Sunday 13 June 2021

পলাশ দফাদার - আমার বন্ধু

 



আমার ছোটবেলার খেলার সাথী ছিল সে। বয়সে আমার চেয়ে বছর খানেকের বড় হলেও আমাদের আচরণে সেটা কখনোই প্রকাশিত হয়নি ছোটবেলায়। পাশাপাশি বাড়ী। দিনের কিছুটা সময় তাদের উঠানেই কাটতো - খেঁজুর গাছের ডাল দিয়ে ঘোড়া ছোটানো, কিংবা টিনের তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলায়। ছুটির দিনের দুপুরে মাঝে মাঝে বাজারের  রাস্তায় নেমে স্বনির্মিত ফুটবল খেলতাম তার সাথে। সেই সময় রিক্সা ছাড়া আর কোন যানবাহন চলতো না আমাদের সেই রাস্তায়। পুরনো পত্রিকা আর ছেঁড়া পলিথিনে দড়ি পেঁচিয়ে তৈরি হতো আমাদের ফুটবল। এসব উপকরণ জোগাড়ে আশ্চর্য দক্ষতা ছিল তার। শৈশবের কত রকমের স্মৃতি তার সাথে। লেখাপড়া বেশি হয়নি তার। আমি গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছি পড়াশোনা করার জন্য। নতুন প্রতিষ্ঠানে নতুন বন্ধু হয়েছে, বেড়েছে ব্যস্ততা। কিন্তু যতবারই গ্রামে গিয়েছি - দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে তার সাথে। তারও ব্যস্ততা বেড়েছে। আমি দেশের বাইরে চলে আসার পর থেকে কয়েক বছর পর পর দেখা হলেও অন্তরঙ্গতা কমেনি একটুও। সে গ্রামের চৌকিদার হয়েছে, তারপর দফাদার। তার ঘরসংসার ছেলে-মেয়ে সব নিয়ে একজন ভরপুর প্রাণবন্ত মানুষ সে - আমাদের সুতু - সবাই যাকে পলাশ দফাদার বলে। গত জানুয়ারির ২৬ তারিখ দেখা হয়েছিল তার সাথে। কালীবাড়ি রোডে। আগামী বছর আবার দেখা হবে বলেছিলাম। কিন্তু একটুও ভাবিনি যে আর দেখা হবে না। ২১ ফেব্রুয়ারি সুতু মারা গেছে। স্মৃতিগুলো বড্ড বেশি ভারী মনে হচ্ছে।

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

No comments:

Post a Comment

Latest Post

Dorothy Crowfoot Hodgkin

  Look closely at the fingers of the person in the picture. Her fingers had not bent in this way due to age; she had been suffering from chr...

Popular Posts