Monday, 12 July 2021

চাঁদে বসবাস: সমস্যা ও সম্ভাবনা

 

***

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চাঁদের বুকে প্রথম পা রেখেছিল পৃথিবীর মানুষ। সেদিন থেকে বদলে যায় চাঁদের ইতিহাস। যে চাঁদ নিয়ে মানুষ এতদিন রচনা করেছে কত রূপকথার গল্প - তার সবকিছু বদলে যায়। নীল আর্মস্ট্রং চাঁদের বুকে প্রথম মানুষ। চাঁদে পা রাখার ঠিক আগের মুহূর্তে লুনার মডিউলের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, "I'm going to step off the LM now. That's one small step for a man, one giant leap for mankind." একজন মানুষের একটি ছোট্ট পদক্ষেপ, কিন্তু সমগ্র মানবজাতির একটি বিশাল উল্লম্ফন। পৃথিবী থেকে চাঁদে মানবজাতির এই বিশাল লাফ দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন গবেষণা করতে হয়েছে, প্রচুর মেধা, শ্রম, অর্থ এবং জীবনের বিনিময়ে এই অর্জন। অ্যাপোলো -১ মিশনের তিনজন নভোচারী প্রাণ দিয়েছেন চাঁদে মানুষের অভিযান সফল করার জন্য। সোভিয়েত ইউনিয়নেও প্রাণ দিয়েছেন একাধিক নভোচারী।

ধরতে গেলে মানুষের চাঁদে যাওয়ার ব্যাপারটা মূলত আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে প্রতিযোগিতার ফসল। আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একে অপরের ওপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য অন্যান্য অনেককিছুর পাশাপাশি মহাকাশ গবেষণায়ও প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল ১৯৪৭ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে। ১৯৪৬ সালে আমেরিকা চাঁদে বেতারতরঙ্গ পাঠায়। সেই তরঙ্গ চাঁদের গায়ে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। তারপর ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক (Sputnik) পাঠায় পৃথিবীর চারপাশে ঘোরার জন্য। পরের বছর আমেরিকা উপগ্রহ এক্সপ্লোরার-১ (Explorer-1) উৎক্ষেপণ করে। আমেরিকার চন্দ্রযান পাইওনিয়ার-১ (Pioneer-1) উৎক্ষেপণে ব্যর্থ হয়। কিন্তু তার পরের বছর সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের লুনা প্রোগ্রামের চন্দ্রযান লুনা-১ চাঁদের পাশ দিয়ে উড়ে যায়, লুনা-২ চাঁদে আছড়ে পড়ে, এবং লুনা-৩ চাঁদের অন্যপিঠের ছবি তুলে আনে। তাতে আমেরিকার জেদ চেপে যায়। ১৯৬১ সালের ২৫ মে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ঘোষণা করেন যে আমেরিকা পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠাবে।

তার আট বছরের মাথায় আমেরিকা সত্যিই চাঁদে মানুষ পাঠাতে সক্ষম হয়। কিন্তু এই আট বছরে এ নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা গবেষণা হয়েছে। গড়ে উঠেছে মহাকাশ ইঞ্জিনিয়ারিং। আমেরিকার খরচ হয়েছে সেই সময়ের প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার। যা বর্তমান হিসেবে প্রায় পনেরো হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় বারো লক্ষ কোটি টাকা।

চাঁদে অভিযানের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল চাঁদের মাটিতে পা রাখা। সেই লক্ষ্যে ১৯৬১ সাল থেকে নিরলস পরিশ্রম করেছেন কয়েক হাজার বিজ্ঞানী, প্রকৌশলীসহ আরো অনেক পেশার বিশেষজ্ঞরা। বিশাল বাজেটের একটা বিরাট কর্মযজ্ঞ আমেরিকার চন্দ্রাভিযান। অ্যাপোলো মিশন ছিল চাঁদে অভিযানের চূড়ান্ত মিশন। অ্যাপোলো মিশনের লক্ষ্য ছিল চাঁদে মানুষ নিয়ে যাওয়া, চাঁদের পিঠে যন্ত্রপাতি স্থাপন করা, চাঁদের ভূতত্ত্ব ও চাঁদের উৎপত্তির সঠিক ইতিহাস জানার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, চাঁদের উপাদান - ধুলো, মাটি, পাথর ইত্যাদি সংগ্রহ করে সেগুলো সাথে নিয়ে পৃথিবীতে নিরাপদে ফিরে আসা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। অ্যাপোলো-১১ মিশনের নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন চাঁদে নামেন ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। তাঁরা চাঁদে অবস্থান করেছিলেন ২১ ঘন্টা ৩৬ মিনিট ২০ সেকেন্ড। কয়েক মাস পরেই ১৯৬৯ সালের ১৯ নভেম্বর চাঁদে নামেন অ্যাপোলো-১২ মিশনের নভোচারী চার্লস কনরাড ও অ্যালেন বিন। তাঁরা চাঁদের পিঠে ৩১ ঘন্টা ৩১ মিনিট ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তৃতীয়বারের মত চাঁদে পা পড়ে মানুষের। অ্যাপোলো-১৪ মিশনের নভোচারী অ্যালেন শেপার্ড ও এডগার মিশেল। তাঁরা চাঁদে ছিলেন ১ দিন ৯ ঘন্টা ৩০ মিনিট। ১৯৭১-এর ৩০ জুলাই অ্যাপোলো-১৫ মিশনের ডেভিড স্কট ও জেমস ইরউইন চাঁদে নামেন। তাঁরা চাঁদে ছিলেন ২ দিন ১৮ ঘন্টা ৫৪ মিনিট। তারপর ১৯৭২ সালের ২১ এপ্রিল পঞ্চম বার চাঁদে নামেন অ্যাপোলো-১৬ মিশনের জন ইয়ং ও চার্লস ডিউক। তাঁরা চাঁদে ছিলেন ২ দিন ২৩ ঘন্টা ২ মিনিট। মানুষ শেষবারের মত চাঁদে নেমেছিল ১৯৭২ সালের ১১ ডিসেম্বর। অ্যাপোলো-১৭ মিশনের ইউজিন কারনান ও হ্যারিসন স্মিট চাঁদে ছিলেন ৩ দিন ২ ঘন্টা ৫৯ মিনিট। মোট ছয়টি মিশনে বারো জন নভোচারী চাঁদে নেমেছেন এবং মোট ১২ দিন ১১ ঘন্টা ৩২ মিনিট চাঁদে থেকেছেন।

তারপর ৪৭ বছর কেটে গেছে। মানুষ এর মধ্যে আর চাঁদে যায়নি সত্য - কিন্তু চাঁদের প্রতি আগ্রহ মোটেও কমে যায়নি। আমেরিকা ছাড়াও আরো অনেক দেশ মহাকাশ প্রকল্পে যোগ দিয়েছে। ১৯৯৪ সালে স্বয়ংক্রিয় স্যাটেলাইট ক্লিমেনটাইন চাঁদের চারপাশে ঘুরে ঘুরে অসংখ্য ছবি তুলে পাঠিয়েছে যা থেকে চাঁদের পূর্ণাঙ্গ ম্যাপ তৈরি হয়েছে। ইওরোপ, জাপান, ভারত, চীন এখন চাঁদে স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে চাঁদে বসতি গড়ার স্বপ্ন দেখছে পৃথিবীর মানুষ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে - চাঁদে কি বাস করা আদৌ সম্ভব?

চাঁদের নভোচারীদের পোশাক দেখেই আমরা বুঝতে পারি চাঁদে নামার সময় ওরকমই আটঘাট বেঁধে নামতে হয় কারণ আমরা পৃথিবীর যে পরিবেশে অভ্যস্ত সেই পরিবেশের কিছুই নেই সেখানে। বাতাস ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। চাঁদের বায়ুমন্ডল বলতে কিছুই নেই। খুব সামান্য পরিমাণে হিলিয়াম, নিয়ন, হাইড্রোজেন আর আর্গনের অস্তিত্ব আছে চাঁদে। কিন্তু হাইড্রোজেন ছাড়া বাকিরা সবাই নিষ্ক্রিয় গ্যাস - ফলে চাঁদে কোন বায়ুমন্ডল গড়ে ওঠেনি। তাছাড়া এই গ্যাসগুলো খুবই হালকা। সেগুলোকে চাঁদের পিঠে ধরে রাখার জন্য জোরালো মাধ্যাকর্ষণ বলের দরকার। কিন্তু চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ বলের পরিমাণ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের ছয় ভাগের এক ভাগ। বায়ুমন্ডল না থাকাতে চাঁদের পরিবেশ মানুষের জন্য মারাত্মক। চাঁদের তাপমাত্রা খুব চরম ভাবাপন্ন। বায়ুমন্ডল না থাকাতে চাঁদের যে অংশে সূর্যের আলো পড়ে সেই অংশে তাপমাত্রা প্রায় ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। আবার যে অংশে সূর্যের আলো ও তাপ থাকে না সেই অংশের তাপমাত্রা খুবই কমে গিয়ে মাইনাস ২৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। চাঁদের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই হিসেবে বলা চলে চাঁদ একটি বিশাল আকৃতির ডিপ ফ্রিজ। ডিপ ফ্রিজে কি কোন কিছু জ্যান্ত থাকতে পারে?

চাঁদের দিন-রাত্রি পৃথিবীর দিন-রাত্রির তুলনায় খুবই দীর্ঘ। চাঁদ নিজের অক্ষের ওপর ঘুরতে ২৮ দিন সময় নেয়। তাই চাঁদের একদিকে ১৪ দিন ধরে একটানা দিনের আলো থাকে, আর অন্যদিকে চৌদ্দ দিন ধরে একটানা রাতের অন্ধকার থাকে। চাঁদের আকাশ কালো। বায়ুমন্ডল নেই বলে সূর্যের আলোর কোন বিচ্ছূরণ ঘটে না। চাঁদের যেখানে সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে সেখানেই শুধু আলো থাকে। বাকি অংশে সেই আলো যায় না। পৃথিবীর আকাশের এক জায়গায় সূর্য থাকলেও বায়ুমন্ডলের কারণে সেই আলো সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু চাঁদে সেটা ঘটে না। চাঁদের কালো আকাশে তারা দেখা যায়। কিন্তু সেই তারার আলো স্থির, পৃথিবীর আকাশের মতো ঝিকমিক করে না।

কিন্তু সবচেয়ে যেটা বড় সমস্যা সেটা হলো মহাজাগতিক তেজস্ক্রিয়তা। চাঁদে মহাজাগতিক তেজষ্ক্রিয়তা অনেক বেশি। বায়ুমন্ডল না থাকার কারণে তেজষ্ক্রিয়তা শোষণ করার কোন উপায় নেই সেখানে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডল আমাদের রক্ষা করে মহাজাগতিক তেজস্ত্রিয়তা থেকে। নভোচারীদের পোশাক ভেদ করেও মহাজাগতিক রশ্মি শরীরে প্রবেশ করে। সেরকম পরিবেশে বেশিদিন থাকলে শরীরের সব ডিএনএ ভেঙে যাবে। পৃথিবীতে বছরে গড় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা যেখানে পাঁচ মিলিসিভার্টের কাছাকাছি, সেখানে চাঁদে বছরে গড় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা প্রায় ৩০০ মিলিসিভার্ট। এই তেজস্ক্রিয়তা থেকে বাঁচার একটা উপায় করতে পারলে বাকি সমস্যাগুলোর সমাধান করতে তেমন কোন অসুবিধা হবে না। পৃথিবীতে তেজস্ক্রিয়তা থেকে বাঁচার জন্য আমরা সীসার প্রলেপযুক্ত অ্যাপ্রন পরি। এই অ্যাপ্রন তেজস্ক্রিয় বিকিরণ শোষণ করে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কমিয়ে দেয়। কিন্তু পৃথিবী থেকে তো চাঁদে টন টন সীসা নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন চাঁদে যা আছে তা দিয়েই সমস্যার সমাধান করতে।

চাঁদের মাটির রাসায়নিক উপাদান পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে সেখানে অক্সিজেন, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন, ম্যাগনেসিয়াম, ও সোডিয়ামের অস্তিত্ব আছে। খুব সামান্য পরিমাণে টাইটানিয়ামও আছে। মোট রাসায়নিক উপাদানের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ অক্সিজেন। কিন্তু এই অক্সিজেনগুলো সব অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের সাথে এমনভাবে সংযুক্ত আছে যে আলাদা অক্সিজেন গ্যাস নেই বললেই চলে। সিলিকনের পরিমাণ শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ, আর অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ শতকরা প্রায় দশ ভাগ। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ তার চেয়ে কম। এখন এই মাটি থেকে অক্সিজেন নিষ্কাশন করার ব্যবস্থা করতে হবে। লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটানিয়াম নিষ্কাশন করার ব্যবস্থা করে সেগুলো দিয়ে ঘরবাড়ি বানানো যাবে। চাঁদের মাটি দিয়েই হতে পারে বাড়ির ছাদ - যার ভেতর দিয়ে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ আসার সময় শোষিত হয়ে মাত্রা কমে গিয়ে সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। বিজ্ঞানীরা রোবট ব্যবহার করে এই কাজগুলো করার পরিকল্পনা করতে শুরু করেছেন।

শুধু বাসযোগ্য বাড়ি হলেই কি বাস করা যায়? অক্সিজেন না হয় আসবে চাঁদের মাটি থেকে। কিন্তু পানি? বিজ্ঞানীরা সে ব্যাপারেও আশাবাদী হতে শুরু করেছেন। ১৯৯৪ সালে স্যাটেলাইট ক্লিমেনটাইনের পাঠানো ছবি থেকে প্রমাণ মিলেছিল যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সামান্য পরিমাণে জমাট বরফ আছে। ১৯৯৮ সালে লুনার প্রস্পেক্টর চাঁদে পৌঁছায়। সেটাও চাঁদে বরফের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। ধারণা করা হচ্ছে চাঁদের উত্তর ও দক্ষিণ উভয় মেরুর গর্তে বরফ থাকতে পারে। জমাট বরফ থেকে পানি পাওয়া তেমন কঠিন কিছু নয়। তাছাড়া মাটিতে অক্সিজেন আর হাইড্রোজেন যেহেতু আছে - পানি তৈরি করতে আর কী লাগে!

পানির পরেই আসে খাদ্যের প্রশ্ন। খাদ্য তৈরি করতে হবে। উদ্ভিদ থেকে আমাদের বেশিরভাগ খাদ্যোপাদান আসে। কিন্তু উদ্ভিদের তো পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের আলো দরকার - বাঁচতে এবং বাড়তে। কিন্তু চাঁদে চৌদ্দদিন একটানা রাত থাকে। কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করতে হবে তার জন্য। বিজ্ঞানীরা চাঁদে সোলার এনার্জি থেকে বিদ্যুৎ তৈরির ব্যবস্থা সহজেই করে ফেলবেন। তবে বেশিরভাগ কাজই করানো হবে রোবটদের দিয়ে। কারণ চাঁদে তো আর হাজার হাজার মানব-কর্মী নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আগামী শতকেই হয়তো দেখা যাবে - পৃথিবীর কিছু মানুষের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে যাবে - চাঁদ। কিন্তু এমন সুন্দর গ্রহ ছেড়ে একটা রুক্ষ উপগ্রহে  কে বাস করতে চাইবে?

____________________________

*** চাঁদে বসবাসের কাল্পনিক ছবি। 

আরো তথ্য:

প্রদীপ দেব, চাঁদের নাম লুনা, মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৭

____________

বিজ্ঞানচিন্তা জুলাই ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত





No comments:

Post a Comment

Latest Post

FLASH Radiotherapy: A New Possibility in Cancer Treatment

  Cancer is the disease before which humanity feels the most helpless. Every year, the number of cancer patients continues to rise at an ala...

Popular Posts