Sunday 14 June 2020

মেঘনাদ সাহা - পর্ব ৫



চাকরির খোঁজে

মাস্টার্স পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে প্রায় এক বছর হতে চললো, অথচ কোন চাকরি পাওয়া গেলো না। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার পর যে আনন্দ হয় সে আনন্দ ক্রমেই ফিকে হয়ে যেতে থাকে যদি সেই রেজাল্ট কোন কাজে না লাগে। বিশেষ করে যাদের একটা চাকরির খুবই দরকার। সে সময় একটা চাকরি ছাড়া আর কোন কিছুই চাওয়ার নেই মেঘনাদের। যতদিন পড়াশোনা ছিল স্কলারশিপের কিছু টাকা পেতেন। কিন্তু পড়াশোনা শেষ হবার পর আর স্কলারশিপও নেই। তারপর থেকে কলকাতার এ মাথা থেকে ও মাথা সাইকেল চালিয়ে সকাল বিকেল টিউশনি করে কোন রকমে চলছে। বাড়ি থেকে ছোটভাই কানাইও চলে এসেছে কলকাতায় দাদার কাছে থেকে লেখাপড়া করবে বলে। মেঘনাদের আগে পরিবারের আর কেউ স্কুলের গন্ডিও পার হতে পারেনি। মেঘনাদ চেষ্টা করছেন যেন  তাঁর ছোটভাই উচ্চশিক্ষিত হতে পারে।[1]

            ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন দানা বাধছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ইওরোপ অস্থির। মেঘনাদ রাজনীতি সচেতন, কিন্তু সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দেয়ার কোন ইচ্ছে নেই তাঁর। ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকরি করবেন না বলার মতো অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য তাঁর নেই। ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস বা আই-সি-এস পরীক্ষা দিয়ে আই-সি-এস অফিসার হবার সুযোগ নেই মেঘনাদের। আই-সি-এস পরীক্ষা দিতে হলে লন্ডনে গিয়ে কয়েক মাস থাকতে হবে। সেই সামর্থ্য মেঘনাদের নেই।

            আই-সি-এস এর কাছাকাছি পদমর্যাদায় যে চাকরির পরীক্ষা কলকাতায় বসে দেয়া যায় তা হলো ইন্ডিয়ান ফাইনেন্সিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা। মেঘনাদ অনেক বছর থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন ফাইনেন্সিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে আই এফ সি অফিসার হবেন। সি ভি রামন ফাইনেন্সিয়াল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম হয়ে কলকাতা অফিসে কাজ করার পাশাপাশি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশান ফর দি কালটিভেশান অব সায়েন্সে গবেষণা করছেন সেই খবর মেঘনাদ পেয়েছেন। গবেষণার প্রতি তখনো তাঁর কোন আগ্রহ জন্মায়নি - তাঁর একমাত্র লক্ষ্য আই এফ সি অফিসার হওয়া।

            পূর্ব-পরিকল্পনা অনুসারে ইন্ডিয়ান ফাইনেন্সিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা দেবার জন্য দরখাস্ত করলেন মেঘনাদ সাহা। ফাইনেন্সিয়াল সার্ভিসের চাকরিটা হয়ে গেলে আর কোন সমস্যা থাকবে না। বেতন ভাতা আর অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি এই ফাইনেন্সিয়াল সার্ভিসে।

            কিন্তু পরীক্ষা দেবার অনুমতি পেলেন না মেঘনাদ সাহা। ব্রিটিশ গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছে - মেঘনাদ সাহা বিপ্লবীদের সাথে যুক্ত। গোয়েন্দাদের রিপোর্টে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে বহিস্কার, স্কলারশিপ বাতিল, প্রেসিডেন্সি কলেজে স্বদেশী বিপ্লবীদের সাথে বন্ধুত্ব ইত্যাদি সবকিছু উল্লেখ করে মেঘনাদ সাহাকে কোন ধরনের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ না করার সুপারিশ করা হয়। ব্রিটিশ রাজত্বে সরকারি  চাকরির সব সম্ভাবনাই বন্ধ হয়ে গেলো মেঘনাদের। যে কোন একটা চাকরি পাবার আগপর্যন্ত উপার্জনের একমাত্র রাস্তা হয়ে দাঁড়ালো টিউশনি। অধ্যাপক হবেন, গবেষণা করবেন, বিজ্ঞানী হবেন এরকম কোন পূর্ব-পরিকল্পনা ছিল না তাঁর। ছিল না বলেই মহেন্দ্র লাল সরকারের অ্যাসোসিয়েশানে তখনো পর্যন্ত একবারও যাননি মেঘনাদ সাহা।

ভাগ্যকুলের প্রাক্তন জমিদার শশধর রায়ের সাথে অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা (জানুয়ারি ১৭, ১৯৫৬)। হাইস্কুলে পড়ার সময় মেঘনাদ সমবয়সী শশধর রায়কে প্রাইভেট পড়িয়েছিলেন কিছুদিন।



[1] মেঘনাদের ছোটভাই কানাই লাল সাহা আর জি কর মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করে বড় ডাক্তার হয়েছিলেন।

No comments:

Post a Comment

Latest Post

নিউক্লিয়ার শক্তির আবিষ্কার ও ম্যানহ্যাটন প্রকল্প

  “পারমাণবিক বোমার ভয়ানক বিধ্বংসী ক্ষমতা জানা সত্ত্বেও আপনি কেন বোমা তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন?” ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের ‘কাইজো’ ম্য...

Popular Posts