মাসের প্রথম শুক্রবার ফোন করার দিন। আমাদের সামনের বিল্ডিং এর নিচে একটা পাবলিক ফোনবুথ আছে। সেখান থেকে ফোন করলাম দিদিভাইর বাসায়। দিদিরাও এসেছে ওখানে। দশ ডলারের কার্ডে মাত্র ছয় মিনিট। সবার সাথে কেমন আছিস?’ ‘ভালো আছি বলতে বলতেই সময় শেষ। শুধুমাত্র ওটুকুর জন্যই আবার এক মাসের অপেক্ষা। সীমিত সামর্থ্যের মানুষ আমরা। আমাদের ইচ্ছেঘুড়ির সুতো যে কত শক্ত করে টেনে বেঁধে রাখতে হয়!
_______________
PART 33



Latest Post

ফ্ল্যাশ রেডিওথেরাপি: ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা

  যে রোগের কাছে পৃথিবীর মানুষ সবচেয়ে বেশি অসহায় – তার নাম ক্যান্সার। প্রতি বছর ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে। ধারণা করা হ...

Popular Posts