Saturday, 16 May 2020

সি ভি রামন - পর্ব ৬

সরকারি চাকরি

রামনের অসুস্থ দাদাকে নিয়ে সেই যে দাদী চলে গিয়েছিলেন বিশাখাপট্টমে - সেখান থেকে তাঁদের আর মাদ্রাজে আসা হয়নি। রামনের দাদা মারা গেছেন ১৯০৬ সালের সেপ্টেম্বরে। দাদার চিকিৎসার খরচ আর মৃত্যুর পর সৎকার-শ্রাদ্ধ ইত্যাদি মিলিয়ে রামনের বাবার প্রায় হাজার রুপি ঋণ করতে হয়েছে। মাদ্রাজের বাসা আবার বদলানো হয়েছে। এবার আরো ছোট একটা বাসায় উঠেছেন তাঁরা তিনজন। রামন, বড়ভাই সুব্রাহ্মণ্য ও তার স্ত্রী সীতা। রামনের চেয়েও সুব্রাহ্মণ্যর চাকরির দরকার বেশি। কারণ তার সংসারের সদস্যসংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।
            ইংল্যান্ডে যেতে পারেননি বলে আই-সি-এস পরীক্ষা দিতে পারেননি রামন। আই-সি-এস অফিসারের পরে যে সরকারি চাকরিটার মান ও বেতন সবচেয়ে বেশি সেটা হলো ফাইন্যান্সিয়াল সিভিল সার্ভিস বা এফ-সি-এস। সরকারের অর্থবিভাগের অফিসার নিয়োগের এ পরীক্ষা ভারতেই হয়। পরীক্ষা ভারতে হলেও ব্রিটিশ সরকার অনেক যাচাই বাছাই করে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার কোন প্রমাণ পাওয়া গেলে পরীক্ষা দিতে দেয়া হয় না।
            রামন বা সুব্রাহ্মণ্য কোন ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত নয়। প্রকৃতি ও বিজ্ঞান ছাড়া আর কোন দিকেই কোন খেয়াল নেই রামনের। তাই পরীক্ষা দিতে কোন অসুবিধা হলো না দুই ভাইয়ের। ১৯০৭ সালের শুরুর দিকেই ইন্ডিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা হয়ে গেলো। রামন পরীক্ষাটাকে খুব বেশি চ্যালেঞ্জ হিসেবেও নেননি। কিন্তু সুব্রাহ্মণ্যর কাছে এই পরীক্ষা ছিল অনেক বেশি সিরিয়াস ব্যাপার। কারণ তাঁর সংসারের জন্যই চাকরি দরকার। তাছাড়া বাবার বড় সন্তান হিসেবে বাবার ঋণশোধ করার দায়িত্বও অনেকটা তার।
            রেজাল্ট দেয়ার আগপর্যন্ত পরীক্ষায় পাস করার ব্যাপারে সুব্রাহ্মণ্য খুব একটা নিশ্চিন্ত হতে পারছিলেন না। কিন্তু রামন পরীক্ষা দিয়েই তার ছোটভাই রামস্বামীকে বলেছিলেন, "যারা পরীক্ষা দিতে এসেছিল তাদের দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি যে আমিই ফার্স্ট হবো।"[1]
            কথাটাতে হয়তো রামনের তীব্র অহংবোধ প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু রেজাল্ট বের হবার পর দেখা গেলো রামন ঠিকই প্রথম হলেন। সুব্রাহ্মণ্যও পাস করলেন। এখন পোস্টিং-এর পালা।
            মাত্র আঠারো বছর বয়সেই সি ভি রামন সহকারী অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের পদে নিযুক্ত হলেন। প্রথম কর্মস্থল কলকাতা।
            কিছুদিন পর সুব্রাহ্মণ্যর পোস্টিং অর্ডার এলে দেখা গেলো তার পোস্টিংও কলকাতায়। তিনি খুশি হয়ে রামনকে বললেন, "তুই বেতন পাবি মাসে আড়াইশো রুপি। আর আমি পাবো মাসে চারশো রুপি। আমি তোর চেয়ে দেড়শো রুপি বেশি বেতন পাবো।"
            রামন জিজ্ঞেস করলেন, "কেন?"
            "কারণ আমার বৌ আছে। সরকার বিবাহিতদের দেড়শো রুপি করে পারিবারিক ভাতা দেয় প্রতি মাসে।"
            "তাহলে আমিও বিয়ে করে ফেলবো।"
            হা হা করে হাসতে হাসতে কথাটা বললেও রামন কিন্তু সিরিয়াসলি বিয়ে করার কথা ভাবছিলেন সেই সময়। আঠারো বছর বয়স হলো তার। সুব্রাহ্মণ্য বিয়ে করেছিলেন সতেরো বছর বয়সে। রামনের দর্শন হলো - যেটা করতেই হবে সেটা দ্রুত করে ফেলা ভালো।



[1] G. Venkataraman, Journey into Light Life and Science of C. V. Raman,. New Delhi: Penguin Books, 1994.

No comments:

Post a Comment

Latest Post

Chetan Bhagat's Thriller '400 Days'

  Among the Indian authors who have gained popularity by writing novels in English, Chetan Bhagat is one of the most notable. In fact, calli...

Popular Posts