Showing posts with label রাজনীতি. Show all posts
Showing posts with label রাজনীতি. Show all posts

Tuesday, 28 August 2018

জসীমউদ্দীন মন্ডলের জীবনের রেলগাড়ি




কমরেড জসীমউদ্দীন মন্ডলের "সংগ্রামী স্মৃতিকথা" 'জীবনের রেলগাড়ি' প্রকাশিত হয়েছে ২০১২ সালে জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী থেকে। একজন সংগ্রামী শ্রমিক নেতা যখন ৮৮ বছর বয়সে স্মৃতিকথা লেখেন, তখন পাঠক সাধারণত আশা করেন যে ইতিহাসের একটা সময় সেখানে ধরা থাকবে বিশ্বাসযোগ্যভাবে। সেই ইতিহাস যে লেখকের ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হবে সেটাও পাঠক জানেন। তবুও পাঠক আগ্রহ নিয়ে সে লেখা পড়েন - লেখকের হাত ধরে সময়-ভ্রমণ করার জন্য।
            
একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে আগ্রহ নিয়ে আমি বইটি পড়েছি কমরেড জসীমউদ্দীন মন্ডল তাঁর সংগ্রামী স্মৃতিগুলোকে কীভাবে স্মরণ করেছেন, ব্যাখ্যা করেছেন এবং কী দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি জীবনকে দেখেছেন তা জানার জন্য। ১৯২৪ থেকে ২০১২ - ৮৮ বছরের দীর্ঘ জীবনে তিনি সংগ্রাম করেছেন ব্রিটিশ সরকারের সময়, তারপর পাকিস্তান, তারপর বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্ম থেকে বর্তমান পর্যন্ত তিনি রাজনৈতিক ঘটনাবলী প্রত্যক্ষ করেছেন একজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে। তাই তাঁর স্মৃতিকথা - শুধু স্মৃতিকথা নয় কিছুতেই - এটা ইতিহাসের প্রতিফলক হবারও দাবিদার ছিল।
            
মাত্র ১৬ বছর বয়সে রেলগাড়িতে উঠেছেন জসীমউদ্দীন রেলইঞ্জিনে কয়লা ঢালার  শ্রমিক হিসেবে। সেই সময় - ১৯৪০ সালে মাইকিং করে রেলওয়ের শ্রমিক নিয়োগ করা হতো। কর্মসংস্থানের সুযোগ এখনকার তুলনায় অনেক সহজ ছিল বলা চলে। শিয়ালদহ স্টেশনে গোরা সাহেবের কাছে সাক্ষাৎকার দিয়ে কাজ পেয়ে গেলেন তিনি। মাসিক বেতন ১৫ টাকা। আর বেতন পাবার দিন থেকেই 'লাল ঝান্ডা' পার্টি তাঁর কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে এক টাকা চাঁদা। হিসেব করে দেখুন বেতনের শতকরা প্রায় সাড়ে ছয় ভাগ পার্টির চাঁদা দিতে হয়েছে সেই ১৯৪০ সালে।
            
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সমর্থন করেছিল জার্মানি আর জাপানকে। জাপান যখন এশিয়ায় আগ্রাসন চালাচ্ছিল - এমনকি বার্মা পর্যন্ত দখল করে নিয়েছিল তখনো পার্টি সমর্থন করছে জাপানকে, জার্মানির হিটলারকে। সেটা শুধুমাত্র তখনই বদলালো যখন হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করলো।
            
তারপর ১৯৪৭। দেশ ভাগের পর জসীমউদ্দীন পূর্ব-পাকিস্তানে চলে আসেন রেলওয়ের চাকরির অপশন নিয়ে। ইংরেজ চলে গেলেও তখনো ইংরেজ কর্মকর্তা কাজ করছিলেন পাকিস্তানের অনেক জায়গায়। রেলের অনেক ড্রাইভারও ছিলেন ইংরেজ। এই ইংরেজ ড্রাইভারদের বেতন দেয়া হতো ইওরোপিয়ান গ্রেডে। সেই সময় ১৯৪৯ সালেই রেলওয়ে শ্রমিক থেকে শ্রমিকদের নেতা হয়ে ওঠেন জসীমউদ্দীন। শুরুটা খুবই ব্যক্তিগত লাভক্ষতির হিসেব থেকে। ১৯৪৯ সাল। দুর্ভিক্ষের আলামত দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান সরকার এক জেলা থেকে অন্য জেলায় খাদ্য-চলাচল নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ফলে চালের অভাব। ট্রেন-ইঞ্জিনের শ্রমিক হিসেবে জসীমউদ্দীন এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যান ট্রেন নিয়ে। আনমুরা থেকে তিনি চাল কিনে নিয়ে আসতেন ঈশ্বরদীতে। কাজটা ছিল বেআইনী। একদিন এরকম তিন মণ চাল রেলের ইঞ্জিনে করে নিয়ে আসার সময় সরকারের মিলিশিয়া বাহিনী সেই চাল জব্দ করে নিয়ে যায়। জসীমউদ্দীন মন্ডলের নেতৃত্বে রেলওয়ে শ্রমিকেরা ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। দাবি আদায় হয়। চাল ফেরত দেয়া হয়। শুধু তাই নয় - রেলওয়ে শ্রমিকেরা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চাল নিয়ে যেতে পারবে সেই অনুমতিও দেয়া হয়। জসীমউদ্দীন মন্ডল নেতা হয়ে যান।
            
তারপর এই কাজের জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু তাতে তাঁর কিছু সমস্যা হয়নি। তাঁর যে চাল নিয়ে আসার পারমিট ছিল সেটা ব্যবহার করে তিনি চালের ব্যবসা শুরু করেন। ট্রেনে করে চাল নিয়ে আসেন বিভিন্ন জেলা থেকে  এবং তা বেশি দামে বিক্রি করেন দুর্ভিক্ষের বাজারে। এবং তখনো তিনি শ্রমিক নেতা।
            
১৯৪৯ সালে তিনি খুদ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এই খুদ আন্দোলন হয়েছিল রেলওয়ে শ্রমিকদের চালের বদলে খুদ দেয়াকে কেন্দ্র করে। রেলওয়ে শ্রমিকেরা মুরগি নয়, তারা খুদ খাবে না। তাদের চাল দিতে হবে। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবার অপরাধে তাঁর নামে হুলিয়া বের হয়। তিনি পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন অনেকদিন। তাঁকে সহায়তা করেছেন পার্টির কর্মীরা। একদিন ধরা পড়েন। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত পাঁচ বছর জেলে ছিলেন তিনি। ১৯৪৯ সালে তাঁর চাকরি চলে যায়। তারপর থেকে ধরতে গেলে তিনি পার্টির মাসোহারাতেই চলেছেন। তিনি শ্রমিক না হয়েও শ্রমিকনেতা ছিলেন এবং পার্টির নির্দেশে শ্রমিক সংগঠন করে গেছেন।
            
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন তিনি দেখেছেন খুব কাছ থেকে। এত বড় শ্রমিক নেতা - দেশের স্বাধীনতার আন্দোলন চলছে - সেখানে সম্পৃক্ত হননি সেভাবে এটা খুবই আশ্চর্যের। আসলে সেই সময় কমিউনিস্ট পার্টির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল তা কোথাও তিনি পরিষ্কার করে লেখেননি। সেই ১৯৫২ থেকে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত যে বর্ণনা কমরেড জসীমউদ্দীন দিয়েছেন তা এতটাই বিক্ষিপ্ত আর এতটাই পার্টি নির্দেশিত যে তা পড়ে খুবই হতাশ হতে হয়। জ্যোতিবসুর কথা তিনি লিখেছেন বার বার। মৌলানা ভাসানীর কথা লিখেছেন বার বার। আক্ষরিক অর্থেই তিনি মৌলানা ভাসানীর পা টিপেছেন তাও লিখেছেন, আইয়ুব খানের কথা লিখেছেন, ফাতেমা জিন্নাহ্‌র কথা লিখেছেন, অথচ একটি বারের জন্যও শেখ মুজিব বা বঙ্গবন্ধু শব্দটি উচ্চারণ করেননি। যেন সেই মানুষটি কখনোই ছিল না তাঁর "সংগ্রামী" সময়ে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসুদের আতিথ্যে বেশ আরামেই ছিলেন। স্বাধীনতার পর যথাসময়ে ফিরেও এসেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে। কিন্তু একটি বারও বঙ্গবন্ধুর নাম না নিয়ে, একটি বারের জন্যও মুক্তিযোদ্ধাদের কথা উচ্চারণ না করে "সংগ্রামী স্মৃতিকথা" লেখা চাট্টিখানি কথা নয়। কমরেড জসীমউদ্দীন মন্ডল আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের একবারের জন্যও মুক্তিযোদ্ধা না বলে বলেছেন "প্রতিরোধ বাহিনী"। এটাই যদি তাঁর পার্টির আদেশ হয়ে থাকে - তাহলে বইতে "মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো" অধ্যায়টি না থাকলেই মনে হয় ভালো হতো।

স্বাধীন বাংলাদেশে এসে তিনি একবার মস্কোও গিয়েছিলেন। সেই বর্ণনাও আছে। তাঁর নিজের ছেলে যে বিমান বাহিনীতে যোগ দিয়ে চোরাচালানী হয়েছে এবং সে কারণে তিনি তার ছেলের সাথে কোন সম্পর্ক রাখেননি তাও আছে। কমরেড জসীমউদ্দীন মন্ডল আজীবন পার্টির হুকুম তামিল করে গেছেন অন্ধ আনুগত্যে। বইয়ের শেষের দিকে তিনি ঠিকই লিখেছেন, "সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জীবনের পাওয়া-না-পাওয়ার হিসেব মেলাতে গিয়ে দেখি, পাওয়ার পাল্লাটি শূন্য। বঞ্চনার পাল্লাটি ভারি হয়ে আছে বেশি। তবুও হতাশ হতে মন চায় না। এ যেনো এক কঠিন নেশা, সুতীব্র আকর্ষণ, যা উপেক্ষা করে থাকা কখনো সম্ভব নয়।" - এখানেই সমস্যা আমার মতো সাধারণ পাঠকের। যারা মনে করে কঠিন নেশা মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে, বিপজ্জনক করে তোলে।  সেটা যদি রাজনৈতিক নেশা হয় - তাহলে তো আরো বিপজ্জনক।

Sunday, 19 August 2018

যেন ভুলে না যাই: মৌলবাদীদের হুমকি



বিজ্ঞানী সত্যেন বসুর নাম আইনস্টাইনের নামের সাথে সমান সম্মানে উচ্চারিত হয় পৃথিবীজুড়ে বোস-আইনস্টাইন থিওরি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে পৃথিবীর সবগুলি বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থের মৌলিক কণা 'বোসন' পরিচিত হয়েছে সত্যেন বোসের নামে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন সত্যেন বসু এই সত্যেন বসুর নামে অ্যাকাডেমিক ভবনের নাম রাখতে পেরে আমরা নিজেরাই গৌরবান্বিত হয়েছি  অথচ মৌলবাদীদের চোখে সত্যেন বসু অস্পৃশ্য হিন্দু ছাড়া আর কিছুই নয় সুতরাং তাদের দাবি হলো সত্যেন বসুর নাম রাখা চলবে না এখানে


সিলেটের শাহজালাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রীদের হলের নাম জাহানারা ইমামের নামে রাখার সিদ্ধান্ত হবার পরে মৌলবাদীরা সেখানে পরিকল্পিতভাবে একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছে। ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসে লিখেছিলাম সে প্রসঙ্গে। 


















Saturday, 28 July 2018

বিগ ব্যাং -এর জনক বাইবেল!!!


. রস, আপনি দাবি করছেন বিগ ব্যাংসহ সবকিছুই বাইবেলে আছে। তাহলে ঈশ্বর যে ছয়দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন বলে বাইবেলে বর্ণিত আছে তার কী হলো? বিগ ব্যাং তো একবারই ঘটেছে এবং তা থেকে জীবনের সৃষ্টি হওয়া পর্যন্ত বিলিয়ন বছর লেগে গেছে। আর যে কোন কিছু বৈজ্ঞানিকভাবে আবিষ্কৃত হবার পরেই আপনারা তা বাইবেলে খুঁজে পান, আবিষ্কারের আগে পান না কেন?






ড. হিউ রস














Friday, 13 July 2018

এ আঁধার কাটবেই


২০০২ সালের ২৩ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে ভিসি আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরির আদেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে পুলিশ ঢুকে বেধড়ক পিটিয়েছে ছাত্রীদের। পরের দিন ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদমুখর হলে তাদের উপর আবার হামলা করা হয়। শিক্ষকরাও বাদ যাননি। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সেই সময়ের প্রতিক্রিয়া। 





ভিসি আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরি








Monday, 9 July 2018

প্রাপক: ড. মুহাম্মদ ইউনূস




শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভিনের সন্তান সুমন জাহিদ মারা গেছেন ১৪ জুন ২০১৮। আমরা এখনো নিশ্চিত নই তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে। তিনি কি আত্মহত্যা করেছেন, না কি তাঁকে হত্যা করা হয়েছে আমরা জানি না। চির-প্রতিবাদী সুমন জাহিদ জীবনে প্রতিবাদ করেছেন, লড়াই করেছেন কত ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে। ২০০৭ সালে ডক্টর ইউনূস যখন রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন - সেই সময়ের কিছু ঘটনা ধরা রয়েছে এই পুরনো লেখায় - যেখানে আছে সুমন জাহিদের প্রসঙ্গ।



প্রাপক: ড. মুহাম্মদ ইউনূস
প্রদীপ দেব



স্যার,

বাংলাদেশের সকল নাগরিকের প্রতি দুটো খোলা চিঠি লিখে আপনি নাগরিক শক্তি নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির খোলনলচে পালটে দিয়ে একটি সম্পুর্ণ নতুন ধারার রাজনীতি প্রবর্তনের লক্ষ্যেই আপনার এই প্রয়াস। আপনার এই মহান প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।

আপনার নোবেল পুরস্কার পাবার সাথে সাথে সারা বাংলাদেশ একাত্ম হয়ে আপনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে, আনন্দে গর্বে এভারেস্ট শৃঙ্গে উঠে গেছে, সমস্ত রাজনৈতিক সামাজিক অর্থনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে নোবেল জয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছে। কিন্তু আপনি নিশ্চয় খেয়াল করেছেন মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সে উচ্ছ্বাস বিভক্ত হয়ে গেছে। কারণ নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনূস সবার কাছে সমান গ্রহণযোগ্য হলেও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ডঃ ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতা সবার কাছে সমান নয়।

১১/০২/২০০৭ তারিখে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের প্রতি আপনি চিঠি লিখে আপনার রাজনৈতিক দল গঠন করার পক্ষে বিপক্ষে মতামত চেয়েছেন। আপনি লিখেছেন, আপনার কাছে আমি এই চিঠিটি লিখছি এর জবাবে আপনার কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে একটি চিঠি পাওয়ার আশায়। আপনার মতো মানুষকে ব্যক্তিগত চিঠি লেখার সুযোগ পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। কয়েক লক্ষ মানুষ সে মহান সু্যোগ গ্রহণ করে আপনাকে চিঠি লিখেছেন, ইমেইল করেছেন ও এসএমএস পাঠিয়েছেন। এর সবগুলো আপনি নিজেই পড়েছেন এরকম অবাস্তব চিন্তা করা উচিত নয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় হলে তা আপনার কর্মীরা নিশ্চয় আপনাকে দেখিয়ে থাকবেন।

১৪/০২/২০০৭ তারিখের দৈনিক সংবাদে শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের সন্তান সুমন জাহিদের একটি চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। আপনাকে লেখা এ খোলা চিঠিটি আমার কাছে মনে হয়েছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে আপনার যোগাযোগের ঠিকানাকে মারাত্মক ভুল বলা হয়েছে। 

সুমন জাহিদ লিখেছেন, আপনার পাঠানো খোলা চিঠি যা ১১-২-২০০৭ইং সব দৈনিক পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করেছে, সেখানে ঠিকানায় মারাত্মক ভুল আছে। আপনারা প্রচার করেছেন যোগাযোগের ঠিকানা:

ড. মুহাম্মদ ইউনূস
হাল মারস
৬/ডি, ৬৬ আউটার সার্কুলার রোড
মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।

অথচ আউটার সার্কুলার রোড নামে ঢাকা সিটি করপোরেশন-এর নথিতে এখন আর কোন সড় কের নাম উল্লেখ নেই (এই নামে কোন রোড নেই)। পুরনোটা ছিল ৬৬, বড় মগবাজার। গত ২০-৩-২০০২ইং তারিখে সিটি করপোরেশনের এক আদেশ (২১১১/প্রঃবিঃ/৪০০) বলে মৌচাক মোড় হতে মগবাজার পর্যন্ত রাস্তাটিতে এবং এর উভয় পার্শ্ব শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক নামে নামকরণ করা হয় এবং সেই সঙ্গে উভয় পাশের সব হোল্ডিং নম্বরও পরিবর্তন হয়। আপনাদের বর্তমান হোল্ডিং নং- ৫, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক। এই ভুলটা সম্ভবত অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে থাকতে পারে। তবে এর সংশোধনটা অতি জরুরি। ১৩-১২-২০০৬ইং দৈনিক প্রথম আলো নারীমঞ্চ পাতা পড়লেই এ ব্যাপারে আপনার সব তথ্য পাবেন। আশা করি স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন শহীদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করবেন। 

আশা করেছিলাম এ ব্যাপারটি আপনার নজরে আসবে। কিন্তু আপনার পরের চিঠিতেও (২২/২/২০০৭) যখন আপনি আপনার পুরনো ঠিকানাই ব্যবহার করেছেন বুঝতে পেরেছি সুমন জাহিদ সহ আমরা যে ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি আপনার কাছে তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে কি সুমন জাহিদের দেয়া তথ্য সঠিক নয়?

২২/২/২০০৭ তারিখে নাগরিকের প্রতি আপনি আপনার রাজনৈতিক দল গঠন করার ঘোষণা দিয়ে যে চিঠিটি লিখেছেন সে প্রসঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। যাঁরা আপনাকে রাজনীতিতে যোগদান করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছেন তাঁদের আপনি বলেছেন, আল্লাহই মানুষকে সম্মান দেন। সম্মান নিতে হলে তাঁকেই নিতে হবে। আপনার এরকম যুক্তি মুক্তচিন্তার পরিপন্থি। যে কলুষিত রাজনীতিকে বিশুদ্ধ করার ইচ্ছায় আপনি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছেন সে কলুষিত রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগ দূষিত নেতাই কথায় কথায় আল্লাহর নাম নেন। নিজেদের ব্যর্থতার দায় অলৌকিক সৃষ্টিকর্তার ওপর চাপিয়ে দেয়া অতি পুরনো পদ্ধতি। সে পদ্ধতি আপনাকে মানায় না।

প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে আপনি লিখেছেন, আপনারা যে যে দেশে আছেন সেখানে সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে তুলুন। আপনাদের কর্মস্থলে কিংবা বাড়িতে কার্যালয় স্থাপন করুন। যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করুন। ইন্টারনেটে যোগাযোগ, মতবিনিময়ের এবং মত প্রচারের যত ব্যবস্থা আছে তার সদ্ব্যাবহার করুন। দেশে আপনার নিজের গ্রামে বা শহরে সমর্থক গোষ্ঠী সৃষ্টির জন্য উদ্যোগ নিন। সম্ভব হলে একবার সপ্তাহ বা দুসপ্তাহের জন্য দেশে এসে ঘুরে যান। নিজের এলাকায় গিয়ে সংগঠন সৃষ্টি করে দিয়ে আসুন। তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার নিশ্চয়তা দিন। নিজের এলাকার সৎ ও যোগ্য প্রার্থী চিহ্নিত করে তাদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের নাগরিক শক্তিতে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করুন। আমাদের সঙ্গে ই-মেইলে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখুন এবং আপনাদের কাজের বর্ণনা দিন। আমাদের প্রতি পদে পদে পরামর্শ দিন। সম্ভব হলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় পর্যন্ত চাকরি কিংবা ব্যবসা যে কাজেই থাকুন না কেন, ছুটি নিয়ে দেশে চলে আসুন। আপনার নিজের হাতেই দেশের নতুন রাজনীতি গড়ার গৌরব অর্জন করার এখনই সুযোগ। বোঝা যাচ্ছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মত আপনিও প্রবাসীদের কাজে লাগাতে চাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু তাদের ভোটাধিকার প্রশ্নে আপনারও মাথাব্যথা নেই। ভোট দিতে হলে প্রবাসীদের দেশে গিয়ে ভোটার হতে হবে, ভোট দিতে হবে। আপনি লিখেছেন কর্মস্থলে আপনার রাজনৈতিক দলের কার্যালয় স্থাপন করার জন্য। কাজটি কতটুকু সমর্থনযোগ্য?

আপনার দলের হয়ে কাজ করার জন্য দীর্ঘ ছুটি নিয়ে দেশে চলে যেতে আহবান করেছেন প্রবাসী কর্মজীবীদের। রাজনীতি করার জন্য ছুটি চাইলেই কি দিয়ে দেবেন কর্তৃপক্ষ? যাঁরা দেশের ভেতরেও এলাকার বাইরে কর্মরত আছেন তাঁদের উদ্দেশ্যেও আপনি লিখেছেন, সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্র থেকে কয়েক মাস দীর্ঘ বিরতি নিয়ে বাড়ি চলে যান। দেশে বা বিদেশে কোথাও কি সম্ভব এটা? আজ গ্রামীণ ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা যদি বলেন যে রাজনৈতিক কাজের জন্য দীর্ঘ ছূটি চাই দেয়া হবে তাঁকে? নাগরিক শক্তির কাজে হয়তো দেয়া হতে পারে। কিন্তু তিনি যদি হয়ে থাকেন আওয়ামি লিগের বা বিএনপির সমর্থক?

এখানেই নোবেল বিজয়ী আর রাজনীতিবিদের পার্থক্য। রাজনীতি করতে গেলে যে অনেক ওজনহীন কথা বলতে হয়, বলা হয়ে যায় তা তো আমরা আপনার দল গঠন প্রক্রিয়া শুরু হতে না হতেই দেখতে পাচ্ছি। আমরা এখনো জানিনা আপনার আদর্শের সাথে অন্যান্য দলের আদর্শের পার্থক্য কোথায়। সব দলেই ভালো ভালো আদর্শের কথা থাকে। সে কথা কেউ রাখেনা। আপনি আপনার কথা রাখবেন এ আশা আমাদের।

একটা ছোট্ট প্রশ্ন আমাদের মনে জেগেছে। তা হলো ২১শে ফেব্রুয়ারি দেশে থেকেও আপনি শহীদ মিনারে যাননি। কেন? 


০২ মার্চ, ২০০৭।
ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া।

Latest Post

ফ্ল্যাশ রেডিওথেরাপি: ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা

  যে রোগের কাছে পৃথিবীর মানুষ সবচেয়ে বেশি অসহায় – তার নাম ক্যান্সার। প্রতি বছর ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে। ধারণা করা হ...

Popular Posts