Tuesday, 18 February 2025

রিফাৎ আরার ছোটগল্প - ফাঁদ


 ___________________________

রিফাৎ আরা রচনাসমগ্র

গল্পগ্রন্থ - দহনের কাল।। প্রকাশক - মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৭

গল্প - ফাঁদ
_______________________________

ফাঁদ


মোবাইল ফোনটা বাজতেই অফিসের ব্যস্ততার মাঝেও হাতে তুলে নিল রিমি অপরিচিত নাম্বার একবার ভাবলে ধরবে না কিন্তু অনবরত বেজে চলাতে সবুজ বোতামে চাপ দিল কানের কাছে নিতেই ওপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠ ভেসে এল- হ্যালো, রিমি

          -জী, কিন্তু আপনি কে? কেন ফোন করেছেন?

          -আমি একজন মানুষ প্লিজ লাইনটা কাটবেন না আপনি আমাকে না চিনলেও আমি আপনাকে চিনি

          -এটা হতেই পারে তবে আমি এখন ব্যস্ত আপনার সাথে আলাপ করার মত সময় আমার নেই- বলেই ঝট করে লাইন কেটে দিল রিমি যত্তোসব ফালতু মেয়েদের নাম্বার যোগাড় করে ইরিটেট করা রিমি কাজে মন দেয়

          অফিস ছুটির সময় ঘনিয়ে আসতে আবার রিংটোন বেজে উঠল রিমি স্ক্রিনে চোখ রাখল, আবার সেই নম্বর!

          -বিরক্তিকর। শব্দটা উচ্চারণ করতে করতে রিসিভ না করেই কেটে দিল।

          অফিস থেকে বেরিয়ে বাস ধরার জন্য হাঁটছে এমন সময় পিছন থেকে ডাক শুনতে পেল, রিমি। নিজের অজান্তেই চলা থেমে স্থির হল। পিছন ফিরে দেখল অপরিচিত এক তরুণ গাড়িতে হেলান দিয়ে হাসি হাসি মুখে  তার দিকে তাকিয়ে আছে।

          দু পা এগিয়ে এসে প্রশ্ন করল রিমি, কে আপনি? আমার নাম জানলেন কীভাবে?

          -বাহ। আজকাল নাম জানা কোন ব্যাপার। তাও আবার আপনার মত সুন্দরী, শিক্ষিতা এবং স্মার্ট তরুণীর।

          -দ্যাখেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আপনার এসব ফালতু প্রসংশাবাক্য শোনার সময় আমার নেই। শিক্ষিত মানুষ হিসেবে আপনার রুচিবোধ আরও ভাল হওয়া উচিত। বলেই হন হন করে হাঁটা দিল সে। যা দিনকাল কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে পিছনে লাগে ঠিক নেই। দেশে অপরাধ যতো বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মেয়েদের ওপর নির্যাতন। বিশেষ করে নওরীনের কথা মনে হলে আজও কেমন পাগল পাগল লাগে। স্কুল থেকে কলেজ জীবনের প্রিয় বন্ধু নওরীন কোথায় যে হারিয়ে গেল আজ পর্যন্ত কোন হদিস পাওয়া গেল না। ঘটনাটা ভাবতেই বুকটা কেমন হা হা করে ওঠে।

          এইচ এস সির পর নওরিন ভর্তি হয়েছিল মেডিক্যালে আর রিমি বিশ্ববিদ্যালয়ে। শত ব্যস্ততার মাঝেও দিনের শেষে অন্তত একবার কথা হত। ফোর্থ ইয়ারে ওঠার পর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। বড়বোনের দেবর। নওরীনেরও পছন্দ। পরিবারেরও। আগের রাতে রিমিকে ফোন করেছিল, কাল বিয়ের বাজার করতে যাব। শাফকাতও যাবে। তুই যাবি?

          রিমি বলেছিল, আমার একটা অ্যাসাইনমেন্ট আছে। পারব না রে, তোরা যা। পরে এসে একদিন না হয় সব দেখে আসব।

          সেই নওরীন যার বিকেলে বিয়ের কেনাকাটা করার কথা, দুপুরের পর থেকে লাপাত্তা হয়ে গেল। অথচ কলেজেও সেদিন তাকে সবাই ক্লাশে দেখেছিল।

          আশ্চর্য! একটা মেডিক্যালে পড়া মেয়ে এভাবেই নেই হয়ে গেল! কিভাবে সম্ভব! রিমিতো পাগলের মত হয়ে গিয়েছিল। এখনো মনে হয় পিছন থেকে নওরীনের ডাক শুনতে পাবে- অ্যাই রিমি দাঁড়া।

          নওরীনের মা এখনো শোকস্তব্ধ। রিমি মাঝে মাঝে যায় কতক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। তারপর একসময় উঠে চলে আসে। যাঁর কাছে যাওয়া তিনি তাকিয়ে থাকা ছাড়া একটা কথাও বলেন না।

          আর সাজিয়া আফরিন। ব্র্যাকে চাকরি করা সেই ডাক্তারটি। শধু মেয়ে হওয়ার কারণে একটা আকাট মূর্খ দানব যাকে শেষ করে দিল। কোথাও কোন বিচার হল না। রিমির মা তাই সদা সন্ত্রস্ত থাকেন- কখন কি হয়। রিমি নিজেও ভাবে না তা নয়। ভাবলে ভয়ও পায়। তবু সাহস নিয়ে চলতে চেষ্টা করে। এই সভ্যসমাজ বলে বড়াই করা সমাজটা দিন দিন যেন আরো বেশি অসভ্য আর হিংস্র হয়ে উঠেছে।

          বাসায় ফিরেও রিমির মন থেকে ভাবনাটা যায় না। মানুষটা কে? দেখতে তো সুদর্শন। আবার অনেক সুন্দর ছেলেকে যেমন ভ্যাবলা মার্কা লাগে তেমন নয়। বেশ বুদ্ধিদীপ্ত। কিন্তু তার পিছনে কেন লেগেছে? বাসায়ও কিছু বলা যাবে না। এমনিতে যৌতুকের কারণে প্রায় ঠিক হয়ে যাওয়া একটা বিয়ে ভেঙে গেছে। এখন কিছু বললেই মা চিন্তিত হয়ে অসুস্থ বাবাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলবেন।

          রিমির অবাক লাগে। একটা শিক্ষিত পরিবারের ওয়েল এস্টাবলিশড ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসে পাত্রপক্ষ যৌতুক চাইল! আর চাইল কখন? যখন ছেলেমেয়ের পারস্পরিক দেখাসাক্ষাতের দিন ঠিক হয়েছে। পাড়াতো খালাম্মা যিনি ঘটকালী করছিলেন তিনি জানালেন, অন্য কিছু নয়। শুধু ছেলের জন্য একটা গাড়ি দিলেই হবে।

          -গাড়ি! এত টাকা কোথায় আমার। চাকরি করে যা আয়রোজগার করেছি তা তো ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াতেই গেছে। নিজের বাড়িই নেই, আর জামাইকে দিতে হবে গাড়ি। না সম্ভব নয়। আপনি মানা করে দেন।

          -বোন আপনার তিন ছেলেইতো প্রতিষ্ঠিত। দুজন আমেরিকায়। একমাত্র বোনের জামাইকে তারা একটা গাড়ি দিতে পারবে না? তাছাড়া এমন পাত্র হাতছাড়া করবেন কেন? ভাল ফ্যামিলি, উচ্চশিক্ষিত ছেলে, বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করে। বছরে দু-চারবার বিদেশে যায়।

          রিমি পাশের ঘরে বসে সব কথা শুনতে পাচ্ছিল। শুনতে শুনতে মাথাটা গরম হয়ে উঠেছিল। একটা শিক্ষিত ছেলের এবং তার পরিবারের এই মানসিকতা ছিঃ!

          কোন কিছু না ভেবেই ঘরে ঢুকে রিমি বলেছিল, আমার ভাইদের যদি থাকেও তবু যৌতুক দিয়ে আমি বিয়ে করব না খালাম্মা। যৌতুককে আমি ঘৃণা করি। আর যারা যৌতুক চায় তাদেরকেওএসব মানুষ কি আদপেই শিক্ষিত? আপনি ওনাদের জানিয়ে দেবেন এ বিয়ে হবে না। দেখাদেখিরও আর কোন প্রয়োজন নেই।

          একটানা কথাগুলো বলে উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল।

          খালাম্মা হা করে তাকিয়ে ছিলেন। তারপর কড়া সুরে বলেছিলেন, এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য তোমার বাবা-মা আছেন, তুমি মাঝপথে হঠাৎ বাগড়া দিতে এলে কেন?

          কথাগুলো কানে গেলেও রিমি আর পিছন ফিরেনি।

          -হ্যাঁ তাইতো। তাইতো। মা ধ্বসে যাওয়া গলায় বলে উঠেছিল।

          -না। রিমিই ঠিক কথা বলেছে। আমার মেয়েকে আমি যৌতুক দিয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য মানুষ করিনি। এ প্রস্তাব এখানেই ইতি- আপনি ওদের জানিয়ে দেবেন।

          -কোন কিছু ভেবেচিন্তে না দেখে আপনি এভাবে বিয়ে ভেঙে দিচ্ছেন?

          -হ্যাঁ।

আর কোন কথা না বলে বাবা উঠে গিয়েছিলেন। নিজের ঘর থেকেই রিমি শুনতে পাচ্ছিল মা সেই পাড়াতো খালাম্মাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

          -আপা, আপা আপনি কিছু মনে করবেন না।

          লিভিং রুমে টিভি দেখতে দেখতেই ম্যাসেজটা পেল। সেই নম্বরটা। ম্যাসেজ খুলতেই চোখে পড়ল রিকোয়েস্ট- এগারোটার পরে কল করব। প্লিজ কেটে দেবেন না। আপনার সাথে খুব জরুরি কিছু কথা আছে। আর্নেস্ট রিকোয়েস্ট।

          অবাক হল রিমি। কী বলতে চায় লোকটা? চেনা নেই, জানা নেই এমন লোকের সাথে কি কথা থাকতে পারে!

          ঠিক সোয়া এগারোটার দিকে ফোনটা বাজল। ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতে বাটন চাপল।

          -হ্যালো রিমি।

          -কে আপনি? কেন বার বার ফোন করে বিরক্ত করছেন?

          -আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।

          -ক্ষমা! আমার কাছে কেন? যাকে চিনি না, জানি না, কোন দোষের জন্য তাকে ক্ষমা করব। আশ্চর্য!

          -হ্যাঁ,আশ্চর্যই বটে। আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই। প্লিজ আপনি শুধু শুনবেন। তারপর ইচ্ছে হলে ক্ষমা করবেন নয়তো নয়। তবু আমি ভাবব আমি কনফেশান করতে পেরেছি। না হলে যে আমি কষ্ট পাচ্ছি রিমি।

          -কিন্তু আপনি কে? আমার নিজেরইতো কেমন ধাঁধাঁ লাগছে।

          -আমি ইমরান। ইমরান হাসান।

          ইমরান হাসান। কানটা ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল। সেই যৌতুক লোভী লোকটা যার সাথে তার বিয়ে প্রায় ঠিক হয়েও ভেঙে দিয়েছিল। যাকে ঘৃণা করে সে।

          -না, আপনার সাথে আমার কোন কথা থাকতে পারে না। সব কথাতো চুকেবুকে গেছে। এখন আবার কেন বিরক্ত করছেন?

          লাল বোতামে চাপ দিল। অযথা বিরক্ত করে রাতের ঘুমটাই হারাম করে দিল বজ্জাত ব্যাটা।

          রিংটোনটা একটানা বেজে চলেছে। রিমি মোবাইলটা অফ করে দিল।

          পর পর তিনদিন অফিস থেকে বের হওয়ার সময় চোখে পড়ল লোকটা গাড়িতে হেলান দিয়ে একঠায় দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। রিমির বলতে ইচ্ছে করে- আপনি কেন আসেন? এখনো বোঝেননি আমি আপনাকে ঘৃণা করি। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে নাটক করতে ভাল লাগে না। তাও অফিস এলাকায় কাল সকালেই দেখা যাবে এ কান ও কান করে এক কথা দশ কথায় দাঁড়িয়েছে।

          রাতে ঘুমাতে যাবে তখনই ফোনটা বেজে উঠল। বাজছে। বেজেই চলেছে।

রিমি ভাবছে। ধরবে কি ধরবে না। কেন এমন করছে লোকটা। কি করতে চায় সে। কিসের কনফেশন। কৌতুহল জাগছে রিমির মনে।

          -হ্যাঁ বলুন

          -অবশেষে ধরলেন

          -না ধরলে তো শান্তি দিচ্ছেন না

          -সত্যি দুঃখিত কিন্তু আমি যে শান্তি পাচ্ছি না

          -কেন আমাকে নিয়ে আপনার কিসের অশান্তি

          -কারণ আপনার কাছে আমি অপরাধী অথচ বিষয়টার জন্য আমি মোটেও দায়ী নই

          -তাতে কি আসে যায়। যে শেষ হয়ে গেছে তাকে আবার কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের দরকার আছে?

          -প্লিজ, প্লিজ রিমি এভাবে বলবেন না। আমি এমনিতে জবাই হয়ে গেছি।

          -আপনি কি কোরবানির পশু নাকি যে জবাই হবেন। রিমির কন্ঠে ব্যঙ্গ ঝরে পড়ে।

          -বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা কোরবানীর পশু ছাড়া আর কী! এই যে বাবা-মার ইচ্ছেয় আমাদের বিয়ের প্রস্তাব চালাচালি হচ্ছিল। মাঝপথে ঘটকী না ঘোটকী সেই মহিলা যৌতুকের কথা বলে আপনাকে খেপিয়ে দিল। আমাকে একটা লোভী মানুষ ভেবে আপনি ঘৃণা করতে থাকলেন।

          -কেন আপনারা যৌতুক চাননি?

          -মোটেও না। আমি বা আমার পরিবার যৌতুক নিয়ে ভাবেইনি। তারা চেয়েছিল ভদ্র পরিবারের একটি শিক্ষিত মেয়ে। সত্যি কথা অবশ্য আমি নিজে আপনাকে দেখার পর মনে হয়েছিল, আপনিই সেই মেয়ে যে আমার স্বপনচারিনী।

          -খুব মনভোলানো কথা জানেন দেখছি। কতদিনের প্র্যাকটিস? আর কাকে কাকে বলেছেন এসব কথা?

          -রিমি! ওপাশ থেকে কন্ঠস্বরে আর্তি ফুটে উঠল।

          কিছুক্ষণ চুপ। রিমির খারাপ লাগছে। না জেনে না বুঝে একজনকে এভাবে বাজে কথা বলা ঠিক হয়নি।

          কয়েক মুহূর্তকে মনে হচ্ছে অনন্তকাল। রিমির মনে হচ্ছে এবার তারই কনফেশনের পালা।

          -সরি, আস্তে করে উচ্চারণ করল সে।

          কোন শব্দ নেই।

          -সরি, মিঃ ইমরান। আপনি চুপ করে থাকলে আমি লাইন কেটে দিচ্ছি।

          -না না কাটবেন না। আমার ভুল হয়েছে। আপনাকে আর বিরক্ত করব না।

          -আমি তো সরি বলেছি। রিমির কন্ঠে কিছুটা অনুতাপ ফুটে ওঠে।

          -না, না আমি সত্যি দুঃখিত। আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি শুধু সত্যটা জানাতে চেয়েছিলাম।

          -ঠিক আছে আমি মেনে নিলাম, বিশ্বাস করলাম আরতো কোন সমস্যা নেই। রিমি হেসে ওঠে।

          -বিশ্বাস যখন করেছেন তখনতো আমরা বন্ধু হতে পারি। বন্ধুত্বে বিশ্বাস করেন তো?

          -করি।

          -বাঁচালেন। আজ অনেকদিন পর ভাল ঘুম হবে। সেই কবে থেকে যন্ত্রণায় ছটফট করছি। ঠিক আছে টেক কেয়ার, গুড নাইট।

          সম্পর্কের প্রায় একবছর পর ইমরানের মা-বাবা সরাসরি এলেন রিমিদের বাড়িতে। বাবা-মা বিস্মিত। রিমি রাজি! হ্যাঁ, একবছরে রিমির সাথে ইমরানের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

          -আর যৌতুক, গাড়ি!

হেসে উঠলেন ইমরানের বাবা, কি যে বলেন আমাদের কি গাড়ির অভাব আছে। এসব ঐ ফালতু মহিলার বানোয়াট কথাবার্তা।

          বিয়ের আয়োজনে রিমি আর ইমরান ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র কিনছে। অফিস থেকে বেরিয়ে দুজনে শপিং এ যায়। রিমির মনে আনন্দ, জীবনে এমনি করেই বুঝি ভালবাসা আসে।

          মানুষকে চেনা বড় মুশকিল। অথচ তৃতীয় পক্ষের কথায় রিমি ফিরিয়ে দিয়েছিল ইমরানের মত মানুষকে এরই মাঝে কখনও কখনও মনে পড়ে নওরীনকে। আহা! আজ যদি নওরীন থাকত কত আনন্দ হত।

          বিয়ের আসরে রিমির নিজেকে নায়িকার মত লাগছে। তাকে ঘিরেই সব আয়োজন। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বলেই যাচ্ছে। নানারকম ঘনিষ্ঠ ভঙ্গিতে রিমি আর ইমরান। আজ রাতটা যেন শুধুই তাদের জন্য।

          বাসরঘরের ছবি তোলা শেষ হলে ঠাট্টা ইয়ার্কি করতে করতে আত্মীয় বন্ধুরা বেরিয়ে যায়। এবার ইমরান কাছে আসবে। অপূর্ব এক ভাললাগায় রিমির সারা শরীরে শিহরণ।

          রিমি বসে আছে। ইমরান তার দিকে পিছন ফিরে চাবি দিয়ে ড্রয়ার খুলছে। যে বোতলটা হাতে নিয়ে রিমির দিকে ফিরল তা দেখে রিমি আৎকে উঠল। এ যে মদের বোতল। ইমরান মদ খায়! আজ বাসর রাতে-

          -কী ভাবছ রিমি চৌধুরী? বোতল থেকে মদ গলায় ঢালতে ঢালতে প্রশ্ন করল ইমরান।

          -হ্যাঁ আমি মদ খাই, সিগারেট খাই, নারীসঙ্গ করি। কিন্তু তোমাকে আমি ছোঁব না। তোমাকে আমি বিয়ে করেছি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। যেদিন তুমি যৌতুকের জন্য খালাম্মাকে অপমান করেছ সেদিন থেকেই আমার প্রতিজ্ঞা ছিল, তোমাকে আমার হাতের মুঠোয় আনব। ছলে বলে কৌশলে যেভাবেই হোক। কত ভালমানুষ আমি তাই না। কেমন অভিনয় করে কাটিয়ে দিলাম একটা বছর।

          রিমির কান দুটো পুড়ে যাচ্ছে। চোখের মনি বেরিয়ে আসতে চাইছে।

          -খুব অবাক হচ্ছো রিমি। এখনওতো অনেক দেখার বাকি। অপেক্ষা করো, দ্যাখো আমি তোমাকে কি শাস্তি দিই।

          টলতে টলতে সিগারেট ধরালো ইমরান। তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। রিমির দিকেই এগিয়ে আসছে।

          -আহারে আমার রুপসী বউ, দেমাগী বউ এখন দ্যাখো কি হাল করে ছাড়ি তোমার।

বলতে বলতে কাছে এসে রিমিকে জাপটে ধরে ওর ডানগালে জ্বলন্ত সিগারেটটা চেপে ধরল।

          -আঁ------

বদ্ধ ঘরের দেয়ালে রিমির চিৎকার প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।


No comments:

Post a Comment

Latest Post

Terry Wogan's "The Little Book of Common Sense"

  What we call common sense in English is not very common at all. If common sense could be learned by reading books, then those who have re...

Popular Posts