Thursday 26 September 2024

অলিভিয়া নিউটন-জন

 



কাজের সুবাদে মাঝে মধ্যে যেতে হয় অস্টিন হাসপাতালে। ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ সেখানে ক্লিনিক্যাল কাজকর্ম শেখে, আবার অনেকেই পাস করে সেখানে কাজ করছে। হাইডেলবার্গে অনেকগুলি বিশাল বিশাল ভবনজুড়ে এই হাসপাতালের কর্মযজ্ঞ। যতবারই হ্যারোল্ড স্টক্‌স বিল্ডিং-এর নিউক্লিয়ার মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের বাংকার থেকে বের হয়ে রেডিওথেরাপি ডিপার্টমেন্টের দিকে যাই – অলিভিয়া নিউটন-জন বিল্ডিং-এ ঢুকে যাই। মুগ্ধ হয়ে দেখি সেখানকার কার্যক্রম। ২০১৫ সাল থেকে ঝকঝকে নতুন বহুতল দৃষ্টিনন্দন ভবনে চালু হয়েছে অলিভিয়া নিউটন-জন ক্যান্সার ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার। চালু হবার মাত্র নয় বছরের মধ্যেই এখন দেড়শোর মতো ক্যান্সার গবেষণা প্রকল্প চলছে এই সেন্টারে, চলছে দুই শতাধিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল – যেখানে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার পদ্ধতি এবং প্রয়োগ নিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। অবাক হবার পাশাপাশি শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতায় মাথা আপনাআপনিই নত হয়ে যায় অলিভিয়া নিউটন-জনের প্রতি – যাঁর উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ক্যান্সার রোগীদের সেবা ও  চিকিৎসার গবেষণা প্রতিষ্ঠান।


অলিভিয়া নিউটন-জন ক্যান্সার ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার

অস্ট্রেলিয়ান গায়িকা ও অভিনেত্রী হিসেবে অলিভিয়া নিউটন-জনকে আমরা অনেকেই চিনি। কিন্তু তিনি যে তাঁর সারাজীবনের অর্জিত সমস্ত ধন সম্পদ দিয়ে ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই।

১৯৪৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে জন্ম অলিভিয়ার। তাঁর মা আইরিন ছিলেন জার্মান। আইরিনের বাবাকে আমরা সবাই চিনি – নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্স বর্ন। ম্যাক্স বর্নের নাতনি অলিভিয়া। অলিভিয়ার বাবা ব্রিনলি নিউটন-জন ছিলেন ব্রিটিশ। মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনার জন্য অলিভিয়ার পাঁচ বছর বয়সে ইংল্যান্ড থেকে মেলবোর্নে চলে আসেন তাঁরা। মেলবোর্নেই অলিভিয়ার শৈশব কৈশোর লেখাপড়া বেড়ে ওঠা।


অলিভিয়া নিউটন-জন


ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি আগ্রহ। মেলবোর্নের কফি বারে গান করা শুরু করেছিলেন কৈশোরের শুরুতে। ১৯৬৫ সালে ১৭ বছর বয়সে ট্যালেন্ট কনটেস্ট জিতে ইংল্যান্ডে যান গানের রেকর্ড করতে। ১৯৭১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর গানের প্রথম অ্যালবাম। ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু হয় তাঁর গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জেতা। ক্যারিয়ারে বারো বার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন,  চার বার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন (১৯৭৪, ১৯৭৫ (২), ১৯৮৩) অলিভিয়া নিউটন-জন। এছাড়াও আরো সতেরটি পুরষ্কার জিতেছেন তিনি সংগীতের জন্য।


গ্রিজ মুভিতে অলিভিয়া নিউটন-জন



হলিউডে অভিনেত্রী হিসেবে তাঁকে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া মিউজিক্যাল মুভি গ্রিজ। জন ট্রিভোল্টার বিপরীতে অলিভিয়া নিউটন-জন ছিলেন অনবদ্য। এরপর আরো কয়েকটি মুভিতে অভিনয় করলেও তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।

১৯৮৪ সালে তিনি বিয়ে করেন তাঁর দীর্ঘদিনের বয়ফ্রেন্ড ম্যাট ল্যাটানজিকে। ১৯৮৬ সালে তাঁদের প্রথম সন্তান ক্লোয়ির জন্ম হয়। মেয়েকে সময় দেয়ার জন্য তিনি সংগীত জগত থেকে বিরতি নেন কয়েক বছর। ১৯৯৫ সালে ম্যাটের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাঁর।

১৯৯২ সালে তিনি আবার পুরোপুরি সঙ্গীতাঙ্গনে ফিরে আসেন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি তাঁর সঙ্গীত চালিয়ে গেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।

১৯৯২ সালে অলিভিয়ার স্তনক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ার কারণে তাঁকে চিকিৎসা করে রোগমুক্ত করা সম্ভব হয় পরবর্তী এক বছরের মধ্যে। সার্জারি ও কেমোথেরাপির মাধ্যমে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তখন থেকেই তিনি কাজ করে দিয়েছিলেন মেলবোর্নে একটি ক্যান্সার গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তোলার। নিজের সঞ্চয় এবং তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিলেন।


অলিভিয়া ও আমাজন


২০০৮ সালে অলিভিয়া নিউটন-জন আবার বিয়ে করেন আমাজন জন এস্টারলিংকে। ক্যান্সার রোগীদের সহায়তা ও ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছেন অলিভিয়া, আর তাঁর পাশে থেকে অবিরাম সহযোগিতা করেছেন আমাজন।

২০১৭ সালে তাঁর ক্যান্সার আবার ফিরে আসে। এবার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করতে করতেও তিনি ক্যান্সার গবেষণার জন্য কাজ করে গেছেন। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট ক্যালফোর্নিয়ায় জীবনাবসান হয় অলিভিয়া নিউটন-জনের।

ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় তাঁর অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা। ২০১৯ সালে তিনি পেয়েছেন কম্প্যানিয়ন অব দ্য অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া খেতাব, ২০২০ সালে হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার, ২০১৬ সালে পেয়েছেন আমেরিকার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড।


ক্যান্সার গবেষকদের সাথে অলিভিয়া


ক্যান্সার রোগের কাছে মানুষ এখনো ভীষণ অসহায়। এই অসহায় মানুষদের প্রকৃত সহায় হচ্ছে তাদেরকে সেবা এবং চিকিৎসা দেয়ার মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানগুলি। এরকম সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যারা গড়ে তোলেন, গড়ে তোলার মানসিকতা যাদের থাকে – তাদের সম্মানে মাথা নত হয়ে আসাটাই তো স্বাভাবিক।

অলিভিয়া নিউটন-জন, আপনাকে সালাম।

শুভ জন্মদিন। 


Tuesday 24 September 2024

Happy Birthday Dear Faraday

 


Dear Mr. Michael Faraday,

On your birthday, I offer you my respect and gratitude. You were born on September 22, 1791, in a small, unknown place called Newington Butts in London. However, through your scientific discoveries and innovations, not only you became famous, but your birthplace also gained recognition.

The saying "No matter where one is born, the work should be good" resonated with you as well. Despite being born into a poor family of a blacksmith and not having the opportunity to attend school or college, you did not let that hold you back. With your own efforts, you learned to read. While working as a mere bookbinder’s apprentice, you read every book that came into your hands. But you didn’t just read, you learned to think critically. The lack of formal education in mathematics didn’t stop you either. You demonstrated your expertise in experimental physics.

At that time, England wasn’t short of people who recognized true talent (and still isn't). You met the famous physicist Sir Humphry Davy, who appreciated your talent and scientific curiosity and gave you the opportunity to research at the Royal Institution. Your lack of formal education wasn’t an obstacle then.

Thanks to your contributions, the world has witnessed a revolution in electrical devices. In 1831, you discovered electromagnetic induction — the process of generating electricity from a magnetic field and vice versa. Between 1833 and 1834, you discovered the relationship between electrical flow and chemical reactions, known as the principle of electrolysis. The field theory — particularly the concept of the magnetic field — that challenges us today was introduced by you.

By inventing the electric motor, you changed the way the entire world works. If you hadn’t discovered the process of generating mechanical motion from electrical current, perhaps we would still be reliant only on physical strength. The list of your discoveries and innovations goes on and on.

We use the gifts of science for our own benefit, but we often fail to express gratitude, or when we do, it is directed elsewhere. But since you were a true scientist, such things probably didn’t concern you.

Oh great Faraday, as a humble student of physics, I salute you on your birthday.

Happy birthday, oh great one.


মাইকেল ফ্যারাডের জন্মদিনে

 


জনাব মাইকেল ফ্যারাডে,

আপনার জন্মদিনে আপনার প্রতি শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

১৭৯১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর লন্ডনের নিউইংটন বাটস নামের এক অখ্যাত জায়গায় আপনি জন্মেছিলেন। কিন্তু আপনার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আপনি নিজে যখন বিখ্যাত হলেন, আপনার জন্মস্থানও বিখ্যাত হয়ে গেল।

“জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো” – এরকম আপ্তবাক্য আপনার ভাষাতেও ছিল। আপনি আপনার দরিদ্র কামার মা-বাবার ঘরে জন্ম নেয়াটাকে ভাগ্য বলে মেনে নিয়ে, স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করতে না পারার ব্যাপারটাকে বিধাতার ইচ্ছা বলে মনে করে চুপ করে বসে থাকেননি। নিজের চেষ্টায় আপনি বই পড়তে শিখেছিলেন। বই বাঁধাইয়ের দোকানের সামান্য কর্মচারী হিসেবে বই বাঁধাই করতে করতে যেসব বই হাতের কাছে পেয়েছিলেন, সব বই পড়ে ফেলেছিলেন। শুধু পড়া নয়, পড়তে পড়তে আপনি চিন্তা করতে শিখেছিলেন। গাণিতিক বিজ্ঞানে আপনার প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব আপনাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আপনি পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানে আপনার দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন।

সেই সময় আপনার দেশ ইংল্যান্ডে প্রকৃত মেধার মর্যাদা দেয়ার লোকের অভাব ছিল না (এবং এখনো নেই)। আপনার সাথে পরিচয় হয়েছিল সেই সময়ের বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্যার হামফ্রে ডেভির সাথে। তিনি আপনার মেধা এবং বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসাকে যথাযথ সম্মান দিয়ে আপনাকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন রয়েল ইন্সটিটিউশানে গবেষণা করার। আপনার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি সেদিন।

আপনার হাত দিয়েই ধরতে গেলে পৃথিবীর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির বিপ্লব ঘটে গেছে। ১৮৩১ সালে আপনি আবিষ্কার করেছেন তড়িতচুম্বক আবেশ। চুম্বক ক্ষেত্র থেকে বিদ্যুৎ এবং বিদ্যুৎক্ষেত্র থেকে চুম্বকত্ব – এসব আপনারই আবিষ্কার। ১৮৩৩-৩৪ সালে আপনি আবিষ্কার করেছেন বিদ্যুৎ প্রবাহ এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক – ইলেকট্রোলাইসিস বা তড়িৎবিশ্লেষণের নীতি। বর্তমানে আমরা যে গাণিতিক ক্ষেত্রতত্ত্বের ধারণা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি – সেই ক্ষেত্রতত্ত্বের – বিশেষ করে চৌম্বকক্ষেত্রের ধারণা আবিষ্কার করেছিলেন আপনি।

বৈদ্যুতিক মটর উদ্ভাবন করে পুরো পৃথিবীর কর্মপদ্ধতি আপনি বদলে দিয়েছেন। বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করে যান্ত্রিক গতি তৈরির পদ্ধতি যদি উদ্ভাবন আপনি না করতেন তাহলে সম্ভবত আমরা এখনো শারীরিক শক্তির উপরই নির্ভর করতাম। আপনার আবিষ্কার এবং উদ্ভাবনের তালিকা আরো অনেক দীর্ঘ।

আমরা বিজ্ঞানের অবদানকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করি, কিন্তু কৃতজ্ঞতা জানাই না। কিংবা জানালেও অন্য কাউকে জানাই। কিন্তু আপনি বিজ্ঞানী বলেই তাতে আপনার কিছু যায় আসে না।

হে মহান ফ্যারাডে, আপনার জন্মদিনে একজন সাধারণ পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমি আপনাকে অভিবাদন জানাচ্ছি।

শুভ জন্মদিন হে মহাত্মন।


Friday 20 September 2024

Social and Psychological Reasons behind Mob-Justice

 




Recently in Bangladesh, a mob justice incident occurred at Dhaka University on September 19, 2024, where a man named Tofazzal Hossain was beaten to death by students at Fazlul Huq Muslim Hall. He was suspected of being a thief, and a group of university students assaulted him before the university’s proctorial team took him to the police instead of the hospital. He was later declared dead. Four students involved in the attack were arrested, and a murder investigation is ongoing to ensure justice for the victim. [Daily Star 19/9/2024]




Mob justice is a complex phenomenon with deep social and psychological roots. It occurs when individuals, driven by shared emotions and frustrations, form a group to take justice into their own hands, bypassing legal systems. Several social and psychological factors contribute to the rise of mob justice in a society.

While mob justice may provide a sense of immediate resolution for some, it is typically criticized for leading to violent, unjust, and often erroneous actions that can harm innocent people, as it lacks the protections of due process and legal safeguards.

 

Social Reasons Behind Mob Justice:

Weak Legal Institutions: In societies where law enforcement is slow, corrupt, or ineffective, people may lose faith in the ability of the justice system to provide fair and timely punishment. The absence of effective legal recourse can push citizens to form mobs and enforce justice themselves.

Community Solidarity and Collective Identity: In tightly knit communities, individuals are more likely to band together to protect or avenge their own. This is often driven by a sense of shared identity and loyalty, where an offense against one member of the community is seen as an offense against all.

Social Inequality and Injustice: In highly unequal societies, where marginalized communities feel that the formal justice system only serves the rich and powerful, mob justice can emerge as an alternative. It becomes a means of asserting control or restoring a sense of justice in the face of systemic inequality.

Cultural Norms and Tradition: In some cultures, there is a history of resolving conflicts through communal or tribal mechanisms outside of formal legal systems. Even in the presence of modern courts, traditional methods of justice can persist, making mob justice an accepted norm.

Frustration with Formal Legal Systems: In many cases, people resort to mob justice when they believe that the legal system is too slow, corrupt, or ineffective at delivering justice. This can happen in regions where law enforcement is perceived as being unresponsive or incapable of adequately addressing crime.

Social Pressure and Collective Emotions: Mob justice is often fuelled by strong emotions like anger, fear, or a desire for revenge. When a group feels wronged or threatened, individuals within the mob may act in ways they wouldn't alone, driven by the collective mindset and fear of inaction.

Distrust in Authorities: Where the government, police, or judicial systems are seen as unreliable or biased, people might feel that their only option is to take matters into their own hands. This is common in places with weak state presence or high levels of corruption.

Lack of Legal Education: In some communities, people may not fully understand or trust formal legal procedures and may see mob justice as a more direct and effective way to deal with crime, unaware of the dangers of wrongful accusations and lack of evidence.

Breakdown of Law and Order: During periods of political instability, war, or social upheaval, formal legal systems may collapse, creating a power vacuum in which people feel compelled to administer justice on their own terms.

 




Psychological Reasons Behind Mob Justice:

Deindividuation: In a mob, individuals often experience a loss of personal responsibility due to the anonymity provided by the group. This psychological phenomenon, known as deindividuation, makes individuals more likely to engage in behaviours they would avoid on their own, such as violence or aggression.

Example: During the 2013 vigilante attack in Brazil, where a mob tied a suspected thief to a lamp post and beat him, many participants likely acted out of a sense of collective anonymity and safety in numbers.

Groupthink and Peer Pressure: Mob justice is frequently driven by groupthink, where the desire for consensus and unity suppresses dissenting voices or rational thinking. Individuals may feel pressured to conform to the group’s actions, even if they personally disagree with the methods being used.

Example: In 2020, an accusation of theft in a neighbourhood in South Africa led to a mob killing two individuals. Later investigations revealed that some mob members were unsure about the guilt of the accused but went along with the crowd.

Moral Disengagement: People can psychologically distance themselves from the harm they cause in a mob by justifying their actions as serving a greater good. They may convince themselves that they are punishing someone who deserves it or are acting on behalf of the community, disengaging from the moral consequences of their actions.

Example: In Mexico, mob lynching have been reported where community members believed they were protecting their towns from criminals, even when evidence of guilt was lacking. This moral justification fuels their violent actions.

Fear and Anger: Mob justice is often driven by strong emotions like fear and anger. When people feel threatened, either by crime or social instability, these emotions can override rational decision-making and lead to impulsive, violent behaviour.

Example: In some parts of Kenya, accusations of witchcraft against elderly women have led to brutal killings by mobs. In these instances, fear of the supernatural drives the community to eliminate what they perceive as a threat.

Contagion Effect: The contagion effect refers to the spread of behaviours and emotions within a group. In the context of mob justice, once a few people initiate violent actions, others quickly follow, leading to an escalation of violence as emotions like anger and frustration spread rapidly through the crowd.

Example: In Haiti, rumours of child abduction sparked widespread fear and led to multiple cases of mob killings. The violence spread from one town to another as the fear of child kidnappers spread, triggering a nationwide panic.



 


Examples of Mob Justice:

The Aluu Four Incident (Nigeria, 2012): Four university students were lynched by a mob after being falsely accused of theft in the Aluu community. The mob, angered by frequent robberies in the area, acted impulsively without verifying the accusations, leading to the deaths of innocent young men.

India’s Rumour-Driven Lynching (2017-2018): In several parts of India, viral social media rumours about child kidnappers led to a series of lynching. Mobs attacked individuals, often outsiders, on mere suspicion of wrongdoing, driven by collective fear and misinformation.

Mexico’s Lynch Mobs (various cases): Vigilante justice has been on the rise in Mexico due to widespread crime and a general mistrust of police. In several instances, mobs have captured, beaten, and even burned alleged criminals in public, bypassing legal systems they deem ineffective.

 

Mob justice is a result of deep social frustration, emotional impulses, and psychological processes that can escalate quickly in group settings. When people lose trust in formal institutions or feel emotionally charged, they may revert to primitive forms of communal justice, often with tragic outcomes.


Friday 13 September 2024

মস্তিষ্কের পদার্থবিজ্ঞান

 


মানুষের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে জটিল যে অঙ্গ – তার নাম মস্তিষ্ক। আমাদের মস্তিষ্ক এতটাই জটিল এবং এর কর্মদক্ষতা এতটাই বিস্ময়কর যে একে মহাবিশ্বের সাথে তুলনা করে বলা হয় – দ্য থ্রি পাউন্ড ইউনিভার্স। তিন পাউন্ড বা প্রায় দেড় কেজি ভরের এই মস্তিষ্কের আকার কিংবা গঠন কোনটাই আপাতদৃষ্টিতে খুব একটা আকর্ষণীয় নয়। থলথলে স্পঞ্জের মতো দেখতে এই মস্তিষ্কের উপাদানের শতকরা ৭৮ ভাগই হলো পানি, ১০ থেকে ১২ ভাগ লিপিড, দুই ভাগ বিভিন্ন জৈবযৌগের মিশ্রণ, এক ভাগ কার্বোহাইড্রেট আর এক ভাগ লবণ। দেহের সমস্ত সূক্ষ্ম জটিল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হয় যে মস্তিষ্কের মাধ্যমে, যেখান থেকে সমস্ত আবেগ দুঃখ বেদনার বোধ জন্ম নেয় – সেই মস্তিষ্ক নিজে কোন বেদনা অনুভব করে না। কারণ মস্তিষ্কের ভেতর কোন পেইন রিসেপ্টর নেই।

আমাদের মস্তিষ্ক অবিশ্বাস্য রকমের দ্রুত গতিতে বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে সঞ্চালন করতে পারে। হাবল টেলিস্কোপ মহাকাশ থেকে গত তিরিশ বছরে যে পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করে পাঠিয়েছে আমাদের মস্তিষ্ক প্রতি তিরিশ সেকেন্ডে তার চেয়ে বেশি তথ্য সংগ্রহ এবং সঞ্চালন করছে।

এত দ্রুত গতিতে মস্তিষ্কের কাজ চলে বলেই অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় এই ছোট্ট অঙ্গটির অনেক বেশি জ্বালানি লাগে। আমাদের শরীরের মোট ভরের শতকরা মাত্র দুই ভাগ ভর এই মস্তিষ্কের, কিন্তু শরীরের মোট শক্তির শতকরা বিশ ভাগ খরচ হয় এই মস্তিষ্কের পেছনে। আমাদের দেহে যে তাপ উৎপন্ন হয়, তার শতকরা আশি ভাগ তাপ বের হয় মস্তিষ্ক দিয়ে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই অনুপাতের পরিমাণ আরো বেশি। সদ্যজাত শিশুদের শরীরের মোট শক্তির শতকরা ৬৫ ভাগ খরচ করে ফেলে তাদের মস্তিষ্ক, তাই তারা বেশিরভাগ সময় ঘুমায়।

কিন্তু মস্তিষ্ক এত কাজ করে কীভাবে? এই প্রশ্নের মোটামুটি উত্তর বিজ্ঞানীদের কাছে থাকলেও এখনো পুরোটা নেই। মস্তিষ্কের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম স্নায়ুতন্ত্র এবং স্নায়ুকোষ ‘নিউরন’-এর গঠন এবং কার্যকলাপ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর নিরলস গবেষণা করার পরও যতটুকু জানতে পেরেছেন তা এর জটিলতার পক্ষে নিতান্তই গৌণ। এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি মস্তিষ্কের কোষগুলির মাইক্রোস্ট্রাকচার কিংবা স্নায়বিক সার্কিট – কীভাবে মস্তিষ্কে তথ্য আদান-প্রদান করে। যদি জানা যায়, তাহলে মস্তিষ্কের অনেক রোগ – যেমন স্মৃতিভ্রংশতা (ডিমেনশিয়া), পারকিনসন্স, মৃগীরোগ (এপিলেপ্সি), স্কিৎজোফ্রেনিয়া, অটিজম – ইত্যাদির সঠিক কারণ এবং নিরাময়ের উপায় জানা যেতো।

অতিসম্প্রতি (মে ২০২৪) হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, লন্ডন ইউনিভার্সিটি এবং গুগল রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা মানুষের মস্তিষ্কের এক ঘন মিলিমিটার আয়তনের (ছোট্ট এক দানা চালের সমান) গভীর যান্ত্রিক বিশ্লেষণ করে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে ন্যানোস্কেলে (এক মিলিমিটারের দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ) ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছেন। তাঁদের পরীক্ষালব্ধ ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত সায়েন্স জার্নালে (সায়েন্স, সংখ্যা ৩৮৪, ১০ মে ২০২৪)।

এই ছোট্ট এক দানা (এক ঘন মিলিমিটার) মস্তিষ্কের উপাদানে বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন ৫৭ হাজার কোষ, ২৩০ মিলিমিটার রক্তনালী এবং পনের কোটি স্নায়ুসংযোগ (synapses)। এবং এই সবগুলি তথ্য বিশ্লেষণ করতে ডাটা লেগেছে ১.৪ পিটাবাইট (১৪০০ টেরাবাইট)। আমাদের একটি মস্তিষ্কেই পৃথিবীর সমস্ত ইন্টারনেটের সবকিছু ধরে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

 

উপরের ছবিটিতে ইলেট্রন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে মস্তিষ্কের কোষে নিউরনের অবস্থান দেখা যাচ্ছে। নিউরনের চারপাশে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য অ্যাক্সন (axon).

ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে শুধুমাত্র একটি নিউরনকে আলাদা করে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন এই ছবিতে। এই একটিমাত্র নিউরনের চারপাশে পাওয়া গেছে ৫,৬০০ অ্যাক্সন যাদের মাধ্যমে নিউরনের তথ্য আদান-প্রদান হয়। অ্যাক্সনের সাথে আছে জালের মতো অসংখ্য স্নায়ুসংযোগ (synapses)।


শুধুমাত্র একটি নিউরনেই এত বেশি জটিল সংযোগ দেখে অনুমান করা যায় পুরো মস্তিষ্কের ৮৬০০ কোটি নিউরনের মোট সংযোগ কীরকম জটিল হবে। এই জটাজালের ভেতর দিয়ে আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে সব কাজ করে তা পুরোপুরি জানতে হলে আরো অনেক বছর নিরলস গবেষণা করতে হবে।

কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের সাহায্যে মস্তিষ্কের কাজকর্ম বোঝার জন্য ব্রেইন ফিজিক্স বা কোয়ান্টাম নিউরোফিজিক্স নামে একটি শাখা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী রজার পেনরোজ তাঁর  ‘দি এমপারারস নিউ মাইন্ড অ্যান্ড দ্য ল-জ অব ফিজিক্স’ বইতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন আমাদের সত্যিকারের মস্তিষ্ক আর সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি করা মডেল মস্তিষ্কের মধ্যে মূল পার্থক্য কোথায়।

মস্তিষ্ক আমাদের শারীরবৃত্তিক যেসব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে তার সবগুলি কাজের যান্ত্রিক মডেল তৈরি করা সম্ভব এবং যান্ত্রিক মস্তিষ্কের মাধ্যমে তা পরিচালনা করাও সম্ভব। কারণ শারীরবৃত্তিক কাজ – যেমন হৃৎপিন্ডের রক্তসঞ্চালন, কিডনির কাজ, ফুসফুসের কাজ, চোখের কাজ, কানের কাজ – এই নির্দিষ্ট কাজগুলি কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মে ঘটে। কিন্তু সমস্যা হয় মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা ও পদ্ধতি নিয়ে। মন বলতে আমরা যেটা বুঝি – মস্তিষ্কের ভেতর তা ঠিক কীভাবে কাজ করে? সব মানুষের মস্তিষ্কের জীববিজ্ঞান এক হলেও মনোবিজ্ঞান এক নয় কেন? একই বাসায় একই বাবা-মায়ের সন্তানরা একই পরিবেশে মানুষ হবার পরেও তাদের মানসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পদ্ধতি, চিন্তাভাবনা, ভালোলাগা-মন্দলাগার ব্যাপারটি এবং সর্বোপরি – দয়ামায়া, প্রেম-ভালোবাসা, ঘৃণা-ঈর্ষা এই অনুভূতিগুলি মস্তিষ্কে ঠিক কীভাবে তৈরি হয় – তা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব হয়নি। আর জানা গেলেও তা কি যান্ত্রিক মস্তিষ্কের তৈরি করা সম্ভব?

কোয়ান্টাম বায়োলজির মাধ্যমে প্রাণি এবং উদ্ভিদজগতের কিছু কিছু বিষয় ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ব্যাখ্যা করা আর যান্ত্রিকভাবে এক কথা নয়। কেউ কী চিন্তা করছে, কেন চিন্তা করছে – তার অনেক মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হয়তো দেয়া সম্ভব। কিন্তু একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা কি সম্ভব? যান্ত্রিক সুইচ টিপে কি বাধ্য করা সম্ভব – মস্তিষ্ক কী চিন্তা করবে? কীভাবে কাজ করবে?

ব্রেইন ফিজিক্স এখনো বোঝার চেষ্টা করছে মস্তিষ্কের জটিল স্নায়ুসংযোগের কাজগুলি পদার্থবিজ্ঞানের কোন্‌ কোন্‌ নিয়মে ঘটে। আমাদের শারীরবৃত্তিক কাজগুলি নিয়ন্ত্রিত হয় রাসায়নিক আয়ন-চ্যানেলের কার্যকলাপের মাধ্যমে। কোয়ান্টাম বায়োলজি তা সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে এই কাজগুলি কৃত্রিমভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। আমরা কীভাবে দেখি, গন্ধ পাই, কিংবা সালোকসংশ্লেষণ কীভাবে ঘটে তা কোয়ান্টাম জীববিজ্ঞান ইতোমধ্যে ব্যাখ্যা করা শুরু করেছে। কিন্তু মস্তিষ্কের কাজ আরো অনেক অনেক বেশি জটিল।

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন মস্তিষ্কে চৌম্বকক্ষেত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে। আমাদের মস্তিষ্কের ভেতর অত্যন্ত ক্ষুদ্রমানের একটি চৌম্বকক্ষেত্র আছে। এর পরিমাণ মাত্র ০.১ পিকোটেসলা। (১ পিকো টেসলা = ১০-১২ টেসলা)। আমরা জানি পৃথিবী একটি বিরাট আকারের চুম্বক, কিন্তু তার চৌম্বকক্ষেত্রের পরিমাণ খুবই কম (২৫ থেকে ৬৫ মাইক্রোটেসলা)। আমাদের মস্তিষ্কের চৌম্বকক্ষেত্রের পরিমাণ পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের চেয়ে পাঁচ কোটি গুণ কম। মস্তিষ্কের ভেতর এই চৌম্বকক্ষেত্রের উৎপত্তি হয় নিউরনের অ্যাক্সন ও আয়ন চ্যানেলের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়ার ফলে। মস্তিষ্কের নিউরনের জটিল সার্কিটের ভেতর অত্যন্ত ক্ষুদ্রপরিমাণের বিদ্যুৎ-প্রবাহ কাজ করে। প্রতিটি তথ্য আদান-প্রদানের ফলে বৈদ্যুতিক সার্কিট কার্যকর হয় এবং বিদ্যুৎ-প্রবাহের ফলে চৌম্বকক্ষেত্রের উৎপত্তি হয়। এই বিপুল পরিমাণ সার্কিটের কর্মতৎপরতা বাহ্যিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। তবে কোয়ান্টাম জীববিজ্ঞানীরা তাঁদের তাত্ত্বিক ধারণার কিছু প্রমাণ পেতেও শুরু করেছেন। তাঁরা দেখেছেন যখন আমরা গভীর মনোযোগ দিয়ে কোন কিছু চিন্তা করি – তখন মস্তিষ্কের অনেকগুলি সংযোগ একই সাথে একই দিকে প্রবাহিত হয়। তখন মস্তিষ্কে ৪০ থেকে ৮০ হার্টজ কম্পাঙ্কের গামা-তরঙ্গ প্রবাহিত হয়। [গামা তরঙ্গ মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ – বিস্তারিত দেখুন: বিজ্ঞানচিন্তা জুলাই ২০২১ সংখ্যায়]। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন আমাদের মস্তিষ্কের চৌম্বকক্ষেত্র আমাদের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অবশ্য এই ধারণা এখনো সঠিকভাবে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।

মস্তিষ্কের ৮৬০০ কোটি নিউরনের লক্ষ কোটি সংযোগ এত দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হবার পদার্থবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হতে পারে কোয়ান্টাম টানেলিং। কারণ এতগুলি স্নায়ুসংযোগ পার হতে যে সময় এবং শক্তির দরকার তার চেয়ে অনেক কম সময় এবং শক্তিতে কাজ হয়ে যাচ্ছে কোয়ান্টাম টানেলিং-এর মাধ্যমে। নোবেলজয়ী অস্ট্রেলিয়ান স্নায়ুবিজ্ঞানী জন এক্লেস ১৯৯০ সালে মস্তিষ্কের ভেতর কোয়ান্টাম টানেলের তত্ত্ব সমর্থন করেছেন। মস্তিষ্কের নিউরো-ট্রান্সমিটার প্যাকেজ হলো শক্তির কোয়ান্টা। নিউরনের অ্যাক্সনগুলির কাজকর্মের মূলে যেমন আছে রাসায়নিক সংযোগ, তেমনি আছে বৈদ্যুতিক সংযোগ। একটি নিউরন থেকে অন্য নিউরনের মধ্যবর্তী যে দূরত্ব – আয়ন, নিউরোট্রান্সমিটার এবং ইলেকট্রন – সেই দূরত্ব অতিক্রম করে কোয়ান্টাম টানেলিং-এর মাধ্যমে। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন কোয়ান্টাম টানেলিং-এ যে শক্তি ক্ষয় হয় তাকে কম্পাঙ্কে হিসেব করলে তা মস্তিষ্কের গামা-তরঙ্গের কম্পাঙ্কের সাথে মিলে যায়। অর্থাৎ আমরা যখন গভীর মনোযোগ সংযোগ করে কোনকিছু করি – তখন মস্তিষ্কে কোয়ান্টাম টানেলিং হয়, এবং গামা-তরঙ্গ প্রবাহিত হয়।

এ তো গেল মনোযোগের ব্যাপার। কিন্তু আমাদের বিবেকবোধ, চেতনা এগুলির উদয় হয় কীভাবে? কোয়ান্টাম নিউরোপদার্থবিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট বা কোয়ান্টামের জটাজাল এবং কোয়ান্টাম স্পিন থেকে উৎপত্তি হয় আমাদের চেতনাশক্তি, বিবেকবোধ ইত্যাদি অনেক মানবিক কিংবা অমানবিক চিন্তাভাবনা। এই তত্ত্ব অনুসারে আমাদের চেতনা সেলমেমব্রেনে পরমাণুর স্পিনের পদ্ধতি এবং পরিমাণের উপর নির্ভর করে। নিউরনের আয়ন আদান-প্রদানের হার নিয়ন্ত্রিত হয় এই কোয়ান্টাম স্পিনের উপর। এর সাথে যুক্ত হয় মস্তিষ্কের চৌম্বকক্ষেত্র। এই তত্ত্ব যদি সত্য হয়, তাহলে দেখা যাবে আমাদের মস্তিষ্ক কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি প্রমাণের সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা। কিন্তু তার জন্য আমাদের কতদিন অপেক্ষা করতে হবে এখনো বলা যাচ্ছে না। কোয়ান্টাম কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের হাতের নাগালে চলে এলে এই কাজ ত্বরান্বিত হবে এবং আমাদের মগজ দিয়েই আমরা আমাদের মগজের কাজকর্ম বুঝতে পারবো। 

 

তথ্যসূত্র

১।         রজার পেনরোজ, দি এমপারারস নিউ মাইন্ড অ্যান্ড দ্য ল-জ অব ফিজিক্স, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০২।

২।        বিল ব্রাইসন, দ্য বডি, ডাবল ডে, লন্ডন ২০১৯।

৩।        ন্যাচার, মে ২০২৪।

৪।        সায়েন্স, সংখ্যা ৩৮৪, মে ২০২৪।

৫।        প্রদীপ দেব, নিউরনের জাল এবং মহাবিশ্ব (বিজ্ঞানচিন্তা ডিসেম্বর ২০২০), মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ (বিজ্ঞানচিন্তা জুলাই ২০২১)।

-----------------------

বিজ্ঞানচিন্তা জুন ২০২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত







Latest Post

বিজ্ঞানী গীতাঞ্জলি রাও

  পানি-দূষণের মাত্রা নির্ধারণের দ্রুততম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ‘টেথিস’ উদ্ভাবন করে গীতাঞ্জলি রাও যখন   ২০১৭ সালে আমেরিকার শ্রেষ্ঠ তরুণ বিজ্ঞানীর শ...

Popular Posts