পৃথিবীতে বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫৯ কোটি। তাঁদের মধ্যে পনেরো কোটির বেশি মানুষকে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয়। এই ইনসুলিন নেয়া মানুষগুলির মধ্যে কতজন এই ছবির মানুষটিকে চিনেন আমি জানি না। এই মানুষটির নাম ফ্রেডেরিক স্যাঙ্গার। ইনসুলিনে অ্যামিনো অ্যাসিডের নিখুঁত সিকোয়েন্সিং আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। তারই ফলশ্রুতিতে গবেষণাগারে ইনসুলিন তৈরি করা সম্ভব হয়েছে যা বর্তমানে রোগীরা ব্যবহার করছে। তার আগে ইনসুলিন সংগ্রহ করতে হতো গরু ও শুকরের অগ্নাশয় থেকে।
এই মানুষটিকে রসায়নের মহানায়ক বললেও খুব কম বলা হয়। একটি নোবেল পুরষ্কার পেলেই কেউ কেউ যেখানে বিরাট রাজা হয়ে যান, সেখানে এই মানুষটি দুইবার নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন রসায়নবিজ্ঞানে। ১৯৫৮ সালে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ইনসুলিনের গঠন আবিষ্কার করার জন্য। এরপর ১৯৮০ সালে আবার নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ডিএনএ সিকোয়েন্সিং-এর জন্য। তাঁরই আবিষ্কৃত পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে কোভিড-১৯ ভাইরাসের শনাক্তকরণ পদ্ধতি – যেই ডাটা থেকে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে ভাইরাসের টিকা।
রসায়নের এই মহানায়কের বিজ্ঞান-কাহিনি বিশাল। কিন্তু মানুষ হিসেবে তিনি এতটাই মাটির মানুষ ছিলেন যে তিনি ব্রিটিশ সরকারের নাইটহুড প্রত্যাখ্যান করেছিলেন শুধুমাত্র “স্যার” ডাক শুনতে হবে বলে। অথচ কোন কোন দেশে “স্যার” বলে সম্বোধন না করলে অনেকে রেগে যান বলে শুনেছি। উচ্চপদস্থ নারী-পুরুষ সবাইকে “স্যার” ডাকার বাধ্যতামূলক আইনও নাকি তৈরি করা হয়েছিল কোন একটি দেশে।
নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফ্রেডেরিক স্যাঙ্গার অকপটে বলেছেন, “আমি পড়াশোনায় কখনো ব্রিলিয়্যান্ট ছিলাম না। ছাত্রজীবনে কখনো কোন স্কলারশিপ পাইনি। আমার বাবার টাকা না থাকলে আমি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগই হয়তো পেতাম না।“
এই মানুষটি ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ করার সাথে সাথে গবেষণার আকাশে
উজ্জ্বল নক্ষত্র থাকা অবস্থাতেই অবসর গ্রহণ করে বাকিটা জীবন (তিনি ৯৫ বছর বেঁচেছিলেন)
বাড়ির নিভৃতে বাগান করেই কাটিয়ে দিয়েছেন। অবসর গ্রহণ সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন সেটাও
অনন্য। তিনি বলেছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন আমার কর্মক্ষমতা কমে যাবে, তখন ভুল
করতে শুরু করবো, সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পরিমাণ
বাড়তে শুরু করবে। তখন আমার কাজের ব্যর্থতার সমালোচনা করার যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও
আমার এতদিনের খ্যাতির কারণে হয়তো অনেকে সংকোচ বা ভদ্রতাবশত আমার সমালোচনা করবে না।
আমি সেটা চাই না। আমি শুধু শুধু চেয়ার দখল করে থাকার চেয়ে অনেক ভালো যদি আমি আমার চেয়ারটি
যথাসময়ে খালি করে দিই – যেখানে নতুন কেউ এসে তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারবে।
১৩ আগস্ট ফ্রেডেরিক
স্যাঙ্গারের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন মহানায়ক।
No comments:
Post a Comment