Monday, 30 August 2021

রাদারফোর্ডের জীবনকাল

 



আর্নেস্ট রাদারফোর্ডকে বলা যায় পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানের রাজা। বেতারতরঙ্গ সম্প্রচার ও সংগ্রহের একদম প্রথমদিকের গবেষণা শুরু হয়েছিল যাদের হাত দিয়ে রাদারফোর্ড তাদেরই একজন। হেনরিখ হার্টজ বেতার তরঙ্গ গবেষণার প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন ১৮৮৭ সালে। রাদারফোর্ড বেতারতরঙ্গ প্রেরক (ট্রান্সমিটার) এবং গ্রাহকযন্ত্র (রিসিভার) উদ্ভাবন করেছিলেন ১৮৯৩ সালে। ১৮৯৫ সালে এক্স-রে আবিষ্কৃত হবার পর তিনি তেজস্ক্রিয় বিকিরণের গবেষণায় মনোযোগী হন। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ইলেকট্রন আবিষ্কারে। রাদারফোর্ড আবিষ্কার করেন আলফা, বিটা এবং গামা রেডিয়েশান। পরমাণুর প্রোটন এবং নিউক্লিয়াস রাদারফোর্ডেরই আবিষ্কার। পরমাণুর নিউট্রনও আবিষ্কৃত হয় তাঁর তত্ত্বাবধানে তাঁর ছাত্র চ্যাডউইকের হাতে। আপাদমস্তক পদার্থবিজ্ঞানী রাদারফোর্ড তাঁর আলফা ও বিটা বিকিরণের গবেষণার জন্য নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন রসায়নে। তিনি মনে করতেন রসায়নে তাঁর দক্ষতা খুব বেশি নেই। তাই রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পর তিনি নিজে খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। নিলস বোরের পরমাণুর কোয়ান্টাম মডেল আবিষ্কৃত হয়েছে রাদারফোর্ডের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। পরবর্তীতে রাদারফোর্ডের ছাত্রদের মধ্যে ১১ জন পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।

রাদারফোর্ডের জীবনের কিছু মাইলফলক নিচে তালিকাবদ্ধ করা হলো:

  • ·       ১৮৭১  ৩০ আগস্ট:  নিউজিল্যান্ডের নেলসন রাজ্যের স্প্রিং গ্রোভে (বর্তমানে ব্রাইটওয়াটার) রাদারফোর্ডের জন্ম।
  • ·       ১৮৭৭: তাদের পরিবার স্প্রিং গ্রোভ থেকে ফক্সহিল সাবার্বে চলে যায়।
  • ·       ১৮৭৭ – ১৮৮৩: ফক্সহিল প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া।
  • ·       ১৮৮৩: আবার বাসস্থান পরিবর্তন। মার্লবরো সাউন্ডস-এর হেভলকে চলে যান তাঁরা।
  • ·       ১৮৮৩ – ১৮৮৬: হেভলক স্কুলে লেখাপড়া।
  • ·       ১৮৮৩: ছোটভাই পারসি হুপিং কাশিতে মারা যায়।
  • ·       ১৮৮৬:  বড় দুইভাই হারবার্ট ও চার্লস মার্লবরো সাউন্ডস-এর পানিতে ডুবে মারা যায়।
  • ·       ১৮৮৭: মার্লবরো স্কলারশিপ নিয়ে নেলসন কলেজে ভর্তি হলেন।
  • ·       ১৮৮৭ – ১৮৮৯: নেলসন কলেজে পড়াশোনা।
  • ·       ১৮৮৯: ইউনিভার্সিটি অব নিউজিল্যান্ডের জুনিয়র স্কলারশিপ অর্জন।
  • ·       ১৮৯০ – ১৮৯৪: ইউনিভার্সিটি অব নিউজিল্যান্ডের কেন্টারবারি কলেজে লেখাপড়া।
  • ·       ১৮৯২: ফিলোসফিক্যাল ইন্সটিটিউট অব কেন্টারবারি-তে যোগদান। (বর্তমানে রয়েল সোসাইটি অব নিউজিল্যান্ডের কেন্টারবারি শাখা)।
  • ·       ১৮৯২: বিএ ডিগ্রি অর্জন।
  • ·       ১৮৯৩: প্রথম মৌলিক গবেষণা। উচ্চকম্পাঙ্কে লোহার চৌম্বকীকরণসংক্রান্ত পরীক্ষা। সেকেন্ডের এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে বৈদ্যুতিক সার্কিটের সুইচ অন করার একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন তিনি।
  • ·       ১৮৯৩: এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ডাবল ফার্স্ট ক্লাস অনার্স লাভ করেন তিনি – গণিত ও গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে এবং ভৌতবিজ্ঞানে।
  • ·       ১৮৯৪: রসায়ন ও ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন। উচ্চকম্পাঙ্কের তড়িৎচুম্বক তরঙ্গের পরীক্ষার আরো সম্প্রসারণ। একটি ম্যাগনেটিক ডিটেক্টর উদ্ভাবন করেন যা দিয়ে খুবই স্বল্প মাত্রার বিদ্যুৎ-ও শনাক্ত করা যায়।
  • ·       ১৮৯৪: প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।
  • ·       ১৮৯৫: ‘এক্সিবিশান স্কলারশিপ ১৮৫১’ অর্জন করেন। এই স্কলারশিপ নিয়ে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
  • ·       ১৮৯৫ – ১৮৯৮: কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরিতে গবেষণা।
  • ·       ১৮৯৫: উচ্চকম্পাঙ্কে পদার্থের ডায়ইলেকট্রিক ধর্মাবলী পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ করেন। কম্পাঙ্ক মাপার জন্য নিজের উদ্ভাবিত ডিটেক্টর ব্যবহার করেন।
  • ·       ১৮৯৬: জানুয়ারি মাসে রন্টগেন এক্স-রে আবিষ্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। ফেব্রুয়ারি মাসে রাদারফোর্ড তাঁর উদ্ভাবিত ডিটেক্টর দিয়ে তখনো পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দূর থেকে বেতারতরঙ্গ শনাক্ত করতে সক্ষম হন। মার্চ মাসে হেনরি বেকোয়ারেল তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন। এপ্রিল মাসে স্যার জে জে থমসন গ্যাসের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ-প্রবাহ চালনা করার পরীক্ষণে যোগ দেয়ার জন্য রাদারফোর্ডকে আহ্বান করেন।
  • ·       ১৮৯৭: জে জে থমসন ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন।
  • ·       ১৮৯৮: রাদারফোর্ড আলফা ও বিটা তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন।
  • ·       ১৮৯৮ – ১৯০৭: রাদারফোর্ড কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা ও গবেষণা করেন।
  • ·       ১৮৯৯: তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফলে তেজস্ক্রিয় মৌলের যে ভৌত পরিবর্তন হয় তা আবিষ্কার করেন রাদারফোর্ড।
  • ·       ১৮৯৯: একটি তেজস্ক্রিয় গ্যাস আবিষ্কার করেন রাদারফোর্ড। পরবর্তীতে এই গ্যাসের নাম রাখা হয় র‍্যাডন।
  • ·       ১৯০০: ক্রাইস্টচার্চের মেরি জর্জিনা নিউটনের সাথে বিয়ে হয় আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের।
  • ·       ১৯০০: রয়েল সোসাইটি অব কানাডার ফেলোশিপ অর্জন।
  • ·       ১৯০১: ইউনিভার্সিটি অব নিউজিল্যান্ড থেকে ডিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
  • ·       ১৯০১: কন্যা এইলিনের জন্ম।
  • ·       ১৯০২: তেজস্ক্রিয়তার ফলে পরমাণুর স্তরে কী ধরনের পরিবর্তন হয় তা আবিষ্কার করেন।
  • ·       ১৯০৩: রয়েল সোসাইটি অব লন্ডনের ফেলোশিপ অর্জন।
  • ·       ১৯০৪: রামফোর্ড মেডেল অর্জন।
  • ·       ১৯০৫: তেজস্ক্রিয়তার সূত্র প্রয়োগ করে ভুতত্ত্ববিদ ও পদার্থবিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে পৃথিবীর বয়স হিসেব করেন।
  • ·       ১৯০৭ – ১৯১৯: ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা ও গবেষণা।
  • ·       ১৯০৮: রাদারফোর্ড-গেইগার ডিটেক্টর আবিষ্কার করেন।
  • ·       ১৯০৮: রসায়নে নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেন।
  • ·       ১৯১০: প্রথম গাড়ি কেনেন।
  • ·       ১৯১০: বোন অ্যালিসের মৃত্যু।
  • ·       ১৯১১: পরমাণুর রাদারফোর্ড মডেল আবিষ্কার করেন।
  • ·       ১৯১৪: ব্রিটিশরাজের নাইটহুড অর্জন করেন।
  • ·       ১৯১৪ – ১৯১৮: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
  • ·       ১৯১৫ – ১৯১৭: সাবমেরিন শনাক্তকরণে অ্যাকস্টিক মেথড প্রয়োগ করেন।
  • ·       ১৯১৬: রাদারফোর্ড ও উইলিয়াম ব্র্যাগ সাবমেরিনের শব্দ শনাক্ত করার যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের প্যাটেন্ট লাভ করেন।
  • ·       ১৯১৭: সাবমেরিন প্রতিরোধক কৌশল আমেরিকানদের কাছে ব্যাখ্যা করার জন্য প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন রাদারফোর্ড।
  • ·       ১৯১৭: নাইট্রোজেনকে হাইড্রোজেনে রূপান্তরের পদ্ধতি আবিষ্কার করে পৃথিবীর প্রথম সফল আলকেমিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
  • ·        ১৯১৯ – ১৯৩৭: ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবের পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।
  • ·       ১৯১৯: নিউজিল্যান্ড ইন্সটিটিউটের প্রথম ফেলোশিপ অর্জন করেন। [এই ইন্সটিটিউট পরবর্তীতে রয়েল সোসাইটি অব নিউজিল্যান্ডে রূপান্তরিত হয়।]
  • ·       ১৯২০: নিউট্রনের অস্তিত্বের পূর্বাভাস দেন।
  • ·       ১৯২২: রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সের করেস্পন্ডিং মেম্বার মনোনীত হন।
  • ·       ১৯২৫: রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সের সম্মানিত সদস্য মনোনীত হন।
  • ·       ১৯২৫ – ১৯৩০: রয়েল সোসাইটি অব লন্ডনের প্রেসিডেন্ট।
  • ·       ১৯২৫: ব্রিটিশ সরকারের অর্ডার অব মেরিট অর্জন করেন।
  • ·       ১৯২৮: রাদারফোর্ডের বাবার মৃত্যু।
  • ·       ১৯২৯ – ১৯৩৭:  ডিপার্টমেন্ট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ এর এডভাইজরি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান।
  • ·       ১৯৩০: কন্যা এইলিনের মৃত্যু।
  • ·       ১৯৩১: লর্ড রাদারফোর্ড অব নেলসন – নিউজিল্যান্ড সরকারের খেতাব অর্জন।
  • ·       ১৯৩১ – ১৯৩৩: ইন্সটিটিউট অব ফিজিক্সের প্রেসিডেন্ট।
  • ·       ১৯৩২: রাদারফোর্ডের ছাত্র জেমস চ্যাডউইক নিউট্রন আবিষ্কার করেন।
  • ·       ১৯৩৩ – ১৯৩৭: অ্যাকাডেমিক অ্যাসিস্ট্যান্স কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট।
  • ·       ১৯৩৪: রাদারফোর্ড এবং তাঁর ছাত্র ওলিফ্যান্ট ট্রিটিয়াম ও হিলিয়াম আবিষ্কার করেন।
  • ·       ১৯৩৫: রাদারফোর্ডের মায়ের মৃত্যু।
  • ·       ১৯৩৭: ১৯ অক্টোবর রাদারফোর্ডের মৃত্যু। ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবিতে নিউটন ও লর্ড কেলভিনের সমাধির পাশেই সমাধিস্থ করা হয় রাদারফোর্ডকে। 


No comments:

Post a Comment

Latest Post

কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র ও যন্ত্রের লেখাপড়া

  মানুষ যখন থেকে বুঝতে পেরেছে যে তাদের মগজে বুদ্ধি আছে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে বুদ্ধির পরিমাণ এবং তীক্ষ্ণতা বাড়ানো যায় – তখন থেকেই ...

Popular Posts