Friday, 17 April 2020

জগদীশচন্দ্র বসু - পর্ব ১৮


প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অবসর

ইওরোপ ও আমেরিকা থেকে ফেরার কয়েকমাস পরেই জগদীশের বয়স হবে ৫৭। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করবেন এটা জানেন সবাই। ভারত-সরকার বুঝতে পেরেছে জগদীশ শুধু ভারত নয়, বিশ্বের সম্পদ। অবসর নেয়ার আগেই ভারত-সরকার বাংলার প্রাদেশিক শিক্ষা-অধিকর্তার কাছে জগদীশচন্দ্রের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধার সুপারিশ করে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে জানানো হয়:
          "বাংলা সরকার ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ২২শে ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে যে সুপারিশ করেছিলেন তার সমর্থনে আমরা নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি -
          (১) ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাস থেকে পাঁচ বছরের জন্য মাসিক দেড় হাজার টাকা বেতনের একটি অস্থায়ী পদে অধ্যাপক বসুকে নিয়োগ।
          (২) এই অস্থায়ী কার্যকালে বার্ষিক অর্থ-সাহায্যের পরিমাণ আঠারো হাজার থেকে চব্বিশ হাজার টাকায় বৃদ্ধি এবং এক-কালীন পঁচিশ হাজার টাকা অর্থ-সাহায্য মঞ্জুর।
          (৩) লর্ড জর্জ হ্যামিল্টন (৫/৫/১৮৯৮) এবং লর্ড এল্‌গিনের (১০/৩/১৮৯৮) সুপারিশ অনুসারে বার্ষিক দু'হাজার টাকা গবেষণাবৃত্তি ও আড়াই হাজার টাকা ভাতা দান।
          (৪) পার্বত্য অঞ্চলে একটি পরীক্ষামূলক উদ্যান রচনা।
          (৫) অধ্যাপক বসুর তিনজন সহকারীকে সরকারী চাকরিতে নিয়োগ ও পাঁচ বছরের জন্য তাঁদের বিদেশে ডেপুটেশনে প্রেরণ।"
          সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ জগদীশচন্দ্রকে লিখলেন:
            "ভারতসচিব আপনার জন্য যে নতুন পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই সংক্রান্ত চিঠি আমি পেয়েছি। তার প্রতিলিপি পাঠালাম। আজ আমার মনে দু'ধরনের অনুভূতি হচ্ছে। আপনার সাথে আমাদের এত বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে তাতে দুঃখ লাগছে। আবার আপনার বৈজ্ঞানিক সাধনায় একান্ত মনোনিবেশ করার যে সুযোগ আপনার সামনে উপস্থিত হয়েছে তার জন্য আনন্দ লাগছে। আপনাকে অভিনন্দন।"
          কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ইমেরিটাস প্রফেসর পদে নিয়োগ করেন। ১৯১৫ সালের ১৫ই ডিসেম্বর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেন জগদীশচন্দ্র।
          অবসর নেয়ার পর আপার সার্কুলার রোডের নিজের বাড়িতে একটি অস্থায়ী গবেষণাগার গড়ে তাঁর গবেষণা চালিয়ে যেতে লাগলেন। লন্ডনের রয়্যাল ইন্সটিটিউটের আদলে একটি বিজ্ঞান গবেষণাগার গড়ে তোলার স্বপ্ন তাঁর অনেকদিনের। এবার সময় এসেছে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজেদের যা আছে সবকিছু দিয়ে একটি বিজ্ঞান-মন্দির স্থাপন করবেন। বিজ্ঞান গবেষণা তাঁর কাছে ঈশ্বরের সাধনা করার মতোই। তাই তাঁর প্রতিষ্ঠান শুধু গবেষণাগার হবে না, হবে বিজ্ঞান-মন্দির। 
          অবসর নেয়ার পর তাঁর ব্যস্ততা আরো বেড়ে গেলো। ১৯১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের লখ্‌নৌ অধিবেশনে অদৃশ্য আলোক বিষয়ে বক্তৃতা দেন। তার কিছুদিন পরেই প্রতিষ্ঠিত হয় বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়। ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাদিবসে উদ্বোধনী বক্তৃতা দেন জগদীশচন্দ্র।
          ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার নাইট উপাধি দেয় জগদীশচন্দ্রকে। তাঁর নামের আগে যোগ হলো স্যার। তিনি হলেন স্যার জগদীশ বোস, আর অবলা হলেন লেডি বোস। 

No comments:

Post a Comment

Latest Post

কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র ও যন্ত্রের লেখাপড়া

  মানুষ যখন থেকে বুঝতে পেরেছে যে তাদের মগজে বুদ্ধি আছে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে বুদ্ধির পরিমাণ এবং তীক্ষ্ণতা বাড়ানো যায় – তখন থেকেই ...

Popular Posts