Showing posts with label করোনা ভাইরাস. Show all posts
Showing posts with label করোনা ভাইরাস. Show all posts

Sunday, 13 June 2021

করোনাকাল ২০২০


 

১৫ এপ্রিল ২০২০

আমরা তো ঘরে থেকে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিরাপদে থাকছি। কিন্তু আমাদের চিকিৎসকদের তো সেই সুযোগ নেই। আমাদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়েই তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ভাইরাস তো আক্রমণ করছেই, মানুষও তাঁদের আক্রমণ করতে ছাড়ছে না। রাষ্ট্র আমাদের চিকিৎসকদের কথায় কথায় কড়া ধমক দিচ্ছে, রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার হুমকি দিচ্ছে, চাকরি খাবার হুমকি দিচ্ছে। অথচ একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যিনি করোনা রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন - তাঁর জন্য একটা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা   করেনি। করতে পারেনি নয়, করেনি। এটাও কি আমাদের চিকিৎসকদের জন্য একটি বার্তা - যে আপনারা শুধু সেবা দিয়েই যাবেন, সেবা দিতে দিতে মরবেন। তারপর ভেবে দেখা যাবে - আপনাদের জন্য কী করা যায়। মনে রাখা ভালো যে আপনাদের পদ আছে, কিন্তু পদমর্যাদা নেই।


১৩ এপ্রিল ২০২০

সীমাহীন অব্যবস্থাপনার দায় তো ব্যবস্থাপকদের উপরই বর্তানোর কথা। অথচ বলির পাঁঠা হচ্ছেন তাঁরাই যারা মন-প্রাণ দিয়ে কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন। যুদ্ধে জিতলে সব কৃতিত্ব সেনাপতির - কিন্তু হারলে সব দায় সৈনিকের?


৫ এপ্রিল ২০২০


ঢাকামুখী মানুষের ঢল। এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের ফলে সৃষ্ট মহামারীর দায়িত্ব কে নেবেন? পোশাক কারখানার মালিকরা কি দায়িত্ব নেবেন? সরকার কি দায়িত্ব নেবে? দায়িত্ব নেয়া তো দূরের কথা - দায় স্বীকার কি করবেন কেউ? 
ছবি - দীপু মালাকার। প্রথম আলো ৪/৪/২০২০। মাওয়া ঘাট।



৩১ মার্চ ২০২০

করোনা ভাইরাস শুধু বয়স্কদের মধ্যে সংক্রমিত হয় - এমন ধারণা সত্য নয়। অস্ট্রেলিয়ান ডাটা দেখুন।


অস্ট্রেলিয়ায় এপর্যন্ত ৪৫৫৭ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে মেডিকেল টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৮০০ জনের বয়স ২০ থেকে ২৯ এর মধ্যে। এই ভাইরাস নারী-পুরুষ বিচার করে না। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ এবং নারীর সংখ্যা প্রায় সমান। দয়া করে ঘরে থাকুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। রাস্তা খালি পেয়ে যারা ক্রিকেট খেলছেন, দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছেন অলিতে-গলিতে - আপনারা ডাক্তারদের কাজ কঠিন থেকে কঠিনতর করে দিচ্ছেন। প্লিজ নিজেকে এবং আপনার পরিবারকে সুস্থ রাখার দায়িত্বটুকু পালন করুন।


২৭ মার্চ ২০২০
গত শুক্রবার সিডনির বন্ডাই বিচ গিজগিজ করছিলো। তারপর পুলিশ দিয়ে সবাইকে সরিয়ে দিতে হয়েছে। আজ একই ঘটনা ঘটেছে মেলবোর্নের সেন্ট কিলদা বিচে। পৃথিবীজুড়েই কি অবিবেচক বাকসর্বস্ব মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, যারা সবসময় ভুল কাজ করবে আর অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাবে?




২৬ মার্চ ২০২০
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা সবার। সবার ভেতরই আতঙ্ক কাজ করছে, আক্রান্ত হবার আতঙ্ক। লক ডাউন চলছে। বেশিরভাগ মানুষ ইচ্ছেয়, আবার কেউ কেউ ইচ্ছের বিরুদ্ধে হলেও ঘরে থাকছেন। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘরে থাকার উপায় নেই। রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একেবারে সামনে থেকে যাদের যুদ্ধ করতে হয় - তারা হলেন ডাক্তার, নার্স, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী। পেশাগত দায়িত্ব পালন করার জন্য তাঁদের হাসপাতালে যেতে হয়, ক্লিনিকে যেতে হয়। রাষ্ট্র আদেশ জারি করেছে - জীবাণুর বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা-ব্যবস্থা যদি নাও থাকে - তাহলেও জনগণের চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। নইলে তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে।  লকডাউনের সময় যখন সব ধরনের পাবলিক পরিবহন বন্ধ - তখন ডাক্তাররা কীভাবে কাজে যাবেন সে ব্যাপারে কোন মাথাব্যথা কারো নেই। অথচ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলেই ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপদে হাসপাতালে যাতায়াতের ব্যবস্থাটুকু করতে পারেন। করোনা-যুদ্ধে জিততে হলে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার ব্যবস্থা করা সবচেয়ে বেশি জরুরি।


২৫ মার্চ ২০২০
বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গের কিছু বাড়িওয়ালা তাদের বাড়ি থেকে ডাক্তার ও নার্সদের চলে যেতে বলছেন, বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিচ্ছেন। কলকাতার কোন কোন "সচেতন" এলাকাবাসী ডাক্তার ও চিকিৎসাকর্মীদের এলাকাছাড়া করার দাবি তুলছেন। ধন্য ধন্য। আপনারাই মানুষ - আর ডাক্তাররা তো কসাই। আপনাদের ভাইরাস তারা ধারণ করবে, আপনাদের কফ-থুতু আপনারা তাদের গায়ে মেখে আসবেন, তারপর ভাইরাস ছড়াচ্ছে বলে তাদের বাড়িছাড়া করবেন, এলাকাছাড়া করবেন। আপনারা সবাই ঘরের দরজা বন্ধ করে 'ছুটি' কাটাবেন। আর যে ডাক্তার-নার্সরা ফ্রন্ট-লাইনে থেকে যুদ্ধ করছে আপনাদের প্রাণ বাঁচাতে - তাদের এবং তাদের পরিবারকে অপমান করবেন। এই না হলে আপনারা মানুষ! আপনারা যতই নাক-মুখ ঢেকে রাখুন - ভাইরাস আপনাদের আসল চেহারা প্রকাশ করে দিচ্ছে।


২২ মার্চ ২০২০
বাংলাদেশে অহেতুক হৈ চৈ করার জন্য টাকার অভাব হয় না সরকারের। অথচ এই সংকটকালে সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার ও চিকিৎসাকর্মীদের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় মাস্ক বা গ্লাভস কেনার টাকা থাকে না। জীবাণুনাশক তো দূরের কথা হাত ধোয়ার পানি পর্যন্ত থাকে না। কিন্তু সবাই মারমুখী হয়ে থাকে ডাক্তারদের গালি দেয়ার জন্য। সবার নিরাপত্তার দরকার আছে, কেবল ডাক্তারদেরই কিছু থাকতে নেই। তাদের ছুটি থাকতে নেই, ঘরসংসার থাকতে নেই, ছেলে-মেয়ে থাকতে নেই, ক্লান্তি থাকতে নেই, ক্ষোভ থাকতে নেই, ক্ষুধা-তৃষ্ণা থাকতে নেই। সমস্ত দায়িত্ব পালন করার পরে সামান্য ধন্যবাদটুকুও তাদের আশা করতে নেই।

২১ মার্চ ২০২০
আর কত নিচে নামবে এসব ব্যবসায়ী? ব্যবহৃত মাস্ক আর গ্লাভস বিক্রি করছে অসহায় আতঙ্কিত মানুষের কাছে! নীচতাতেই কি সেরা হতে হবে আমাদের? জাতি হিসেবে নাকি আমরা ধনী হচ্ছি? তাহলে এসব ব্যবসায়ী দিনে দিনে এত ইতর হচ্ছে কেন?


২১ মার্চ ২০২০
"করোনা ভাইরাস কীভাবে বানাইসে?" 
দিব্যর প্রশ্নে আমরা সবাই হেসে উঠি। মা-বাবা নিয়ম করে দিয়েছে বাসায় কথাবার্তা বাংলায় বলতে হবে। দিব্যর বাংলা উচ্চারণ বেশ মজার। অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে ওঠা আট-নয় বছরের শিশুরা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, কোডিং এসব নিয়েই মেতে থাকে। দিব্যও তার ব্যতিক্রম নয়। সে ভেবেছে করোনা এক ধরনের কম্পিউটার ভাইরাস। 

আমার ক্ষুদে ভাইটির কথায় হেসে উঠলেও - তার প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনা ভাইরাসের গঠন কি আমরা সম্পূর্ণ জানি? বিজ্ঞানীরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা এর বৈজ্ঞানিক প্রোফাইল জেনে যাবো এবং প্রতিষেধকও পেয়ে যাবো। 

কিন্তু তার আগে এর সংক্রমণ রোধ করা জরুরি। সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হবেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ তাঁদের প্রত্যেকেই মনে করেন - এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য অন্য কেউ দায়ী। এই জায়গায় আমাদের অহং অনেক বেশি কাজ করে। আমরা কিছুতেই স্বীকার করতে চাই না যে আমাদের ভুল আচরণের কারণে এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে। কমন সেন্স কাজ করে না আমাদের আবেগ কিংবা ইগোর কারণে। অনেকদিন বিদেশে থাকার পর অনেকের অহংকার যে হারে বেড়েছে, বিবেচনাবোধ সে হারে বাড়েনি সেটাও আমরা দেখতে পাচ্ছি। দিনের শেষে এদের কেউই তাদের নিজেদের ভুলের দায় স্বীকার করবেন না। তাই দায়িত্বপূর্ণ পদে যারা আছেন তাদের যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং তা বাস্তবায়নের জন্য দরকার হলে বল প্রয়োগ করতে পারতে হয়। কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত কি যথাসময়ে নেয়া হচ্ছে? 

অস্ট্রেলিয়ায় পার্সোনাল স্পেস অনেক বেশি। তাদের সারাদেশে যত শিক্ষার্থী আছে বাংলাদেশের শুধু মাত্র ঢাকা শহরেই আছে তার চেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী। তবুও অস্ট্রেলিয়ার যে ন্যাপল্যান টেস্ট (National Assessment Program - Literacy and Numeracy (NAPLAN)) হবার কথা ছিল মে মাসের মাঝামাঝি থেকে, সেই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু এপ্রিল মাসের শুরুতেই আমাদের সারাদেশে যে  উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে - তা এখনো পেছানো হয়নি, কোন সিদ্ধান্তও নেয়া হয়নি। রাষ্ট্র কি এখনো  বিশ্বাস করছে যে আগামী দশ দিনের মধ্যে কোন অলৌকিক উপায়ে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে?

****22/3/2020 আপডেট - এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সুবিবেচনার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।

১৮ মার্চ ২০২০
COVID-19 ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য ভিক্টোরিয়া রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে ১৬ মার্চ থেকে পরবর্তী চার সপ্তাহের জন্য। রাজ্যের চিফ হেল্‌থ অফিসার অর্থাৎ প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তার হাতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার আইনী ক্ষমতা দেয়ার লক্ষ্যেই এই জরুরি অবস্থা। এই সময়ে প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তাই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন এবং তা সবাই মেনে চলবেন। মেলবোর্নের স্টেট লাইব্রেরি, ন্যাশনাল গ্যালারি, মিউজিয়ামসহ অন্যান্য অনেক কিছু সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যাতে জনসমাগম রোধ করা যায়। কোন ব্যক্তি যদি জরুরি নির্দেশনা না মানেন তাকে বিশ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হতে পারে সাথে জেলও হতে পারে। আর কোন প্রতিষ্ঠান যদি নির্দেশনা না মানে তবে এক লক্ষ ডলার জরিমানা হতে পারে। রাজনৈতিক চাপাবাজি এখানেও আছে। তবে আপাতত জরুরি অবস্থায় তারা সবাই প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছেন। অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য রাজ্যেও অনুরূপ ব্যবস্থা চলছে।






করোনা ভাইরাস - বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ

 

উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়াতেও করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে।

হাত না ধুয়ে নিজের নাক মুখ স্পর্শ করবেন না। অন্যের কাছ থেকে কমপক্ষে ২ মিটার দূরে থাকুন। ঘরের ভেতরও এই দূরত্ব বজায় রাখুন।


প্রচন্ড ঠান্ডাতেও করোনা ভাইরাস টিকে থাকতে পারে। বাইরের তাপমাত্রা যত গরম বা ঠান্ডা হোক না কেন আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ঠিকই থাকে। করোনাকে কিছুতেই আমাদের শরীরে ঢুকতে দেয়া যাবে না। তার জন্য পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। নিজের হাত পরিষ্কার রাখুন। নাকে-মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন।


গরম পানিতে গোসল করলেই করোনা ভাইরাস আর শরীরে ঢুকতে পারবে না ভাবার কোন কারণ নেই। আপনার হাত দিয়েই করোনা ভাইরাস আপনার শরীরে ঢুকবে। তাই স্পর্শ থেকে বিরত থাকুন। হাত পরিষ্কার রাখুন। স্যানিটাইজার আর সাবান সমান কার্যকরী।  অন্যের কাছ থেকে কমপক্ষে দুই মিটার দূরে থাকুন। ঘরের ভিতরও এই দূরত্ব বজায় রাখুন। আপনার আপনজনকে ভালো রাখতে চাইলে - তাদের সাথে দূরত্ব বজায় রাখুন।


মশার কামড় থেকে করোনা ছড়ায় না। তবে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার কথা ভুলে যাবেন না।




হাত না ধুয়ে শুধুমাত্র আগুনে গরম করলেও হাত ধোয়ার সমান ফল পাবেন না। গরমে করোনা ভাইরাস মরে না। করোনা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।



শরীর থেকে করোনা ভাইরাস দূর করার জন্য অতিবেগুনি রশ্মি ব্যবহার করবেন না। অতিবেগুনি রশ্মি শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অতিরিক্ত অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ক্যান্সার হতে পারে।



এয়ারপোর্টের  থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা যায় না। থার্মাল স্ক্যানারে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে তা নির্ণয় করা যায়। করোনা থেকে জ্বর হলে তা থার্মাল স্ক্যানারে ধরা পড়ে। অন্য কোনভাবে জ্বর হলে তাও ধরা পড়ে। জ্বরের কারণ কী তা থার্মাল স্ক্যানার থেকে বোঝা যায় না।  করোনার ফলে জ্বর হতে প্রায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই সন্দেহ হলে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আলাদা থাকা জরুরি।



সারা শরীরে এলকোহল বা ক্লোরিন ছিটিয়ে দিলে করোনা ভাইরাস মরে যাবে ভাবার কোন কারণ নেই। শরীরে যদি ভাইরাস ঢুকে যায় তাহলে সেগুলোকে বাইরে থেকে মারা সম্ভব নয়। ক্লোরিন বা এলকোহল সেক্ষেত্রে অন্য ক্ষতি করতে পারে। শরীরে ভাইরাস ঢুকে গেলেই আপনি মারা যাবেন না। ঠান্ডা জনিত অন্যান্য ভাইরাসের মতই আপনার জ্বর হবে। আপনার রোগপ্রতিরোধক্ষমতা ভাল থাকলে আপনি সাধারণ চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু আপনি যেন অন্যের মধ্যে এই ভাইরাস না ছড়ান সেজন্য আপনাকে অবশ্যই আলাদা থাকতে হবে। দূরত্ব বজায় রাখুন, সুস্থ থাকুন।



নিউমোনিয়া কিংবা ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দিয়ে কি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। করোনা ভাইরাস নতুন ধরনের ভাইরাস। পুরনো টিকায় কাজ হবে না। সুতরাং কোন টিকা নেবেন না।



নাকে গরম পানির বাষ্প নিলে বা লবণ পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেই করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ভাবার কোন কারণ নেই।



রসুন খেলে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে - একথা বিশ্বাস করবেন না। রসুনের অনেক গুণ আছে ঠিক। কিন্তু রসুন করোনা ভাইরাস ঠেকাতে পারে না।



করোনা ভাইরাস সব বয়সী মানুষের মধ্যেই সংক্রমিত হতে পারে। তবে বয়স্ক মানুষ এবং যাদের শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ আছে - তাদের রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই কম থাকে। তাই আক্রান্ত হলে তাদের সমস্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হবে। বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষদের রক্ষা করার জন্য তাদের কাছ থেকে দূরে থাকুন - যেন আপনার মাধ্যমে তারা করোনা-আক্রান্ত না হন।



অ্যান্টিবায়োটিক করোনা ভাইরাসের উপর কোন কাজ করে না। শুধু করোনা কেন - কোন ভাইরাসের উপরই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে ব্যাকটেরিয়ার উপর। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই কোন অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।



করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য এখনো কোন ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তাই কারো কথায় প্রলুব্ধ হয়ে করোনা ভাইরাসের জন্য কোন ওষুধ খাবেন না।

২৮ মার্চ ২০২০

অস্ট্রেলিয়ার করোনা পরিস্থিতি

 


অস্ট্রেলিয়ার করোনা নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় ভালো। গ্রাফটি দেখুন। গত ৩০ মার্চ থেকে নতুন রোগীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। গত এক সপ্তাহে সারাদেশে গড়ে ৩৭ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে। এপর্যন্ত ৪ লাখ ৩১ হাজার জনের টেস্ট করা হয়েছে এবং তা থেকে ৬৬১৯ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। তাদের মধ্য থেকে ৪২৫৮ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন। এপর্যন্ত ৭১ জন মারা গেছেন। মৃত্যুর হার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম, আর সুস্থতার হার অনেক বেশি। অস্ট্রেলিয়ান সরকার এখনই সামাজিক দূরত্ব বুজায় রাখার আদেশ শিথিল করার পক্ষপাতী নয়। অস্ট্রেলিয়ান সরকার দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি দেশের জনগণকেও এই করোনা নিয়ন্ত্রণের সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন। কারণ জনগণ যদি নির্দেশনা না মেনে ঘর থেকে বের হয়ে আসতেন তাহলে দেশে সংক্রমণের হার অনেক বেড়ে যেতো, বাড়তো মৃত্যুও। 

২০ এপ্রিল ২০২০

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করোনা তত্ত্ব

 


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিছুদিন আগেও ভাবতে পারেননি যে করোনা ভাইরাস আমেরিকার অবস্থা এরকম লেজে-গোবরে করে ছাড়বে। তাদের সক্ষমতার বড়াইয়ে বাস্তবতার চেয়ে বাড়াবাড়িটা কিছুটা বেশি ছিল তা তারা এখন স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক শক্তিশালী দেশও সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে অনেক বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। আবার বিপরীত চিত্রও আছে। অনেক দেশেই করোনা-জনিত সংক্রমণের হার কম এবং মৃত্যু সংখ্যাও কম। করোনা আক্রান্ত হবার পরেও সুস্থ হয়ে গেছেন এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি তাদের দেশে। উদাহরণ অস্ট্রেলিয়া। এই দেশে এপর্যন্ত প্রায় পাঁচ লক্ষ জনকে টেস্ট করে ৬,৬৭৫ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। চিকিৎসা দেয়ার পর তাদের মধ্যে ৫,১৩৬ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন। মৃত্যু হয়েছে ৭৮ জনের। এই তুলনায় আমেরিকা কিংবা ব্রিটেনের সংখ্যা দেখলে বোঝা যাবে অতুল সম্পদ থাকার কারণেও সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় কিংবা ভুল করায় তাদের করোনা নিয়ন্ত্রণ বিলম্বিত হচ্ছে এবং অনেক বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানি ঘটছে। 

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গতকাল করোনা রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত দুটো মারাত্মক ভুল পরামর্শ দিয়েছেন যা শুধু ভুল-ই নয়, রীতিমত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু ক্ষমতার বলে তাঁর অপরাধকে অনেক সময় হেসে উড়িয়ে দেয়া হয়। ট্রাম্প বলেছেন আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি প্রয়োগ করে মানুষের শরীর করোনা-মুক্ত করার জন্য। আলট্রা-ভায়োলেট রে বা অতিবেগুনি রশ্মির কম্পাঙ্ক অনেক বেশি এবং এটা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। শরীরের চামড়ার উপর এর অত্যধিক প্রয়োগে ক্যান্সার হতে পারে। এবং এই রশ্মি শরীর প্রবেশ করলে তা আমাদের শরীর শোষণ করে নেয় এবং তা থেকে শরীরের অনেক ডিএনএ ধ্বংস হয়ে যায়। করোনা ভাইরাস আমাদের শরীরে একবার ঢুকে গেলে আলট্রা-ভায়োলেট রে তাকে কিছুই করতে পারবে না, বরং আমাদের ত্বকের এবং অন্যান্য কোষের মারাত্মক ক্ষতি করবে। 
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরো বলেছেন যেন ইঞ্জেকশান বা অন্য কোন উপায়ে শরীরের ভেতর জীবাণুনাশক প্রয়োগ করে করোনা ভাইরাস ধ্বংস করা যায় কি না পরীক্ষা করে দেখতে। শরীরের ভেতর কোন জীবাণুনাশক প্রবেশ করালে করোনা-ভাইরাস মরবে না, কিন্তু মানুষ মরে যাবে। 

ট্রাম্প যা বলেছেন সেগুলো তিনি নিজে বিশ্বাস করেন কি না তা দেখার একমাত্র উপায় হলো তাঁর শরীরে এই দুটো পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখা। কিন্তু তা তো হবে না। কারণ নেতারা সবসময় সুরক্ষিত থাকেন। তারা যা খুশি বলতে পারেন, যা খুশি করতে পারেন। 

করোনা-ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে না দেয়াই হলো করোনা থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় উপায়। তাই আমাদের উচিত নিজেদের আলাদা রাখা, পরিচ্ছন্ন থাকা, ঘরে থাকা।  আর আমাদেরকে সুস্থ রাখার জন্য, আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য  যাঁদের ঘরে থাকার উপায় নেই, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে  যাঁরা কাজ করছেন হাসপাতালে, ক্লিনিকে, রাস্তায়, দোকানে – যেখানে প্রয়োজন সেখানে, আমাদের উচিত তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।

২৫ এপ্রিল ২০২০


Latest Post

ফ্ল্যাশ রেডিওথেরাপি: ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা

  যে রোগের কাছে পৃথিবীর মানুষ সবচেয়ে বেশি অসহায় – তার নাম ক্যান্সার। প্রতি বছর ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে। ধারণা করা হ...

Popular Posts