Sunday 30 June 2019

আইনস্টাইনের কাল - পর্ব-১৪


১৯১৭
জ্যোর্তিবিজ্ঞানের ওপর আইনস্টাইন তাঁর প্রথম পেপার প্রকাশ করেন এবছর আইনস্টাইনের প্রথম মহাবিশ্বের মডেল অনুসারে মহাবিশ্ব গোলকাকৃতির সাম্যবস্থায় (spherically symmetric)আছে

বছরের শুরুতেই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন আইনস্টাইন প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে দুমাসের মধ্যেই প্রায় পঁচিশ কেজি ওজন কমে গেলো তাঁর আইনস্টাইনের অসুখে এলসা মোটামুটি খুশি হয়েই সেবাযত্ম করলেন আইনস্টাইনের বার্লিনের সোনেবার্গ(Schoneberg) ডিস্ট্রিক্টে এলসার বাড়ির সামনেই আইনস্টাইনের বাসা সুতরাং এলসা আইনস্টাইনের সাথেই থাকতে শুরু করলেন এসময় কিছুটা সুস্থ হয়ে কয়েকমাস কিছু কাজ করেছেন আইনস্টাইন পরে ডিসেম্বরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবার তাঁর পেটে আলসার ধরা পড়ে বেশ কয়েকমাস বিছানায় কাটাতে হয় আইনস্টাইনকে

এদিকে জুরিখে মিলেইভা ও এডোয়ার্ড দুজনই অসুস্থ যুদ্ধের কারণে হাসপাতালগুলো আহত সৈনিক আর মানুষে ভর্তি সেই ভীড়েই মিলেইভা ও এডোয়ার্ড কোনরকমে পড়ে আছে হাসপাতালে হ্যান্সকে দেখার কেউ নেই জুরিখে আইনস্টাইন এক একসময় ভাবেন গিয়ে হ্যান্সকে নিজের কাছে নিয়ে আসবেন কিনা কিন্তু মিলেইভার সাথে ধরতে গেলে কোন সম্পর্কই নেই এখন, হঠাৎ করে ছেলেকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে গেলে মিলেইভা কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে ভাবতে ভাবতে আর যাওয়া হয় না হ্যান্স রয়ে যায় জুরিখে মিলেইভার এক বান্ধবীর বাড়িতে আইনস্টাইন তাঁর বেতনের অর্ধেকেরও বেশি পাঠিয়ে দেন মিলেইভা ও ছেলেদের খরচের জন্য ওদিকে আইনস্টাইনের মাও অসুস্থ তাঁর জন্যও টাকা পাঠাতে হয় আইনস্টাইন সবাইকে কীভাবে খুশিতে রাখবেন সে ব্যাপারেও চিন্তিত কিছুটা যুদ্ধের কারণে বার্লিনে অনেক মানুষ এখন ঠিকমত খেতেও পাচ্ছে না আইনস্টাইনের অবশ্য সেরকম কোন সমস্যা হয়নি এখনো তাঁর ও এলসার বন্ধুদের কাছ থেকে তিনি নিয়মিত খাবার সরবরাহ পাচ্ছেন তাঁর পেটের সমস্যার কারণে তিনি আবার যেকোন খাবার খেতেও পারেন না

জুরিখে অনাত্মীয় বাড়িতে একা একা থাকতে থাকতেই হয়তো হ্যান্স  আলবার্ট এখন অনেকটা নরম হয়ে গেছে বাপের প্রতি রাগটাও তার কমে গেছে কিছুটা হ্যান্স আইনস্টাইনকে আবার চিঠি লিখতে শুরু করেছে

অক্টোবর মাসে কাইজার উইলহেম ইনস্টিটিউটের কাজ শুরু হলো আইনস্টাইন এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোর্তিবিজ্ঞানের গবেষণার উন্নয়ন এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য

এবছর রাশিয়ায় লেনিনের নেতৃত্বে বিপ্লবের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠিত হয় ব্রিটেনে ব্যালফোর (Balfour)ঘোষণা গৃহীত হয়েছে এ ঘোষণা অনুযায়ী প্যালেস্টাইনে একটি স্বাধীন ইহুদী রাষ্ট্র স্থাপনের ব্যাপারে ব্রিটেন রাজী হয়েছে

প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের উল্লেখযোগ্য চারটি প্রকাশনাঃ

পেপারঃ৬৬  On the Special and General Theory of Relativity:A Popoular Account.প্রকাশকঃ Vieweg,Braunschweig,Germany(১৯১৭) সাধারণ পাঠকের জন্য স্পেশাল ও জেনারেল রিলেটিভিটি বিষয়ের এই বইটি লেখেন আইনস্টাইন লেখার সময় তিনি বুঝতে পেরেছেন যে তাঁর নিজের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব তিনি নিজেই সহজ করে বর্ণনা করতে পারছেন না কিন্তু করতেই হবে মনোভাব নিয়ে বইটি লিখে শেষ করেন তিনি বইটি খুব জনপ্রিয়তা পায় ১৯১৭ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে বইটির চৌদ্দটি সংস্করণ নিঃশেষ হয়ে যায় পৃথিবীর অনেক ভাষায় বইটি অনুদিত হয়

পেপারঃ৬৭  Cosmological Considerations in the General Theory of Relativity. Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften (Berlin).Sitzungsberichte(১৯১৭),পৃষ্ঠাঃ ১৪২-১৫২ এটি আইনস্টাইনের প্রথম জ্যোর্তিবিদ্যা বিষয়ক গবেষণাপত্র এ পেপারে জেনারেল রিলেটিভিটির ক্ষেত্রসমীকরণগুলোতে সাম্যতা আনার জন্য আইনস্টাইন একটি কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট ব্যবহার করেছেন মহাবিশ্বকে একটি নির্দিষ্ট আয়তনের বদ্ধগোলক কল্পনা করেছেন আইনস্টাইন, মহাবিশ্ব সংকুচিতও হচ্ছে না, বা প্রসারিতও হচ্ছে না গ্যালাক্সি মিল্কি-ওয়ের সাথে হিসেব করে মেলাতে গিয়ে দেখেন কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট হিসেবে না রাখলে অভিকর্ষজ বলকে বাধা দেয়ার কিছু থাকছে না ফলে মহাবিশ্বের কাঠামোটাই ভেঙে পড়বে আইনস্টাইন কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের ওপর জেনারেল রিলেটিভিটির প্রথম প্রয়োগ করেন এই পেপারে এ পেপার প্রকাশিত হবার বারোবছর পরে ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরিতে কাজ করার সময় এডউইন হাবল (Edwin Hubble)পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে গ্যালাক্সিগুলো পৃথিবী থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে হাবল বিগ ব্যাং তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণ করেন বিগ ব্যাং তত্ত্বের ধারণা প্রথম দিয়েছিলেন বেলজিয়ামের এক ধর্মযাজক জর্জিস লেমেইটার(Georges Lemaitre) লেমেইটার এম-আই টি থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ডিগ্রি নিয়েছেন ১৯৩১ সালে এডউইন হাবলের সাথে আইনস্টাইনের দেখা হবার পর আইনস্টাইন কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের ধারণা যে ভুল ছিলো তা স্বীকার করেন তিনি বলেন, ওটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বোকার মত ভুল তখন একটি পেপার লিখে (পেপার ১৭১) তাঁর ভুল সংশোধন করেন এখন একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে অনেক বিজ্ঞানী আবার নতুন করে কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট-এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন

পেপারঃ৬৮ On the Quantum Theory of Radiation. Physikalische Zeitschrift,সংখ্যা ১৮ (১৯১৭), পৃষ্ঠাঃ১২১-১২৮ ফোটনের ধর্ম ও কাজের একটি বিস্তারিত বর্ণনা আছে এ পেপারে আগের বছরও পেপারটি অন্য একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে (পেপার ৬৩) এ পেপারে আইনস্টাইন দেখান যে শক্তির স্থানান্তরের সম্ভাবনার কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রয়োগ করে খুব সহজেই তাপের বিকিরণ সম্পর্কিত প্ল্যাঙ্কের সূত্র প্রতিপাদন করা যায় শক্তির বিভিন্ন স্থিতিশীল স্তরের মধ্যে বিকিরণের মাধ্যমে শক্তির আদানপ্রদানের সাধারণ পরিসংখ্যানের নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেন আইনস্টাইন শক্তিস্তরকে প্রভাবিত করে শক্তির বিকিরণের সম্ভাবনা পর্যালোচনা করা হয় এ পেপারে পরবর্তীতে আইনস্টাইনের এ ধারণাকে কাজে লাগিয়ে লেসার(Laser-Light Amplification by the Stimulated Emission of Radiation) আবিষ্কৃত হয়

পেপারঃ৬৯  The Nightmare. Berliner Tageblatt,২৫ ডিসেম্বর,১৯১৭ এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে আইনস্টাইন গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থায় স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করে এ পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার সুপারিশ করেছেন বারোবছর ধরে স্কুলে পড়াশোনা করার পর সকল শিক্ষার্থীকে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় পাস করতে হয় সে পরীক্ষায় পাস না করতে পারলে তাদের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ ওখানেই শেষ হয়ে যায় আইনস্টাইন মনে করেন- এ ব্যবস্থা কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নয় স্কুলের শিক্ষকশিক্ষিকারা বারোবছর ধরে যে ছাত্রছাত্রীদের দেখছেন, এ পরীক্ষা ছাড়াই তাঁরা তাদের অর্জিত জ্ঞানের মূল্যায়ন করতে পারেন শুধুমাত্র একটি পরীক্ষার মাধ্যমেই কোন শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানের মূল্যায়ন করা সম্ভব নয় এ পরীক্ষাব্যবস্থা ছাত্রছাত্রীদের মেধার বিকাশে সহায়তা তো করেই না, বরং তা তাদের মধ্যে একধরণের আতঙ্কের সৃষ্টি করে

১৯১৮
বছরের শুরুতে অসুস্থ আইনস্টাইন বিছানা থেকে উঠতেই পারেননি কয়েকমাস তাঁর সহকর্মীরা বিভিন্ন জার্নালে তাঁর পেপারগুলো পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এসময় এপ্রিলের দিকে কিছুটা সুস্থ হয়ে ডিপার্টমেন্টের কয়েকটি মিটিং এ অংশ নেন আইনস্টাইন সেপ্টেম্বর থেকে অবশ্য তিনি আবার নিয়মিত ক্লাস নিতে শুরু করেন

আইনস্টাইন ও মিলেইভা মেরিকের বিয়েটা টিকে থাকার আর কোন সম্ভাবনা নেই জুন মাসে আইনস্টাইন মিলেইভার সাথে ডির্ভোস-চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বছরের শেষের দিকে তাঁদের বিচ্ছেদের সমস্ত আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় আদালত থেকে বিচ্ছেদের অনুমতি পাবার শর্তগুলো পূরণ করতে বেশ কষ্টই হয়েছে আইনস্টাইনের শুধুমাত্র শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্ত্রীকে ডিভোর্স করা যায় না মিলেইভার এমন কোন দোষও খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি আদালতের শর্ত পূরণের জন্য আইনস্টাইন নিজেকে ব্যভিচারী ঘোষণা করলেন এজন্য কোর্টের খরচ ছাড়াও ব্যভিচারের জন্য জরিমানা হিসেবে বেশ মোটা অংকের টাকাও খরচ হলো আইনস্টাইনের সুইজারল্যান্ডের কোর্ট পরবর্তী দুবছরের মধ্যে আবার বিয়ে না করার আদেশ দিলেন আইনস্টাইনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে বিচ্ছেদ হয়ে যাবার আগে আইনস্টাইন জুরিখে গিয়ে মিলেইভা ও সন্তানদের সাথে দেখা করতে গেলেন ছেলেরা বাধ্য হয়ে মেনে নিচ্ছে তাদের মা-বাবার বিবাহ-বিচ্ছেদ

নভেম্বরে কাইজার উইলহেলম ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয় জার্মানি ও অন্যান্য দেশের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় জার্মানির নতুন সরকার গঠিত হবার শুরুতে আইনস্টাইন একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠার সম্ভাবনার ব্যাপারে প্রচন্ড আশাবাদী ছিলেন আইনস্টাইন বামপন্থী গণতান্ত্রিক-সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি নিজের সমর্থন ব্যক্ত করলেন

এবছর জার্মানির হারম্যান ওয়েইল(Hermann Weyl) তাঁর গ্র্যাভিটেশান এন্ড ইলেকট্রিসিটি নামে গবেষণাপত্রে প্রথমবারের মত সমন্বিত ক্ষেত্রতত্ত্ব (Unified Field Theory)প্রতিষ্ঠা করেন এই পেপারে তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র ও অভিকর্ষজ ক্ষেত্র উভয়েই স্থানকালের ধর্ম হিসেবে প্রকাশিত হয় পেপারটি আইনস্টাইনের চোখে পড়ার সাথে সাথেই তিনি দেখলেন সেখানে বিরাট একটি ভুল আছে এপ্রিলের ১৫ তারিখে আইনস্টাইন ওয়েইলকে লিখলেন, স্থান ও কালের পরিমাপের যে পদ্ধতি এখানে দেখানো হয়েছে সেটি ঠিক হলে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব তার গুরুত্ব হারাবে আইনস্টাইনের যুক্তির বিরোধীতা করে অনেকবছর ধরে যুক্তিযুদ্ধ করেছেন ওয়েইল কিন্তু শেষপর্যন্ত আইনস্টাইনের যুক্তিই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে ১৯২৯ সালে ওয়েইল তাঁর পেপারের সংশোধনী প্রকাশ করেন ভুল থাকা সত্ত্বেও ওয়েইলের পেপারটি ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাঁর সেদিনের ধারণা থেকেই পরবর্তীতে জন্ম হয়েছে আধুনিক গেইজ তত্ত্ব (Gauge Theory)

প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের উল্লেখযোগ্য সাতটি রচনাঃ

পেপারঃ৭০ On Gravitational Waves. KOniglich Preussische Akademie der Wissenschaften (Berlin).Sitzungsberichte(১৯১৮), পৃষ্ঠা;১৫৪-১৬৭ জেনারেল রিলেটিভিটির একটি উল্লেখযোগ্য অনুমান হলো অভিকর্ষজ তরঙ্গের অস্তিত্ব এতদিন অভিকর্ষজ তরঙ্গের অস্তিত্ব নিরূপণের কোন উপায় জানা ছিলো না সম্প্রতি বেশ কিছু ডিটেক্টর ডিজাইন করা হচ্ছে যা এরূপ তরঙ্গের উপস্থিতি নিরূপণ করতে পারবে

পেপারঃ৭১ On the Foundations of the General Theory of Relativity. Annalen der Physik,সংখ্যা ৫৫ (১৯১৮), পৃষ্ঠাঃ২৪১-২৪৪ জেনারেল রিলেটিভিটির কিছু প্রধান প্রধান বিষয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে এ গবেষণাপত্রে

পেপারঃ৭২ Motives for Research. Zur Max Plancks sechzigsten Geburtstag. Karlsruhe: C.F.Mullersche Hofbuchhandlung,(১৯১) জার্মান পদার্থবিদ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের ষাটতম জন্মদিন উপলক্ষে ফিজিক্যাল সোসাইটি একটি স্পেশাল ফিজিক্স মিটিং এর আয়োজন করে আইনস্টাইন সেখানে সত্যিকারের বিজ্ঞান গবেষণা সম্পর্কে এই বক্তৃতাটি দেন ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনের থিওরেটিক্যাল ফিজিক্সের প্রফেসর ম্যাস্ক প্ল্যাংকের কোয়ান্টাম থিওরির ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে পুরো পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা আইনস্টাইন ম্যাক্স প্ল্যাংক সম্পর্কে বলেন, একজন আদর্শ গবেষক বলতে যা বোঝায় তা হলেন ম্যাক্স প্ল্যাংকপ্ল্যাংকের বিজ্ঞান সাধনার অনুপ্রেরণা আসে তাঁর অন্তর থেকে

পেপারঃ৭৩ The Law of Energy Conservation in the General Theory of Relativity. Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften (Berlin).Sitzungsberichte(১৯১৮), পৃষ্ঠা ৪৪৮-৪৫৯ জেনারেল রিলেটিভিটিতে শক্তির সংরক্ষণশীলতা কীভাবে রক্ষিত হয় তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে এ গবেষণাপত্রে

পেপারঃ৭৪ Dialogue on Objections to the Theory of Relativity. Die Naturwissenschaften,সংখ্যা ৬ (১৯১৮), পৃষ্ঠাঃ৬৯৭-৭০২ আইনস্টাইন এ পেপারটি লেখেন সংলাপ আকারে তাঁর আপেক্ষিকতার তত্ত্ব সম্পর্কে বিরূপ সমালোচনাগুলোর উত্তর দেন তিনি সংলাপ আকারে

পেপারঃ৭৫ On the Need for a National Assembly. Published in Nathan and Norden, Einstein on Peace.১৩ নভেম্বর,১৯১৮ জার্মানির অরাজনৈতিক শান্তিবাদী সংগঠন বুন্ড নিউয়েস ভ্যাটেরল্যান্ড(Bund Neues Vaterland) বা বি-এন-ভি আয়োজিত জনসমাবেশে এ ভাষণটি দেন আইনস্টাইন বি-এন-ভি রাজনৈতিক দলের জন্য সৎ, যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করার কাজে নিবেদিত সংগঠন উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচার শুরু করে যে আইনস্টাইন একজন সন্ত্রাসী কমিউনিস্ট

পেপারঃ৭৬ To the Society A Guaranteed Subsistence for All”.১২ ডিসেম্বর, ১৯১৮ এটি এক পৃষ্ঠার একটি গবেষণাপত্র অস্ট্রিয়ান দার্শনিক ও উদ্ভাবক জোসেফ পপার-লিনকিয়াস(Josef Popper-Lynkeus) সবার জন্য খাদ্য ও চাকরির ব্যবস্থা করার একটি প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তার কথা প্রচার করছিলেন আইনস্টাইন পপারের প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে এ ঘোষণাপত্রটি রচনা করেন তবে পপার যে পদ্ধতিতে প্রোগ্রামটি সফল করার পরিকল্পনা করেছেন- আইনস্টাইন তার বিরোধিতা করেন কারণ আইনস্টাইনের মতে পপারের বাস্তবায়নের পদ্ধতিতে ভুল আছে  

১৯১৯  
এ বছর আইনস্টাইনের ব্যক্তিগত জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে বছরের শুরুতে আইনস্টাইন এলসার এপার্টমেন্টে এসে উঠেছেন এলসা আইনস্টাইনের জন্য থাকার ও নিজস্ব পড়ারঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন জানুয়ারির মাঝামাঝি আইনস্টাইন ইউনিভার্সিটি অব জুরিখে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কয়েকটি লেকচার দেন ফেব্রুয়ারির চৌদ্দ তারিখে আইনস্টাইন ও মিলেইভার ডিভোর্স হয়ে যায় ভ্যালেন্টাইনস ডেতে তাদের বিচ্ছেদ হওয়াটা কি তাদের কারো ইচ্ছাকৃত নাকি কাকতালীয় ঘটনা তা ঠিক জানা যায়নি ডিভোর্সের একটি উল্লেখযোগ্য শর্ত হলো ভবিষ্যতে আইনস্টাইন যদি নোবেল পুরষ্কার পান, তাহলে পুরষ্কারের পুরো টাকাটাই সন্তানদের ভরণপোষণ বাবদ পাবেন মিলেইভা আইনস্টাইন ও এলসার বিয়ে হতে এখন আর কোন বাধা নেই যদিও সুইজারল্যান্ডের আদালত আইনস্টাইনের বিয়ের ব্যাপারে দুবছরের একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা জার্মানিতে খাটেনা এলসা বিয়ের তোড়জোড় শুরু করলেন

এলসার বড়মেয়ে আইলসের বয়স এখন বাইশ আর ছোটমেয়ে মার্গটের বয়স বিশ এখনো তারা তাদের মায়ের সাথেই থাকে এটি আসলে এলসার বাবার বাড়ি এলসার মা-বাবাও থাকেন এখানে এলসার মা ফ্যানি আইনস্টাইনের মা পলিনের আপন বোন সে হিসেবে এলসা আইনস্টাইনের আপন মাসতুতো বোন তবে আইনস্টাইনের কাছে এরকম সম্পর্কের কোন দাম আছে বলে মনে হয়না নইলে এলসার মেয়ে আইলস যে কিনা তাঁর ভাগনি- এলসার সাথে বিয়ে হলে সম্পর্কে যে তাঁর মেয়ে হবে- তাকে কীভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেন আইনস্টাইন
মিলেইভার সাথে যখন ডিভোর্সের আনুষ্ঠানিক কাজ এগোচ্ছে তখন আইনস্টাইন আইলসের দিকে ঝুঁকে পড়েন আইলসকে বিয়ের প্রস্তাব দেন আইনস্টাইন আইলস জানতো যে তার মায়ের সাথে সম্পর্ক চলছে আইনস্টাইনের আইলস প্রত্যাখ্যান করে আইনস্টাইনকে এলসা ব্যাপারটি জানতে পারার পরেও এ প্রসঙ্গে কিছু বলেননি আইনস্টাইনকে

জুনের ছয় তারিখে এলসার সাথে আইনস্টাইনের বিয়ের দিন ধার্য হয় বিয়ের চারদিন আগে জুনের দুই তারিখে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণিত হয় কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি অবজারভেটরির পরিচালক, ইংল্যান্ডের বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্যার আর্থার এডিংটন (Arther Eddington) সূর্যের অভিকর্ষজ ক্ষেত্রের টানে তারার আলো যে বেঁকে যায় তা পর্যবেক্ষণ করেন সূর্যের পূর্ণগ্রহণের ছবি থেকে প্রমাণিত হয় যে অভিকর্ষজ ক্ষেত্রের টানে আলোর গতিপথ পরিবর্তিত হয় নভেম্বর মাসে রয়েল সোসাইটি এডিংটনের পরীক্ষালব্ধ ফল প্রকাশ করলে আইনস্টাইন রাতারাতি বিশ্ববিখ্যাত হয়ে যান কারণ আইনস্টাইনের তত্ত্বটি সাধারণ মানুষের কাছে এতই দুর্বোধ্য যে সাধারণের কাছে মনে হচ্ছে একমাত্র আইনস্টাইনই অন্যরকম একটি পৃথিবীকে দেখার ক্ষমতা রাখেন, একমাত্র আইনস্টাইনই পারেন সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি বুঝতে আইনস্টাইনকে নিয়েও অনেক মিথের জন্ম হতে লাগলো, এবং তা লোকের মুখে মুখে প্রচারিত হতে লাগলো আইনস্টাইনও সাংবাদিকদের সাথে নানারকম মজা করে তাঁর হঠাৎ খ্যাতিমান হয়ে যাওয়াটা উপভোগ করলেন

জুনের ছয় তারিখে আইনস্টাইন ও এলসার বিয়ে হয় খুবই ঘরোয়াভাবে এলসার সাথে আইনস্টাইনের সম্পর্কটা অনেকটাই প্লেটোনিক আইনস্টাইনের আসলে এমন কাউকে দরকার ছিলো যাঁকে তাঁর কষ্টগুলোর ভাগ দিতে পারবেন এলসার মধ্যে সেরকম একটি মানসিক আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন আইনস্টাইন বিয়ের পরেও তারা আলাদা আলাদা ঘরেই থাকছেন কারণ জ্ঞিজ্ঞেস করলে এলসা হেসে উত্তর দেন, আইনস্টাইনের নাসিকা গর্জনের শব্দে তাঁর ঘুম হয়না

আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন আইনস্টাইন জিওনিস্ট আন্দোলনের নেতা কুর্ট ব্লুমেনফেলড (Kurt Blumenfeld) আইনস্টাইনের বন্ধু ইসরায়েলে ইহুদিদের অধিকার আদায় ও একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য সংগঠিত হচ্ছে জিওনিস্টরা ব্লুমেনফেলডের উৎসাহে আইনস্টাইন জিওনিজমের (Zionism )প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠলেন এবং ইহুদীদের জন্য প্যালেস্টাইনে একটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণার প্রতি নিজের সমর্থন ব্যক্ত করলেন বার্লিনে আসার আগ পর্যন্ত আইনস্টাইনের কাছে ব্যক্তিগত ধর্মীয় পরিচয়টা মোটেও গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না পরে বার্লিনে তিনি জিওনিস্ট আন্দোলনকে সমর্থন করলেও নিজে কোন জিওনিস্ট সংগঠনে যোগ দেননি এবং নিজেকে কখনো জিওনিস্ট হিসেবে পরিচয়ও দেননি  

প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের উল্লেখযোগ্য ছয়টি রচনাঃ

পেপারঃ৭৭ Do Gravitational Fields Play an Essential Role in the Structure of the Elementary Particles of Matter? Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften (Berlin). Sitzungsberichte (1919), পৃষ্ঠাঃ ৩৪৯-৩৫৬ প্রুসিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সের অধিবেশনে উপস্থাপিত এই পেপারে আইনস্টাইন গোলকাকৃতি স্থানের বাস্তবভিত্তি ব্যাখ্যা করেন এবং তার সাথে জেনারেল রিলেটিভিটির ক্ষেত্রসমীকরণগুলোর সম্পর্ক আলোচনা করেন মহাজাগতিক সমস্যা ও পদার্থের পারমাণবিক গঠন নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে এ গবেষণাপত্রে

পেপারঃ৭৮ Comments on Periodical Fluctuations of Lunar Longitude,Which So Far Appeared to be Inexplicable in Newtonian Mechanics. Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften (Berlin). Sitzungsberichte (১৯১৯), পৃষ্ঠাঃ৪৩৩-৪৩৬ নিউটনিয়ান মেকানিক্স বা ক্লাসিক্যাল মেকানিক্সের সাহায্যে চাঁদের গতি ও গতিপথের পরিবর্তন ঠিকমত ব্যাখ্যা করা যায় না আইনস্টাইন চাঁদের গতির পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের ওপর আলোচনা করেছেন এ গবেষণাপত্রে

পেপারঃ৭৯ A Test for the General Theory of Relativity. Die Naturwissenschaften, সংখ্যা ৭ (১৯১৯), পৃষ্ঠাঃ৭৭৬ স্যার আর্থার এডিংটন জেনারেল রিলেটিভিটির যে পরীক্ষা করেন, আইনস্টাইন সে পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে সামান্য আলোচনা করেন এই ছোট্ট পেপারে

পেপারঃ৮০ Time,Space and Gravitation. Times (London), ২৮ নভেম্বর, ১৯১৯ টাইমস পত্রিকার অনুরোধে আইনস্টাইন এ পেপারটি লেখেন টাইমস পত্রিকার জন্য তিনি জার্মান ভাষাতেই লিখেছিলেন, টাইমসের অনুবাদক তা ইংরেজিতে অনুবাদ করার পরে প্রবন্ধটি ইংরেজিতে প্রকাশিত হয় জার্মানির সাথে ইংল্যান্ডের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জার্মানির একজন বিজ্ঞানীর তত্ত্ব পরীক্ষা করে দেখার যে উদারতা ইংল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের পদার্থবিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন সেজন্য আইনস্টাইন ইংল্যান্ড ও ইংরেজ বিজ্ঞানীদের প্রশংসা করেন আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানের অনেকগুলো তত্ত্ব ও নীতির ব্যাখ্যাও করেন এ প্রবন্ধে যেগুলো তাঁর আপেক্ষিকতার তত্ত্বে ব্যবহৃত হয়েছে

পেপারঃ৮১ Induction and Deduction in Physics. Berliner Tageblatt, morning edition, sec-4. ২৫ ডিসেম্বর,১৯১৯ বিজ্ঞানে জার্মানদের অবদান সম্পর্কে খ্যাতিমান জার্মান বিজ্ঞানীদের প্রবন্ধ সংকলন সিরিজে প্রকাশিত হয় আইনস্টাইনের এই প্রবন্ধ এখানে আইনস্টাইন মন্তব্য করেন, কোন তত্ত্ব সত্যি কি মিথা তা আসলে কোনদিনই জানা যাবে না কারণ আজকে যা সত্য বলে প্রমাণিত হতে পারে

পেপারঃ৮২ Immagination from the East. Berliner Tageblatt,morning edition, ৩০ ডিসেম্বর ১৯১৯ যুদ্ধের পর জার্মানির অবস্থা খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে সেজন্য কট্টর জার্মান জাতীয়তাবাদীরা দায়ী করছে ইহুদিদের তারা বলছে পূর্ব-ইউরোপ থেকে ইহুদিরা জার্মানিতে আসছে বলেই জার্মানিতে সবধরণের সমস্যা তৈরি হচ্ছে আইনস্টাইন এই প্রবন্ধ লিখে ইহুদিদের বিরুদ্ধে অপবাদের প্রতিবাদ করেন

পেপারঃ৮৩ leo Arons as Physicist. Sozialistische Monatshete, সংখ্যা ৫২, দ্বিতীয় খন্ড (১৯১৯), পৃষ্ঠাঃ১০৫৫-১০৫৬ পদার্থবিজ্ঞানী লিও অ্যারনের মৃত্যুতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এ প্রবন্ধটি লেখেন আইনস্টাইন লিও অ্যারনের রাজনৈতিক আদর্শ ও সাহসের জন্য তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন আইনস্টাইন



আইনস্টাইনের কাল - পর্ব-১৩


১৯১৪
ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হচ্ছে আইনস্টাইন বার্লিনে তাঁর কাজ শুরু করেছেন পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা ছাড়াও যুদ্ধের বিরুদ্ধে তাঁর শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করছেন তিনি সাধারণ মানুষ এখন বিজ্ঞান ছাড়া অন্যান্য বিষয়েও তাঁর মতামতের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন বিশেষ করে তাঁর যুদ্ধবিরোধী খোলামেলা কথাবার্তার কারণে অনেকেই তাঁকে পছন্দ করতে শুরু করেছেন, আবার সাথে সাথে অনেকেই তাঁর সঙ্গ বিপজ্জনক মনে করে তাঁকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছেন

আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্বের ব্যাপারে অনেক বিজ্ঞানীই দ্বিধাগ্রস্ত কারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব বোঝা দুরুহ, সেরকম কোন গাণিতিক সমীকরণও এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি যা দিয়ে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বোঝা যাবে তাছাড়া আপেক্ষিকতার তত্ত্ব পরীক্ষা করে দেখার কোন উপায়ও জানা নেই কারো আইনস্টাইন নিরলসভাবে গবেষণাপত্র রচনা করে, সভা সেমিনারে বক্তৃতা দিয়ে বুঝিয়ে চলেছেন তাঁর তত্ত্ব এবছর সতেরোটি বৈজ্ঞানিক বক্তৃতা দেন আইনস্টাইন

বার্লিনে আসার আগে থেকেই এলসার সাথে গোপনে যোগাযোগ রাখছিলেন আইনস্টাইন এখন বার্লিনে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই সে যোগাযোগ বেড়ে গেছে এলসার সাথে প্রায় নিয়মিতই দেখা করছেন আইনস্টাইন আইনস্টাইন ও এলসার সম্পর্ক এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট এলসার কাছে এলে আইনস্টাইন শান্তি পান আইনস্টাইনকে বেশ বুঝতে পারেন এলসা মিলেইভা এ ব্যাপারে আইনস্টাইনের সাথে সরাসরি কথা বলতে চান না আর নিজেকে খুব অপমানিত মনে হচ্ছিলো তাঁর মিলেইভা বুঝতে পারছেন আইনস্টাইনের সাথে তাঁর সম্পর্ক ভিতরে ভিতরে মরে গেছে এরকম একটি মৃত-সম্পর্ককে বয়ে বেড়ানোর কোন মানে হয় না হ্যানস স্কুলে যাচ্ছে এখন হ্যানসের এই সেমিস্টারটা শেষ হলেই মিলেইভা আলাদা হয়ে যাবেন হ্যানস ও এডোয়ার্ডকে নিয়ে কিন্তু তার আগেই একদিন আইনস্টাইনের সাথে ভীষণ কথাকাটাকাটি হলো মিলেইভার আইনস্টাইন রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন তাঁর কাকার অ্যাপার্টমেন্টে-সেখানেই থাকেন এলসা এলসাকে মিলেইভা সম্পর্কে বললেন আইনস্টাইন, আমার স্ত্রী হলো আমার এমন এক কর্মচারী যাকে ইচ্ছে করলেও আমি ছাটাই করতে পারছি না

মিলেইভা তাঁর ছেলেদের নিয়ে চলে গেলেন ক্ল্যারা হ্যাবারের বাড়িতে ক্ল্যারা হ্যাবার হলেন বার্লিন ইউনিভার্সিটিতে আইনস্টাইনের বস ফ্রিটজ হ্যাবারের স্ত্রী মিলেইভার সাথে ক্ল্যারার বেশ ভাব হয়েছে বার্লিনে আসার পর মিলেইভা ক্ল্যারাকে বলেন আইনস্টাইনের দুর্ব্যবহারের কথা এদিকে আইনস্টাইন মিলেইভার কথা বোঝান ফ্রিটজ হ্যাবারকে হ্যাবার দম্পতি চেষ্টা করছেন আইনস্টাইন ও মিলেইভার মধ্যে মিটমাট ঘটাতে আইনস্টাইন অনেকগুলো শর্তের একটা লিস্ট তৈরি করলেন শর্তগুলো মিলেইভার পক্ষে বেশ অপমানজনক মিলেইভা প্রথমে শর্তগুলো মেনে নেবেন ভাবলেও পরে দেখলেন আসলেই তাঁদের পারস্পরিক ভালোবাসার মৃত্যু ঘটেছে ভালোবাসাহীন নিরর্থক কাছে থাকার চেয়ে পাকাপাকিভাবে দূরে সরে যাওয়াই উত্তম। 

জুলাই মাসের ২৪ তারিখ আইনস্টাইন ও মিলেইভার মধ্যে আলাদা হয়ে যাবার চুক্তি হলো স্থির হলো স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণ বাবদ আইনস্টাইন মিলেইভাকে বছরে ৫৬০০ মার্ক দেবেন ছেলেরা মিলেইভার কাছে থাকবে জুরিখে আইনস্টাইন মাঝে মাঝে ছেলেদের দেখতে যেতে পারবেন জুরিখ থেকে মাইকেল বেসো এসে মিলেইভা ও ছেলেদের নিয়ে গেলেন

কিছুদিন পরেই ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো সার্বিয়ার এক তরুণ গ্যাভ্রিলো প্রিন্সিপের (Gavrilo Princip)হাতে ডিউক ফ্র্যান্সিস ফার্ডিন্যান্ড(Francis Ferdinand) নিহত হবার পর অস্ট্রিয়া ও জার্মানি দাবী করলো সার্বিয়ার সন্ত্রাসীদের দমন করতে হবে কিন্তু সার্বিয়া ও সার্বিয়ার মিত্রদেশ রাশিয়া ও ফ্রান্স খুব একটা পাত্তা দিলো না অস্ট্রিয়া ও জার্মানিকে অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার সাথে যুদ্ধঘোষণা করলো আর জার্মানি যুদ্ধ ঘোষণা করলো রাশিয়া ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে

ইউরোপের অন্যান্য অংশেও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে লাগলো সকল জার্মান নাগরিকের জন্য কোন না কোনভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক হয়ে গেলো সুইজারল্যান্ডের নাগরিক হিসেবে আইনস্টাইনের জন্য যুদ্ধে অংশ নেয়া বাধ্যতামূলক ছিলো না আইনস্টাইন এসময় প্রকাশ্যে যুদ্ধবিরোধী কার্যক্রমে অংশ নিতে লাগলেন আইনস্টাইনের একজন পারিবারিক বন্ধু ও চিকিৎসক জর্জ নিকোলাই (Georg Nicolai)শান্তির পক্ষে একটি প্রচারপত্র তৈরি করলেন আইনস্টাইন সে প্রচারপত্রে স্বাক্ষর করেছেন আরো অনেকের মতো আইনস্টাইনও মনে করেন জার্মানির উচিত জাতিগত সত্ত্বার চেয়েও ইউরোপিয়ান সত্ত্বার প্রতি বেশি মনযোগ দেয়া শান্তিবাদী গ্রুপগুলোর একটি গ্রুপ সংযুক্ত ইউরোপিয়ান রাষ্ট্র বা ইউনাইটেড স্টেটস অব ইউরোপ গড়ে তোলার পক্ষে আইনস্টাইন সে গ্রুপে যোগ দিলেন ১৯১৬ সালে এ গ্রুপের কাজকর্ম নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়

আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অনুযায়ী অভিকর্ষজ ক্ষেত্রের টানে আলোক রশ্মিও বেঁকে যায় এটা পরীক্ষা করে দেখার উপায় হলো সূর্যের পাশ দিয়ে অন্য নক্ষত্রের আলো যাবার সময় তা সূর্যের অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে বেঁকে যায় কিনা পর্যবেক্ষণ করে দেখা কিন্তু সূর্যালোকের উপস্থিতিতে অন্য নক্ষত্রের আলো দেখা সম্ভব নয় শুধুমাত্র পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় সূর্য যখন পুরোপুরি ঢেকে যায়, তখনই অন্য নক্ষত্রের আলো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব এবছর পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবার কথা তা পর্যবেক্ষণ করে আইনস্টাইনের নতুন অভিকর্ষজ তত্ত্ব পরীক্ষা করে দেখার জন্য জার্মানির একদল জ্যোর্তিবিজ্ঞানী রাশিয়া যান কিন্তু সূর্যগ্রহণের একদিন আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় জার্মান বিজ্ঞানীদের বন্দী করা হয় রাশিয়ায় আইনস্টাইন খুব হতাশ হয়ে পড়েন জ্যোর্তিবিজ্ঞানীদের খবর পেয়ে তাঁর তত্ত্ব সত্যি কিনা জানার আপাতত কোন উপায় থাকলো না

প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের সাতটি উল্লেখযোগ্য প্রকাশনাঃ

পেপারঃ৪৪ On The Foundations of the Generalized Theory of Relativity and the Theory of Gravitation.Physikalische Zeitschrift, সংখ্যা ১৫ (১৯১৪), পৃষ্ঠাঃ১৭৬-১৮০ এই পেপারে আইনস্টাইন তাঁর হোল থিওরি ব্যাখ্যা করেন স্থান-কালের স্থানাঙ্ক নির্ধারণ ও তাদের ধর্ম ব্যাখ্যা করার জন্য আইনস্টাইনের হোল থিওরির দরকার হয় আইনস্টাইনের ক্ষেত্রতত্ত্ব বা ফিলড থিওরি অনুসারে দেখা যায় বিশেষ অবস্থায় অভিকর্ষজ ক্ষেত্রের টানে স্থান-কাল বেঁকে গিয়ে অনেকটা গর্তের আকার ধারণ করে

পেপারঃ৪৫  On the Theory of Gravitation.Naturforschende Gesellschaft in Zurich.Vierteljahrsschrift,Sitzungsberichte,সংখ্যা ৫৯ (১৯১৪), দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠাঃ৪- বার্লিন ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেয়ার কিছুদিন আগে ফেব্রুয়ারি মাসের নয় তারিখে জুরিখের সোসাইটি অব ন্যাচারাল সায়েন্টিস্টস আইনস্টাইনকে বিদায় সম্বর্ধনা দেয় সে অনুষ্ঠানে আইনস্টাইন যে বৈজ্ঞানিক বক্তৃতা দিয়েছিলেন তা এ পেপার আকারে প্রকাশিত হয় আইনস্টাইন এখানে তাঁর অভিকর্ষজ তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন

পেপারঃ৪৬ On the Relativity Problem.Scientia,সংখ্যা ১৫ (১৯১৪), পৃষ্ঠাঃ৩৩৭-৩৪৮ এ পেপারে আইনস্টাইন পৃথিবীর গতি সম্পর্কিত এ পর্যন্ত ব্যর্থ-গবেষণাগুলোর একটি সাধারণ আলোচনা করেন

পেপারঃ৪৭ The Formal Foundation of the General Theory of Relativity.Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften(Berlin),Sitzungsberuchte,(১৯১৪), পৃষ্ঠাঃ ১০৩০-১০৮৫ আইনস্টাইন এই রিভিউ পেপারে আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের একটি ধারাবাহিক গাণিতিক পর্যালোচনা করেন ভ্যারিয়েশানাল প্রিন্সিপাল ব্যবহার করে আইনস্টাইন তাঁর অভিকর্ষজ ক্ষেত্র-সমীকরণের গাণিতিক রূপ প্রতিষ্ঠা করেন

পেপারঃ৪৮ Covariance Properties in the Field Equations of the Theory of Gravitation Based on the Generalized Theory of Relativity.(সহলেখকঃ মার্সেল গ্রোসম্যান)। Zeitschrift fur Mathematik und Physik, সংখ্যা ৬৩ (১৯১৪), পৃষ্ঠাঃ২১৫-২২৫ ৪৭ নম্বর পেপারে উপস্থাপিত সমীকরণগুলোর গাণিতিক ভিত্তি আরো শক্ত করার লক্ষ্যে মার্সেল গ্রোসম্যানের সাথে এ পেপারটি প্রকাশ করেন আইনস্টাইন

পেপারঃ৪৯ Inaugural Lecture:Principles of Theoretical Physics.Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften (Berlin).Sitzungsberichte(১৯১৪), পৃষ্ঠাঃ ৭৩২-৭৪২ প্রুসিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সের ফেলো নির্বাচিত হবার পর একাডেমিতে তিনি যে স্বাগতভাষণটি দেন তা এ পেপার আকারে প্রকাশিত হয় আইনস্টাইন একাডেমিকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি একাডেমিতে যোগ দিতে পেরে তাঁর আনন্দের কথা ব্যক্ত করেন একজন তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী কীভাবে কাজ করেন তিনি তা নিজের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া বর্ণনার মাধ্যমে জানিয়ে দেন

পেপারঃ৫০ Contributions to Quantum Theory.Deutsche Physikalische Gesellschaft.Verhandlungen,সংখ্যা ১৬ (১৯১৪), পৃষ্ঠাঃ৮২০-৮২৮ এ পেপারে আইনস্টাইন শুধুমাত্র থার্মোডায়নামিক্স ব্যবহার করে প্ল্যাঙ্কের বিকিরণ সূত্র ও নার্নস্টের থার্মোডায়নামিক্সের তৃতীয় সূত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন

পেপারঃ৫১ Manifesto to the Europeans, অক্টোবর ১৯১৪ জার্মান মিলিটারিরা ইউরোপে সামরিক আক্রমণ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে জার্মানির ৯৩ জন শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী জার্মান মিলিটারির এ কার্যক্রম সমর্থন করে যুদ্ধের পক্ষে একটি বিবৃতি দেয় আইনস্টাইন এ বিবৃতির বিপক্ষে তাঁর অবস্থান ব্যক্ত করেন মেডিসিন ও ফিজিওলজির অধ্যাপক, চিকিৎসক ও শান্তিবাদী জর্জ নিকোলাই (Georg Nicolai)যুদ্ধের বিরুদ্ধে তাঁদের অবস্থান ব্যক্ত করে বিবৃতি রচনা করেন বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন আইনস্টাইন, নিকোলাই, ফরেস্টার ও অটো বুয়েক(Otto Buek) এ বিবৃতিটি বেশ প্রচার পায় কিন্তু এটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয় ১৯১৭ সালে প্রফেসর নিকোলাইয়ের দি বায়োলজি অব ওয়ার (The Biology of War)বইয়ের ভূমিকা হিসেবে উগ্র জার্মান জাতীয়তাবাদীরা প্রফেসর নিকোলাইকে একজন দেশদ্রোহী ঘোষণা করে ১৯২০ সাল থেকে প্রফেসর নিকোলাইকে আর কোন ক্লাস নিতে দেয়া হয়নি

১৯১৫
যুদ্ধের কারণে ইউরোপ স্থবির হয়ে পড়ছে আইনস্টাইন আপেক্ষিকতার তত্ত্বের ওপর কাজ করে চলেছেন নিরলসভাবে আপেক্ষিক তত্ত্বের ওপর প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশ করার পর দশটি বছর চলে গেছে আইনস্টাইন এখনো পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন তাঁর তত্ত্বের ব্যাপারে বছরের শেষের দিকে তিনি তাঁর জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছেন এবছর প্রুসিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সে চারটি লেকচার দিয়েছেন আইনস্টাইন রিলেটিভিটি বিষয়ে

গবেষণার সাথে সাথে এলসার সাথে তাঁর প্রেমও চলছে এখন আর তেমন কোন রাখঢাক নেই এ ব্যাপারে মাঝে মাঝে পিতৃত্ব জেগে ওঠলে বা পিতা হিসেবে নিজের অবস্থান জানিয়ে দেয়ার ইচ্ছে হলে তিনি ছেলেদের চিঠি লিখে ডেকে পাঠান নিজের কাছে ছেলেরা মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যায় কিন্তু ইদানিং বড় ছেলে এগারো বছরের হ্যান্স  আলবার্ট তার বাবা আইনস্টাইনকে আর সহ্য করতে পারছে না গ্রীষ্মে আইনস্টাইন ছেলেদের জুরিখে গিয়ে দেখে আসার পরিকল্পনা করলে ছেলেরা জুরিখ থেকে চলে যায় সার্বিয়া আইনস্টাইন তা জানার পরে এলসা ও তাঁর মেয়েদের নিয়ে বালটিক সাগরে ছুটি কাটাতে চলে যান

যুদ্ধ সম্পর্কে আইনস্টাইনের আপত্তিকর মনোভাব এবার তিনি সরাসরি প্রবন্ধ লিখে জানিয়ে দেন এবছর তাঁর যুদ্ধবিরোধী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় রাশিয়ায় বিরুদ্ধে জিতে গিয়ে জার্মানি যেরকম সামরিক আস্ফালন শুরু করেছে আইনস্টাইন বুঝতে পারছেন সেখান থেকে আরো বড় যুদ্ধবাদী মনোভাবের জন্ম হবে জার্মানিতে

রিলেটিভিটি তত্ত্বের ওপর সমানে লিখছেন ও বক্তৃতা দিচ্ছেন আইনস্টাইন গ্রহগুলোর গতিপ্রকৃতি বিষয়ে প্রচলিত কেপলার-নিউটন তত্ত্বের স্থলে এখন আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকার করছেন অনেকে কেপলার-নিউটন তত্ত্ব মতে স্পেসের কোন পরিবর্তন ঘটেনা কিন্তু আইনস্টাইনের তত্ত্ব মতে স্পেসও আপেক্ষিক গ্রহগুলো উপবৃত্তাকার পথে ঘোরার সময় তার গতির যে পরিবর্তন ঘটে কেপলার-নিউটনের তত্ত্বের মাধ্যমে তা সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিলো না কিন্তু আইনস্টাইনের তত্ত্বের মাধ্যমে তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা গেলো রাইম্যানের (Riemann)নন-ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি ও উচ্চমাত্রার নন-লিনিয়ার সমীকরণ ব্যবহার করে আইনস্টাইন সূর্যের চারপাশে আলোর বেঁকে যাওয়ার ঘটনায় বৈজ্ঞানিক যুক্তি খুঁজে পেলেন

আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রায় গুছিয়ে এনেছেন এবছর কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বেশ দ্রুত আইনস্টাইনের বস ও রসায়নবিদ বন্ধু ফ্রিটজ হ্যাবার জার্মানির রাসায়নিক যুদ্ধাস্ত্রের পরিচালক নিযুক্ত হয়েছেন তিনি বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করতে শুরু করেছেন যুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য আইনস্টাইনের আরেকবন্ধু ওয়ালথার নার্নস্টও জড়িয়ে পড়েছেন যুদ্ধের রাসায়নিক অস্ত্র প্রকল্পে নার্নস্টের দুই ছেলেই মারা গেছে এ যুদ্ধে হ্যাবার ও নার্নস্ট উভয়েই রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পান, ফ্রিটজ হ্যাবার ১৯১৮ সালে ও ওয়ালথার নার্নস্ট ১৯২০ সালে

প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের সাতটি উল্লেখযোগ্য প্রকাশনাঃ

পেপারঃ৫২ Experimental Proof of Amperes Molecular Currents,সহ-লেখকঃ ওয়ান্ডার ডি হাস (Wander J.de Haas).Deutsche Physikalische Gesellschaft.Verhandlungen, সংখ্যা ১৭ (১৯১৫), পৃষ্ঠাঃ১৫২-১৭০ অ্যাম্পিয়ারের মতবাদ অনুসারে ইলেক্ট্রিক চার্জগুলো আণুবীক্ষণিক বৃত্তাকারে অনবরত ঘুরতে থাকে, আর তাদের এই ঘূর্ণনের ফলে চুম্বকত্বের সৃষ্টি হয় এ ব্যাপারে লরেঞ্জের তত্ত্ব হলো ঘূর্ণায়মান কণাগুলো আসলে ইলেকট্রন আইনস্টাইন ও ওয়ান্ডার ডি হাস ভাবলেন বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা দরকার এ পেপারে তাঁরা একটি পরীক্ষণ পদ্ধতির প্রস্তাব করেছেন যার মাধ্যমে বোঝা যাবে ঘূর্ণায়মান কণাগুলো ইলেকট্রন কিনা

পেপারঃ৫৩ Experimental Proof of the Existence of Amperes Molecular Currents.(সহলেখকঃওয়ান্ডার ডি হাস).Koninklijke Akademie van Wetenschappen te Amsterdam, সংখ্যাঃ১৮(১৯১৫-১৬)। আইনস্টাইন ওয়ান্ডার ডি হাসের সাথে অ্যাম্পিয়ারের মলিকিউলার কারেন্টের ওপর কিছু পরীক্ষামূলক গবেষণা করেছেন তাঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন তিনটি গবেষণাপত্রে আইনস্টাইন ও ডি হাসের এই গবেষণা পদার্থবিজ্ঞানে আইনস্টাইন-ডি-হাস ইফেক্ট নামে পরিচিত ডাচ পদার্থবিজ্ঞানী এইচ এ লরেঞ্জ আইনস্টাইনের ৫২ নম্বর প্রবন্ধে কিছু ভুল দেখিয়ে দেবার পর আইনস্টাইন ও ডি হাস বেশ দ্রুতই পেপারটির একটি সংশোধনী প্রকাশ করেন

পেপারঃ৫৪ My Opinion on the War.Das Land Goethes(১৯১৫-১৯১৬).Stuttgart and Berlin:Deutsche Verlags-Anstalt(১৯১৬) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মান জাতিকে জার্মান সংস্কৃতির পক্ষে একযোগে কাজ করার আহবান জানিয়ে একটি স্বদেশপ্রেম বিষয়ক সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয় আইনস্টাইনকে সেখানে প্রকাশের জন্য একটি লেখা দিতে অনুরোধ করা হয় আইনস্টাইন এ প্রবন্ধটি লেখেন এ লেখায় আইনস্টাইন বলেছেন, পুরুষের জন্মগত উগ্রতাই যে কোন যুদ্ধের মূল কারণ আইনস্টাইন পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেন যে তিনি কোন অবস্থাতেই যুদ্ধের পক্ষপাতী নন

পেপারঃ৫৫ On the General Theory of Relativity.Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften(Berlin).Sitzungsberichte (১৯১৫), পৃষ্ঠাঃ৭৭৮-৭৮৬ জেনারেল রিলেটিভিটি বিষয়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পেপার গ্র্যাভিটেশনের সঠিক ফিলড ইকোয়েশান খুঁজে বের করতে তিনবছর সময় লেগেছে তাঁর আইনস্টাইন এ পেপারের উপসংহারে মন্তব্য করেছেন, যাঁরা সঠিকভাবে এ থিওরি বুঝতে পারবেন, এ থিওরির জাদু তাঁদের অবশ্যই মুগ্ধ করবে

পেপারঃ৫৬ Explanation of the Perihelion Motion of Mercury from the General Theory of Relativity.Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften (Berlin).Sitzungsberichte (১৯১৫) পৃষ্ঠাঃ ৮৩১-৮৩৯ সূর্যের সাথে বুধগ্রহের সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থানের হিসেবকে উদাহরণ হিসেবে ধরে এ পেপারে আইনস্টাইন তাঁর জেনারেল রিলেটিভিটির জ্যোর্তিবৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেন গ্রহগুলো যখন সূর্যের চারপাশে নিজস্ব উপবৃত্তাকার অক্ষপথে ঘুরতে থাকে, তখন অক্ষপথের যে বিন্দু থেকে সূর্যের দূরত্ব সবচেয়ে কম, সে বিন্দুকে ওই গ্রহের পেরিহিলিয়ান পয়েন্ট বলা হয় জ্যোর্তিবিজ্ঞানের অনেকদিনের পুরনো একটি সমস্যার সমাধান হয়ে যায় আইনস্টাইনের এ পেপার প্রকাশিত হবার পর তাছাড়া তাঁর রিলেটিভিটির সাধারণ তত্ত্বেরও একটি প্রধান ভিত্তি এই পেপার

পেপারঃ৫৭ The Field Equations of Gravitation. Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften (Berlin).Sitzungsberichte (১৯১৫), পৃষ্ঠাঃ৮৪৪-৮৪৭ আগের কিছু সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হওয়ায় সেগুলো বাদ দিয়ে নতুন করে অভিকর্ষজ ক্ষেত্রতত্ত্বের সমীকরণ প্রতিষ্ঠা করেন আইনস্টাইন ৫৫,৫৬ ও ৫৭- এই তিনটি পেপারে আইনস্টাইন তাঁর নতুন অভিকর্ষজ ক্ষেত্রতত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন এবং আপেক্ষিকতার তত্ত্বের গাণিতিক ভিত্তি আরো মজবুত করে দেন এই তিনটি পেপারই প্রকাশিত হয়েছে এবছর নভেম্বর মাসে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বে স্থানকাল জ্যামিতিক ভাবে সমতল, কিন্তু আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে স্থানকাল বেঁকে যায়

পেপারঃ৫৮ Theoretical Atomism.Kultur der Gegenwart,সম্পাদনাঃ পল হাইনবার্গ(Paul Hinneberg), সংখ্যা ১।Physik, ৩য় পর্ব, ৩য় খন্ড, Leipzig:B.G.Teubner, (১৯১৫) এ পেপারে আইনস্টাইন লিখেছেন যে বিজ্ঞানের তত্ত্ব যতবেশি সহজ ও বোধগম্য হতে থাকবে- ততোই দেখা যাবে তত্ত্বের সংখ্যা কমতে থাকবে এবং সামান্য কয়েকটি তত্ত্ব দিয়েই বিজ্ঞানের সবকিছু ব্যাখ্যা করা সম্ভব হবে উদাহরণ হিসেবে তিনি দেখান কীভাবে শুধুমাত্র গ্যাসের গতিতত্ত্ব দিয়ে সান্দ্রতা(Viscosity), তাপ পরিবাহিতা(Conduction), ডিফিউশান(Diffusion) ইত্যাদি ব্যাখ্যা করা যায়

১৯১৬
আইনস্টাইন জার্মান ফিজিক্যাল সোসাইটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ১৯১৮ সাল পর্যন্ত তিনি এ পদে ছিলেন তাঁর অনেকদিনের গবেষণার ফসল আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব প্রকাশিত হয় এবছর এখন থেকে ১৯০৫ সালে প্রকাশিত তাঁর আপেক্ষিকতার তত্ত্ব স্পেশাল রেলিটিভিটি বা আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব, আর ১৯১৫ সালের তত্ত্ব- যেখানে অভিকর্ষজ ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত হয়েছে- তা জেনারেল রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব হিসেবে চিহ্নিত হয় জেনারেল থিওরিতে আইনস্টাইন পদার্থবিদ্যার সমস্ত নিয়মকে গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যার প্রস্তাব করেন এবছর কোয়ান্টাম তত্ত্বের ওপরও তিনটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন আইনস্টাইন

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে আরো কয়েকটি দেশে ইতোমধ্যেই দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন ইতালি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, আর জার্মানি আক্রমণ করে বসেছে পর্তুগালকে এসবের মধ্যেও আইনস্টাইন তাঁর যুদ্ধবিরোধী অবস্থানে অটল জার্মানিতে খাদ্যসামগ্রী পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ছে সরকার খাদ্যে রেশন ব্যবস্থা চালু করেছে আইনস্টাইন নিজের যুদ্ধবিরোধী অবস্থান সত্ত্বেও জার্মানির রাসায়নিক যুদ্ধাস্ত্র প্রকল্পের কর্তাব্যক্তি ফ্রিটজ হ্যাবার ও ওয়ালথার নার্নস্টের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন

মিলেইভা তাঁর দুইছেলেকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে আছেন সুইজারল্যান্ড নিরপেক্ষ দেশ যুদ্ধের ভয় নেই সেখানে আইনস্টাইন ছেলেদের ব্যাপারে একপ্রকার নিশ্চিন্ত আছেন আইনস্টাইন জুরিখে এসে ছেলেদের সাথে কিছুটা সময় কাটালেন পরে সুযোগ বুঝে মিলেইভার কাছে ডিভোর্স চাইলেন মিলেইভা আলাদা হয়ে যাবার পর মানসিকভাবে আরো দুর্বল ও খিটখিটে মেজাজের হয়ে গেছেন ডির্ভোসের কথা শুনে আইনস্টাইনের সাথে খুব ঝগড়া করলেন মিলেইভা ডির্ভোস তিনি কিছুতেই দেবেন না আইনস্টাইনকে হুমকি দিলেন, ডির্ভোসের কথা বললে ছেলেদের কাছে আর আসতে দেবেন না

আইনস্টাইন মেজাজ খারাপ করে ফিরে গেলেন বার্লিনে আইনস্টাইন যাবার পর মিলেইভা সাংঘাতিক অসুস্থ হয়ে পড়লেন হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো তাঁকে মিলেইভার বয়স মাত্র একচল্লিশ কিন্তু তাঁর শরীর এখনই ভেঙে পড়তে শুরু করেছে মাইকেল বেসো ছেলেদের নিয়ে গেলেন নিজের কাছে বেসোর স্ত্রী আনা মিলেইভার প্রতি খুবই সহমর্মী আইনস্টাইনকে তিনি পছন্দ করেন না তাঁর বোন মেরির সাথে অনেকদিন প্রেম করার পর সম্পর্ক নষ্ট করেছেন আইনস্টাইন আনা তা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না এখন চোখের সামনেই দেখছেন মিলেইভার কষ্ট

আইনস্টাইন মিলেইভার অসুখের কথা বিশ্বাস করলেন না তিনি ভাবলেন ডির্ভোসের কথা বলাতে মিলেইভা অসুস্থ হবার ভান করছে আইনস্টাইনের মা পলিনও বিশ্বাস করেন না মিলেইভাকে এলসাকে তিনি বললেন, সে তো নিজের সুবিধা অনুযায়ী অসুস্থ হয় কিন্তু মাইকেল বেসো আইনস্টাইনকে লিখলেন যে মিলেইভা সত্যিই অসুস্থ

এদিকে আইনস্টাইনের ছোটছেলে এডয়ার্ডের শরীরও ভালো নেই তার মানসিক বিকাশও ঠিকমত হচ্ছে না বয়সের তুলনায় সে অত্যন্ত মেধাবী তিনবছর বয়সেই সে সংবাদপত্র পড়তে শুরু করেছে দেখা যাচ্ছে সে একবার যা পড়ে তা হুবহু মনে রাখতে পারে ফটোগ্রাফিক মেমোরি এডোয়ার্ডের পাঁচ বছর বয়স থেকেই সে পিয়ানো শিখতে শুরু করেছে একবারের বেশি দুবার দেখিয়ে দিতে হয়না তাকে ছেলের এরকম অস্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধিতে আইনস্টাইন ও মিলেইভা উভয়েই চিন্তিত এখন এডোয়ার্ড অসুস্থ তাকেও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে কিন্তু আইনস্টাইন তাদের কাউকেই দেখতে গেলেন না

প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের উল্লেখযোগ্য সাতটি প্রকাশনাঃ

পেপারঃ৫৯ A New Formal Interpretation of Maxwells Field Equations of Electrodynamics. Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften (Berlin).SItzungsberichte (১৯১৬), পৃষ্ঠাঃ ১৮৪-১৮৮ এ পেপারে আইনস্টাইন ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎচুম্বকীয় সমীকরণগুলোর ওপর ক্ষেত্রতত্ত্বের সমীকরণ প্রয়োগ করেন

পেপারঃ৬০ The Foundations of the General Theory of Relativity. Annalen der Physik,সংখ্যা ৪৯ (১৯১৬), পৃষ্ঠাঃ৭৬৯-৮২২ এই পেপারটি আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটির প্রথম পূর্ণাঙ্গ পেপার জেনারেল রিলেটিভিটির ওপর ১৯১৫ সালে প্রকাশিত তিনটি ধারাবাহিক গবেষণাপত্রের পর এ পেপারে আইনস্টাইন জেনারেল রিলেটিভিটির চুড়ান্তরূপ প্রকাশ করেন যে টেনসর এনালাইসিসের মাধ্যমে জেনারেল রিলেটিভিটিতে অভিকর্ষজ ক্ষেত্রসমীকরণগুলোকে নন-ইউক্লিডিয়ান স্পেসটাইমে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে এ গবেষণাপত্রে অভিকর্ষজ ক্ষেত্রের টানে আলোক রশ্মির বেঁকে যাওয়ার ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারে জেনারেল রিলেটিভিটি নিউটনের ক্ল্যাসিক্যাল থিওরি এরকম ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে পারেনা এখানেই জেনারেল রিলেটিভিটির শ্রেষ্টত্ব এতদিন যে বিশ্বব্রহ্মান্ডকে দেখা হতো নিউটনের ক্ল্যাসিক্যাল তত্ত্বের মাধ্যমে, এখন থেকে তা দেখা হবে আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটির মাধ্যমে আইনস্টাইন এ পেপারের একটি সংযোজনী লিখেছিলেন, কিন্তু তা কখনোই প্রকাশিত হয়নি

পেপারঃ৬১ Approximative Integration of the Field Equations of Gravitation. Koniglich Preussische Akademie der Wissenschafen(Berlin). Sitzungsberichte(১৯১৬), পৃষ্ঠাঃ৬৮৮-৬৯৬ এ পেপারে আইনস্টাইন অভিকর্ষজ ক্ষেত্রের সমীকরণগুলোর কিছু গাণিতিক ভিত্তি ব্যাখ্যা করেন

পেপারঃ৬২ Emission and Absorption of Radiation in Quantum  Theory. Deutsche Physikalische Gesellschaft.Verhandlungen, সংখ্যা ১৯(১৯১৬), পৃষ্ঠাঃ৩১৮-৩২৩ শক্তির বিকিরণের ক্ষেত্রে শক্তিগুচ্ছ বা কোয়ান্টার নির্গমণ ও শোষণ প্রক্রিয়ার কোয়ান্টাম তত্ত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে এ পেপারে

পেপারঃ৬৩ On the Quantum Theory of Radiation. Physikalische Gesellschaft Zurich.Mitteilungen,সংখ্যা ১৮ (১৯১৬), পৃষ্ঠাঃ৪৭-৬২ কোয়ান্টাম তত্ত্বের মাধ্যমে আলোর কণা ফোটনের মৌলিক ধর্ম ও কাজের ব্যাখ্যা করা হয়েছে এ গবেষণাপত্রে পরের বছর পেপারটি আবার প্রকাশিত হয় (পেপার ৬৮)

পেপারঃ৬৪ Elementary Theory of Water Waves and of Flight. Die Naturwissenschaften,সংখ্যা ৪ (১৯১৬), পৃষ্ঠাঃ ৫০৯-৫১০ জার্মান ফিজিক্যাল সোসাইটির এক বৈজ্ঞানিক সমাবেশে আইনস্টাইন এ লেকচারটি দেন আইনস্টাইন ধারণা দেন যে গতিশীল কোন তরল বা বায়বীয় পদার্থে কোন বস্তু রাখলে সেটি একটি উর্ধ্বমুখী বল অনুভব করবে যা বস্তুটির ওড়ার মত অবস্থা তৈরি করতে পারে, অর্থাৎ বস্তুটি উড়তে পারবে পরের বছর বার্লিনের এক এয়ারক্রাফট ফার্ম আইনস্টাইনের ডিজাইনটি পরীক্ষা করে দেখে ডিজাইনটি উড়তে ব্যর্থ হয় সেই টেস্ট ফ্লাইটের পাইলট ছিলেন পল এরহার্ড(Paul Ehrhardt) আইনস্টাইন মৃত্যুর কয়েকমাস আগে পল এরহার্ডের কাছে স্বীকার করেছেন, আমার সে সময়ের ভুলগুলোর জন্য আমার এখনো লজ্জা হয়

পেপারঃ৬৫ Ernst Mach.Physikalische Zeitschrift,সংখ্যা ১৭ (১৯১৬), পৃষ্ঠাঃ ১০১-১০৪ দার্শনিক আর্নস্ট মাখের মৃত্যুর পর একটি দীর্ঘ শোকবার্তা লেখেন আইনস্টাইন আর্নস্ট মাখের কাছ থেকে গবেষণার অণুপ্রেরণা পেয়েছেন আইনস্টাইন আইনস্টাইন বলেন, মাখের দার্শনিক গবেষণার লক্ষ্য ছিলো এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজে বের করা যেখান থেকে বিজ্ঞানের অনেকগুলো শাখায় একসাথে দৃষ্টি দেয়া যায়



Latest Post

ডাইনোসরের কাহিনি

  বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণি কী? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলবো নীল তিমি – যারা দৈর্ঘ্যে প্রায় তিরিশ মিটার, আর ওজনে প্রায় ১৯০ টন পর্যন্ত...

Popular Posts