Sunday, 5 May 2019

ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন -চতুর্ত্রিংশ পর্ব (শেষ পর্ব)



০৯ আগস্ট ১৯৯৮ রবিবার
ইয়ারা নদীর তীরে

আজ ঠিক এক মাস হলো মেলবোর্নে এসেছি। দুপুর থেকেই ঘুরছি ইয়ারার তীরে। এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। প্রিন্সেস ব্রিজের নিচে পায়ে হাঁটা আর সাইকেলে চড়ার যে রাস্তাটি চলে গেছে পূর্বে এম-সি-জি আর পশ্চিমে ক্রাউন ক্যাসিনোর দিকে, তার পাশে স্টিল ও পাথরের বাঁধানো যে সিঁড়িটি ঘুরে ঘুরে উঠে গেছে উপরে ব্রিজের সমতলে- সেই সিঁড়ির নিচে সুন্দর বসার জায়গা আছে। ভিক্টোরিয়ান ধাচের সোনালী-রূপালী কারুকার্যখচিত লাইটপোস্ট থেকে আলো এসে পড়েছে এখানে। কয়েক হাত দূরেই তিরতির করে বয়ে যাচ্ছে ইয়ারার ঘোলা-সবুজ জল। বিকেলে যখন ব্রিজের নিচের ওপেন মার্কেটে ঘুরছিলাম তখন একজন শিল্পীকে দেখেছি এখানে বসে ছবি আঁকতে। শিল্পী চলে গেছেন অনেকক্ষণ। এখন আমি এখানে বসে লিখছি তোমাকে।
            ঘুম থেকে উঠেছি আজ অনেক দেরিতে। কাল রাতে ঘুমাতে দেরি হয়েছে অনেক। কতবার যে চিঠিগুলো পড়েছি। পড়তে পড়তে মনে হয়েছে এই তো কত কাছে সবাই। সবারই চিন্তা আমি কী খাচ্ছি, কীভাবে থাকছি, ঠিকমত ঘুমাচ্ছি কি না, নিজের যত্ন করছি কি না। হায়রে মানুষের মন। প্রিয়জন চোখের আড়াল হলেই দুঃশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়। স্নেহ-ভালবাসার সাথে দুঃশ্চিন্তা সমানুপাতিক।
            বাথরুমে যাবার জন্য রুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম লিও বেরোচ্ছেন টয়লেট থেকে। লিও ফিলের নতুন ভাড়াটে। ডেভিড চলে যাবার সাথে সাথে তার রুমটা ভাড়া দিয়ে ফেলেছে ফিল। কাল রাতে হঠাৎ লিওকে দেখে চমকে উঠেছিলাম। রান্নাঘরের দরজা খুলে দেখি এই অচেনা চায়নিজ টেবিলে জিনিসপত্র ছড়িয়ে রান্নার আয়োজন করছেন। আমাকে দেখে খুব একটা ভাবান্তর হলো না চায়নিজের। বড় বড় ফ্রেমের মোটা চশমাপরা চোখ তুলে তাকালেন আমার দিকে, কিন্তু কিছু বললেন না।
            আমি বললাম, হ্যালো। মুভ্‌ড ইন টুডে? (বলা উচিত ছিল টু-ডাই)। তিনি গগগোগো করে গলার ভেতর থেকে এক ধরণের শব্দ করলেন যাকে ইংরেজি বলা যাবে না কিছুতেই। বুঝলাম এই লোকের সাথে কথা বলতে গেলে খবর আছে। তবে এরকম একজন দুর্বল-ইংরেজির লোক কাছে পেয়ে নিজেকে বেশ বাহাদুর মনে হলো। ডিম সিদ্ধ করতে করতে কিছুক্ষণ ইংরেজি জাহির করলাম। জানলাম তাঁর নাম লিও- সহজ কমন চাইনিজ নাম। কিন্তু আমার নাম তিনি কিছুতেই উচ্চারণ করতে পারেন না। অনেক কসরৎ করার পর তাঁর মুখে আমার নাম দাঁড়ালো ফাডি। নাম নিয়ে খুঁতখুঁতানি নেই আমার। এই যে সবাই প্রাডিব বলে ডাকে তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। এশিয়ানরা নামের উচ্চারণ নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায় না। চায়নিজ বা ভিয়েতনামিজ   নাম শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে হলে আমার নিজেরই বারোটা বেজে যাবে।
            লিওর সাথে চোখাচোখি হতেই বললাম, গুড মর্নিং লিও। লিও বললেন, মনিং ফাডি। চায়নিজরা স্বল্প-স্বরের উচ্চারণ করতে পারে না কিছুতেই। তাই মর্নিং হয়ে গেছে মনিং
            টয়লেটে ঢুকে খেয়াল করলাম দেয়ালে আরো দুটো নতুন পোস্টার যোগ হয়েছে। এগুলো তাহলে ফিলের কাজ! আমি ভেবেছিলাম ডেভিডের তারুণ্যের বিকৃতি। আমার ভাবনায় ভুল ছিল। এদেশের তরুণদের মধ্যে এসব বিকৃতি খুব একটা দেখা যায় না। এসব বিকৃতি বেশি দেখা যায় ফিলের মত বুড়োদের মধ্যে। তবে আশ্চর্য এদের সংস্কৃতি। নিজের ছেলে আর ছেলের-প্রেমিকা যে টয়লেট ব্যবহার করে বুড়োটা সেখানেই এরকম আদিম ছবি লাগিয়ে রাখে! জানি না তার বেডরুমের অবস্থা কী।
            পৌনে বারোটা বেজে গেলো ঘর থেকে বেরোতে। বিল্ডিং-এর সামনের লন পেরিয়ে বাচ্চাদের খেলার জায়গার মধ্য দিয়ে সোজা উঠে এলাম ইউনাইটেড চার্চের সামনে। রবিবারের প্রার্থনা সেরে সামাজিক আলাপ করছেন অনেকে লনে দাঁড়িয়ে।
            প্রাডিব- ডাক শুনে ফিরে তাকালাম। কোট-টাই পরা ফিলকে দেখে একটু অবাক হলাম। একজন আধ-বয়সী মহিলার সাথে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। হাই ফিল বলে জিজ্ঞেস করলাম এনিথিং স্পেশাল টু-ডে?
            ইট্‌স সান-ডে মাইট। ওয়েন্ট টু চার্চ
            ও-কে
            শি ইজ মার্গারিটা- সাথের মহিলার কাঁধে হাত রেখে বললেন ফিল। ক্যাথির জায়গায় এখন মার্গারিটা। সেজেগুজে চার্চে আসার আসল উদ্দেশ্য তাহলে এই।
            হ্যালো মার্গারিটা
            হ্যালো
মার্গারিটার মুখে উগ্র প্রসাধন। ঠোঁটদুটো টকটকে লাল। চর্বি-জমা মুখ লাবণ্যময় করার যত কৌশল জানা আছে সব প্রয়োগ করেছে মার্গারিটা। উচ্চারণে কিছুটা ইতালিয়ান টান। ফিল মার্গারিটার কাঁধ ধরে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে হাসিমুখে বললেন, ইজনট শি বিউটিফুল?
            ফিল যে বহুল ব্যবহৃত সস্তা চাটুকারিতা করছে তা না বোঝার মত বোকা মার্গারিটা নিশ্চয় নন। কিন্তু মানুষের স্বভাব বড় অদ্ভুত। অতি সত্যবাদীও এসব ক্ষেত্রে সোজাসাপ্‌টা কথা বলেন না। মার্গারিটারও উৎসাহ আছে ফিলের ব্যাপারে। তিনি ফিলের গায়ের ওপর হেলে পড়ে বলবেন, ভেরি নটি, ফিল। একেবারে সস্তা মানের বাণিজ্যিক ছবির ডায়ালগ। সেজেগুঁজে চার্চে আসার উদ্দেশ্য তাহলে এই! হাসি চেপে রাখতে না পেরে হো হো করে হাসতে হাসতে বাই বলে চলে এলাম।
            মেলবোর্ন আর্ট সেন্টারের সামনের বারান্দাজুড়ে হস্তশিল্পের মেলা বসেছে আজ। কত রকম হাতের কাজ যে বিক্রি হচ্ছে। একজন হস্তশিল্পী খেঁজুর পাতা কেটে কেটে চোখের সামনে তৈরি করছেন নানারকম ফুল, নৌকা, পাখি। চিত্রশিল্পী ক্যানভাসে দ্রুত তুলি বুলিয়ে আঁকছেন পোট্রেট। অনেক নবীন শিল্পী সাজিয়ে বসেছেন নিজেদের আঁকা ছবি বিক্রির আশায়। সবচেয়ে বেশি ভিড় গয়না আর অলংকারের দোকানে। ভাঙা কাচের টুকরো থেকে কত অবিশ্বাস্য সুন্দর গয়না তৈরি হতে পারে তুমি না দেখলে বুঝতে পারবে না।
            আর্টসেন্টার থেকে অপেরা হলের সামনের লন পেরিয়ে চলে এলাম ইয়ারার দক্ষিণ তীরে। প্যাঁচানো সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলাম। এখানে ভীড় আরো বেশি। এই নিয়ে পরপর চার রবিবার এসেছি এখানে। খেয়াল করে দেখলাম দোকানীরা প্রতি সপ্তাহে একই জায়গায় বসছেন। তাদের দোকানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করা আছে নিশ্চয়। এরকম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের জন্যও ট্রেড-লাইসেন্স নিতে হয়।  
            অনেকক্ষণ ঘুরে ফিরে চারটার দিকে এই সিঁড়ির কাছে এসে বসলাম। খুব কাছেই একজন বৃদ্ধ দোকানী জামা-কাপড় বিক্রি করছেন। একজন তরুণও আছে বৃদ্ধের সাথে। তিন দিকে তিনটি টেবিলে সাজানো শীতের কাপড়, টি-শার্ট, আর বিভিন্ন ফুটবল টিমের লোগো যুক্ত নানা রঙের টুপি, জার্সি, মাফলার। ভীড় কমতে শুরু করেছে, কমে আসছে কোলাহল। বৃদ্ধ আর তাঁর তরুণ সাহায্যকারীর কথোপকথন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি, কিন্তু বুঝতে পারছি না কিছুই। কিছু পরিচিত শব্দ শুনে মনে হচ্ছে ভাষাটা আরবি।
            মানুষের মুখের ভাষা না বুঝলেও অঙ্গভঙ্গি ও অভিব্যক্তি থেকেও অনেক কিছু বোঝা যায়। খেয়াল করে দেখলাম স্বাস্থ্যবান ক্লিন শেভ্‌ড কেতাদুরস্ত তরুণটি খুব রেগে গেছে। হাত পা নেড়ে চোখ-মুখ খিঁচে বৃদ্ধকে শাসাচ্ছে। বৃদ্ধের ছেলে বা কোন নিকটাত্মীয় হবে নিশ্চয়। কর্মচারী হলে মালিককে এরকম শাসানোর প্রশ্ন উঠতো না। আবার উল্টোটাও তো হতে পারে। হতে পারে তরুণটি দোকানের মালিক- বকা দিচ্ছে তার বৃদ্ধ কর্মচারীকে। খুব খারাপ লাগছে বুড়ো মানুষটার জন্য। রোগা-পাতলা শরীর, মুখে তিন-চারদিনের না-কামানো পাকা-দাড়ি। পিঠটা সামান্য বেঁকে গেছে। বৃদ্ধ বয়সে বেঁচে থাকার জন্য কাজ করতে হচ্ছে। হয়তো রিফিউজি হিসেবে এদেশে এসেছেন মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ থেকে। সরকারি সাহায্য যা পান তাতে হয়তো চলে না। ক্ষীণ কন্ঠে বৃদ্ধ ক্রুদ্ধ তরুণকে কিছু বোঝাতে চাইলেন। তরুণ আরো রেগে এক টানে টেবিলের জামাকাপড় ছুড়ে ফেলে হন হন করে হেঁটে চলে গেলো পশ্চিম দিকে। বৃদ্ধ হতভম্বের মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন সেদিকে। তারপর মাথা নিচু করে এলোমেলো জামা-কাপড় গোছাতে শুরু করলেন। আশেপাশের দোকানীদের অনেকে দেখেছে এই দৃশ্য। একজনের মন্তব্য কানে এলো- চিল্ড্রেন্স! দিস ডেজ্‌!- আজকের সন্তানেরা! তবে কি তরুণটি এই বৃদ্ধের ছেলে! হয়তো।
            বৃদ্ধের মাথা নিচু হয়ে যাওয়া দেখে খুব খারাপ লাগছে আমার। বাবার কথা মনে পড়ছে। জীবনে কত কষ্ট তাঁকে করতে হয়েছে। এরকম হাটে-বাজারে জামা-কাপড় বই-পত্র চাল-ডাল বিক্রি করে তিনি আমাদের বড় করেছেন, লেখাপড়া শিখিয়েছেন। আরবি-ভাষী এই বৃদ্ধ বাবার জন্য মনটা কেমন করে উঠলো। ভ্যানের দরজা খুলে জামা-কাপড় গুছিয়ে আস্তে আস্তে ভ্যানে তুলছেন। আশেপাশের অনেক দোকানী ইতোমধ্যেই চলে গেছেন নিজেদের পসরা গুছিয়ে।
            হ্যালো ইয়ংম্যান, ক্যান ইউ গিভ মি এ হ্যান্ড প্লিজ?কাছে এসে মিষ্টি করে হেসে জিজ্ঞেস করলেন বৃদ্ধ দোকানী। আমি নিজে থেকেই তাঁকে সাহায্য করার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু তিনি কী মনে করবেন ভেবে এতক্ষণ কিছু বলিনি। খুশি হয়ে বললাম, অবশ্যই। একটা টেবিলের জামা-কাপড় তিনি ইতোমধ্যেই ভ্যানে তুলে ফেলেছেন। খালি টেবিলটা গুটিয়ে ভ্যানে তোলার জন্য আমার সাহায্য চেয়েছেন। টেবিলটা ভ্যানে তোলার পর জিজ্ঞেস করলাম অন্য টেবিল দুটোর জামা-কাপড় গুছিয়ে দেবো কি-না। বৃদ্ধ খুশি হয়ে বললেন, সো কাইন্ড অব ইউ। দেখিয়ে দিলেন কীভাবে গোছাতে হবে। বেশ ভালো লাগছিল মানুষটার জন্য কিছু একটা করতে পেরে। রাগী তরুণটি তাঁর ছেলে কিনা খুব জানতে ইচ্ছে করছিল। জিজ্ঞেস করলাম, যে ছেলেটা আপনার সাথে রাগ করলো সে কি আপনার ছেলে?
            কিছুটা লজ্জিত হয়ে বৃদ্ধ বললেন, খুব ভালো ছেলে সে। কিছুটা রাগী, তবে খুব ভালো ছেলে। হায়রে অপত্যস্নেহ, সন্তান বাবাকে লাথি মারলেও বাবা সন্তানের বিরুদ্ধে কিছু বলেন না।
            তুমি কি ইন্ডিয়ান? দ্রুত প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন বৃদ্ধ।
            না, আমি বাংলাদেশী
            আমি লেবানিজ
            কতদিন থেকে আছেন মেলবোর্নে?
            সাত বছর। তুমি?
            আজ ঠিক এক মাস হলো
            স্টুডেন্ট?
            হ্যাঁ
            কাজ করো কোথাও?
            এখনো পাইনি
            টুকটাক কথা বলতে বলতে সব জিনিস-পত্র ভ্যানে ঢুকে গেলো। কাজ শেষ। ব্যাকপ্যাক কাঁধে তুলে নিতেই বৃদ্ধ আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, প্লিজ টেক দিস। তাঁর হাতে একটা দশ ডলার ও একটা পাঁচ ডলারের নোট। আমি বললাম, নো, নো, থ্যাংক ইউ। ইউ ডোন্ট নিড টু পে মি
            আমি তোমাকে পারিশ্রমিক দিচ্ছি না। কাজের প্রস্তাব দিচ্ছি। পড়তে এসেছো- ডলার লাগবে না? প্রতি রবিবার এখানে আমাকে সাহায্য করবে। সকাল নটা থেকে বিকেল পাঁচটা। ঘন্টায় সাড়ে সাত ডলার করে  আটঘন্টায় ষাট ডলার পাবে
            একটা কাজের জন্য কতদিন থেকে কত জায়গায় ঘুরছি। সেই অধরা কাজ নিজে এসে ধরা দিলো আজ। কী যে খুশি লাগছে!
            ও-কে? এখনো হাত বাড়িয়ে আছেন বৃদ্ধ।
            ও-কে
            দেন টেক দিস। বাই দি ওয়ে, আমার নাম আজাহার
            ভ্যান চালিয়ে চলে গেলেন বৃদ্ধ আজাহার। আমার হাতের মুঠোয় পনেরো ডলার। মেলবোর্নে আমার প্রথম পারিশ্রমিক।
            তারপর আনন্দ আর উৎসাহের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে এখানে বসে তোমাকে লিখছি। এখন থেকে প্রতি রবিবার সারাদিন এখানেই কাটবে।  তুমি তো জানো এই একমাসে যখনই সময় পেয়েছি কী এক অদ্ভুত টানে চলে এসেছি এই নদীর তীরে। কোন মিল নেই, তবুও মেলবোর্নে ইয়ারাই আমার কর্ণফুলী, আমার দুঃখ-সুখের ইছামতি। 
______________

No comments:

Post a Comment

Latest Post

কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র ও যন্ত্রের লেখাপড়া

  মানুষ যখন থেকে বুঝতে পেরেছে যে তাদের মগজে বুদ্ধি আছে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে বুদ্ধির পরিমাণ এবং তীক্ষ্ণতা বাড়ানো যায় – তখন থেকেই ...

Popular Posts