Tuesday 23 June 2020

মেঘনাদ সাহা - পর্ব ১৮



আবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

পনের বছর কলকাতার বাইরে এলাহাবাদে কাটিয়ে ১৯৩৮ সালে আবার কলকাতায় ফিরে এলেন প্রফেসর মেঘনাদ সাহা। ১৯২৩ সালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার পরই তিনি দেখেছিলেন এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ কলকাতার চেয়ে অনেক কম এবং পরিবেশও তেমন আকর্ষণীয় নয়। এলাহাবাদে গবেষণার পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি কলকাতায় ফিরে আসার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

          ১৯৩২ সালে স্যার সি ভি রামন যখন কলকাতা ছেড়ে ব্যাঙ্গালোরে চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন কলকাতার ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশান ফর দি কাল্টিভেশান অব সায়েন্স-এ মহেন্দ্রলাল সরকার অধ্যাপক পদ সৃষ্টি করার প্রক্রিয়া চলছিলো। মেঘনাদ সাহা সেই পদের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে সি ভি রামনকে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু রামন পদটি অধ্যাপক সাহাকে না দিয়ে অধ্যাপক কৃষ্ণানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।[1] ফলে রামনের ওপর ভীষণ রেগে যান মেঘনাদ সাহা। রামনের সাথে একটা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও ব্যক্তিত্বের সংঘাত দানা বাঁধতে থাকে মেঘনাদের।

          ১৯৩৩ সালে স্যার রামন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালিত প্রফেসর পদ ছেড়ে দিলে সেই পদে যোগ দেন অধ্যাপক দেবেন্দ্রমোহন বসু। ফলে মেঘনাদের কলকাতায় ফেরা হয়ে ওঠেনি সেই সময়। ১৯৩৭ সালের নভেম্বরে স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর মৃত্যুর পর বসু বিজ্ঞান মন্দির এর পরিচালক পদে যোগ দেন অধ্যাপক দেবেন্দ্রমোহন বসু। ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত প্রফেসর পদটি খালি হয়। ১৯৩৮ সালে সেই পদে যোগ দেন অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা। পনের বছর পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার এলেন প্রফেসর সাহা। ১৯২৩ সালে এলাহাবাদ ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন স্যার আশুতোষ মুখার্জি। ১৯৩৮ সালে ফিরে এসেছেন যখন তখন ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখার্জির ছেলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল মেঘনাদ সাহার। কলকাতায়  ফিরেই অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তিনি।

 

১৯৩৮ সালে চার্লস ডারউইনের নাতি প্রফেসর সি জি ডারউইনের সাথে প্রফেসর সাহা। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে অতিথি হয়ে এসেছিলেন প্রফেসর ডারউইন। শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাওয়ার পথে।


কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএসসির পুরনো সিলেবাস বদলে সম্পূর্ণ আধুনিক ও যুগোপযোগী করে তুললেন। 'পালিত চেয়ার' স্থাপিত হবার পর প্রথম 'পালিত প্রফেসর' ছিলেন রামন। তিনি ১৯১৭ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন সেখানে। তিনি তাঁর গবেষণা নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত ছিলেন যে সিলেবাস ঠিক করার ব্যাপারে খুব একটা মনযোগ দেননি। তাছাড়া 'পালিত ল্যাবোরেটরি'র আধুনিকায়নের দিকেও তিনি খুব একটা নজর দেননি, কারণ তিনি তাঁর সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশানের ল্যাবে। রামনের পরে পালিত প্রফেসর হয়েছিলেন অধ্যাপক দেবেন্দ্রমোহন বসু। তিনিও খুব একটা সময় পাননি।


          সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশান থেকে স্যার রামনের পদত্যাগের পর রামন-ইফেক্ট সংক্রান্ত গবেষণার সব যন্ত্রপাতি অ্যাসোসিয়েশানের ল্যাব থেকে ইউনিভার্সিটির 'পালিত ল্যাব'-এ নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রফেসর সাহা রামন ইফেক্ট সম্পর্কে কোন আগ্রহ দেখাননি কোনদিন। এখন পালিত ল্যাবের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি ইচ্ছে করলে রামনের সব যন্ত্রপাতি ফেলে দিয়ে তাঁর নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের নতুন যন্ত্রপাতি বসাতে পারেন। কিন্তু তিনি সেটা করলেন না। তাঁর সহকারী অধ্যাপক ডক্টর সুকুমার সরকার এর আগে স্যার রামনের সাথে গবেষণা করেছেন। প্রফেসর সাহা ডক্টর সরকারকে দায়িত্ব এবং স্বাধীনতা দিলেন রামন ইফেক্ট সম্পর্কিত গবেষণা চালিয়ে যেতে। সেজন্য তিনি 'পালিত ল্যাব' সম্প্রসারণ করার ব্যবস্থা করলেন।

 

প্রফেসর সাহা (১৯৩৮)। ডান পাশে তাঁর নিজের হাতে লেখা বর্ণনা

 

পদার্থবিজ্ঞানের 'ঘোষ প্রফেসর' শিশিরকুমার মিত্র ছিলেন মেঘনাদ সাহার সিনিয়র। তিনি ভারতের প্রথম আয়নোস্ফেরিক ল্যাবোরেটরি স্থাপন করেছিলেন ১৯৩৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে। এলাহাবাদে মেঘনাদ সাহাও আয়নোস্ফিয়ার সংক্রান্ত গবেষণা করছিলেন। কলকাতায় এসে সাহা দেখলেন প্রফেসর মিত্র ইতোমধ্যেই ল্যাব স্থাপন করে একদল বিজ্ঞানীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গবেষণার রেজাল্ট পেতে শুরু করেছেন। সেখানে একই বিষয়ের ওপর আরেকটি রিসার্চ-গ্রুপ তৈরি করে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু করাটা ঠিক হবে না। অধ্যাপক সাহা তাঁর আয়নোস্ফেরিক গবেষণার এক্সপেরিমেন্ট আর না করার সিদ্ধান্ত নিলেন।    

তিনি মনযোগ দিলেন নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের গবেষণার দিকে। ১৯৩২ সালে নিউট্রন আবিষ্কৃত হলে সাহা নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে দৌলতরাম সিং কোঠারির সাথে নিয়মিত আলোচনা করতে শুরু করেছিলেন কৃত্রিম আইসোটোপের ব্যাপারে। বিটা কণা বিকিরণের ব্যাপারেও অনেকদূর এগিয়েছিলেন - যা এনরিকো ফার্মি আবিষ্কার করে বিখ্যাত হয়েছেন আরো পরে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউক্লিয়ার ফিজিক্স পড়ানোর ব্যবস্থা করলেন অধ্যাপক সাহা।  

          কলকাতায় আসার পর গবেষণা ও অধ্যাপনার পাশাপাশি অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও বৈজ্ঞানিক সাংগঠনিক কাজে অনেক বেশি জড়িয়ে পড়তে শুরু করলেন প্রফেসর সাহা। দেশে বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার বাড়ানোসহ ব্যাপক শিল্পায়ন ঘটানো দরকার।

          প্রফেসর সাহা ইওরোপের ব্যাপক শিল্পায়ন ও বিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার দেখে ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ হন এবং ভারতের জ্বালানি শক্তির উৎস হিসেবে বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উপর জোর দেন। নিউক্লিয়ার শক্তি উৎপাদনের জন্য ভারতে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও দেশের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আলোচনা শুরু করেন। এজন্য ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিশন গঠন করার জন্য প্রস্তাব দেন তিনি।

          ইওরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশংকা দেখা দিয়েছে। ভারতে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন আরো জোরদার হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা আসন্ন। স্বাধীন ভারতের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হলে রাজনৈতিক নেতাদের হাত দিয়েই করতে হবে। স্বাধীনতার পর ভারতীয় কংগ্রেস পার্টি দেশের দায়িত্ব নেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই এখন থেকেই কংগ্রেসের নেতাদের বুঝাতে হবে স্বাধীন ভারতের মূল চালিকাশক্তি হওয়া উচিত - বিজ্ঞান। একটা বিজ্ঞানভিত্তিক জাতি গড়ে তুলতে পারলে দেশ উন্নত হবেই।

          কংগ্রেসের নেতৃত্বে যে স্বদেশী আন্দোলন চলছে তাতে মেঘনাদ সাহার সমর্থন থাকলেও যে পদ্ধতিতে আন্দোলন চলছে এবং যে নীতির উপর জোর দেয়া হচ্ছে তাতে বিশ্বাস নেই তাঁর। মহাত্মা গান্ধীকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে খুব শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু বিদেশী কারখানায় তৈরি সবকিছু বর্জন করতে হবে, চরকায় সুতা কেটে খাদি কাপড় বানিয়ে সেগুলোই পরতে হবে এসব নীতিকে তিনি পছন্দ করতেন না। 'গ্রামে ফিরিয়া যাও', 'তাঁত শিল্পের উন্নয়ন ঘটাও' ইত্যাদিকে তিনি পশ্চাৎপদ নীতি বলে মনে করতেন। মহাত্মা গান্ধীর মূল মন্ত্র হচ্ছে কৃচ্ছতাসাধন। গান্ধীজী নিজে জামাকাপড় প্রায় পরেনই না। এটাই যদি দেশের ভবিষ্যৎ নীতি হয় তাহলে তো ভারতবর্ষ আধুনিকতার বিপরীত দিকে হাঁটতে শুরু করবে।

          মেঘনাদ সাহার শিক্ষক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় শুরুতে খাদির বিরোধিতা করলেও শেষে খাদির ভক্ত হয়ে যান। মেঘনাদ খুব শ্রদ্ধা করতেন আচার্য পি সি রায়কে। মেঘনাদ খাদি কাপড় না পরে স্যুট কোট পরেন। আচার্য রায় মেঘনাদকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন তিনি স্যুট-কোট বর্জন করে খাদি কাপড় পরেন না। মেঘনাদ সাহা সরাসরি উত্তর দিয়েছিলেন, "খদ্দর যারা পরেন তাঁরা অনেক ধরনের পাপ ঢাকার জন্য পরেন। আমি কোন পাপ করিনি যে খদ্দর পরে তা ঢাকতে হবে।"[2]

          আচার্য জানতেন তাঁর প্রিয় ছাত্র মেঘনাদের ঠোঁটকাটা স্বভাব। খাদি সংক্রান্ত নীতির বিরোধ সত্ত্বেও তিনি মেঘনাদকে খুব স্নেহ করতেন। মেঘনাদের এলাহাবাদের বাড়িতে অনেকবার অতিথি হয়ে এসেছিলেন তিনি। বাড়ি থেকে স্টেশনে যাওয়ার জন্য আচার্য যখন মোটরগাড়িতে চড়তেন তখন মেঘনাদ ঠাট্টা করে বলতেন, "আপনাদের তো বিদেশী মোটর গাড়িতে না চড়ে স্বদেশী গরুর গাড়িতে চড়ার কথা।"

          এলাহাবাদে থাকতেই তিনি ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের পক্ষ থেকে 'পাওয়ার সাপ্লাই' সংক্রান্ত একটি সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করেছিলেন ১৯৩৮ সালে। ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশরা চাপে পড়ে কিছু রাজনৈতিক সংস্কার করে। তার আওতায় ১৯৩৭ সালে সাধারণ নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে সাতটি প্রদেশে কংগ্রেস পার্টি বিপুল ভোটে জয়লাভ করে প্রাদেশিক সরকার গঠন করে। ইউনাইটেড প্রভিন্সের মুখ্যমন্ত্রী হন পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু। প্রফেসর সাহার আমন্ত্রণে নেহেরু 'পাওয়ার সাপ্লাই' সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। প্রফেসর সাহা সেই সিম্পোজিয়ামে ভারতের জ্বালানি নীতিতে আধুনিক বৈদ্যুতিক ও পারমাণবিক জ্বালানির দিকে জোর দেয়ার দাবি করেন। উত্তরে নেহেরু সোজাসাপ্টা ভাষায় বলেন যে বিজ্ঞানীরা অনেকসময় অ্যাকাডেমিক দৃষ্টিতে অনেক কিছুকেই খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন বটে, কিন্তু দেশীয় বাস্তবতার দিকে তাঁদের খুব একটা খেয়াল থাকে না। যে কোন সরকারের সামনে শুধুমাত্র দাবি জানালেই সেই দাবি গ্রহণযোগ্য হয় না। বিজ্ঞানীদের উচিত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ও কার্যপদ্ধতি দাখিল করা। নেহেরুর কথামতো ন্যাশনাল  অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের পক্ষ থেকে বিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্ট জ্বালানিনীতির পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন প্রফেসর সাহা।

          কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে মেঘনাদের খুব নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়। কারণ নেতাজীর গান্ধীবাদে খুব বেশি আস্থা ছিল না। কিন্তু ভারতীয় কংগ্রেস পার্টিতে গান্ধীজীর সমর্থন ছাড়া কোন কিছুই মূলত করা সম্ভব ছিল না। ১৯৩৮ সালে গান্ধীজীর সমর্থন নিয়ে ভারতীয় কংগ্রেস পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন নেতাজী সুভাষ বসু। ইডেন হিন্দু হোস্টেলে থাকতে সুভাষ বসুর সাথে পরিচয় হয়েছিলো মেঘনাদের। কলেজ স্ট্রিটের মেসেও আসা-যাওয়া ছিল সুভাষ বসুর। সাহা তাঁর সায়েন্স এন্ড কালচার জার্নালে প্রবন্ধ লিখলেন ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিটি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে। নেতাজী সুভাষ বসু মেঘনাদ সাহাকে অনুরোধ করলেন ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিটি গড়ে তোলার ব্যাপারে কাজ করার জন্য। কাজ শুরু করলেন মেঘনাদ সাহা। জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা ও শিল্পপতিদের সাথে যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে মেঘনাদ সাহার।

          ১৯৩৮ সালের অক্টোবরে শিল্পোন্নয়নের একটি উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী সভায় প্রফেসর সাহাকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানান নেতাজী সুভাষ বসু। সেই সভায় স্যার বিশ্বেশ্বরকে প্ল্যানিং কমিটির চেয়ারম্যান হবার জন্য প্রস্তাব করা হলো। স্যার বিশ্বেশ্বর ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। মহিশূর স্টেটের দেওয়ান হিসেবে তিনি অনেকগুলো নির্মাণপ্রকল্প সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছেন। ১৯৩৪ সালে তিনি A Planned Economy for India নামে একটি ভালো বই লিখেছিলেন। ৮১ বছর বয়সী প্রবীণ স্যার বিশ্বেশ্বর প্ল্যানিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে খুবই যোগ্য ব্যক্তি তাতে কোন সন্দেহ ছিল না। কিন্তু প্রফেসর সাহা জানতেন যে কংগ্রেস পার্টির কোন নেতা যদি প্ল্যানিং কমিটির চেয়ারম্যান না হন, তাহলে সরকারের চোখে সেই কমিটির তেমন কোন গুরুত্ব থাকবে না। তাই প্রফেসর সাহা প্রস্তাব করলেন পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুকে কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করার জন্য।

          জওহরলাল নেহেরু তখন ইওরোপে ছিলেন। সিদ্ধান্ত হলো ইওরোপ থেকে ফিরলে তাঁকে অনুরোধ করা হবে প্ল্যানিং কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য। শক্তি ও জ্বালানি উপকমিটির চেয়ারম্যান এবং রিভার ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ইরিগেশান সাবকমিটির সদস্য মনোনীত হলেন প্রফেসর সাহা। ইওরোপ থেকে ফিরে প্ল্যানিং কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেন পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু।

          দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে শান্তি নিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে দেখা করতে গেলেন মেঘনাদ সাহা।

 

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু



[1] প্রফেসর কৃষ্ণান সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আমার 'উপমহাদেশের এগারজন পদার্থবিজ্ঞানী', মীরা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৭

[2] S. N. Sen (editor), Professor Meghnad Saha His Life, Work and Philosophy, Meghnad Saha sixtieth birthday committee, Calcutta, 1954.

No comments:

Post a Comment

Latest Post

Dorothy Crowfoot Hodgkin

  Look closely at the fingers of the person in the picture. Her fingers had not bent in this way due to age; she had been suffering from chr...

Popular Posts