Wednesday, 1 May 2019

ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন - অষ্টবিংশ পর্ব


০৩ আগস্ট ১৯৯৮ সোমবার

সকাল সাতটায় উঠবো বলে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু এলার্ম বাজার
আগেই উঠতে হলো। এমন কর্কশ ভাবে দরজা নক্‌ করে কেউ? বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দেখি- হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন ফিল। হাতে একটা রসিদ। কাল ডেভিড বলেছিলো যে ফিল ঘরভাড়ার রসিদ দিয়ে দেবে। কিন্তু সেটার জন্য  এত সকালে ঘুম ভাঙিয়ে দেবার কোন দরকার ছিল?
            গুড মর্নিং প্রাডিব
            মর্নিং ফিল। হোয়াট হ্যাপেন?
            আজ ঘরভাড়া দেবার দিন, মনে নেই?
            কী বলছেন! ঘরভাড়া! কাল সকালেই তো ডেভিড এসে নিয়ে গেলো। আপনাকে বলেনি?
            ডেভিড? ডেভিডকে কেন ভাড়া দেবে তুমি? এটা কি ডেভিডের ফ্ল্যাট?
            না, আপনার ফ্ল্যাট। ডেভিড আপনার ছেলে। তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করুন আমার কাছ থেকে একশ ডলার নিয়ে গেছে কি না
            ডেভিডকে জিজ্ঞেস করবো? এসো আমার সঙ্গে।
            ফিলের পেছন পেছন গেলাম বাথরুমের পাশে ডেভিডের রুমের দিকে। নক না করেই সশব্দে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন ফিল।
            এসো দেখো, কোথায় ডেভিড?
            ঘর ফাঁকা। কোথাও কেউ নেই। ঘরের মাঝখানে একটা খালি বিছানা, এক কোণায় একটা খালি টেবিল আর দুটো চেয়ার। ডেভিড বা জোয়ানার চিহ্নও নেই কোথাও। এত বড় প্রতারণা করলো সে আমার সাথে? মাত্র একশ ডলারের জন্য এমন মিথ্যে কথা বললো? ঘর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবার প্ল্যান নিশ্চয় অনেক দিন আগে থেকেই ছিল তাদের। যাবার আগে ছোট্ট একটা দাও মেরে গেল।
            বোকামী যা হবার হয়ে গেছে। ফিলের সাথে কথা বাড়িয়ে ওটা আর বাড়ানোর কোন মানে হয় না। চুপচাপ একশ ডলার তুলে দিলাম ফিলের হাতে। তিনি রসিদ লিখেই এনেছিলেন।
            দিনটা বড় বিশ্রীভাবে শুরু হলো। খচখচে মন নিয়ে ডিপার্টমেন্টে এলাম। অফিসে ঢোকার সময় দেখলাম কেন্‌ একটা কোকের খালি বোতলে ফুঁ দিয়ে বাজানোর চেষ্টা করছেন। আমাকে দেখে বললেন, ট্রাইয়িং টু ফাইন্ড দি রেজোনেন্স। ক্লাস নিতে যাবার আগে কত রকমের প্রস্তুতি যে নেন তিনি।
            সাড়ে বারোটার দিকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম স্পেন্সার স্ট্রিট স্টেশনে। বিশাল স্টেশন, ইন্টার-স্টেট বাস আর ট্রেন ছাড়ে এখান থেকে। বিশাল বিশাল গ্রে-হাউন্ড বাস- মেলবোর্ন টু সিডনি, মেলবোর্ন টু এডেলেইড, এমনকি ব্রিসবেনও। এয়ারপোর্টে যাবার স্কাই-বাসও এখানে। অনেক লোকজন, ব্যস্ততা। কিন্তু কোথাও হৈ-চৈ চিৎকার চেঁচামেচি নেই। কিছুক্ষণ পরেই আলী সাহেব এলেন। লাগেজ সামলে আমার খামটা নিয়ে দ্রুত উঠে গেলেন স্কাই-বাসে। কালকের মধ্যেই আমার চিঠিগুলো পৌঁছে যাবে বাংলাদেশে।
____________
PART 29


No comments:

Post a Comment

Latest Post

মুহম্মদ নিজাম-এর 'বেগানা পুষ্প'

  বেগানা পুষ্প পড়তে শুরু করার আগেই চোখে পড়ে “সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ” – যেখানে লেখা আছে “অতীব ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল, মারাত্মকভাবে ১৮+, অনুগ্রহপূর্বক...

Popular Posts