Monday 7 June 2021

জীবকোষের অমরত্বের রহস্য



বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল কোষের পরিবর্তন  সময়ের মতই একমুখি, তাকে কিছুতেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় না। ডিম্বাণু  ও শুক্রাণুর মিলনের ফলে যে ভ্রুণ তৈরি হয় সেখানে শুরুতে সামান্য যে ক'টি কোষ থাকে তা নবীন অবিশেষায়িত কোষ। অর্থাৎ এই কোষগুলি থেকেই শরীরের সমস্ত কোষ তৈরি হয়। এই কোষগুলো বিভাজিত হতে হতে আস্তে আস্তে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য বিশেষায়িত হয়ে যায়ভ্রুণের বৃদ্ধির সাথে সাথে নবীন প্রাথমিক কোষগুলো পরিণত হয়ে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হতে থাকে। কিছু কোষ পরিণত হয় স্নায়ুকোষে, কিছু যকৃতে, কিছু মস্তিষ্কে, কিছু হৃৎপিন্ডে, ইত্যাদি। তারপর যকৃতের কোষগুলো শুধু যকৃতের কাজই করে, হৃৎপিন্ডের কোষগুলো হৃৎপিন্ডের। কোষগুলো একবার পরিণত হয়ে বিশেষায়িত হয়ে গেলে তাকে আর কখনো অবিশেষায়িত তরুণ কোষে পরিবর্তন করা যায় না এরকম বিশ্বাসই ছিল বিজ্ঞানীদের। প্রাথমিক নবীন কোষগুলো শুরুতে  যে কোন অঙ্গের অংশ হতে পারে কিন্তু পরে ক্রমশ বিভাজিত হতে হতে যখন বিশেষায়িত হয়ে যায় তখন আর কিছুতেই প্রাথমিক অবিশেষায়িত অবস্থায় ফিরে যেতে পারে না কিন্তু ১৯৫৮ সালে বিজ্ঞানীদের এই ধারণা বদলে দিলেন একজন ব্রিটিশ তরুণ জন গর্ডন। জীববিজ্ঞানে ক্লোনিং-এর সূত্রপাত হয়েছে জন গর্ডনের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। জন গর্ডনের লেখাপড়া ও গবেষণা সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে তাঁর বিজ্ঞান পড়ার সুযোগই যেখানে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল, সেখানে  নোবেল পুরষ্কার পাওয়া তো অনেক পরের ব্যাপার।

জন গর্ডনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ২রা অক্টোবর, ইংল্যান্ডে। তাঁর বাবা-মা তাঁকে সবচেয়ে নামী-দামী স্কুলে পড়িয়েছেন। বারো বছর বয়সে গর্ডনকে ভর্তি করিয়েছেন ইউরোপের সবচেয়ে দামী প্রাইভেট স্কুল - ইটন কলেজে। ইটন কলেজের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের 'মানুষের মত মানুষ' তৈরি করে দেন বলে বিশ্বাস অনেকের। কিন্তু গর্ডন ঠিক তাল মেলাতে পারলেন না সেখানে। বিজ্ঞান বিষয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল ঠিকই - কিন্তু নিজের মত করে পড়াশোনা করতে গিয়ে কিছুই হলো না। এই দামী কলেজের বিজ্ঞান পড়ানোর পদ্ধতি ছিল অনেকটাই মুখস্থনির্ভর। ক্লাসে নোট নাও, দাঁড়ি-কমা-সেমিকোলনসহ সবকিছু মুখস্থ করে পরীক্ষায় হুবহু লিখে দাও, শিক্ষকরা তোমাকে ভাল ছাত্র বলবে। কিন্তু জন গর্ডনের পক্ষে এটা করা সম্ভব হয়নি। তাই সেখানে মোটেও ভাল ফলাফল করতে পারেননি তিনি। ইটনের শিক্ষকদের মতে ক্লাসের ২৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে গর্ডন ছিলেন সবচেয়ে খারাপ ছাত্র।  ফলে ইটন কলেজের পড়াশোনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছে থাকলেও বিজ্ঞানের কোন শাখায় ভর্তির দরখাস্তও করতে পারেননি তিনি ক্লাসিক সাহিত্যে ভর্তি হবার দরখাস্ত করেছিলেন অক্সফোর্ডের ক্রাইস্ট চার্চ কলেজে কিন্তু ভর্তি অফিসে কিছু কাকতালীয় ঘটনা ঘটে। অ্যাডমিশান অফিস থেকে তাঁকে ফোন করে জানানো হয় যে ক্লাসিক সাহিত্যের বদলে তাঁকে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে হবে। পরে জানা গিয়েছিল সেই বছর অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্রাইস্ট চার্চ কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে ৩০টি সিট খালি ছিল। সেই খালি সিট ভর্তি করার জন্যই জন গর্ডনকে প্রাণিবিজ্ঞানে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়েছিল। স্কুলে থাকতেই তাঁর আকর্ষণ জন্মেছিল প্রাণিবিজ্ঞানের প্রতি। তাঁর সেই আগ্রহকে শেষ করে দেয়ার সব চেষ্টা তাঁর শিক্ষকরা করেছিলেন। তা সত্ত্বেও এই সুযোগ যখন এসে গেল তিনি তার পুরোটাই কাজে লাগালেন।

শুরু হলো  গর্ডনের তুমুল বিজ্ঞানচর্চা স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি করেন অধ্যাপক মাইকেল ফিশবার্গের অধীনে নিউক্লিয়ার ট্রান্সপ্লেন্টেশান বা কোষের নিউক্লিয়াস স্থানান্তর প্রক্রিয়ার ওপর জীবকোষ রূপান্তরের একমুখি ধারণা সম্পর্কে গর্ডন ভাবলেন এতদিনের বদ্ধমূল ধারণাতো ভুলও হতে পারে। একটা কোষ যখন এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত হয় তখন কি তার প্রাথমিক অবস্থার সব স্মৃতিই মুছে যায়? যে জিনেটিক কোড তাদের পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করে সেই কোডের কিছুই কি অবশিষ্ট থাকে না? যদি কিছু স্মৃতিও কোষের নিউক্লিয়াসে থাকে তাহলে সেই স্মৃতি কাজে লাগিয়ে পরিণত কোষের মধ্যে নবীন কোষের বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। ১৯৫৮ সালে তিনি ব্যাঙের ডিম্বকোষের অপরিণত অবিশেষায়িত নিউক্লিয়াস সরিয়ে সেখানে পাকস্থলির প্রবীণ কোষের নিউক্লিয়াস ঢুকিয়ে দেন এই পরিবর্তিত ডিম্বকোষগুলো যথাসময়ে স্বাভাবিক ব্যাঙাচিতে পরিণত হয় তারপর পি-এইচ-ডি থিসিস জমা দিয়ে ব্যাঙাচিগুলো প্রফেসর ফিশবার্গের কাছে রেখে তিনি পোস্ট-ডক্টরেট করতে চলে যান আমেরিকায় ক্যালটেকে ব্যাকটেরিয়ার বংশগতির ওপর তিন বছর গবেষণা করে ফিরে আসেন অক্সফোর্ডে ১৯৬২ সালে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে যোগ দেন সহকারী প্রভাষক হিসেবে

ততদিনে ব্যাঙাচিগুলো পূর্নাঙ্গ ব্যাঙে পরিণত হয়েছে সফল ভাবে ব্যাঙের ক্লোন তৈরি হয়েছে সে বছরই প্রকাশিত হলো তাঁর কালজয়ী গবেষণাপত্র "দি ডেভেলপমেন্টাল ক্যাপাসিটি অব নিউক্লিয়াই টেকেন ফ্রম ইন্টেস্টাইনাল এপিথেলিয়াম সেলস অব ফিডিং ট্যাডপোলস" জন গর্ডন আবিষ্কার করলেন যে পরিণত প্রবীণ কোষগুলোকে আবার ঝকঝকে নবীন কোষে রূপান্তরিত করা যায়  'ক্লোন' শব্দটি গাছের ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকে প্রচলিত হলেও প্রাণির ক্ষেত্রে প্রথম ব্যবহার করেন ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী হ্যালডেন ১৯৬৩ সালে গর্ডনের গবেষণালব্ধ ফলাফল ব্যাখ্যা করতে গিয়ে  

গর্ডনের আবিষ্কারকে শুরুতে পাত্তা দিতে চাননি অনেকেই। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা যখন গর্ডনের পদ্ধতি ব্যবহার করে সাফল্য পেতে শুরু করলেন - স্টেমসেল গবেষণার পালে হাওয়া লাগলো। নিম্ন-প্রজাতির প্রাণী থেকে শুরু করে স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্লোন তৈরি করার চেষ্টা চললো। ১৯৯৬ সালে স্কটল্যান্ডের রোজলিন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী আয়ান উইলমুট ও কিথ ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বে যখন প্রথম স্তন্যপায়ী ক্লোন ভেড়া ডলির জন্ম হলো পৃথিবীব্যাপী হৈ চৈ পড়ে গেলো।

 

চিত্র: জন গর্ডন পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙের একটি কোষের নিউক্লিয়াস নিয়ে ব্যাঙের ডিমের কোষের নিউক্লিয়াসে ঢুকিয়ে দেন। সেখান থেকে সৃষ্টি হয় স্বাভাবিক ব্যাঙাচি। যা নির্দিষ্ট সময়ে পরিণত হয় পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙে। একই পদ্ধতিতে সৃষ্টি হয় ভেড়ার ক্লোন ডলি। এবং আরো অনেক প্রাণির ক্লোন তৈরি হতেই থাকে।


এদিকে গর্ডন ১৯৭১ সালে কেমব্রিজের মলিকিউলার বায়োলজি ল্যাবে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে সেল বায়োলজি ডিভিশানের প্রধান বিজ্ঞানী হয়ে ওঠেন ১৯৮৩ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জন হামফ্রে প্লামার প্রফেসর পদে যোগ দেন সেখানে প্রফেসর লাসকির সাথে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ক্যান্সার গবেষণার 'মলিকিউলার এমব্রায়োলজি ইউনিট' ১৯৯০ সালে তিনি  'ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার এন্ড ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি'র সভাপতির দায়িত্ব নেন বর্তমানে এই ইনস্টিটিউটের সতেরটি স্বতন্ত্র গবেষণা গ্রুপে দু'শতাধিক বিজ্ঞানী গবেষণারত গর্ডনের আবিষ্কৃত পদ্ধতির ভিত্তিতে স্টেমকোষের বিভিন্ন রকমের গবেষণা চলতে থাকে এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্তের সূচনা হয় এমব্রায়োনিক স্টেমসেল সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ২০০৭ সালের চিকিৎসাবিদ্যার নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয় মারিও ক্যাপেচি, মার্টিন ইভান্স ও অলিভার স্মিথকে

জন গর্ডনের পদ্ধতিতে একটা পরিণত বিশেষায়িত কোষকে অপরিণত অবিশেষায়িত কোষে রূপান্তরের জন্য একটা কোষ থেকে নিউক্লিয়াস বের করে সেখানে অন্য পরিণত কোষের নিউক্লিয়াস স্থাপন করতে হয় পরীক্ষাগারে একটার পর একটা এই জটিল পদ্ধতির কোন বিকল্প কি আছে? পুরো একটা পরিণত কোষকে কি সরাসরি নবীন কোষে পরিণত করা সম্ভব? জাপানের প্রফেসর শিনিয়া ইয়ামানাকা প্রমাণ করেছেন এটা সম্ভব কোষের নিউক্লিয়াস স্থানান্তর করে বিশেষায়িত কোষ থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রাণী তৈরি করার যে পদ্ধতি গর্ডন আবিষ্কার করেছিলেন তার ফলাফল প্রথম প্রকাশিত হয়েছে ১৯৬২ সালে আর সে বছরই জাপানের ওসাকায় জন্ম হয় শিনিয়া ইয়ামানাকার। শিনিয়া ইয়ামানাকার বাবা ছিলেন জাপানের বিশিষ্ট শিল্পপতি। সেলাই কলের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা ছিল তাঁর। শিনিয়া মা-বাবার একমাত্র সন্তান। জাপানীদের রীতি অনুযায়ী তাঁর বাবার শিল্প-কারখানার দায়িত্ব নেয়ার কথা। কিন্তু তিনি ব্যবসা বাণিজ্যের দিকে গেলেন না। তিনি ডাক্তার হলেন। ১৯৮৭ সালে কোবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম-ডি ডিগ্রি লাভ করেন এবং অর্থোপেডিক সার্জন হিসেবে কাজ শুরু করেন কিন্তু কিছুদিন পরেই সার্জারি বাদ দিয়ে গবেষণায় ফিরে আসেন ১৯৯৩ সালে ওসাকা সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি লাভ করেন তারপর পোস্টডক্টরেট গবেষণা করেন গ্ল্যাডস্টোন সানফ্রান্সিসকোর গ্ল্যাডস্টোন ইনস্টিটিউট ও জাপানের নারা ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে বর্তমানে তিনি কায়তো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক

 

চিত্র: প্রফেসর শিনিয়া ইয়ামানাকা

 

২০০৭ সালের নোবেল বিজয়ী মার্টিন ইভান্স ইঁদুরের এমব্রায়োনিক স্টেমসেল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন ল্যাবরেটরিতে ইঁদুরের ভ্রুণ থেকে অবিশেষায়িত নবীন কোষ আলাদা করে নিয়ে ল্যাবোরেটরিতে সেই কোষগুলোর সফল বিভাজন ঘটিয়ে অনেকগুলো স্টেমসেল তৈরি করেছেন ইয়ামানাকা সেই ব্যাপারটাকে কাজে লাগালেন তিনি দেখতে চাইলেন নবীন কোষগুলোকে নবীন থাকতে সাহায্য করে কোন্কোন্জিন? ইয়ামানাকা বিভিন্ন রকমের জিনের সমন্বয় করে পরীক্ষা চালালেন চার ধরনের জিনের একটা সহজ সমন্বয় এনে দিল তাঁর গবেষণার সাফল্য ইয়ামানাকা ইঁদুরের শরীর থেকে একটা বিশেষায়িত প্রবীণ কোষ নিয়ে সেখানে চারটা জিন প্রবেশ করিয়ে পুরো কোষটাকেই অবিশেষায়িত নবীন কোষে রূপান্তরিত করতে সফল হলেন। তিনি এই কোষগুলোর নাম দিলেন ইনডিউজড প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল বা আই-পি-এস সেল। এই আই-পি-এস সেল থেকে পূর্ণাঙ্গ ইঁদুর তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন ইয়ামানাকা। ২০০৬ সালে ইয়ামানাকা'র গবেষণাপত্র "ইনডাকশান অব প্লুরিপুটেন্ট স্টেম সেলস ফ্রম মাউস এমব্রায়োনিক এন্ড এডাল্ট ফাইব্রোব্লাস্ট কালচারস বাই ডিফাইন্ড ফ্যাক্টরস" প্রকাশিত হয় 'সেল' জার্নালে

 

চিত্র: ইঁদুরের স্টেমসেল থেকে পূর্ণাঙ্গ ইঁদুরের জন্ম

 

প্রবীণ কোষকে নবীন কোষে পরিণত করার পদ্ধতি যখন জানা হয়ে গেল তখন কোষের অমরত্ব প্রাপ্তির রহস্য জানা হয়ে গেল। যে কোন পরিণত কোষকে অপরিণত কোষে রূপান্তর করা সম্ভব। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা আশা করছেন অনেক জটিল রোগের সমাধান পাওয়া যাবে এখন। পার্কিনসন্স, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। আই-পি-এস কোষ কাজে লাগিয়ে শরীরের সব প্রত্যঙ্গের কোষ তৈরি করা সম্ভব। যেমন একজন রোগীর ত্বক থেকে একটা কোষ নিয়ে তাকে আই-পি-এস কোষে রূপান্তর করে আবার বাড়তে দিলে দেখা যাবে কীভাবে রোগের সংক্রমণ ঘটে। ফলে রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হবে। জন গর্ডন ও অধ্যাপক শিনিয়া ইয়ামানাকা'র এ আবিষ্কার লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রাণিদেহের ম্যাচিউর সেল বা প্রবীণ কোষকে কৃত্রিমভাবে আবার নবীন কোষে রূপান্তরিত করার পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য ২০১২ সালে চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেছেন স্যার জন গর্ডন এবং অধ্যাপক শিনিয়া ইয়ামানাকা।




৮৫ বছর বয়সেও জন গর্ডন প্রতিদিন ভোর চারটায় তাঁর গবেষণাগারে গবেষণা শুরু করেন। অন্য গবেষকরা আসার আগেই প্রতিদিন পাঁচ ঘন্টা গবেষণাকাজ হয়ে যায় তাঁর। ছবিতে স্যার গর্ডনকে দেখা যাচ্ছে তাঁর ল্যাবের ডেস্কে। ফ্রেমবন্দী যে সনদ-পত্র দেখা যাচ্ছে তা অভিনব। জীবনে এত কিছু অর্জন করেছেন - কোন সনদই তিনি ফ্রেমবন্দী করেননি। অথচ এই বিশেষ সনদটি বাঁধাই করে কাজের টেবিলে রেখে দিয়েছেন চোখের সামনে। কী আছে এতে?  নিচে সনদটির ক্লোজ-আপ দেয়া হলো।

 



১৯৪৯ সালে ইটন কলেজে পড়ার সময় জীববিজ্ঞান শিক্ষকের দেয়া 'সায়েন্স রিপোর্ট'ব্রিটেনের সবচেয়ে দামী স্কুল (বাৎসরিক টিউশন ফি তেত্রিশ হাজার পাউন্ড; বাংলাদেশি টাকায় প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকা) ইটন কলেজ থেকে পাওয়া গর্ডনের এই সায়েন্স রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে আঠারো জনের গ্রুপে তিনি আঠারোতম হয়েছেন। তাঁর পড়াশোনার হাল হতাশাজনক। পঞ্চাশ নম্বরের পরীক্ষায় তিনি দুই পেয়েছেন। তিনি শিক্ষকের কথা কানে নেন না। রিপোর্টে আরো লেখা আছে, "আমি জানি সে বিজ্ঞানী হতে চায়। কিন্তু তার বর্তমান আচরণ বিরক্তিকর। জীববিজ্ঞানের সাধারণ বিষয়ই সে বুঝতে পারে না, বিশেষজ্ঞ হবে কীভাবে? বিজ্ঞানী হবার চেষ্টা করাটা হবে পুরোপুরি সময় নষ্ট, তার জন্য তো বটেই, যাঁরা তাকে পড়াবেন তাঁদের জন্যও।" ষোল বছর বয়সের কিশোর জন গর্ডন তার শিক্ষকের কাছ থেকে এরকম একটা রিপোর্ট পেয়ে হতাশ হওয়ার বদলে কঠোর পরিশ্রম করে হয়ে উঠেছেন - নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী।

 

তথ্যসূত্র:

নোবেল পুরষ্কার ওয়েবসাইট, গর্ডন ইনস্টিটিউট, দি গার্ডিয়ান। 

____________________

বিজ্ঞানচিন্তা ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সংখ্যায় ইষৎ সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত

3 comments:

  1. বিজ্ঞানী জন গর্ডন কি এখনো বেঁচে আছেন?

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, তিনি এখনো বেঁচে আছেন।

      Delete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete

Latest Post

বিজ্ঞানী গীতাঞ্জলি রাও

  পানি-দূষণের মাত্রা নির্ধারণের দ্রুততম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ‘টেথিস’ উদ্ভাবন করে গীতাঞ্জলি রাও যখন   ২০১৭ সালে আমেরিকার শ্রেষ্ঠ তরুণ বিজ্ঞানীর শ...

Popular Posts