পঞ্চম
অধ্যায়
গ্রহের গতি সম্পর্কিত কেপ্লারের সূত্র
গ্রহগুলোকে
ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করতে করতে জার্মান বিজ্ঞানী জোহানেস্ কেপলার (Johannes
Kepler) সৌরজগতের গ্রহগুলোর কক্ষপথ, কক্ষপথে গ্রহের গতি,
এবং মোট ঘূর্ণনকাল সম্পর্কিত তিনটি যুগান্তকারী সূত্র প্রকাশ করেন। প্রথম দুইটি
সূত্র প্রকাশ করেন ১৬০৯ সালে এবং তৃতীয় সূত্রটি প্রকাশ করেন ১৬১৯ সালে। এই
সূত্রগুলি প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের গ্রহগুলোর অনেক দরকারি তথ্য হিসেব করে
বের করেছেন। দেখা যাক কেপ্লারের এই তিনটি সূত্র কী কী।
কেপ্লারের প্রথম সূত্র: উপবৃত্তাকার কক্ষপথের সূত্র
(Law of Elliptic Orbits)
প্রত্যেক গ্রহ সূর্যকে
কেন্দ্র করে সূর্যের চারপাশে উপবৃত্তাকার পথে ঘুরে।
আমরা
জানি বৃত্তের একটি মাত্র কেন্দ্র থাকে, কিন্তু উপবৃত্তের দুটো কেন্দ্র থাকে। এই
কেন্দ্র দুটোকে বলে ফোকাসবিন্দু। এই দুটো ফোকাসবিন্দুর যে কোন একটিতে সূর্যকে রেখে
গ্রহগুলো সূর্যের চার পাশে উপবৃত্তাকার পথে ঘুরে। এই ফোকাসবিন্দু দুটোর মধ্যে
দূরত্ব যত কম হবে উপবৃত্তটি ততই বৃত্তের মতো হয়ে যাবে। যখন এই দুটো ফোকাসবিন্দুর
মধ্যবর্তী দূরত্ব শূন্য হয়ে যাবে - তখন তারা এক সাথে মিলে গিয়ে একটি বিন্দুতে
পরিণত হয়ে যাবে - এবং সেই বিন্দুটা হবে বৃত্তাকার পথের কেন্দ্র। আর উপবৃত্ত তখন
হয়ে পড়বে পুরোপুরি বৃত্ত। তখন উপবৃত্তের উৎকেন্দ্রিকতা (eccentricity) হয় সবচেয়ে কম (শূন্য)। আবার এই ফোকাসবিন্দু দুটোর মধ্যবর্তী দূরত্ব যত
বাড়তে থাকবে উপবৃত্তটি ততই চ্যাপ্টা হতে থাকবে। তখন উপবৃত্তের উৎকেন্দ্রিকতাও
বাড়তে থাকে।
গ্রহগুলোর মধ্যে বুধের কক্ষপথই সবচেয়ে চ্যাপ্টা। ফলে বুধের উৎকেন্দ্রিকতা সবচেয়ে বেশি। তার ফলে দেখা যায় - বুধ এক সময় সূর্যের খুব কাছে চলে আসে, আবার এক সময় সূর্য থেকে অনেক দূরে চলে যায়। গ্রহ থেকে সূর্যের সবচেয়ে কাছের বিন্দুকে ইংরেজিতে বলে পেরিহেলিয়ন (perihelion) আর বাংলায় বলে অনুসুর বিন্দু। আবার গ্রহ থেকে সূর্যের সবচেয়ে দূরের বিন্দুকে ইংরেজিতে বলে অ্যাপহেলিয়ন (aphelion) আর বাংলায় বলে অপসুর বিন্দু।
কেপলারের দ্বিতীয় সূত্র: সমান ক্ষেত্রফলের সূত্র
(Law of Equal Areas)
সূর্য
ও গ্রহের মধ্যে একটি সরল রেখা টানলে গ্রহের কক্ষপথে সেই সরলরেখাটি সমান সময়ে সমান
ক্ষেত্রফল অতিক্রম করে।
নিচের
চিত্র দেখো। ক্ষেত্রফল-১ = ক্ষেত্রফল-২। সেক্ষেত্রে P1 থেকে P2 পর্যন্ত যেতে যে সময় লাগে, P3 থেকে
P4 পর্যন্ত
যেতে একই সময় লাগবে।
চিত্র 6: গ্রহ সমান সময়ে সমান ক্ষেত্রফল
অতিক্রম করে
কিন্তু
P1 থেকে
P2'র দূরত্ব P3 থেকে P4'র দূরত্বের চেয়ে বেশি। তাই
P1 থেকে
P2 পর্যন্ত
যেতে গ্রহ যে বেগে চলবে P3 থেকে P4 পর্যন্ত যেতে তার চেয়ে অনেক আস্তে চলবে। তাই কক্ষপথে গ্রহের বেগ সব জায়গায়
সমান নয়। গ্রহ যখন সূর্যের কাছাকাছি আসে তখন দ্রুত চলে, আর যখন সূর্য থেকে দূরে
চলে যায় তখন আস্তে চলে।
কেপলারের তৃতীয় সূত্র: পর্যায় কালের সূত্র
(Law of Periods)
যে
গ্রহ সূর্যের যত কাছে থাকে কক্ষপথে সেই গ্রহ তত দ্রুত বেগে চলে। কক্ষপথে কোন
গ্রহের পর্যায় কাল[1] (T)-এর বর্গফল (T2) সূর্য থেকে ঐ গ্রহের গড় দূরত্ব (R)-এর ঘনফল (R3)-এর
সমানুপাতিক।
চিত্র 7: গ্রহের পর্যায়কালের বর্গ সূর্য থেকে
গ্রহের গড় দূরত্বের সমানুপাতিক।
কেপলারের
তৃতীয় সূত্রকে গাণিতিক ভাষায় লিখলে দেখা যায়:
এখানে মনে রাখা দরকার
যে পর্যায় কালের একক হতে হবে বছর, আর গ্রহ থেকে সূর্যের গড় দূরত্বের একক হতে হবে
অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (AU)। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বকে এক অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল
ইউনিট দূরত্ব ধরা হয়। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। সুতরাং 1 AU = 150000000 km. G হলো
নিউটনের মহাকর্ষ ধ্রুবক (G = 6.67408 × 10-11 m3 kg-1 s-2 )। M1
এবং M2 হচ্ছে যথাক্রমে সূর্যের ভর এবং গ্রহের ভর।
কেপ্লারের
সূত্র প্রয়োগ করে শুক্র গ্রহের কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য এবং গতি বিজ্ঞানীরা হিসেব
করেছেন। র্যাডার এবং বিশেষ টেলিস্কোপ ব্যবহার করে শুক্র গ্রহের আরো অনেকগুলো
বৈশিষ্ট্য জানা গেছে। চলো দেখি সেগুলো কী কী।
কিছুটা বুঝেছি । পুরোটা খুব শক্ত এত কঠিন কেন এরা ?
ReplyDeleteকিছুটা বুঝেছি । পুরোটা খুব শক্ত এত কঠিন কেন এরা ?
ReplyDeleteশুক্র গ্রহ কঠিন গ্রহ। বৃহস্পতি গ্রহ বায়বীয়।
Deleteশুক্রের পর শনি আসে । সে তাইলে তরল হবে ?
Deleteশনি গ্রহ তরল ঠিক নয়। কারণ অত কম তাপমাত্রায় তরল কিছু থাকতে পারে না, জমে যায়।
Delete