Sunday, 13 June 2021

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করোনা তত্ত্ব

 


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিছুদিন আগেও ভাবতে পারেননি যে করোনা ভাইরাস আমেরিকার অবস্থা এরকম লেজে-গোবরে করে ছাড়বে। তাদের সক্ষমতার বড়াইয়ে বাস্তবতার চেয়ে বাড়াবাড়িটা কিছুটা বেশি ছিল তা তারা এখন স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক শক্তিশালী দেশও সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে অনেক বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। আবার বিপরীত চিত্রও আছে। অনেক দেশেই করোনা-জনিত সংক্রমণের হার কম এবং মৃত্যু সংখ্যাও কম। করোনা আক্রান্ত হবার পরেও সুস্থ হয়ে গেছেন এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি তাদের দেশে। উদাহরণ অস্ট্রেলিয়া। এই দেশে এপর্যন্ত প্রায় পাঁচ লক্ষ জনকে টেস্ট করে ৬,৬৭৫ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। চিকিৎসা দেয়ার পর তাদের মধ্যে ৫,১৩৬ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন। মৃত্যু হয়েছে ৭৮ জনের। এই তুলনায় আমেরিকা কিংবা ব্রিটেনের সংখ্যা দেখলে বোঝা যাবে অতুল সম্পদ থাকার কারণেও সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় কিংবা ভুল করায় তাদের করোনা নিয়ন্ত্রণ বিলম্বিত হচ্ছে এবং অনেক বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানি ঘটছে। 

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গতকাল করোনা রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত দুটো মারাত্মক ভুল পরামর্শ দিয়েছেন যা শুধু ভুল-ই নয়, রীতিমত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু ক্ষমতার বলে তাঁর অপরাধকে অনেক সময় হেসে উড়িয়ে দেয়া হয়। ট্রাম্প বলেছেন আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি প্রয়োগ করে মানুষের শরীর করোনা-মুক্ত করার জন্য। আলট্রা-ভায়োলেট রে বা অতিবেগুনি রশ্মির কম্পাঙ্ক অনেক বেশি এবং এটা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। শরীরের চামড়ার উপর এর অত্যধিক প্রয়োগে ক্যান্সার হতে পারে। এবং এই রশ্মি শরীর প্রবেশ করলে তা আমাদের শরীর শোষণ করে নেয় এবং তা থেকে শরীরের অনেক ডিএনএ ধ্বংস হয়ে যায়। করোনা ভাইরাস আমাদের শরীরে একবার ঢুকে গেলে আলট্রা-ভায়োলেট রে তাকে কিছুই করতে পারবে না, বরং আমাদের ত্বকের এবং অন্যান্য কোষের মারাত্মক ক্ষতি করবে। 
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরো বলেছেন যেন ইঞ্জেকশান বা অন্য কোন উপায়ে শরীরের ভেতর জীবাণুনাশক প্রয়োগ করে করোনা ভাইরাস ধ্বংস করা যায় কি না পরীক্ষা করে দেখতে। শরীরের ভেতর কোন জীবাণুনাশক প্রবেশ করালে করোনা-ভাইরাস মরবে না, কিন্তু মানুষ মরে যাবে। 

ট্রাম্প যা বলেছেন সেগুলো তিনি নিজে বিশ্বাস করেন কি না তা দেখার একমাত্র উপায় হলো তাঁর শরীরে এই দুটো পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখা। কিন্তু তা তো হবে না। কারণ নেতারা সবসময় সুরক্ষিত থাকেন। তারা যা খুশি বলতে পারেন, যা খুশি করতে পারেন। 

করোনা-ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে না দেয়াই হলো করোনা থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় উপায়। তাই আমাদের উচিত নিজেদের আলাদা রাখা, পরিচ্ছন্ন থাকা, ঘরে থাকা।  আর আমাদেরকে সুস্থ রাখার জন্য, আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য  যাঁদের ঘরে থাকার উপায় নেই, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে  যাঁরা কাজ করছেন হাসপাতালে, ক্লিনিকে, রাস্তায়, দোকানে – যেখানে প্রয়োজন সেখানে, আমাদের উচিত তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।

২৫ এপ্রিল ২০২০


No comments:

Post a Comment

Latest Post

Terry Wogan's "The Little Book of Common Sense"

  What we call common sense in English is not very common at all. If common sense could be learned by reading books, then those who have re...

Popular Posts