Sunday 13 June 2021

কপিরাইট এবং নীতিবোধ

 কপিরাইট এবং নীতিবোধ

আমরা জানতাম মাসুদ রানা সিরিজের সব বই কাজী আনোয়ার হোসেনের লেখা। কুয়াশা সিরিজের লেখকও তিনি। বিদ্যুৎ মিত্র নামে যেসব বই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রকাশনী থেকে - সেই বিদ্যুৎ মিত্রও তাঁর ছদ্মনাম বলে জানতাম। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি বই এবং কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের প্রকৃত লেখক শেখ আবদুল হাকিম। একজন পাঠক হিসেবে আমি নিজেকে খুবই প্রতারিত মনে করছি। যে কোন লেখকের একটা আত্মমর্যাদা থাকে। জেনেশুনে কোন লেখকই অন্যের নামে নিজের লেখা প্রকাশ করতে দেন না, এবং অন্যের লেখাও নিজের নামে চালান না বলে বিশ্বাস ছিল। কিন্তু সে বিশ্বাস এখন আর রাখা যাচ্ছে না। 

মাসুদ রানা সিরিজের বইগুলি প্রকাশিত হচ্ছে প্রায় ৫০ বছর আগে থেকে। কপিরাইট অফিস থেকে জানা যাচ্ছে শেখ আবদুল হাকিম তাঁর লেখা বই কাজী আনোয়ার হোসেনের নামে প্রকাশ করার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিলেন টাকার বিনিময়ে। একজনের লেখা অন্যজনের নামে প্রকাশিত হওয়াটা যে নীতিগতভাবে ঠিক নয় তিনি সেই পয়েন্ট থেকে অভিযোগ করেননি। তিনি এত বছর পরে অভিযোগ করেছেন চুক্তিমত টাকা-পয়সা পাননি বলেই। 

অন্যের লেখা নিজের নামে চালিয়ে দেয়ার প্রবণতা দিনদিন বাড়ছে। সামাজিক মাধ্যমে একজনের লেখা অন্যজন কপি পেস্ট করে 'সংগৃহীত' বলে চালাচ্ছেন। বাংলাদেশে কপিরাইটের অবস্থা খুবই নাজুক। অন্যদেশের প্রকাশনা শিল্পে কপিরাইটের যে নীতিগত স্বচ্ছতা এবং দৃঢ়তা দেখা যায়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য যে আমাদের দেশে তা প্রায়ই অনুপস্থিত। বিদেশে প্রকাশিত বই থেকে অনেককিছুই আমরা কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই প্রকাশ করে ফেলছি, অনেক সময় কোন ধরনের উৎসও উল্লেখ করছি না।  বিদেশী বইয়ের অনুবাদের ব্যাপারেও আমরা লেখক বা প্রকাশকের কোন অনুমতি নেয়ার তোয়াক্কা করছি না। তৎকালিন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বাংলায় অনুদিত হয়ে প্রকাশিত বইগুলি এখন বাংলাদেশের প্রকাশকেরা যেভাবে খুশি সেভাবে প্রকাশ করছেন। অনেক সময় প্রকাশকরা সেই বইগুলির লেখক হিসেবে বাংলাদেশের অন্য কোন লেখকের নাম বসিয়ে দিচ্ছেন। যার নাম বসাচ্ছেন তিনি হয়তো জানেনই না। ভারতীয় প্রতিষ্ঠিত লেখকদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন যে বাংলাদেশে তাঁদের নাম দিয়ে অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে যেগুলি আসলে তাঁরা লিখেননি। কোন দেশের প্রকাশনার মান দেখেই বোঝা যায় - সেই দেশের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্যের কী অবস্থা। 

আমাদের সতের কোটি মানুষের বিশাল দেশে আমাদের প্রকাশনা জগত নিয়ে আমরা গৌরব করতে পারবো কখন? কখনো পারবো কি?

১৬ জুন ২০২০

No comments:

Post a Comment

Latest Post

Dorothy Crowfoot Hodgkin

  Look closely at the fingers of the person in the picture. Her fingers had not bent in this way due to age; she had been suffering from chr...

Popular Posts