Sunday 15 December 2019

চাঁদের নাম লুনা - ১৫


চাঁদের বুকে মানুষ

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চাঁদের বুকে প্রথম পা রাখে পৃথিবীর মানুষ। সেদিন থেকে বদলে যায় চাঁদের ইতিহাস। যে চাঁদ নিয়ে মানুষ এতদিন রচনা করেছে কত রূপকথার গল্প - তার সবকিছু বদলে যায়। নীল আর্মস্ট্রং চাঁদের বুকে প্রথম মানুষ। চাঁদে পা রাখার ঠিক আগের মুহূর্তে লুনার মডিউলের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, "I'm going to step off the LM now. That's one small step for a man, one giant leap for mankind." একজন মানুষের একটি ছোট্ট পদক্ষেপ, কিন্তু সমগ্র মানবজাতির একটি বিশাল উল্লম্ফন।
            পৃথিবী থেকে চাঁদে মানবজাতির এই বিশাল লাফ দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন গবেষণা করতে হয়েছে, প্রচুর মেধা, শ্রম, অর্থ এবং জীবনের বিনিময়ে এই অর্জন। অ্যাপোলো -১ মিশনের তিনজন নভোচারী প্রাণ দিয়েছেন চাঁদে মানুষের অভিযান সফল করার জন্য। সোভিয়েত ইউনিয়নেও প্রাণ দিয়েছেন একাধিক নভোচারী।
            ধরতে গেলে মানুষের চাঁদে যাওয়ার ব্যাপারটা মূলত আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে প্রতিযোগিতার ফসল। আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একে অপরের ওপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য অন্যান্য অনেককিছুর পাশাপাশি মহাকাশ গবেষণায়ও প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল ১৯৪৭ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে। ১৯৪৬ সালে আমেরিকা চাঁদে বেতারতরঙ্গ পাঠায়। সেই তরঙ্গ চাঁদের গায়ে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। তারপর ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক (Sputnik) পাঠায় পৃথিবীর চারপাশে ঘোরার জন্য।
            পরের বছর আমেরিকা উপগ্রহ এক্সপ্লোরার-১ (Explorer-1) উৎক্ষেপণ করে। আমেরিকার চন্দ্রযান পাইওনিয়ার-১ (Pioneer-1) উৎক্ষেপণে ব্যর্থ হয়। কিন্তু তার পরের বছর সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের লুনা প্রোগ্রামের চন্দ্রযান লুনা-১ চাঁদের পাশ দিয়ে উড়ে যায়, লুনা-২ চাঁদে আছড়ে পড়ে, এবং লুনা-৩ চাঁদের অন্যপিঠের ছবি তুলে আনে।  
            তাতে আমেরিকার জেদ চেপে যায়। ১৯৬১ সালের ২৫ মে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ঘোষণা করেন যে আমেরিকা পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠাবে।
            তার আট বছরের মাথায় আমেরিকা সত্যিই চাঁদে মানুষ পাঠাতে সক্ষম হয়। কিন্তু এই আট বছরে এ নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা গবেষণা হয়েছে। গড়ে উঠেছে মহাকাশ ইঞ্জিনিয়ারিং। আমেরিকার খরচ হয়েছে সেই সময়ের প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার। যা বর্তমান হিসেবে প্রায় পনেরো হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় বারো লক্ষ কোটি টাকা।
            চাঁদের অভিযানকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রচেষ্টা এবং আমেরিকার প্রচেষ্টা।




No comments:

Post a Comment

Latest Post

নিউক্লিয়ার শক্তির আবিষ্কার ও ম্যানহ্যাটন প্রকল্প

  “পারমাণবিক বোমার ভয়ানক বিধ্বংসী ক্ষমতা জানা সত্ত্বেও আপনি কেন বোমা তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন?” ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের ‘কাইজো’ ম্য...

Popular Posts