Sunday 9 June 2019

আইনস্টাইনের আপেক্ষিক ভালোবাসা - পর্ব-২


আলবার্ট মিলেইভাকে তখনো জানায়নি তার ভালোবাসার কথা। ভেবেছিল আস্তে আস্তে বলবে। কিন্তু এখন তো মিলেইভা চলেই যাচ্ছে। কেন যাচ্ছে তাও বুঝতে পারছে না আলবার্ট। হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটিতে মেয়েদের এখনো ডিগ্রি দেয়া হয় না। বিশেষ অনুমতি নিয়ে মেয়েরা ক্লাসে এসে লেকচার শুনতে পারে, কিন্তু সেজন্য কোন ক্রেডিট তারা পায় না এসব জেনেও সেখানে কেন যাচ্ছে মিলেইভা ভেবে পায় না আলবার্ট। মিলেইভাকে জিজ্ঞেস করেও কোন পরিষ্কার উত্তর পায়নি আলবার্ট। অক্টোবরের শুরুতে মিলেইভা চলে গেল হাইডেলবার্গে।
           
আলবার্টের সবকিছু কেমন খালি খালি লাগতে শুরু করলো। মনের আবেগ উজাড় করে দিয়ে চারপৃষ্ঠার একটা দীর্ঘ চিঠি লিখলো সে মিলেইভাকে। সে জানে না মিলেইভার মনের অবস্থা কী। তাই চিঠির শেষে লিখলো - লেখার প্রচন্ড ইচ্ছে না হলে আলবার্টকে লেখার দরকার নেই। কদিন পরেই মিলেইভার চিঠি এলো। পরের দেড় বছর ধরে অনেক চিঠির আদান-প্রদান হলো। সাথে তাদের মনও। আদর করে মিলেইভাকে ডলি বলে ডাকে আলবার্ট, আর আলবার্ট হলো মিলেইভার জনি
            
১৮৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাইডেলবার্গ থেকে জুরিখে ফিরে এলো মিলেইভা। আলবার্ট ভীষণ খুশি। কারণ মিলেইভা এখন তার শুধু বন্ধু নয় - প্রেমিকাও। হাইডেলবার্গে যাওয়ার কারণে পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে মিলেইভা। তাকে সাহায্য করার দায়িত্ব নিলো আলবার্ট। পড়তে পড়তে গল্প করতে করতে আলবার্টের বেশির ভাগ সময়ই কাটে মিলেইভার বাসায়। দেখতে দেখতে মিডটার্ম পরীক্ষা এসে গেল। ক্লাস করতে ভাল লাগে না বলে আলবার্ট ক্লাসও করেনি - পরীক্ষার পড়াশোনাও কিছু করেনি। মিলেইভা বুঝতে পারে তার পক্ষে কিছুতেই এখন পরীক্ষা দিয়ে পাস করা সম্ভব নয়। একটা বছর তার নষ্ট হবেই। আর সে সাথে থাকলে আলবার্টের পড়াশোনাও কিছু হবে না। তাই সে নভি সাদে চলে গেলো তার মা-বাবার কাছে।
           
আলবার্ট দিন-রাত খেটে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ফেললো। তারপর বাসা বদল করে মিলেইভার বাসার কাছাকাছি একটা বাসায় চলে এলো। মিলেইভা তখনো ফেরেনি নভি সাদ থেকে। চিঠিতে যোগাযোগ হচ্ছে নিয়মিত। এদিকে বাড়িওয়ালীর মেয়ে সুজান মার্কওয়াল্ডারের সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেলো আলবার্টের।
           
সুজান একটা প্রাইমারি স্কুলে পড়ায় - বেশ হাসিখুশি তরুণী। আলবার্টের আবার হাসিখুশি তরুণীদের সাথে ভাব করতে সময় লাগে না। কয়েক দিন পরেই দেখা গেলো সুজানকে সাথে নিয়ে জুরিখের পাহাড়ে, নদীর ধারে হেঁটে বেড়াচ্ছে আলবার্ট। জুরিখ হ্রদে নৌকায় চড়ে হাওয়া খেতে লাগলো সুজান আর আলবার্ট। সুজানের সাথে বেশ আনন্দেই সময় কাটছে আলবার্টের। সুজান যখন পিয়ানো বাজায় আলবার্ট বাজায় বেহালা। কয়েক বছর আগে এরকম বেহালা বাজাতো মেরির সাথে। মিলেইভাকে চিঠি লেখার সময় সব ঘটনাই লেখে আলবার্ট, কেবল কী এক অজানা কারণে সুজানের কোন উল্লেখই থাকে না সেখানে।
            
সেবছর গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে আলবার্ট গেলো জুরিখের কাছে মেটমেনেস্টেটেনের একটা হোটেলে। তাঁর মা পলিন ও বোন মায়া মিলান থেকে সেখানে এসেছেন। সাথে অনেক বইপত্র নিয়ে গেছে আলবার্ট। কিন্তু পড়াশোনা সেরকম এগোচ্ছে না। মায়ের সাথে বোনের সাথে গল্প করে আগে দিনের পর দিন কাটাতে পারতো সে। এখন তাদের সঙ্গ কেমন যেন বোরিং মনে হচ্ছে। মিলেইভার কথা মনে পড়ছে তার।
            
মিলেইভা চলে গেছে তার মা-বাবার কাছে। কয়েক মাস পরে তার পরীক্ষা। মিলেইভার একটা ছবি মাকে দেখিয়েছিল আলবার্ট। ছবিটার দিকে তাকিয়ে খুব ঠান্ডা গলায় পলিন বলেছেন, খুবই ধূর্ত মেয়েটি। আলবার্ট বুঝতে পারছে না এটা প্রশংসা, নাকি নিন্দা।
            
হোটেলের শান্ত নিরিবিলি পরিবেশেও অসহ্য লাগছে আলবার্টের। তার ওপর তার মায়ের বেশ কিছু বান্ধবী এসে জুটেছেন এ হোটেলে। দল বেঁধে তাদের রুমে এসে সবাই আড্ডা মারেন। আর মা আলবার্টকে বলেন তাদেরকে বেহালা বাজিয়ে শোনাতে। বিরক্তি লাগলেও বেহালা বাজাতে হয় আলবার্টকে।
           
হোটেলে ভাল বেহালা-বাদক হিসেবে বেশ নাম হয়ে গেল আলবার্টের। সেই সুবাদে হোটেলের মালিক রবার্ট মার্কওয়েলারের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল তার। একদিন রবার্ট আলবার্টের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাঁর সপ্তাদশী শ্যালিকা অ্যানা স্মিডের সাথে।
            
অ্যানার সাথে খুনসুটি করতে বেশ ভালোই লাগছে আলবার্টের। একদিন বেহালা বাজানোর পর অ্যানা আলবার্টের অটোগ্রাফ চাইলে আলবার্ট অ্যানার খাতায় একটা কবিতা লিখে দিলো যার বাংলা অর্থ অনেকটা এরকমঃ
ছোট্ট মিষ্টি মেয়ে তুমি,
কী লিখি তোমার খাতায়
মনে আসে অনেক কিছু
চুমু দিলে মুখে তোমার
রাগ করে কেঁদে ফেলো না।
কঠিন শাস্তি সেটাই হবে,
চুমুর বদলে দিলে চুমু।
এই লেখাটা মনে রেখো,
স্মৃতি করে ধরে রেখো
দুষ্টু বন্ধু তোমার আমি
আলবার্ট আইনস্টাইন।।
           
            
একদিন হোটেলের ঠিকানায় একটা চিঠি পেলো আলবার্ট। লেখিকা আরাউয়ের জুলিয়া নিগলি। আলবার্টের মনে পড়লো জুলিয়ার সাথে পরিচয় হয়েছিল আরাউয়ের স্কুলে পড়ার সময়। জুলিয়া আলবার্টের চেয়ে ছয় বছরের বড়। আরাউয়ে থাকতে জুলিয়ার পিয়ানোর সাথেও কিছুদিন বেহালা বাজিয়েছিল আলবার্ট। জুলিয়ার সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয়েছিল তখন। সেই বন্ধুত্বের সূত্রে জুলিয়া তার কিছু ব্যক্তিগত ব্যাপারে আলবার্টের পরামর্শ চেয়ে চিঠি লিখেছে।
           
একজন বেশ বয়স্ক লোকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক চলছে জুলিয়ার অনেকদিন থেকে। লোকটি এখন জুলিয়াকে বিয়ে করতে চান। বিয়েটা করা উচিত হবে কিনা সে ব্যাপারে আলবার্টের পরামর্শ চাচ্ছে জুলিয়া। বিশ বছরের আলবার্ট পরামর্শ দিচ্ছে ছাব্বিশ বছরের জুলিয়া নিগলিকে। আলবার্ট লিখলো, কারো কাছ থেকে সুখের প্রত্যাশা করা উচিত হবে না। এমন কি যাকে ভালোবাস তার কাছ থেকেও নয়। যে মানুষটি আজ তোমাকে ভালোবাসে, কালই হয়তো সে বদলে যাবে। আজ যাকে তোমার বিশ্বস্ত মনে হচ্ছে কালই হয়তো সে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।
            
লেখার সময় কি আলবার্টের নিজের কথাই মনে হয়েছিলো - সে যে মেরির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তা?
           
জুলিয়া আলবার্টের সাথে দেখা করতে চেয়েছে। আলবার্টেরও খুব ইচ্ছে করছে আরাউ গিয়ে জুলিয়ার সাথে দেখা করে আসে। কিন্তু মাকে কীভাবে বলবে? মেরির সাথে সম্পর্ক শেষ করে দেয়ার পর মা খুব রেগে আছেন। মিলেইভার সাথে সম্পর্কটা মা পছন্দ করছেন না। এখন যদি মা শোনেন যে জুলিয়ার সাথে দেখা করতে যাবে - ভীষণ রেগে যাবেন। আলবার্ট অনেক ভেবে মাকে বলল যে আরাউয়ে ইয়োস্ট উইন্টেলারের বাড়িতে প্রফেসর হাব এসেছেন। তাঁর সাথে দেখা করা দরকার।
            
মাকে নিয়ে সমস্যা হলো না। কিন্তু আরাউয়ে যাবার পথে আলবার্টের কেমন যেন ভয় করতে লাগলো - যদি হঠাৎ মেরির সাথে দেখা হয়ে যায়! আলবার্ট জানে মেরি এখন আরাউ থেকে কিছুটা দূরে ওল্ডবার্গের একটু স্কুলে পড়াচ্ছে।
            
ভয়ে ভয়ে আরাউয়ে গিয়ে জুলিয়ার সাথে দেখা করলো আলবার্ট। জুলিয়ার কাছে জানা গেলো মেরি এখন আরাউয়ে নেই। আলবার্ট খুশি হয়ে গেলো। ভাবলো অনেকদিন পর জুলিয়ার পিয়ানোর সাথে বেহালা বাজাবে। কিন্তু জুলিয়ার কোন ইচ্ছেই নেই সে ব্যাপারে। জুলিয়া ব্যস্ত তার প্রেমের ব্যাপারে পরামর্শ নিতে।
            
আলবার্ট জুলিয়াকে পরামর্শ দিলো যদি পারে বিয়েটাকে যেন এড়িয়ে চলে। জুলিয়া ঠিক তাই করেছিলেন। সারাজীবন অবিবাহিত ছিলেন জুলিয়া নিগলি।
            
ফাইনাল পরীক্ষা এগিয়ে আসছে আলবার্ট ও মিলেইভার। মিলেইভা মিডটার্ম পরীক্ষায় কোন রকমে পাশ করে আলবার্টের সাথেই ফাইনাল পরীক্ষা দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু তার ভয় হচ্ছে তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আলবার্টের মা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মিলেইভাকে। 

মিলেইভার এক বান্ধবী হেলেন কাফলার জুরিখ ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাসের ছাত্রী। হেলেন জানালো সে মিলানে যাচ্ছে বেড়াতে। মিলেইভার ইচ্ছে হলো হেলেন গিয়ে আলবার্টের মায়ের সাথে দেখা করে জেনে আসুক তার সম্পর্কে আসলেই কী ভাবছেন মিসেস পলিন আইনস্টাইন।
            
মিলান থেকে ফিরে হেলেন যা জানালো তাতে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেলো মিলেইভার। পলিন হেলেনকে বলেছেন, ওই বুড়ি শয়তানীটা আমার কচি ছেলেটার মাথা খেয়েছে। ডাইনিটা কিছুতেই আমার ছেলের উপযুক্ত নয়।
            
ফাইনাল পরীক্ষার বেশিদিন বাকি নেই। কিন্তু পড়াশোনায় মন বসাতে পারছে না মিলেইভা। কেবলই মনে হচ্ছে তার হবু শাশুড়ি যদি তাকে ডাইনি মনে করে - কীভাবে সে বিয়ে করবে আলবার্টকে? এদিকে মিনি-থিসিস জমা দিতে হয় পরীক্ষার আগে। আলবার্ট ও মিলেইভা একই বিষয় নিয়ে থিসিস লিখেছে। আলবার্ট তাপ পরিবাহিতা সম্পর্কিত থিসিসটি লিখে জমা দিতে গেলো প্রফেসর ওয়েবারকে।
            
প্রফেসর ওয়েবার থিসিসটি হাতে নিয়ে একটু দেখেই বললেন, এই থিসিস হবে না। তুমি যে কাগজে লিখেছো তা পলিটেকনিকের নিয়মের বাইরে। নিয়ম মতো কাগজে লিখে নিয়ে এসো।
            
পরীক্ষার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। আলবার্টকে রাত জেগে থিসিসটি আবার লিখে জমা দিতে হলো।
            
ফাইনাল পরীক্ষা ভালো হলো না দু'জনের কারোরই। আলবার্ট কোন রকমে টেনেটুনে পাশ করলো, কিন্তু মিলেইভা পাশ করতে পারলো না। পরের বছর আবার পরীক্ষা দিতে হবে। খুব ভেঙে পড়েছে মিলেইভা। আলবার্ট গেলো মায়ের সাথে দেখা করতে। তার মা তখন লুসান হ্রদের দক্ষিণে ছোট্ট একটা পর্যটন শহরে ছুটি কাটাতে এসেছেন। আলবার্টও গিয়ে উঠলো সেখানকার হোটেলে।
           
ছেলে পাশ করেছে জেনে খুশিই হলেন পলিন। জিজ্ঞেস করলেন মিলেইভার কথা।
            সে পাশ করতে পারেনি।
            এবার কী হবে তার?
            
আলবার্ট বুঝতে পারছে মিলেইভা সম্পর্কে তার মায়ের মনোভাব। কিন্তু প্রসঙ্গ যখন উঠলোই আর এড়িয়ে যাবার মানে হয় না। আলবার্ট বললো, এবার আর কী হবে? এবার সে আমার বউ হবে।


মুহূর্তেই পলিন চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। মুখে  বালিশ চাপা দিয়ে বেশ শব্দ করেই কাঁদতে লাগলেন। আলবার্ট মায়ের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু প্রতিক্রিয়া যে এরকম কান্নাকাটির পর্যায়ে চলে যাবে ভাবেনি। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল আলবার্ট। পলিন বুঝতে পারলেন ছেলেকে শুরুতেই একটা ধাক্কা দেয়া গেছে। এবার তিনি চোখ মুছতে মুছতে শুরু করলেন বাক্যবাণ - নিজের পায়ে নিজে কুড়োল মারছিস তুই। নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছিস ওই বুড়ি ডাইনিটার জন্য।
            
আলবার্ট কিছু বলার আগেই পলিন আবার বিছানায় শুয়ে দ্বিতীয় দফা কান্নাকাটি শুরু করলেন। আলবার্ট আবার অপ্রস্তুত হয়ে গেছে দেখে আবার উঠে বসলেন পলিন। আরো তীব্র ভাষায় আক্রমণ শুরু করলেন - এখন ওই ডাইনিটা যদি গর্ভবতী হয়ে পড়ে দেখিস কী ঝামেলা পোহাতে হয় তোকে।
            তুমি আমাদের কী মনে করো মা? তুমি কি মনে করো আমরা অনৈতিক কোন কাজ করছি?
            করছিসই তো। ওই মেয়েটার কোন বিশ্বাস আছে? তোর চেয়ে কত বছর বড় সে জানিস? তোর মুন্ডু চিবিয়ে খাচ্ছে সেই মেয়ে তা কি আমি বুঝিনা? ওই মেয়ে সব পারে। পেটে বাচ্চা এনে সে তোকে বশ করবে দেখিস।
            আজেবাজে কথা বলবে না মা। আমি তাকে ভালবাসি।
            ভালোবাসার কিছুই বুঝিস না তুই। এটার নাম ভালোবাসা নয়। ওই মেয়ে জাদু করেছে তোকে। কী আছে তার? কুৎসিত বিকলাঙ্গ বুড়ি একটা।
            খবরদার মা-
            
ঝগড়া আরো অনেকদূর গড়ানোর আগেই দরজায় টোকা পড়লো। পলিনের বান্ধবী এসেছেন দেখা করতে। হঠাৎ রুমের পরিবেশ বদলে গেলো। আলবার্ট ও পলিন উভয়েই এমন ভাব করতে লাগলেন যেন কিছুই হয়নি। একটু পরেই তারা আবহাওয়া বিষয়ে কথা বলতে লাগলেন, অবকাশকেন্দ্রের অন্যান্য লোকদের নিন্দা করতে লাগলেন, আজকালকার ছেলেমেয়েদের অবাধ্যতার কথা বলতে লাগলেন। পলিন বন্ধুকে ডিনার খেয়ে যেতে বললেন। ডিনারের পরে আলবার্ট বেহালা বাজিয়ে শোনালো। তারপর মায়ের বান্ধবী চলে গেলে নিজের রুমে ঘুমাতে গেল আলবার্ট।
            
কিন্তু একটু পরেই মা এলেন তার রুমে। এসেই বললেন, একটা কথা তোকে পরিষ্কার বলছি আলবার্ট, তুই সারাজীবন বিয়ে না করলেও আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু ওই মেয়েকে তুই বিয়ে করতে পারবি না।
            
মায়ের সাথে এ ব্যাপারে আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আলবার্টের। তাই কিছু না বলে সে চুপ করে রইল। কিন্তু পলিন চুপ করলেন না। তিনি বলেই চলেছেন, ওই মেয়েকে বিয়ে করলে খুব ভুল করবি তুই। কী আছে ওই মেয়ের? বই পড়তে পড়তে ওই মেয়ে নিজেই তো একটা বই হয়ে গেছে। তোর একটা বউ দরকার, বই নয়। তোর চেয়ে কত বড় মেয়েটা। তোর তিরিশ হতে হতে তো ওই মেয়ে বুড়ি ডাইনির মত হয়ে যাবে। কোন ছেলেমেয়েও তো হবে না ওই বুড়ির। রূপসী হলেও না হয় বুঝতাম রূপ দেখে মজেছিস। ওই তো ডাইনির মত দেখতে - কী দেখে তুই ওই মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছিস আমি জানি না। আমরা হলাম ইহুদি। ওরা কোন্‌ জাতি কে জানে। ওরকম অজাত-কুজাতের মেয়ে তুই বিয়ে করতে পারবি না এটাই আমি বলে দিচ্ছি।
            
আলবার্ট বুঝতে পারছে না মাকে কীভাবে চুপ করাবে। মাকে সে প্রচন্ড ভালোবাসে। কিন্তু মা কেন তার ভালোবাসা বুঝতে পারছেন না ভেবে পায় না আলবার্ট। মা যেরকম অবুঝ শিশুর মত আচরণ করছে তাতে কথায় আরো কথা বাড়বে। আলবার্ট বললো, ঠিক আছে মা, ঠিক আছে। তোমাদের আপত্তি থাকলে আমি বিয়ে করবো না। যাও, এবার ঘুমাতে যাও। 

No comments:

Post a Comment

Latest Post

নিউক্লিয়ার শক্তির আবিষ্কার ও ম্যানহ্যাটন প্রকল্প

  “পারমাণবিক বোমার ভয়ানক বিধ্বংসী ক্ষমতা জানা সত্ত্বেও আপনি কেন বোমা তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন?” ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের ‘কাইজো’ ম্য...

Popular Posts