Wednesday 12 February 2020

বুধ - পর্ব ৮


বুধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

গ্যালাক্সির নেবুলায় লক্ষ লক্ষ সূর্যের সাথে আমাদের সূর্যও যখন গঠিত হলো তখন তার উপাদানের কিছু অবশিষ্ট অংশ থেকে উৎপন্ন হয়েছে সূর্যের গ্রহগুলো। বুধ ভারী, কঠিন এবং বেশি ঘনত্বের গ্রহ হিসেবে সূর্যের সবচেয়ে কাছে গঠিত হয়েছে। সূর্য ও তার গ্রহগুলোর উৎপত্তি সম্পর্কে আমরা একটু আগেই আলোচনা করেছি (পৃষ্ঠা ৩২-৪০)। বুধের বয়স এখন ৪৬০ কোটি বছর। উৎপত্তি হবার পরবর্তী ৭০ কোটি বছর ধরে বিবর্তন ঘটেছে বুধ গ্রহের। অসংখ্য গ্রহাণুর ক্রমাগত প্রচন্ড আঘাতে উপরিতলে বিরাট বিরাট গর্ত তৈরি হয়েছে। ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে গ্রহটির বাইরের আবরণ। তারপর পরের ৫০ কোটি বছর ধরে ঠান্ডা হয়েছে গ্রহটি। ধরতে গেলে তারপর এই গ্রহটির ভেতরে তেমন কোন পরিবর্তন আর হয়নি।

এই গ্রহের বাকি ইতিহাস হলো মানুষের ইতিহাস। এই গ্রহটিকে মানুষ কীভাবে দেখেছে, কীভাবে জেনেছে তার ইতিহাস। চলো দেখি গত আড়াই হাজার বছরে মানুষ ও বুধের মধ্যে কী কী প্রধান ঘটনা ঘটেছে।

২৫০০ বছর আগে
গ্রিকরা ভোরে সূর্যোদয়ের বুধ আর সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের বুধকে আলাদা আলাদা দুটো গ্রহ মনে করেছিলেন। ভোরেরটার নাম দিয়েছিলেন - অ্যাপোলো, সন্ধ্যারটার নাম দিয়েছিলেন হারমিস।

২৪৭০ বছর আগে
গ্রিক দার্শনিক হেরাক্লিটাস (Heraclitus) ভেবেছিলেন শুক্র ও বুধ সূর্যের চারপাশে ঘোরে, পৃথিবীর চারপাশে নয়। তখনো কিন্তু মানুষ বিশ্বাস করতো পৃথিবীকে কেন্দ্র করেই সবকিছু ঘুরছে।

 
গ্রিক দার্শনিক হেরাক্লিটাস

১৬৩১ ইংরেজি
ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী পিয়েরে গ্যাসেন্দি (Pierre Gassendi) টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছিলেন সূর্যের সামনে দিয়ে বুধ গ্রহের চলাচল দেখার জন্য। পৃথিবী থেকে প্রতি এক শ বছরে প্রায় তেরো বার সূর্যের সামনে দিয়ে বুধের এই চলাচল দেখা যায়।  আসলে এই বুধ পরিক্রমা পর্যবেক্ষণ করেই পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব নির্ণয় করা হয়েছিল।


ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী পিয়েরে গ্যাসেন্দি


১৯৬৫ ইংরেজি
কয়েক শ বছর ধরে মনে করা হতো যে বুধ সূর্যের দিকে শুধুমাত্র একটা পিঠ দেখিয়েই ঘুরে। অন্যপিঠটা সূর্যের দিকে ঘুরেই না। অর্থাৎ মনে করা হতো যে বুধ নিজের অক্ষের ওপর ঘুরে না - শুধুমাত্র সূর্যের চারপাশেই ঘোরে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে অনেক আস্তে আস্তে হলেও বুধ নিজের অক্ষের উপর ঘুরে। ১৯৬৫ সালে র‍্যাডারের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপে দেখা যায় যে বুধ সূর্যের চারপাশে দুইবার ঘুরার সময়ের মধ্যে নিজে নিজে তিন বার ঘুরে। পৃথিবীর সাথে তুলনা করলে বুধের এই গতি খুবই কম। পৃথিবী সূর্যের চার পাশে একবার ঘুরে আসার সময় নিজের অক্ষের উপর ৩৬৫ বার ঘুরে।

১৯৭৩ ইংরেজি
বুধ গ্রহের উদ্দেশ্যে পাঠানো প্রথম নভোযান ম্যারিনার-১০ পৃথিবী থেকে মহাকাশে যাত্রা করে।

১৯৭৪ ইংরেজি
মার্চ মাসে প্রথম বার এবং সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয়বার নভোযান ম্যারিনার-১০ বুধ গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যায়।

১৯৭৫ ইংরেজি
মার্চ মাসে ম্যারিনার-১০ বুধ গ্রহের  পাশ দিয়ে তৃতীয় বার উড়ে যাবার সময় বুধের চুম্বকত্ব সম্পর্কে তথ্য আবিষ্কার করে।

১৯৯১ ইংরেজি
বুধের মেরু অঞ্চলে সূর্যের আলো কখনো পড়ে না। ১৯৯১ সালে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা র‍্যাডার থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে আসেন।

২০০৪ ইংরেজি
বুধ গ্রহে দ্বিতীয় নভোযান মেসেঞ্জার পাঠানো হয় আগস্ট মাসে।

২০০৮-২০০৯ ইংরেজি
নভোযান মেসেঞ্জার বুধের পাশ দিয়ে তিন বার উড়ে গিয়ে বুধের অসংখ্য ছবি তুলে পাঠায় পৃথিবীতে।

২০১১ ইংরেজি
বুধের কক্ষপথে প্রবেশ করে মেসেঞ্জার। এক বছর ধরে বুধের কক্ষপথে ঘুরে ঘুরে বুধের জলবায়ু ও উপরিত্বক পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রচুর ছবি পাঠায়।

২০১৩ ইংরেজি
মেসেঞ্জার বুধের সামগ্রিক ম্যাপ তৈরি সম্পন্ন করে।

No comments:

Post a Comment

Latest Post

নিউক্লিয়ার শক্তির আবিষ্কার ও ম্যানহ্যাটন প্রকল্প

  “পারমাণবিক বোমার ভয়ানক বিধ্বংসী ক্ষমতা জানা সত্ত্বেও আপনি কেন বোমা তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন?” ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের ‘কাইজো’ ম্য...

Popular Posts