Thursday, 12 December 2019

চাঁদের নাম লুনা - ৬


চাঁদের তিথি

চাঁদের একদিন (অর্থাৎ চাঁদ নিজের অক্ষের ওপর একবার ঘুরতে যে সময় নেয়) পৃথিবীর প্রায় এক মাসের সমান। পৃথিবী থেকে যখন চাঁদ দেখি - চাঁদের কিছু অংশ প্রতিদিন সরে যায় আমাদের চোখের সামনে থেকে। চাঁদের নিজের আলো নেই। সূর্যের আলো চাঁদের পিঠে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়।             পৃথিবীর যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা চাঁদ দেখছি, সেখান থেকে চাঁদের যে আলোকিত অংশটি দেখতে পাই সেটাকেই সেই সময়ের চাঁদের একটা নির্দিষ্ট তিথি বলছি। চাঁদ দেখা তাই চাঁদ, পৃথিবী ও সুর্যের পারস্পরিক অবস্থানের উপর নির্ভরশীল।
            চাঁদ প্রতিদিন ৫০ মিনিট দেরিতে উঠে। সুর্যের মতোই চাঁদ পূর্ব দিকে উঠে আর পশ্চিমে অস্ত যায়। আমরা চাঁদকে আকাশের একদিক থেকে অন্যদিকে চলে যেতে দেখি। আসলে চাঁদ যত বেগে সরে যায় পৃথিবী ঘুরছে তারচেয়ে অনেক বেশি বেগে। তাই মনে হয় চাঁদ সরে যাচ্ছে পূর্ব থেকে পশ্চিম আকাশে।
            পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ আর দক্ষিণ গোলার্ধের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে চাঁদ দেখতে পায়। দক্ষিণ গোলার্ধে চাঁদকে উত্তর গোলার্ধের তুলনায় উল্টো দেখা দেয়। কারণ উত্তর গোলার্ধের মানুষ যেদিকে চোখ তুলে চাঁদ দেখে, দক্ষিণ গোলার্ধে দেখে তার অন্যদিক থেকে। তাই দক্ষিণ গোলার্ধে চাঁদের তিথিগুলোর পরিবর্তনে চাঁদের আকারের পরিবর্তন যেভাবে হয়, উত্তর গোলার্ধে সেই পরিবর্তন হয় বিপরীত দিক থেকে।
            চাঁদের আকারের পরিবর্তন বলতে আবার মনে করো না যে চাঁদ আসলেই ছোট বা বড় হয়ে যায়। চাঁদ ঠিকই থাকে। তার ওপর আলো পড়ে যতটকু দেখা যায় সেটারই পরিবর্তন হয়।


                         
পুরো চাঁদ দেখা গেলে পূর্ণিমা, আর একটুও দেখা না গেলে হয় অমাবস্যা। দিনের বেলায়ও চাঁদ থাকে তবে সূর্যের আলোর কারণে তা দেখা যায় না।



চাঁদের হ্রাসবৃদ্ধির ব্যাপারটা খুবই প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলতে থাকে। চাঁদ যখন পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চলে আসে তখন চাঁদের যে দিকটা পৃথিবীর দিকে থাকে সেটাতে কোন আলো পড়ে না। ফলে সেদিকে পুরোটাই অন্ধকার। তখন চাঁদের অমাবস্যা। পরের দিন চাঁদ কিছুটা ঘুরে যায় তার কক্ষপথে। পৃথিবী থেকে আমরা তার কাস্তের মত চিকন একটা অংশ দেখতে পাই। শুরু হয় শুক্লপক্ষ। চাঁদ যখন অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমার দিকে যায় তখন শুক্লপক্ষ, আবার যখন পূর্ণিমা থেকে অমাবস্যার দিকে যায় তখন হয় কৃষ্ণপক্ষ। সাধারণত ১৫ দিনে এক পক্ষ ধরা হয়। অমাবস্যার পরেরদিন শুক্লপক্ষের প্রতিপদ বা প্রথমা, তারপর দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, এভাবে ত্রয়োদশী, চতুর্দশীর পরদিন পূর্ণিমা হয়। তারপরদিন হয় কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ (প্রথমা), দ্বিতীয়া, তৃতীয়া। এভাবে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীর পর হয় অমাবস্যা।
            শুক্লপক্ষের সপ্তমী-অষ্টমী তিথিতে চাঁদের অর্ধেক আলোকিত হয়। অর্ধচন্দ্র দেখা দেয় তখন। আমরা কিন্তু বাংলায় অর্ধচন্দ্র বলতে গলাধাক্কা বুঝি। (সেই অর্থে পূর্ণচন্দ্র দেয়া মানে আমরা গলাটিপে ধরা বুঝি। কিন্তু সেটা পূর্ণচন্দ্রের অপপ্রয়োগ)। শুক্লপক্ষের চতুর্দশীর পর পূর্ণিমা হয়। তখন সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে পৃথিবী থাকে। চাঁদের আলোকিত পিঠের পুরোটাই পৃথিবী থেকে দেখা যায়।
            তারপর কৃষ্ণপক্ষ শুরু হয়। চাঁদের কিছুটা অংশ আস্তে আস্তে ঢেকে যেতে থাকে। এভাবে চাঁদ যখন আবার পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চলে আসে - তখন অমাবস্যা হয়। এভাবেই চলতে থাকে।
            উত্তর গোলার্ধে অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত চাঁদের তিথির পরিবর্তন হয় চাঁদের ডানদিক থেকে বামদিকে। কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে সেই পরিবর্তন হয় বামদিক থেক ডানদিকে। পরের পৃষ্ঠার ছবিতে দেখো সেই পরিবর্তন।
            উত্তর গোলার্ধে অমাবস্যার পর চাঁদের ডানদিকে চিকন কাস্তের মত চাঁদ দেখা যায় - যেন প্রথম বন্ধনীর শেষ [)]। আমেরিকা, ইউরোপ, বাংলাদেশ ভারত থেকে এরকমই দেখা যাবে। কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে অমাবস্যার পর কাস্তের মত বাঁকা দ্বিতীয়া বা তৃতীয়ার চাঁদ দেখা যাবে উল্টো - যেন প্রথম বন্ধনীর শুরু [(]। দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এরকম চাঁদ দেখা যাবে।
            চাঁদ প্রতিদিন পঞ্চাশ মিনিট দেরিতে উঠে। চাঁদের এই তিথিকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ঘড়ি বলে মনে করা হয়। চাঁদের উদয় অস্তের সময় হিসেব করে বলা যায় রাত বা দিনের কতটা বাজে। শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়ার চাঁদ ওঠে ভোরবেলা, আর অস্ত যায় সন্ধ্যাবেলা, সূর্যাস্তের একটু পর। দিনের বেলায় সূর্যের আলোর কারণে আমরা সেই চাঁদ দেখতে পাই না। কেবল সন্ধ্যায় খুব সামান্য সময়ের জন্য অস্তগামী চাঁদকে দেখতে পাই। শুক্লপক্ষের অষ্টমীর চাঁদ ওঠে দুপুরে আর অস্ত যায় মধ্যরাত্রিতে। পূর্ণিমার চাঁদ ওঠে সন্ধ্যাবেলা আর অস্ত যায় সূর্যোদয়ের সময়। কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমীর চাঁদ ওঠে মধ্যরাত্রিতে, আর ডুবে মধ্যদুপুরে।





3 comments:

  1. Replies
    1. প্রিয় পাঠক, আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

      Delete
  2. অনেক অনেক ভালো লাগলো। এখনকার মানুষরা চাঁদের মর্মই বোঝে না।

    ReplyDelete

Latest Post

Terry Wogan's "The Little Book of Common Sense"

  What we call common sense in English is not very common at all. If common sense could be learned by reading books, then those who have re...

Popular Posts