Showing posts with label Nobel Prize. Show all posts
Showing posts with label Nobel Prize. Show all posts

Monday, 9 December 2024

কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র ও যন্ত্রের লেখাপড়া

 



মানুষ যখন থেকে বুঝতে পেরেছে যে তাদের মগজে বুদ্ধি আছে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে বুদ্ধির পরিমাণ এবং তীক্ষ্ণতা বাড়ানো যায় – তখন থেকেই জানার চেষ্টা করছে বুদ্ধিমত্তা ব্যাপারটি আসলে কী। মানুষ গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করছে – আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে এবং যান্ত্রিক মস্তিষ্ক বানিয়ে তাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালানো যায় কীভাবে।             

গত আড়াই হাজার বছর ধরে ক্রমাগত বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা এবং গবেষণা কাজে লাগিয়ে মানুষ তার জীবনযাপন আরামদায়ক ও নিরাপদ করার জন্য যা যা লাগে তার প্রায় সবকিছুই উদ্ভাবন করে ফেলার পরও সন্তুষ্ট নয়। যন্ত্র চালানোর কাজটিও এখন যন্ত্রের হাতে তুলে দিচ্ছে তারা।

যখন থেকে আমাদের আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তি সহজলভ্য হয়ে গেছে তখন থেকেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন দ্রুত বদলে যেতে শুরু করেছে। এখন আমরা শুধুমাত্র যে শারীরিক কাজের জন্য যন্ত্রনির্ভর হয়ে উঠছি তা নয়, মানসিক কাজ – যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াতেও যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। মানুষ এখন যন্ত্রকে বুদ্ধিমান প্রাণির মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা তৈরি করে দিতে শুরু করেছে। আর যন্ত্র যখন বুদ্ধিমান প্রাণির মতো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হচ্ছে তখন সেই বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারটি হয়ে দাঁড়াচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা – বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।

আমাদের মগজে স্নায়ুকোষগুলি যেমন প্রাকৃতিকভাবেই কাজ করতে শুরু করে এবং অভিজ্ঞতা থেকে অর্জিত স্মৃতি জমা রেখে পরবর্তীতে সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে – যন্ত্রের মধ্যেও সেরকম ক্ষমতা তৈরি করার লক্ষ্যে আজ থেকে ৭৫ বছর আগে শুরু হয়েছে যন্ত্রকে শেখানোর প্রক্রিয়া – মেশিন লার্নিং। যদিও সেই ১৯৫০-এর দশকের বিজ্ঞানীদের ধারণাও ছিল না যে কম্পিউটার এরকম সহজ হয়ে মানুষের হাতে হাতে ঘুরবে – তবুও সেসময় তাত্ত্বিক গবেষণা শুরু করে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা – কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে যন্ত্রের “মগজ” তৈরি করা যায়।

এখন এই একবিংশ শতাব্দীর সিকিভাগ অতিক্রান্ত হবার আগেই আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালিত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং-এর দ্বারা। এখন পৃথিবীতে আটশ কোটি মানুষের জন্য দুই হাজার কোটিরও বেশি স্মার্ট ডিভাইস চালু আছে। আগামী বছরের মধ্যে এই সংখ্যা তিন হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৬৫ হেক্সাবাইট (৪৬৫ মিলিয়ন টেরাবাইট) ডেটা তৈরি হচ্ছে এই যন্ত্রগুলি থেকে। এই বিপুল পরিমাণ ডেটা সংরক্ষণ করে সেগুলি বিশ্লেষণ করার পর সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া মানুষের পক্ষে ক্রমেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু মানুষের পক্ষে অসম্ভব কাজগুলি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সামলাতে কাজে লেগে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন অসংখ্য যন্ত্র – যা এখন আমাদের যাতায়াতব্যবস্থা, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, এমন কি রাজনীতিও সামলাচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কম্পিউটার কীভাবে এসব করছে? কীভাবে এক কম্পিউটার আরেক কম্পিউটারের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করছে, কীভাবে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তরিত হচ্ছে, কীভাবে ডেটা থেকে ছবি তৈরি করছে? কী সেই মৌলিক প্রযুক্তি – যার ফলে আর্টফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং সম্ভব হচ্ছে? এবছরের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কার সেই প্রযুক্তিকে সম্মান দিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং-এর মতো দুনিয়া বদলে দেওয়া প্রযুক্তির উদ্ভাবনে মৌলিক অবদান রেখেছেন এরকম দুজন বিজ্ঞানী – প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন হপফিল্ড এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফরি হিনটনকে ২০২৪ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে।


জন হপফিল্ড


জন জোসেফ হপফিল্ডের জন্ম ১৯৩৩ সালের ১৫ জুলাই আমেরিকার শিকাগো শহরে। তাঁর বাবার নামও ছিল জন হপফিল্ড। সিনিয়র জন হপফিল্ডও ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। পোলান্ড থেকে তিনি ছোটবেলাতেই চলে এসেছিলেন আমেরিকায়। পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপকের সন্তান হবার সুবাদে পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল জন হপফিল্ডের। ১৯৫৪ সালে ফিজিক্স মেজর নিয়ে তিনি পেনসিলভেনিয়ার সোয়ার্থমোর কলেজ থেকে বিএ পাস করে কর্নেল ইউনিভার্সিটির ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট থেকে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি করেন ১৯৫৮ সালে। তাঁর পিএইচডির গবেষণাক্ষেত্র ছিল সলিড স্টেট ফিজিক্স। তাঁর পিএইচডি থিসিসে তিনি একটি নতুন কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন – যা পরবর্তীতে তাঁর নামে ‘হপফিল্ড ডাইইলেকট্রিক’ মডেল হিসেবে পরিচিতি পায়।

পিএইচডি অর্জনের পর ১৯৫৮ সালেই তিনি যোগ দেন বেল ল্যাবরেটরিতে। সেখানে হিমোগ্লোবিনের গঠন আবিষ্কারের জন্য গবেষণা করছিল যে গ্রুপ, সেই গ্রুপে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৬১ পর্যন্ত সেখানে কাজ করার সময় তিনি জীববিজ্ঞানে – বিশেষ করে ফিজিওলজিতে পদার্থবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক প্রয়োগের সম্ভাবনা খুঁজে পান। ১৯৬১ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন কন্ডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্স পড়ানো ও গবেষণায়। ১৯৬৪ সালে তিনি চলে যান প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন।

প্রিন্সটনে তিনি কন্ডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্সের গবেষণার পাশাপাশি শারীরবিজ্ঞানেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। কন্ডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্সের গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৬৯ সালে তিনি ‘অলিভার বার্কলে পুরষ্কার’ পান।

জীববিজ্ঞান ও শারীরবিজ্ঞানের গবেষণার দিকে তাঁর আগ্রহ জন্মাতে থাকে – শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যাবলি পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় দেখে। শরীরের কোষগুলি ক্রমাগত বিভাজিত হচ্ছে। কোষ বিভাজনের সময় কোষের ডিএনএ প্রথমে ঠিক দ্বিগুণ হয়ে যায় – পরে দুই ভাগ হয়ে আলাদা দুটো কোষে পরিণত হয়। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যদি কোন ত্রুটি থাকে তাহলে কোষ বিভাজনের ফলে ত্রুটিযুক্ত কোষের পরিমাণ বাড়তে থাকে – ফলে শরীরে জিনগত ত্রুটি দেখা দেয়। জন হপফিল্ড এই ত্রুটি শনাক্তকরণের একটি প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন – যার নাম দেন ‘কাইনেটিক প্রুফরিডিং’।

পদার্থবিজ্ঞান থেকে তাঁর গবেষণার আগ্রহ ক্রমেই সরে যাচ্ছিল জীববিজ্ঞান ও রসায়নের দিকে, বিশেষ করে শারীরবিজ্ঞান ও প্রাণরসায়নের দিকে। ১৯৮০ সালে তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে চলে গেলেন ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (ক্যালটেক) কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি ডিপার্টমেন্টে। এখানেই ১৯৮২ সালে তিনি প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম নিউরোসায়েন্স গবেষণাপত্র ‘নিউরাল নেটওয়ার্ক্স অ্যান্ড ফিজিক্যাল সিস্টেমস উইথ ইমারজেন্ট কালেক্টিভ কম্পিউটেশানাল অ্যাবিলিটিজ’। খুলে যায় কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র তৈরির পথ। প্রিন্সটনে থাকতে তিনি জৈব অণুর মধ্যে ইলেকট্রন আদান-প্রদানের তত্ত্ব নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। ক্যালটেকে এসে মস্তিষ্কের নিউরনের ভেতরও ইলেকট্রনিক তথ্য আদান-প্রদানের অনুরূপ একটি কার্যকর তত্ত্ব তিনি দাঁড় করান – যা পরবর্তীতে তাঁর নামে বিখ্যাত হয় – ‘হপফিল্ড নেটওয়ার্ক’ হিসেবে। ক্যালটেকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন স্নায়ুতন্ত্রের সাথে কম্পিউটারের যান্ত্রিক সমন্বয়ের পিএইচডি গবেষণার নতুন ক্ষেত্র।

১৯৯৭ সালে ক্যালটেক থেকে আবার ফিরে এলেন প্রিন্সটনে। এবার মলিকিউলার বায়োলজি ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর হিসেবে। মূল পিএইচডি গবেষণা পদার্থবিজ্ঞানের হলেও তিনি জীববিজ্ঞানে পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্বের ব্যাপক প্রায়োগিক ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছেন। প্রিন্সটন থেকে অবসর নেয়ার পরেও এখনো তিনি এমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত আছেন। ২০০১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তিনি অনেকগুলি গবেষণা পুরষ্কার পেয়েছেন। ২০০১ সালে পেয়েছেন ডিরাক মেডেল, ২০০২ সালে হ্যারোল্ড পেন্ডার অ্যাওয়ার্ড, ২০০৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড অব সায়েন্স, ২০১৯ সালে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন মেডেল, ২০২২ সালে বোলটজম্যান মেডেল এবং এবছর ২০২৪ সালে পেলেন পদার্থবিজ্ঞানের সর্বোচ্চ পুরষ্কার – নোবেল পুরষ্কার।

জন হপফিল্ডের উদ্ভাবিত ‘হপফিল্ড নেটওয়ার্ক’ খুব দক্ষতার সাথে কাজে লাগিয়ে মেশিন লার্নিং-এর পথ সুগম করে এবছর অন্য যে বিজ্ঞানী পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জেফরি হিনটন। জেফরি হিনটন ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের গডফাদার’ হিসেবে খ্যাতিমান হয়ে পদার্থবিজ্ঞানের সর্বোচ্চ পুরষ্কার নোবেল পুরষ্কার পেলেও মজার ব্যাপার হলো – তাঁর পদার্থবিজ্ঞানের কোন ডিগ্রি নেই।


জেফরি হিনটন

জেফরি এভারেস্ট হিনটনের জন্ম ইংল্যান্ডের উইম্বলডনে ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর। তাঁর মধ্যনাম এভারেস্ট এসেছে তাঁর পূর্বপুরুষ জর্জ এভারেস্টের নাম থেকে যাঁর নামে এভারেস্ট পর্বতের নাম দেয়া হয়েছে। ব্রিস্টলের ক্লিফটন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করে জেফরি কেমব্রিজের কিংস কলেজে ভর্তি হলেন স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা করার জন্য। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোন বিষয়ের প্রতিই আগ্রহ অনুভব করছিলেন না। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের কয়েকটি গুচ্ছ বিষয় – ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি নিয়ে পড়লেন কিছুদিন। ভালো লাগলো না। ছেড়ে দিয়ে ভর্তি হলেন শিলকলার ইতিহাসে। সেটাও ভালো লাগলো না। কিছুদিন দর্শন শাস্ত্রের ক্লাস করলেন। তাও ভালো লাগলো না। শেষ পর্যন্ত কোনো রকমে পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করলেন ১৯৭০ সালে। এর আট বছর পর ১৯৭৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন। তাঁর থিসিসের বিষয় ছিল ‘রিলাক্সেশান অ্যান্ড ইটস রোল ইন ভিশান’।

পিএইচডি করার পর জেফরি হিনটন কিছুদিন সাসেক্স ইউনিভার্সিটিতে পোস্টডক্টরাল গবেষণা করলেন, ইংল্যান্ডের মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের অ্যাপ্লাইড সাইকোলজি বিভাগেও কাজ করলেন কিছুদিন। কিন্তু ইংল্যান্ডে গবেষণার ফান্ড না থাকাতে চাকরির উদ্দেশ্যে তাঁকে আমেরিকায় পাড়ি দিতে হলো ১৯৮২ সালে। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত তিনি কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা ও গবেষণা করলেন। ১৯৮২ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে হপফিল্ড নেটওয়ার্ক আবিষ্কার করেছেন প্রফেসর জন হপফিল্ড। জেফরি হিনটন এই আর্টিফিসিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক কাজে লাগালেন তাঁর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর গবেষণায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপুল সম্ভাবনার দরজা খুলে গেল। এই সম্ভাবনার সবটুকুকে সামরিক শক্তি অর্জনের কাজে লাগাতে এর গবেষণায় অর্থায়ন করা শুরু করলো আমেরিকান সামরিক বাহিনি।

বিজ্ঞানকে যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করার ব্যাপারকে ভীষণ নীতিবিরুদ্ধ বলে বিশ্বাস করেন প্রফেসর হিনটন। তিনি দেখলেন আমেরিকায় থাকলে তাঁকে গবেষণার জন্য সামরিক বাহিনীর অর্থপুষ্ট প্রজেক্টে কাজ করতে হবে। তাই তিনি আমেরিকা থেকে কানাডা চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে প্রফেসর হিসেবে যোগ দিলেন। সেই থেকে এখনো তিনি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত। পাশাপাশি ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি গুগলের বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন গুগলের ডিপ-লার্নিং প্রকল্পে – বিশেষ করে ইমেজ রিকগনিশান এবং ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং ডেপেলপ করার কাজে। কিন্তু তিনি যখন দেখলেন মানুষের চেয়েও ক্রমশ শক্তিমান হয়ে উঠছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এবং এখনো কঠোর আইন তৈরি হয়নি মেশিনের হাত থেকে মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা রক্ষার - ২০২৩ সালের মে মাসে তিনি গুগল থেকে পদত্যাগ করলেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান যদিও তাঁর হাত ধরে হয়েছে, যদিও তিনি ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের গডফাদার’, মেশিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে মানুষের বুদ্ধিমত্তাকেও টেক্কা দিতে পারে বলে সন্দেহ করছেন তিনি। তাঁর গবেষণার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি নোবেল পুরষ্কার পাবার পরেও তাঁর নীতিগত অবস্থানের বদল হয়নি।

নোবেল পুরষ্কারের আগে আরো অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন প্রফেসর হিন্টন। ২০০১ সালে পেয়েছেন রুমেলহার্ট প্রাইজ, ২০১৪ সালে পেয়েছেন ফ্র্যাংক রোজেনব্লাট পুরষ্কার, ২০১৬ সালে পেয়েছেন জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল মেডেল, ২০১৮ সালে পেয়েছেন টুরিং পুরষ্কার, ২০২১ সালে পেয়েছেন ডিকসন পুরষ্কার, ২০২২ সালে স্পেন সরকারের প্রিন্সেস অব অ্যাস্ট্রিয়াস পুরষ্কার। রয়েল সোসাইটির ফেলো হয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। ২০১৮ সালে পেয়েছেন কানাডা সরকারের অর্ডার অব কানাডা পুরষ্কার।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং-এর পুরো ব্যাপারটাকেই আমরা অনেকে কম্পিউটার প্রযুক্তিবিদদের ব্যাপার বলে ধরে নিয়ে থাকি। তাই বিশুদ্ধ পদার্থবিজ্ঞানের অনেকেই মনে করছেন এবারের পদার্থবিজ্ঞানের পুরষ্কারটিতে সরাসরি পদার্থবিজ্ঞানের অবদান কম। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল কমিটি  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং-এর বর্তমান পর্যায়ে আসার পেছনে যে মূল আবিষ্কার কাজ করেছে তা যে মৌলিক পদার্থবিজ্ঞান থেকে উদ্ভূত হয়েছে তাকেই সম্মান করেছে।

একথা সত্য যে কম্পিউটার প্রযুক্তির এত অভাবনীয় উন্নতি না হলে যন্ত্রের ভেতর চিন্তাশক্তি ঢুকিয়ে দেয়া সম্ভব হতো না। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিনের গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ফসল।

মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করতে পারবে এরকম কৃত্রিম যান্ত্রিক মস্তিষ্ক তৈরির ইচ্ছে আরো অনেক আগে থেকেই বিজ্ঞানীদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্কের মতো করে আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে কম্পিউটারের জন্য। এটা করতে গিয়ে অনেকগুলি ধাপ অতিক্রম করতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। ১৯৪০-এর দশকে কানাডার স্নায়ুবিজ্ঞানী ডোনাল্ড হেব তত্ত্ব দিয়েছিলেন আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন নেটওয়ার্ক বাড়িয়ে কমিয়ে আমাদের শিখন ক্ষমতা বাড়ানো-কমানো যায়। এই তত্ত্বকে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা কাজে লাগিয়েছেন আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক বা কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে।

আমাদের স্নায়ুতন্ত্র যেমন নিউরন দ্বারা তৈরি, কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র তৈরি হয় ইলেকট্রনিক নোডের মাধ্যমে। এই নোডগুলি একে অন্যের সাথে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সংযুক্ত থাকে। শেখার ক্ষেত্রে যেভাবে আমাদের স্নায়ুর সংযোগগুলির উদ্দীপনার হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে – কৃত্রিম নোডগুলির সংযোগকেও প্রয়োজনীয় ট্রেনিং – বা কোডের মাধ্যমে বাড়ানো কিংবা কমানো যায়। ফলে আমাদের মস্তিষ্ক যেভাবে নতুন কিছু শেখে এবং মনে রাখে, কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্রও সেভাবে নতুন কিছু শিখতে পারে এবং স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারে।

তাত্ত্বিকভাবে এরকম সম্ভাবনা দেখলেও বিজ্ঞানীরা ১৯৮০র দশকের আগপর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারেননি যে বাস্তবে এরকম কিছু ঘটবে। ১৯৮২ সালে জন হপফিল্ড যখন তাঁর ‘হপফিল্ড নেটওয়ার্ক’ উদ্ভাবন করলেন – দেখা গেল কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র মস্তিষ্কের নিউরনের মতোই কাজ করতে পারে। তিনি তাঁর নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন তাঁর সলিড স্টেট ফিজিক্সের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে। চৌম্বকীয় পদার্থের পারমাণবিক ঘূর্ণন বা অ্যাটমিক  স্পিন পদার্থের পরমাণুকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুম্বকে পরিণত করতে পারে। একটি চুম্বকের ঘূর্ণন তার পার্শবর্তী চুম্বকের ঘূর্ণনকে প্রভাবিত করে। এভাবে সঠিক সংযোগ (ট্রেনিং) এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক নোডের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।


হপফিল্ড নেটওয়ার্ক


হপফিল্ড নেটওয়ার্কে নির্দিষ্ট সংখ্যক নোড থাকে যারা একে অপরের সাথে যুক্ত। নোডগুলির মধ্যে ইনপুট তথ্য হিসেবে একটি ছবি দেয়া হয় – যেখানে প্রতিটি নোড একটি নির্দিষ্ট মান 0 অথবা 1 ধরে রাখতে পারে। এখানে তথ্য ধরে নেয়া যায় 0 যদি কালো হয়,1 হবে সাদা – যেভাবে বাইনারি পদ্ধতি কাজ করে। নেটওয়ার্কের সংযোগ তখন ঠিক করে নেয়া হয় স্পিন-এনার্জির হিসেবের ভিত্তিতে। এখন আরেকটি প্যাটার্নের ছবি যদি এই নেটওয়ার্কে যোগ করা হয় – তখন আগের ছবির তথ্যের সাথে এই নতুন প্যাটার্ন মিলিয়ে দেখে। যদি কোন একটা নোডের মানে তারতম্য দেখা দেয় – তখন নোডের রং বদলে যায়। এভাবে নতুন প্যাটার্নটি পুরনো প্যাটার্নের সাথে মিলিয়ে নেয়া যায়। এভাবে নেটওয়ার্কে অনেকগুলি ছবি একের পর এক ঢুকিয়ে সবগুলিকে একসাথে রেখে দেয়া যায়। নেটওয়ার্কের সংযুক্ত স্মৃতি বা এসোসিয়েটেড মেমোরি হিসেবে কাজ করতে পারে এই তথ্যগুলি। অসম্পূর্ণ তথ্য বা আংশিক তথ্য দিলেও এই নেটওয়ার্ক সংরক্ষিত স্মৃতি থেকে পুরো তথ্য বের করে দিতে পারে।

একই রকম ছবির সাথে ছবির মিল খুঁজে বের করতে পারা আর ছবি চিনতে পারার মধ্যে পার্থক্য আছে। শিশুরা যেভাবে নতুন জিনিস দেখতে দেখতে মনে রাখে এবং পরবর্তীতে আবার দেখলে মনে করে বলতে পারে কোন্‌টা কী, সেই পদ্ধতিতে কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্রকে কি শেখানোর ব্যবস্থা করা যায়? এই ভাবনা থেকে স্ট্যাটিস্টিক্যাল ফিজিক্সের তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে জেফরি হন্টন উদ্ভাবন করেছিলেন বোল্টজম্যান মেশিন।

জন হপফিল্ড যখন তাঁর নিউরাল নেটওয়ার্কের অ্যাসোসিয়েটেড মেমোরি সংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন, জেফরি হনটন সেই সময় ছিলেন কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটিতে। তিনি হপফিল্ড নেটওয়ার্কে স্ট্যাটিস্টিক্যাল ফিজিক্স প্রয়োগ করার কথা ভাবলেন। গ্যাসের অণুগুলির প্রত্যেকটির ধর্ম যেমন আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষা না করেও কিছু সামগ্রিক ধর্ম পরীক্ষা করে গ্যাসের সামগ্রিক পরিবর্তন শনাক্ত করা যায় – যেমন গ্যাসের চাপ কিংবা তাপ; সেরকম কোন সূত্র প্রয়োগ কি করা যায় নিউরাল নেটওয়ার্কের মেমোরির ক্ষেত্রে? স্ট্যাটিস্টিক্যাল ফিজিক্সে বোল্‌টজম্যান সমীকরণ প্রয়োগ করে হিনটন একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে নাম দিলেন ‘বোল্টজম্যান মেশিন’। ১৯৮৫ সালে এসংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হলো।


বোল্টজম্যান মেশিন

বোল্‌টজম্যান মেশিন হলো মেশিন লার্নিং-এর একেবারে প্রাথমিক মডেল। এতে শুরুতে দুই ধরনের নোড থাকে। এক ধরনের নোডে তথ্য দেয়া হয় – যাদেরকে বলা হয় দৃশ্যমান নোড। অন্য ধরনের নোড একটি অদৃশ্য স্তর তৈরি করে। অদৃশ্য নোডগুলিও পুরো নেটওয়ার্কের অংশ। দৃশ্যমান নোডগুলির মধ্যে যতভাবে সংযোগ ঘটানো সম্ভব সবগুলি একের পর এক স্মৃতিতে জমা করে দেয়া হয়। কী কী সংযোগ সম্ভব নয়, তার একটা শিখিয়ে দিলে (স্মৃতিতে রেখে দিলে) বাকি অসম্ভব সংযোগ গুলি এই মেশিন শিখে নিতে পারে। বোল্টজম্যান মেশিন হলো সম্ভাব্য সব প্যাটার্ন খুঁজে বের করার নেটওয়ার্ক। আমরা যেমন পরিচিত কারো চেহারার সাথে অপরিচিত কোন মানুষের চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য দেখলেও চিনতে পারি – সেভাবে হিনটনের নেটওয়ার্ক অনেকগুলি প্যাটার্নের ভেতর থেকে সাদৃশ্য-অসাদৃশ্য খুঁজে বের করতে পারে।

সেই ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ তে যে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক ও মেশিন লার্নিং পদ্ধতির সূচনা করেছিলেন প্রফেসর জন হপফিল্ড ও জেফরি হিনটন – তা বিপুল বিপ্লব ঘটিয়ে দেয় ২০১০ সালের পর থেকে। এখন প্রতিদিন যে পরিমাণ ডেটা তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে থেকে অনেক ডেটা ব্যবহার করা হচ্ছে মেশিন লার্নিং-এ। কম্পিউটারগুলি প্রতিদিনই অনেকগুণ শিক্ষিত হচ্ছে আগেরদিনের চেয়ে। ১৯৮২ সালে হপফিল্ড তাঁর নেটওয়ার্কে মাত্র তিরিশটি নোড ব্যবহার করেছিলেন। সবগুলি নোড একে অপরের সাথে সংযুক্ত হলে মোট ৪৩৫টি সংযোগ হয়। এই নোডগুলির বিভিন্ন মান মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শ’র মতো প্যারামিটারের হিসেব রাখতে গিয়েই তাঁর সেই সময়ের কম্পিউটার হাঁপিয়ে উঠেছিল। তিনি মাত্র একশটি নোডের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়েও পারেননি কম্পিউটারের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে। আজকের নিউরাল নেটওয়ার্কগুলি ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন প্যারামিটার সামাল দিচ্ছে।

২০০৬ সালে প্রফেসর হিনটন উদ্ভাবন করেছেন ডিপ লার্নিং ও ডিপ বিলিফ নেটওয়ার্ক। বহুমাত্রিক নিউরাল নেটওয়ার্ক-কে প্রশিক্ষণ দিয়ে মেশিন-লার্নিং বহুগুণ শক্তিশালী করার ব্যাপারে অবদান রেখেছেন বলেই প্রফেসর হিনটনকে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর গডফাদার’ বলেন সবাই।

জন হপফিল্ড এবং জেফরি হিনটনের দেখানো পথ অনুসরণ করে এখন আমাদের হাতে এসে গেছে চ্যাটজিপিটির মতো ট্রান্সফর্মার মডেল। এখন আমাদের প্রযুক্তির অনেকটাই স্বয়ংক্রিয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের জীবনকে অনেকটাই সহজ করে দিচ্ছে।

কিন্তু একই সাথে পরোক্ষভাবে আমাদের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতেও শুরু করেছে। এখন একটা ম্যাসেজ টাইপ করতে গেলেও শব্দের জোগান দিচ্ছে মেশিন – আমরা বেশিরভাগ সময় সেই শব্দগুলিই ব্যবহার করছি। কিন্তু অন্যদিকে যেসব গবেষণা আমাদের পক্ষে মেশিনের সাহায্য ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়, যেমন মহাবিশ্বের আন্তনাক্ষত্রিক বিপুল আয়তনের ডেটা বিশ্লেষণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে করে ফেলার দিকে এগোচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এবছরের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কার অদূর ভবিষ্যতে জীবপদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার পুরোমাত্রায় কাজ শুরু করলে মেশিন লার্নিং অন্যমাত্রা পাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তখন হয়তো আমরা ক্যান্সারের মতো রোগের সঠিক কারণ খুঁজে বের করে তাকে প্রতিরোধ করতেও সক্ষম হবো।

 

তথ্যসূত্র

১। www.nobelprize.org

২। মাইকেল নেগনেভিতস্কি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এ গাইড টু ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমস, এডিসন-ওয়েসলি, ইংল্যান্ড ২০০৫।

৩। সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান, ২৫ জুন ২০২৪।

৪। ইথেম আলপ্যায়দিন, মেশিন লার্নিং, এম আই টি প্রেস, কেমব্রিজ, ২০২১।

৫। মার্গারেট বোডেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যা ভেরি শর্ট ইন্ট্রোডাকশান, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৮।


============

বিজ্ঞানচিন্তা অক্টোবর ২০২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত



Sunday, 12 May 2024

Dorothy Crowfoot Hodgkin

 




Look closely at the fingers of the person in the picture. Her fingers had not bent in this way due to age; she had been suffering from chronic rheumatoid arthritis since she was twenty-one years old. Since then, she has had to endure intense pain and gradually worsening deformities in her fingers and toes. She, Dorothy Crowfoot Hodgkin, has been conducting research with these pains and deformities over time. She discovered the structure of penicillin, the chemical structure of vitamin B12, and the structure of insulin using X-ray crystallography. If we think about how many millions of people on Earth are benefiting from her discoveries, we can understand the impact.

British scientist John Crowfoot and botanist Grace Crowfoot's first child, Dorothy, was born on May 12, 1910, in Cairo, Egypt, where they were under British rule at that time. Her father was working at the Ministry of Education in Egypt. When Dorothy was four years old, the First World War broke out. Her parents left her in England while they went to work in Egypt. Dorothy stayed with a nanny in England for four years without her parents. That's when she became independent.

Dorothy grew up with a keen interest in scientific inquiry from a young age. Her parents encouraged her equally. Chemist William Henry Bragg and his son Lawrence Bragg discovered X-ray crystallography, winning the Nobel Prize in 1915. At the age of eleven, Dorothy became deeply interested in this subject after reading William Henry Bragg's book on crystallography. At that time, girls were not allowed to study science at school. Girls were only allowed to study domestic science. Dorothy and another classmate, Nora, managed to get permission to attend chemistry classes.


Young Dorothy



She enrolled at Somerville College, Oxford University, in 1928 and graduated with a degree in chemistry in 1932. At that time, the most renowned professor of crystallography in England was John Desmond Bernal of the University of Cambridge. Most science professors at Cambridge University were men. However, some teachers began to give opportunities for girls to engage in scientific research. Professor Bernal was one of them. Impressed by Dorothy's enthusiasm and her undergraduate results, he offered her the opportunity to conduct research in his lab from 1932 to 1934.

A few years ago, she was diagnosed with rheumatoid arthritis. Severe pain and gradual deformities in her fingers and toes began. However, Dorothy was not one to succumb to any pain. Treatment and research went hand in hand. In 1934, X-ray was used in Bernal's lab to take pictures of proteins – to understand if biological compounds could crystallize.

Obtaining the necessary knowledge of crystallography from Professor Bernal, Dorothy came to Oxford University in 1934. Alongside her studies, she began her own PhD research. She started researching the three-dimensional structure of insulin. In 1937, she obtained her PhD from Oxford University. She spent her entire academic life at Oxford. Despite being a faculty member at Oxford, she did not have the opportunity to attend any research committee meetings due to her gender until after the end of the Second World War.

In 1937, she married historian Thomas Hodgkin. After marriage, Dorothy Crowfoot became Dorothy Crowfoot Hodgkin, but everyone started calling her Dorothy Hodgkin officially.

Due to the start of the Second World War, the need for penicillin for wounded soldiers increased significantly. However, the three-dimensional structure of penicillin had not yet been discovered. Therefore, to make penicillin more effective, Dorothy started researching its structure, setting aside her work on insulin. It took Dorothy Hodgkin four years of relentless research to discover the three-dimensional structure of penicillin in 1948. After that, she started researching the three-dimensional structure of vitamin B12. After eight years of relentless research, in 1957, she discovered the structure of vitamin B12. For this discovery, Dorothy Hodgkin won the Nobel Prize in Chemistry in 1964.

After discovering the structure of vitamin B12, Dorothy resumed her work on the 3-dimensional structure of insulin. It took her thirty-four years of relentless research to discover the highly complex 3-dimensional structure of insulin. The work she started in 1935 finally succeeded in 1969. The 3-dimensional structure of insulin was discovered.

Dorothy Hodgkin worked throughout her life for science, alongside her work for peace. Another Nobel laureate, Linus Pauling, who won the Nobel Prize for Peace after his work in chemistry, collaborated with Dorothy Hodgkin for world peace. For this, she received several international awards, including the Lenin Peace Prize.

Dorothy Hodgkin and her husband were both very international. In October 1964, when news of the Nobel Prize reached them, Dorothy was in Ghana. Her husband was then the director of the Institute of African Studies at the University of Ghana. Their daughter, Elizabeth, taught at a school in Zambia, while their son, Tobias, worked in Delhi.

Dorothy didn't just confine herself to research. Alongside her lifelong commitment to science, she was active in anti-war movements and advocated for nuclear disarmament.

On July 29, 1994, Dorothy passed away.

Thursday, 21 December 2023

অ্যাটোসেকেন্ড পদার্থবিজ্ঞান

 


পূরবীর শেষ বসন্ত কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “সময় রয়েছে বাকি; সময়েরে দিতে ফাঁকি, ভাবনা রেখো না মনে কোনো।“ কিন্তু কবি যতই নিশ্চিন্ত আশ্বাসের বাণী দিন, ভাবনা রয়ে যায়। বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞানে সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয় হলো – সময়। এখানে এখন ক্ষুদ্রতম সময়েরেও ফাঁকি দেয়া দিনে দিনে অসম্ভব হয়ে উঠছে। ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম বইতে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং দেখিয়েছেন মহাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক বিবর্তন আর সময়ের ইতিহাস সমতুল। সময় এবং স্থানের পারস্পরিক জটিল সম্পর্কের ভেতর থেকে আইনস্টাইন বের করে এনেছেন আপেক্ষিকতার তত্ত্ব – যা বদলে দিয়েছে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি। সময় সম্পর্কে আমরা যতই জানছি – ততই জটিল হয়ে যাচ্ছে সময়ের সংজ্ঞা, সময়ের সমীকরণ। 

সময়ের ধারণা কীভাবে ধরা দেয় আমাদের মনে? আমরা আমাদের পারিপার্শ্বিক ঘটনার পরিবর্তনের সাথে তুলনা করে সময় বোঝার চেষ্টা করি। যেমন হৃৎপিন্ডের একটি স্পন্দনের সময় – মোটামুটি এক সেকেন্ড ধরা যায়। দ্রুত ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনায় আমরা অনেক সময় বলে থাকি এক নিমেষেই ঘটে গেল সব। বাংলায় এই নিমেষ হলো চোখের পলক ফেলতে যতটুকু সময় লাগে। চোখের পলক ফেলতে গড়ে একশ থেকে দেড়শ মিলিসেকেন্ড সময় লাগে, অর্থাৎ ধরা যায় এক সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ সময় লাগে। নিমেষের হিসেবে ধরলেও এক সেকেন্ড অনেক লম্বা সময়। 

কোনো একটি ঘটনা ঘটতে কতক্ষণ সময় লাগে তা স্বাভাবিক নিয়মে হিসেব করতে হলে আমাদের ঘটনাটা ঘটতে দেখা চাই। আবার যেকোনো কিছু সরাসরি দেখার জন্য আমাদের আলোর দরকার। কিন্তু আলো থাকলে এবং আমাদের চোখের সামনে ঘটনা ঘটলেই কি আমরা দেখতে পাই সবকিছু? না, পাই না। কারণ আমাদের চোখের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের চোখের স্বাভাবিক রেজ্যুলেশান বা সূক্ষ্মদর্শনের ক্ষমতা মাত্র একশ মাইক্রোমিটার। অর্থাৎ কোন বস্তু যদি এক মিলিমিটারের দশ ভাগের এক ভাগের চেয়ে ছোট হয়, স্বাভাবিক চোখে আমরা তা দেখতে পাবো না। 

আবার দেখার জন্য যে আলো লাগে – সেই আলোর তরঙ্গের খুব সামান্য অংশই – চার শ ন্যানোমিটার থেকে সাত শ ন্যানোমিটার পর্যন্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো – আমাদের চোখের রেটিনার কোষের সাথে মিথষ্ক্রিয়া করতে পারে। তাই চারশ ন্যানোমিটারের কম বা সাত শ ন্যানোমিটারের বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের  আলো আমরা দেখতে পাই না। বাতাস ভরযুক্ত অক্সিজেন, নাইট্রোজেনসহ আরো কয়েকটি গ্যাসের মিশ্রণ – কিন্তু আমরা বাতাস দেখতে পাই না। রাসায়নিক কিংবা ভৌতবিক্রিয়া অনবরত ঘটছে আমরা জানি, কিন্তু সরাসরি তা দেখতে পাই না। বলা যায় বস্তুজগতের বেশিরভাগ সূক্ষ্ম ঘটনা, দ্রুততম সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রত্যক্ষ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। 

কিন্তু সরাসরি দেখতে না পারলে কী হবে, পরোক্ষভাবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ঘটনাগুলি দেখার অনেক পদ্ধতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে ফেলেছেন। ২০২৩ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে এমনই আশ্চর্যজনক ক্ষুদ্রতম সময়ে ঘটা ঘটনাগুলি দেখার পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য – যার নাম দেয়া হয়েছে অ্যাটোসেকেন্ড ফিজিক্স। এই অ্যাটোসেকেন্ড ফিজিক্স দ্রুততম সময়ে ঘটা ইলেকট্রনের কাজকর্ম দেখারও সুযোগ করে দিচ্ছে। এটা এমনই এক আশ্চর্যজনক ফিজিক্স – যা বুঝতে হলে আমাদের ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে অনেককিছু। 

শুরুতেই দেখা যাক – অ্যাটোসেকেন্ড বলতে কতটুকু সময় বোঝায়। এক অ্যাটোসেকেন্ড হলো ১০-১৮ সেকেন্ড। অর্থাৎ এক সেকেন্ডকে একশ কোটি ভাগ করে তার এক ভাগকে আবার এক শ কোটি ভাগ করলে এক ভাগের যে সময় হবে সেটা। আলো এক সেকেন্ডে প্রায় তিন লক্ষ কিলোমিটার যেতে পারে। অটোসেকেন্ডের হিসেব করলে এক মিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে আলোর সময় লাগবে প্রায় তিনশ ত্রিশ কোটি অ্যাটোসেকেন্ড।  অ্যাটোসেকেন্ড ফিজিক্স হলো অ্যাটোসেকেন্ড স্কেলের পরিমাপের মতো সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আলোর স্পন্দন তৈরি করার পদার্থবিজ্ঞান – যে স্পন্দনের মাধ্যমে সেই সূক্ষ্মতম স্কেলে পরিমাপযোগ্য সময়ের ভেতর ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি দেখা সম্ভব।

দ্রুততম সময়ে ঘটা ঘটনাগুলি আমরা কীভাবে দেখতে পারি? যেমন ক্রিকেট খেলার কথা ধরা যাক। একজন ফাস্টবোলার যখন বল করেন, তখন ক্যামেরাম্যানরা সেই বল ব্যাটারের ব্যাটে লাগার মুহূর্তের ছবি তোলার জন্য লম্বা লম্বা লেন্স তাক করে বসে থাকেন। তখন তাদের ক্যামেরার শাটার স্পিড এমনভাবে  সেট করা থাকে যেন দ্রুততম সময়ে ঘটনাটির ছবি তোলা যায়। ঘটনাটি যে বেগে ঘটবে, শাটারের বেগ হতে হবে তার চেয়ে বেশি। নইলে ছবি ঝাপসা হয়ে যাবে। শাটারের বেগ বেশি হবার অর্থ হলো ক্যামেরার ডায়াফ্রাম খোলা হবে খুব কম সময়ের জন্য। প্রচন্ড গতিশীল বস্তুর উপর তখন খুব কম সময়ের জন্য আলো পড়ে সেই সময়টিকে স্থির করে ধরে নেবে ক্যামেরায়। 

কিন্তু ক্রিকেট বলের গতির চেয়ে কোটি কোটি গুণ দ্রুত ঘটে পরমাণুর ইলেকট্রনের কাজকর্ম। ইলেকট্রনের কক্ষপথ কিংবা শক্তিস্তরের পরিবর্তন ঘটতে সময় নেয় মাত্র কয়েকশ অ্যাটোসেকেন্ড। অ্যাটোসেকেন্ড ফিজিক্স-এর প্রয়োগে ইলেকট্রনের দ্রুততম গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার সম্ভাবনার দরজা খোলার চেষ্টা করে চলেছেন যে ক’জন বিজ্ঞানী গত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে – তাঁদেরই তিনজন অগ্রনায়ককে এবছর পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়েছে। এই তিনজন নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী হলেন – অ্যান লুইলিয়ের, ফেরেঙ্ক ক্রাউজ এবং পিয়ের আগস্তিনি। 


 পিয়ের আগস্তিনি, ফেরেঙ্ক ক্রাউজ এবং অ্যান লুইলিয়ের


নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীদের মধ্যে নারী বিজ্ঞানীর সংখ্যা এখনো পুরুষদের তুলনায় অনেক কম। ১৯০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত – চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন মাত্র তেরো জন নারী, রসায়নে মাত্র আট জন, এবং পদার্থবিজ্ঞানে সবচেয়ে কম – মাত্র পাঁচজন। ১৯০৩ সালে মেরি কুরির পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পাবার পরবর্তী ষাট বছর আর কোন নারী পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পাননি। ১৯৬৩ সালে মারিয়া গোয়েপার্ট মেয়ার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার জয়ী দ্বিতীয় বিজ্ঞানী। এরপর আবার পঞ্চান্ন বছরের দীর্ঘ বিরতি। অবশেষে ২০১৮ সাল থেকে এবছর পর্যন্ত আরো তিনজন নারী পদার্থবিজ্ঞানী নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। অ্যাটোসেকেন্ড ফিজিক্সের অগ্রনায়ক প্রফেসর অ্যান লুইলিয়ার নোবেলজয়ী পঞ্চম নারী পদার্থবিজ্ঞানী। এবছরের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার সেহিসেবেও অনন্য মাত্রা পেয়েছে। 

অ্যান লুইলিয়ার (Anne L’Huillier)-এর জন্ম ১৯৫৮ সালের ১৬ আগস্ট ফ্রান্সের প্যারিসে। প্যারিসের ইকোল নরমাল সুপেরিয়র থেকে পদার্থবিজ্ঞানে বিএ পাস করার পর পিয়ের অ্যান্ড মেরি কুরি ইউনিভার্সিটি থেকে গণিত ও তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানে ডাবল মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানে ১৯৮৬ সালে। তাঁর থিসিসের শিরোনাম ছিল ‘মাল্টিফোটন অ্যান্ড মাল্টিইলেকট্রন আয়নাইজেশান’। উচ্চ তীব্রতার লেজার রশ্মি প্রয়োগে একাধিক ফোটন এবং ইলেকট্রনের আয়নাইজেশান সংক্রান্ত গবেষণা করেন তিনি তাঁর পিএইচডির সময় – যা পরবর্তীতে আরো গভীরে গিয়ে তাঁর নোবেল পুরষ্কারের পথ তৈরি করেছিল। 

পিএইচডি করার পর তিনি সুইডেনের গুথেনবার্গের কালমার্স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে পোস্টডক ফেলো হিসেবে যোগ দেন, এবং এর কিছুদিন পর আমেরিকার লস এঞ্জেলেস-এ ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যান। তবে বেশিদিন ছিলেন না সেখানে। ইতোমধ্যে তিনি ফ্রান্সের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের অধীনে যে নয়টি গবেষণাকেন্দ্র আছে – তাদের অন্যতম কেন্দ্র স্যাকলে সেন্টারে গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯২ সালে তিনি সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে টাইটানিয়াম-স্যাফায়ার সলিড স্টেট লেজার সিস্টেমে কাজ করেন। ওটা ছিল ইওরোপের প্রথম ফেমটোসেকেন্ড পাল্‌স উৎপাদনক্ষম লেজার। ফেমটোসেকেন্ড হলো ১০-১৫ সেকেন্ড, অর্থাৎ এক সেকেন্ডের একশ কোটি ভাগের একভাগ সময়কে আরো দশ লক্ষ ভাগ করলে প্রতি ভাগ সময়ের সমান। ফেমটোসেকেন্ড পাল্‌স হলো ফেমটোসেকেন্ড স্থায়ী আলোর স্পন্দন। লেজারের সাহায্যে এরকম স্পন্দন তৈরি করা শুরু হয়েছিল ১৯৯০র দশকে। ১৯৯৪ সালে অ্যান পাকাপাকিভাবে প্যারিস থেকে সুইডেনে চলে যান লুন্ড ইউনিভার্সিটির লেকচারার হিসেবে। ১৯৯৭ সালেই তিনি লুন্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ২০০৪ সালে তিনি সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সের সদস্যপদ লাভ করেন। ২০০৭ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিনি নোবেল কমিটি ফর ফিজিক্সের সদস্য ছিলেন। সেই আট বছর তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার দেয়ার প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন। 

তাঁর গবেষণা –  তাঁকে নোবেল পুরষ্কার ছাড়াও আরো অনেক পুরষ্কার এনে দিয়েছে। ২০০৩ সালে তিনি পেয়েছেন জুলিয়াস স্প্রিঙ্গার প্রাইজ, ২০১১ সালে পেয়েছেন ইউনেস্কোর লরিয়াল ওম্যান ইন সায়েন্স অ্যাওয়ার্ড, ২০১৩ সালে পেয়েছেন কার্ল-জেইস রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড, ২০১৮ সালে মনোনীত হয়েছেন আমেরিকান ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের ফরেন অ্যাসোসিয়েট, ২০১৯ সালে পেয়েছেন ইওরোপিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটির প্রাইজ ফর ফান্ডামেন্টাল এস্পেক্টস অব কোয়ান্টাম ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অপটিক্স। ২০২১ সালে তিনি পেয়েছেন অপটিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকার ম্যাক্স বর্ন অ্যাওয়ার্ড। ২০২২ সালে তিনি পেয়েছেন ইজরায়েলের উল্‌ফ ফাউন্ডেশানের উল্‌ফ প্রাইজ ফর ফিজিক্স। গত বেশ কয়েক বছর থেকে দেখা যাচ্ছে যাঁরা উল্‌ফ প্রাইজ পান, তাঁদের নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকগুণ। তাই ২০২২ সালে উল্‌ফ প্রাইজ পাবার পর অনেকেই সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন যে অ্যান লুইলিয়ার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পাবেন। 

২০২২ সালের উল্‌ফ ফিজিক্স প্রাইজ পেয়েছেন তিনজন – যাদের মধ্যে দু’জন এবার নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। দ্বিতীয় জন হলেন জার্মানির প্রফেসর ফেরেঙ্ক ক্রাউজ (Ferenc Krausz) । ম্যাক্স প্ল্যাংক ইন্সটিটিউট অব কোয়ান্টাম অপটিক্স -এর পাঁচজন ডিরেক্টরের একজন হলেন ফেরেঙ্ক ক্রাউজ। একই সাথে তিনি মিউনিখ লুডবিগ ম্যাক্সিমিলান ইউনিভার্সিটিরও প্রফেসর। 

ফেরেঙ্ক ক্রাউজের জন্ম ১৯৬২ সালের ১৭ মে হাঙ্গেরিতে। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত তিনি হাঙ্গেরির ইউটভোস লোরান্ড ইউনিভার্সিটিতে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি এবং টেকনিক্যাল ইউইভার্সিটি অব বুদাপেস্ট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ভিয়েনায় চলে যান পিএইচডি করার জন্য। ১৯৯১ সালে তিনি ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে কোয়ান্টাম ইলেকট্রনিক্সে পিএইচডি অর্জন করেন। এরপর মাত্র দুবছরের মধ্যেই তিনি ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ‘হ্যাবিলিটেশান’ সম্পন্ন করেন। এই হ্যাবিলিটেশান পদ্ধতিটি  ইওরোপের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে গেলে অবশ্যই লাগে। শুধুমাত্র পিএইচডি সম্পন্ন করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত থেকে দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসরুমে পড়ানো এবং গবেষণার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন নিয়মিত বেতন-ভাতাও পাওয়া যায় না। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির কাছে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। গবেষণার জন্য গবেষণা-বক্তৃতা দিতে হয় এবং প্রতিপক্ষের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। অনেক সময় পাঁচ থেকে দশ বছর সময় লেগে যায় এসব সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে। অবশ্য এটা হয়ে গেলে তখন পূর্ণ অধ্যাপকের মর্যাদা পাওয়া যায়। ফেরেঙ্ক ক্রাউজ খুব কম সময়ের মধ্যে ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির শিক্ষক হয়ে গেলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি ফুল প্রফেসর হয়ে গেলেন। ২০০০ সালে তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এডভান্সড লাইট সোর্সেস-এর ডিরেক্টর নিযুক্ত হলেন। এর তিন বছর পর ২০০৩ সালে তিনি জার্মানিতে ম্যাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউট অব কোয়ান্টাম অপটিক্‌স এর ডিরেক্টর পদে যোগ দেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি মিউনিখের লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটির এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিক্সেরও চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করে আসছেন। 

অ্যাটোসেকেন্ড ফিজিক্সের একজন পথিকৃৎ বলে ধরা হয় প্রফেসর ক্রাউজকে। এবছরের নোবেল পুরষ্কার পাবার আগে তিনি গত দুই দশক ধরে অনেকগুলি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা পুরষ্কার পেয়েছেন। ২০০৫ সালে পেয়েছেন জার্মান রিসার্চ ফাউন্ডেশানের লিবনিজ প্রাইজ, ২০০৬ সালে পেয়েছেন ইলেকট্রোঅপটিক সোসাইটির কোয়ান্টাম ইলেকট্রনিক্স অ্যাওয়ার্ড এবং ব্রিটিশ রয়েল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রগ্রেস মেডেল। ২০১১ সালে পেয়েছেন ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানির গবেষণা পুরষ্কার, ২০১৩ সালে পেয়েছেন কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, একই বছর পেয়েছেন অটো হ্যান পুরষ্কার, ২০১৯ সালে পেয়েছেন ভ্লাডিলেন লেটোকভ মেডেল, ২০২২ সালে পেয়েছেন উল্‌ফ প্রাইজ ইন ফিজিক্স। 

এবছরের তিনজন নোবেলজয়ীর মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র অথচ সবচেয়ে নিভৃতচারী বিজ্ঞানী হলেন ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পিয়ের আগস্তিনি (Pierre Agostini)। নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার আগে এই মানুষটির কোন উইকিপিডিয়া পেজও ছিল না। ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটেও যেনতেনভাবে একটি পুরনো ছবির সাথে মাত্র দু-তিন লাইনের পরিচিতি ছিল প্রফেসর আগস্তিনির। পুরষ্কার ঘোষণার আগে নোবেল কমিটি ফোনে যোগাযোগও করতে পারেননি পিয়েরের সাথে। [ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পোস্টডক করার সময় পিয়ের আগস্তিনিকে এবং তাঁর কাজকর্মের কিছুটা কাছ থেকে  দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। তখন তিনি চৌষট্টি বছর বয়সে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সবেমাত্র যোগ দিয়েছেন প্রফেসর হিসেবে। তাঁর কাজকর্মে কেমন যেন একটা সন্নাসীসুলভ আচরণ ছিল, কিছুতেই যেন কিছু যায় আসে না এরকম একটা ভাব। এত বছর পর বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ পুরষ্কার নোবেলস্বীকৃতি পাবার পরেও তাঁর ভেতর সেরকম কোন উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। তাঁর মেয়ে ফোন করে তাঁকে জানিয়েছেন যে তিনি গুগলে দেখেছেন যে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।]

১৯৪১ সালের ২৩ জুলাই ফ্রেন্স টিউনিসিয়ার টিউনিসে জন্ম পিয়ের আগস্তিনির। ১৯৫৯ সালে ফ্রান্সের প্রাইতানি ন্যাশনাল মিলিটারি স্কুল থেকে স্কুল পাস করে দক্ষিণ ফ্রান্সের এইক্স-মারসিলি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেন। ১৯৬১ সালে ফিজিক্সে বিএড এবং ১৯৬২ সালে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি অপটিক্সে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। আলট্রাভায়োলেট রশ্মির মাল্টিলেয়ার ডায়ইলেকট্রিক ফিল্টার নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করেন আগস্তিনি। পিএইচডি করার পরের বছরই পিয়ের যোগ দেন ফ্রান্স এটমিক এনার্জি কমিশনের স্যাকলে সেন্টারে। সেখানেই তিনি গবেষণা করেছেন পরবর্তী চৌত্রিশ বছর। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত  অ্যান লুইলিয়ার এই গবেষণাকেন্দ্রে পিয়ের আগস্তিনির সহকর্মী ছিলেন। কিন্তু সেই সময় তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যৌথগবেষণা সেরকম হয়নি। তাঁরা যে একদিন নোবেল পুরষ্কার শেয়ার করবেন সেদিন কেউই ভাবতে পারেননি। ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ পর্যন্ত পিয়ের আগস্তিনি নিউইয়র্কের ব্রুকহ্যাভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে ভিজিটিং সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করার পর ২০০৫ সালে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন প্রফেসর হিসেবে। ২০১৮ সালে ৭৭ বছর বয়সে তিনি অবসর গ্রহণ করার পর ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এবছর তিনি নোবেল পুরষ্কার পাবেন এটা অপ্রত্যাশিত ছিল। অবশ্য এর আগে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুরষ্কার পেয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে ফ্রেন্স একাডেমি অব সায়েন্সের গুস্তাভ রিবাউড প্রাইজ, ২০০৩ সালে গে-লুসাক-হামবোল্ট প্রাইজ, ২০০৭ সালে অপটিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকার মেগার্স অ্যাওয়ার্ড ইন স্পেকট্রোস্কোপি। 

এবার দেখা যাক অ্যাটোসেকেন্ড ফিজিক্সের উৎপত্তি এবং ক্রমবিকাশ কীভাবে ঘটেছে। গত শতকের শেষের দুই দশকে লেজার বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নত ঘটেছে। লেজারের সাহায্যে ফেমটোস্কেলের আলোর স্পন্দন উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় আণবিক স্কেলের পরিবর্তনগুলি দেখা সম্ভব হয়েছে ফেমটোসেকেন্ড স্পন্দনের মাধ্যমে। উদ্ভব হয়েছিল ফেমটোকেমিস্ট্রির। বিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষে ১৯৯৯ সালে রসায়নে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছিল ফেমটোকেমিস্ট্রির জন্য। ফেমটোমিটার হলো ১০-১৫ মিটার। ক্যালটেকের প্রফেসর আহমেদ জিওয়াইল নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় অণুর মধ্যে পরমাণুগুলি কীভাবে চলাচল করে তা দেখার একটি পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য। তিনি সেটা করেছিলেন লেজার টেকনিক ব্যবহার করে। তখন ফেমটোকেমিস্ট্রির আবিষ্কার নিয়ে উদ্দীপ্ত হয়েছিল বিজ্ঞানসমাজ। এর কয়েক বছরের মধ্যেই জন্ম অ্যাটোসেকেন্ড ফিজিক্সের।

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সময়ের জন্য আলোর স্পন্দন তৈরি করা সম্ভব লেজার রশ্মির মাধ্যমে। এটা বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে লেজার কীভাবে তৈরি হয়। লেজার শব্দটি এসেছে লাইট অ্যামপ্লিফিকেশান বাই স্টিমুলেটেড এমিশান অব রেডিয়েশান (Light Amplification by Stimulated Emission of Radiation) থেকে। বিশেষ উদ্দীপনায় আলোর বিকিরণ ঘটিয়ে সাধারণ আলোর ক্ষমতা ও শক্তি বহুগুণ বাড়িয়ে তুলে লেজার তৈরি করা হয়। লেজার তৈরির প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯১৭ সালে। তিনি তাঁর ‘অন দি কোয়ান্টাম থিওরি অব রেডিয়েশান’ গবেষণাপত্রে ফোটনের ধর্ম কাজের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন [On the Quantum Theroy of Radiation, Physikalische Zeitschrift, vol 18 (1917) pp 121-128]। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন যদি কোন ফোটন কোন পরমাণুর ইলেকট্রনকে ধাক্কা দেয়, তবে ইলেকট্রনটি ফোটনের শক্তি শোষণ করে উত্তেজিত হবে। উত্তেজিত হয়ে ইলেকট্রনটি তার মূল শক্তিস্তর থেকে উচ্চতর শক্তিস্তরে চলে যাবে। কিন্তু যদি ফোটন কোন উচ্চ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনকে ধাক্কা দেয়, তখন উচ্চ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন তার অতিরিক্ত শক্তি ত্যাগ করে নিজের মূল শক্তিস্তরে ফিরে আসবে। এই শক্তিস্তর পরিবর্তনের সময় যে শক্তি ত্যাগ করবে সেই শক্তি যে ফোটনটি ধাক্কা দিয়েছিল সেই ফোটনের শক্তির সমান। এক্ষেত্রে একই শক্তির দুটি ফোটন একই দিকে একইভাবে ছুটে যাবে। এই দুটি ফোটন যদি আবার দুটি উত্তেজিত ইলেকট্রনকে ধাক্কা দেয়, আরো দুটি সমান শক্তির ফোটন পাওয়া যাবে। মোট ফোটন হবে চারটি। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে এই চারটি থেকে আটটি, আটটি থেকে ষোলটি, ষোলটি থেকে বত্রিশটি – এভাবে কোটি কোটি একই শক্তির ফোটনের স্রোত তৈরি হবে। এই ফোটনগুলির প্রত্যেকটির তরঙ্গদৈর্ঘ্য সমান। ফলে এদের সম্মিলিত প্রাবল্য হবে সাধারণ আলোর চেয়ে অনেক বেশি। 


লেজার উৎপাদনের মূল পদ্ধতি


লেজার উৎপাদনের মূলনীতি হলো পদার্থবিজ্ঞানের কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতি। পরমাণুর ভেতর ইলেকট্রনগুলি নিউক্লিয়াসের চারপাশে নিজস্ব কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়মে এগুলি কক্ষপথে বিন্যস্ত থাকে – প্রথম কক্ষপথে ২টি, ২য় কক্ষপথে ৮টি, ৩য় কক্ষপথে ১৮টি ইত্যাদি। ইলেকট্রনের কক্ষপথগুলি হলো তাদের শক্তিস্তর। একটি কক্ষপথে যতগুলি ইলেকট্রন থাকে সবগুলি ইলেকট্রনের শক্তি সমান। নিউক্লিয়াসের সবচেয়ে কাছের যে কক্ষপথ (১ম কক্ষপথ) – সেই কক্ষপথে যেসব ইলেকট্রন থাকে তাদের শক্তি সবচেয়ে কম। এই শক্তিস্তরকে গ্রাউন্ড স্টেট বলা হয়। ইলেকট্রনগুলি যদি কোনভাবে শক্তি শোষণ করে তখন তারা উত্তেজিত হয়ে নিজেদের শক্তিস্তর থেকে উচ্চতর শক্তিস্তরে চলে যায়। কিন্তু একটু পরেই সেই অতিরিক্ত শক্তি ত্যাগ করে নিজের শক্তিস্তরে ফিরে আসে। স্বতস্ফূর্তভাবে শক্তি নির্গমনের এই প্রক্রিয়াকে স্পনটেনিয়াস এমিশান (spontaneous emission) বলা হয়। পরমাণুর ইলেকট্রনগুলিকে যদি নির্দিষ্ট শক্তির ফোটনের সাথে মিথস্ক্রিয়া ঘটানো যায়, তাহলে ফোটনের শক্তি শোষণ করে ইলেকট্রনগুলি উত্তেজিত হয়ে উচ্চতর শক্তিস্তরে চলে যায়। তারপর যখন নিজের শক্তিস্তরে ফিরে আসে তখন যে শক্তি শোষণ করেছিল তা ফোটনের মাধ্যমে বের করে দেয়। এই নির্গত ফোটনের শক্তি শোষিত ফোটনের শক্তির সমান। ফোটনের প্রবাহ যদি অনবরত চলতে থাকে – তাহলে একটি ফোটন থেকে একই শক্তির ২টি ফোটন, ২টি থেকে ৪টি, ৪টি থেকে ৮টি ফোটন – এভাবে সেকেন্ডের মধ্যে কোটি কোটি ফোটনের প্রবাহ পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি ফোটনের শক্তি সমান এবং প্রত্যেকেই একই সাথে একই দিকে যায়। তীব্র প্রাবল্যের এই ফোটনপ্রবাহই লেজার। সাধারণ দৃশ্যমান আলোতে ৪০০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের যে কোন তরঙ্গ থাকতে পারে। তাই আলোকরশ্মি সমশক্তির হয় না এবং বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মিশ্রণের কারণে সবগুলি ফোটন একদিকে না গিয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু লেজারে সবগুলি ফোটনের শক্তি সমান, ফলে তরঙ্গদৈর্ঘ্যও সমান। ফলে তারা সব একবিন্দুতে কেন্দ্রীভূত থাকে। লেজার রশ্মি তাই একটুও না ছড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। পৃথিবী থেকে চাঁদের পৃষ্ঠে লেজার রশ্মি পাঠানো হয়, সেই রশ্মি একটুও ছড়িয়ে না পড়ে চাঁদের পিঠে রাখা আয়নাতে প্রতিফলিত হয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। 

সব ধরনের লেজারেরই মূল প্রস্তুত প্রণালী কমবেশি একই রকম। প্রথমে দরকার একটি উপযুক্ত পদার্থের অ্যামপ্লিফাইয়িং মিডিয়াম বা গেইন মিডিয়াম বা অ্যাকটিভ মিডিয়াম। এই মিডিয়ামের ইলেকট্রনকে উত্তেজিত করে ফোটন বের করা হয়। এই মিডিয়াম কঠিন, গ্যাস, সেমিকন্ডাক্টর ইত্যাদি হতে পারে। এই পদার্থের উপর বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের   আলো প্রয়োগ করলে পদার্থের ইলেকট্রন উত্তেজিত হয় এবং ফোটন নির্গত হয়। অ্যাকটিভ মিডিয়ামের আলোর ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মিডিয়ামের চারপাশে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করা হয়, অথবা অন্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক রশ্মি প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় পাম্পিং। ফ্ল্যাশ লাইট বা অন্য লেজার দিয়েও এই পাম্পিং করা যায়। পাম্পিংসহ অ্যাকটিভ মিডিয়ামকে একটি সিলিন্ডার আকৃতির নলের মধ্যে স্থাপন করা হয়। এই নলটিকে বলা হয় লেজার ক্যাভিটি। এই নলের দুই প্রান্তে দুটি আয়না বসানো থাকে। নলের ভেতর যে আলো উৎপন্ন হয় সেই আলো এই আয়না দুটোতে অনবরত প্রতিফলিত হতে থাকে। একটি আয়না নলের ভেতরের সব আলোর প্রতিফলন ঘটায়। অন্যদিকের আয়নাটি পুরোপুরি প্রতিফলক নয়। সেই আয়না কিছুটা স্বচ্ছ – যার ভেতর দিয়ে লেজার রশ্মি বের হয়ে আসে। সাধারণত অ্যাকটিভ মিডিয়ামের নাম অনুসারে লেজারের নাম হয়ে থাকে। যেমন অ্যাকটিভ মিডিয়াম রুবি হলে – রুবি লেজার, গেইন মিডিয়াম আর্গন গ্যাস হলে আর্গন লেজার ইত্যাদি। বিভিন্ন মিডিয়াম থেকে উৎপন্ন লেজারের শক্তি এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্যও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

লেজারের ক্ষমতা ফেমটোসেকেন্ড স্পন্দনে আটকে ছিল অনেকগুলি বছর। ফেমটোসেকেন্ড পার হয়ে অটোসেকেন্ডে আসার জন্য আরো ছোট সময়ের পালস তৈরি করতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। কীভাবে সম্ভব হয়েছে এত ক্ষুদ্র সময়ের আলোর স্পন্দন তৈরি করা? 

একটি পদ্ধতি হলো – হাই হারমোনিক জেনারেশন (HHG) পদ্ধতি যেখানে পরমাণুর একটি ইলেকট্রন অনেকগুলি কম শক্তির ফোটন শোষণ করতে থাকে একের পর এক। এরপর একটি উচ্চশক্তির ফোটন বের করে দেয়। কিন্তু কয়েক দশক আগে এ ধরনের প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে ফোটনের শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে ফোটন নির্গমনের হার কমে যাচ্ছে। ফলে উচ্চ শক্তির আলোর স্পন্দন তৈরি করা সম্ভব হচ্ছিল না। 

১৯৮৭ সালে অ্যান লুইলিয়ার এবং তাঁর গবেষকদল আর্গন গ্যাসে ইনফ্রারেড লেজার (অবলোহিত লেজার) প্রয়োগ করে দেখলেন যে শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে নির্গত ফোটনের সংখ্যা সেভাবে কমে না গিয়ে বরং একটা স্থিতাবস্থায় আসছে। এই ব্যাপারটি খুবই আশাপ্রদ মনে হয়েছে তাঁর দলের কাছে। এর কয়েক বছরের মধ্যেই লুইলিয়ার এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন এইচএইচজি-তে আসলে কী হচ্ছে। 

আর্গন গ্যাসের মধ্যে লেজার রশ্মি চালনার ফলে  ইলেকট্রন তিনটি কাজ করছে এক সাথে। প্রথমত কোয়ান্টাম টানেলিং-এর মাধ্যমে ইলেকট্রন পরমাণু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তারপর ত্বরণ লাভ করে দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে। এরপর আবার আলোর তরঙ্গের দিক পরিবর্তনের সময় ইলেকট্রন তার নিজের জায়গায় ফিরে আসছে – শক্তিক্ষয় করে। এই শক্তিক্ষয় হচ্ছে উচ্চশক্তির ফোটন নির্গমণের মাধ্যমে। আর্গনে লেজার প্রয়োগ করার পর এই ব্যাপারটি একাধিকবার ঘটছে – ফলে আলট্রাফাস্ট অ্যাটোসেকেন্ড স্কেলের আলোর স্পন্দন তৈরি হচ্ছে গ্যাসের মধ্যে।

অ্যান লুইলিয়ারের কাজ থেকে একটি কর্মক্ষম অ্যাটোসেকেন্ড স্পন্দনের উৎস তৈরি করতে আরো দুটো ধাপ পার হতে হয়েছে। দুটো নতুন দরকারি পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হয়েছে। প্রথমত স্পন্দনের সময় মাপতে হয়েছে, দ্বিতীয়ত আলাদা আলাদা স্পন্দন তৈরি করতে হয়েছে। পদ্ধতিদুটোর কোনটিই সহজ নয়। এত ক্ষুদ্র সময়ের স্পন্দন মাপার একটি পদ্ধতির নাম FROG – ব্যাঙ পদ্ধতি। Frequency Resolved optical gating – FROG. কিন্তু অ্যাটোসেকেন্ড মাপা সম্ভব নয় এই পদ্ধতিতে। কারণ FROG পদ্ধতি খুবই কম শক্তি সম্পন্ন। এটি ফেমটোসেকেন্ডে সীমাবদ্ধ। 

২০০১ সালে পিয়ের আগস্তিনি নতুন পদ্ধতি বানালেন – র‍্যাবিট (খরগোশ) পদ্ধতি। RABBIT – Reconstruction of Attosecond Beating by Interference of two-photon transitions. যেখানে একটি অপটিক্যাল লেজারের তড়িৎক্ষেত্র অ্যাটোসেকেন্ড স্পন্দনের সাথে যোগ করে দেয়া হয়। এই পদ্ধতিতে পিয়ের আগস্তিনি এবং তাঁর দল ২৫০ অটোসেকেন্ডের ধারাবাহিক আলোর স্পন্দন তৈরি করতে সমর্থ হন। 

এদিকে প্রফেসর ফেরেঙ্ক ক্রাউজের দল জার্মানিতে স্বতন্ত্রভাবে একই ধরনের আরেকটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন – যেখানে তিনি অ্যাটোসেকেন্ড স্ট্রিকিং (Streaking) পদ্ধতিতে ৬৫০ অটোসেকেন্ডের স্পন্দনকে স্বতন্ত্রভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হন। এভাবে অ্যাটোসেকেন্ড স্পন্দন পদ্ধতি আয়ত্বে আসার পর অতিক্ষুদ্র আলোর স্পন্দন তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে এখন। 

প্রফেসর লুইলিয়ার এবং ক্রাউজ তাঁদের অ্যাটোসেকেন্ড ফিজিক্সের গবেষণা ক্রমাগত চালিয়ে গেলেও – প্রফেসর পিয়ের আগস্তিনি আশাও করেননি যে বিশ বছর আগে তিনি যা উদ্ভাবন করেছিলেন তা এতদিন পরে এত গুরুত্ব পাবে। 

অ্যাটোসেকেন্ড পাল্‌স বা স্পন্দনের অনেক বাস্তব ব্যবহারিক সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। রাসায়নিক কার্যকলাপ দেখার জন্য ফেমটোসেকেন্ড কেমিস্ট্রি যথেষ্ট। কিন্তু আরো সুনির্দিষ্টভাবে ইলেকট্রনের কার্যক্রম দেখতে হলে অ্যাটোসেকেন্ড পাল্‌স দরকার। অ্যাটোসেকেন্ড স্পন্দন এত বেশি সুনির্দিষ্ট এবং সূক্ষ্ম যে পরমাণুর ইলেকট্রনের কাজকর্ম দেখতে পারবে সেটা। তার মানে ইলেকট্রনের কাজকর্ম সরাসরি দেখা যাবে। অ্যাটোসেকেন্ড পাল্‌স সলিডের ধর্মাবলি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, অপরিবাহীকে পরিবাহীতে রূপান্তরিত করতে পারবে। খুব কম সময়ের মধ্যেই – ইলেকট্রনিক্সের ডায়নামিক্স পরিবর্তন করা যাবে। আলট্রাফাস্ট সুইচিং সম্ভব হবে যেখানে  – সিলিকন ডাই অক্সাইড – অপরিবাহী থেকে দ্রুত পরিবাহীতে পরিণত হতে পারে। ফলে ইলেকট্রনিক্সের জগতে এর বিরাট ব্যবহারিক ক্ষেত্র উন্মুক্ত হবে। উদ্ভাবিত হবে খুবই ফাস্ট ইলেকট্রনিক্স – জন্ম নেবে অনেক নতুন প্রযুক্তির। 

মানুষের রোগ নির্ণয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে অ্যাটোসেকেন্ড পাল্‌স – যা হয়ে উঠবে মলিকিউলার ফিঙ্গার প্রিন্ট অব বায়োলজিক্যাল স্যাম্পলস। যেমন, রক্তের নমুনায় অ্যাটোসেকেন্ড স্পন্দনের এর মাধ্যমে রক্তের উপাদানের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পরিবর্তনও লক্ষ্য করা সম্ভব হবে। ফুসফুসের ক্যান্সারের কথাই ধরা যাক – যেখানে রক্তের পরিবর্তন ধরতে পারা জরুরি। রক্তের উপাদানের রসায়নে কোন পরিবর্তন হলে তা দ্রুত মনিটর করা যাবে। দ্রুততম সময়ে শনাক্ত করতে পারলে উপযুক্ত চিকিৎসা সম্ভব হবে। ক্ষুদ্রতম সময়ের আলোর স্পন্দন যতবার দরকার শরীরে প্রবেশ করানো যাবে, তাতে কোন ক্ষতি হবে না, কারণ এই আলো স্বাভাবিক কপাঙ্কের আলো – যার তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নেই। 

মৌলিক গবেষণা এবং নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতেও বিরাট ভূমিকা রাখবে অ্যাটোসেকেন্ড পাল্‌স। যেমন, আইনস্টাইনের ফটোইলেকট্রিক ইফেক্ট আরো ভালোভাবে বোঝা যাবে। আলোর ফোটন বস্তুর উপর পড়ার পর ধাতু থেকে ইলেকট্রন নির্গত হয়। ধারণা করা হয় এই পদ্ধতিতে আলো পড়ার সাথে সাথেই ইলেকট্রন নির্গত হয়। কিন্তু অ্যাটোসেকেন্ড পাল্‌স দেখাচ্ছে যে এই পদ্ধতি সাথে সাথে ঘটছে না। আলো শোষণ এবং ইলেকট্রন নির্গমনের মধ্যে বেশ কয়েক অ্যাটোসেকেন্ড ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে পদার্থবিজ্ঞানের আরো অনেক নতুন নতুন বিষয় জানা যাবে, কিংবা পুরনো বিষয় আরো ভালোভাবে জানা যাবে। অদূর ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম বায়োলজি অনেক বেশি গুরুত্ব পাবে। ফেমটোকেমিস্ট্রি থেকে অটোকেমিস্ট্রির জগত খুলে যাবে।


তথ্যসূত্র

১। সায়েন্টিফিক আমেরিকান, ৩ অক্টোবর ২০২৩। 

২। www.nobelprize.org October 3, 2023. 

৩। ফেরেঙ্ক ক্রাউজ ও মিশা ইভানভ, অ্যাটোসেকেন্ড ফিজিক্স, ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল, কানাডা, ২০০৯। 

৪। প্রদীপ দেব, রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় পদার্থবিজ্ঞান, প্রথমা, ২০২২। 

৫। phys.org, October 3, 2023. 

__________________
বিজ্ঞানচিন্তা অক্টোবর ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত











Monday, 28 June 2021

নোবেলবিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী মারিয়া গোয়েপার্ট-মেয়ার

 



১৯০১ থেকে ২০২৩ - এই ১২৩ বছরে ২২৪ জন বিজ্ঞানী পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। এই ২২৪ জনের মধ্যে মাত্র পাঁচজন হলেন নারী। বিংশ শতাব্দীতে এই সংখ্যা ছিল মাত্র দুই। এই পাঁচজন নোবেলজয়ী নারী পদার্থবিজ্ঞানীর একজন হলেন মেরি কুরি। ১৯০৩ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন। বিশ্বের অনেকেই মেরি কুরিকে চেনেন। কিন্তু নোবেলজয়ী দ্বিতীয় নারী পদার্থবিজ্ঞানী ততটা পরিচিত নন আমাদের অনেকের কাছে। তাঁর নাম মারিয়া গোয়েপার্ট-মেয়ার। মেরি কুরির নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার ৬০ বছর পর ১৯৬৩ সালে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের Shell Model আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন মারিয়া গোয়েপার্ট-মেয়ার।

২৮ জুন মারিয়া গোয়েপার্ট-মেয়ারের জন্মদিন। ১৯০৬ সালের ২৮ জুন জার্মানির কাটোভিজে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মারিয়া গোয়েপার্ট। তাঁর বাবা ছিলেন গটিংগেন (Gottingen) ইউনিভার্সিটির মেডিকেল ফ্যাকাল্টির প্রফেসর, মা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। মেরি কুরির মত অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা সহ্য করতে হয়নি মারিয়াকে। অভিজাত মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। তাঁর বাবা তাঁকে সবসময় বলতেন, "মেয়েমানুষের মত হয়ো না, মানুষ হতে চেষ্টা করো।'' মা-বাবার প্রভাবে বিজ্ঞানী হবার স্বপ্ন মাথার ভেতর ঢুকে গিয়েছিল মারিয়ার। গণিতের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণ ছিল তাঁর।

কিন্তু সেই ১৯২০-এর দশকে যখন ইওরোপে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বেড়ে ওঠার কাজ চলছে - তখন সেখানে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ খুবই সীমিত। তবুও গণিতের প্রফেসর হতে চেয়েছিলেন মারিয়া। কিন্তু ম্যাক্স বর্নের প্রভাবে গণিত থেকে পদার্থবিজ্ঞানে চলে এলেন তিনি। ম্যাক্স বর্নের তত্ত্বাবধানে শুরু করলেন পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ।

১৯২৭ সালে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। আর্থিক অবস্থা কিছুটা খারাপ হয়ে যায়। মারিয়ার মা তাঁদের বাড়ির কয়েকটা রুম ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের ভাড়া দিতে শুরু করেন। একদিন মারিয়াদের বাড়ির একটা রুম ভাড়া নিয়ে এলেন আমেরিকান কেমিস্ট জোসেফ মায়ার। ধরতে গেলে প্রথম দর্শনেই প্রেম। ১৯৩০ সালে বিয়ে। 

মারিয়া ও জোসেফ মেয়ার

মারিয়া জোসেফের প্রেমে এতই মশগুল হয়ে যান যে - ফিজিক্সে পিএইচডি'র কাজ পর্যন্ত ছেড়ে দেন। কিন্তু জোসেফ জানতেন মারিয়ার স্বপ্নের কথা। তিনি অনেক বুঝিয়ে মারিয়াকে পিএইচডি সম্পন্ন করতে রাজি করান।

মারিয়ার পিএইচডি অর্জিত হওয়ার পর জোসেফ মারিয়াকে নিয়ে আমেরিকায় ফিরে আসেন। জন হফকিন্‌স ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেন জোসেফ মেয়ার। কিন্তু মারিয়া তাঁর সন্তানদের লালনপালন আর ঘরসংসারের কাজ করতে করতে নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভুলেই যান।

জার্মানিতে মারিয়া বড় হয়েছেন অনেকটা প্রাচুর্যের মধ্যে। বাড়িতে কাজ করার লোক ছিল। নিজেকে কিছুই করতে হয়নি তেমন। কিন্তু আমেরিকাতে ঘরের কাজ করতে করতেই সময় চলে যায়। কিন্তু তাঁর স্বামী জোসেফ মারিয়ার ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপারে মারিয়ার চেয়েও সচেষ্ট। তিনি মারিয়াকে বলেন, "আমেরিকাতে কাজের লোক রাখার খরচ যত বেশিই হোক, আমি তোমার ঘরের কাজের জন্য কাজের লোক রাখবো, কিন্তু তোমাকে কথা দিতে হবে যে - তুমি বিজ্ঞান ছাড়বে না।"

বিজ্ঞান ছাড়তে না চাইলেও - বৈজ্ঞানিক গবেষণার কোন সুযোগই পাচ্ছিলেন না মারিয়া। কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই তাঁকে নিয়োগ দেয়নি। অনেক চেষ্টা করার পর জন হফকিন্স ইউনিভার্সিটিতে তিনি বিনাবেতনে কাজ করার সুযোগ পান। ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বিনাবেতনে কাজ করেন তিনি সেখানে।

তারপর তাঁর স্বামী জোসেফ মায়ার যখন শিকাগো ইউনিভার্সিটিতে চলে যান, মারিয়াও যান তাঁর সাথে এবং সেখানেও তিনি বিনাবেতনে কাজ শুরু করেন। কিছু সময়ের মধ্যে সেখানে আর্গন ন্যাশনাল ল্যাবোরেটরি প্রতিষ্ঠিত হয়। আর্গন ল্যাবের ডিরেক্টর হলেন রবার্ট স্যাচ।

মজার ব্যাপার হলো রবার্ট স্যাচ পিএইচডি করেছিলেন জন হফকিন্‌স ইউনিভার্সিটিতে মারিয়া গোয়েপার্ট-মেয়ারের তত্ত্বাবধানে। ছাত্র রবার্ট একটা ন্যাশনাল ল্যাবের পরিচালক হয়ে গেছেন, অথচ শিক্ষক মারিয়ার কোন সবেতন চাকরি নেই।

রবার্ট মারিয়াকে আর্গন ন্যাশনাল ল্যাবে খন্ডকালিন চাকরি দিলেন। প্রায় ১৫ বছর বিনাবেতনে কাজ করার পর এই প্রথম তিনি বেতন পেলেন। এখানেই তিনি কাজ করেছেন এনরিকো ফার্মিসহ আরো অনেক বিখ্যাত নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্টের সাথে।

এখানে কাজ করতে করতে মারিয়া গোয়েপার্ট-মেয়ার নিউক্লিয়ার শেল মডেল আবিষ্কার করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি যখন তাঁর মডেল প্রকাশ করেন, তখন প্রায় একই সময়ে জার্মানিতে এই মডেল আবিষ্কার করেন হ্যান্স জেনসেন। ক্রমে মারিয়া ও হ্যান্স জেনসেনের মধ্যে পেশাগত বন্ধুত্ব তৈরি হয়। নিউক্লিয়ার শেল মডেলের উপর একটি ক্লাসিক বই লেখেন তাঁরা।




বিজ্ঞানী হিসেবে এত নামডাকের পরেও একটা পূর্ণকালীন চাকরি জোটেনি মারিয়া গোয়েপার্ট-মেয়ারের ১৯৬০ সাল পর্যন্ত। ১৯৬০ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগোতে অধ্যাপক পদে প্রথম পূর্ণকালীন চাকরি পান মারিয়া। তাঁর স্বামী জোসেফ মেয়ারও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে যোগ দেন। দেখা গেলো জোসেফকে যত বেতন দেয়া হয়, মারিয়াকে দেয়া হয় তার অর্ধেক।

১৯৬৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পান মারিয়া মেয়ার, হ্যান্স জেনসেন এবং ইউজিন বিগনার। নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পর মারিয়া মেয়ারের বেতন হয় পুরুষ অধ্যাপকদের সমান।

১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন মারিয়া গোয়েপার্ট-মেয়ার।  


Saturday, 1 December 2018

Nobel Laureate Physicists Born in December





Karl Manne Georg Siegbahn
The Nobel Prize in Physics 1924
Born: 3 December 1886, Örebro, Sweden
Died: 26 September 1978, Stockholm, Sweden
Affiliation at the time of the award: Uppsala University, Uppsala, Sweden
Prize motivation: "for his discoveries and research in the field of X-ray spectroscopy."
Manne Siegbahn received his Nobel Prize one year later, in 1925.
Prize share: 1/1

Work
A few years after the discovery of X-rays, Charles Barkla showed that compounds exposed to X-rays emitted secondary X-rays with wavelengths that were characteristic of different elements. After studying a number of elements, Henry Moseley was able to add to and revise the periodic table. Manne Siegbahn developed apparatus and methods for improving accuracy when mapping x-ray spectra. This advance proved important in the development of atomic and quantum physics.
________________



Werner Karl Heisenberg
The Nobel Prize in Physics 1932
Born: 5 December 1901, Würzburg, Germany
Died: 1 February 1976, Munich, West Germany (now Germany)
Affiliation at the time of the award: Leipzig University, Leipzig, Germany
Prize motivation: "for the creation of quantum mechanics, the application of which has, inter alia, led to the discovery of the allotropic forms of hydrogen."
Werner Heisenberg received his Nobel Prize one year later, in 1933.
Prize share: 1/1

Work
In Niels Bohr's theory of the atom, electrons absorb and emit radiation of fixed wavelengths when jumping between fixed orbits around a nucleus. The theory provided a good description of the spectrum created by the hydrogen atom, but needed to be developed to suit more complicated atoms and molecules. In 1925, Werner Heisenberg formulated a type of quantum mechanics based on matrices. In 1927 he proposed the "uncertainty relation", setting limits for how precisely the position and velocity of a particle can be simultaneously determined.
_____________



Cecil Frank Powell
The Nobel Prize in Physics 1950
Born: 5 December 1903, Tonbridge, United Kingdom
Died: 9 August 1969, Italy
Affiliation at the time of the award: Bristol University, Bristol, United Kingdom
Prize motivation: "for his development of the photographic method of studying nuclear processes and his discoveries regarding mesons made with this method."
Prize share: 1/1

Work
Charged particles moving through photographic emulsions leave tracks that can be examined in the images developed afterward. Cecil Powell made improvements to this technique in order to study radiation and nuclear reactions. In 1947 he discovered that incident cosmic ray particles could react with atomic nuclei in the emulsion, creating other, short-lived particles. These particles turned out to be pi-mesons, the particles proposed by Hideki Yukawa as mediating the strong force binding protons and neutrons in nuclei.
________________



Sheldon Lee Glashow
The Nobel Prize in Physics 1979
Born: 5 December 1932, New York, NY, USA
Affiliation at the time of the award: Harvard University, Lyman Laboratory, Cambridge, MA, USA
Prize motivation: "for their contributions to the theory of the unified weak and electromagnetic interaction between elementary particles, including, inter alia, the prediction of the weak neutral current."
Prize share: 1/3

Work
According to modern physics, four fundamental forces exist in nature. Electromagnetic interaction is one of these. The weak interaction - responsible, for example, for the beta decay of nuclei - is another. Thanks to contributions made by Sheldon Glashow, Abdus Salam, and Steven Weinberg in 1968, these two interactions were unified to one single, called electroweak. The theory predicted, for example, that weak interaction manifests itself in "neutral weak currents" when certain elementary particles interact. This was later confirmed.
______________



Leo James Rainwater
The Nobel Prize in Physics 1975
Born: 9 December 1917, Council, ID, USA
Died: 31 March 1986, Yonkers, NY, USA
Affiliation at the time of the award: Columbia University, New York, NY, USA
Prize motivation: "for the discovery of the connection between collective motion and particle motion in atomic nuclei and the development of the theory of the structure of the atomic nucleus based on this connection."
Prize share: 1/3

Work
According to modern physics, an atomic nucleus consists of nucleons - protons and neutrons. In earlier models the nucleus was depicted as being spherical, but this proved to be inaccurate. In 1950 James Rainwater postulated that the atomic nucleus can be distorted. The nucleons in the outer portions of the atomic nucleus move about in paths and interact with nucleons inside, causing the nucleus to be distorted. Independently of Rainwater, Aage Bohr arrived at the same theory and corroborated it through experiments in collaboration with Ben Mottelson in 1952 and 1953.
____________



Henry W. Kendall
The Nobel Prize in Physics 1990
Born: 9 December 1926, Boston, MA, USA
Died: 15 February 1999, Wakulla Springs State Park, FL, USA
Affiliation at the time of the award: Massachusetts Institute of Technology (MIT), Cambridge, MA, USA
Prize motivation: "for their pioneering investigations concerning deep inelastic scattering of electrons on protons and bound neutrons, which have been of essential importance for the development of the quark model in particle physics."
Prize share: 1/3

Work
Normal matter consists of atoms possessing nuclei of protons and neutrons, surrounded by electrons. In a series of experiments conducted around 1970, Henry Kendall, Jerome Friedman, and Richard Taylor aimed high-energy electrons at protons and neutrons using a large accelerator. They studied how the electrons scattered during the collisions and how protons were sometimes converted into other particles. Their results supported the theory that protons and neutrons are composed of sub-particles, quarks.
____________



Max Born
The Nobel Prize in Physics 1954
Born: 11 December 1882, Breslau (now Wroclaw), Germany (now Poland) (now Poland)
Died: 5 January 1970, Göttingen, West Germany (now Germany) (now Alsace (then Germany, now France))
Affiliation at the time of the award: Edinburgh University, Edinburgh, United Kingdom
Prize motivation: "for his fundamental research in quantum mechanics, especially for his statistical interpretation of the wavefunction."
Prize share: 1/2

Work
In Niels Bohr's theory of the atom, electrons absorb and emit radiation of fixed wavelengths when jumping between orbits around a nucleus. The theory provided a good description of the spectrum created by the hydrogen atom, but needed to be developed to suit more complicated atoms and molecules. Following Werner Heisenberg's initial work around 1925, Max Born contributed to the further development of quantum mechanics. He also proved that Erwin Schrödinger's wave equation could be interpreted as giving statistical (rather than exact) predictions of variables.
_______________



Philip Warren Anderson
The Nobel Prize in Physics 1977
Born: 13 December 1923, Indianapolis, IN, USA
Affiliation at the time of the award: Bell Telephone Laboratories, Murray Hill, NJ, USA
Prize motivation: "for their fundamental theoretical investigations of the electronic structure of magnetic and disordered systems."
Prize share: 1/3

Work
Solid materials often have a regular crystalline structure and composition, but sometimes they constitute disordered systems. These could be alloys with a regular structure but a more random composition. Other solid materials, such as glass, lack a regular structure. In 1958 Philip Anderson showed the conditions under which an electron can move about freely within a disordered system and when it is more or less bound to a specific place. This and other works have contributed to a deeper understanding of electrical phenomena in disordered systems.
_____________



Nicolay Gennadiyevich Basov
The Nobel Prize in Physics 1964
Born: 14 December 1922, Usman, USSR (now Russia)
Died: 1 July 2001, Moscow, Russia
Affiliation at the time of the award: P.N. Lebedev Physical Institute, Moscow, USSR
Prize motivation: "for fundamental work in the field of quantum electronics, which has led to the construction of oscillators and amplifiers based on the maser-laser principle."
Prize share: 1/4

Work
Stimulated emission means that a light packet, a photon, coming in contact with an atom can cause an electron to descend to a lower energy level so that an additional photon with the same amount of energy is emitted. If electrons are elevated to higher energy levels with the help of heat or light, an avalanche-like effect occurs when they fall to lower levels. In the 1950s Nicolay Basov, Aleksandr Prokhorov and Charles Townes contributed to putting this phenomenon into practical use in masers and lasers, which produce concentrated and coherent beams of microwaves and light, respectively.
_____________



Antoine Henri Becquerel
The Nobel Prize in Physics 1903
Born: 15 December 1852, Paris, France
Died: 25 August 1908, France
Affiliation at the time of the award: École Polytechnique, Paris, France
Prize motivation: "in recognition of the extraordinary services he has rendered by his discovery of spontaneous radioactivity."
Prize share: 1/2

Work
When Henri Becquerel investigated the newly discovered X-rays in 1896, it led to studies of how uranium salts are affected by light. By accident, he discovered that uranium salts spontaneously emit a penetrating radiation that can be registered on a photographic plate. Further studies made it clear that this radiation was something new and not X-ray radiation: he had discovered a new phenomenon, radioactivity.
________________



Maurice Hugh Frederick Wilkins
The Nobel Prize in Physiology or Medicine 1962
Born: 15 December 1916, Pongaroa, New Zealand
Died: 5 October 2004, London, United Kingdom
Affiliation at the time of the award: London University, London, United Kingdom
Prize motivation: "for their discoveries concerning the molecular structure of nucleic acids and its significance for information transfer in living material."
Prize share: 1/3

Work
During the 1930s, a number of laboratories began to use a method called x-ray crystallography to map large, biologically important molecules. Maurice Wilkins and Rosalind Franklin worked to determine the structure of the DNA molecule in the early 1950s at King's College in London. While they did not succeed in mapping the structure, their results - not least of all Franklin's x-ray diffraction images - were important in Francis Crick's and James Watson's eventual unlocking of the mystery - a long spiral with twin threads.
____________


Joseph John Thomson
The Nobel Prize in Physics 1906
Born: 18 December 1856, Cheetham Hill, near Manchester, United Kingdom
Died: 30 August 1940, Cambridge, United Kingdom
Affiliation at the time of the award: University of Cambridge, Cambridge, United Kingdom
Prize motivation: "in recognition of the great merits of his theoretical and experimental investigations on the conduction of electricity by gases."
Prize share: 1/1

Work
The idea that electricity is transmitted by a tiny particle related to the atom was first forwarded in the 1830s. In the 1890s, J.J. Thomson managed to estimate its magnitude by performing experiments with charged particles in gases. In 1897 he showed that cathode rays (radiation emitted when a voltage is applied between two metal plates inside a glass tube filled with low-pressure gas) consist of particles - electrons - that conduct electricity. Thomson also concluded that electrons are part of atoms.
_______________



Eric A. Cornell
The Nobel Prize in Physics 2001
Born: 19 December 1961, Palo Alto, CA, USA
Affiliation at the time of the award: University of Colorado, JILA, Boulder, CO, USA
Prize motivation: "for the achievement of Bose-Einstein condensation in dilute gases of alkali atoms, and for early fundamental studies of the properties of the condensates."
Prize share: 1/3

Work
One of the fundamental numbers in the world of quantum mechanics is the spin quantum number. Particles and atoms that have whole-number spin are described by other rules and equations than those that have half-number spin. Satyendra Nath Bose and Albert Einstein predicted in 1924 that at very low temperatures atoms with whole-number spin would be able to concentrate themselves in the lowest energy state and form a Bose-Einstein condensate. In 1995 Eric Cornell and Carl Wieman succeeded in proving the phenomenon in a rarefied gas of rubidium atoms at an extremely low temperature.
____________


Ernst Ruska
The Nobel Prize in Physics 1986
Born: 25 December 1906, Heidelberg, Germany
Died: 27 May 1988, West Berlin, Germany
Affiliation at the time of the award: Fritz-Haber-Institut der Max-Planck-Gesellschaft, Berlin, Federal Republic of Germany
Prize motivation: "for his fundamental work in electron optics, and for the design of the first electron microscope."
Prize share: 1/2

Work
Very small objects can be studied in a microscope, but when objects become as small as the wavelength of light, an image no longer is produced. The discovery that beams of electrons behave as waves with wavelengths shorter than visible light opened up new opportunities. Ernst Ruska discovered that a magnetic coil could be used as a lens for electron beams and developed the first electron microscope in 1933. It captures images of extremely small objects by means of electron beams that are directed towards an object and captured on a screen.

Reference:
www.nobelprize.org (cited on 1/12/2018)

Latest Post

ফ্ল্যাশ রেডিওথেরাপি: ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা

  যে রোগের কাছে পৃথিবীর মানুষ সবচেয়ে বেশি অসহায় – তার নাম ক্যান্সার। প্রতি বছর ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে। ধারণা করা হ...

Popular Posts