Monday 4 November 2019

পৃথিবী সূর্যের তৃতীয় গ্রহ - পর্ব ১৫


বর্তমান পৃথিবী

পৃথিবীতে মানুষ প্রজাতির উদ্ভব হয়েছে লক্ষ বছর আগে। কিন্তু মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানে ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে পৃথিবীকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে থেকে। বিজ্ঞানের উৎকর্ষের সাথে সাথে পৃথিবীর বাহ্যিক চেহারার অনেক বদল ঘটে চলেছে অবিরাম।  কিন্তু পৃথিবীর প্রকৃতিকে আমরা এখনো পুরোটা জয় করতে পারিনি। মানুষ নিজেকে পৃথিবীর মালিক মনে করলেও পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ এখনো পুরোপুরি মানুষের হাতে আসেনি। মানুষ এখনো বেশিরভাগ প্রাকৃতিক ঘটনার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ঝড় বৃষ্টি বজ্রপাত টর্নেডো সাইক্লোন ভূমিকম্প আগ্নেয়গিরি ইত্যাদি এখনো মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে অসংখ্য কৃত্রিম উপগ্রহ আজ পৃথিবীর উপর নজর রাখছে। পৃথিবীর আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে। কোন ভৌগোলিক পরিবর্তন হতে শুরু করলে তা বলে দিচ্ছে। কোথাও ক্ষতির আশংকা দেখা দিলে আমরা জেনে যাচ্ছি কী করতে হবে ইত্যাদি। কিন্তু সূর্যের তৃতীয় গ্রহ প্রাকৃতিক পৃথিবী এখনো প্রকৃতির নিয়মেই চলছে।
            পৃথিবীর ভেতরের তাপ-শক্তিকে হিসেবে ধরলে পৃথিবীকে একটি বড় তাপ-ইঞ্জিন বলা যেতে পারে। বায়ুমন্ডল এবং সমুদ্রের তাপের কিছু অংশ সূর্য থেকে আসে। কিন্তু পৃথিবীর ভেতরটা এখনো জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড। সাড়ে চারশ কোটি বছর ধরে ঠান্ডা হতে হতেও কিন্তু পৃথিবী এখনো পুরোপুরি ঠান্ডা হয়নি। বাইরের আবরণ ঠান্ডা হয়ে শক্ত খোলসের মতো হয়েছে পৃথিবীর চারদিকে। এই আবরণটা তাপ-নিরোধক হিসেবেও কাজ করে। ফলে ভেতরের তাপমাত্রা কমার বদলে ক্রমে বেড়েও চলেছে। ভেতরের গলিত লোহার তাপমাত্রা বেড়েও যাচ্ছে। ভেতরের লোহার আয়তন প্রতি সেকেন্ডে একশ' টন হারে বেড়ে যাচ্ছে। যে তাপ সেখানে উৎপন্ন হচ্ছে তা বের হয়ে যেতে হবে। কিন্তু তা ঠিকমতো বের হতে পারছে না। কারণ চারপাশের পাথর তাপ নিরোধক। যদিও পৃথিবীর পাথুরে ম্যান্টেল পুরু এবং শক্ত কিন্তু তাতেও পরিচলন ঘটে। আগ্নেয়গিরির লাভার মাধ্যমে এটা ভেতরের তাপ কিছুটা বের করে দেয়। লাভার স্রোত, ভূমিকম্প ইত্যাদির ফলে একদিকে পর্বত যেমন সৃষ্টি হচ্ছে  - আবার মাধ্যাকর্ষণের টানে এবং জলবায়ুর কারণে আস্তে আস্তে ধুয়ে ধুয়ে গলে গলে বা উড়ে উড়ে একটু একটু করে সব গিয়ে সমুদ্রে মিশছে। কোন এক সময় আবার এগুলো উঠে যাবে পাহাড়-পর্বত হয়ে অন্য কোথাও - অন্য কোনখানে।
            এভাবে অনবরত পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবী। নতুন পদার্থ যোগ হচ্ছে বাইরের আবরণৎ এবং পুরনো পদার্থের জায়গা দখল করছে। অনেকটা আমাদের শরীরের চামড়া ও অন্যান্য অঙ্গের কোষের মত। নতুন কোষ যেমন পুরনো কোষের জায়গা দখল করছে সেরকম। পৃথিবীর কয়েকটি মৌলিক পরিবর্তনের দিকে মানুষ আজ সবসময় খেয়াল রাখছে।



সময়ের পরিবর্তন

পৃথিবীতে প্রাপ্ত জীবাশ্মের  দৈনিক বৃদ্ধির হারের সাথে বর্তমানের বৃদ্ধির হার দেখে হিসেব করে বের করা হয়েছে যে ১৮ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে ৪০০ দিনে এক বছর হতো। মানে তখন ২২ ঘন্টায় এক দিন হতো। অর্থাৎ পৃথিবী তখন নিজের অক্ষের ওপর ২২ ঘন্টায় একবার ঘুরতো। পৃথিবীর জন্মের পর পর একটা সময়ে ১৫ ঘন্টায় একবার ঘুরতো নিজের অক্ষের ওপর। এখন আমাদের ২৪ ঘন্টায় এক দিন হয় আর বছরে ৩৬৫.২৫৬ দিন। ভগ্নাংশকে ঠিক করার জন্য চার বছরে এক দিন যোগ করা হয়। প্রতি চার বছরে এক বছর হয় ৩৬৬ দিন। সেই বছরকে লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ বলা হয়। নিজের অক্ষের ওপর পৃথিবীর গতি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ। চাঁদের টানে পৃথিবীর গতি কিছুটা হলেও কমে যাচ্ছে। আরো কমে যাচ্ছে পৃথিবীর কেন্দ্রের প্রবাহের কারণে।  হিসেব করে দেখা গেছে প্রতি একশ' বছরে পৃথিবী ১.৪ মিলিসেকেন্ড আস্তে ঘুরছে।  তার মানে প্রতি ৭১,৪২৮ বছরে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য এক সেকেন্ড করে বাড়ছে।





পৃথিবীর দিন-রাত্রি

পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর চব্বিশ ঘন্টায় এক বার ঘুরে আসে। এই ঘূর্ণনের ফলেই পৃথিবীতে সূর্যোদয় সূর্যাস্ত সকাল দুপুর দিন রাত হয়। আমরা জানি যে সূর্য সবসময়েই আকাশে থাকে - কিন্তু যেহেতু পৃথিবী পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে ঘুরতে থাকে সেহেতু আমরা মনে করি সূর্যই পূর্ব দিক থেকে আস্তে আস্তে পশ্চিম দিকে ঘুরে যাচ্ছে। তারপর পৃথিবীতে আমরা যেখানে আছি সেই দিকটা যখন সূর্যের অন্যদিকে চলে যায় - তখন রাত হয়ে যায়। হিসেব করলে দেখা যায় - বাংলাদেশে যখন সোমবার সকাল আটটা তখন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে দুপুর একটা, লন্ডনে তখন মাত্র মধ্যরাত পেরিয়ে রাত দুটা, নিউইয়র্কে তখনো রবিবারের রাত।
            পৃথিবীর অক্ষ উলম্ব থেকে প্রায় সাড়ে তেইশ ডিগ্রি কোণে ঝুঁকে থাকে বলে পৃথিবীর সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় প্রতিদিনই একটু একটু করে বদলে যায়। অক্ষের এই ঝুঁকে থাকার কারণে যখন উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে ঝোঁকে তখন উত্তর মেরুতে সবসময় সূর্য দেখা যায়। তখন সেখানে অনেকদিন সূর্যাস্ত হয় না। মানে সেখানে সারা মাস শুধু দিন আর দিন। আবার একই সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে দূরে সরে যায়। ফলে দক্ষিণ মেরুতে সেই সময় অনেকদিন সূর্যোদয় হয় না। তখন সেখানে কেবল রাত আর রাত। 

No comments:

Post a Comment

Latest Post

বিজ্ঞানী গীতাঞ্জলি রাও

  পানি-দূষণের মাত্রা নির্ধারণের দ্রুততম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ‘টেথিস’ উদ্ভাবন করে গীতাঞ্জলি রাও যখন   ২০১৭ সালে আমেরিকার শ্রেষ্ঠ তরুণ বিজ্ঞানীর শ...

Popular Posts