Saturday 30 June 2018

এত ঘৃণা ধর্মের ভেতর?




ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া তো দূরের কথা, অনেকের সময় বা ইচ্ছে কোনটাই হয় না ইতিহাস পড়ে দেখার। কিন্তু ভালো সিনেমা দেখেন অনেকেই। অস্কার পাওয়া 'গান্ধী' সিনেমাটি যারা দেখেছেন - তাদের একটা দৃশ্যের কথা মনে আছে নিশ্চয়। কলকাতায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই, মহাত্মা গান্ধী কলকাতায় এসে অনশন শুরু করেছেন। দাঙ্গা বন্ধ না হলে তিনি অনশন ভাঙবেন না। সারা ভারতের কংগ্রেস নেতারা তাঁকে অনুরোধ করছেন অনশন ভাঙার। গান্ধীকে ভালোবাসে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ। যারা দাঙ্গা করছে তারাও। একজন হিন্দু দাঙ্গাবাজ গান্ধীর কাছে এসে স্বীকার করে যে তার সন্তানের হত্যার বদলা নিতে একটি মুসলমান ছেলেকে হত্যা করেছে। গান্ধী তাকে পরামর্শ দেন একটা মুসলমান ছেলে খুঁজে বের করতে যার মা-বাবাকে হিন্দু দাঙ্গাবাজরা খুন করেছে। তারপর সেই ছেলেকে দত্তক নিয়ে যেন নিজের সন্তানের মত মানুষ করে।





গোঁড়া ধর্মবিশ্বাসী মহাত্মা গান্ধী মানবিকতার পরম আদর্শ হতে পেরেছিলেন। সিনেমার সেই দাঙ্গাবাজ হিন্দুটি একটি মুসলমান ছেলেকে নিজের ছেলের মত মানুষ করেছিলেন কি না আমরা জানি না। কিন্তু আমরা সম্প্রতি জানলাম ভারতের হায়দরাবাদে হিন্দু দম্পতি পাপালাল রবিকান্ত ও জয়শ্রী দেবী একটি অনাথ মুসলমান মেয়েকে নিজেদের সন্তানের মত মানুষ করছেন গত বারো বছর ধরে।




২০০৭ সালে হায়দরাবাদের গোকুল চাট ভান্ডার রেস্টুরেন্টে এবং লুম্বিনি পার্কে পরপর দুটো বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উগ্রবাদী ধর্মীয় জঙ্গিরা ৪২জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল। সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে সদ্য মা-বাবা হারা দু'বছরের ছোট্ট মেয়েটি আকুল হয়ে কাঁদছিল। হয়তো সে ছিল তার মা-বাবার প্রথম সন্তান, আদরের ধন। মেয়েকে সাথে নিয়ে এসেছিল রেস্টুরেন্টে। মেয়েটি জানেই না তার মা-বাবার কী হয়েছে, কেন হয়েছে। কাঁদা ছাড়া আর কিছু তো সে করতে পারে না। এই মেয়েটিকে হাত বাড়িয়ে বুকে টেনে নিয়েছিলেন পাপালাল ও জয়শ্রী দম্পতি। তারপর অনেক খুঁজেছেন শিশুটির মা-বাবাকে পাওয়া যায় কি না। পাওয়া যায়নি। নিঃসন্তান পাপালাল ও জয়শ্রী হয়ে ওঠেন শিশুটির বাবা-মা। দত্তক নেন তাকে। নাম রাখেন সোনিয়া। সোনিয়া জন্মসূত্রে হিন্দু কি মুসলিম তাতে কিছুই যায় আসেনি কারো। বুকে পিঠে মানুষ করছেন সোনিয়াকে। পড়াচ্ছেন ভালো প্রাইভেট স্কুলে। কিন্তু এত সুখ কি সহ্য করা যায়? উগ্র হিন্দুত্ববাদ জেগে ওঠে প্রতিবেশীর মনে। 

হায়দরাবাদ শহর -যেটা ভারতের আধুনিক শহরগুলোর মধ্যে একটি, সেখানে সঙ্গবদ্ধ হয়ে হিন্দুবাদীরা একজন মুসলমানের মেয়েকে দত্তক নিয়ে মানুষ করার অপরাধে পরপর ১৬বার ছুরি মারে পাপালাল রবিকান্তকে। ধর্ম কি মানুষকে অন্ধ করে দেয়? এ কেমন ধর্ম - যেটা মানুষের মাথার ভেতর ঢুকিয়ে দেয় এমন ঘৃণার বিষ? এই ঘৃণা থেকেই তারা হত্যা করেছিল মহাত্মা গান্ধীকে - সেই ১৯৪৮ সালে। সেই ঘৃণার ধারা এখনো বয়ে চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম - ধর্মের নামে। এ কেমন ধর্ম তোমরা পালন করছো - হে মানুষ? সোনিয়ার মা এত আঘাতের পরেও যখন প্রশ্ন করেন, "আমরা সকলেই মানুষ। একই রক্ত বইছে সকলের শরীরে। আমাদের যদি কোন সমস্যা না থাকে, তাহলে সমাজ প্রশ্ন তোলার কে?"

এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? 



Friday 29 June 2018

আমরা কেমন আছি?




কেমন আছি আমরা? প্রশ্নটি আসলে নিজেকেই করা। আমি কেমন আছি?’ – এভাবেও প্রশ্নটি করা যেতো। কিন্তু আমার ভালো থাকা বা মন্দ থাকায় আমি ছাড়া হয়তো আর কারো কিছুই যায় আসে না। তাই নিজেকে অন্যের সাথে জড়িয়ে কিছুটা হলেও বহুবচনে থাকার প্রচেষ্টা। তাতে খুব খারাপ থাকলেও একটা সান্ত্বনা থাকে যে আমি ছাড়াও আরো কেউ কেউ আছেন আমার মতো। তো কেমন আছি আমরা?

এটুকু বলার পরেই স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসবে এই আমরা বলতে কাদের বোঝাচ্ছি? আমরাকারা? আমরাকোথায় থাকি? আমাদের সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অবস্থান কোথায়? বিভাজনের প্রশ্নতো আসবেই। সামগ্রিকভাবে যদি আমরা বলতে বাংলাদেশের মানুষ বোঝাই সাথে সাথে অবিশ্বাসের আঙুল উঁচিয়ে প্রশ্ন করবেন অনেকেই বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অন্যকোন মহাদেশে বসে নিজেকে বাংলাদেশের মানুষ ভাবার কোন অধিকার কি আছে?

আসলেই তো। আমরা যারা বাংলাদেশের বাইরে আছি তারা যেন কিছুতেই বাংলাদেশের মানুষ হতে পারছি না। বাংলাদেশের ভালোমন্দ নিয়ে আমরা কিছু বলতে গেলেই আমাদের বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার একটি প্রবণতা দেখা দেয় অনেকের মাঝে। জীবনের প্রধান অংশ বাংলাদেশে কাটলেও মা বাবা ভাইবোন আত্মীয় স্বজন সবাই বাংলাদেশে বাস করলেও উপার্জনের সিংহভাগ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিলেও ব্যস্ত দৈনন্দিনের কিছুটা সময় ভাবনায় লেখায় বা আলোচনায় নিত্য বাংলাদেশের সাথে কাটালেও আমরা দেশের বাইরে থাকি এটাই আমাদের বড় অযোগ্যতা হিসেবে দেখা হয়। আমরা যুক্তির কথা বললে তার উত্তরে বলা হয় – “নিরাপদ অবস্থানে থেকে বড় বড় কথা বলা খুবই সহজ। দেশের বাইরে যারা থাকেন কেবল তারাই কি বড় বড় কথা বলেন? দেশের ভেতরে বসে বড় বড় কথা কেউ বলেন না?

কথাগুলো মনে হবার কারণ অনেক। তারমধ্যে একটি সাম্প্রতিকতম কারণ হলো কবি নির্মলেন্দু গুণের আক্রমণ। আক্রমণ সরাসরি আমাকে করা হয়নি কিন্তু আক্রমণের ধরণ দেখে মনে হয় দেশের বাইরে বসে কেউ তাঁর সমালোচনা করলেই তিনি আক্রমণ করবেন এবং সে আক্রমণের ভাষা ঠিক কবি নির্মলেন্দু গুণ সুলভ নয়।

ঘটনাপ্রবাহ মোটামুটি এরকমঃ প্রথম আলোতে নাম শিরোনামে একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে নাকি মুসলমানদের ধর্মানুভূতিতে মারাত্মক আঘাত লেগেছে। বাংলাদেশে এখনো প্রচ্ছন্ন মৌলবাদী সরকার কাজ করছে। তাই ধর্মীয় উগ্রতার হাত থেকে বাঁচার আশায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন মারাত্মক ক্ষমতার অধিকারী ইসলামী নেতাদের কাছে। এতে মতিউর রহমানের ইমেজ রক্ষা না হলেও রক্ষা পেয়েছে প্রথম আলো। এ নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা সমালোচনা স্বাভাবিক ভাবেই শুরু হয়েছে। মতিউর রহমানের কাজের পক্ষে বিপক্ষে যথেষ্ঠ যুক্তি আছে। মতিউর রহমানকে সমর্থন করার পক্ষে যুক্তি যেমন আছে সমর্থন প্রত্যাহার করার পক্ষেও আছে। কবি নির্মলেন্দু গুণ মতিউর রহমান যা করেছেন ঠিক কাজই করেছেন বলে মন্তব্য করে লিখেছেন মুক্তমনা ফোরামে (Msg No. 44125, 29/09/2007) এর সূত্র ধরে জাহেদ আহমেদ মন্তব্য করেছেন যদি শেখ হাসিনা আরো অনেকে সেনাবাহিনী প্রধানকে অকুন্ঠ সমর্থন না জানাতেন তাহলে হয়তো আজ এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। জেনারেল মইন বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় ভাবে জাতির পিতার সম্মান দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অনেকদিন আগে। এজন্য তিনি অনেকের অভিনন্দন পেয়েছিলেন সেদিন। নির্মলেন্দু গুণও জেনারেল মইনকে অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন মুক্তমনা ফোরামে। এখন এ বিষয়ে অনেকের মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছে। তাই জাহেদ নির্মলেন্দু গুণের কাছে প্রশ্ন করেছেন কবিরাতো ভবিষ্যতদ্রষ্টা হয়ে থাকেন এক্ষেত্রে ভবিষ্যত দেখতে না পাবার কারণ কী ছিলো?

(msg 44155, 01/10/2007) জাহেদের এ প্রশ্নে রেগে যাওয়ার মতো কোন কারণ তো দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু নির্মলেন্দু গুণ রেগে গেলেন। তিনি বললেন বঙ্গবন্ধুকে সম্মান দেখিয়েছেন বলেই তিনি জেনারেল মইনের প্রশংসা করেছেন। তিনি জাহেদের উদ্দেশ্যে লিখলেন, ...Dont try to be oversmart. Dont open your mouth beyond your ability. Stay well in America. (msg. 44187, 02/10/2007) জাহেদ স্মার্ট মানুষ, তাঁর যুক্তিবাদী লেখাগুলোও তাই স্মার্ট। কিন্তু ওভারস্মার্ট বলতে যে শ্মেষাত্মক অর্থ বোঝানো হয় তা তো জাহেদের কোন দিনই নেই। কিন্তু কবি গুণ কেন যে এরকম আক্রমণ করে বসলেন কে জানে। আর আমেরিকায় থাকার কথাটি কি এখানে খুবই দরকারী প্রসঙ্গ? তবে রাগ করার কারণ কি এই যে জাহেদ আমেরিকায় বাস করে কবিকে প্রশ্ন করেছেন।

নির্মলেন্দু গুণের মন্তব্যের জবাবে জাহেদ লিখেছেনঃ
"Nirmalendu Goon" wrote:

<<What is the fault with Gen. Moyeen? If a man of his starure gives
tribute to BB no harm is praising him.>>

-Well, on a few occassion even Ershad praised BB when the former was
a president but people knew that it was just a political stunt. Would
you praise Ershad for that, or do you think he had true respect for
BB?
[msg: 44189]

খুবই স্বাভাবিক যুক্তি। কিন্তু এর উত্তরে কবি লিখলেন জেনারেল এরশাদ তাঁর খুব ভালো বন্ধু!

Oh Jahed, you dont know, our ex-president General HM Ershad
is a very good friend of mine. I praised him in my book entitled
Senakunje Kichukkhon.
(Msg: 44255)





স্বৈরাচারী এরশাদ কবি নির্মলেন্দু গুণের ভালো বন্ধু!! এখানে কোন মন্তব্য করার সাহস পাচ্ছি না। কখন ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যায়। কবিতাকে ভালোবেসে আমরা কবিতার কবিকেও ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু কী করে মানবো যে কবিরা তাঁদের কবিতায় যা বলেন তার সবটুকু তাঁরা নিজেরাও বিশ্বাস করেন না! নইলে এরশাদের মতো মানুষের প্রশংসা করছেন কিনা আমাদের প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ! কবিকে একথা মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন আদ্‌নান লারমন্তভ (Lermntov Msg.44206)

dear poet NG,
how are you sir?

you have the right to say whatever you want to say, it
doesn't matter how hurtful it is, really.

but i just wanted to ask you that are you still the
same poet or the same man who wrote the poem
"agneoastro"? that's all, that is all i wanted to ask

thank you
adnan lermontov

এর জবাবে কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেনঃ

No Mr Adnan I am not the same poet now who wrote Agneastro.
I wrote that poem 36 years back, in 1971. Seems u loved it.
So? You want me to continue writing similiar poems all through
my life? What do u mean by thats all?
What the hell you do, Mr? Live in the USA, as most of the wise
people opt for? Stay well in the safe heaven, Mr Lermontov.

(Msg: 44258, 6/10/07)

কবি হয়তো ঠিকই বলেছেন যে সময়ের সাথে তিনি বদলে গেছেন। বদলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তাতে কবিদের কোন সমস্যা হয়না। সমস্যা হয় আমাদের যারা কবিকে ভালোবাসি। ভালোবাসায় প্রত্যাশাও থাকে বেশি। আমাদেরও ছিলো। সে প্রত্যাশা পূরণ হয়না বলেই যত কষ্ট। সে নাহয় মানলাম কিন্তু মিঃ লারমন্তভের আমেরিকায় থাকার প্রসঙ্গটা কি এখানে মোটেও জরুরি ছিলো?

এ কারণেই মনে হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে দেশের কথা বলাটাকে আমাদের অপরাধ বলে মনে করেন কেউ কেউ।

দেশের বাইরে যারা থাকেন সামান্য কিছু ব্যতিক্রম বাদে তাদের অবস্থাটি মোটামুটি এরকমঃ বাংলাদেশের ভেতর প্রচন্ড সংগ্রাম করে কোনভাবে দেশের বাইরে যাবার সুযোগ করে নেয়ার জন্য প্রতি পদে পদে ধাক্কা খেতে খেতে এয়ারপোর্টের শেষ ধাক্কাটি কোন রকমে হজম করে বিদেশের মাটিতে পা রাখা। তারপর অনিশ্চিত ভবিষ্যতে কিছুটা নিশ্চয়তা লাভের জন্য অন্যরকম সংগ্রাম। বিদেশী ভাষা, বিদেশী সংস্কৃতি, বিদেশের আবহাওয়া সব প্রতিকুলতার মাঝে সামান্য কূল পাওয়ার পর একটু স্বস্তি। এর মধ্যেও সারাক্ষণ দেশের খববের জন্য মন কেমন করা নিজের দেশের মানুষের সাথে দেখা হলে ব্যক্তিগত ব্যাপার ছাপিয়ে দেশের কথায় মেতে ওঠা। কীভাবে দেশের ভালো হবে এ নিয়ে নানা জনের নানা মত। যারা মত দেন তাঁরা নিজের নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই মত দেন। বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে এসেছেন এমন প্রত্যেকেরই বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু না কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। এ অভিজ্ঞতা যেন অন্য কারো না হয় সে কারণেই তাঁরা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। শেয়ার করার জন্য তাঁরা লেখেন, অন্যের লেখার সাথে দ্বিমত পোষণ করেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা লাভের জন্য নিজেদের মাঝেই মত প্রকাশের স্বাধীনতার অনুশীলন করেন, মুক্তবুদ্ধির মুক্তমনের চর্চা করেন।

মন যখন মুক্তভাবে চিন্তা করার সুযোগ পায় তখন স্বাভাবিক ভাবেই জো হুকুম জনাব বলে হুকুম তামিল করার মন আর থাকে না। অন্যের কথা অন্যের মত বিনাচিন্তায় বিনাদ্বিধায় মেনে নেয়ার মানসিকতা মুক্তমনাদের থাকে না। আর আমার মতের সাথে কেউ দ্বিমত পোষণ করলেই আমার অহংকারে আঘাত লাগলে আমি কিসের মুক্তমনা? মুক্তমনা হবার অনুশীলন করতে হয় নিয়মিত। একজন মুক্তমনার সবচেয়ে দরকারী বন্ধু হচ্ছে তার যৌক্তিক সমালোচক। যুক্তিতে শান দেয়ার মূল অস্ত্র হলো কড়া সমালোচনা। যুক্তির যুদ্ধে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তো কমার কথা নয়। কিন্তু বড়ই নিরাশ হতে হয় যখন দেখি নির্মলেন্দু গুণের মতো মানুষ বলেন যে তিনি তাঁর সমালোচকদের প্রতি থুথু নিক্ষেপ করেন (I laugh at and spit on my critics. Msg 44257)

এরপরেও কীভাবে ভালো থাকি আমরা?


০৯ অক্টোবর ২০০৭
তাসমানিয়া, অস্ট্রেলিয়া

যুক্তির দ্বিতীয় সংখ্যা




যুক্তিবাদী মানুষ খুব শক্তিশালী মানুষ, সাহসী মানুষ। তাঁদের শক্তি ও সাহস পেশীগত নয়, অন্তর্গত। এই অন্তর্গত শক্তি ও সাহসের আজ বড় অভাব বাংলাদেশে, অথচ বড় দরকার। বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল প্রকাশিত যুক্তির দ্বিতীয় সংখ্যা পড়ে মনে হচ্ছে অন্তর্গত যুক্তিসম্পন্ন শক্তিসম্পন্ন মানুষ তৈরি হচ্ছে প্রচন্ড বৈরি পরিবেশেও। আর সে কাজে নিরলস সহযোগিতা করে যাচ্ছেন কিছু নিরলস মুক্তমনা যুক্তিবাদী, যাদের মুখপত্র এই অনিয়মিত পত্রিকা যুক্তিঅনিয়মিত বলা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। কারণ গত দুবছর যাবত যুক্তি বছরে একটি সংখ্যা আকারে বের হচ্ছে। সামনে হয়তো আরো বেশি সংখ্যা প্রকাশিত হবে।

প্রথম সংখ্যা প্রকাশের প্রায় এক বছর পর দ্বিতীয় সংখ্যা বেরিয়েছে বলে সম্পাদকীয়তে বছরব্যাপী ঘটে যাওয়া কিছু অঘটনের কথা উল্লেখিত হয়েছে। বাংলাদেশের সচেতন মানুষ রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারে না কিছুতেই। অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার মানুষ রাজনীতিকে বাদ দিয়েও নিজেদের জীবন সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে। একজন পেশাজীবী সেসব দেশে নিজেদের পেশা নিয়ে শখ নিয়ে নেশা নিয়ে রাজনীতিকে পাশ কাটিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনীতির বহর এত অস্বাভাবিক বেশি যে তা আমাদের জীবনের সবটুকু পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পাশ কাটিয়ে যাবার কোন উপায় আমাদের থাকে না। সে কারণেই যুক্তির সম্পাদকীয়তে অনেকখানি জুড়েই এসেছে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা। যুক্তি স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন তুলেছে দেশকে একটা ভয়ানক দুঃশাসনের মধ্যে টেনে আনার জন্য যারা দায়ী তাঁদের অনেকেই এখনো বেশ আরামেই আছেন কোন শক্তির প্রভাবে। প্রসঙ্গক্রমে এসেছে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাষ্ট্রকর্তৃক চরম অপমান করার বিষয়টি। দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি নির্দোষ কার্টুনকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে দেশজুড়ে যে অরাজকতা চলেছে তা আমাদের হজম করতে হয়েছে। কার্টুনিস্ট আরিফকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে হয়েছে ধর্ম ব্যবসায়ী মোল্লাদের কাছে। প্রথম আলো থেকে বহিস্কৃত হয়েছেন সুমন্ত আসলাম। প্রথম আলোর এরকম নতজানু সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে সেসময় অনেক যুক্তি দেখিয়েছেন অনেকে।

যুক্তিবাদের কিছু বিপদ আছে। তা হলো যুক্তিকে সাময়িক ভাবে হলেও কিছু সুন্দর সুন্দর কথার মোড়কে ঢেকে পছন্দমত মোচড় দেয়া যায়। ব্যক্তিনির্ভর বিষয়গুলোতে এ প্রবণতা বেশি দেখা যায়। চরম দুঃসময়ে যে সব বাক্যজীবী চুপ করে থাকেন, আর সুবাতাস বইতে শুরু করলেই বাক্যের ডানা মেলে দেন - তাঁদের যুক্তি হলো জরুরি অবস্থায় কিছু বলার কি উপায় আছে ভাই? নইলে আমারো তো মনে ছিল যা তুমি এখন বলছো। প্রথম আলোর ক্ষমা চাইবার পক্ষে যুক্তি দেখানো হলো - পত্রিকাটি যদি বন্ধ করে দেয়া হতো - কী করতে পারতে তোমরা যুক্তিবাদীর চ্যালারা? কার্টুনিস্ট আরিফকে গ্রেফতারের পক্ষে যুক্তি হলো - এতে প্রাণে তো বেঁচে গেল ছেলেটা। নইলে মোল্লারা তো তাকে ধরে জবাই করে দিতো। তখন কী করতে তোমরা? থাক ওসব কথা। আমাদের সোনার দেশে আমরা এখন আর কী হলে ভালো হতো নিয়ে ভাবার সাহস রাখি না। আমরা এখন ভাবি - এর চেয়েও কতটা খারাপ হতে পারতো পরিস্থিতি। সেই কল্পিত পরিস্থিতির চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতি অনেক ভালো আছে ভেবে আমরা বেশ আনন্দেই আছি - খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুমাচ্ছি!

পশ্চিম বঙ্গের তৈলাক্ত রাজনীতির কাছে মার খেয়েছেন তসলিমা নাসরিন। তসলিমার প্রসঙ্গটিও এসেছে যুক্তির সম্পাদকীয়তে। তসলিমা নাসরিনের একটি ব্যাপার অবশ্য আমি  বুঝতে পারছি না। তা হলো তিনি কেন সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকদের কাছে নতজানু হলেন। কেন তিনি তাঁর লেখার কিছু অংশ প্রত্যাহার করে নিলেন? তাঁর এরকম দুর্বলতার কি কোন দরকার ছিল? করার পরেও কি তিনি যা চেয়েছিলেন তা পেয়েছেন? তিনি তো একজন আন্তর্জাতিক মানুষ। তাঁর অর্জনের ঝুলিতে যেসব আন্তর্জাতিক পুরষ্কার আছে তাদের যে কোন একটি  পেলেই অনেকে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান। সম্প্রতি নিউইয়র্কে বাংলা সম্মেলনে তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি গলা উঁচিয়ে বলছেন যে তসলিমা যতটুকু জনপ্রিয় লেখক তারচেয়েও বেশি হলেন বিতর্কিত লেখক। অবশ্য এতে তসলিমা নাসরিনের এমন কিছু উনিশ-বিশ হয় বলে মনে হয় না। তবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হয়তো কিছু যায় আসে। কারণ পশ্চিম বঙ্গে নাকি লেখকেরা এখন দুটি দলে বিভক্ত। একদল চাচ্ছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হবেন দ্বিতীয় বাঙালি নোবেল সাহিত্য পুরষ্কার বিজয়ী। অন্যদল আশা করছেন বাঙালি সাহিত্যিকদের মাঝে নোবেল পুরষ্কার পাবার মত কেউ যদি থাকেন তবে তিনি মহাশ্বেতা দেবী। কিন্তু উভয় দলের মধ্যেই ভয়ের কারণ হলেন তসলিমা নাসরিন। যদি তসলিমা নাসরিন সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পেয়ে যান? সাহিত্য আর শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারের ক্ষেত্রে অভাবনীয় অনেক ঘটনা ঘটে যায় মাঝে মাঝে। আচ্ছা আমরা কি ভেবে রেখেছি তখন আমরা বাংলাদেশীরা কী করবো তসলিমা নাসরিনের ব্যাপারে? সরকার তো সেদিনও খুব ঠান্ডা গলায় আমাদের বুঝিয়ে দিলেন যে তসলিমা নাসরিন যেহেতু সুইডেনের নাগরিকত্ব নিয়েছেন এবং যেহেতু সুইডেনের সাথে আমাদের দ্বৈতনাগরিকত্বের চুক্তি নেই - সুতরাং তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন! তাঁর ব্যাপারে আমাদের আর কিছু করার নেই!! তসলিমা নাসরিন নোবেল পুরষ্কার পেলেও কি আমরা এরকম কথাই বলবো? আচ্ছা সেটা নয় বাদ দিলাম। পৃথিবীর অনেক দেশের সাথেই তো আমাদের দ্বৈত-নাগরিকত্বের চুক্তি আছে। সুইডেনের সাথে চুক্তিটা করা যায় না? সুইডেনে তো অনেক বাংলাদেশী রয়েছেন।

অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অনেক বৈজ্ঞানিক যুক্তিনির্ভর ব্যাপারে এখনো কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে আছেন বাংলাদেশের অনেক মানুষ। রক্তদানের ব্যাপারটা ধরা যাক। হাসপাতালগুলোতে দেখা যায় এখনো রুগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন হলে পেশাদার রক্তদাতার উপর নির্ভর করতে হয়  বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। সন্ধানী সারাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোকে কেন্দ্র করে চেষ্টা করে যাচ্ছে তাদের সাধ্যমত। রক্তদানের মত একটি মহান অথচ সহজেই করা যায় এমন ব্যাপারে সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ এখনো ঘটছে না। এর জন্য সচেতনতার অভাব তো আছেই - আরো আছে অনেক অজানা কুসংস্কার। বাংলাদেশের অনেক নারী বিশ্বাস করেন যে নারীরা রক্ত দান করতে পারেন না। অথচ ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত যে কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ প্রতি তিন মাস পর পর রক্ত দান করতে পারেন। মরণোত্তর চক্ষুদান করার ব্যাপারে আমাদের অংশগ্রহণ এখনো শতকরা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। একজন মানুষের মৃত্যুর পর তাঁর শরীরের প্রয়োজন শেষ। মৃতদেহ নিয়ে যা করা হয় তা শুধুমাত্র সংস্কৃতি ও ধর্মের কারণে করা হয়। অথচ মৃত্যুর পর ছয় ঘন্টার মধ্যে যদি কর্ণিয়া সংগ্রহ করা যায় তা দিয়ে অন্ধ মানুষের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়া যায়। মৃতদেহ দান করার ব্যাপারটা এখনো একেবারেই প্রায় অনুপস্থিত আমাদের সংস্কৃতিতে। আমাদের ধরতে গেলে পুরো ইহকালই পরকালের জন্য নিবেদিত। ধর্ম ব্যবসায়ীরা মৃত্যুর পর বেহেশ্‌তে কেমন হুর পাওয়া যাবে, আর দোজখে কেমন ফুটন্ত  তেলের কড়াইতে ভাজা ভাজা হতে হবে তার নৃশংস বর্ণনা দিতে দিতে মানুষের ইহকালের সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে। হূমায়ুন আজাদ তাঁর মৃতদেহ দান করে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটতে দেননি তাঁরই পরিবারের সদস্যরা। এমনই আমাদের বাস্তবতা। যুক্তির সম্পাদককে আমার বিশেষ ধন্যবাদ এই কারণে যে তিনি রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানের ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেছেন তাঁর সম্পাদকীয়তে।


আবুল হোসেনের আদেশের নিগ্রহ প্রবন্ধটি যুক্তির দ্বিতীয় সংখ্যার স্বর্ণালী সংস্করণ বলা যায়। প্রায় একশ বছর আগের লেখা প্রবন্ধ এখনো কত বেশী রকম সময়োপযোগী। প্রবন্ধটি পড়লেই বোঝা যায় যে উপাসনা ধর্ম ও সে ধর্মের নামে রক্ষিত সংস্কারগুলোর জন্য আমরা যে তিমিরে ছিলাম একশ বছর আগে - এখনো সেই তিমিরেই রয়ে গেছি। জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব। আমাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞান ও আড়ষ্ট বুদ্ধি দিয়ে মুক্তির আশা আমরা কীভাবে করি? তাই যেভাবে চলছে আমাদের দিন সেভাবে চললে আরো একশ বছরেও আমরা আলোর মুখ দেখতে পারবো না।

যে জাতি অর্থাৎ যে জাতির মন এখনও ন্যাংটা বর্বর যুগের কাছাকাছি পড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে সে জাতির ভয়, দুর্বলতা ও অজ্ঞতা তত বেশি। সুতরাং তার ধর্মবিশ্বাসও তত প্রগাঢ়, অর্থাৎ ধর্মগুরুর আদেশ অক্ষরে-অক্ষরে পালনে সে তত তৎপর এই ভয়ে, পাছে তার কোন অনিষ্ট ঘটে কিংবা তার ধর্মগুরু প্রদর্শিত পরলোকে দুর্গতি হয়। বলা বাহুল্য, ধর্মগুরুর আদেশ নানা অনুষ্ঠানের ভিতর দিয়ে পালিত হয়। এক কথায়, যে জাতি যত আদিম প্রকৃতি বিশিষ্ট, সে জাতি তত অনুষ্ঠানপ্রিয়। এই অনুষ্ঠান অর্থে আমি ধর্মানুষ্ঠান মনে করছি[যুক্তি, পৃষ্ঠা ১১-১২]

ইসলাম একটি সনাতন ধর্ম, সর্বকালে সর্বদেশে সমানভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু এই দাবী গায়ের জোরেই করা চলতে পারে, যুক্তি বা মানব-ইতিহাসের ধারা বা প্রকৃতির নিয়মানুসারে সে দাবী টিকতে পারে না। আজ মুসলমান কেন ইসলামের আদেশ পুরোপুরি পালন করতে পারছে না, তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে; আর এও দেখতে হবে, সপ্তম শতাব্দীর আরব মরুর ইসলাম বিংশ শতাব্দীর শস্য-শ্যামল উর্বর দেশে কতখানি কার্যকরী হতে পারে। যদি ইসলাম অপরিবর্তনীয় অখন্ড সত্য সনাতন ধর্ম বলে তাকে হুবহু জীবনে গ্রহণ করবার চেষ্টা করা হয়, সে চেষ্টা নিছক অত্যাচারেই পরিণত হবে, এবং যার উপর সে চেষ্টা হবে সে বিদ্রোহী হয়ে তার জীবন দিয়ে দেখাবে যে, আমি ইসলাম মানি না; কারণ মানতে পারি না বা মানতে ইচ্ছা হয় না। বর্তমান মুসলমান সমাজে এই ধর্মদ্রোহী মুসলমানের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে; তার কারণ ধর্মানুষ্ঠানের প্রতি অনুরাগ জন্মাতে গিয়ে ধর্মপুরোহিতগণ তাঁদের শিষ্যদের জীবনকে চেপে মেরে ফেলবার উপক্রম করেছেন। তাঁরা জীবনের সহজ গতিকে রোধ করেছেন! এই ধর্মদ্রোহীরা সমাজের বুকে দিব্যি আরামে দিন কাটাচ্ছে, কিন্তু তারা মুখে স্বীকার করছে না যে তারা ধর্মদ্রোহী; কারণ ইসলামের প্রশংসায়, ইসলামের অনুষ্ঠানগুলির ফজিলত বর্ণনে তারা শত-মুখ। সমাজপতিগণ এই মৌখিক প্রশংসায় মুগ্ধ হয়ে তাদের শত ছিদ্র, শত অপরাধ তুচ্ছ বলে গণ্য করে সুখে নিদ্রা যাচ্ছেন। ইসলাম যে মানুষের জন্য, মানুষ যে ইসলামের জন্য নয়- এ কথা বুঝবার মত বুদ্ধি তাদের আজও হয় নাই। তাই দেখি, শুধু অনুষ্ঠান পালনে বড় অথচ মানুষ হিসাবে পাষণ্ড নরাধম এমন মুসলমানও মাত্র বাহ্যিক নিদর্শনের বলে সমাজে বেশ খাতির পায়[যুক্তি, পৃষ্ঠা ১৪-১৫]

কোরান-হাদিস বাঙলার সাধারণ মুসলমানের নিকট বন্ধ-করা (sealed)একখানি পুস্তক ব্যতীত আর কিছুই নয়, যে পুস্তক হতে তারা কিছুই গ্রহণ করতে পারে না বা যার কথা শুনেও তারা তাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারে না অর্থাৎ পারছে না। তবে অনুষ্ঠান পালনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে তারা এখনও মুসলমান। তাই মাত্র টুপি, লুঙ্গি, দাড়ি, এই বাহ্যিক নিদর্শন দ্বারাই তারা তাদের মুসলমানত্ব প্রমাণ করছে। কোরান-হাদিসের সমস্ত বিধি-নিষেধের ফল মুসলমানের জীবনে শুধু টুপি, লুঙ্গি, দাড়িতেই প্রকাশ পেয়েছে; তার বাইরে মুসলমানের আর কী-কী নিদর্শন চাই মানুষের দিক থেকে, তার প্রতি লক্ষ্য আমাদের সমাজপতিদের আছে বলে মনে হয় না। তা যদি থাকত তা হলে মসজিদের সামনে বাজনা এই অতি সামান্য ব্যাপার নিয়ে নরহত্যায় আমরা প্রবৃত্ত হতাম না। এ কথা আরো মনে হয় যখন দেখি মসজিদের উপাসকগণের অনেকেই গুন্ডামি জিনিসটা একটা আমোদজনক ও কতকটা প্রয়োজনীয় ব্যাপার বলে মনে করে [যুক্তি, পৃষ্ঠা ১৬]

অন্যান্য ধর্মের ন্যায় ইসলামও কতকগুলি আদেশ ও নিষেধের সমষ্টি মাত্র। এই আদেশ-নিষেধ মেনে চললে অনন্ত সুখ (বেহেশত) ও লঙ্ঘন করলে অনন্ত দুঃখ (দোজখ) ভোগ করতে হয়। দোজখের ভয় ও বেহেশতের লোভই মুসলমানকে ইসলামের আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে প্রবৃত্ত করে। কিন্তু দোজখ ও বেহেশ্‌তের বর্ণনা হতে কোন মুসলমানই তার প্রকৃত স্বরূপ বুদ্ধির দ্বারা ধারণা করতে পারে না, কেবল বিশ্বাসই একমাত্র সম্বল। প্রকৃতপক্ষে, বুদ্ধি যে বস্তুকে ধরতে পারে না, বিশ্বাস দ্বারা তাকে বেশিক্ষণ ধরে রাখা যায় না। বুদ্ধির প্রয়োগ যেখানে অনাবশ্যক বা অনর্থক সেখানে বিশ্বাস শিথিল হতে বাধ্য [যুক্তি, পৃষ্ঠা ১৬]

মুসলমানও অন্যান্য ধর্মাসক্ত জাতির মত অনুষ্ঠান-প্রিয় - নানা আদেশ পালনে সতত উদবিগ্ন। এই সমস্ত আদেশের মধ্যে নামাজ, রোজা, অজু, গোসল, তেলায়ত, খোতবা, আজান, দরুদ, কলমা প্রভ্রৃতি সম্বন্ধে কড়া আদেশ জারি আছে। কিন্তু উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য না রেখে শুধু তাদের বুদ্ধির-অগম্য সওয়াবের লোভে এই সমস্ত আদেশ অক্ষরে-অক্ষরে পালন করতে গিয়ে মুসলমানের যে চেহারা হয়েছে তা আজ অত্যন্ত চোখে লাগছে। তা দেখলে মনে হয়, ইসলাম যে সদুদ্দেশ্যে অর্থাৎ মানুষ করবার উদ্দেশ্যে প্রবর্তিত হয়েছিল তা একেবারে ব্যর্থ হয়ে গেছে। যে-সমস্ত মুসলমান এই সমস্ত অনুষ্ঠান কড়ায়-গন্ডায় হিসাব করে পালন করতে ব্যস্ত, তাদের অধিকাংশের জীবন নিতান্তই সঙ্কীর্ণ ও নোংরা। কিন্তু যারা এই অনুষ্ঠানগুলি অক্ষরে-অক্ষরে পালন না করে স্বেচ্ছামত পালন করে বা অমান্য করে, তাদের প্রতি মৌলানা সাহেবদের ফতোয়ার তীর নিক্ষিপ্ত হয় রুচিগর্হিত কদর্য ভাষার ভিতর দিয়ে। তার মজা এই যে, আজ মুসলমান সমাজ যাঁদের নিয়ে গর্ব করে তাঁদের অনেকেই অনুষ্ঠানের তোয়াক্কা রাখেন না। তাঁরা মৌলানা সাহেবদের রম্ভা দেখিয়ে কোরান-হাদিসের কথা সিকেয় তুলে রেখে দিয়ে যুগ-ধর্মের দাবী-অনুসারে কাজ করে চলেছেন- অবশ্য চুপে-চুপে। তা হলেও এই সমস্ত সাহেবিয়ানা-পরস্ত অর্থাৎ যুগ-ধর্ম-পরস্ত মুসলমানকে মৌলানা সাহেবেরা খুব খাতিরও করেন। অনেক সময় নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য। কিন্তু গভীর পরিতাপের বিষয়, এই সমস্ত অনুষ্ঠানদ্রোহী মুসলমান কর্তারা মৌলানা সাহেবদের কথায় সায় দিয়েই চলেন। যদি তাঁরা সাহস করে তাঁদের একটু ধমকে দিতেন যে, আপনারা করছেন কী? আর কতকাল অজু করার মসলা, হায়েজ-নেফাজের মসলা, জিহাদের মসলা শুনিয়ে বেড়াবেন? মানুষ অজু করে করুক, না-করে না করুক, দেখুন তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে জানে কিনা, কেমন করে তা হওয়া যায় তাই বলুন। শুধু বার-কয়েক পানি হাতে-পায়ে দিলেই যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া যায় না, তা জোর করে বলুন। শরীর ও মনের পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যই প্রকৃত লক্ষ্য - অজু একটি উপায়। নামাজ-রোজা ইত্যাদি সম্বন্ধেও তার মূল উদ্দেশ্য কী ও তা হচ্ছে না কেন, তা বুঝিয়ে দেন। তা না করে নামাজ পড়লে সত্তর হাজার সওয়াব হয়, দরুদ পড়লে ফেরেশতা এসে আশীর্বাদ করে, এসব শুনিয়ে লাভ কী? এগুলির দ্বারা বর্তমান জগতে আমরা কতদূর মনুষ্যত্ব লাভে সক্ষম হতে পারি, সেইটিই দেখিয়ে দিন। যদি এগুলি ছেড়ে দিয়ে আমরা অন্য সহজ উপায়ে সেই উদ্দেশ্য সিদ্ধি করতে পারি তবে পুরাতন অনুষ্ঠান পালনের জন্য তত বেশি কড়াকড়ি প্রয়োজন নেই - তা হলে মুসলমান সমাজের চেহারা ফিরে যেত[যুক্তি, পৃষ্ঠা ১৮]

উদ্দেশ্যের প্রতি উদাসীন অনুষ্ঠান-প্রিয়তার বিষময় ফল কীরূপ হয়, তা বর্তমান বাঙলার সাধারণ মুসলমানের জীবন ও তাদের অনুষ্ঠানাসক্তি দুইটি মিলিয়ে দেখলে বেশ বুঝতে পারা যায়। শুক্রবারে মসজিদে গেলে চোখে এসে ঠেকবে এমন কতকগুলি চেহারা - যার প্রায় প্রত্যেকের মাথায় একটি তৈলস্নাত টুপি- গায়ে একটি ঘর্ম-তিক্ত গন্ধ-বিশিষ্ট পিরহান বা চাদর বা গামছা, পরিধানে একখানি মলিন-কৃষ্ণ লুঙ্গি। কিন্তু এদের অজু গোসলের মস্‌লা কন্ঠস্থ। এরাই তিনবার নাকে পানির স্থানে যদি অন্যমনস্ক হয়ে চারবার নাকে পানি দিয়ে বসে তবে তারা পুনরায় সময় নষ্ট করে অজু দোহরায়। ফলে, অজু করতে গিয়ে যথার্থ পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল করার পরিবর্তে তারা শুধু খানিক গণিত প্রাকটিস করে। নামাজের সময়ও তাই- রেকাত গুণতে-গুণতে প্রাণান্ত দরুদ-কলমা পড়ার সময়ও শ, হাজার, লাখ ঠিক করতেই তার উদ্দেশ্য উবে যায়। শুক্রবারের দিন খোতবার প্রহসনও কী চমৎকার! মোল্লাজি মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে লহন দোরস্ত করে সুর-ঝঙ্কারে মান্ধাতার আমলের রচিত কতকগুলি আরবি বাক্য পাঠ করেন- কী বুঝেন, না-বুঝেন - তিনিই জানেন আর তাঁর আল্লাই জানেন - আর মোকাদির দল বসে-বসে হয় হাই তোলে, না-হয় সংসারের ব্যাপার খানিক বসে-বসে - ভাবতে থাকে, আর যারা একটু বুদ্ধিমান তারা বেশ খানিক ঝিমিয়ে-ঝিমিয়ে ঘুমিয়ে তাদের শ্রমক্লান্ত দেহকে বিশ্রাম দিতে থাকে[যুক্তি, পৃষ্ঠা ১৯]

ইসলামের বিধি-নিষেধ পালন করতে গিয়ে মুসলমান আজ কতকগুলি ভন্ড, প্রাণহীন, গর্হিতরুচি, বুদ্ধি-বিবেকহীন জীবে পরিণত হয়েছে। মুসলমান নেতৃবৃন্দ এদিকে দৃক্‌পাতও করছেন না; বরং সমস্তই ধামাচাপা দিয়ে তাঁরা সমাজে সাচচা বনে বসেছেন[যুক্তি, পৃষ্ঠা ২৩]

আবুল হোসেনের প্রবন্ধ থেকে নেয়া উপরের কয়েকটি অংশ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে প্রবন্ধটি এখনো কতটা সময়োপযোগী। আমি মনে করি প্রবন্ধটি বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটির ক্লাসে পড়ানো উচিত।

বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি দেশের একটি যাদের কোন শিক্ষাব্যবস্থা ভীষণ গোঁজামিলে ভর্তি। আমাদের দেশের রাজপথে যেমন ইঞ্জিনচালিত, মনুষ্য-চালিত আর গরু-চালিত গাড়ি পাশাপাশি চলে - আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেও ইংরেজি, বাংলা আর আরবি মাধ্যম জগাখিচুড়ি হয়ে চলছে। প্রফেসর অজয় রায়ের শিক্ষা নিয়ে অনিয়ত ভাবনা প্রবন্ধে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। যুক্তির দ্বিতীয় সংখ্যায় এটাও আমাদের একটি উল্লেখযোগ্য বড় পাওনা।

নাস্তিকতা- মুর্দাবাদ, বিজ্ঞানচেতনা- জিন্দাবাদ প্রবন্ধে নাস্তিকতা আর আস্তিকতার শাব্দিক উৎপত্তি ও তার প্রয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন যতিন সরকার। যতটুকু বুঝতে পারছি নাস্তিক শব্দটি পরিহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এ প্রবন্ধে।

নাস্তিক কথাটা যে একটা গালি, সে কথাটাই আমরা ভুলে বসে আছি। শুধু তাই নয়। কেউ কেউ তো নিজেদের নাস্তিক পরিচয় দিয়ে মূর্খের মতো বড়াই করতেও পছন্দ করে। আমরা অমুকটা মানি না কিংবা তমুকটা বিশ্বাস করি না - এরকম বুলি কপচিয়েই চলে আমাদের নাস্তিকতার আস্ফালন। কখনও কখনও এরকম আস্ফালনকেই আমরা মুক্তবুদ্ধির চর্চা বলে প্রচার করি[যুক্তি, পৃষ্ঠা ৪৪]

নাস্তিক বলে যারা আত্মপরিচয় দেয়, কিংবা সমাজে যাদের নাস্তিক পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, জনসাধারণ তেমন লোককে বিশ্বাস বা শ্রদ্ধা তো করেই না, এদের সম্পর্কে বরং তারা সীমাহীন ভীতি ও অশ্রদ্ধাই পোষণ করে, এদের সঙ্গও তারা পরিহার করে চলে। এর ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ জনগণের সঙ্গে বিজ্ঞানমনস্ক ও বস্তুবাদী বুদ্ধিজীবীদের বিচ্ছিন্নতার বিস্তারই ঘটতে থাকে প্রতিনিয়ত[যুক্তি, পৃষ্ঠা ৪৫]

আমি কী মানি- সেটাকে বড় করে তুলে ধরতে হবে, কী মানি না তা নিয়ে হাওয়ায় বন্দুক ঘোরানোর কোনো অর্থ নেই। মানি-নার নাস্তিকতা তো অন্ধকার, সেই অন্ধকারের তো শেষ নেই। বস্তুকে মানি বিশ্বব্রহ্মান্ড বস্তু দিয়ে তৈরি, বস্তুর নিয়মেই চলে বিশ্ব, বস্তুই বিধাতা- এই হচ্ছে বিজ্ঞানচেতনা আর এই বিজ্ঞানচেতনাই আস্তিকতা [যুক্তি, পৃষ্ঠা ৪৬]

যাঁরা বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদী, তাদের উচিত নাস্তিকতার বড়ফাট্টাই না-দেখিয়ে লৌকিক ধর্মতন্ত্র-অনুসারী ওই সব লোকসাধারণের বিশ্বাস ও আচরণের প্রতি যথার্থ দরদ ও সহানুভূতি ব্যক্ত করা, দরদ ও সহানুভূতির সঙ্গেই তাদের সঙ্গে মিশে তাদের লোকায়ত বস্তুবাদকে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদে উন্নীত করা[যুক্তি, পৃষ্ঠা ৪৭]

যতিন সরকারের প্রবন্ধটির মূল উদ্দেশ্য অবশ্যই ধনাত্মক। কিন্তু যে উপায়ে তিনি নাস্তিক আর আস্তিক শব্দটির উপর জোর দিচ্ছেন এবং বিজ্ঞানচেতনাকে আস্তিকতা বলছেন - তা আমি মানতে পারছি না। এই যে পারছি না - তা আমাকে না বলেই প্রকাশ করতে হচ্ছে। কী কী বিষয় মানতে পারছি তা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ না করলেও চলছে। নাস্তিক শব্দের প্রচলিত অর্থই হলো ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস নেই যাদের। কীভাবে শব্দটি এসেছে তা এখানে দরকার নেই। যেমন মৌলবাদী যাঁরা তাঁরা যদি শব্দার্থ অনুযায়ী নিজেদের মৌলিক বলে দাবী করেন - আমরা কি মেনে নেবো? ইংরেজি গে (gay) শব্দের শুরুতে অর্থ ছিলো হাসিখুশি-উচ্ছল ইত্যাদি। কিন্তু এখন তো গে- শব্দের প্রচলিত অর্থ ভিন্ন। সেরকম আস্তিক শব্দের প্রচলিত অর্থই হলো ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী। আমি যেহেতু ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি না সেখানে কীভাবে বলি যে আমি আস্তিক! আর সাধারণ মানুষের ভ্রান্তবিশ্বাসের সাথে সহানুভূতি কীভাবে দেখানো সম্ভব একজন মুক্তবুদ্ধির মানুষের ক্ষেত্রে এটা আলোচনার অপেক্ষা রাখে। অনেক মানুষ ভ্রান্ত-মতবাদে বিশ্বাসী। সেখানে তাদের ভুলটাকে তো ভুল বলতেই হবে। মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ থাকবেই। এটা মানব-ধর্ম। উপাসনা ধর্মের ব্যাপারে সত্যি কথা সহজ ভাবে বলা উচিত বলেই আমার ধারণা। সেখানে কঠিন কঠিন শব্দ-সৃষ্টি করে পুরো ব্যাপারটি আরো কঠিন করে ফেলা কি উচিত?

বেনজীন খান, সুমিত্রা পদ্মনাভন, অভিজিৎ রায়, অপার্থিব, নন্দিনী হোসেন, সৈকত চৌধুরি প্রত্যেকের প্রবন্ধই সুখপাঠ্য। অভিজিৎ রায়ের অধার্মিকের ধর্মকথন মুক্তমনাতেই পড়েছিলাম। কিন্তু তাঁর লেখা যতবারই পড়ি ততবারই নতুন মনে হয়। কারণ তাঁর যুক্তির গভীরতা। তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখিত স্টিভেন ভাইনবার্গের বিখ্যাত উক্তিটি আবার উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না। ধর্ম মানবতার জন্য এক নির্মম পরিহাস। ধর্ম মানুক আর নাই মানুক, সব সময়ই এমন অবস্থা থাকবে যে ভাল মানুষেরা ভাল কাজ করছে, আর খারাপ মানুষেরা খারাপ কাজ করছে। কিন্তু ভালো মানুষকে দিয়ে খারাপ কাজ করানোর ক্ষেত্রে ধর্মের জুড়ি নেই। [যুক্তি, পৃষ্ঠা ৭৪]

যুক্তির এ সংখ্যা থেকে প্রবীর ঘোষের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। প্রবীর ঘোষের সাথে আলাপচারিতার ভাগ যুক্তির পাঠকদের দেয়ার জন্য সম্পাদককে আবারো ধন্যবাদ।

যুক্তির প্রচ্ছদে বেশ কিছু মুক্তমনা মানুষের ছবি অবশ্যই চমৎকার একটি আইডিয়া। তবে ভেতরের কোন পৃষ্ঠায় যদি তাঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচিত দেয়া থাকতো মনে হয় ভালো হতো। প্রচ্ছদ সাদা-কালো। আমি জানি আমাদের স্বপ্ন রঙিন হলেও প্রচ্ছদে রঙ দেয়ার আর্থিক মূল্য অনেক। আশা করি যুক্তির সাহসের সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গতিও ক্রমশ বাড়বে।


মেলবোর্ন
২৭ জুলাই, ২০০৮




Latest Post

ডাইনোসরের কাহিনি

  বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণি কী? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলবো নীল তিমি – যারা দৈর্ঘ্যে প্রায় তিরিশ মিটার, আর ওজনে প্রায় ১৯০ টন পর্যন্ত...

Popular Posts