Wednesday 17 November 2021

ইউজিন বিগনার

 



বিজ্ঞানী ইউজিন বিগনার (Eugene Wigner) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানীদের একজন। পদার্থবিজ্ঞানের অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক আবিষ্কার ঘটেছে তাঁর হাত দিয়ে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিসাম্যতা বা সিমেট্রির তত্ত্ব তাঁর আবিষ্কার। ১৯৩২ সালে নিউট্রন আবিষ্কারের পর পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভেতর যে নিউক্লিয়ার ফোর্স কাজ করে তার অনেক মৌলিক ধর্ম আবিষ্কার করেছেন ইউজিন বিগনার। নিউক্লিয়াসের বাইরে ইলেকট্রনের মধ্যে যে তড়িৎচুম্বকীয় বল কাজ করে তার তুলনায় নিউক্লিয়ার ফোর্স যে কোটি গুণ শক্তিশালী তা বিগনারের আবিষ্কার। আমরা জানি সমধর্মী চার্জ পরস্পর বিকর্ষণ করে। যেমন একটি ইলেকট্রন আরেকটি ইলেকট্রনকে বিকর্ষণ করে। কিন্তু বিগনার আবিষ্কার করলেন যে নিউক্লিয়াসের ভেতর এই ব্যাপারটা খাটে না। নিউক্লিয়ার ফোর্সের আওতায় প্রোটন কিংবা নিউট্রন প্রত্যেকে প্রত্যেককে আকর্ষণ করে। নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার সার্বিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় বিগনারের হাতে। তিনি ছিলেন পৃথিবীর প্রথম নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার। 

ইউজিন বিগনারের জন্ম ১৯০২ সালের ১৭ নভেম্বর হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনা তিনি হাঙ্গেরিতেই করেছেন। ১৯২১ সালে বার্লিনের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ গবেষণা করেন। ১৯২৫ সালে তিনি ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর কয়েক বছর তিনি ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও গবেষণা করেছেন। 

১৯৩০ সালে তিনি আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলোশিপ নিয়ে আমেরিকায় চলে যান। এদিকে ইউরোপে হিটলারের উত্থান ঘটলে ইহুদি হওয়ার কারণে ইউজিন বিগনারের হাঙ্গেরিতে ফেরা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ১৯৩৭ সালে তিনি আমেরিকান নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার পারমাণবিক বোমা প্রকল্পে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। মূলত তিনিই প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে চিঠি লেখার জন্য আইনস্টাইন ও লিও শিলার্ডকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। 

তাঁর বৈজ্ঞানিক অবদানের জন্য তিনি অসংখ্য পুরষ্কার পেয়েছেন। ১৯৬৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। ১৯৪৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদক, ১৯৫০ সালে ফ্রাঙ্কলিন মেডেল, ১৯৫৮ সালে এনরিকো ফার্মি পুরষ্কার, ১৯৫৯ সালে অ্যাটমস ফর পিস পুরষ্কার, ১৯৬১ সালে ম্যাক্স প্ল্যাংক মেডেল, ১৯৬৯ সালে ন্যাশনাল সায়েন্স মেডেল, ১৯৭২ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন পুরষ্কার পান তিনি। 

১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। 


No comments:

Post a Comment

Latest Post

Dorothy Crowfoot Hodgkin

  Look closely at the fingers of the person in the picture. Her fingers had not bent in this way due to age; she had been suffering from chr...

Popular Posts