Tuesday 29 June 2021

এ জে জ্যাকব্‌স এর থ্যাংকস এ থাউজ্যান্ড

 


কথায় কথায় ‘থ্যাংক ইউ’ বা ধন্যবাদ বলার সংস্কৃতি আমাদের নয়। অর্থাৎ বাঙালিদের নয়। ছোটবেলা থেকেই আমরা ভদ্রতার শিক্ষা পেয়েছি। বয়সে যারা বড় তাদের কখনো আমরা নাম ধরে ডাকি না। আত্মীয় হলে তো নয়ই, অনাত্মীয় হলেও নয়। নামের সাথে ভাই, আপা, চাচা, চাচী, খালা, খালু, আংকেল ইত্যাদি জুড়ে দিয়ে আমরা ভদ্রতা দেখাই। অবশ্য খুব বেশি বিখ্যাত হলে অন্য কথা। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমরা রবীন্দ্রনাথই বলি – রবীন্দ্রদা কিংবা রবীন্দ্রজেঠু বলি না।

যতই ভদ্রতা দেখাই, আমরা কিন্তু কথায় কথায় ধন্যবাদ বলি না। ইংরেজিতে থ্যাংক ইউ বললে যতটা মানিয়ে যায়, বাংলায় ধন্যবাদ শব্দটি এখনো কেন যেন আমাদের সহজাত হয়ে ওঠেনি। সেই কারণেই হয়তো আমরা খুব একটা ধন্যবাদ দিই না।

কিন্তু ইংরেজিভাষী সংস্কৃতিতে ‘থ্যাংক ইউ’ শব্দযুগল সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দ। কথায় কথায় সেখানে থ্যাংক ইউ বলার চল আছে। কিন্তু এই থ্যাংকস দেয়াটা কতটা আন্তরিক, আর কতটাই বা অভ্যাসের বশে?

লেখক এ জে জ্যাকবস – একজন ব্যতিক্রমী লেখক। তিনি এক দু’বছরে একটা বই লেখেন। কিন্তু তাঁর বইগুলি পড়ে যেমন হাহা করে হাসতে হয়, তেমনি অত্যন্ত গভীরভাবে চিন্তাও করতে হয়। তাঁর একেকটা বই একেকটা প্রজেক্ট। একসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার সবগুলি খন্ড পড়ে তিনি একটি বই লিখেছেন সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, বাইবেল সম্পর্কে বই লেখার জন্য তিনি এক বছর পাদ্রী হয়ে গিয়েছিলেন, এভাবে তার সবগুলি বই তিনি লিখেছেন বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ নিজে করার পর। তাঁর সাম্প্রতিক বই ‘থ্যাংকস অ্যা থাউজ্যান্ড’ তাঁর ধন্যবাদ দেয়ার প্রজেক্ট।

সুখ থেকে কৃতজ্ঞতা আসে না, বরং কৃতজ্ঞতা থেকেই সুখলাভ করা যায়। জ্যাকবস ধর্মবিশ্বাসী নন, রবং সন্দেহবাদী মানুষ। ধার্মিক মানুষ সবকিছুর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেয় প্রার্থনার মাধ্যমে। লেখকের সেই সুযোগ নেই। ধার্মিক মানুষ প্রায় সময়েই মূল কাজ যে করে – তাকে উপেক্ষা করে, বিশেষ করে কাজ যদি আশানুরূপ হয় – ধন্যবাদ দেয় অদৃশ্য সৃষ্টিকর্তাকে। কিন্তু কাজে যদি আশানুরূপ ফল না পাওয়া যায় – তখন তার জন্য দায়ি করে মানুষকে।

আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য জ্যাকব্‌স ঠিক করলেন – প্রতিদিন সকালে যে দোকান থেকে তিনি কফি নেন, সেই কফি যে সার্ভ করে থাকে ধন্যবাদ দেবেন। এবং শুধু তাকে নয়, এই এক কাপ কফি তার হাতে এসে পৌঁছাবার পেছনে যারা যারা কাজ করে যাচ্ছেন তাদের প্রত্যেককেই ধন্যবাদ দেবেন।

ধন্যবাদ পর্ব শুরু হয় কফিশপ থেকে। কফি বানায় যে মেয়েটি তাকে ধন্যবাদ দেয়ার পর কফি সাপ্লাইয়ার। কফি যারা কেনেন তারা কফির স্বাদ নেন। কফির স্বাদ নেয়ার জন্য বিশেষ মানুষ থাকে। জ্যাকবস তাঁদের সাথে কথা বলেন। সেই কফি রাখার গুদাম, পদ্ধতি – সব জায়গায় নির্দিষ্ট মানুষ প্রশিক্ষিত মানুষ আছে। তাদের সাথেও কথা বলেন জ্যাকবস। ধন্যবাদ দেন।



কফির কাপ আমরা একবার ব্যবহার করেই ফেলে দিই। চিন্তাও করি না এর পেছনে কী পরিমাণ প্রকৌশল দক্ষতা লাগে। কত বড় ব্যবসা এই কফির কাপ সাপ্লাইয়ের ব্যবসা। কফির কাপ – বিশেষ ধরনের কাপ, যা তাপ সংরক্ষণ করে। বাইরে বেশি গরম হয় না, কিন্তু ভেতরের কফি গরম রাখে। আবার তার ঢাকনা এমনভাবে তৈরি করতে হয় যেন খাওয়ার সময় কফি ছলকে না পড়ে। এদের টিমের সাথে দেখা করে তাদের ধন্যবাদ দেন জ্যাকবস।

কফির বীজ আসে কলম্বিয়া থেকে। কফি চাষীদের সাথে দেখা করার জন্য্য কলম্বিয়ায় যান জ্যাকবস। তাদেরকেও সরাসরি ধন্যবাদ দিয়ে আসেন।

থ্যাংকস এ থাউজ্যান্ড সত্যি সত্যি হাজারেরও বেশি মানুষকে ধন্যবাদ দেয়ার বই। বইয়ের শেষে হাজারেরও বেশি মানুষের নামও দেয়া আছে যাদেরকে লেখক সরাসরি ধন্যবাদ দিয়েছেন। তাঁরা সবাই তাঁর সকালের এক কাপ কফির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

বইটি প্রকাশিত হয়েছে টেড-এর পক্ষ থেকে সাইমন অ্যান্ড সুস্টার। টেড-এর বইগুলি অত্যন্ত চমৎকার হয়ে থাকে সবদিক থেকেই। এটিও ব্যতিক্রম নয়।

লেখক এই বইটি নিয়ে একটি টেড টক-ও দিয়েছিলেন। সেটা ইউটিউব থেকে এখানে দেখা যেতে পারে। 



No comments:

Post a Comment

Latest Post

নিউক্লিয়ার শক্তির আবিষ্কার ও ম্যানহ্যাটন প্রকল্প

  “পারমাণবিক বোমার ভয়ানক বিধ্বংসী ক্ষমতা জানা সত্ত্বেও আপনি কেন বোমা তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন?” ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের ‘কাইজো’ ম্য...

Popular Posts