Tuesday 18 May 2021

বাবা - ২

 



আজ আমার বাবার জন্মশতবার্ষিকী। ১৯২১ সালের ১৮ মে তাঁর জন্ম। 

আমাদের ছোটবেলায় এবং বড়বেলাতেও জন্মদিন পালনের কোন রেয়াজ ছিল না। আমাদের কার কখন জন্মদিন তা মনেও থাকতো না। ইউনিভার্সিটি পড়ার সময় জন্মদিনের ব্যাপারটা মাথায় আসে। আমার বাবা খুব উৎসব করে একটা জন্মদিন পালন করতেন। সেটা ছিল তাঁর গুরু অদ্বৈতানন্দের জন্মদিন। শুধু অদ্বৈতানন্দ বললে বাবা খুব অসন্তুষ্ট হতেন। গুরুর ব্যাপারে তিনি খুব স্পর্শকাতর ছিলেন। অনেক বিশেষণ লাগিয়ে বলতে হতো শ্রীমৎ অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ। আর মহারাজদের তো জন্মদিন হয় না, হয় জন্মোৎসব। হ্যাঁ, আমাদের বাড়িতে উৎসব হতো প্রতি বছর ৪ঠা জৈষ্ঠ্য। পরে জেনেছি একই দিনে আমার বাবারও জন্ম। বাবাকে না বললেও - আমরা ভাই-বোনরা ধরে নিতাম ওটা আমার বাবারই জন্মদিন পালন। যদিও বাবাকে কখনোই বলা হয়নি - শুভ জন্মদিন বাবা। এখনকার মতো প্রচলিত ছিল না এই বাক্যগুলি।
    তাঁর আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভালো কোনদিনই ছিল না। কিন্তু তাঁর গুরুদেবের জন্মোৎসবে প্রায় চার-পাঁচ শ মানুষের জন্য পাঁচ রকমের নিরামিষ তরকারির ভোজের ব্যবস্থা তিনি করতেন। আমাদের বাড়িতে জায়গা তেমন ছিল না। বাজারের উপর আমাদের দোতলা বাড়ির নিচের তলায় আমাদের দোকান, দোতলায় আমরা থাকি। ভোজের আয়োজন হতো রাতের বেলা রাস্তার উপর। বেতের আসন বিছিয়ে বসা, আর কলাপাতায় খাওয়া। তখন আমাদের ওদিকের রাস্তায় রিকশা আর ঠেলাগাড়ি ছাড়া অন্য কোন গাড়ি চলতো না। যখন থেকে রাস্তার ব্যস্ততা বেড়ে গেল, বাজার বড় হলো, অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইন চালু হলো - এই উৎসব স্থানান্তরিত হলো কালিবাড়িতে। আরো পরে বাবা নিজেই এটা বন্ধ করে দিলেন। তিনি তাঁর সন্তানদের উপর কোন ধরনের কাজ চাপিয়ে দিয়ে যাননি। 
    তাঁর সাথে আমার শেষ দেখা হয় ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে। আমি বাড়ি থেকে চলে আসার সময় তিনি আমাকে বুকে টেনে নিয়ে বলেছিলেন - "তোর সাথে আর দেখা হবে কি না জানি না। তবে তুই আমাকে দেখতেই থাকবি। আমি তোর সাথে সাথেই থাকবো।" 
    বাবা মাঝে মাঝেই অনেক দার্শনিক কথাবার্তা বলতেন। এটাও সেরকম একটা কথা বলে ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দিনে দিনে বুঝতে পারছি - তাঁর কথাগুলি ক্রমশ সত্যি হয়ে যাচ্ছে। যতই বয়স বাড়ছে আমার চেহারা আমার বাবার মতো হয়ে যাচ্ছে। আয়নার সামনে দাঁড়ালেই তাঁকে দেখা যায়। 

No comments:

Post a Comment

Latest Post

Dorothy Crowfoot Hodgkin

  Look closely at the fingers of the person in the picture. Her fingers had not bent in this way due to age; she had been suffering from chr...

Popular Posts