অনেকেই বলেন
- আজকাল সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে উঠছে, কখন কী
হবে তা আগে থেকে কিছুই বলা যাচ্ছে না – ইত্যাদি। কিন্তু একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যাবে
যে আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন অনেক কিছুরই পূর্বাভাস এত সঠিকভাবে দেয়া সম্ভব হচ্ছে
– যা বিশ বছর আগেও এতটা নিখুঁতভাবে দেয়া সম্ভব হতো না। আবহাওয়ার কথা ধরা যাক। কোথায়
কখন ঝড় উঠবে, বৃষ্টি হবে, রোদ থাকবে কি মেঘ – সবই আগে থেকে সঠিকভাবে বলে দেয়া সম্ভব
হচ্ছে। বর্তমান যুগে উন্নত দেশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রায় অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়।
কীভাবে সম্ভব হচ্ছে আবহাওয়ার পরিবর্তন সম্পর্কে এরকম ভবিষ্যতবাণী করা?
শিল্পযুগ শুরু
হবার পর গত একশ বছরে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেছে শতকরা
চল্লিশ ভাগ। পৃথিবীর যে গড় তাপমাত্রা গত এক হাজার বছর ধরে প্রায় স্থির ছিল – সেই গড়
তাপমাত্রা হঠাৎ এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। যেভাবে এগোচ্ছে তাতে বিজ্ঞানীরা হিসেব
করে দেখেছেন যে এই একবিংশ শতাব্দীর মধ্যেই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা আরো দুই থেকে তিন ডিগ্রি
সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। ফলে পৃথিবীর জলবায়ুতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। যেখানে প্রচুর পানি
আছে – সেখানে বন্যার প্রাবল্য বেড়ে যাবে, অন্যদিকে যেখানে পানির অভাব, সেখানে আরো খরা
হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাবে ব্যাপক হারে। পরিবর্তনের এই যে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে
– তা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে?
এর মূলে রয়েছে
আধুনিক বিজ্ঞান। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার জন্য আবহাওয়াবিদ্রা যে তিনটি প্রধান বিষয়ের
উপর নির্ভর করেন – সেগুলি হলো পর্যবেক্ষণ, কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া মডেল, এবং
আবহাওয়ার বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক অভিজ্ঞতা। বায়ুমন্ডলের চাপ, তাপ, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ,
বায়ু-প্রবাহের গতিপথ ও বেগ ইত্যাদি একেক জায়গায় একেক রকম হয়ে থাকে। এগুলির পরিবর্তনও
হয় দ্রুত। তাই একেক জায়গার আবহাওয়া একেক রকম। বর্তমানে অনেকগুলি আধুনিক স্যাটেলাইট
পৃথিবীর চারপাশে অনবরত ঘুরে ঘুরে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করছে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের
আবহাওয়া-দপ্তরে অনবরত তথ্য পাঠাচ্ছে। এই তথ্যগুলিকে কম্পিউটার মডেলের মধ্যে প্রবেশ
করিয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়।
আবহাওয়ার কম্পিউটার
মডেল হলো আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার প্রধান অবলম্বন। আবহাওয়ার পরিবর্তনে পদার্থবিজ্ঞানের
যতগুলি নিয়ম কাজ করে তার সবগুলি গাণিতিক সমীকরণের মিশ্রণে তৈরি হয়েছে এই মডেল। বায়ুমন্ডলের
তাপ, চাপ, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, তাপের বিকিরণ, শোষণ, আপেক্ষিক তাপ, আপেক্ষিক আর্দ্রতা
ইত্যাদি হাজারো প্যারামিটারের যে কোনোটারই পরিবর্তনে বদলে যেতে পারে স্থানীয় আবহাওয়া।
তবে কতটুকু বদল হবে তা হিসেব করার জন্য পৃথিবীর জলবায়ুর গাণিতিক মডেল দরকার হয়। সেই
মডেলে কোটি কোটি উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয় খুবই কম সময়ের মধ্যে। এই কাজের জন্য সুপার-কম্পিউটার
ব্যবহার করা হচ্ছে এখন। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়ার গাণিতিক মডেল হিসেব করার জন্য যে সুপার-কম্পিউটার
ব্যবহার করা হয় সেটা প্রতি সেকেন্ডে ১৬০০ ট্রিলিয়ন হিসেব করতে পারে।
পদার্থবিজ্ঞানের
প্রতিষ্ঠিত নিয়ম কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন।
ষাটের দশকের সরল একমাত্রিক মডেল থেকে শুরু হয়ে ক্রমাগত উন্নত হতে হতে সেগুলি বর্তমানের
সুপার কম্পিউটার প্রযুক্তির যুগে প্রায়-নিঁখুত বহুমাত্রিক মডেলে পরিণত হয়েছে। জলবায়ু
পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেয়ার কার্যকর মডেল তৈরিতে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছেন আমেরিকার
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সুকুরু মানাবে এবং জার্মানির ম্যাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউট
অব মেটিওরলজির প্রফেসর ক্লাউস হাসেলমান। এজন্য তাঁদেরকে ২০২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল
পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই পথে বিজ্ঞানীদের পদচারণা শুরু হয়েছিল অনেক অনেক বছর
আগে।
আবহাওয়া কিংবা
জলবায়ুর পূর্বাভাস দেয়ার কাজ প্রথম শুরু হয়েছিল প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। খ্রিস্টপূর্ব
৫৮০ সালে গ্রিক দার্শনিক থেলিস পূর্ববর্তী বছরগুলির ফসলের পরিমাণ হিসেব করে আবহাওয়ার
পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। তবে সেই পূর্বাভাস ছিল অনেকটাই অভিজ্ঞতানির্ভর। এরপর খ্রিস্টপূর্ব
৩৫০ সালে অ্যারিস্টটল প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক আবহাওয়া-মডেল তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি সূর্যের তাপে পানি বাষ্প হয়ে মেঘ তৈরি করার ব্যাপারে সঠিক ধারণা দিয়েছিলেন। কিন্তু
তিনি বিশ্বাস করতেন যে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ঘুরছে, এবং মহাবিশ্বের সবকিছুই আগুন,
পানি, বাতাস আর মাটি দিয়ে তৈরি। ফলে তাঁর দেয়া ধারণাগুলি পরবর্তীতে পরিত্যক্ত হয়। কিন্তু
অ্যারিস্টটলের হাতেই আবহাওয়াবিজ্ঞানের নামকরণ হয় ‘মেটিওরলজি’ যা এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে।
গ্রিক শব্দ ‘মেটিওরস’-এর অর্থ হলো আকাশের উপরে। সেই সময় আকাশ থেকে যা কিছু আকাশে থাকে
বা আকাশ থেকে নেমে আসে – যেমন মেঘ, বৃষ্টি – সবকিছুকেই বলা হতো মেটিওর।
ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী
জোসেফ ফুরিয়ার পৃথিবীর বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হওয়ার কারণ আবিষ্কার করেন আজ থেকে প্রায় দু’শ
বছর আগে। তিনিই প্রথম ব্যাখ্যা করেছিলেন গ্রিনহাউজ ইফেক্টের ব্যাপারটা। সূর্যের আলো
পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ভেদ করে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। এই আলোর বেশিরভাগ পৃথিবীপৃষ্ঠ শোষণ
করে নেয়। এই শক্তি শোষণ করার পর পৃথিবীপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়ে অতিরিক্ত শক্তি বিকিরণ পদ্ধতিতে
বের করে দেয়। পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে যে শক্তি বেরিয়ে আসে – পৃথিবীর বায়ুমন্ডল সেটা শোষণ
করে নেয়। ফলে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। শক্তির আদান-প্রদানের এই পদ্ধতিতে একটা
সূক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটে। সূর্যের যে আলো পৃথিবীতে আসে – তার শক্তি অনেক বেশি। আলোর কোয়ান্টাম
তত্ত্ব অনুযায়ী সেই আলোর কম্পাঙ্ক বেশি, তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম। কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কারণে
আলো সহজেই পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ভেদ করে পৃথিবীতে চলে আসতে পারে। কিন্তু ভূপৃষ্ঠ থেকে
যে শক্তি নির্গত হয় – তা হয় তাপের আকারে। এই শক্তির তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি, কম্পাঙ্ক কম।
ফলে এগুলি পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ভেদ করে মহাশূন্যের দিকে চলে যেতে পারে না, বায়ুমন্ডলে
বাধা পেয়ে আবার পৃথিবীতেই ফিরে আসে। ফলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।
এই ব্যাপারটাই গ্রিনহাউজ ইফেক্ট। এই প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। অসংখ্য প্যারামিটার বা
সূচক এখানে জড়িত। তার সবগুলিকে হিসেব করে একটা মডেলের আওতায় নিয়ে আসা সহজ নয়। বিজ্ঞানীরা
বছরের পর বছর ধরে এই জটিল কাজটি করার চেষ্টা করছেন।
আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি
বোঝার জন্য একমাত্রিক গাণিতিক মডেলে বাতাসের তাপমাত্রার পরিবর্তন, আর্দ্রতার পরিমাণ,
বাতাসের বেগ, মেঘের ঘনত্ব ইত্যাদি প্যারামিটার যুক্ত করে পৃথিবীর জলভাগ ও স্থলভাগের
সাথে এসবের পরিবর্তন কীভাবে ঘটে তার পদার্থবৈজ্ঞানিক হিসেবগুলি বিবেচনায় নেয়া হয়। এরকম
একমাত্রিক মডেলে আবহাওয়া পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা বলা যায়, কিন্তু তাতে ফাঁক থেকে
যায় অনেকখানি।
বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের
পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে – এরকম কথা আমরা প্রায়ই শুনি
আজকাল। কথাটি সত্য। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণের সাথে যে তাপমাত্রার পরিবর্তনের
সরাসরি সম্পর্ক আছে তা প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন সুইডেনের পদার্থবিজ্ঞানী সান্তে আরহেনিয়াস
– একশ বছরেরও বেশি আগে উনিশ শতকের শেষের দিকে। ১৮৯৪ সালে আরহেনিয়াসের মডেল ছিল জলবায়ু
পরিবর্তনের সর্বপ্রথম গাণিতিক মডেল। আরহেনিয়াস ১৯০৩ সালে রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন।
স্বাভাবিক বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ শতকরা মাত্র ০.০৪৬ ভাগ, আর জলীয় বাষ্পের
পরিমাণ শতকরা এক ভাগের মতো। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে যে তাপ বের হয় তা বাতাসের এই জলীয় বাষ্প
ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিলে শোষণ করে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। পৃথিবীতে প্রাণের
উদ্ভব এবং জীবন ধারণের জন্য এই তাপ শোষণ প্রক্রিয়া খুবই দরকারি। কার্বন-ডাই-অক্সাইড
ও জলীয়বাষ্প যদি তাপ শোষণ না করতো তাহলে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা হতো মাইনাস আঠারো
ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমাঙ্কের নিচে সেই তাপমাত্রায় প্রাণের উদ্ভব হয়তো হতোই না। আরহেনিয়াস
তাঁর গাণিতিক মডেলের সাহায্যে হিসেব করে দেখিয়েছেন যে বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের
পরিমাণ যদি কমে গিয়ে অর্ধেক হয়ে যায়, তাতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা পাঁচ থেকে ছয় ডিগ্রি
কমে যেতে পারে। ফলে পৃথিবীতে আবার বরফ যুগ নেমে আসতে পারে। আবার কার্বন-ডাই-অক্সাইডের
পরিমাণ বেড়ে গেলেও পৃথিবীর জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। যার কিছু কিছু আমরা এখন দেখতে
পাচ্ছি।
আমেরিকার ন্যাশনাল
ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশানের
আগের নাম ছিল ইউনাইটেড স্টেটস ওয়েদার ব্যুরো। এই ব্যুরোর জিওফিজিক্যাল ফ্লুইড ডায়নামিক্স
ল্যাবোরেটরি (জিএফডিএল) জলবায়ুর একমাত্রিক মডেল উদ্ভাবন করেছিল ১৯৬০ সালের শুরুর দিকে।
এই মডেল ছিল বিকিরণ ও পরিচলনের সাম্যাবস্থার সমীকরণের উপর ভিত্তি করে উদ্ভাবিত। জলবায়ুর
পরিবর্তনে মূল ভূমিকা রাখে চার ধরনের তাপ বিনিময় প্রক্রিয়া। (১) সূর্য থেকে আলোর বিকিরণ
পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। এই স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ পৃথিবীপৃষ্ঠে শোষিত হয়। (২)
এরপর তাপ আকারে সেই বিকিরণ পৃথিবী থেকে উপরের দিকে চলে যায়। তখন তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়ে
যায়। এই দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ অনেকটুকুই বায়ুমন্ডলের নিচের স্তরের তাপমাত্রা
বাড়িয়ে দেয়। (৩) এরপর দেখা হয় পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে কতটুকু তাপ নির্গত হয়, এবং (৪) বাতাসের
পরিচলন প্রক্রিয়ায় কতটুকু তাপ বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে।
এই একমাত্রিক
মডেলের প্যারামিটারের সাথে বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিবর্তনের ব্যাপারটা যোগ
করে পদার্থবিজ্ঞানী স্যুকুরো মানাবে ১৯৬৭ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের একমাত্রিক মডেলের
একটি সরল পরীক্ষা বেশ সফলভাবে সম্পন্ন করেছিলেন। তিনি ভূপৃষ্ঠ থেকে চল্লিশ কিলোমিটার
উঁচু একটি বায়ুস্তম্ভ ধরে এই পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে এই উচ্চতায় ওজোনস্তর।
পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে যে তাপ বিকীর্ণ হয় তা এই স্তরেই শোষিত হয়ে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বাড়িয়ে
দেয়। স্যুকুরো মানাবে হিসেব করে দেখতে চাইলেন বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণের
তারতম্য ঘটলে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রার কী পরিবর্তন ঘটে। সেই সময়ের কম্পিউটারের কয়েক
শ ঘন্টা সময় লাগলো তাঁর মডেল দিয়ে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রার পরিবর্তন হিসেব করতে।
কিন্তু হিসেবে যা দেখা গেলো তা অত্যন্ত দরকারি একটি হিসেব। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের
পরিমাণ যদি দ্বিগুণ হয়ে যায় – তাহলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের গড় তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি বেড়ে
যাবে। ১৯৬৭ সালে মানাবে এই মডেল প্রকাশ করেন। এটা ছিল তাঁর একমাত্রিক মডেলের পরীক্ষা।
পরবর্তী কয়েক বছরে তিনি তাঁর একমাত্রিক মডেলকে ত্রিমাত্রিক মডেলে রূপান্তরিত করে আরো
অনেকগুলি পরীক্ষা করলেন। তাঁর ত্রিমাত্রিক মডেল প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালে।
আমাদের প্রতিদিনের
আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার জন্য যে মডেলটি অপরিহার্য সেটা হলো জেনারেল সার্কুলেশান মডেল
বা জিসিএম। ১৯৫৬ সালে আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী নরমান ফিলিপ্স প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইন্সটিটিউট ফর এডভান্সড স্টাডিজ-এ এই মডেলের সূচনা করেন। পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্র
কাজে লাগিয়ে বায়ুমন্ডলের উপরের স্তর ও নিচের স্তরে বাতাসের গতিবেগ এবং তাপমাত্রার স্থানীয়
পরিবর্তন হিসেব করা হয় এই মডেলে। ছোট ছোট ভৌগোলিক এলাকা ধরে নিয়ে সেখানে সৌরবিকিরণের
পরিমাপ হিসেব করা হয় বিকিরণের সূত্র প্রয়োগ করে। বাতাসের গতিপ্রকৃতি হিসেব করার জন্য
ব্যবহার করা হয় গতির সমীকরণ। তাপের বিকিরণ ও সঞ্চালন হিসেব করা হয় তাপগতিবিদ্যার সমীকরণ
অনুসারে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিচলন হিসেব করা হয় তরল বা বায়বীয় পদার্থের ইকোয়েশান
অব কন্টিনিউটি বা ধারাবাহিকতার সমীকরণ প্রয়োগে।
প্রথম জিসিএম-এর
সাফল্যের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষণাগারে এই মডেলকে স্থানীয়ভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস
দেয়ার উপযোগী করে তোলা হয় নিজ নিজে দেশের আঞ্চলিক উপাত্তগুলি মডেলে প্রয়োগ করার পর।
বর্তমানে কম্পিউটারের ব্যাপক শক্তিবৃদ্ধির সুযোগে এবং স্যাটেলাইটসহ অন্যান্য প্রযুক্তির
সমন্বয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার মডেলগুলি এতটাই উন্নত হয়ে উঠেছে যে এখন আবহাওয়ার
পূর্বাভাস অনেক ক্ষেত্রেই অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাচ্ছে।
তথ্যসূত্র:
১।
সুকুরু মানাবে ও অ্যান্থনি ব্রকোলি, বিয়ন্ড গ্লোবাল ওয়ার্মিং হাউ নিউমেরিক্যাল মডেলস
রিভিল্ড দ্য সিক্রেটস অব ক্লাইমেট চেঞ্জ’, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০২০।
২।
ক্যাথলিন সিয়ার্স, ওয়েদার ১০১, আদমস মিডিয়া, ২০০৮।
বিজ্ঞানচিন্তা এপ্রিল ২০২২ সংখ্যায় প্রকাশিত