Saturday 20 November 2021

চন্দ্রগ্রহণ – প্রকৃতির স্বাভাবিক ঘটনা

 



আজকের পূর্ণিমায় আংশিক চন্দ্রগ্রহণ ঘটবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই ঘটনার ভবিষ্যতবাণী করেছেন অনেক বছর আগে। মহাবিশ্ব প্রকৃতির যে নিয়ম মেনে চলে – সেই নিয়মের অনেক কিছুই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, এবং সেই নিয়মের ভিত্তিতেই তাঁরা জানেন কখন সূর্য, পৃথিবী আর চাঁদ ঘুরতে ঘুরতে একই রেখায় চলে আসবে। সূর্যের আলো সরাসরি পৃথিবীর ওপর পড়ে। ফলে যেদিকে চাঁদ আছে সেদিকে পৃথিবীর ত্রিমাত্রিক ছায়া পড়ে। যেহেতু সূর্য পৃথিবীর চেয়ে অনেক বড় সেহেতু পৃথিবীর ছায়ার দু'পাশে অনেক বড় প্রচ্ছায়াও তৈরি হয়। পূর্ণিমার চাঁদ যখন পৃথিবীর ছায়ার মধ্যে থাকে তখন উজ্জ্বল ধবধবে রূপালী চাঁদ লাল হয়ে যায়। চাঁদের আলোর উজ্জ্বলতা কমে গিয়ে এবং পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সাথে আলোর বিচ্ছুরণে এই লাল রঙ তৈরি হয়। পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের সময় পুরো চাঁদটিই পৃথিবীর ছায়ার মধ্যে থাকে। তখন চাঁদ পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়। তারপর চাঁদ আস্তে আস্তে সরে গিয়ে পৃথিবীর প্রচ্ছায়ায় যখন আসে তখন চাঁদ আস্তে আস্তে তার উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে থাকে। এই ঘটনা প্রকৃতির খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত যেমন আমাদের পৃথিবী থেকে দেখা একটি স্বাভাবিক নিত্যদিনের ঘটনা, তেমনিই স্বাভাবিক ঘটনা চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ ইত্যাদি। 

এগুলি কীভাবে ঘটে সেই বৈজ্ঞানিক জ্ঞান মানুষের হয়েছে কমপক্ষে দুই-তিন শ বছর আগে। এখনকার স্কুলের নিচের ক্লাসের শিক্ষার্থীরাও জানে কীভাবে চন্দ্রগ্রহণ হয়, সূর্যগ্রহণ হয়। বিজ্ঞানের বই থেকে তারা এটাও জানে যে পৃথিবী থেকে প্রায় পনের কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সূর্য কিংবা তিন লক্ষ ৮৫ হাজার কিলোমিটার দূরের চাঁদ আমাদের শরীরের উপর কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। এত কিছু জানার পরেও কিছু কিছু মানুষ এমন কিছু বিষয় এখনো বিশ্বাস করে যা আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ মনে হলেও – খুবই ক্ষতিকর কুসংস্কার। 

ধরা যাক বাংলাদেশ ও ভারতের কথা। এখানকার অনেকেই চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়াদাওয়া করে না, ফ্রিজ খালি করে ফেলে, ঘরে রান্না করা কোন খাবার থাকলে তা ফেলে দেয় ইত্যাদি। কিন্তু তাদের অস্বাভাবিক বুদ্ধিতে এটা কিছুতেই ধরা পড়ে না যে সেই সময় যদি খাবার-দাবারের উপর কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে – তা পৃথিবীর সব খাবার-দাবারের উপর পড়বে। নিজের ফ্রিজ খালি করে – পরে দোকানের ফ্রিজের খাবার কিনে আনা তো একই ব্যাপার হলো। 

গ্রহণ চলাকালীন সবচেয়ে বেশি বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেয়া হয় সন্তানসম্ভবা নারীদের উপর। এই সময়ে তাদেরকে ঘুমাতে মানা করে অনেকে। ঘুমালে নাকি সন্তান অন্ধ হয়ে জন্মাবে। এই ঘটনা সত্য হলে পৃথিবীতে কোটি কোটি অন্ধ সন্তানের জন্ম হতো। এই সময় গর্ভবতী নারী যদি কিছু কাটে – তাহলে নাকি সন্তানের শরীরে কাটা দাগ দেখা দেয়। এইসব কথার কোন ভিত্তি নেই। 

মানুষের শরীরের উপর চন্দ্রগ্রহণ সূর্যগ্রহণের কোন প্রভাব নেই। চন্দ্রগ্রহণ খালি চোখেই দেখার মতো একটি সুন্দর প্রাকৃতিক ঘটনা। চাঁদ দেখতে ভালো লাগলে চাঁদে গ্রহণ লাগার দৃশ্য দেখতেও ভালো লাগবে। 


No comments:

Post a Comment

Latest Post

নিউক্লিয়ার শক্তির আবিষ্কার ও ম্যানহ্যাটন প্রকল্প

  “পারমাণবিক বোমার ভয়ানক বিধ্বংসী ক্ষমতা জানা সত্ত্বেও আপনি কেন বোমা তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন?” ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের ‘কাইজো’ ম্য...

Popular Posts