থাকে কত দূরে, কত বেগে ঘুরে
পৃথিবী
থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। এই দূরত্ব কিন্তু খুব বেশি
নয়। আমাদের শরীরে যতগুলো রক্তনালি আছে তাদের সবগুলোর দৈর্ঘ্য যোগ করলে প্রায় এক
লক্ষ কিলোমিটার হবে। 
            চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে একটা
উপবৃত্তাকার পথে ঘুরে। তার মানে ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ একবার পৃথিবীর কাছে আসে আবার
দূরে চলে যায়। এই উপবৃত্তাকার পথের দূরত্ব পৃথিবী থেকে একটি বিন্দুতে সবচেয়ে কাছে
হয়। সেই বিন্দুকে ইংরেজিতে বলে পেরিজি (perigee) আর বাংলায় বলে অনুভূ। পৃথিবী থেকে চাঁদের অনুভূবিন্দুর দূরত্ব ৩ লক্ষ ৩৬
হাজার ১০০ কিলোমিটার। এই দূরত্বে চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে। তখন চাঁদকে অনেক
বড় দেখা যায়। 
            উপবৃত্তকার পথের একটি বিন্দুতে পৃথিবী
ও চাঁদের দূরত্ব হয় সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ সেই বিন্দুতে চাঁদ পৃথিবী থেকে সবচেয়ে
দূরে থাকে। সেই বিন্দুকে ইংরেজিতে বলে অ্যাপোজি (apogee), আর বাংলায় অপভূ।  পৃথিবী থেকে
চাঁদের অপভূবিন্দুর দূরত্ব ৪ লক্ষ ৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার। 
            চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে গড়ে সেকেন্ডে ১.০২ কিলোমিটার বেগে ঘুরছে, অর্থাৎ ঘন্টায় গড়বেগ ৩৬৭২ কিলোমিটার।
তুলনামূলকভাবে পৃথিবীর চাইতে অনেক আস্তে ঘুরছে আমাদের চাঁদ। পৃথিবী ঘন্টায় এক লক্ষ
সাত হাজার কিলোমিটার বেগে ঘুরছে সূর্যের চারপাশে। কিন্তু তারপরও চাঁদের গড় গতিবেগ
একটি দ্রুতগামী বিমানের গতিবেগের তিন গুণেরও বেশি। পৃথিবীর চারপাশে ঘুরার সময়
মহাকর্ষ বলের কারণে চাঁদের গতি কখনো বাড়ে, কখনো কমে। কক্ষপথে চাঁদের সর্বোচ্চ
গতিবেগ সেকেন্ডে ১.০৮ কিলোমিটার বা ঘন্টায় ৩৮৮৮
কিলোমিটার, এবং সর্বনিম্ন গতিবেগ সেকেন্ডে ০.৯৭ কিলোমিটার
বা ঘন্টায় ৩৪৯২ কিলোমিটার। 
            চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে কক্ষপথে ঘুরতে
ঘুরতে নিজের অক্ষের ওপরও ঘুরছে। কিন্তু এই ঘূর্ণনের বেগ এমন যে পৃথিবীর চারপাশে
একবার ঘুরে আসতে চাঁদের যে সময় লাগে, নিজের অক্ষের চারপাশে ঘুরতেও ঠিক একই সময়
লাগে। ফলে পৃথিবী থেকে আমরা যখন চাঁদ দেখি, সব সময় চাঁদের একই দিক দেখতে পাই।
চাঁদের অন্য পিঠে কী আছে তা আমরা পৃথিবী থেকে কখনোই দেখতে পাই না। চাঁদের
অন্যপিঠের ছবি প্রথমবারের মতো তুলেছিল ১৯৫৯ সালে সোভিয়েত চন্দ্রযান লুনা-৩। চাঁদে
অভিযান সম্পর্কে আলোচনা করার সময় বিস্তারিত জানবো এ ব্যাপারে।
            পৃথিবীর চারপাশে একবার ঘুরে আসতে
চাঁদের মোট সময় লাগে ২৭ দিন ৮ ঘন্টা। এই 'দিন' হলো পৃথিবীর দিন। পৃথিবীতে ২৪
ঘন্টায় একদিন হয়। কারণ ২৪ ঘন্টায় পৃথিবী নিজের অক্ষের ওপর একবার ঘুরে আসে। সে
হিসেবে চাঁদের একদিন অনেক দীর্ঘ। চাঁদ নিজের অক্ষের ওপর একবার ঘুরে আসতে সময় নেয়
২৭ দিন ৮ ঘন্টা। চাঁদের একদিন পৃথিবীর প্রায় এক মাসের সমান। চান্দ্রমাস বলতে আমরা
যেটা বুঝি সেটা আসলে চাঁদের একদিন। 
            চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে তুলনামূলকভাবে
পৃথিবীর তুলনায় আস্তে ঘুরে। সেকারণে চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্যের পারস্পরিক অবস্থানের
কারণে চাঁদের ওপর সুর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে কখনো পুরো চাঁদকেই দেখা যায়, আবার
কখনো কখনো একেবারেই দেখা যায় না। চাঁদের এই ক্রমপরিবর্তনকে আমরা চাঁদের তিথি বলি।
চাঁদ এক পূর্ণিমা থেকে শুরু করে অমাবস্যায় পৌঁছে আবার পূর্ণিমায় ফিরে আসতে মোট সময়
লাগে ২৯ দিন ১২ ঘন্টা ৪৪ মিনিট। 
পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব  
 | 
  
৩,৮৪,৪০০ কিলোমিটার 
 | 
 
পৃথিবী থেকে চাঁদের সর্বোচ্চ দূরত্ব 
 | 
  
৪,০৫,৭০০ কিলোমিটার 
 | 
 
পৃথিবী থেকে চাঁদের সর্বনিম্ন দূরত্ব 
 | 
  
৩,৩৬,১০০ কিলোমিটার 
 | 
 
পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের গড় গতি 
 | 
  
৩৬৭২ কিলোমিটার/ঘন্টা 
 | 
 
পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের সর্বোচ্চ গতি 
 | 
  
৩৮৮৮ কিলোমিটার/ঘন্টা 
 | 
 
পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের সর্বনিম্ন গতি  
 | 
  
৩৪৯২ কিলোমিটার/ঘন্টা 
 | 
 
পৃথিবীর চারপাশে একবার ঘুরে আসতে  
চাঁদের সময় লাগে  
 | 
  
২৮ দিন ৮ ঘন্টা 
 | 
 
এক পূর্ণিমা থেকে অন্য পূর্ণিমার সময় 
 | 
  
২৯ দিন ১২ ঘন্টা ৪৪ মিনিট 
 | 
 
পৃথিবীর কক্ষপথের সাথে চাঁদের নতি 
 | 
  
৫.১৪ ডিগ্রি 
 | 
 
পৃথিবীর অক্ষের সাথে চাঁদের অক্ষের নতি 
 | 
  
৬.৬৮ ডিগ্রি 
 | 
 
চাঁদের
ভর চাঁদের সব জায়গায় সমানভাবে বিন্যস্ত নয়। ফলে তার ভারকেন্দ্র ঠিক তার কেন্দ্রে
নয়। পৃথিবীর সাথে আকর্ষণের কারণে চাঁদ পৃথিবীর কক্ষপথের সাথে ৫.১৪ ডিগ্রি কোণ করে থাকে এবং পৃথিবীর অক্ষের সাথে চাঁদের অক্ষ সমান্তরাল
নয়। সেখানেও ৬.৬৮ ডিগ্রি কোণের পার্থক্য থাকে। এই কৌণিক
পার্থক্যের কারণে আকাশে চাঁদের কক্ষপথ বারবার বদলে যায়। চাঁদ বারবার ঘুরে ঘুরে ঠিক
একই বিন্দুতে আসে না। তাই যখন চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় - প্রত্যেকটি গ্রহণ
হুবহু আগেরটার মতো হয় না। বা প্রত্যেকটা গ্রহণ পৃথিবীর প্রত্যেক জায়গা থেকে
সমানভাবে দেখা যায় না। 


No comments:
Post a Comment