Friday 21 June 2019

আইনস্টাইনের কাল - পর্ব-১



ভূমিকা

টাইম ম্যাগাজিনের মতে বিংশ শতাব্দীর সেরা মানুষ - আলবার্ট আইনস্টাইন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে একজন প্রায় অচেনা যুবক আইনস্টাইন প্যাটেন্ট অফিসের সামান্য টেকনিশিয়ান থেকে কীভাবে হয়ে উঠলেন শতাব্দীর সেরা মানুষ? ১৯০৫ সালে সুইজারল্যান্ডের প্যাটেন্ট অফিসে কাজ করার সময়েই আইনস্টাইন চারটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন পদার্থবিজ্ঞানের চারটি বিশেষ বিষয়ের ওপর। পরবর্তীতে ওগুলোই সৃষ্টি করেছে পদার্থবিজ্ঞানের নতুন ইতিহাস। সেদিনের প্রবন্ধগুলোয় বর্ণিত ধারণাগুলো রূপ নিয়েছে তত্ত্বে। নতুন নতুন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে আইনস্টাইন ১৯০৫ সালেই দেখে ফেলেছিলেন পরবর্তী একশ বছরের মহাবিশ্বকে। আইনস্টাইনের তত্ত্বের একশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০০৫ সালকে ঘোষণা করা হয়েছে আইনস্টাইন বর্ষ: আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান বর্ষ। 

১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ থেকে ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ছিয়াত্তর বছর এক মাস চার দিনের আক্ষরিক জীবনকাল আইনস্টাইনের। তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া প্রধান প্রধান ঘটনাগুলো কালানুক্রমিকভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি এই বইতে। মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানুষের পূর্বধারণার অনেকটুকুই বদলে দিয়েছেন আইনস্টাইন। এই বদলে দেয়াটা একদিনে হয়নি। আইনস্টাইন তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন ১৯০১ সালের মার্চ মাসে। পরবর্তী ৫৫ বছরে তাঁর ছয়শোর বেশি রচনা প্রকাশিত হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞান ছাড়াও রাজনীতি, সমাজনীতি, দর্শন, ধর্ম - প্রায় সবকিছু নিয়েই তিনি বলেছেন, লিখেছেন, মতামত দিয়েছেন। তাছাড়াও অপ্রকাশিত রয়ে গেছে কয়েক হাজার চিঠি, বিবৃতি, ভাষণ, সাক্ষাৎকার, গ্রন্থসমালোচনা, প্যাটেন্ট রিপোর্ট ইত্যাদি। আইনস্টাইনের উইল অনুযায়ী জেরুজালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটি তাঁর সবগুলো ডকুমেন্টের স্বত্ত্ব পেয়েছে। সেখানে সংগৃহীত ডকুমেন্টের সংখ্যা তেতাল্লিশ হাজারেরও বেশি। এই বইতে তাঁর জীবনকালে প্রকাশিত পেপারগুলো থেকে প্রতিনিধিত্বমূলক তিনশটি পেপারের কালানুক্রমিক উল্লেখ করা হলো। 

আইনস্টাইন নিজের ব্যক্তিগত ঘটনাগুলো কখনোই প্রকাশ করতে চাননি। আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর তাঁর সেক্রেটারি হেলেন ডুকাস প্রাণপণ চেষ্টায় গোপন করে রেখেছিলেন আইনস্টাইনের ব্যক্তিগত জীবনের অনেকগুলো দিক। মিলেইভার সাথে আইনস্টাইনের প্রেম ও সম্পর্কের টানাপোড়েন ইত্যাদি কোন কিছুই জানা যায়নি ১৯৮৭ সালের আগপর্যন্ত। ১৯৮৭ সালের পর প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ও হিব্রু ইউনিভার্সিটির আইনস্টাইন আর্কাইভ গবেষকদের জন্য খুলে দেয়া হলে নতুন রূপে প্রকাশিত হন আইনস্টাইন।

ব্যক্তি আইনস্টাইন, কর্মী আইনস্টাইন ও বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইনকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, দর্শন, বিজ্ঞান গবেষণা ও গবেষণাপত্রের প্রধান প্রধান অংশগুলো উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি - কিন্তু তারপরও কিছু কিছু বিষয় রয়ে গেছে যা কিছুটা দুর্বোধ্য মনে হতে পারে। তবে আশা করি সে কারণে বইটির গতি বাধাপ্রাপ্ত হবে না। আইনস্টাইনের পেপারগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। সেই পেপারগুলোর শিরোনামের ইংরেজি অনুবাদ ব্যবহার করা হয়েছে। বইটি পড়ে বিজ্ঞানের অনেক বিষয়ে প্রশ্ন জাগতে পারে, অনেক ব্যাপারে কৌতূহল তৈরি হতে পারে। আর সেটা হলেই মনে করবো আমি সার্থক। 

বইতে ব্যবহৃত ছবিগুলোর স্বত্ব আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব ফিজিক্স, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির আলবার্ট আইনস্টাইন আর্কাইভ, হিব্রু ইউনিভার্সিটি ও টাইম ম্যাগাজিনের। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। 

প্রদীপ দেব
ডিসেম্বর ২০০৫
pradipdeb2006@gmail.com


No comments:

Post a Comment

Latest Post

Dorothy Crowfoot Hodgkin

  Look closely at the fingers of the person in the picture. Her fingers had not bent in this way due to age; she had been suffering from chr...

Popular Posts