Thursday, 29 October 2020

যে গ্রহে সূর্য উঠে পশ্চিম দিকে - পর্ব ৮

 



শুক্রে সূর্য উঠে পশ্চিম দিকে

 

পৃথিবীতে আমরা প্রতিদিন পূর্বদিকে সূর্য উঠতে দেখি আর পশ্চিম দিকে সূর্য অস্ত যেতে দেখি। আমাদের মনে হয় যেন সূর্য আকাশপথে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে চলে গিয়ে হারিয়ে গেল দিগন্তে। কিন্তু আসল ব্যাপারটা কী? আমরা জানি সৌরজগতের কেন্দ্রে আছে সূর্য। গ্রহগুলোর গতির সাথে তুলনা করলে সূর্যকে প্রায় স্থির বলা চলে। তার মানে সূর্য তার জায়গাতেই আছে সব সময়। বরং পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর চব্বিশ ঘন্টায় একবার ঘুরে যায় বলে পৃথিবীর যে জায়গায় আমরা থাকি - সেখান থেকে সূর্যের দিক অনবরত বদলে যাচ্ছে। পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে বলেই আমাদের মনে হয় সূর্য পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে চলে যাচ্ছে। এই ব্যাপারটা তুমি খুব সহজেই পরীক্ষা করে দেখতে পারো। মনে করো তুমি ট্রেনে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাচ্ছো। পথে একটা স্টেশনে তোমার ট্রেন থামলো। সেখানে অন্য লাইনে আরেকটি ট্রেন তোমার ট্রেনের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। তুমি সেই ট্রেনের একটি জানালার দিকে তাকিয়ে আছো। এখন যদি তোমার ট্রেনটি চলতে শুরু করে তোমার মনে হবে অন্য ট্রেনটি বিপরীত দিকে চলতে শুরু করেছে। অথচ ঐ ট্রেনটি তখনো স্টেশনে দাঁড়িয়েই আছে।

 

চিত্র 12: শুক্রে সূর্য পশ্চিম দিকে উঠে আর পূর্ব দিকে অস্ত যায়

 

শুক্র গ্রহের ক্ষেত্রে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের ঘটনা ঘটে পৃথিবীর বিপরীত দিকে। শুক্র নিজের অক্ষে ঘুরছে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে। এখন কেউ যদি শুক্র গ্রহে কোন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যকে দেখতে থাকে, তখন তার মনে হবে সূর্য আস্তে আস্তে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে চলে যাচ্ছে। তাই বলা চলে শুক্র গ্রহে সূর্য উঠে পশ্চিম দিকে এবং অস্ত যায় পূর্ব দিকে। কিন্তু মনে রাখা দরকার পৃথিবীতে যেমন প্রতি চব্বিশ ঘন্টায় এক বার সূর্য উঠে এবং একবার অস্ত যায়, শুক্র গ্রহে এক বার সূর্য উঠার পর আবার সূর্য উঠতে সময় লাগে 243 দিন।


শুক্রে বছরের চেয়ে দিন বড়

পৃথিবীতে আমরা বছরের হিসাব করি সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর মোট কতদিন লাগে তার হিসেবে। সেরকম শুক্রেরও এক বছর হলো সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে তার যত দিন লাগে। সূর্যের চারপাশে এক বার ঘুরে আসতে শুক্রের লাগে 225 দিন। (এই দিন কিন্তু পৃথিবীর দিন, অর্থাৎ 1 দিন = 24 ঘন্টা)। অর্থাৎ শুক্রে 225 দিনে এক বছর।

          দিনের হিসেব আমরা করি নিজের অক্ষের উপর এক বার ঘুরে আসতে আমাদের গ্রহের কত সময় লাগে তার ভিত্তিতে। পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর চব্বিশ ঘন্টায় একবার ঘুরে আসে। তাই চব্বিশ ঘন্টায় পৃথিবীর এক দিন। শুক্রের ক্ষেত্রে নিজের অক্ষের উপর একবার ঘুরতে সময় লাগে পৃথিবীর 243 দিন। অর্থাৎ শুক্রের এক দিন সমান পৃথিবীর 243 দিন। তাহলে দেখা যাচ্ছে শুক্রের দিন শুক্রের বছরের চেয়ে বড়।

 

শুক্রের অভিকর্ষ ত্বরণ 

শুক্রের উপরের তলে অভিকর্ষ ত্বরণের (acceleration due to gravity) মান 8.87 মিটার/বর্গ সেকেন্ড। এই মান পৃথিবীর অভিকর্ষ ত্বরণের 90%। তার মানে পৃথিবীতে তোমার ওজন[1] যদি 400 নিউটন হয়, শুক্রে তোমার ওজন হবে 360 নিউটন। আমাদের আবদুর রহিম উচ্চলাফ দিয়ে পৃথিবীর ভূমি থেকে প্রায় দুই মিটার লাফাতে পারে। সে যদি শুক্রের ভূমি থেকে উচ্চলাফ দেয় তাহলে পৃথিবীর 1/0.9 = 1.11 গুণ অর্থাৎ 2.22 মিটার লাফাতে পারবে।

 

শুক্রের অক্ষের কৌণিক নতি

গ্রহগুলো নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যের চারদিকে ঘুরে। আবার নিজের অক্ষের চারপাশেও ঘুরে। কোন গ্রহ যদি তার কক্ষপথের তলের উপর লম্বভাবে ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘুরে তাহলে ধরতে হবে ঐ গ্রহের কৌণিক নতি (obliquity) শূন্য ডিগ্রি। সৌরজগতের সবগুলো গ্রহেরই কমবেশি কৌণিক নতি আছে। আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতার সার্বিক তত্ত্ব দিয়ে এর কারণ ব্যাখ্যা করা যায়। পৃথিবীর কৌণিক নতি 23.4 ডিগ্রি। শুক্র ও ইউরেনাস ছাড়া আর সবগুলো গ্রহই নিজের অক্ষে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরে। শুক্র গ্রহের নতি হলো 177.36 ডিগ্রি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে কৌণিক নতি 2.64 ডিগ্রি। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে শুক্র ঘুরছে পৃথিবীর ঘূর্ণনের বিপরীত দিকে। যে গ্রহের কৌণিক নতি যত কম হবে সূর্যের সাথে তার পারস্পরিক অবস্থানের পরিবর্তনও কম হবে। ফলে জলবায়ুর পরিবর্তনও কম হবে। পৃথিবীর  23.4 ডিগ্রি কৌণিক নতির কারণে পৃথিবীতে জলবায়ুর বৈচিত্র্য আছে। অর্থাৎ পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়। কিন্তু শুক্র গ্রহের কৌণিক নতি খুব কম হওয়াতে সেখানে জলবায়ুর বৈচিত্র্য নেই, কোন ধরনের ঋতু পরিবর্তন সেখানে হবে না।  

 

চিত্র 13: পৃথিবী ও শুক্র গ্রহের নতি


পৃথিবী থেকে শুক্র গ্রহ দেখা যায় শুধুমাত্র সূর্যাস্তের পরে এবং সূর্যোদয়ের আগে। এর মূল কারণ হচ্ছে পৃথিবীর কক্ষপথ ও শুক্রগ্রহের কক্ষপথের অবস্থান। এবার দেখা যাক পৃথিবী ও শুক্রের কক্ষপথের পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন।

 

 

চিত্র 14: কক্ষপথে পৃথিবী ও শুক্রের পারস্পরিক অবস্থান

 


শুকতারা ও সন্ধ্যাতারার রহস্য

পৃথিবী থেকে শুক্র গ্রহকে সূর্যোদয়ের আগে পূর্বাকাশে এবং সূর্যাস্তের পর পশ্চিমাকাশে দেখা যায়। মানুষ যখন শুক্র গ্রহ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতো না তখন শুধুমাত্র খালি চোখে দেখেই নাম দিয়েছিল শুকতারা এবং সন্ধ্যাতারা। এখন আমরা জানি শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা কোনটাই তারা নয় এবং এই দুটো একই জিনিস। এখন আমাদের প্রশ্ন শুক্র গ্রহকে কেন শুধুমাত্র এই বিশেষ সময়েই দেখা যায়, অন্য কোন সময়ে দেখা যায় না কেন? এর মূল কারণ হচ্ছে সূর্যের সাথে শুক্র ও পৃথিবীর পারস্পরিক অবস্থান। শুক্র ও বুধ যেহেতু পৃথিবীর চেয়েও সূর্যের কাছের গ্রহ, এদেরকে দেখতে হলে পৃথিবীর যে অবস্থান থেকে কেউ এদেরকে দেখতে চাইবে, সেই দৃষ্টিসীমার মধ্যে এদের আসতে হবে। পৃথিবী তার কক্ষপথে যে বেগে ছুটছে, শুক্র তার কক্ষপথে ঘুরছে আরেকটু বেশি বেগে। আবার পৃথিবী থেকে শুক্রের দূরত্বও অনেক।  পৃথিবীর কক্ষপথের যে কোন অবস্থান থেকে শুক্রের কক্ষপথের সর্বোচ্চ কৌণিক দূরত্ব 460। এই কৌণিক দূরত্বের ভেতর শুক্র ও সূর্য একই রেখায় থাকলে সূর্যের সরাসরি আলোর কারণে শুক্রকে দেখা যায় না। শুধুমাত্র সূর্যাস্তের কয়েক ঘন্টার মধ্যে এবং সূর্যোদয়ের কয়েক ঘন্টা আগে শুক্র গ্রহকে দেখা যায় সূর্যের প্রতিফলিত আলোয়। [চিত্র 14 দেখ]।

 

চিত্র 15: শুক্রের বিভিন্ন দশার পরিবর্তন

 

শুক্রের দশা

পৃথিবী থেকে যখন শুক্রকে দেখা যায় - তখন চাঁদের তিথীর মত শুক্রেরও বিভিন্ন দশা (phase) দেখা যায়। এর কারণ কী? শুক্র গ্রহের কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথের ভিতরের দিকে অবস্থিত। আমরা একটু আগেই দেখেছি শুক্র ও পৃথিবীর কক্ষপথের মধ্যে সর্বোচ্চ কৌণিক দূরত্ব 460। সূর্য যখন পৃথিবী ও শুক্রের মাঝখানে থাকে তখন শুক্র সূর্যের আলোয় ঝলমল করে পূর্ণিমার চাঁদের মত। কিন্তু তখন পৃথিবীর দৃষ্টিসীমার মাঝে সূর্য থাকায় সেই পূর্ণ আলকিত শুক্রকে পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। [চিত্র 15 16 দেখো] তারপর শুক্র ঘুরতে ঘুরতে যখন পৃথিবীর কাছে আসতে থাকে তখন পৃথিবী থেকে শুক্রকে আস্তে আস্তে ক্রমশ বড় হতে দেখা যায় দূরত্ব কমার কারণে। তখন শুক্রের অর্ধেক অংশ আলোকিত দেখা যায় অষ্টমীর চাঁদের মত। তারপর যখন আরো কাছে আসতে থাকে তখন শুক্রের আলোকিত অংশ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। তখন সবচেয়ে শুক্রকে সবচেয়ে উজ্জ্বল দেখা যায় সত্য, কিন্তু চতুর্থীর চাঁদের মত শুধুমাত্র অংশবিশেষ দেখা যায়। তারপর শুক্র যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসে, তখন সূর্য থাকে তার সরাসরি বিপরীতে। তখন শুক্রের অমাবস্যা। শুক্রকে তখন পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। তারপর আবার আস্তে আস্তে দূরে যেতে থাকে, আলোকিত হতে থাকে শুক্র। পৃথিবী থেকে শুক্রকে পুরোপুরি আলোকিত অবস্থায় খালি চোখে দেখা যায় না।

 

চিত্র 16:  শুক্রের বিভিন্ন দশা

 

শুক্রের ট্রানজিট

শুক্রের কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথের ভেতরের দিকে। পৃথিবী নিজের কক্ষপথে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে নির্দিষ্ট কৌণিক বেগে। শুক্রও তার নিজের কক্ষপথে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে নির্দিষ্ট কৌণিক বেগে। সূর্য থেকে শুক্রের দূরত্ব যেহেতু সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বের চেয়ে কম, কক্ষপথে শুক্রের বেগ পৃথিবীর বেগের চেয়ে বেশি। অনবরত ঘুরার ফলে কোনো কোনো সময় শুক্র, পৃথিবী ও সূর্য একই সরলরেখায় উপস্থিত হয়। যদি শুক্র ও পৃথিবীর কক্ষপথ একই তলে অবস্থান করতো তাহলে শুক্র, পৃথিবী ও সূর্যের একই সরলরেখায় চলে আসার ঘটনা ঘন ঘন ঘটতে পারতো। কিন্তু তা হয় না, কারণ শুক্রের কক্ষপথের তল এবং পৃথিবীর কক্ষপথের তলের মধ্যে 3.40 কৌণিক পার্থক্য আছে। [চিত্র 17]

 

চিত্র 17: পৃথিবীর কক্ষপথের তল এবং শুক্রের কক্ষপথের তলের কৌণিক পার্থক্য

 

এই কৌণিক পার্থক্যের কারণে শুক্র, পৃথিবী ও সূর্যের একই সরলরেখায় আসতে সময় নেয় প্রায় এক শ বছর। যখন একই রেখায় পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে শুক্র থাকে, তখন সূর্যের পটভূমিতে শুক্রকে খালি চোখে কালো বিন্দুর মত দেখা যায়। এই ঘটনাকে শুক্রের ট্রানজিট বলা হয়।


চিত্র 18: শুক্র ও পৃথিবীর কক্ষ-তল পরস্পর দুটো বিন্দুতে মিলিত হয়


শুক্র ও পৃথিবীর অক্ষ-তল পরস্পর 3.40 কোণে পরস্পর মিলিত হয়। যে দুই বিন্দুতে এই দুটো তল একে অপরকে অতিক্রম করে তাদেরকে বলা হয় নোড (node)। শুক্রের কক্ষপথের অর্ধেক থাকে পৃথিবীর কক্ষপথের অর্ধেকের উপরে, বাকি অর্ধেক থাকে পৃথিবীর অর্ধেকের নিচে (চিত্র 18)।

 

চিত্র 19: শুক্রের ট্রানজিট কীভাবে ঘটে

 

শুক্র 225 দিনে একবার সূর্যের চারপাশে ঘুরে আসে। শুক্র বছরে দু'বার পৃথিবীর কক্ষপথ অতিক্রম করে। একবার 6 জুন, আরেকবার 7 ডিসেম্বর। পৃথিবীও যখন এই দুই বিন্দুর কোন একটার সাথে একই লাইনে আসবে কেবল তখনই শুক্রের ট্রানজিট ঘটবে। সুতরাং  শুক্রের ট্রানজিট ঘটে এই দুটো তারিখে বা তার কাছাকাছি দিনে। একবার ট্রানজিট ঘটার আট বছর পর আরেক বার ট্রানজিট ঘটে। পৃথিবীর আট বছর সমান শুক্রের তেরো বছর। আট বছরের ব্যবধানে দু'বার ট্রানজিট ঘটার পর আবার ট্রানজিট ঘটার জন্য অপেক্ষা করতে হয় এক শ বছরের বেশি (চিত্র 19)। আট বছরের ব্যবধানে জুন মাসে দুটো ট্রানজিট ঘটার 105 বছর পর ডিসেম্বর মাসে আবার ট্রানজিট ঘটে। তার আট বছর পর ডিসেম্বর মাসে আবার ট্রানজিট ঘটে। তার 121 বছর পর জুন মাসে পরবর্তী ট্রানজিট ঘটে।

          শুক্র গ্রহের ট্রানজিট সম্পর্কে সর্বপ্রথম অনুমান করেছিলেন জার্মান বিজ্ঞানী কেপলার। 1631 সালের সেই ট্রানজিট ইওরোপ থেকে দেখা যায়নি। 1639 সালে সর্বপ্রথম শুক্রের ট্রানজিট সর্বপ্রথম পর্যবেক্ষণ করেন ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরোমিয়া হোরক্‌স। তারপর ট্রানজিট ঘটেছে  1761, 1769, 1874, 1882, তারপর এই শতাব্দীর 8 June 2004, এবং 5 June 2012 তারিখে দুটো ট্রানজিট ঘটেছে।

 

চিত্র  20: এই শতাব্দীর শুক্রের ট্রানজিট

 

ভবিষ্যতের কয়েকটি ট্রানজিটের তারিখ নিচের তালিকায় দেয়া হলো।

 

10 December 2117

 

8 December 2125

11 June 2247

 

8 June 2255

12 December 2360

 

10 December 2368

 

 

শুক্রের মুক্তিবেগ

পৃথিবী থেকে যখন মহাকাশে রকেট পাঠানো হয় তখন সেই রকেটের বেগ এমন হতে হয় যেন সেটা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে পৃথিবীতে ফিরে না আসে। মাধ্যাকর্ষণ বল থেকে মুক্তি পাবার জন্য সর্বনিম্ন যে বেগের দরকার হয় তাকে মুক্তিবেগ (escape velocity) বলে। পৃথিবীর মুক্তিবেগ ঘন্টায় 40284  কিলোমিটার। শুক্রের মুক্তিবেগ  10.36 km/s বা ঘন্টায় 37296 কিলোমিটার।

 

শুক্র ও পৃথিবীর কক্ষপথের তুলনামূলক একটি চিত্র  সারণিতে দেয়া হলো।

সারণি: শুক্র ও পৃথিবীর কক্ষপথের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের তুলনা

 

বৈশিষ্ট্য

 

শুক্র

 

পৃথিবী

সূর্য থেকে গড় দূরত্ব

108,200,000 km

149,600,000 km

সূর্য থেকে সবচেয়ে কম দূরত্ব

108,940,000 km

147,100,00 km

সূর্য থেকে সবচেয়ে বেশি দূরত্ব

107,480,000 km

152,100,00 km

কক্ষপথে গড় গতিবেগ

126,072 km/h

107,280 km/h

কক্ষপথে সবচেয়ে কম গতিবেগ

125,244 km/h

105,480 km/h

কক্ষপথে সবচেয়ে বেশি গতিবেগ

126,936 km/h

109,080 km/h

নিজের অক্ষে গতি

6.52 km/h

1670 km/h

এক বছর (কক্ষপথে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে)

পৃথিবীর 225 দিন

365 দিন

নিজের অক্ষে একবার ঘুরতে সময় লাগে

পৃথিবীর 243 দিন

24 ঘন্টা

অভিকর্ষজ ত্বরণ

8.87 m/s2

9.81 m/s2

মুক্তিবেগ

15,300 km/h

40,284 km/h

সূর্য থেকে আলো আসতে সময় লাগে

 

6 min

8 min 16 sec

 

শুক্র গ্রহের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো দূর থেকে গ্রহটিকে পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়। কিন্তু শুক্র গ্রহের অভ্যন্তরীণ গঠন, রাসায়নিক উপাদান, তাপমাত্রা, আবহাওয়া ইত্যাদি জানার জন্য শুক্র গ্রহ থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করা দরকার। বিজ্ঞানীরা শুক্রে স্বয়ংক্রিয় মহাকাশযান পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিলেন ১৯৬১ সালে। এখন দেখা যাক শুক্র গ্রহে কী কী বৈজ্ঞানিক অভিযান চালানো হয়েছিল। তারপর আমরা আলোচনা করবো সেসব অভিযান থেকে শুক্র গ্রহের কী কী অজানা বৈশিষ্ট্য জানা গেছে।



[1] ভরের সাথে অভিকর্ষজ ত্বরণ গুণ করলে ওজন পাওয়া যায়। পৃথিবীতে তোমার ওজন  400 নিউটন হলে পৃথিবীতে তোমার ভর কত? শুক্রে তোমার ওজন 360 নিউটন হলে শুক্রে তোমার ভর কত? এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে তোমার ভরের কি কোন পরিবর্তন ঘটে?

No comments:

Post a Comment

Latest Post

কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র ও যন্ত্রের লেখাপড়া

  মানুষ যখন থেকে বুঝতে পেরেছে যে তাদের মগজে বুদ্ধি আছে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে বুদ্ধির পরিমাণ এবং তীক্ষ্ণতা বাড়ানো যায় – তখন থেকেই ...

Popular Posts