রেডিয়াম ভালোবাসা


মাদাম কুরি এবং আইরিন জুলিও-কুরির কাহিনি

রেডিয়াম ভালোবাসা

মাদাম কুরির পরিবারই পৃথিবীর একমাত্র পরিবার - যে পরিবারের সদস্যরা ছয়টি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। মাদাম কুরিই একমাত্র মহিলা যিনি দু’বার নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। তাঁর কন্যা আইরিন কুরিই একমাত্র মানুষ যাঁর মা-বাবা, স্বামী এবং নিজে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।

মাদাম মেরি কুরি, তাঁর স্বামী পিয়ের কুরি, তাঁদের কন্যা আইরিন এবং আইরিনের স্বামী ফ্রেডেরিক জুলিও-কুরির প্রতি আমাদের ঋণের শেষ নেই। আমরা মানে এই পৃথিবীর মানুষ। পৃথিবীতে সবচেয়ে জটিল এবং দুর্জয় রোগ ক্যান্সার। বছরে প্রায় এক কোটি মানুষ মারা যান ক্যান্সারে। বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মানুষের গড়-আয়ু বাড়ছে - একই সাথে বাড়ছে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা। তেজষ্ক্রিয়তা আবিষ্কারের আগেও ক্যান্সার রোগ ছিল - কিন্তু ক্যান্সার চিকিৎসার কোন কার্যকরী পদ্ধতি মানুষের জানা ছিল না। মেরি ও পিয়ের কুরির রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কারের পর তাঁরাই ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিয়াম ব্যবহারের পথ খুলে দেন। তারপর এই তেজষ্ক্রিয় শক্তির হাত ধরে বিজ্ঞানীরা শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি সাধন করেননি - মৌলিক বিজ্ঞানের উন্নতিও ঘটেছে অতি দ্রুত। আমরা জেনেছি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের কথা, নিউক্লিয়াসের উপাদান প্রোটনের কথা, নিউট্রনের কথা এবং ক্রমে ক্রমে আরো সব অতি-পারমাণবিক কণার কথা।

আইরিন কুরি এবং তাঁর স্বামী ফ্রেডেরিক জুলিও-কুরি কৃত্রিম তেজষ্ক্রিয়তা আবিষ্কার করে পথ খুলে দিয়েছেন রেডিও-আইসোটোপ তৈরির। চিকিৎসাবিজ্ঞান, প্রাণরসায়ন, কৃষিবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞানসহ বিজ্ঞানের প্রত্যেকটি শাখায় রেডিও-আইসোটোপ আজ বিরাট ভূমিকা রাখছে। যেকোন নতুন ওষুধ তৈরিতে এবং ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষায় রেডিও-ট্রেসার হিসেবে কৃত্রিম রেডিও-আইসোটোপ ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্যারিসের ‘কুরি ইনস্টিটিউট’ আজ পৃথিবীর সেরা গবেষণা-প্রতিষ্ঠান সমূহের একটি। যে নিরলস সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মেরি কুরিরা বিজ্ঞান সাধনা করেছেন এবং সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছেন তা আমাদের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্যই শিক্ষণীয় এবং উৎসাহব্যঞ্জক।

‘রেডিয়াম ভালোবাসা’ মেরি কুরির পুরো জীবনের কাহিনি নয়। বিজ্ঞান ছাড়াও তাঁর যে নিজস্ব একটা ব্যক্তিগত জীবন ছিল এবং সে জীবনে প্রেম-ভালোবাসার উল্লেখযোগ্য স্থান ছিল - তার সাথে পাঠকের পরিচয় করিয়ে দেয়াই এই বইয়ের মূল উদ্দেশ্য। মেরি কুরির ভালোবাসা তাঁর দেশের জন্য, তাঁর স্বামীর জন্য এবং পরে তাঁর মেয়েদের জন্য। সর্বোপরি তাঁর আবিষ্কৃত রেডিয়ামের জন্য। ভালোবাসার মূল্য তাঁকে দিতে হয়েছে বড় বেশি। নোবেল পুরষ্কার পাবার পরেও পুরুষশাসিত ফরাসি সমাজব্যবস্থায় একাডেমি অব সায়েন্সে জায়গা হয়নি মেরি কুরির। কুৎসা রটিয়ে ফ্রান্স থেকে জোর করে বের করে দিতে চেয়েছিল মেরিকে ফ্রান্সের তথাকথিত ‘সভ্য’ মানুষ।

দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারিয়ে দুটো শিশুকন্যাকে নিজের চেষ্টায় মানুষ করেছেন মেরি। বড় মেয়ে আইরিনকে সাথে নিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে চিকিৎসা-সেবা দিয়েছেন যুদ্ধাহতদের। আইরিনকে বিজ্ঞানের জগতে পথ দেখিয়েছেন মেরি। পরবর্তীতে আইরিন নিজেও পরিণত হয়েছেন বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীতে।

‘রেডিয়াম ভালোবাসা’ মেরি কুরির কাহিনি, আইরিন কুরির কাহিনি, রেডিয়ামের কাহিনি এবং সর্বোপরি ভালোবাসার কাহিনি।

মেরি কুরি

প্রথম পর্ব (পিয়ের কুরি ও মেরি কুরি)
দ্বিতীয় পর্ব (মারিয়া স্ক্লোদভস্কা)

আইরিন কুরি 



No comments:

Post a Comment

Latest Post

Dorothy Crowfoot Hodgkin

  Look closely at the fingers of the person in the picture. Her fingers had not bent in this way due to age; she had been suffering from chr...

Popular Posts