Saturday, 8 February 2025

রিফাৎ আরার ছোটগল্প - পরাজয়



__________________________________________

রিফাৎ আরা রচনাসমগ্র

গল্পগ্রন্থ - জীবনের গল্প ।। মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৪

গল্প - পরাজয়
__________________________________________

পরাজয় 

বেড়াতে বেরিয়েছিল ওরা। আশেক আর আনিকা। আশেক চট্টগ্রাম এলেই সিআরবি'র এ জায়গাটাতে একবার যাবেই আর আনিকাকে অবশ্যই থাকতে হবে। আজও এসেছে। পরদিন টিউটোরিয়াল পরীক্ষা থাকায় আনিকা প্রথমে আপত্তি করেছিল। কিন্তু নিজের চাওয়ার ব্যাপারে আশেক এমনই বেপরোয়া আর দুর্দান্ত যে তাকে কিছুতেই ফেরানো যায় না। কিন্তু আজ যে এমন একটা কান্ড করবে স্বপ্নেও ভাবেনি আনিকা।

          একটা শাল গাছের নিচে পাহাড়ের ঢালুতে বসেছিল ওরা। আচমকা আনিকার হাতটা টেনে নিয়ে অনামিকায় আংটিটা পরিয়ে দিল। একবার আনিকার সম্মতির অপেক্ষাও করল না। তারপর বলল, "যা আজ থেকে তুই আমার বাগদত্তা। এ আংটিটা প্রতি মুহূর্তে তোকে আমার কথা মনে করিয়ে দেবে"

          অপ্রত্যাশিত এ পাওয়ায় আনিকার শরীরটা কেঁপে উঠল। এক মুহূর্ত আগেও সে ভাবতে পারেনি আশেক এরকম একটা পাগলামি করতে পারে। অবশ্য পাগলামি তো সে চিরকালই করে আসছে। জোর করে ভালবাসা আদায় করা, আরো বেশি জোর খাটিয়ে অভিভাবকদের রাজি করানো - কী করেনি।

          সেই কৈশোর বেলায় প্রথম যখন বলেছিল "আনিকা, মনে রাখবি তুই আমার বউ হবি। আমি তোকে ভালবাসি। তুই শুধু আমার"

          আনিকা তখন ক্লাস নাইনে পড়ে আর আশেক এইটে।

          পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস। সেই থেকে আত্মীয়ের অধিক সম্পর্ক দুই পরিবারের। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকে দুজনের ভাব। একসঙ্গে খেলাঘরের খেলা। একই কিন্ডারগার্টেনে পড়া।

          কিন্তু তখন কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি ভাই-বোনের মত বেড়ে ওঠা আশেকের ভেতরে তার চেয়ে এক বছরেরও কিছু বড় আনিকাকে ঘিরে ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলো পল্লবিত হচ্ছে

          সেই একেবারে শৈশববেলায় আনিকাতো প্রায়ই শাসন করত - "তুই আমাকে আপু ডাকবি। আমি না তোর বড়?"

          "ইহ্‌ কী আমার বড়রে। মোটেতো এক বছরের" - তাচ্ছিল্য করে উত্তর দিত আশেক।

          "এক দিনের বড় হলেও বড়। আর আমিতো এক বছরের বেশি। যদি আপু না ডাকিস তাহলে তোর সাথে কথাই বলব না। যা চলে যা।"

          সেদিন চলে গেলেও দুদিন পরে ফিরে এসে পেছন থেকে বিনুনী ধরে টান দিয়ে বলত - "আনিকা, আনিকা, এই আনি কথা বল্‌, বল।"

          আনিকা যত চুপ করে থাকত তত তার চুল ধরে আরো জোরে টানত। মাথাটা একপাশে হেলে গেলেও বলত - "কথা তোকে বলতেই হবে হবে হবে।"

          একসময় রেগে গিয়েই চিৎকার করতে হত - "ছাড়, ছাড় বলছি।"  আর তখনই চুল ছেড়ে হেসে উঠত - "এই তো হেরে গেলি। আমার সাথে কথা না বলে তুই থাকতে পারবি? চল চল এখন ব্যাডমিন্টন খেলব।"           ঘর থেকে তাড়িয়ে খেলার মাঠে নিয়ে যেত।

          আংটিটা নাড়াচাড়া করতে করতেই আনমনে সেই স্মৃতিগুলো মনে আসে আনিকার।

          আজ থেকে প্রায় সাত-আট বছর আগের কথা। খেলাধুলা, গল্প, স্কুলে একসঙ্গে যাতায়াত করতে করতে আনিকা যখন ক্লাস নাইনে উঠেছে তখনই একদিন দুম করে বলেছিল - "তুই আমার বউ হবি। মনে রাখিস। আর কারও সঙ্গে যদি ভালবাসার সম্পর্কে জড়াস তাহলে আমি আত্মহত্যা করব।"

          "তুই একটা পাগল" আনিকা রেগে বলেছিল - "আমার চেয়ে বয়সে ছোট তাকে যাব আমি বিয়ে করতে - আমার আর কাজ নেই - হুঁহ্‌।"

          "কি এমন বয়সে ছোট। একবছর। আয় পাশে দাঁড়া। দ্যাখ আমি তোর চেয়ে কতটুকু লম্বা। তাহলে আমিও তো বড়।"

          সত্যি সত্যি ততোদিনে আনিকার মাথা ছাড়িয়ে অনেকটুকু লম্বা হয়ে উঠেছে পাগলটা।

          আনিকা প্রথম প্রথম পাগলের পাগলামী মনে করে এসব কথাকে উড়িয়ে দিয়েছিল। এক সময় এ-কান ও-কান হয়ে কথাটা বড়দের কানেও পৌঁছেছিল।

          আব্বু ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন। মা-ও ভীষণ বিরক্ত ছিল আশেকের ওপর। শেষে আনিকাদের বাড়িতে আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। দুই পরিবারের সম্পর্কেও ফাটল দেখা দিয়েছিল। কিন্তু আশেক বেপরোয়া। বাবার হাতে মার খেয়েও সে সকাল-সন্ধ্যা ছায়ার মত লেগে থাকত।

          যেবার আনিকা এস-এস-সি পাশ করে কলেজে ভর্তি হল তার কিছুদিন পর আনিকার ছোটবোন আরিফাকে দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল - "কো-এডুকেশন কলেজে পড়ছিস ভাল কথা কিন্তু কোন ছেলের প্রেমে পড়বি না। সাবধান!"

          চিঠি পড়ে এত বিরক্ত হয়েছিল আনিকা যে তারপর পথে ঘাটে দেখা হলেও ফিরে তাকাত না। ততদিনে অবশ্য বন্ধু-বান্ধব পাড়া-প্রতিবেশি সবাই জেনে গেছে ব্যাপারটা।

          পরের বছর এসএসসি পাশ করলে আশেকের বাবা তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। নটর ডেমে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু এইচ-এস-সি পাশের পর গোঁ ধরে বসল সে আর পড়বে না। সেনাবাহিনীতে পরীক্ষা দেবে। দিল। টিকল।

          তারপর ট্রেনিং-এ যাওয়ার আগে বাবা-মা সবার কাছে এক দাবি- আনিকার সাথে তার বিয়ে ঠিক করে রাখতে হবে। এ নিয়ে বাড়িতে তুমুল অশান্তি।

          আশেকের বড় ভাই আযাদ তখন মাত্র ভার্সিটিতে পড়ছে। এইচ-এস-সি পাশ ছোট ভাইয়ের বিয়ের কথা এ সময় কীভাবে হয়! কিন্তু আশেকের এক দাবি- "আমি তো এখন বিয়ের কথা বলছি না। বিয়ে হবে আমি ক্যাপ্টেন হবার পর। এখন শুধু কথা দিয়ে রাখা।"

          "আচ্ছা, তুই যে এমন পাগলামী করছিস, আনিকা তোকে পছন্দ করে? তাছাড়া ও তোর থেকে বড় না?" আশেকের মা বলেছিল

          "দ্যাখ ছোটবেলায় খেলাঘরে ও আমার বউ হত। আর বয়সের কথা যদি বল - আমাদের নবীজি কি তাঁর চেয়ে অনেক বড় খাদিজাতুল কোবরাকে বিয়ে করেন নি? আর ধর্মের কথা বাদ দিলে - অভিষেক আর ঐশ্বরিয়াকে দ্যাখ-"

          আশেকের চাপাচাপিতে ওর বাবা-মা এসেছিলেন আনিকাদের বাড়িতে। ছোট ছেলে তাদের। আর্মিতে চলে যাবে। দু'জনেই কিছুটা নরম হয়ে পড়েছিল।

          কিন্তু আনিকার বাবা কঠোরভাবে এ প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। যাকে নিজের ছেলের মত স্নেহ করেছেন তার এ ঔদ্ধত্য তার অধ্যাপক বাবা সহ্য করতে পারেন নি।

          সেদিন আড়াল থেকে বাবার শক্ত শক্ত কথাগুলো শুনে তার মনে হয়েছিল বাবা এতটা নিষ্ঠুর না হলেও পারতেন। এতদিনের সম্পর্ক এভাবে ভাঙতে হবে কেন? বুঝিয়ে বললেই তো হত। তাছাড়া আশেকের ক্রমাগত পাগলামিতে আনিকার ভেতরেও ভাঙচুর হচ্ছিল।

          তারপর সেই রাতেই যে ঘটনাটা ঘটল তার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। মধ্যরাতে এম্বুলেন্স এল। আশেককে হাসপাতালে নেয়া হলএকসঙ্গে অনেকগুলো ঘুমের বড়ি খেয়েছিল আশেক। মরণপণ অবস্থা।

          সবাই ছুটে গেল হাসপাতালে। সেই প্রথম আনিকার মনে হয়েছিল- আশেকের কিছু হলে সেও বাঁচবে না। সমস্ত লজ্জা ভয় উপেক্ষা করে ছুটে গিয়েছিল হাসপাতালে।

          হাসপাতালের বিছানায় দুর্বল ফ্যাকাশে আশেককে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল - "তুই এমন পাগল কেন আশেক?"

          আনিকার বাঁ হাতটা হাত বাড়িয়ে চেপে ধরে আশেক বলেছিল - "তোর জন্য"।

          তারপর দুই পরিবারই মেনে নিয়েছে। পুরোনো সম্পর্ক আবার জোড়া লেগেছে। এখন আশেক সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। বড়ভাই আযাদের চাকরি হয়েছে। আনিকার মাস্টার্স শেষ হবার পথে।

          "কিরে কী এত ভাবছিস? সেই তখন থেকে চুপচাপ একমনে ভেবেই চলেছিস। আমি যে একটা মানুষ তোর পাশে বসে আছি - পাত্তাই নেই!" আশেকের কন্ঠে অনুযোগ।

          আনিকা হেসে ওঠে। "যা খুশি ভাবছিলাম। ছোটদের এসব কথা বলা যায় না"

          "অ্যাই আমি ছোট না বড় এক্ষুনি দেখিয়ে দেব" - বলতে বলতে আশেক নিজের মুখটা আনিকার মুখের কাছে নিয়ে আসে।

          আনিকা এক ধাক্কায় তাকে সরিয়ে দিয়ে খিলখিল হাসিতে ভেঙে পড়ে। তারপর বলে "চল্‌ হাঁটি। এখানে এভাবে বসে থাকলে তোর মাথায় শয়তান চাপবে।"

          "অ্যাই আমি কখনও শয়তানি করেছি তোর সাথে?"

          "করিসনি তবে করতে কতক্ষণ? চল হাঁটি।"

          ওরা অনেকক্ষণ পাহাড়ের ঢালে হাঁটে। হেমন্তের বিকেলের কমলা রোদ ওদের আনন্দিত মুখে অপূর্ব দ্যুতি ছড়ায়।

          "আবার কবে আসবি?" হাঁটতে হাঁটতে প্রশ্ন করে আনিকা।

          "ঠিক বলতে পারছি না। এবারতো ঢাকায় হেডকোয়ার্টারে পোস্টিং। শুক্র-শনি ছুটি। সুযোগ পেলেই চলে আসব। আচ্ছা, আমাদের বিয়েটা কবে হবে?" আচমকা প্রশ্ন করে আশেক।

          "আমার পড়াশোনা শেষ করার আগে বিয়ের প্রশ্নই উঠতে পারে না বুঝলেন জনাব?" 

          "আরে! তুই আমাকে আপনি করে বলছিস!"

          "বলব না? আপনি না বলি অন্তত তুমিটাতো অভ্যাস করতে হবে। বিয়ের পরও তুই-তোকারি করব নাকি?" আনিকার কন্ঠে বিস্ময় ঝরে।

          "কেন? বললে কী হবে? একটু অন্যরকম-"

          "নাহ্‌ এসব আমার সইবে না। অভদ্রতা মনে হয়"

          "আচ্ছা বাবা আচ্ছা। বিবি সরি সরি বেগম আনিকা আপনাকে আমিও আর তুই বলব না। কিন্তু এতক্ষণেও আপনি বললেন না আংটিটা আপনার পছন্দ হয়েছে কি না।"

          আনিকা অনামিকার আংটির দিকে আবার তাকায়। তারপর বলে - "পছন্দ না হলে এতক্ষণ পরে থাকতাম জনাব! বহুৎ পসন্দ, মন পসন্দআপনার পছন্দের তারিফ করছি। চলুন এবার বাসায় ফেরা যাক। অভিভাবকরা চিন্তা করছেন।"

          আশেক চলে যাবার পর কেমন খালি খালি লাগে। দু'একদিনের জন্য আসে আর হাসি আনন্দে ভরিয়ে রাখে।

          মোবাইল ফোনটা বেজে উঠতে তাড়াতাড়ি রিসিভ করে আনিকা - "হ্যালো"

          "হ্যাঁ আনি। কেমন আছিস?"

          "তুই নেই ভাল থাকি কী করে? তুই কেমন আছিস আশেক?"

          "ভাল, খুব ভাল।"

          "সে তোর গলা শুনেই একটু একটু আঁচ করছি। আমি নেই তবু তুই এত ভাল আছিস?"

          "না না তা নয়। একটা সুখবর আছে।"

          "কী সুখবর?"

          "আমার র‍্যাবে পোস্টিং হয়েছে। বুঝতে পারছিস তো এলিট ফোর্স র‍্যাবে। এটা অনেক গৌরবের ব্যাপার। সবাইকে নেয় না। অনেক ঝালাই পালাই করে দেখে তবে সিলেকশান দেয়।"

          আনিকার মনে হয় তার কানে যেন গরম সীসা ঢেলে দিচ্ছে আশেক। ওর খুশিভরা কন্ঠটা যেন অট্টহাস্যের মত লাগে।

          তবু কষ্ট করে বলে "এই পোস্টিং তুই নিস না আশেক।"

          "ধুর পাগলি। আমাদের চাকরিতে না করার সুযোগ আছে না কি? তাছাড়া কতজনকে হারিয়ে আমি সিলেকশান পেয়েছি ভেবে দ্যাখ!"

          "না, না আমার ভাবতে একদম ভাল লাগছে না।"

          "কী বলছিস তুই?"

          "হ্যাঁ, যা বলছি ঠিক। তুই পোস্টিংটা চেঞ্জ কর। আমার একদম ভাল লাগছে না।"

          "ধ্যাত্তেরি! একদম ভাল লাগছে না। কোথায় সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য তোকে সবার আগে ফোন করলাম। আর তুই এমন করছিস যেন চরম সর্বনাশ হয়ে গেছে। এরকম করলে চলে?"

          "তুই জানিস না র‍্যাব কী করে? এনকাউন্টার আর ক্রসফায়ারের নামে র‍্যাব কীভাবে মানুষ মারে!"

          "অপরাধীকে মারবে না?"

          "বিচারের আগে কীভাবে প্রমাণ হয় তারা অপরাধী?"

          "কী যা তা বকছিস? আর র‍্যাবে গেলেই কেউ মানুষ মারে নাকি? দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দরকার আছে বলেই তো এটা গঠন করা হয়েছে।"

          "রাখ তোর আইন-শৃঙ্খলা। ক'দিন আগে লিমনকে পঙ্গু করে দিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দোষ ছাত্র কাদেরকে জ্যন্ত মরা করে দিল। ওরাতো আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেনি। সিম্পলি নিজেদের ক্রেডিট ঝাড়ার জন্য এ কাজগুলো তারা করেছে।"

          "আরে বাবা সবই বুঝলাম। কিন্তু আমি কি মানুষ মারছি নাকি যে তুই এভাবে ক্ষেপে যাচ্ছিস?"

          "ক্ষেপব না কী বলছিস? ওরা কারণে অকারণে খুন করে আর আমি ক্ষেপব না! আশ্চর্য! তোর নিজের কেউ ওদের হাতে মরলে বুঝতিস।"

          "আচ্ছা আচ্ছা। বুঝতে পারছি তোর মাথা গরম হয়ে গেছে। আমার আনন্দটাই মাটি করে দিলি।"

          "ঠিক আছে। আমার কথা বলতে ভাল লাগছে না। রাখছি।"

          জীবনের সব স্বপ্নই যেন মাটি হতে বসেছে আনিকার। যেদিকে তাকায় শূন্য মনে হয়। আশেকের ঘুমের বড়ি খাওয়ার পর তার হুঁশ না আসা পর্যন্ত এরকম হয়েছিল। সে শূন্যতা কেটে একসময় ঝলমলে আনন্দে ভরে উঠেছিল।

          আজ আবার সেই শূন্যতা। কিন্তু মনে হচ্ছে এবার শূন্যতার কোন শেষ নেই। কেবলই মনে হয় আর কোনদিন আশেকের হাত ধরতে পারবে না সে। ধরতে গেলেই মনে হবে তার হাতে হয়তো নিরীহ কোন মানুষের রক্ত লেগে আছেমুখের দিকে তাকালে মনে হবে এই হাসিখুশি মানুষটা হন্তারক। হয়তো নিরপরাধ কোন মানুষকে গুলি করতে হুকুম দিয়েছে সে। নিজের সঙ্গে দু'দিন ধরে লড়াই করে ক্ষতবিক্ষত আনিকা। আর পারছে না। সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হবে। হোক সে সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী তবু নিষ্ঠুরতাকে মানতে পারবে না আনিকা। ভাবতে গিয়ে বুক ভেঙে কান্না আসে। তবু নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত করে ফোনটা হাতে তুলে নেয়।

          গত দু'দিন ফোন বন্ধ করে রেখেছিল। হয়তো অনেকবার ফোন করেছে আশেক। কিন্তু ভাবার জন্য সময় নিয়েছে আনিকা।

          "হ্যালো, আশেক"

          "কি রে গত দু'দিন তোর ফোন বন্ধ। আমি তো পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম"

          "তুই কি তোর সিদ্ধান্ত পাল্টেছিস?"

          "কী সিদ্ধান্ত?"

          "পোস্টিং?"

          "পাগল, তা হয় নাকি?"

          "তাহলে শোন। আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের বিয়েটা হবে না।"

          "কী বলছিস আনি? তুই সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেলি?"

          "না রে। একটুও পাগল হইনি।" আনিকার কন্ঠস্বরটা দৃঢ় শোনায়।          
         "আমি অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ এখন থেকে তুই আমার হাত ধরতে এলেও আমার মনে হবে সে হাতে কোন নিরপরাধ মানুষের রক্ত লেগে আছে। এভাবে সংসার করা যাবে না আশেক। আমাকে আর কখনও ফোন করিস না। আমি নতুন করে বাঁচতে চাই"

          আশেককে একটি কথাও বলতে না দিয়ে ফোনটা রেখে দেয় আনিকা। তারপর টেবিলে মাথা রেখে হু হু করে কেঁদে ওঠে।


No comments:

Post a Comment

Latest Post

Terry Wogan's "The Little Book of Common Sense"

  What we call common sense in English is not very common at all. If common sense could be learned by reading books, then those who have re...

Popular Posts