Saturday 23 May 2020

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী - পর্ব ৮

প্রথম দিন ক্লাসে চলে এসেছি একেবারে খালি হাতে। বই কিংবা নোট কিছুই নেই। আয়েশা ম্যাডাম বলেছেন ভেক্টর অ্যানালাইসিস থেকে শুরু করতে। শুরু করার আগে জেনে নিচ্ছিলাম স্কেলার ও ভেক্টর রাশি সম্পর্কে তাদের ধারণা কোন পর্যায়ের।

"স্কেলার অ্যান্ড ভেক্টর কোয়ান্টিটি - মানে অদিক রাশি ও দিক রাশি বলতে কী বোঝ?" - জিজ্ঞেস করার প্রায় সাথে সাথেই ফার্স্ট বেঞ্চ থেকে ঝড়ের বেগে উত্তর এলো, "যে সমস্ত রাশি সঠিক অর্থবোধকভাবে প্রকাশ করিবার জন্য দিক নির্দেশ করিবার প্রয়োজন হয় না, শুধুমাত্র মান নির্দেশ করিলেই যথেষ্ট সেই সমস্ত রাশিকে অদিক রাশি বলে। যেমন ভর, সময় ইত্যাদি অদিক রাশি।"

এই মেয়ে তো দেখি বই থেকে দাঁড়ি-কমা সেমিকোলনসহ সবকিছু মুখস্ত করে ফেলেছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। নেমট্যাগ - জান্নাতুল। এক নিশ্বাসে এতগুলো শব্দ উচ্চারণ করার জন্য লম্বা দমের দরকার হয়। মনে হয় সে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নেয়। গতকাল "আমরা করবো জয়" যারা গাইছিল তাদের দলে সেও ছিল।

জান্নাতুলের অদিক রাশির উদাহরণসহ সংজ্ঞার পর পরই ছেলেটি বললো, "সময় একটি দিক রাশি স্যার, ভেক্টর কোয়ান্টিটি।"

আমি কিছুটা অবাক হয়ে ছেলেটির দিকে তাকালাম। বেশ বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, চেহারায় শিশুর সারল্য। ইলেভেন ক্লাসের বদলে ক্লাস সেভেনে গিয়ে বসলেও তাকে আলাদা মনে হবে না। কিছুটা নিচুস্বরে কথা বললেও তার কন্ঠে আত্মবিশ্বাস আছে। তার কাছে সময় কেন দিক রাশি বলে মনে হচ্ছে জেনে নেয়া দরকার। বিজ্ঞানে যতবেশি আলোচনার সুযোগ থাকে, তত বেশি বোঝার সম্ভাবনা থাকে।
"সময় কীভাবে ভেক্টর রাশি একটু বুঝিয়ে বলবে?"
"স্যার স্টিফেন হকিং-এর ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইমে আছে সময় শুধু সামনের দিকে যায়। তার মানে সময়ের একটি নির্দিষ্ট দিক আছে।"

এই ছেলে 'ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম' পড়ে ফেলেছে? বইটি বের হয়েছে ১৯৮৮তে। মূল বইটি কেনার সামর্থ্য না থাকাতে ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে বইটা নিয়ে ফটোকপি করিয়েছি। অনেক কষ্টে এক পাতা দু'পাতা করে পড়ে শেষ করতে বছর খানেক লেগেছে। ইতোমধ্যে কলকাতার বাউলমন প্রকাশনী থেকে বইটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। শত্রুজিৎ দাশগুপ্তের অনুবাদটা পড়তে পড়তেও কতবার যে হোঁচট খেতে হয়েছে তার ঠিক নেই। আর এই পুঁচকে ছেলেটা সেই বই পড়ে সময়কে ভেক্টর কোয়ান্টিটি বানিয়ে ফেলছে! প্রত্যেক ক্লাসেই এরকম একটা দুটো ছেলে-মেয়ে থাকে যারা প্রচুর পড়াশোনা করে, প্রচুর জানে। তাদের ক্লাসমেটরা সুযোগ পেলেই তাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করে, আঁতেল বলে ক্ষেপায়। এই ছেলের অবস্থাও যে তার ব্যতিক্রম নয় তা বোঝা যাচ্ছে। তার সহপাঠীরা সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে অনেকটা সার্কাসের জোকারের দিকে দর্শকরা যেভাবে তাকায় সেভাবে।

বললাম, "স্টিফেন হকিং সময়ের তীর বা অ্যারো অব টাইম বোঝানোর জন্য সময়ের যে দিকের কথা বলেছেন - তা আসলে ভবিষ্যতের দিক বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ মহাবিশ্বের সবকিছু ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে, অতীতের দিকে যাচ্ছে না এটাই বুঝিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময় পর আগামীকাল আসবে, কিন্তু গতকাল আর কিছুতেই ফিরে আসবে না। এখন ক'টা বাজে?"
"স্যার আটটা পয়ঁত্রিশ।"
"এই সময়টা বলার জন্য কি দিক নির্দেশ করার দরকার হয়েছে? আটটা পঁয়ত্রিশ দক্ষিণ দিকে বা পশ্চিম দিকে? "
"না স্যার।"
"তা হলে? সময় কি ভেক্টর রাশি?"

এটা-ওটা বলতে বলতে চল্লিশ মিনিটের ক্লাস দ্রুত শেষ হয়ে গেলো। এর পরের ক্লাসটা এ সেকশানের সাথে। বি সেকশান থেকে বের হতেই দেখলাম এ সেকশানের ছেলেদের অনেকে বারান্দায় বের হয়ে পড়েছে। দূর থেকে দেখলাম সুপাল স্যার ক্লাস শেষ করে টিচার্স রুমের দিকে যাচ্ছেন। আমাকে দেখে ছেলেগুলোর তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হলো না। যে যার মতো বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আমি তাদের ক্লাসের ঢুকবো, অথচ সবাই ক্লাসের দরজায় যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে - তাতে মনে হচ্ছে আমাকে ইংরেজিতে মাফ চাইতে হবে, বলতে হবে এক্সকিউজ মি। কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই পেছন থেকে হঠাৎ একটা হুংকার শুনে কেঁপে উঠলাম।
"হেই, সবাই ক্লাসে ডুক। খতা কানে গ্যাচে?"

বৃক্ষশাখায় নৃত্যরত শাখামৃগ যেভাবে ব্যাঘ্রগর্জনে উধাও হয়ে যায়, সেভাবে মুহূর্তেই বারান্দা খালি হয়ে গেলো। দেখলাম নাসির স্যার দ্রুত পায়ে অফিসের দিকে চলে গেলেন। এরকম হুংকার দেয়া আমি জীবনেও শিখতে পারবো বলে মনে হয় না।

ক্লাসে ঢোকার সাথে সাথে কেউ একজন 'অ্যাটেন শান' বললো ঠিকই, কিন্তু যারা একটু আগেই বারান্দা থেকে দৌঁড়ে রুমে ঢুকেছে তারা তখনো সিটে গিয়ে বসতে পারেনি। ডায়াসে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ দেখলাম কে কী করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই যে যার জায়গায় বসে পুতুল হয়ে গেল।

"কী খবর তোমাদের? কেমন আছো সবাই?" - ইনফর্মাল হবার চেষ্টা করলাম। কারো কারো মুখে ক্ষীণ হাসির রেখা দেখা দিল। কিন্তু কেউ কোন জবাব দিল না। থার্ড বেঞ্চের কোণায় যে বসে আছে - তার মুখ হা হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন একটা ইলেকট্রিক শক খেয়েছে সে। ইচ্ছে হলো জিজ্ঞেস করি, "কেমন আছো মাহফুজ?"  ইচ্ছেটাকে দমন করলাম। এমনিতেই সে লজ্জা পাচ্ছে। তার সহপাঠীরা হয়তো জানেই না যে তার সাথে আমার কথা হয়েছে গতকাল। এখন যদি হঠাৎ তাকে কিছু বলি - তার বন্ধুরা সব জেনে যাবে। হয়তো তাকে ক্ষ্যাপাবে। মাহফুজ এপিসোড ভুলে যেতে হবে। পদার্থবিজ্ঞানের আলোচনা শুরু করলাম। এই বিষয়টাকে অনেকেই ভয় পায়। ভয় থাকলে ভালোবাসা জন্মাবে কীভাবে? আগে এই ভয় তাড়াতে হবে। কীভাবে কী হবে এখনো কিচ্ছু জানি না। চেষ্টা তো করা যাক।

চল্লিশ মিনিট সময় কোন্‌দিক দিয়ে কেটে যায় বুঝতেই পারি না। ক্লাস থেকে বের হয়ে টিচার্স রুমের দিকে চললাম। থার্ড পিরিয়ডে আমার ক্লাস নেই। ফোর্থ পিরিয়ডে সি সেকশানের সাথে ক্লাস আছে, কিন্তু ক্লাসটা হবে না বলে নোটিশ দেয়া হয়েছে। কাইয়ুম স্যারের বিদায় অনুষ্ঠান হবে থার্ড পিরিয়ডের পর। টিচার্স রুমে ঢুকে দেখি আমার চেয়ারের সামনের চেয়ারে বসে আছেন একজন গোঁফওয়ালা মানুষ। একটা চকচকে প্লাস্টিকের ফোল্ডার তাঁর সামনে। মুখটা ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। ডান হাত মুখের উপর দিয়ে দু আঙুলে গোঁফ টানছেন তিনি। তিনটি পাথরের আংটি চকচক করছে সেই দু'আঙুলে। বোঝা যাচ্ছে এই ভদ্রলোক ভাগ্যে বিশ্বাস করেন, পাথরেও।

"হ্যালো, আমার নাম সুচরিত দত্ত। কেমিস্ট্রির লেকচারার। একটু আগে জয়েন করলাম।"
"হ্যালো, আমার নাম প্রদীপ দেব। ফিজিক্সের লেকচারার। গতকাল জয়েন করেছি।"
"চিটাগং ইউনিভার্সিটি?"
"হ্যাঁ, আপনি?"
"আমিও।
"মাস্টার্স পাস করেছেন কখন?"
"দু'মাস আগে। আপনি?"
"এই তো" - কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর দিলেন না সুচরিত দত্ত। তিনি আমাদের সিনিয়র তো বটেই, কিন্তু ক'বছরের সিনিয়র তা জানা গেলো না। কলেজের রুটিনে তাঁর সংক্ষিপ্ত নাম হবে সুদ - ভাবতেই হাসি পেয়ে গেল। কিন্তু সুপাল দত্ত স্যারও তো সুদ। তাহলে কি সুদ-১ সুদ-২ এভাবে নাম দেয়া হবে? জানি না। এত কিছু থাকতে এগুলো কেন মনে হচ্ছে সেটাও বুঝতে পারছি না।
"স্যার আসি?" - রুমে ঢুকলেন একজন চটপটে হৃষ্টপুষ্ট মানুষ।
"সুচরিত স্যারকে প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছেন।"
সুচরিত দত্ত দ্রুত উঠে চলে গেলেন প্রিন্সিপালের রুমে।
"স্যার, আমার নাম মিজান। অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট। বায়োলজি ল্যাভেটরির ডিউটি স্যার আমার।"
মিজান সম্ভবত ল্যাবরেটরি আর ল্যাভেটরির পার্থক্য বুঝে না।
"পদিব ছারকে পিঞ্চিপাল ছার ছালাম দিছে।" - বারান্দায় দাঁড়িয়ে জানালায় মুখ রেখে বললেন আবুল হোসেন।
"আমাকে?"
"জি ছার।"
রুম থেকে বেরিয়ে দশ সেকেন্ড লাগলো প্রিন্সিপালের রুমে যেতে। ট্রাফিক লাইট সবুজ। পর্দার ফাঁক দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে - "স্যার আসবো?"
"ইয়েস ইয়েস, কাম ইন মিস্টার প্রদীপ।"

এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ঢুকলাম প্রিন্সিপালের রুমে। কাল সকালে জয়েন করতে এসে ঢুকেছিলাম প্রথমে। আমাকে দেখে তাঁর হাসি পেয়েছিল বলে তাড়াতাড়ি বিদায় করে দিয়েছিলেন। আজ আবার ডেকেছেন। প্রিন্সিপালের সামনে একটি চেয়ারে হাসিমুখে বসে আছেন সুচরিত দত্ত। তাঁর বাম পাশে বসে আছেন নাসির স্যার। মনে হচ্ছে প্রিন্সিপালের অনেক কাজ নাসির স্যারকে করতে হয়।

"প্লিজ সিট ডাউন মিস্টার প্রদীপ।"
আমি চেয়ারে বসতেই কর্কশ স্বরে একটা কলিং বেল বেজে উঠলো। প্রিন্সিপালের রুমের কলিং-বেলের শব্দ আরেকটু মিষ্টি হলেও হতে পারতো।
"আমাদের চা দিতে বলো।"  দরজার দিকে তাকিয়ে প্রিন্সিপাল আদেশ করলেন কাউকে। তার মানে প্রিন্সিপালের সামনে বসে চা খেতে হবে। অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো।
"সো জেন্টলম্যান, ওয়েলকাম টু দ্য কলেজ। ইউ আর দ্য ফ্রেস ব্লাড ...।"

প্রিন্সিপাল ঝাড়া ইংরেজিতে অনেকক্ষণ কী কী বললেন আমি পুরোটা ঠিক বুঝতেও পারছিলাম না। সুচরিত দত্ত বেশ ইয়েস স্যার, অফকোর্স স্যার, সার্টেনলি স্যার ইত্যাদি বলছিলেন। এই কথাগুলো আমিও জানি, কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কখন বলতে হবে।

চা নিয়ে এলেন একজন মহিলা। টেবিলে চুপচাপ চা রেখে চলে যাচ্ছিলেন। নাসির স্যার ডাকলেন, "এই নিয়তি, রিফাৎ আরা ম্যাডাম রুমে থাকলে একটু আসতে বলো তো।"
"জ্বি স্যার।"
"স্যার, ফেয়ারওয়েলের প্রোগ্রামটা অ্যাপ্রুভ করা দরকার।"
"ও ইয়েস।"

প্রিন্সিপালের সামনে চা খেতে গিয়ে প্রায় ঘেমে ওঠার অবস্থা আমার। চা খুব গরম - সেজন্য নয়। চায়ে চুমুক দেয়ার সময় জোরে শব্দ হয় সে কারণে। পিরিচে ঢেলে ফু দিয়ে খেতে পারলে ভালো লাগতো। ভদ্রতা নামক ব্যাপারটা তো ভালো লাগার জন্য সৃষ্টি হয়নি। ওটা সৃষ্টি হয়েছে আমার মত মানুষদের কষ্ট দেয়ার জন্য।

আমি উশখুস করছিলাম উঠে চলে আসার জন্য। কিন্তু কীভাবে উঠবো বুঝতে পারছিলাম না। প্রিন্সিপালের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সে ব্যাপারে কোন ট্রেনিং আমার নেই। আদব-কায়দায় গন্ডগোল হয়ে গেলে তো মুশকিল। কিন্তু কোন কাজ ছাড়া শুধু শুধু বসে থাকার কোন মানে হয় না। জিজ্ঞেস করলাম, "স্যার, এবার যাই?"

সুচরিত দত্তসহ বের হয়ে এলাম। লন পেরিয়ে অন্য দিকের বারান্দায় টেবিল পাতা হচ্ছে। বিদায় অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। টিচার্স রুমে এসে দেখি কাইয়ুম স্যার, অঞ্জন স্যার, কাশেম স্যার আর সাঈদ স্যার বসে বসে কথা বলছেন। আমাদের ঢুকতে দেখে সাঈদ স্যার হাসতে হাসতে বললেন, "এই যে দু'জন নতুন পাপী।"
"পাপী কেন বলছেন সাঈদ ভাই?" - কাইয়ুম স্যার বললেন।
"আপনার তো ভাই পাপ খন্ডন হয়ে গেছে। এরা তো সবে শুরু করলো। পাপী না হলে কি আর এখানে আসে?"
সাঈদ স্যারের কথাগুলো কেমন যেন রহস্যময় মনে হচ্ছে। শিক্ষকতা করতে আসার সাথে পাপী হবার সম্পর্ক কী?
"প্রদীপ, ছাগলের গল্পটা জানেন তো?" - পানে চুন লাগাতে লাগাতে প্রশ্ন করলেন কাশেম স্যার।
"না স্যার, জানি না।"
"তাইলে শোনেন" - মুখের ভেতর পান গুঁজে দিয়ে বলতে শুরু করলেন কাশেম স্যার, "এক লোক প্রত্যেক সপ্তাহে ছাগলের মাথা কিনতো মজগ খাবার জন্য।"
"মজগ কী জিনিস?"
"মজগ - মজগ হইল গিয়া ব্রেইন।"
কাশেম স্যার মগজকে মজগ বলছেন।
"তো একদিন দেখে কি মাথার মধ্যে একটুও মজগ নাই। তো কসাইকে গিয়া জিগায় - আরে ছাগলের মজগ নাই ক্যান? কসাই কয় - আরে ওই ছাগল তো মাস্টার ছিল। মাস্টারি কইত্তে কইত্তে হেতের মজগ হানি হই গ্যাছে।"

সবার সাথে হা হা করে হাসলেও নিজের মগজের ভবিষ্যত চিন্তা করে আতঙ্কিত হয়ে উঠলাম।
স্কুলের পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবার পর কাইয়ুম স্যারের বিদায় অনুষ্ঠান শুরু হলো। বারান্দায় চেয়ার টেবিল পেতে শিক্ষকদের বসার ব্যবস্থা হলো। আর শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা হলো সামনের লনে বেঞ্চ পেতে। বিমান বাহিনীর সেই লম্বা অফিসার জামাল সাহেব, যাঁকে ভর্তি পরীক্ষার সময় দেখেছিলাম - তিনি এসেছেন। কাইয়ুম স্যার সম্পর্কে প্রচুর প্রশংসাবাক্য উচ্চারিত হলো। প্রিন্সিপাল স্যার কাইয়ুম স্যারের বিদায় যে কত বড় বেদনার তা বলতে বলতে হঠাৎ বললেন - কলেজে ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে নতুন দু'জন শিক্ষক মিস্টার প্রদীপ ও মিস্টার সুচরিত যোগ দিয়েছেন। শীঘ্রই আরো তিনজন শিক্ষক যোগ দেবেন। আমাকে আর সুচরিত দত্তকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে দিলেন শিক্ষার্থীদের সামনে। প্রিন্সিপালের বক্তৃতা যতক্ষণ চললো ততক্ষণ আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। এরপর শুরু হলো সঙ্গীতানুষ্ঠান। গতকাল রিহার্সালে যেরকম শুনেছিলাম - আজ তার চেয়ে অনেক ভালো হলো "আমরা করবো জয় একদিন...।"

এ অনুষ্ঠান শেষ হবার পর আবার প্রিন্সিপালের রুমে সব টিচারের ডাক পড়লো। আমরা সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ালাম সেখানে। কাইয়ুম স্যারকে কলেজের পক্ষ থেকে কিছু উপহার সামগ্রি দেয়া হলো। টিচারদের পক্ষ থেকে রিফাৎ আরা ম্যাডাম বক্তৃতা দিলেন। কাইয়ুম স্যার কতটা কর্মযোগী ছিলেন, সারাক্ষণ কত ব্যস্ত থাকতেন, শিক্ষার্থীদের জন্য কতটা ত্যাগস্বীকার করেছেন - ইত্যাদি সব ভালো ভালো কথা। কিন্তু সেসব ছাপিয়ে আমার কেবলই মনে হচ্ছিল - এতটা শুদ্ধ উচ্চারণে কীভাবে কথা বলে মানুষ!

No comments:

Post a Comment

Latest Post

Dorothy Crowfoot Hodgkin

  Look closely at the fingers of the person in the picture. Her fingers had not bent in this way due to age; she had been suffering from chr...

Popular Posts