Friday 17 April 2020

জগদীশচন্দ্র বসু - পর্ব ২০


বৈজ্ঞানিক সফর - ৫

১৯১৫ সালে ভারত সরকার জগদীশচন্দ্রকে পাঁচ বছরের জন্য সাময়িক গবেষণা-বৃত্তি মঞ্জুর করেছিলেন। সেই নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে আসছে। জগদীশচন্দ্র ভেবে দেখছেন কীভাবে এই মঞ্জুরি আরো কয়েক বছরের জন্য বাড়ানো যায়। ইওরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে ব্রিটিশ-ভারতের ওপর তার প্রভাব পড়তে পারে। বিজ্ঞান-মন্দিরের আর্থিক দিকটা মজবুত না করতে পারলে সমস্যা হবে।
          ডাক্তার নগেন্দ্রচন্দ্র নাগ জগদীশচন্দ্রের আহ্বানে বিজ্ঞান-মন্দিরে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। সেই সময় তাঁকে লেখা চিঠিতে জগদীশচন্দ্র বলছেন:
            "আমি এক আসন্ন সঙ্কট স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আগামী এক বছরের মধ্যে ব্রিটিশ সরকার ঘাটতি পূরণের জন্যে নির্বিচারে ব্যয়-সংকোচন নীতি গ্রহণ করবে। সে ব্যয়সংক্ষেপ থেকে বিজ্ঞান-মন্দিরকে রক্ষা করবার জন্যেই ইংল্যান্ড যাত্রা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।"
          ১৯১৯ সালের নভেম্বরে ইংল্যান্ডে পৌঁছলেন জগদীশচন্দ্র। এর আগেই তিনি তাঁর আবিষ্কৃত ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ করার জন্য রয়েল সোসাইটিতে পাঠিয়েছিলেন। সবাই যেন অপেক্ষা করছিলেন জগদীশচন্দ্রের বক্তৃতা শোনার জন্য। রয়্যাল ইন্সটিটিউশান, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সবখানেই বক্তৃতা দেয়ার আমন্ত্রণ পেলেন জগদীশচন্দ্র।
          বিজ্ঞান-মন্দিরে সরকারী অর্থ-সাহায্য যেন অব্যাহত থাকে সেই প্রচেষ্টাতেই মূলত তাঁর ইংল্যান্ডে আসা। তাই তিনি ভারতসচিব মন্টেগুর কাছে এক আবেদনপত্র পেশ করলেন। নিজের এবং বিজ্ঞান-মন্দিরের গবেষণা-কর্ম বোঝানোর জন্য ইন্ডিয়া-অফিসে এক বক্তৃতার আয়োজন করেন। এই বক্তৃতায় সবাই মুগ্ধ হয়ে যান জগদীশচন্দ্রের নতুন আবিষ্কৃত ম্যাগনেটিক ক্রেস্কোগ্রাফের কাজ দেখে।
            গাছের বৃদ্ধির হার শামুকের গতির চেয়েও দুহাজার গুণ কম। একটি সাধারণ গাছ এক সেকেন্ডে এক ইঞ্চির এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ বাড়ে। অর্থাৎ এক লক্ষ সেকেন্ড বা প্রায় আটাশ ঘন্টায় এক ইঞ্চি বাড়ে। এই অতিধীর চলনের গতি লিপিবদ্ধ করার জন্য খুবই সংবেদী যন্ত্রের দরকার যা আবিষ্কার করেছিলেন জগদীশচন্দ্র। ম্যাগনেটিক ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে গাছের বৃদ্ধিকে দশ লক্ষ গুণ বাড়িয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে গাছের বৃদ্ধির সূক্ষ্ম তারতম্য হিসেব করা সহজ হয়। ম্যাগনেটিক ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রের একটি সরল চিত্র নিচে দেয়া হলো।

ম্যাগনেটিক ক্রেস্কোগ্রাফ। S-N, চৌম্বকদন্ডের গোড়ার দিকে গাছ W সংযুক্ত আছে। ঝুলানো আয়না M-এর পেছনে ক্ষুদ্র চৌম্বক তার লাগানো আছে।


এই যন্ত্রে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত অক্ষদন্ডের উপর একটি চুম্বক-শলাকা বসানো আছে। চুম্বক শলাকার ছোট বাহুটি একটি চারাগাছের ডগার সাথে লাগিয়ে দেয়া হয়। চৌম্বক শলাকার সুঁচালো অপর মুখটির সামনে একটি আয়না ঝুলানো। আয়নার পেছনে আড়ভাবে আরেকটি ছোট চুম্বক-তার আটকানো আছে। গাছটির বৃদ্ধি বা সংকোচনের ফলে চৌম্বক-শলাকার মুখটির অতি সামান্য উঠা-নামা ঘটলেও সামনের আয়নাটি অনেকটা ঘুরে যায়। আয়নার প্রতিফলিত আলো চার মিটার দূরে একটি দেয়ালের উপর ফেললে গাছটির বৃদ্ধির গতি দশ লক্ষ গুণ বর্ধিত আকারে প্রকাশ পায়।     
          ইন্ডিয়া অফিসে সবার আগ্রহ দেখে আশান্বিত জগদীশচন্দ্র ডাক্তার নাগকে চিঠি লিখে জানান:
            "বিজ্ঞান-মন্দির সম্পর্কে এখানে ব্যাপক আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত সন্ধ্যায় ভারতসচিব আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে সর্বপ্রকার সাহায্যের আশ্বাস তিনি দিয়ে গেলেন। আমার গবেষণার প্রতি ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানী-সমাজের সপ্রশংস মনোভাবের কথা তিনি তারযোগে ভারত সরকারকে জানিয়ে দেবেন। আমার উপর কর্তৃপক্ষের গভীর আস্থা। এই অবস্থায় তাঁদের কাছে অপব্যয়িত হয় এমন কোন অর্থ চাওয়া সমীচীন হবে না। আমি নিজেকে প্রতিটি কর্মীর প্রতিভূ মনে করি। আমি চাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গবেষণা কেন্দ্ররূপে এই বিজ্ঞান-মন্দির গড়ে উঠুক, নয়তো এখানেই সব কিছুর পরিসমাপ্তি হোক। সাময়িক সাফল্যের জন্য আমি উন্মুখ নই। বিভিন্ন ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান থেকে প্রস্তাব এসেছে, কিন্তু আবিষ্কারকে পণ্য করে অর্থলাভের কোনও ক্ষুদ্র ইচ্ছা আমার নেই। মন্টেগুর তারবার্তা পেয়ে ভারত সরকার যন্ত্রপাতির জন্য এক লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছেন। সুতরাং অর্থ-সংগ্রহ এখন আর তেমন দুরূহ নয়। সরকারী সাহায্যের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান-মন্দিরের উপর যে দায়িত্ব অর্পিত হচ্ছে, সে সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে। একটা ক্ষণস্থায়ী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে আত্মপ্রসাদ লাভ নয়, বিশুদ্ধ গবেষণার মধ্য দিয়ে অবিস্মরণীয় হওয়াই আমাদের লক্ষ্য।"
          শারীরবিজ্ঞানে অবদান ও ক্রেস্কোগ্রাফ ইত্যাদি যন্ত্রের উদ্ভাবন এবং ভারতীয় বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতির স্বীকৃতিস্বরূপ অ্যাবার্ডিন ইউনিভার্সিটি জগদীশচন্দ্রকে সম্মানসূচক এল এল ডি ডিগ্রি (Doctor of Laws) প্রদান করে ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ।
          ১৯২০ সালের শুরুতে স্যার জগদীশচন্দ্রকে রয়েল সোসাইটির ফেলোশিপ দেয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু কমিটির কয়েকজন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্রের ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রের ফলাফল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
          ফেব্রুয়ারি মাসে রয়্যাল ইন্সটিটিউশানে জগদীশচন্দ্রে বক্তৃতার পর প্রফেসর ওয়ালার টাইম্‌স পত্রিকায় একটি চিঠি লিখে জগদীশের ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রের পরিমাপ সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন যেন অধ্যাপক বসু তাঁর নিজস্ব পরীক্ষাগার ছাড়া অন্য কোথাও এই ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রের ক্ষমতা দেখান।
          জগদীশচন্দ্র এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেস্কোগ্রাফের পরীক্ষা প্রদর্শন করেন ২৩শে এপ্রিল। নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী স্যার ব্র্যাগও এই যন্ত্রের ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
          ১৯২০ সালের ৪ঠা মে রয়েল সোসাইটির বিজ্ঞানীরা জগদীশচন্দ্রের ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রটি আবার পরীক্ষা করে দেখলেন যে জগদীশচন্দ্র তাঁর যন্ত্রের ব্যাপারে কিছুই বাড়িয়ে বলেননি। বিখ্যাত নেচার পত্রিকা ৬ই মে এব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করে মন্তব্য করে যে, "ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রে উদ্ভিদ-দেহের বৃদ্ধি দশ লক্ষ থেকে কোটিগুণ বর্ধিত আকারে নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হয় - এই বিষয়ে আর সংশয়ের অবকাশ নেই।"
          রয়েল সোসাইটির ফেলো হবার পথে আর কোন বাধা রইলো না জগদীশচন্দ্রের। ১৯২০ সালের ১৩ই মে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়ে চিঠি পাঠানো হয় তাঁকে। ২০ মে ১৯২০ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে রয়েল সোসাইটির স্মারক বইতে স্বাক্ষর করতে হবে জগদীশচন্দ্রকে।
          সেদিন (২০/৫/১৯২০) লন্ডন টাইম্‌স একটা বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে জগদীশচন্দ্রের এফ আর এস (ফেলো অব দি রয়েল সোসাইটি) হওয়া উপলক্ষে। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়:
          "আজ আনুষ্ঠানিকভাবে জগদীশচন্দ্র রয়্যাল সোসাইটির সদস্যপদে নির্বাচিত হবেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কৃতিত্বের জন্যে ভারতীয় হিসেবে তিনিই এই সম্মানের দ্বিতীয় অধিকারী হলেন। ইতিপূর্বে ১৯১৭ সালে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক শ্রীনিবাস রামানুজন রয়্যাল সোসাইটির সদস্যপদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রায় ১৯ বছর আগে জগদীশচন্দ্র রয়্যাল সোসাইটিতে উদ্ভিদের চেতনা সম্পর্কে প্রথম গবেষণা-পত্র পাঠিয়েছিলেন। সেটা অপ্রকাশিত থাকে। বহু বছরের নিরবচ্ছিন্ন একাগ্র চেষ্টায় তথ্যানুসন্ধানের নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। জগদীশচন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কৃতিত্বকে পূর্ণ-স্বীকৃতি দানে রয়্যাল সোসাইটির এই যে দীর্ঘ বিলম্ব, তার পিছনে জাতিভেদের কোন সঙ্কীর্ণ প্রশ্ন নেই। তাঁর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রকৃতি ও মূল্য নির্ণয় সম্বন্ধে আলোচনা হয়েছে, তাকে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের বিরোধ স্পর্শ করেনি।"
          রয়েল সোসাইটির অনুষ্ঠান উপলক্ষে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সস্ত্রীক এসেছিলেন প্রফেসর ভাইন্‌স। স্যার ও লেডি বোস তাঁদের সাথে লাঞ্চ করেছেন। অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল সাড়ে চারটায়। প্রফেসর ভাইন্‌স লাঞ্চের পর চলে গেলেন।
          গত কিছুদিন থেকে ভালো করে ঘুম হয়নি জগদীশচন্দ্রের। সেদিন লাঞ্চের পর ঘুমে ঢলে পড়ছিলেন। তাই বাধ্য হয়ে ঘন্টাখানেক ঘুমিয়ে নেবেন ঠিক করলেন। অবলা বললেন চারটার সময় তাঁকে ডেকে দেবেন, তাহলে সাড়ে চারটার মধ্যে বারলিংটন হাউজে পৌঁছতে পারবেন অনুষ্ঠানের জন্য। জগদীশচন্দ্র ঘুমিয়ে পড়ার আগে দেখলেন অবলা তাঁর জন্য অনুষ্ঠানের পোশাক গুছিয়ে রাখছেন।
          কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলেন জানেন না। যখন ঘুম ভাঙলো দেখলেন সাড়ে চারটা বেজে গেছে। অবলাও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, তাই ঠিক সময়ে তাঁকে ডাকতে পারেননি। ঠিক করে রাখা পোশাক-টোশাক পরার সময় নেই। যেভাবে ছিলেন সেভাবেই দ্রুত বেরিয়ে ট্যাক্সি করে বারলিংটন হাউজে পৌঁছতে পৌঁছতে দেখেন অনুষ্ঠান প্রায় শেষের পথে। জগদীশচন্দ্রের ভাষায়:
            "দেখলাম অধ্যাপক ভাইন্‌স উদ্ভ্রান্তের মত ছুটাছুটি করছেন; দ্রুতপদে প্রবেশ করলাম অনুষ্ঠান-কক্ষে। জনসম্মেলন আমার সম্বর্ধনায় মুখর হয়ে উঠলো। আমাকে স্মারক-গ্রন্থে স্বাক্ষর দিতে হবে, তখন খেয়াল হলো চশমা ফেলে এসেছি। ভগবান জানেন সেদিন কোথায় কী ভাবে স্বাক্ষর করেছিলাম।"
          এফ-আর-এস হবার পর স্বাভাবিকভাবেই স্যার জে সি বোসের গুরুত্ব আরো বেড়ে গেলো। কিন্তু ভারত সরকার তখনো তাঁকে প্রতিশ্রুত অর্থ-সাহায্য মঞ্জুর করেনি। ভারতে যে কর্মকর্তার ওপর ভারতসচিব মন্টেগু এ সংক্রান্ত কাজ চূড়ান্ত করার ভার দিয়েছিলেন তিনি হয়তো কোন কারণে চাননি যে বিজ্ঞান-মন্দির কোন সাহায্য পাক। তাই তিনি অহেতুক দেরি করছিলেন ফাইল পাঠাতে। জগদীশচন্দ্র জানেন লন্ডন থেকে এই কাজ শেষ না করে ভারতে গেলে কোন কাজই আর এগোবে না।
          ভারতসচিব মন্টেগুর কাছে রিপোর্ট এসেছে যে ভারতের বর্তমান শিক্ষা-কমিশন সুপারিশ করেছে যেন বসু বিজ্ঞান-মন্দিরের তত্ত্বাবধানের ভার বাংলা প্রদেশের একজন দায়িত্বসম্পন্ন মন্ত্রীর হাতে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারী শিক্ষানীতির নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। মন্টেগু ভালো করেই জানেন যে, কোন প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে চলছে দেখলেই সরকারি আমলারা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চান এবং প্রতিষ্ঠানটিকে লেজে গোবরে করে ফেলার আগ-পর্যন্ত থামেন না। কিন্তু বিজ্ঞান-মন্দিরের ক্ষেত্রে তিনি তা হতে দেবেন না। তিনি বেশ কঠোর ভাষায় প্রাদেশিক সরকারকে চিঠি দিলেন অবিলম্বে বিজ্ঞান-মন্দিরের জন্য বছরে এক লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ দেয়ার জন্য। তিনি এটাও বললেন যে:
          "স্যার জগদীশচন্দ্র বসু নিজে এই বিজ্ঞান-মন্দিরের জন্য প্রায় ছ'লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। নিয়মিত বা এককালীন সাহায্য হিসেবে সরকার আজ পর্যন্ত যত টাকা মঞ্জুর করেছেন, অধ্যাপক বসুর একক দান তার চেয়ে বেশি। রয়্যাল সোসাইটির সদস্যপদে নির্বাচনের মধ্যেই তাঁর কৃতিত্বের চূড়ান্ত মূল্যায়ন হয়ে গেছে। ... এখানকার গবেষণা সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীনে নেওয়ার কোন রকম পরিকল্পনা আমি সমর্থন করি না।"
          ভারতসচিব মন্টেগুর আদেশে ভারত সরকারের শিক্ষা-বিভাগ বসু-বিজ্ঞান-মন্দিরের জন্য বছরে এক লক্ষ টাকা অনুদান মঞ্জুর করেন।
          এই সময় অধ্যাপক প্যাট্রিক গেডিস জগদীশচন্দ্রের জীবন ও কর্মের ওপর ভিত্তি করে জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ করেন। ইংল্যান্ডের লংম্যান্‌স গ্রিন অ্যান্ড কোম্পানি থেকে "An Indian Pioneer of Science: The life and work of Sir Jagadis C. Bose" প্রকাশিত হয়।
          এটাই ছিল জগদীশচন্দ্রের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনী। নিবেদিতা লিখতে চেয়েছিলেন জগদীশের জীবনী। প্যাট্রিক গেডিস নিবেদিতার কাছ থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন জগদীশ সম্পর্কে। প্যাট্রিক গেডিসের এই জীবনী পড়ে জগদীশচন্দ্র সম্পর্কে আরো অনেক বেশি মানুষ জানতে পারলেন। জগদীশচন্দ্রের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার একটি সার্থক মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে এই জীবনী।
          ফ্রান্স, জার্মানি ও ইওরোপের আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়ে ও সম্বর্ধিত হয়ে ১৯২১ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে ফিরলেন জগদীশচন্দ্র। 

No comments:

Post a Comment

Latest Post

Dorothy Crowfoot Hodgkin

  Look closely at the fingers of the person in the picture. Her fingers had not bent in this way due to age; she had been suffering from chr...

Popular Posts