আজ জামাল নজরুল ইসলাম স্যারের মৃত্যুবার্ষিকী।
আমি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সের অনার্স ক্লাসে ভর্তি হই, জামাল নজরুল ইসলাম স্যার তখন গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। স্যার যে কতবড় বিজ্ঞানী ছিলেন - সে সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই ছিল না। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের দখলে থাকার কারণেই হয়তো - যে কোন মুক্ত আলোচনার উপর এক ধরনের অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। বৈজ্ঞানিক সেমিনারেও সৃষ্টিতত্ত্ব বা কসমোলজি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলি - যেমন বিগব্যাং থিওরি - বাধাহীনভাবে আলোচনা করা যেতো না। গবেষণা সেমিনার যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন জ্ঞান তৈরি এবং নতুন জ্ঞান বিস্তারের প্রধান পথ, সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈজ্ঞানিক সেমিনার প্রায় হতোই না বললে চলে। আমাদের স্যার-ম্যাডামদের কে কী বিষয়ে গবেষণা করছেন - আমরা ঠিকমতো জানতেও পারিনি কোনদিন। জামাল নজরুল ইসলাম স্যার আমাদের ক্যাম্পাসে থাকা সত্ত্বেও আমরা স্যারের সান্নিধ্যে আসার সেরকম কোন সুযোগ পাইনি। স্যারের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পর্কেও আমরা তেমন কিছুই জানতাম না। জামাল স্যার বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের লোভনীয় অধ্যাপনা এবং গবেষণা ছেড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র তিন হাজার টাকা বেতনের অধ্যাপক পদে যোগ দিয়েছিলেন বলে আমরা স্যারকে নিয়ে গর্ববোধ করি, স্যারের প্রশংসা করি। কিন্তু সেই ১৯৮৪ থেকে ২০১৩ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত স্যার বাংলাদেশে ছিলেন, একটা গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু বিশ্ব পদার্থবিজ্ঞানের মহাসড়ক থেকে স্যার সরে গিয়েছিলেন। স্যার কম্পিউটার ব্যবহার করতেন না। কিন্তু ততদিনে ইন্টারনেট হয়ে পড়েছে পৃথিবীর বৈজ্ঞানিক যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। এখন আর কে কোথায় বসে গবেষণা করছেন তা খুব বেশি ধর্তব্য নয়। এখন বিজ্ঞানের ভৌগোলিক সীমারেখা মুছে গেছে ইন্টারনেটের কল্যাণে। কিন্তু জামাল নজরুল ইসলাম স্যার - এই বৈজ্ঞানিক যোগাযোগ থেকে স্বেচ্ছানির্বাসন নিয়েছিলেন যোগাযোগের মাধ্যমকে এড়িয়ে চলতে গিয়ে। স্যারের অসীম বৈজ্ঞানিক ক্ষমতার ধরতে গেলে তেমন কিছুই আমরা কাজে লাগাতে পারিনি।
১৬ মার্চ ২০২১
No comments:
Post a Comment