Saturday 23 May 2020

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী - পর্ব ১৩

13

দু’একটা গোয়েন্দা কাহিনি পড়ার পর অনেক সময় নিজেকে গোয়েন্দা বলে মনে হয়। চিরকূট রহস্য খুব সহজেই সমাধান করে ফেলেছি ভেবে মনে মনে নিজেকে ফেলুদা ভেবে ফেলেছিলাম। কিন্তু ইদ্রিস আমার ভাবনার বেলুন ফুটো করে দিলেন। লেখাটা আয়শা ম্যাডামের নয়। তাহলে বাকি থাকে শুধু একজন – ইভা। কিন্তু সে আমার ক্লাসে পিয়নের মারফত চিরকূট পাঠাবে কেন? এমনিতেই তো তার সাথে প্রতিদিন দেখা হয়, কথা হয়। তবু নিশ্চিত হবার জন্য ইদ্রিসকে জিজ্ঞেস করলাম, “কে দিয়েছেন ওটা?”
“বাবুল।”
“বাবুল কে?”
“বাবুল হোসেন স্যার। কলেজের মালি।”
“বাবুল হোসেন আমাকে দেখা করতে বলেছেন?”
“জ্বি না স্যার। বাবুল আমাকে কাগজটি দিয়েছে।”
“বাবুলকে কে দিয়েছে?”
“আমি দেখিনি স্যার। বাবুল বলেছে একজন মহিলা এসে দিয়ে গেছে আপনাকে দেয়ার জন্য। মনে হয় কোন গার্ডিয়ান হবে।”
“কাগজটি আপনি পড়েছেন কেন?”
ইদ্রিস কোন উত্তর দিলেন না; যেন আমার প্রশ্নটি শুনতেই পাননি। বললেন, “আমি যাই স্যার। ল্যাব বন্ধ করতে হবে।” খুব ব্যস্ত হয়ে হ্যাঙ্গারের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলেন ইদ্রিস।

ইদ্রিসকে দোষ দিয়ে কী হবে। অন্যের চিঠি খুলে পড়ার ইচ্ছে দমন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। খামবন্ধ চিঠি খুলে পড়ে ফেলে অনেকে, এ তো খোলা চিঠি। ইদ্রিসের বুদ্ধি কম বলেই হঠাৎ জিজ্ঞেস করে ফেলেছে দেখা হয়েছে কি না। একজন মহিলা এই চিঠি দিয়েছেন বলেই কি কৌতূহলের মাত্রা এত বেশি তার? কিন্তু কে হতে পারেন এই মহিলা? শাহীন কলেজের কোন শিক্ষার্থীর মা – যিনি আমাকে চেনেন? নাকি অন্য কেউ? বাবুল হোসেনের সাথে কথা বলতে হবে।

কলেজের মালি বাবুল হোসেনের কাজ-কর্ম নিয়ে মাঝে মাঝে হাসিঠাট্টা করেন নাসির স্যার আর সাঈদ স্যার। বাবুল হোসেন নাকি কাজে ফাঁকি দেয়ার ওস্তাদ। নাসির স্যার বলেন, “বাবুলকে দেখে মনে হবে তার ঘিলুর পরিমাণ বোয়াল মাছের ঘিলুর চেয়ে কম। কিন্তু সে তোমাকে এক হাটে কিনে অন্যহাটে বিক্রি করে আসতে পারবে।“

বোয়াল মাছের মাথায় ঠিক কী পরিমাণ ঘিলু আছে আমি জানি না। বাবুল হোসেনের ঘিলুর সাথে কীভাবে তা তুলনীয় তাও ঠিক বুঝতে পারি না। কিন্তু বাবুল হোসেনকে যতবারই দেখেছি – কেমন যেন বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী বলে মনে হয়েছে। হ্যাঙ্গারের সামনের রাস্তা পার হয়ে কলেজে ঢুকার সময় ডানদিকের সীমানা দেয়ালের কাছেই পেয়ে গেলাম বাবুল হোসেনকে। ডানহাতে কাস্তে, বসে আছেন ঘাসের ওপর। মনে হচ্ছে ঘাস কাটতে কাটতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন। অথচ সেই সকাল থেকেই তিনি এই কয়েক মিটার জায়গায় ঘুরঘুর করছেন। আমাকে দেখেই ব্যস্ত হয়ে ঘাস কাটতে শুরু করলেন।

“বাবুল ভাই, শোনেন।”
“জ্বি ছার।” উঠে দাঁড়ালেন বাবুল হোসেন।
“আপনাকে কি কোন কাগজ দিয়েছিল কেউ?”
“ইদ্রিসকে দিছি ছার।”
“আপনাকে ওটা কে দিয়েছিল মনে আছে?”
“একজন লেডিজ গাডিয়ান।”
“গার্ডিয়ান কীভাবে বুঝলেন? আপনি চেনেন তাকে?”
“আমি চিনি না ছার। আমি ছার ঘাস কাটতেছিলাম…”

বাবুলের সাথে কথা বলে নতুন কিছুই জানা গেল না। বাবুল চেনেন না মহিলাকে। আগে কখনো দেখেছেন কি না বলতে পারছেন না। মহিলা নাকি গেট দিয়ে দ্রুত ঢুকে আশেপাশে কাউকে না দেখে বাবুলকে ডেকে কাগজটি আমাকে দিতে বলে চলে গেছেন। বাবুল কাগজটি নিয়ে টিচার্স রুমের দিকে যাবার সময় ইদ্রিসের সাথে তার দেখা হয়। ইদ্রিস তার কাছ থেকে কাগজটি নিয়ে নেয়।

“মহিলার বয়স কত হতে পারে?”
“বিশ-চল্লিশ বছর হতে পারে ছার।”  তবুও ভালো, দশ-নব্বই বলেননি। এরকম অনির্দিষ্ট তথ্যদাতা বাবুল হোসেনের সাথে আর কথা বলার কোন মানে হয় না।

ছুটি হয়ে গেছে। কলেজের ছেলে-মেয়েরা দল বেঁধে চলে যাচ্ছে। বারান্দায় দেখা হয়ে গেল অঞ্জন স্যারের সাথে। তিনি অ্যাটাচিকেস হাতে দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে বললেন, “আমি একটা স্টুডেন্টের গাড়িতে চলে যাচ্ছি। কাল দেখা হবে।” ছোলাইমান স্যারও ছুটছেন অঞ্জন স্যারের সাথে। বললেন, “আজকে ট্রাক দেবে। আমিও চলে যাচ্ছি স্টুডেন্টের গাড়িতে।”

অনেক স্টুডেন্ট নিজেদের গাড়িতে আসা-যাওয়া করে কলেজে। স্যার-ম্যাডামরা লিফ্‌ট চাইলে তারা যে খুব খুশি হয় তা নয়। তবে মুখের উপর না-ও করতে পারে না। অঞ্জন স্যার আর ছোলাইমান স্যার সেরকম কোন গাড়িতে চলে গেলেন।

স্যার-ম্যাডামদের মধ্যে যাঁরা ঘাঁটিতে থাকেন তাঁরাও দল বেঁধে চলেছেন গেটের দিকে। তাঁদের গাড়ি আসবে একটু পরেই। সুচরিত স্যারও চলে যাচ্ছেন রিফাৎ আরা ম্যাডাম আর হোসনে আরা ম্যাডামের সাথে। আমার সাথে চোখাচোখি হতেই সুচরিত স্যার বললেন, “রিহার্সাল আছে।”  জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতার রিহার্সাল চলছে পুরোদমে। রিফাৎ আরা ম্যাডাম, সুচরিত স্যার, হোসনে আরা ম্যাডাম, নাসরীন ম্যাডাম – অনেক পরিশ্রম করছেন এই বিতর্কের জন্য। ছুটির পরেও ম্যাডামদের বাসায় বিতার্কিকদের নিয়ে রিহার্সাল করছেন।

ভাইস-প্রিন্সিপাল ম্যাডাম, লাইলুন্নাহার ম্যাডাম, সংযুক্তা ম্যাডাম আর আইভি ম্যাডামও চলে যাচ্ছেন এক সাথে। পিয়ন মিজান একটা বেবিটেক্সি ডেকে এনেছেন তাঁদের জন্য।

টিচার্স রুমে ঢুকে দেখি আলী হায়দার স্যার আর সুপাল স্যার ছাড়া বাকি সবাই চলে গেছেন। সুপাল স্যার বললেন, “আজ ট্রাক দেবে বলে সবাই চলে গেছে।”
“ট্রাক দেবে মানে কী”
“বাসের বদলে একটা ট্রাক যাবে শহরে।”
“সবাই ট্রাকে করে শহরে যাবে?”
“হ্যাঁ। কোন অফিসার যদি শহরে না যায়, তারা বাসের বদলে ট্রাক দেয়। আমরা তো লাফিয়ে উঠে ট্রাকে করে চলে যেতে পারি। সমস্যা হয় ম্যাডামদের। শাড়ি পরে ট্রাকে ওঠা যায় না।”

এবার বুঝতে পারছি কেন সবাই দল বেঁধে চলে গেছেন আজ। কী ধরনের ট্রাক দেয় তা দেখতে হবে।
“ও ম্যাডাম, আপনি রয়ে গেছেন।” – সুপাল স্যারের কথায় ঘাড় ফিরিয়ে দেখলাম ইভা দাঁড়িয়ে আছে দরজায়।
“না স্যার, এয়ারফোর্সের ট্রাক কীরকম দেখার জন্য রয়ে গেছি। আমি কখনো ট্রাকে চড়িনি।” দুরন্ত কিশোরীর মত সারাক্ষণ ছটফট করছে ইভা। ইতোমধ্যেই কলেজের ছেলে-মেয়েরা হোসেন আসমা ইভা ম্যাডামের ফ্যান হয়ে গেছে। কাইয়ুম স্যার চলে যাবার পর একটা বিরাট শূন্যতা তৈরি হবার কথা ছিল। কিন্তু কাইয়ুম স্যারের বিদায়ের কয়েকদিন পরেই ইভা জয়েন করায় কলেজের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সেরকম কোন শূন্যতা তৈরি হয়নি।

ইভা আমাদের ব্যাচমেট। তবে ক্যাম্পাসে তাকে কয়েকবার দেখলেও কথা হয়নি কখনো। আমাদের ডিপার্টমেন্টের হাফিজ আর মইনের সাথে তার খুব ভালো পরিচয় আছে। তারা কীভাবে সময় ম্যানেজ করতো জানি না। আমি সাত বছরের ইউনিভার্সিটি জীবনে সাতবারও আর্টস ফ্যাকাল্টিতে যাবার সময় পাইনি। হাফিজ অবশ্য এটাকে সময়ের অভাব বলে না, বলে সাহসের অভাব। থার্ড ইয়ারের ইলেকট্রনিক্স ল্যাবে ঢুকতে যে সাহস লাগে, সায়েন্স ফ্যাকাল্টি থেকে আর্টস ফ্যাকাল্টিতে যাবার জন্য সাহস লাগে তার চেয়ে বেশি। কারণ তার মতে ইলেকট্রনিক্স ল্যাবে যে ইলেকট্রনের প্রবাহ এদিক-ওদিক হলে সার্কিট জ্বলে যেতে পারে, তারচেয়ে অনেক বেশি বিপদের সম্ভাবনা থাকে আর্টস ফ্যাকাল্টিতে। সেখানে যেসব আগুন ঘুরে বেড়ায়, একটু অসাবধান হলেই তাদের আঁচে হৃদয় কিংবা মস্তিষ্কের সার্কিট জ্বলে যেতে পারে। সে যাই হোক, সেদিকে যাবার সময়, কিংবা সাহস আমার কোনদিনই হয়নি। কিন্তু ঘটনাচক্রে আর্টস ফ্যাকাল্টির একটি অগ্নিবালিকা আমার সহকর্মী হয়ে গেছে। ব্যাচমেট থেকে সহকর্মী হলে সবচেয়ে বড় যে সুবিধাটা হয়, তা হলো কথাবার্তার মাঝখানে পেশাগত দূরত্বটা দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় না। ফলে সহজেই একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারে।

বারান্দায় বেরিয়ে এলাম। দেখলাম বায়োলজির শাহনাজ ম্যাডাম আর বাংলার নাসরীন ম্যাডাম গেটের দিকে যাচ্ছেন।
“তুমি কি আমাকে আজ ক্লাসের পর দেখা করতে বলেছিলে?” ইভাকে জিজ্ঞেস করলাম।

সে অবাক হয়ে বললো, “আমি? না তো। কেন বলতো।”
পকেট থেকে ভাঁজকরা কাগজটি বের করে জিজ্ঞেস করলাম, “এটা কি তোমার লেখা?”
“দেখি, এটা? আমার হাতের লেখা এত সুন্দর হলে তো আর কথা ছিল না। ‘ক্লাসের পর আমার সাথে একটু দেখা করো। কথা আছে তোমার সঙ্গে’- হুঁ হুঁ, খুব কাছের মানুষের লেখা মনে হচ্ছে। কীভাবে পেলে? কে দিলো?”
“বিশ-চল্লিশ বছরের কোন মহিলা দিয়ে গেছে আমাকে দেয়ার জন্য।”
“তো তোমার মনে হলো যে আমি লিখেছি এটা? আমাকে কি তোমার চল্লিশ বছরের মহিলা বলে মনে হচ্ছে?”
“চল্লিশের উপর জোর দিচ্ছ কেন? তার আগে বিশ আছে তো।”
“তোমাকেই যে এটা লিখেছে সেটার নিশ্চয়তা কী? এখানে তো কোন নাম নেই। এটা তো যখন যার হাতে দেবে, তখন তার বলে মনে হবে। এখন আমিও তো ভাবতে পারি যে এটা তুমি আমাকে দিলে। মানে তুমি আমাকে বলছো ক্লাসের পর তোমার সাথে দেখা করতে। আমার সাথে তোমার অনেক কথা আছে। হিহিহি।”

হাসিঠাট্টা হলেও এদিকটা ভেবে দেখা হয়নি। এমনও তো হতে পারে আমার ক্লাসের কোন স্টুডেন্টকে দিতে বলেছে, যে লেখাটা দেখেই চিনতে পারবে। বাবুল হোসেন ঠিকমত বুঝতে পারেনি।

বারান্দায় একটা গুইসাপ আস্তে আস্তে হাঁটছে। দেখে মনে হচ্ছে কালের পরিক্রমায় ডাইনোসর ছোট হতে হতে গুঁইসাপ হয়ে গেছে। এই সাপগুলো এখানে আছে বলেই এখনো বেঁচে আছে। বাইরে কোথাও হলে কবেই পিটিয়ে মেরে ফেলতো। আমাদের ভেতর কেমন যেন একটা বিধ্বংসী ভাব আছে। পাখি দেখলেই আমরা ধরে ফেলতে চাই। ফুল দেখলেই ছিঁড়ে ফেলতে চাই। সাপ দেখলেই মারতে চাই। অথচ এই কাজগুলোর কোনটারই কোন দরকার নেই। আবার অন্যদিকে ময়লা দেখলেই কিন্তু আমরা পরিষ্কার করে ফেলতে চাই না। অন্যায় দেখলেই আমরা প্রতিবাদ করার জন্য লাফিয়ে উঠি না।

ভাবনায় ছেদ পড়লো। ট্রাক এসে গেছে। কয়েক মিনিট পরেই লাফিয়ে ট্রাকে উঠতে হলো। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এই ট্রাকগুলো দিয়ে তাদের মালপত্র আনা-নেয়া করে, সম্ভবত লোকজনও। মাটি থেকে প্রায় তিন-চার ফুট উচ্চতার পাটাতন। সামনে ড্রাইভারের পাশে তিন জনের বসার ব্যবস্থা আছে। তিনজন হৃষ্টপুষ্ট বিমানসেনা বসে আছেন সেখানে। আশা করেছিলাম তাঁরা নেমে গিয়ে আমাদের তিন জন ম্যাডামকে সেখানে বসার জন্য অনুরোধ করবেন। কিন্তু তাঁরা ভ্রু-কুঁচকে আমাদের দিকে, বিশেষ করে ম্যাডামদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। একটি বাসে যতজন বসতে পারে, এই ট্রাকে বসতে পারে তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ। ইতোমধ্যেই ট্রাক ভর্তি হয়ে গেছে। ট্রাকের দুপাশে লোহার বেঞ্চে লোক ভর্তি। বাসে দাঁড়াতে দেয় না কাউকে। বসার জায়গা না থাকলেও বলা হয় ‘অ্যাডজাস্ট করে বসেন।’ অথচ ট্রাকের মাঝখানেও দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে। কোনকিছু ধরে ঠিকমতো দাঁড়ানোর উপায় নেই। ট্রাকের পেছনে লাগানো লোহার সরু সিঁড়িতে পা রেখে অনেক কষ্ট করে ট্রাকে উঠতে হলো ম্যাডামদের।

কোনদিন ট্রাকে চড়েনি বলে ট্রাকে চড়ার যে একটা বিপুল উৎসাহ দেখা গিয়েছিল ইভার মধ্যে, ট্রাকে ওঠার পর যখন দেখলো যে জোড়ায় জোড়ায় চোখ জ্বলজ্বল করতে করতে তার দিকে তাকিয়ে আছে, সেই উৎসাহ উবে গেল মুহূর্তেই। সুপাল স্যার, আলী হায়দার স্যার আর আমি কোন রকমে মানুষের ভীড়ে দাঁড়াবার জায়গা করে নিলাম। যাঁরা বসেছিলেন তাঁরা একটু একটু সরে বসে ম্যাডামদের জন্য কিছুটা জায়গা ছাড়লেন। স্বাভাবিক অবস্থায় সেই জায়গায় কোন রকমে হয়তো একজন বসতে পারতেন, কিন্তু এখন বসতে হলো তিন জনকে। ট্রাক চলতে শুরু করার পর মনে হলো যিনি ট্রাক চালাচ্ছেন তিনি ভুলে গেছেন যে পেছনে যাঁরা আছেন তাঁরা মানুষ – তাঁদেরকে টিনের বাক্সে ঢুকিয়ে এভাবে ঝালমুড়ি বানানোর মত ঝাঁকানো যায় না।

কাস্টম হাউজের কাছে নেমে গেলেন নাসরীন ম্যাডাম ও শাহনাজ ম্যাডাম। ইভার দিকে তাকালাম। চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিল। তার পাশের জনের আচরণে তার হাসি পাচ্ছে। বুঝতে পারলাম হাসি সামলানোর চেষ্টা করছে সে। তার পাশের জন চোখ বন্ধ করে ঝিমুচ্ছেন; একটু পর পরই তাঁর মাথা ঠেকে যাচ্ছে ইভার কাঁধে। আগ্রাবাদে ট্রাক থেকে নামার সময় হাহাহা করে হেসে ফেললো ইভা। আলী হায়দারও নেমে গেলেন সেখানে। এতক্ষণে বসার জায়গা পেলেন সুপাল স্যার। ইভার জায়গায় বসলেন তিনি। খেয়াল করে দেখলাম সুপাল স্যার বসার সাথে সাথেই এতক্ষণ ধরে ঝিমুচ্ছিলেন যে ভদ্রলোক, তাঁর ঝিমুনি বন্ধ হয়ে গেল।

দেওয়ান হাট ব্রিজে উঠার পর ড্রাইভার ঘোষণা দিলেন ট্রাক নিউমার্কেটের দিকে যাবে না, টাইগারপাস দিয়ে সোজা ষোলশহর চলে যাবে। ষোলশহর থেকে ট্রেন ধরেন অনেকেই। তাঁরা হঠাৎ খুশি হয়ে হাহাহাহা করে হেসে উঠলেন। নিউমার্কেট হয়ে যখন গাড়ি যায়, তখনো কিন্তু তাঁরা ষোলশহরেই নামেন। আজ হয়তো কয়েক মিনিট আগে পৌঁছাবেন তাঁরা। তাতেই এত খুশি! নাকি যাঁরা নিউমার্কেটের দিকে থাকেন, তাদের আজ অনেক কষ্ট হবে দেখেই এই আনন্দ! এ কেমন মানসিকতা আমাদের, যে অন্যের কষ্ট দেখে আনন্দ লাগে!

সুপাল স্যার নেমে গেলেন টাইগারপাসে। তারপর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ট্রাক চলে এলো ষোলশহর স্টেশনের সামনে। ড্রাইভার ঘোষণা দিলেন এটাই শেষ স্টেশন। খুবই বিনীতভাবে জিজ্ঞেস করলাম, “চকবাজারের দিকে যাবেন না?”

ড্রাইভার খুব বিরক্ত হয়ে বললেন, “শেষ স্টেশন মানে হলো লাস্ট স্টেশন, আখেরি স্টেশন। গাড়ি চকবাজার যাবে না। এখানে একটা পোলট্রি ফার্ম থেকে মেসের জন্য মুরগি নেয়া হবে।” ড্রাইভারকে অহেতুক বিরক্ত করার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে নেমে গেলাম।


পরেরদিন সকালে যাওয়ার সময় গাড়িতে আরেকটি ঝামেলা হলো। আমরা নতুন অনেকে জয়েন করাতে বিমান বাহিনীর বাসে টিচারদের জন্য যে ক’টা সিট রিজার্ভ রাখা ছিল – তাতে আর কুলোচ্ছিল না। চকবাজার থেকে উঠে আমরা কোন রকমে বসতে পেরেছি। কিন্তু দেওয়ানহাট থেকে মেহেরুন্নেসা ম্যাডাম যখন উঠলেন তখন বাসে আর সিট নেই। ম্যাডামরা অনেক কষ্টে তিন জনের জায়গায় চার জন বসলেন। সাদা পোশাকের বিমান-সেনাদের কয়েকজন শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত আসনে বসে যেভাবে শিক্ষকদের দিকে তাকাচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে আমরা তাদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে ফেলেছি। আগ্রাবাদ থেকে যখন ইভা আর অঞ্জন স্যার উঠলেন, তখন তাঁদের বসার কোন সিট নেই। বিমান সেনাদের কয়েকজন তিন জনের আসনে দু’জন করে বসেছেন। তারা সরে বসে টিচারদের বসার জায়গা করে দেয়ার ন্যূনতম ভদ্রতাটুকুও করছেন না। সুপাল স্যার, ছোলাইমান স্যার আর আমি বসেছি পাশাপাশি। যথাসম্ভব ঘনীভূত হয়ে ইভার জন্য জায়গা করলাম। সে বসলো আমার পাশে। কিন্তু অঞ্জন স্যারকে বসতে দিচ্ছেন না বিমানসেনারা। অঞ্জন স্যার মৃদুকন্ঠে তাদের একজনকে বললেন, “এক্সকিউজ মি, এটা তো টিচারদের সিট। আপনি একটু সরে বসলে আমিও বসতে পারি।”

ভদ্রলোক ক্ষেপে গেলেন। বললেন, “কিসের টিচারের সিট? সিভিলিয়ানদের জন্য কি আমরা আমাদের গাড়িও ছেড়ে দেব নাকি?”

পাঁচলাইশ থেকে একজন অফিসার আসেন গাড়িতে। তিনি সামনের তিন জনের সিট একা দখল করে ওয়াসিম-অঞ্জু ঘোষের সিনেমায় রাজারা যেভাবে সিংহাসনে বসে থাকে – সেভাবে বসে আছেন। পেছনে উচ্চস্বরে এত কথা হচ্ছে তাতেও তিনি নির্বিকার। অঞ্জন স্যার আর কথা না বাড়িয়ে সোজা সামনে গিয়ে সেই অফিসারের পাশে বসে পড়লেন। দেখলাম অফিসার তাতেও নির্বিকার। মনে হচ্ছে তিনি নির্বিকার থাকার কোয়ান্টাম মেথড আয়ত্ত্ব করে ফেলেছেন।

কলেজের গেটে নেমে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে টিচাররা সিদ্ধান্ত নিলেন বাসের ঘটনা প্রিন্সিপালকে জানাতে হবে। টিচাররা যে বিমান বাহিনীর গাড়িতে আসা-যাওয়া করছেন তাতে অনেক বিমানসেনা অসন্তুষ্ট। তাদের চোখে টিচাররা ‘ব্লাডি সিভিলিয়ান’ ছাড়া আর কিছুই নয়। বছরের পর বছর একটা দেশ সেনাশাসকের অধীনে থাকলে এরকমই হয়। সেনাশাসন থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পেয়েছে মাত্র তিন বছর হলো। তাও সম্পূর্ণ মুক্তি পেয়েছে কীভাবে বলি। এখনো সরকারের প্রায় পুরোটাই অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের হাতে।

“ঘোড়াটা বেশি বেয়াদব। দেখলেন অঞ্জন বাবু কেমন বেয়াদবি করলো আজ।” – ছোলাইমান স্যার বললেন।
“ঘোড়া কে?” – জানতে চাইলাম।
“অঞ্জন বাবুর সাথে যে খারাপ ব্যবহার করেছে। তার নাম ঘোড়া।” – ছোলাইমান স্যার বললেন। মানুষের নাম ঘোড়া কীভাবে হয় কে জানে।

প্রিন্সিপাল স্যার আসার সাথে সাথে অঞ্জন স্যারের নেতৃত্বে আমরা প্রিন্সিপালের রুমে হাজির হলাম। ম্যাডামরাও এলেন। অঞ্জন স্যার খুব গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলতে পারেন। তিনি প্রিন্সিপাল স্যারকে বললেন বাসে কী কী হয়েছে।

“আপনাদের সবার বাসের পারমিট আছে না?”
“জ্বি স্যার, আছে।”
হ্যাঁ, বাসে চড়ার জন্য আমাদের একটা পারমিট দেয়া হয়েছে। পরিচয়পত্রের সাথে আলাদা একটি কাগজ।
“ঠিক আছে। আমি ওসি এডমিনের সাথে কথা বলবো এ ব্যাপারে। আপনাদের সাথে যে মিসবিহেভ করেছে তার নাম জানেন?”
কয়েক সেকেন্ড কেউ কোন কথা বলছেন না দেখে হঠাৎ আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, “ঘোড়া স্যার।”
“হোয়াট?”
“স্যার, যিনি খারাপ ব্যবহার করেছেন তার নাম ঘোড়া।”

প্রিন্সিপালের গম্ভীর মুখ থমথমে হয়ে গেল। সেই বায়বীয় চা-এর পর থেকে তিনি আমার উপর অসন্তুষ্ট। মনে হচ্ছে এখনো তার রেশ কাটেনি। তিনি গম্ভীরভাবে বললেন, “লুক মিস্টার প্রদীপ, সবকিছু নিয়ে হাসিঠাট্টা করা ঠিক না। আমি কি ওসি এডমিনকে বলবো যে ওয়ান অব মাই স্টাফ হ্যাজ বিন মিসবিহেইভড বাই ওয়ান অব ইওর স্টাফ কল্ড ঘোড়া?”

আমি আশা করেছিলাম ছোলাইমান স্যার আমাকে সমর্থন করে বলবেন যে লোকটার নাম আসলেই ঘোড়া, কিংবা ডাকনাম ঘোড়া। কিন্তু তিনি কিছু না বলে চুপ করে রইলেন। বুঝলাম প্রিন্সিপালের সামনে ঘোড়ার নাম ঘোড়া নয়।

প্রিন্সিপাল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “ওকে। আই উইল সি দিস ম্যাটার। থ্যাংক ইউ।”

টিচার্স রুমে এসে ছোলাইমান স্যার আমার উপর রেগে গেলেন। “আপনার বুদ্ধি এত কম কেন? প্রিন্সিপালের সামনে বলে দিলেন লোকটার নাম ঘোড়া?”
“আপনিই তো বললেন তার নাম ঘোড়া।”
“আমি কি প্রিন্সিপালের সামনে বলেছি?” – ছোলাইমান স্যারের রেগে যাওয়ার ক্ষমতা তুলনাহীন।

“কী হয়েছে?” – নাসির স্যার জানতে চাইলেন। প্রিন্সিপালের রুমে তিনি ছিলেন না। ছোলাইমান স্যার আমার আজ সকালের বোকামির বিস্তারিত বিবরণ দিলেন। নাসির স্যার সব শুনে হাসতে হাসতে বললেন, “আরে কোন ব্যাপার না। ঘোড়ার আসল নাম দশ মিনিটের ভেতর জানা যাবে।”

একটু পরেই ক্লাস শুরু হয়ে গেল। ফার্স্ট পিরিয়ড থেকে থার্ড পিরিয়ড পর্যন্ত একটার পর একটা ক্লাস শেষ করে ডেস্কে এসে বসতে না বসতেই পিয়ন কাশেম এসে অ্যাডজাস্টমেন্টের খাতা ধরিয়ে দিলেন। এই নিরীহ মোটা সাদা খাতাটাকে টিচারদের কেউ পছন্দ করেন না। মহিউদ্দিন স্যার এই খাতাকে বলেন ‘বেগারি খাটা’। অ্যাডজাস্টমেন্ট হলো অনুপস্থিত কোন শিক্ষকের ক্লাস নেয়া। ভাইস-প্রিন্সিপাল ম্যাডাম প্রতিদিনের রুটিন দেখে কোন শিক্ষক যদি অনুপস্থিত থাকেন সেদিন সেই সময়ে যে টিচার ফ্রি থাকেন তাঁকে সেই শিক্ষকের ক্লাসে পাঠান। আগে থাকতে জানা যায় না কার কোন্‌দিন কোন্‌ অ্যাডজাস্টমেন্ট ক্লাসে যেতে হবে।

“আবার ক্লাস দিয়েছে তোমাকে?” মহিউদ্দিন স্যার জানতে চাইলেন।
“জ্বি স্যার। ইলেভেন বি-তে যেতে হবে এখন।”
“স্কুল সেকশানের টিচাররা অনেক আরামে আছেন। কলেজ সেকশানের সবাইকে স্কুলের ক্লাসে যেতে হয়। কিন্তু স্কুল সেকশানের কাউকে কলেজের কোন অ্যাডজাস্টমেন্টেও যেতে হয় না। এই যে এখন – স্কুলের কোন ক্লাস নেই। অথচ তুমি আমি ক্লাস করে মরছি।”

মহিউদ্দিন স্যারের কথায় যুক্তি আছে কিছু, কিন্তু আবেগও আছে অনেক। এভাবে দেখলে কি চলে? সবাই এভাবে ভাবতে চাইলে তো কত কিছু ভাবা যায়। আর্টসের মাত্র একটি সেকশান। সায়েন্সের তিনটি সেকশান। আর্টসের অর্থনীতি কিংবা ইতিহাসের একটি ক্লাস নিলে হয়। অথচ ফিজিক্স কিংবা কেমিস্ট্রির নিতে হয় তিনটি ক্লাস, আবার প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস। এভাবে ভেবে শুধু শুধু মন খারাপ করার কোন মানে হয় না। বিভিন্ন ক্লাসে যেতে – বিশেষ করে যে ক্লাসে নিয়মিতভাবে যাওয়া হয় না, সেই ক্লাসে যেতেও বেশ ভালো লাগে আমার। সেকেন্ড ইয়ারের সাথে আমার নিয়মিত কোন ক্লাস নেই। অথচ এখন অনির্ধারিতভাবে প্রায় প্রতিদিনই তাদের ক্লাসে যাচ্ছি আয়েশা ম্যাডামের অনুরোধে।

ফোর্থ পিরিয়ডে আবার গেলাম একাদশ বি সেকশানে। তারা সবাই হৈ চৈ করে উঠলো। জিজ্ঞেস করলাম, “তোমরা সবাই যেভাবে হৈ চৈ করে উঠলে, মনে হচ্ছে আমি আসাতে খুব একটা খুশি হওনি।”
“না স্যার, খুশি হয়েছি স্যার। খুশিতে হৈ চৈ করছি স্যার।”
“এটা কার ক্লাস?”
“আম স্যারের ক্লাস স্যার।” সবাই কেন যেন একটু বেশি বেশি হাসছে।
“আম স্যার কে?”
“আবদুল মজিদ স্যার।”

ছেলেমেয়েদের দোষ দেয়া যাবে না। রুটিনে আবদুল মজিদের সংক্ষিপ্ত রূপ আম-ই হয়। আমাকে প্রিন্সিপাল স্যারের ক্লাসে পাঠানো হয়েছে ইংরেজি পড়ানোর জন্য।
“কিন্তু আমি তো ইংরেজি জানি না।” – বললাম।
“আমরা কিন্তু এখন কিছুতেই ফিজিক্স পড়বো না স্যার।” – অনেকটা আদুরে জেদি গলায় বললো গুলশান। মনে হলো পুরো ক্লাস তার সাথে এক মত।
“তাহলে?”
“গল্প করবো স্যার।” – ইরফান বললো।
“কিন্ত আমি গল্প করলে সেটা যেখানেই শুরু করি ফিজিক্সে গিয়ে শেষ হবে।”
“আমরা তা হতে দেব না স্যার।”
“কেন ফিজিক্সকে তোমরা এতটাই অপছন্দ করো?”
“অপছন্দ করি না স্যার। ফিজিক্স স্যার ভালো জিনিস স্যার। ভালো জিনিস স্যার বেশি হয়ে গেলে ভালো লাগবে না।”

ছেলেমেয়েদের ফিলোসফি ভালোই লাগছে।
বললাম, “তাহলে ইংরেজিই পড়া যাক।”
“না স্যার, না স্যার।”
“আরে, আমি কি তোমাদের লেভেলের ইংরেজি জানি না কি। শিশুদের ইংরেজি পড়া যাক। তোমরা কি জানো – আই গো আপ্‌, উই গো ডাউন এর ভাবার্থ কী?”
“না স্যার, জানি না স্যার। আপনি বলেন।” – বুদ্ধিমান ক্লাস, বুঝে গেছে যে আমি গল্পই বলছি।
“তোমরা কি সুকুমার রায়ের গল্পটা পড়েছো?”
“না স্যার।”

সুকুমার রায়ের গল্পের হুবহু ব্যাপারটা আমার নিজেরও মনে নেই। পড়েছিলাম অনেক আগে। কিন্তু গল্প বলতে গেলে সেখানে নিজের কিছু ঢুকিয়ে দিলে দোষ হয় না। বললাম, “সংস্কৃতের পন্ডিত প্রকুকে পাঠানো হয়েছে আম স্যারের ইংরেজির ক্লাস নিতে। ছাত্ররা ইংরেজি বই এগিয়ে দিল। পন্ডিত বই খুলে দেখলো লেখা আছে – আই গো আপ, উই গো ডাউন। পন্ডিত তো বিপদে পড়ে গেল। এসবের অর্থ তো তার জানা নেই। কিন্তু পড়াতে তো হবে। ছাত্রদের তো বলা যাবে না যে আমি জানি না। পন্ডিত নিজের মত অর্থ করার চেষ্টা করলো। আই হলো চক্ষু মানে চোখ। গো হলো গরু। আর আপ্‌ হলো – ওই যে ক্ষিতি আপ্‌ মরু ব্যোম্‌ - আপ্‌ মানে পানি। তাহলে কী দাঁড়ালো – আই গো আপ -অর্থাৎ গরুর চোখে পানি। কিন্তু কেন? গরুর চোখে পানি কেন? উই গো ডাউন – উই মানে উই পোকা। গো ডাউন – মানে গোডাউন – গুদাম গুদাম। গুদামে উইপোকা ধরেছে। তাহলে আই গো আপ, উই গো ডাউন – এর ভাবার্থ হলো গুদামে উইপোকা ধরেছে তাই গরু কাঁদছে।”

সামান্য একটি গল্প শুনে ছেলেমেয়েরা যে কত খুশি হয় তা যদি আমাদের শিক্ষকরা জানতেন।
>>>>>>>

টিফিন আওয়ারে নাস্তা করা গেলো না। ডাক পড়লো প্রিন্সিপালের অফিসে। আবার কী দোষ করলাম বুঝতে পারছি না। ক্লাসে গিয়ে ‘আম স্যার’ শুনে হেসেছি – এটাও কি প্রিন্সিপাল স্যারের কানে পৌঁছে গেছে? এখন কি ডেকে নিয়ে আম খেতে দেবেন? কিন্তু এই শীতকালে আম পাবেন কোথায়? তবে কি ‘আই গো আপ, উই গো ডাউন’ বলে হাসাহাসি করাটা উচিত হয়নি? প্রিন্সিপাল স্যারের সেন্স অব হিউমার আদৌ আছে কি না আমি এখনো জানি না।

“স্যার আসি?” – প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের পর্দার মাঝখানে গলা ঢুকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
“জাস্ট এ মোমেন্ট” – বলে প্রিন্সিপাল স্যার নিজেই বের হয়ে এলেন। দরজা থেকে একটু দূরে গিয়ে প্রায় ফিসফিস করে বললেন, “মিস্টার প্রদীপ। হেল্প মি। এক অফিসার এসে বসে আছেন দু’ঘন্টা হলো। যাচ্ছেনও না। আমাকে কোন কাজও করতে দিচ্ছেন না। ননস্টপ স্পিকিং। ইংলিশ লিটারেচার থেকে ফিলোসফি কিছুই বাদ রাখছেন না। এখন বলছেন ফিজিক্সেও উনার ইন্টারেস্ট আছে। আপনি প্লিজ কোনভাবে ফিজিক্সের কোন প্রসঙ্গ তুলে উনাকে আমার রুম থেকে বের করেন।” – বলেই দ্রুত রুমে ঢুকে গেলেন। তারপর উচ্চস্বরে গম্ভীরভাবে বললেন, “ইয়েস মিস্টার প্রদীপ, প্লিজ কাম ইন।” – অভিনয় করলে অনেক ভালো করতে পারতেন প্রিন্সিপাল স্যার।

রুমে ঢুকতেই প্রিন্সিপাল স্যার বললেন, “হ্যালো মিস্টার প্রদীপ, প্লিজ মিট স্কোয়ার্ডন লিডার সোবহান। অ্যান্ড স্যার, দিস ইজ মিস্টার প্রদীপ, আওয়ার নিউ ফিজিক্স লেকচারার। হি উইল বি দি রাইট পার্সন ফর ইউ টু ডিসকাস ফিজিক্স।”

স্কোয়ার্ডন লিডার সোবহানের সাথে হ্যান্ডশেক করতে করতে খেয়াল করলাম তাঁর কপালের এক পাশে গভীর একটি কাটা দাগ, চোখ দুটো অস্বাভাবিক বড়।

2 comments:

  1. "আই গো আপ, উই গো ডাউন" গল্পটা আসলেই সুন্দর। আপনি অনেক সুন্দর মানুষকে হাসাতে পারেন। তবে চিঠির ব্যাপারটা কি হলো?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আই গো আপ, উই গো ডাউন - এটা সুকুমার রায় থেকে ধার করা। চিঠির ব্যাপারটা পরের পর্বে জানা গেছে।

      Delete

Latest Post

অলিভিয়া নিউটন-জন

  কাজের সুবাদে মাঝে মধ্যে যেতে হয় অস্টিন হাসপাতালে। ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ সেখানে ক্লিনিক্যাল কাজকর্ম শেখে, আবার অনেকেই পাস কর...

Popular Posts